চক্ষে আমার তৃষ্ণা পর্ব-৪০+৪১+৪২

0
339

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৪০
১২১.
অর্পণ বাবা আমার এতো রাগ ভালো না।তুই শান্ত হ।

তুমি আমাকে শান্ত হতে বলছো।আর তাকে কেনোও কিছু বলতে পারো না?তার বেলায় তোমার মুখে তালা থাকে কেন?সে একশোটা দোষ করলে কিছু না।আমি একটা করলেই যদি সেটা অপরাধ তার কাছে মনে হয়।তবে তাই আমি।তাঁকে ব’লে দেও।আমার কিংবা আমার আপনজনদের দিকে হাত না বাড়াতে।তোমার বাপ জনাব জামশেদ উল্লাহ খান গদিতে বসে মানুষের র*ক্ত চু*ষচ্ছে।এসব করতে বারণ কর।গদিতে বসে এতটা খুশি হওয়া মানুষকে আমার দু-চোখে সয্য হয়না।তার এই খুশিকে দুঃখের পরিণাম করে ফেলব।

এসব কি বলছিস অর্পণ?আস্তে চিতকার কর।তোর বাবা ঘুমিয়ে আছে।এত রাতে হইচই করিস না।যাকে গালাগালি দিচ্ছিস।উনি সম্পর্কে তোর নানাজান হন।আর যাকে কাল পিট বলছিস সে তোর ছোট মামা হয়।

অর্পণ রাগে কটমট করতে করতে বলল,ওরা আমার ক*চু হয়।আমি এসব বেঈমানদের মনে রাখি না।তুমি ওদের হয়ে আমার সামনে সাফাই গাইবে না।রাত অনেক হয়েছে এখন ঘুমাতে যাও।ছেলের রাগ দেখে রাবেয়ার মুখে চিন্তার ছাপ।

রাবেয়া ছেলেকে শান্ত করতে গলাটা হালকা কেশে নরম গলায় বলল,

বলছিলাম কি বাপ?পুতুলকে একদিন আমাদের বাসায় নিয়ে আসব।তোর বাপ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে একা গেছে আমাকে নেয়নি।পুতুল তোর বাপকে তোর পরিচয়ের মাধ্যমে চিনে।আর আমাকে চিনে ডাক্তার ম্যাডাম ব’লে।সে নিশ্চয় ডাক্তার ম্যাডামকে না করবে না।আফটার অল যাব তার শ্বাশুরী হয়ে,কিন্তু তার সামনে প্রেজেন্ট হব তার ডাক্তার ম্যাডাম হয়ে।মায়ের কথা অর্পণের মনটা ভালো হয়ে যায়।নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বলল,

যাচ্ছো,যাও।কিন্তু ভুলেও আমার নাম বলে বসো না।কিংবা পুতুল মা,আমি তোমার শ্বাশুড়ি আম্মা।আমার পা ছুয়ে সালাম কর।তার সামনে এসব বলতে দেড়ি।আর আমার আদূরনী বউ মাটিতে বেহুশ হয়ে পড়তে দেড়ি করবে না।তখন আমার টেনশন,হাইপ্রেশার বেড়ে যাবে।সে আমাকে দু-চোখে সয্য করতে পারে না।তার কাছে আমি ওই টাইপ মহিলাদের মতো।ও-ই যে,গ্রামে কিছু কুটনি পাঁজি মহিলাদের মতো,যাদের অন্তরে বিষ আর মুখে মধু থাকে।অর্পণ কথাগুলো ব’লা শেষ করে গাল ফুলিয়ে উপরে নিজের বরাদ্দ রুমে চলে গেলো।এইদিকে ছেলের কাজে আর কথাবার্তায় রাবেয়া হাসতে হাসতে সোফায় বসে পড়লো।হায় আল্লাহ,তার ছেলে ব’লে কি?

সকালে মুরগী ডাকে গ্রামের মানুষের ঘুম ভেঙে গেছে।তারা ফজরের নামাজ পড়ে দিনের কাজগুলো তাড়াতাড়ি সেড়ে ফেলেছে।সকালের সূর্য সাথে তাদের দৈনিক উঠে পড়ার অভ্যাস।সকালের নাস্তা খেয়ে মাঠের কাজে নেমে পরে।আবার সূর্য পশ্চিম দিকে ডুবতেই যার যার নীড়ে ফিরে যায়।পুতুল নামাজ পড়ে ঘরটা সুন্দর করে গুছিয়ে নিয়েছে।আবার বাহির বের হয়ে দেখলো গাছের পাতা ঝড়ে মাটিতে পড়ে আছে।সেগুলো কুড়াতে,কোমড়ে ওড়না গুছে নিলো।উঠোনের শুঁকনো পাতাগুলো শোলার ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে দেয়।এরমধ্যে মামী উঠে রান্নাঘরে কাটাকুটি করছে।পুতুল হাত ধুয়ে সীলনূরে আদা,রসুন বেটে নিলো।পুতুলের বাটা শেষ।সূর্যের আলোতেই সরিষা,কালিজিড়া,বাদাম,শুকনো মরিচ,আস্ত হলুদ এগুলো বড় গামলায় আর বড় চেনিতে মেলে দিলো।এরপর আমের আচার,জলপাই আচার,চালতা আচার,বরই আচার
রসুনের আচার,বোটমরিচের আচার,সব বয়ামগুলো সারিভাবে রেখে ঘরে আসতেই মামীর ডাক শুনা গেলো।

পু.তু.ল।

পুতুল,মামীর ডাকে ঘর ছেড়ে আসে।মাথা ঘুমটা টেনে উঠোনে আসতেই মামী বলল,

রান্নাঘরে গিয়ে একটু বস।চুলায় ভাতের হাড়ি চড়ানো হয়েছে।একটু পর পর শুকনো কড়ি পাতাগুলো দিলেই হবে।আমি পুকুরের ঘাটে যাচ্ছি।তোমার মামার কাপড়টা ধুয়ে দিতে।পুতুল মাথা নাড়িয়ে জি বুঝাতেই।মামী ঘাটে গেলো।পুতুল নিজের মতোও করে চুলার মুখে পাতা দিচ্ছে।

১২২.
এইদিকে মিলন,সাজু নামাজ পড়ে।গ্রামের অলিগলিতে দুষ্টমি করে বাড়িতে ঢুকতেই চোখের সামনে আচারের বোয়ামগুলো দেখতে পায়।তাদের চোখে মুখে খুশির ঝলক।পুরো বাড়িটা আড়চোখে দেখে নিয়ে চুপিচুপি আচারের বোয়ামের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।ঢাকনা সরিয়ে ডান হাত ঢুকিয়ে দিয়ে চারদিকে তাকাতে লাগল।তাকে কেউ দেখছে কি-না।কিন্তু না কেউ নেই।আমের জেলি থেকে দুই,তিন পিছ নিয়ে সাজু হাতে দিলো।এবার জলপাই আচারের হাত দিয়েছে।এটা টক,জাল খাট্রামিঠা।একবার মুখে দিতেই জিহ্বা পানিতে ভরে উঠে।এত লোভনীয় আচার চোখের সামনে থাকলে কি মাথা ঠিক থাকে?মিলন,সাজুর অবস্থা তাই।জলপাইয়ের পুরো বয়াম নিয়ে পুকুরের ঘাটের দিকে দৌড় দিলো।বাকি আচার গুলো সেইভাবেই পরে রইল।তারা চলে যেতেই পিছনে ডুবন্ত সরষের তেলের আমটা বুদবুদ শব্দ করে মাটিতে পড়তে লাগল।এইদিকে রেনু,স্বাধীনের কাপড় ধুয়ে বাসায় আসতে নিলেই,দেখে তার বাঁদর দুই ছেলে পুকুরের বড় গাছটায় বসে চাকুমচাকুম করে কি জেনো খাচ্ছে?রেনু কাপড়ের বালতিটা ঘাটে রেখে তাদের সামনে গেলো।

হুম…হুম..মজা।ওই সাজু আচার খেয়ে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে নিবি।পুকুর থেকে হাত ধূয়ে যাব।তাহলে মা,আর আপু বুঝতে পারবে না।আমরা আচার চুরি করে খেয়েছি।মিলনের কথা সাজু মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে আরেকবার জলপাই আচার খেতে মনযোগ দিলো।দুই ছেলের কথা শুনে রেনু গালে হাত দিয়ে বলল,

কি চোররে বাবা?একে তোও চুরি করে খেয়েছে।আবার কি সুন্দর মিথ্যা কথা বানিয়ে ব’লে যাচ্ছে?তবে রে হতচ্ছাড়া।রেনু এগিয়ে এসে দুই হাত দিয়ে দুইজনের কান টেনে ধরতেই আহহহ করে উঠে।মা’কে দেখেই তাড়াতাড়ি পাঞ্জাবি হাতা দিয়ে মুখ মুছে নিলো।সাদা পাঞ্জাবির হাতাতে আচারের দাগ স্পষ্ট।জলপাই আচারের বোয়াম পিছনে লুকিয়ে রাখার কত চেষ্টা।কিন্তু তাদের চেষ্টা বিফলে।রেনু দুই ছেলেকে ধরে বাড়িতে নিয়ে আসতেই পুতুল এগিয়ে আসে।তাদের এই অবস্থা দেখে বুঝতে বাকি নেই।এই চোরই সেই চোর।যারা এর আগেও বেশ কয়েকবার আচার চুরি করে খেয়েছে।এবং তাদের ধরা যায়নি।

পুতুল কোমড়ে দুই হাত রেখে রাগি চোখে তাকিয়ে রয়।বোনের রাগ দেখে মিলন,সাজু দুই কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল।সরি।কিন্তু তাদের আপুর রাগ কমলো না।বোনের রাগ ভাঙ্গতে ঠিক হলো মেলায় যাবে।

গ্রামে মেলা বসেছে।সে বিশাল আয়োজন।পুতুলের গায়ে কালো বোরকা।সে কিছু খাবে না।তবে পানি পুড়ি নাম শুনে লোভ লাগছে।বেল পুড়ি,চটপটি,ফুচকা তার ভীষণ প্রিয়।কিন্তু এই পানি পুড়িটা তাদের গ্রামে নামকরা হলে-ও কখনো খাওয়া হয়নি।এটা মেলায় বেশি পাওয়া যায়।কিন্তু অনেক আগে একবার মেলায় আসার পর আর মেলায় আসেনি।এটা নিয়ে দ্বিতীয় বার আসা হলো।এই পানি পুড়ি,ফুচকার থেকে অনেকটাই বড় থাকে।এরমধ্যে আলু,ডিম সেদ্ধ,আর দই থাকে।তার সাথে দেয় সাত রকমের টক পানি।পানির কালারগুলো দেখতে সুন্দর।এবং এক একেকটা পানির স্বাদ সম্পূর্ণ আলাদা।দারুণ খেতে।পানি পুড়ির প্রংশসা শুনে খেতে ইচ্ছে জাগে।মিলন,সাজুর মাঝে পুতুল রয়েছে।স্বাধীনও পুতুলের পাশাপাশি রয়েছে।ভীর ঝাপটা এরিয়ে সাবধানে হেঁটে এগিয়ে পানি পুড়ির দিকে আসতেই তাদের চোখ কপালে।এত ভীর।আপু দেখ,দেখ মেয়েগুলো কত বড় বড় হা করে মুখে দিচ্ছে।মনে হয় তাদের খাবার কেউ চুরি করে নিয়ে যাবে।আরে বাপ আস্তে খা।যেভাবে খাচ্ছিস।মনে হয় কত বছর ধরে বাসায় খাস না।তোদের বাপ,মা কি না খাইয়ে রাখে?রাক্ষস জানি কোথাকার?

মিলন রাক্ষস নয়?বল রাক্ষসী জানি কোথাকার?পুতুল দুই ভাইয়ের মাথায় হাত দিয়ে হালকা বারি দিতেই তারা চুপ।

এইদিকে এমপি সাহেব তার পুরনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।কথা,হাসির মাঝেই চোখে পরে মেলার ভীর কম যেখানে সেখানে মিলন,সাজু,স্বাধীন সাথে আরেকটি মেয়ে বোরকা পরে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে।বন্ধুদের রেখে এগিয়ে আসতেই স্বাধীনকে বড় করে সালাম দিলো।এইদিকে অর্পণকে দেখে পুতুল অবাক চোখে একপলক তাকিয়ে চোখ সড়িয়ে নিলো।মিলন,সাজুর মনে লাড্ডু ফুটছে।স্বাধীনের সাথে কথা বলার মাঝেই তার প্রিয় রমণীর দিকে আড়চোখে কয়েকবার তাকিয়ে আবার কথা বলতে লাগল।

মেয়ের শখ হয়েছে পানি পুড়ি খাবে।এত ভীর দেখে রোড দিয়ে না এনে চকদিয়ে আনলাম।তারপরও এই দোকানেও ভীর দেখছি।মেয়ে খেতে না পারলে কিনে নিয়ে যাব।

পুতুল খেতে চেয়েছে কিন্তু খাওয়ার পরিবেশ এখানে নেই।এখন উপায়?আর বাসায় নিতে নিতে ঠান্ডা হ’য়ে যা-তা হবে।সেটা ভালো লাগবে না।

আপনার যদি কোনো সমস্যা না হয়।তাহলে আমার গাড়িতে বসে খেতে পারে।আমি আজ গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলাম।আসলে আপনাদের গ্রামে কিছু কাজ ছিল সেটা শেষ করে বাড়িতে যাব।তখনই পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা হয়।এতখন কথা বললাম।
মেয়ের অস্তি বুঝতে পেরে স্বাধীন মেয়েকে ভরসা দিলেন।সে গাড়ির সামনে থাকবে।এবং মিলন,সাজু তার সাথে থাকবে।

মেলাতে ঘুড়া এবং খাওয়া শেষ হতেই পুতুল বাড়িতে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হলো।তাই স্বাধীন ছেলে,মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে যাবেন।

এইদিকে এমপি সাহেব দুই নাম্বারি করে দুই শালার পকেটে একশ করে টাকা ঢুকিয়ে দিলো।তার হাতের গোলাপফুল দেখিয়ে বলল,পুতুল অবধি পৌছাতে।স্বাধীন শুকনো খাবার কিনতে ব্যাস্ত।তখনই মিলন,সাজু পুতুলের হাতে গোলাপ তুলে দেয়।যার মানে এটা তারা তাদের আপুর জন্য কিনেছে।কত বড় ডাহা মিছা কথা!পুতুলও হাসি মুখে হাতে নিলো।

অর্পণ সামনে মাথার চুলগুলো চুলকে,মিষ্টি করে হেসে বিরবির করে বলল,

ভালোবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া।
করতে হবে এবার বিয়া।
সোনারি চাঁন, পিতলা ঘুঘু।
যাবে কোথায় পালাইয়া।

চলবে…

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৪১
১২৩.
পরের দিন সকালে পুতুল ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে ঘর ছেড়ে উঠোনে পা রাখতেই মামা,মামীর কথা শুনে দাঁড়িয়ে যায়।মামার কথা মতে কাল মাঝরাতে রমিজ মেম্বার গ্রামে ঢুকতেই মাথায় কালো কাপড় পেচিয়ে কারা যেনো খুব মেরেছে?মারের চোটে তার এক হাত,এক পা ভেঙে গেছে।সুস্থ হতে না-কি দুই,তিন মাস লাগবে।শুধু তাই নয় তার ধানের ঘরে আগুন,এমনকি শুকনো মুজুত খাবার যেগুলো পুরো দুই বছরের অনাহাসে ব্যবহার করে কাটিয়ে দেওয়া যাবে।সেসব খাদ্য নষ্ট হয়েছে।কে করেছে?আর কেনো করেছে জানা চায়নি?এইদিকে দুই বছর খাবার নষ্ট এমনকি ধান আগুনে পোড়ায়।গ্রামে খাদ্য সংকট হবে।বিপদে আজ তাঁরাই পড়েছে।যারা কয়েকদিন আগেই পুতুলকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলো।সেইসব গ্রামবাসীর ঘরে আজ আহার নেই।গ্রামের লোকের সব রাসায়ন পুড়ে ছাই।কি হবে এখন?এসব শুনে পুতুল হতবাক।রমিজ মেম্বারের সবকিছু সাথে সাথে ওইসব পাঁজি লোকেদের খাবার একসাথে মজুত ছিল।যা আজ পুড়ে ছাই।পুতুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরে চলে যায়।পুরনো ঘা সে ভুলে নিই।তার সবকিছুই মনে আছে।সে তবুও চুপ ছিল।তার স্বপ্নটা একবার পূরণ হোক।তারপর বাকিসব দেখা যাবে।পুতুল নিজে তাদের শাস্তি দিতে চেয়েছে।অথচ আজ না চাইতেও তাদের কষ্ট দেখতে পাচ্ছে।গ্রামের ময়-মুড়োবীদের একটা কথা আছে।পরের জন্য গর্ত খুঁড়লে
সেই গর্তে নিজেরাই পড়ে।আজ তার প্রমাণ পাচ্ছে।এরা পুতুলের জন্য গর্ত খুঁড়ে এখন নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনলো।বেশ হয়েছে।যেমন কর্ম তেমন ফল ভোগ করুক।

বাঁশবাগানে মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই। চাঁদ তো তার জাগায়াই আছে
বাঁশগুলো গেল কই?ওই অর্পণ ভাই আপনাদের বাঁশগুলো কই?

অর্পণ ডান দিকে তাকাতেই মিলন,সাজু তার দেখাদেখি ঘুরে তাকিয়ে হা হয়ে গেলো।কাচা কব্জিরবাশগুলো একটাও আস্ত নেই।সবগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে আছে।

কি শালা সাহেব চাঁদ তার জায়গায় ছিল?বাঁশগুলো ঠাঁই রমিজ মেম্বারের শরীরে।এবার ঠিক আছে না!এমন শিক্ষা দিয়েছি না।দ্বিতীয় বার কোনো মেয়ের গায়ে কলঙ্ক দাগ লাগানোর সাহস করবে না।ওর সাহসটা কত বড়।ওহ কার কলিজা হাত দিয়েছে।সেটা আস্তে আস্তে টের পাবে।এটাতো একটু ছোট খাটো নমুনা দেখিয়েছি।পরবর্তী এমন কিছু করলে ওই কু’ত্তার বাচ্চার লা*শ পড়বে।শেষের কথাটুকু বিরবির করে বলায় মিলন,সাজু শুনতে পায় নিই।

অর্পণ নতুন বাটন ফোন কিনে সেটাতে নতুন সিম লাগিয়ে দিয়েছে।

এই ফোনটা রাখ।আগের ফোনটা পুরো নষ্ট হয়ে গেছে।

হুম,ভাইয়া।আসলে আপুর সাথে গ্রামের লোক,আর মেম্বার ওমন করায়,আপনাকে ফোন দিতে বাটন ফোন বের করে হাতে নেই।আর তখন ওতো লোকের ভীরে ফোনটা কখন হাত থেকে ছুটে কার পায়ের নিচে গেছিলো বুঝে উঠতে পারিনি।ফোনটা বেশ কয়েকবার খুঁজেছি।কিন্তু পাওয়া যায় নিই।তার ওপর বোনের সাথে গ্রামের মানুষের ওমন ব্যবহার দেখে কি করব বুঝতে পারছিলাম না।শুধু এতটুকুই মনে ছিল আপনি অবধি পৌছাতে হবে।কারণ আপনি ছাড়া আমাদের বোনকে কেউ অতটা নিরাপত্তা দিতে পারবে না।বাবার গায়ে আঘাত করতেই ভেতরটা কাঁদছিল।কিন্তু ভাই হয়ে আপুর অসম্মান দেখতে পারব না।তাই ভীতুর মতো আপনার কাছে যাই।আজ আমরা বড় হলে হয়তো আমাদের সামনে কেউ আপুর দিকে বাজে আঙুল তুলে দেখতে পারতো না।আপনাকে নিয়ে যখন আমাদের বাসায় ফিরে আসি।তখন কতটা অসহায় হয়ে যাই।মনে হয়েছিলো,আমরা আমাদের আপুকে হারিয়ে ফেলেছি।আর কোনোদিন তাঁকে দেখতে পাবো না।তার মতো করে কেউ আমাদের এত আদর,ভালোবাসবে না।এখনো সেসব ভাবলে খুব কান্না পায়।আপুকে ছাড়া কখনো থাকি নিই।সে চলে গেলে আমরা কি নিয়ে থাকতাম?মিলন,সাজু কথাগুলো বলতে বলতে কাঁদছে।তাদের কান্না করা মুখগুলো কি মিষ্টি?একদম পাকা লাল টমেটোর মতো গাল দু’টো লাল হয়েছে।বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টো করে কাঁদছে।এই দৃশ্যটা অর্পণ তার ফোনে ক্যাপচার করে নিলো।বোনের প্রতি ভাইদের এত টান তাকে অন্য রকম শান্তি দিচ্ছে।অর্পণ দুই শালার চোখের পানি মুছে বুকে টেনে নিলো।

হয়েছে।এবার থামো।আর কান্না নয়।আমার দশটা না পাঁচটা একমাত্ত বউয়ের দুইটা ভাই।তারা যদিও মেয়ে মানুষের মতো কান্না করে।তাহলে ভবিষ্যৎ দুলাভাই এর কষ্ট লাগে।চল এখন বাসায় পৌঁছে দেই।তোমাদের পৌঁছে দিয়ে সবুর মিয়া ঘন্টা বাজাবো!

এই যে দুনিয়া কিসের লাগিয়া
কত যত্নে গড়াইয়াছেন কারিগর।
এই যে দুনিয়া কিসের লাগিয়া
কত যত্নে গড়াইয়াছেন কারিগর
এই যে দুনিয়া।

ছায়াবাজী পুতুল-রূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনে নাচাও তেমনেই নাচি
পুতুলের কী দোষ?
যেমনে নাচাও তেমনি নাচি
যেমনে নাচাও তেমনে নাচি
তুমি খাওয়াইলে আমি খাই
আল্লাহ, তুমি খাওয়াইলে আমি খাই
এই যে দুনিয়া কিসের লাগিয়া
এত যত্নে গড়াইয়াছেন কারিগর

এই যে দুনিয়া

চামারদ গ্রামে সবুর মিয়া লুকিয়ে আছে।কাশেম মাজারের সামনে দিয়ে পাঁচ কদম হাঁটতেই যাত্রাপালার মঞ্চ দেখা যায়।সেখানে বসে যাত্রা দেখছে সবুর মিয়া।অর্পণ যাত্রাপালা ঢুকার আগেই রুমাল দিয়ে মুখ বেধে নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়।

বলছিলাম কি ভাই সিগারেট হবে?অপরিচিত কারো গন্ঠ শুনে সবুর মিয়া পাশে তাকিয়ে বলল,

তুমি মিয়া কেডা?তোমারে তোও চিনলাম না।গ্রামে নতুন নাকি।

হুম।এখানে নতুন।তা আপনি কি এই গায়ের?

না,যাত্রা দেখতে মধুপুর থেকে আসছি।আমার গ্রাম রোহিতপুর।

ওহ।বাহিরে চলুন।

কেন?বাহিরে যাব কেন?

আরে চলুন তো?একটা জিনিস দেখাবো।

জিনিস। কি জিনিস?

আছে।

থাকুক পরে যামু।যাত্রা দেইখা লই।

অর্পণের কথায় সবুর লড়তে নারাজ।কিন্তু অর্পণ তার কথায় কানে না নিয়ে টেনে ধরে নিয়ে গেলো।ততখনে মঞ্চের গান শেষের পথে।

১২৪.
বিদেশে পড়তে গিয়েছিল তালুকদার বাড়ির ছোট মেয়ে তন্নী তালুকদার।আজ দেশের মাটিতে পা রেখেছে।সাফিন তালুকদার,এবং মাসুদা তালুকদার মেয়ে কে এতদিন পরে কাছে পেয়ে ভীষণ খুশি।জিহান,রিহান খবর পেয়ে বোনকে দেখতে ছুটে আসে।রাবেয়া হাসপাতালে।এইদিকে অসীম তালুকদারের কাজ পরে যাওয়া গ্রামের বাহিরে আছে।সবার সাথে দেখে করে নিজের রুমে না গিয়ে অর্পণের রুমের দরজায় নক করলো।কিন্তু ভিতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা খুলে ভিতরে উঁকিঝুকি মারতে লাগল।কিন্তু তার পচ্ছন্দের মানুষটি নেই।তাকে না পেয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখতে দেখতে বেডের পাশে দেয়ালে বড় করে অর্পণের ছবি দেওয়া।সেটা দেখে তন্নী খুশি হয়ে গেলো।হাত দিয়ে তার ছবিটি ছুয়ে ডাকলো

ভা.ই.য়া!আমি এসে গেছি।এবার তোমাকে আমার মনের কথাটা ব’লে দিব।বাংলাদেশে এসে তোমাকে আগে খুঁজেছি।কিন্তু তুমি এর্য়ারপোর্টে রিসিভ করতে গেলে না।তুমি না যাওয়া মন খারাপ হয়েছিল।কি এত সারাদিন কাজ কর।যে আমাকে আনতে যাওয়ার সময় হলো না।কিন্তু এখন আমি যেহেতু এসে গেছি তখন কোনো দূরত্ব আর থাকবে না।

এইদিকে পুতুল নিজের হাতের কাপড়ে ব্লকপ্রিন্ট তুলছে।একটা জামাতেই অনেকটা পরিশ্রম যাচ্ছে।এইদিকে নতুন ভার্রসিটিতে এডমিশন নিতে হবে।মামা বই এনে দিবে।পড়াশোনা করতে তার খুব ভালো লাগে।পাশাপাশি রান্না করাটা সে ভালোবেসে পরিবারের জন্য করে।আজও করেছে গিলা,কলিজা,ভুনা।আর কর্ক মুরগীর চামড়া ডাল দিয়ে চড়চড়ি।তরকারির মাখা মাখা হওয়া আলাদা সুন্দর হয়েছে।পুতুলের গিলা,কলিজা খুব পচ্ছন্দের ছিলো।এখনো আছে।কিন্তু ছোট দুই ভাই গিলা,কলিজা খুব পচ্ছন্দ করে।তাই ভাইদের জন্য সে এসব নিজের পাতে এখন আর নেয় না।ওদের জন্য আলাদা তুলে রাখে।সে সামন্য ঝোল দিয়ে তৃপ্তির করে ভাত খেতে পারে।আগে কষ্ট হলেও এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।ভাই’রা খেয়ে খুশি হলেই সে খুব খুশি হয়।

এইদিকে আজ বোনের করা রান্না চুরি করে অর্পণের জন্য আলাদা করে তরকারি বাটিতে তুলে বাগান সাইডে নিয়ে দিয়ে আসে।ভালোবাসার মানুষটির রান্না দেখে যত খুশি হয়েছিল।তরকারি দেখে তার হাওয়া ফুঁস। সে এর আগে এমন তরকারি খায়নি।এসব কলিজা,গিলা,মোটা চামড়া তার ইহকালে পছন্দ নয়।কিন্তু প্রিয় মানুষটি যত্ন করে রান্না করছে।তাই ডান হাতটা ধুয়ে অল্প একটু মুখে নিলো।মুখে দিতেই অর্পণ বুঝতে পারলো।রান্নাটা খারাপ নয়।খেতে ভালোই লাগছে।মিলন লাল চালের ভাত আর তরকারি দিয়ে খেতে বলল,মোটা মোটা লাল চালের ভাত দেখে অবস্থা খারাপ।এমন চাল এই প্রথম দেখছে।তবুও দিদাগ্রস্ত হয়ে এক লোকমা ভাত তকরারি সাথে মিক্সি করে মুখে দিতেই মোটা লাল চালের ভাত তার গলা দিয়ে নামাতে কষ্ট হচ্ছে।বাড়ির আদরের ছেলে চিকন চালের ভাত একটু নরম হলে খেতে পারতো না।আজ সেই ছেলে মোটা চালের লাল ভাত গিলছে।সত্যি অদ্ভুত।

পিড়িতে কাঁঠালের আঠা।লাগলে পড়ে ছাড়ে না।

চলবে…

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৪২
১২৫.
তালুকদার বাড়িতে অর্পণ ফিরেছে সন্ধ্যা সাতটায়।নিজের ঘরে দাঁড়িয়ে শার্ট’টের বোতামগুলো একটা একটা করে খুলতে নিলেই পিছনে থেকে দুটো অচেনা হাত পেচিয়ে ধরেছে।অর্পণ কপালে ভাজ ফেলে গা থেকে অচেনা হাতদুটো ছাড়িয়ে নিয়ে ঘুরে তাকায়।

কে?তন্নী!

হ্যা,আমি।কেমন আছো তুমি?

হুম,ভালো।কিন্তু তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি তোর সমবয়সী।সম্পর্কে আমি তোর বড়ো হই।তাই সম্মান দিয়ে কথা বল!

হুম!তোমাকে সম্মান দিতে আমার বয়ে গেছে।শুনো না,তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।

শুনার মতোও হলে অবশ্যই শুনবো।কিন্তু উল্টোপাল্টা ব’লে খবর আছে।কি বলবি বল?আর ব’লেই কে*টে পর!

বলছি,তন্নী নিজের নার্ভাস কাটিয়ে মুখে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে বলল,

আ..মি।

হুম।আমি।তারপর কি?

ইয়ে..মানে..আসলে আমি না ভালোবাসি।আই মিন অ..ন্ত…

তন্নীর কথা শুনে অর্পণ বিরক্ত হয়ে ধমক দিয়ে বলল,

ইয়ার্কি হচ্ছে হ্যা!সেই কখন থেকে ইয়ে,মানে,আমি,ভালোবাসি?এসব কি?আমি তোর বড় হই।আর তুই ভালোবাসার কথা আমাকে বলতে এসেছিস।থাপ্পড়িয়ে গাল লাল করে দিব!বেয়াদব।যা নিজের রুমে যা।যা বলছি।অর্পণের ধমকে তন্নী ঘাবড়ে গেলো।মন খারাপ করে নিজের ঘরের দিকে গাল ফুলিয়ে চলে গেলো।এইদিকে অর্পণের মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেলো।যাকে ভালোবাসি সে বুঝতে চায় না আমায়।আরেকজন আসছে নিজের ভালোবাসা নিয়ে।যতোসব ফাউল।গায়ের শার্ট টেনে খুলে নিচে ফেলে ওয়াশরুমে চলে গেল।এখন মাথা ঠান্ডা করা প্রয়োজন।মাথা ঠান্ডা না হলে নেক্সট মিটিংয়ের জন্য প্রস্তত হতে পারবে না।
ঝর্ণা ছাড়তে মাথায় পানি পড়তে লাগল। চোখে,মুখে পানি পড়তেই চোখ বুঝে নিতেই পুতুলের মুখটা ভেসে ওঠে।

গোসল শেষ করে নিচে নেমে আসে।কফিতে চুমুক বসিয়ে সোফায় পা টান করে বসে।এরমধ্যে রাবেয়া ডিউটি শেষ করে বাসায় আসেন।ছেলের ভাবমূর্তি এত শক্ত দেখে মনে মনে ব’লেন।এর আবার কি হলো?

ছেলের মাথায় হাত রাখতেই চোখ মেলে তাকায়।

মা..!

হুম কি হয়েছে? আমার বাপ আজ এত আপসেট কেন?কিছু হয়েছে?

মায়ের হাতটা ধরে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু বসিয়ে বলল,আমি একটা ভুল করেছি?কাউকে আঘাত করার আগে তার সত্যিটা জানো জরুরি ছিল।আমি ঠিক করিনি।

রাবেয়া ছেলের গালে হাত রেখে বলল,কাকে আঘাত করেছো আব্বু?কি তার অপরাধ?

তার অপরাধ সে কাউকে ভালোবেসেছে।এমনকি বারবার বলতে এসেও কথা শুনেছে। আমি আজ এই হাত দিয়ে তাকে আঘাত করেছি।আমি তার ভাই হয়ে তার ওপরের রাগারাগি করেছি।আমি তন্নীকে মেরেছি।

রাবেয়া ছেলের মুখ প্রাণে তাকিয়ে আছেন।

মা,আমাদের তন্নী কাউকে ভালোবাসে।এমনকি তার সন্তান নিজ গর্ভে ধারণ করেছে।আমাদের না জানিয়ে সে গোপনে বিয়ে আরো ছয়মাস আগে করেছে।আর সে ছেলেটা আর কেউ নয়।আমার বাবার বন্ধু জানে জিগারের ছেলে অন্তর।দিহান সাহেবের ছেলে।যার সাথে আমার ভালোবাসার মানুষটির বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।পুতুলের সাথে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার কারণ ছিল আমাদের বোন তন্নী।হ্যা মা,আমাদের তন্নীর সাথে অন্তর এর পরিচয় দুই বছরের বেশি।আর বিয়েতে ওদের মত ছিল না।সেখানে তন্নী আমি ভাবতেই পারছি না।এসব কি হয়ে গেলো?সবটা আরো আগে জানলাম না কেনো?ওকে বিদেশে পড়তে পাঠানো উচিত হয়নি।এমনকি এসব সম্পর্কে জড়িয়ে বিয়ে, বাচ্চা।চাচা,চাচী এখনো এসব জানে না।তাদের রিয়াকশন কেমন হবে বুঝতে পারছো?তাদের আদরের কন্যা তাদের কাছে বিষয়টি লুকিয়েছে।আমি কি করব? বুঝতে পারছি না।

অর্পণের কথা শুনে রাবেয়া চমকে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা সাফিন এবং তার বিবি মাসুদা মুখ দেখে তব্দা খেয়ে উঠে।কিছু বলার আর বোঝার বাকি নেই।তারা সবটা শুনতে পেয়েছে।দু’তলায় উপরে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে তন্নী কাঁদছে।দ্বিতীয়বারের মতো অর্পণ এর রুমে যখন ঢুকে এবং জোর করে তার মনের সব কথা ব’লতে নেয়।তখনই অর্পণ ঠাসস করে এক গালে থাপ্পড় মেরে দিয়েছে।এতখন ভাই বকেছে, মেরেছে।এখন বাবা,মা তার পুরো ব্যাপারটা শুনেছে।আজ তাকে আস্ত রাখবেনা।ভয়ে ঢোক গিলো।

সাফিন তালুকদার মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পড়েন।কিন্তু মাসুদা তালুকদার চুপটি করে ছিলেন না।মেয়ের অপর গালে শক্ত করে কষিয়ে চড় লাগান।আর তাতেই তন্নী উড়মুড়ু করে পরে যেতে নিলেই রাবেয়া ধরে ফেলেন।

মাসুদা কি করছো তুমি?এতো বড় মেয়ের গায়ে কেউ হাত তুলে?শান্ত হও।

ভাবি কি করে শান্ত হব?এই মেয়েকে বিদেশে পাঠালাম পড়তে।আর তিনি প্রেম করে বিয়ে বাচ্চা অবধি সব করে এখন এসেছে পরিবারকে জানাতে।সব যখন তোদের মন মতো করবি।তাহলে আমাদের এখন কেন বলেছিস?যা তুই চলে যা।তোর মতো মেয়েকে আমি চাই না।অসভ্য মেয়ে,মা,বাবার সম্মান নষ্ট করে এখন সাধু সাজা হচ্ছে। ইচ্ছে করছে!তন্নীর দিকে মারার জন্য হাত আবার উঠে।তন্নী ভয়ে বড় চাচীর পিছনে মুখ লুকিয়ে নেয়।

মাসুদা শান্ত হও।এভাবে রাগারাগি করে সমস্যা সমাধান হবে না।ওরা ভুল অবশ্যই করেছে।এমনকি তন্নী গর্ভবতী।এটা চাইলেও অস্বীকার করা যাবে না।আমি তোমার ভাইকে খবর পাঠিয়েছি।সে কাল সকালে বাড়িতে আসছে।সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্ত যেতে হবে।আর তাছাড়া দোষ দু’জনের তাই দুই পরিবারকে এটার সমাধান করতে হবে।

ভাবী ওরা কী মানবে?

কেনো মানবে না?সাফিন তুমি আইনের রক্ষক।তুমি শুধু মেয়ে বাবা হয়ে নয়।একজন পুলিশ অফিসার হয়ে ভাব।তারা দু’জন প্রাপ্ত বয়স্ক।এদের নিজস্ব মত রয়েছে।অন্তর এবং তন্নীর এটা আবেগের বয়স নয়।আর যা করার তারা অলরেডি করে ফেলেছে।এখন আমাদের দুই পরিবারের মন সায় না দিলেও মানতে বাধ্য হব।আর যে আসছে তাকেও অবহেলা করতে পারি না।এতে তার তোও কোনো দোষ নেই।আমাদের চোখে তন্নী,অন্তর দোষী হলেও শিশুটি নিষ্পাপ।তার সুস্থভাবে জম্ম এবং পৃথিবীর আলো দেখার অধিকার আছে।

১২৬.
এক সপ্তাহ পর…
আজ তালুকদার বাড়িতে ছোটখাটো বিয়ের আয়োজন হয়েছে।বিয়ে হচ্ছে তালুকদার বাড়ির মেয়ের।অসীম তালুকদার দিহান সাহেবকে সবটা ব’লেন।এবং পরবর্তী দুই পরিবারের মতেই বিয়ে হচ্ছে।জেফিন এর বিয়েতে সায় আছে।গরিব চাষা মেয়ে রেখে জাতের মেয়ে একটা ছেলে চয়েস করায়।তিনি গায় গুই প্রথমে করলেও পরে আপত্তি করতে পারেননি।

এইদিকে বিয়ের আসরে বর বেশে বসে আছে অন্তর,এবং কনে তন্নী।অর্পণ গম্ভীর মুখে সবটা করছে।দুই পরিবারের সামনে বিয়ের আনুষ্ঠানিক শেষ হতেই গেইটের সামনে আসে।পুতুল আজ তালুকদার বাড়িতে পা রাখেনি।দূরে দাঁড়িয়ে বিয়ের সবটাই দেখলো।ছেলে,মেয়ে কবুল বলতেই সে কয়েক পলক তাকিয়ে চলে যেতে নিলেই অর্পণের সামনে পরে গেলো।পুতুলকে দেখে অর্পণ পকেটে ফোন রেখে সামনে ঘুরে এলো।

পু.তু.ল তু.মি!

পুতুলের চোখ দুটো গম্ভীর আর মুখ শক্ত।ঠোটেঁ কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি।এই হাসিতেই ব’লে দিচ্ছে তার না হওয়া বর আজ তাদের গ্রামের মেয়েকে ঘরে তুলছে।অবশ্য কোটি টাকার সম্পত্তির মালিকের মেয়েকে বিয়ে অনায়াসে করা যায়।কিন্তু গরিবের মেয়েকে নয়।গ্রামের লোকের কথা শুনে প্রথমে বিশ্বাস না হলেও এখন নিজ চোখে দেখতে পাওয়া সেটা অস্বীকার করবে কি করে?অর্পণ তালুকদার তার বোনকে খুশিমনে বিয়ে দিচ্ছে।সবটা দেখতে পেয়ে ওহ পুতুল চুপ।চুপচাপ গাড়িতে উঠে দুই ভাইকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেলো।এইদিকে অর্পণ কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে।তাঁকে আবার ভুল বুঝলো।গাছের সাথে হাতটা জোর আ*ঘাত করে বলল,শিট,শিট।হাত কে*টে র*ক্ত পড়ছে।অর্পণের সেইদিকে খেয়াল নেই।

বোনকে বিদায় দিতে দিতে অন্তরের পাঞ্জাবি গলারটা ঠিক করতে করতে বলল,

আমাদের দূর্বল ভেবো না দুলামিঞা।আমরা মোটেও দূর্বল নই।তোমার কারণে যদি কোনোদিন আমার বোনের চোখ থেকে এক ফোটা পানি ঝরে।তাহলে সেই দিন বোঝাবো অর্পণ কি চিজ?এটাকে হুমকি ভাবো।কিংবা উপদেশ।

স্বাধীন মেয়েকে হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকতে দেখে ওহ চুপ রইলো।গ্রামের লোকের কথা তাহলে মিথ্যে নয়।তাদের সেই বরযাত্রী এখন তালুকদার বাড়ির মেয়ে জামাই।তারা বন্ধু থেকে আত্মীয়তে রূপান্তরিত হয়েছে।

পুতুল নিজের মনকে শক্ত করতে বিছানার চাঁদর খামচে ধরেছে।নিজেকে স্বাভাবিক করতে সিদ্ধান্ত নিলো এই গ্রামের মাটিতে সে আর থাকবে না।সে কাপড়ের ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছে।সকাল হতেই নিজ আসল গন্তব্যে চলে যাবে।শুধু মামাকে জানিয়েছে।

সকাল বেলা পুতুল ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশনের থেকে নেমে গেলো।একটা সিটে ব্যাগটা রেখে তার পাশে নিজে বসে ভাবতে লাগল।এরপর শুরুটা কোথা থেকে করবে?চোখ বুঝতেই মামার কথাগুলো মনে করে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে।যেখানে তার ভবিষ্যৎ পরে আছে।

এইদিকে অর্পণের রাতে ঘুম হয়নি।ভোর হতেই রুহিতপুর গ্রামে ছুটে আসে।আর আসতেই শুনতে পায় পুতুল এই গ্রাম কাল রাতেই ছেড়ে চলে গেছে।কিন্তু কোথায় যাবে?শহরে তার কে আছে?অর্পণ ঢাকায় বাইক নিয়ে ছুটে চলে।আষাঢ়ের বৃষ্টিতে তার পুরো শরীর ভিজে একাকার সেই দিকে মন নেই।মুখে বিরবির করছে।পুতুল ব’লে।

অপরদিকে পুতুল ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশনে বসে আছে।আষাঢ়ের বৃষ্টিতে সে-ও ভিজে একাকার।কিন্তু বৃষ্টিটা আজ তার গায়ে লাগছে না।সে অন্য চিন্তায় ব্যাস্ত।অর্পন নিজের লোকের মাধ্যমে জানতে পারে পুতুলের বর্তমান ঠিকানা।সেখানে পৌঁছে বাইক থেকে নেমে বগিতে এবং সব জায়গায় চেক করতে থাকে।আর অবশেষে ভালোবাসার মানুষটিকে পেয়ে যেতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে।

পুতুল চোখ মেলে তাকাতেই অর্পণকে সামনে দেখতে পায়।তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই অর্পণ তার হাত ধরে ফেলে।

পুতুল তার হাতটা ছাড়িয়ে নিতে হাত মুচড়ায়।কিন্তু আজ অর্পণ ওহ তাকে ছাড়ছে না।পুতুলের হাতটা শক্ত করে ধরেছে।

অতিরিক্ত বৃষ্টি জন্য সবাই দূরে দাঁড়িয়ে আছে।আশেপাশে কিছুর দেখা মিলছে না।পুতুল মুখ ঘুরিয়ে সামনের রাস্তার প্রানে তাকিয়ে।

পালিয়ে যাচ্ছো।আমি তোও জানি আমার আদূরিনী বউ পালিয়ে যেতে পারে না।সে আর পাঁচটা মেয়ের মতো ভীতু ডিম নয়।সে সাহসী। সে লড়তে জানে।সে আমার আদূরনী।আমার ভালোবাসা।ইয়েস,আমি আমার সাহসী এই ধানিলংকাকে ভালোবাসি।তাকে নিজের করে পেতে চাই।একটিবার শুধু মাএ একটিবার বিশ্বাস করে আমার এই হাতটা শক্ত করে ধরে দেখো।কথা দিচ্ছি তুমি ঠকবে না।আমি আছি তোমার কাছে।তোমার ছায়া হয়ে।শুধুমাত্ত তোমারই জন্য।

কালো বোরকা ভিজে আছে।তার সাথে পুত্তুলের চোখের পানি।সুর্দশন পুরুষটি তার থেকে উঁচু হওয়া তার কপালের চুইয়ে পানির ফোটাগুলো তার কালো বোরকা আবরণে মুখ বরাবর পড়ছে।পুতুল নিজের হাত ছাড়াতে না পেরে মাটিতে বসে পড়ে।অর্পণ তবুও পুতুলের হাতটি ছাড়ে না।বরং পুতুলের বরাবর বসে,উল্টো ওপর হাতটির সাহায্য পুতুলের গালে হাত রাখে।

প্লিজ চলে যেওনা।আমি নিঃশ হয়ে যাবো তুমি বিহীন।আমি তোমাকে ছাড়া একটা মুহূর্ত বাঁচতে পারব না।বিকজ আই লাভ ইউ।আই রেয়লি লাভ ইউ সো মাচ।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে