চক্ষে আমার তৃষ্ণা পর্ব-৩৭+৩৮+৩৯

0
134

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৩৭
১১৫.
অর্পণের পাগলামি দেখে অসীম তালুকদার ছেলেকে টেনে নিয়ে যেতে চাইলেন।কিন্তু অর্পণ এখান থেকে যেতে চায়না।সে যাবে না।

তার পুতুল যে এখনো তার ডাকে সারা দেয়নি।সে যাবেনা।তিনজন পুরুষের সাথে দস্তা দোস্তি করে হাফিয়ে যায়।মাটিতে দুই পা ভাজ করে বসে পড়ে।ছেলের এই কষ্ট মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।

এইদিকে রেনুর ঘরের দরজা মিলন,সাজু এসেই আরো আগেই খুলে দেয়।রেনু দরজা খোলা পেয়ে বের হতেই বাড়ির অবস্থা দেখে দরজার সাথে এলিয়ে পরে যান।মিলন,সাজু মায়ের কোমড় জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।

ওরা আমার আপুকে মেরে ফেলেছে।আমার আপু আর নাই।ওই দুষ্ট লোকগুলো খুব খারাপ।খুব খারাপ।আমি এদেরকে ঘৃনা করি।মিলনের কথায় কোনো প্রতি উত্তর রেনু করেনি।ছেলেদের কে সরিয়ে ভীরু পায়ে উঠোনে পা রাখে।স্বামীর কাঁধে হাত রাখতেই হাতটা রক্তে লাল হয়ে যায়।

এই শুনছেন।আপনি এভাবে মরার মতো পড়ে আছেন কেন?আপনি তাড়াতাড়ি উঠুন।ওরা আপনার পুতুলকে মেরে ফেলবে।জলদি যান।ওকে নিয়ে আসুন।ওহ খুব কষ্ট পাচ্ছে।আপনি তোও পুতুলের বাপ।তাইলে বাপের সামনে কি করে মেয়েকে ছিনিয়ে নিল?কি করে?আপনি কেন প্রতিবাদ করলেন না?ওদের কাছ থেকে কেন আমাদের মেয়েকে রক্ষা করতে পারলেন না?কেন আমার মেয়েকে বাড়িতে এসে পুড়িয়ে মারবে।কেন?উঠুন আপনি।আপনার এসব নাটক দেখার সময় আমাদের নেই।আপনি মাটিতে পড়ে ভং করবেন।আর আমি চুপচাপ দেখব।এসব চলবে না।আপনি আমার মেয়েকে নিয়ে আসুন।কোথা থেকে নিয়ে আসবেন আমি জানি না?শুধু জানি আমার মেয়ে ফিরে আসবে।তার স্বপ্নটা এখনোও অসম্পূর্ণ।তার এত বছরের সাধনা এভাবে মিথ্যে হতে পারে না।কি হলো আপনি উঠেন না কেন?বুঝছি।আপনি ভালো কথা শুনবেন।দাঁড়ান দেখাচ্ছি মজা।রেনু রান্না ঘর থেকে কলসি নিয়ে এসে সবটুকু পানি স্বাধীনের মাথায় ঢেলে দিল।

মাথায় হালকা আঘাত লাগায় রক্তগুলো পানির সাথে ধুয়ে যাচ্ছে।চোখে পানি পড়তেই জ্ঞান ফিরে আসে।কিন্তু স্বাধীন কোনো কথা ব’লে না।একধ্যাণে পুড়ে যাওয়া ঘরটার দিকে তাকিয়ে রয়।চোখের সামনে ছোট্ট পুতুলের মুখটা ভেসে ওঠে।তার পুতুল হাঁসছে,খেলছে,দৌড়াচ্ছে।ওই তো,দুই পাশে লাল ফিতা দিয়ে দুটো বেনি করা।সে বাড়ির আঙ্গিনায় বড় আম গাছটার নিচে দাড়িয়ে কি সুন্দর আম কুরাচ্ছে।আবার সেই আম ওড়না আঁচলে তুলে নেয়।ওড়নায় ভরে গেলে বড় বালতিতে রাখতে যায়।আম রাখার সময় নিজেও একটা কাচা আমে কামড় বসিয়ে দিলো।টক আমে তার দাঁত সিরসির করে।তবুও আম খাওয়া বন্ধ হয়নি।মনের সুখে আম খেতে খেতে অপর একটি আম মামার দিকে এগিয়ে দিচ্ছে।যার মানে মামা তুমি খাবে।স্বাধীন না ব’লে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেই সে হাসতে হাসতে হাওয়া মিলিয়ে গেলো।

পুতুল,তার আম্মা কই?মাটি থেকে উঠতে গিয়ে আহহহ করে উঠল।তার পুরো শরীরের মারের দাগ।সে ব্যাথা সয্য করে,দাঁড়ানো চেষ্টা করে।ডাকতে থাকে।

-; আম্মা।আম্মা আপনি কই?আমার পুরো শরীরের মারের দাগ।আম্মা আপনি দেখে যান।আপনার ছেলেরের গ্রামের কিছু পাঁজি লোক মারছে।আমি হাঁটতে পারছি না।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আম্মা।পুরো শরীর ব্যাথায় নীল হয়ে আসছে।আপনি তেল গরম করে আপনার মামীর কাছে দিয়ে যান।সে আমায় যেন ভালো করে মালিশ করে দেয়।আপনি তোও জানেন।দিনের পর দিন বিছানায় পড়ে থাকতে পারবো না।হার খাটাখাটুনির মানুষ আমি।দিন রাত যার পরিশ্রম করে ঘাম ঝড়ে।হালাল পথে অর্থ উর্পাজন করে।সে কি সুয়ে,বসে দিন কাটাতে পারে।আম্মা।আম্মা।ওহ আপনিও আমার কথা শুনে আসছেন না।ঠিক আছে আমি এভাবেই মাটিতে পরে থাকব।যতখন না আপনি আপনার ছেলেকে ঘরে না পাঠাচ্ছেন।ততখন পর্যন্ত আমিও ঘরে যাব না।আমি এভাবে পরে মরে থাকব।যাব না।কোথাও যাব না।

আমমম্মা।

স্বাধীনের চিতকারে রাতটা আরো ভয়াবহ হচ্ছে।রেনু স্বামীর সামনে দাঁড়িয়ে শব্দ করে কাঁদছে।তার পাশে দুই ছেলে কাঁদছে।তাদের কারো দিকে তার মনযোগ নেই।শুধু পুতুলকে খুজঁছে।স্বাধীন আবারও জ্ঞান হারিয়ে ফেলতেই অসীম তালুকদারের কথামতো জিহান,রিহান তাকে হাসপাতালে নিয়ে ছুটে।অসীম তালুকদার ছেলের পাগলামি সামলাতে পারছেন না।এইদিকে রাবেয়া তার ফোন ধরছে না।কি করবেন মাথা কাজ করা করছে না?কোনোরকম ভাইকে ফোনে সবটা বলতেই সে নিজেই ফোন করে গ্রামের থানা থেকে লোক পাঠাচ্ছেন।সাফিন তালুকদারের কথামতো পুলিশ আসতেই আসতেই সকালের আলো ফুটছে।ফজরের আজান কিছুখন আগেই শেষ হয়ে গেছে।প্রতিদিনের মতো পুতুল আজ ভাইদের ডাকেনি।তাদের নামাজের জন্য বিরক্ত করেনি।আর না নিজে অযু করে নামাজের জন্য দাঁড়িয়েছে।অথচ আজ পুতুল কাউকে না ডাকলেও সবাই জেগে আছে।ভোরের আজানে তাদের নড়চড় নেই।পুলিশ এসেই পুরো বাড়িটা দেখছে।আগুনে পুড়ে যাও ঘরটাতে ভালো করে পরখ করে ফোনে কাউকে তথ্য দিচ্ছে।সেই তথ্য মতাবেগ পুলিশ অফিসার এগিয়ে আসে অসীম তালুকদারের দিকে।থানার ওসি তার কথাগুলো ব’লে চলে যান।অসীম তালুকদার ছেলের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন।অর্পণের পাগলামির জন্য ডাক্তার এই বাড়িতে আনতে খবর নিয়েছিল।কিন্তু,ছুটির দিন হওয়া ডাক্তার নেই।স্বাধীনকে যে ডাক্তার দেখানো হয়েছে।সেই ডাক্তার সাহেবকে এই বাড়িতে এনে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দেন।অর্পণ গাড়িতে মরার মতো পরে আছে।ঘুমের মেডিসিন শেষ হলেই আবার পাগলামি করবে।চোখের সামনে ছেলের কষ্ট দেখে তার বুক ফাটছে।তাহলে ওই মেয়েটিকে যারা হারালো।তাদের কেমন হচ্ছে?সেইসব ভাবতেই ভিতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বের হয়।মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন।পুতুলের অন্যাকারীদেরকে শাস্তি দিবেন।ওদেরকে উচিত শিক্ষা দিয়ে দিবেন।

১১৬.
আমাদের জীবনে কখনো আঘাত না পেলে না-কি ঘুরে দাঁড়ানো যায় না।আঘাত পায় ব’লে মানুষ নিজেকে সূধরে নেয়।আর এই সূধরে নেওয়াটা মানুষের ধর্ম জ্ঞান হয়ে উঠে।নিজেদের ভুলগুলো সংশোধন করে সামনে চলার দিনগুলোকে আরো সুন্দরময় গড়ে তোলে।রাবেয়া অপারেশন রুম থেকে বের হয়ে যায়।ওটির পোশাক চেঞ্জ করে একটা কেবিনে বসেন।একটি নিষ্পাপ মেয়েকে নিজের চোখের সামনে পুড়তে দেখবেন।তা মানতে খুব কষ্ট হচ্ছিল।ছেলে যাকে ভালোবাসে তাকে একটিবার দেখার শখ জেগেছিল।ভাগ্যিস দেখতে গিয়েছিলেন।তাই তো এই ছোট গ্রামে পা রাখতেই শুনতে পায়।এক অসহায় মেয়ের কান্না।যা তার মতো নরম মনের নারীর সর্বঅঙ্গ কাঁপিয়ে তুলে।মাথায় শুধু একটা চিন্তা ছিল।এই মেয়েটিকে বাঁচাতে হবে।মেয়েটির গল্প এভাবে অসমাপ্ত হতে পারে না।তার লড়াই মাঝ পথে কেন এভাবে থেমে যাবে।সে তো কোনো অন্যায় করেনি।তাহলে তাকে কেন বিনা অপরাধে শান্তি পেতে হবে।যারা দোষী তাদেরকে এটার মূল্য দিতে হবে।তার আগে এই আগুন পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ার আগে উদ্ধার করতে হবে।রাবেয়া ঘরের পিছনদিক দিয়ে পুতুলকে অনেক কষ্টে বের করতে গিয়েছিল।কিন্তু পিছনে জামার শেষ পাড়ে আগুন লাগতেই কোনো দিক দিশা না পেয়ে পুতুলকে পানিতে ধাক্কা দেন।পুতুল যখন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে ব্যাস্ত।তখন রাবেয়া তাকে বাঁচিয়ে নেন।চারদিকের স্বরগোলে,হৈচৈ কেউ পুতুলের পানিতে পড়ার শব্দটা খেয়াল করেনি।গায়ের কাপড় ছিঁড়া।গ্রামের মহিলারদের টানাটানিতে হয়তো তখন ছিড়ে গেছে।তার ওপর শীতের শেষ সিজনের ঠান্ডা পানিতে পরে যাওয়া কাপাকাপি শুরু,আর দেখতে একদম বাজে লাগছিল।পুতুল পানি থেকে উঠতে গিয়ে টের পায় তার একহাত ভেঙে গেছে।প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে।রাবেয়া নিজের গায়ের চাঁদর দিয়ে পেচিয়ে পুতুলকে বুকে টেনে নিলো।পুতুলের অবস্থা খারাপ দেখে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেওয়া হয়।তাকে নরমাল বেডে রেখে টিটমেন্ট করে।অন্য ডাক্তারের আন্ডারে দেওয়া হয়।রাবেয়ার পরিচিত ডাক্তার বান্ধবীকে পুতুলের পুরো ঘটনা বলতেই।তিনি অবাক হন।গ্রামের মানুষ এতটা ডেস্পারেট কেন?জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারবে। মাই গড।ভাবতেই কলিজা কেঁপে ওঠে।

পুতুলের জ্ঞান ফিরে আসতেই নিজেকে হাসপাতালের বেডে দেখতে পায়।নিজের মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখে হার মেনে নিয়েছিল।কিন্তু মা,মামা,মামীর এত কষ্ট এত পরিশ্রম।তার পথে পথে বিপদের সাথে লড়াইয়ের গল্পটা এভাবে ইতি টানবে।মানতে কষ্ট হচ্ছে।সব যখন চোখের সামনে ভেসে ওঠেছিল।পুতুল তখন নিজের মনোভাব পরিবর্তন করে।সে কেনো মরবে?সে মরবে না!তার বাঁচার অধিকার আছে।হার মেনে নেওয়ার নাম জীবন নয়,লড়াই করে বেঁচে থাকার নামই যখন জীবন।তখন সে বাঁচবে।এতো কষ্ট করে তীরে এসে তরী ডুবানোর কথা সে ভাবলো কি করে?সে বাঁচবে।আর সেটা বাঁচার মতোই বাঁচতে হবে।যারা তার সাথে অন্যায় করেছে।তাদের কেউ কৈফিয়ত দিতে হবে।পুতুল এদের কাউকে ক্ষমা করবে না।তার সাথে ওই অর্পণ তালুকদারের খবর আছে।তার হিসাবে অর্পণ তালুকদারও তার হাত থেকে রেহাই পাবেনা।যে মিথ্যে কলঙ্ক তার গায়ে লেগেছে তার খেসারত তাকেও গুনতে হবে।

চলবে….

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৩৮
১১৭.
পুতুল জীবনের কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে আছে।যেখানে কে তার আপন।আর কে তার পর বুঝতে চাইছে না।মা,বাবা-র প্রেমের বিয়ে ছিল।কিন্তু সংসার বেশি দিনের হলো না।মাস কয়েক ব্যাবধানে হেরে গেলো রাজিয়ার দেখা স্বপ্নের ঘর।সেই কাল বৈশাখী ঝড়ের মতো লন্ডভন্ড হলো তার জীবন।তা আর ঠিক হলো না।রাজিয়ার মতো আর কোনো মেয়ে যেন ভালোবেসে ঠকে না যায়।আর কোনো মেয়ে তার স্বপের পুরুষকে পাওয়ার আশায় মা,বাবার সম্মান কে ধূলিসাৎ না করে দেয়।যদি করে তা কিন্তু আহামরি সুখের হয় না।কিন্তু আমাদের মেয়েদের আঠারো পূর্ণ হওয়ার আগেই যে সময়টা যায়।তাতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি।পর পুরুষের মিষ্টি কথায় ভুল পথে পা দিয়ে দেই।জীবনের মোড়টা তখনই পরিবর্তন হয়।মা,বাবার কোনো কথা তখন আর ভালো লাগে না।এক সময় মনে হয়।তারাই আমাদের শত্রুর।কি অদ্ভুত না।যে মা নয় মাস সন্তানকে গর্ভে নিলো।তার কথা ভাবার সময় নেই।যে বাবা তাকে মানুষের মতো মানুষ করতে দিন,রাত পরিশ্রম করছে।মাথার ঘাম পায়ে ফেলছে।তার জন্য মায়া,সহানুভূতিটুকু তখন কাজ করে না।প্রেমের জোয়ারে সে ভেসেছে।তার সাথে অনাকাঙ্গিত কিছু না হওয়া পর্যন্ত থামবে না।তারপর একদিন ভালোবাসার মানুষটি তাকে মাঝ পথে ফেলে চলে যায়।তখন নিজের মধ্যে ডিপ্রেশন,হতাশা ছাপ ফেলে।নিজেকে শেষ করে দেওয়ার ইচ্ছে যাকে।নিজের মৃত্যু চাই।অবশেষে নিজ বাড়িতেই নিজের ছোট বেলা মনে পড়ে না।তার বাড়িতে যেখানে ছোট থেকে সে হেঁসে খেলে শৈশব,কৈশর কা*টলো।তার সেই প্রিয় ঘড়টিতে একাত্বিবোধ কিছু সময় কাটতেই।নিজের বিবেকের কাছে হেরে গিয়ে গলায় ওড়না বসিয়ে মারলো টান।পায়ের নিচের চেয়ারটা লাথি মারতেই সেটা ঘরের এক কোণে পরে রইল।ফ্যানের সাথে তার প্রিয় রঙিন ওড়না ঝুলছে।তার সাথে নিজের জীবনটা সেখানেই আ*টকে।নিশ্বাস নিতে না পেরে চোখ উল্টে আসলো।হাত,পা তখন ছোড়াছুড়ি করছে।সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছে কেউ তার ঘরের দিকে ছুটে আসুক।আর তাকে বাঁচিয়ে দিক।কিন্তু কেউ আসলোনা।সবাই নিজেদের কাজ নিয়েই ব্যাস্ত।মা,বাবা জানলো না।তার আদরের কলিজাটা ওই ঘরের দরজা, জানালা বন্ধ করে নিজের জানটা দিয়ে দিয়েছে।যখন জানলো।যখন দেখলো।তখন কি হলো?

তখন,তখন মা,বাবার চিতকারে বাড়ির দেয়ালটাও কেঁপে ওঠে।যে সন্তানকে মা,বাবা বিশ’টা বছর লালন-পালন করলো।মানুষের মতো মানুষ বানাতে চাইলো।সেই সন্তান দুইদিনের প্রেমের জন্য।তাদের বিশটা বছরের
ভালোবাসা।তাদের স্নেহ,মায়া,মমতাকে লাথি মে’রে চলে গেছে না ফিরার দেশে।তবুও মা,বাবা সন্তানের মৃত্যু বছরের পর বছর ঘুরে যায়।তারা ভুলতে পারেনা।নামাজের শেষে মোনাজাত আল্লাহ দরবারে তাদের একটাই চাওয়া।তাদের সন্তান যেন ভালো থাকে।তাদের আযাব,তাদের কষ্ট যেন মা,বাবা নিজের করে চায়।আত্মহত্যা কখনোই সমস্যার সমাধান নয়।আত্মহত্যা করলে শুধু এই সুন্দর পৃথিবী হারাবে না।তোমার আখিরাত,তোমার জান্নাত হারালে। আত্মহত্যা জগন্য।যা আমাদের সবকিছু ঠিক করে দিতে নয়।বরং নিঃশেষ করে দেয়।আরে আত্মহত্যা কেনো করবে?যার জন্য করলে দিন শেষে দেখা যায় সে অন্য কারো সাথে খুব ভালো আছে।মাঝ থেকে তোমার মা,বাবার বুক খালি হলো।যে তোমার ভালোবাসা মাঝ পথে ছেড়ে চলে যায়।তাকে দেখিয়ে দেও।তাঁকে ছাড়া তুমিও দিব্যি ভালো আছো।আর কারো জন্য না হোক।অন্তত যাদের জন্য তুমি এই দুনিয়ায় আসলে তাদের মুখের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকো।মা,বাবা-র দিকে মায়া,এবং হাসি নিয়ে তাকালেও সুন্নত আসে।তাদের জন্য নিজেকে ভালো রাখো।এবং নিজেকে শক্ত রাখো।যাতে পরিবর্তিতে তোমাকে কেউ দূর্বল ভেবে আঘাত করা তোও দূরের কথা।তোমার ব্যাপারে কিছু ভাবতে গেলেও দশবার চিন্তা করে।

পুতুলের চোখে এক অন্য সূচনা দেখা যায়।পুতুল নিজেকে একটু একটু করে শক্ত করছে।নিজের সাথে করা অন্যায় জবাব সে ঠিকই ফিরিয়ে দেবে।সেটা সময়ের সাথেই দিবে।পুতুল বাড়িতে ফিরে এসেছে।সেই ঘটনার আজ পনেরো দিন হতে চলল।পুতুল বেঁচে আছে।এবং সুস্থ আছে।এতটুকুতেই বাড়িটায় আবারও প্রাণ ফিরে আসে।সবার মুখে হাসি ফুটে।তাকে নিয়ে মামা,মামী,ছোট তিন ভাইয়ের আহ্লাদে শেষ নেই।কিন্তু মামাকে নিজের সুস্থতার খবরটুকু ব’লে সেই যে ঘরে খিল দিয়েছে।আর বের হয়নি।নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পুরোটা সময়ই বইয়ের মধ্যে দিয়েছে।সামনে তার এইচএসসি পরীক্ষা।এরপর তার স্বপ্নের দিকে আরেক পা এগিয়ে যাওয়া।

পুতুলের মনে কি চলছে তা রাবেয়া জানে না।শুধু এতটুকু জানে মেয়েটা বাঁচুক নিজের মতো করে একটু বাচুঁক।তারপর সময় করেই না হয় ছেলের জন্য হাত চেয়ে নিবেন।কিন্তু অর্পণকে হারানোর ভয়টা মনের মাঝে গাড়ো হয়েছে।তাইতো অসীম তালুকদার ছেলের জন্য পুতুলের কাছে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব রাখতেই সে বেঁকে বসে।এসব বিয়ে সাদি সে করবে না।আর যখন শুনলো অর্পণ তালুকদার তাকে ভালোবাসে।সেটা আজ থেকে নয়।অনেক বছর ধরে তখন পুতুলের বিবেক নাড়া দেয়।একে তোও বিয়ে করবে না।তার ওপর প্রেমের বিয়ের কথা, প্রশ্নই আসে না।তখনই সাফ সাফ না করে দেয়। অসীম তালুকদার পুতুলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

আম্মু আপনাকে জোর করার সাধ্য আমার নেই।আমি শুধু আমার ছেলের দিকটা ভেবেই বলেছিলাম।আপনার দিকটা একবারও ভাবা হয়নি।আসলে মেয়ের বাবা কখনো হয়নি তোও।তাই বুঝতে পারিনি।একটা মাত্র ছেলে।তার কষ্টটা চোখে দেখতে পারছিলাম না।তার কান্না,তার কষ্ট,তার আপনাকে হারানোর ভয়টা।আমি বাবা হয়ে মানতে পারিনি।তাই সেই তালেপুর গ্রাম থেকে ছুটে আসছি। চেয়ারম্যান হয়ে নিজের লোকের দ্বারা প্রস্তাব পাঠাই নিই।ভাবলাম ছেলের জন্য আর কিছু হোক বা না হোক।সে একটা ভালো কাজ করেছে।ওহ আপনার মতো নরম মেয়েকে ভালোবেসেছে।আপনার মতোও মেয়ে যে ঘরে যাবে।তার কষ্ট নামক জন্তনা থাকবে না।
আপনি হচ্ছে আসমানের চাঁদ।আপনাকে আমার বাড়ির পুত্রবধূ করে নয়।একটা মেয়ে করে নিয়ে যেতে চাই।যার অভিভাবক,যার মা,বাবা হওয়ার সৌভাগ্য আমাদের হবে।আমার ঘরে কোনোকিছুরই কমতি নেই।তবে হ্যা,একটা মেয়ের কমতি ছিল।কিন্তু আপনাকে পেলে সেই কমতি আর থাকবে না।আমার একটা মেয়ের বাবা হওয়ার যে ইচ্ছে, যে আপসোস ছিল!তা আর থাকতো না।কিন্তু আপনাকে আমি জোর করতে পারিনা।ছেলের জন্য খারাপ লাগছে।কিন্তু সয়ে নিব।ছেলে হয়তো একটু আকটু পাগলামি করবে।তবুও সমস্যা নেই মানিয়ে নিতে পারব।আজ পর্যন্ত কখনো কেউ আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয় নিই।সেটা নিজ ব্যাবসার কাজে কিংবা মানুষের জন্য সমাজ সেবায়।আমাদের পারিবারিক বিজনেস আমাকে দুই হাতে উচ্চ শেকড়ে টেনে নিয়ে গেছে।সমাজ আর মানুষকে যেমন সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলাম।তেমনই তাদের ভালোবাসা,দোয়া আর সম্মান দুই হাতে কুড়িয়ে পেয়ে ছিলাম।কখনোই খালি হাতে ফিরিয়ে দেয় নিই।এই প্রথমবার কেউ আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে।আর আমি চুপচাপ মেনে নিলাম।তবে মেয়ের বাবা না হওয়ার আপসোসের পাশাপাশি আরেকটা যোগ হলো।আমি আমার সন্তানের জন্য এই প্রথম কিছু দিতে পারলাম না।সে সব সময় বলতো তার একটা জিনিস চাই।প্রত্যেক জম্মদিনে এটাই তার সর্বপ্রথম ওহ সর্বশেষ বুলি হতো।আমি বলতাম কি চাও।কিন্তু সে বলতো সময় হোক চেয়ে নিব?আর আমি হেঁসে সায় দিতাম।আর আজ তার ত্রিশতম জম্মদিনে তার প্রিয় ভালোবাসার মানুষটিকে চাইছে।কিন্তু আমি তার বেস্ট গিফটটা দিতে পারলাম না।সে অপেক্ষায় থাকবে।কিন্তু তাকে বলার মতো শব্দ আমার মুখে আর আসবে না।তোমার নতুন জীবনের জন্য দোয়া রইলো।

অসীম তালুকদার নিরাশ হয়ে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে।অপরদিকে পুতুল তার যাওয়ার প্রাণে তাকিয়ে রইলো।মানুষটা তার কাছে এক মুঠো আশা নিয়ে এসেছিলো।দেখা করলো কালো পর্দার আড়ালেই দাঁড়িয়ে।কথাও বলল।কিন্তু তার পরবর্তীতে পুতুল নিজ লিখাটায়।তার বক্তব্য জানিয়ে দিতেই অসীম তালুকদারের মুখের হাসি কালো আঁধারে ঢাকা পরে।পুতুল নতুন করে সংসার নিয়ে ভাবতে চায় না।তার ওপর যাকে ঘৃনা করে তাকে ভালোবাসবে কি করে?আর ভালোবাসা সবার জন্য রঙিন হলেও পুতুলের কাছে তা শুধুই নীল বিষ।যার বিষে তার মায়ের মৃত্যু হয়েছিল।তাতে সুখ কম দুঃখের গল্পটা একটু বেশিই।আর এমন জীবন পুতুল চায় না।তাই তোও বাবার মতো লোকটা তার দূয়ার এসে হাত বাড়াতে চাইলো।মেয়ে ব’লে স্বীকৃতি দিতে চাইলো।তাকেই প্রত্যাখান করলো।পুতুল এসব প্রেমের মায়া জড়াবে না।সে তার স্বপ্ন নিয়েই ব্যাস্ত।

চলবে….

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৩৯
১১৯.
পুতুল বিয়ের জন্য অস্বীকার করেছে।রাবেয়া ভিতরে ভিতরে কষ্ট পাচ্ছে।কিন্তু স্বামী ও ছেলেকে বুঝতে দিলো না।অর্পণ নিজের রুমে এসে বসে পড়ে।ছোট নোট বুকে কলম দিয়ে লিখতে থাকে।

তোমার কাছে যেটা নীল বিষ।আমার কাছে সেটা আমারই ভালোবাসা।আমি জেনেবুঝে সেই নীল বিষ নামক প্রেমের বিষকে প্রাণ করেছি।সে আমার আর আমার ভালোবাসাকে গ্রহণ করতে চাইছে না।কিন্তু আমি একবার নয়।তোমার কাছে বারবার ছুটে যাবো।প্রেমে তোও মরেছি।তবুও তোমাকে পাওয়ার আশায় ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখবো।তোমাকে আমার মায়া পড়তেই হবে।সেটা হয়তো আজ কিংবা কাল।

রেনু তুমি এসব কি বলছো?তোমার মাথা ঠিক আছে।পুতুলের জন্য তালুকদার বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসছে।আর আমি জেনে শুনে এত বড় দামড়া ছেলের সাথে বিয়ে দিব।ওই ছেলে ঠিক সময় বিয়ে করলে এতদিনে বাচ্চার বাপও হয়ে যেতো।পুতুলের সাথে কোনোভাবেই যায় না।ছেলের কীর্তিকলাপ যতটুকু গ্রামের মানুষের থেকে শুনেছি।সে যে ততোটাও ভালো নয়।আর সবকিছু জেনে বুঝে আমি ওদের কাছে মেয়ে দিব।কখনো না।ভাগ্নীটা আমার আর তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত এবং মাথাটা আমিই ঘামাবো।তারা আজ এসেছে আমার মেয়ে নিজে প্রত্যাখান করেছে।ফির যদি আসে তবে কিন্তু আমিও ছেড়ে কথা বলবো না।সাহস কত!এত বড়ো ছেলের জন্য আমার মেয়ে চায়।দুনিয়ায় এত মেয়ে থাকতে আমার মেয়েকে কেন চোখে পড়লো?

আচ্ছা আপনি একটুও শান্ত হন।এত অল্প কথায় রাগ কেন করছেন?তাছাড়া আমাদের পুতুল কিন্তু রাজি হয়নি।তাহলে এসব নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ আছে।পুতুল নিজের মতো সবকিছুই যদি গুছিয়ে উঠতে পারে।তাহলে আমাদের ওকে সার্পোট করা উচিত।ওরা কাজটাকে সম্মান দেওয়া উচিত।আর রইলো অর্পনের বয়সের কথা।হ্যা মানছি পুতুলের থেকে বয়সের গ্যাপটা একটুও বেশিই।কিন্তু আমি ওইদিন ওই ছেলেকে আমাদের মেয়ের জন্য যেভাবে কষ্ট পেতে দেখেছি।তাতে খারাপ কিছুই পায়নি।আর সবচেয়ে বড় কথা জম্ম,মৃত্যু,বিয়ে এসব ওপরওয়ালাই ঠিক করে রাখেন।সে ভালো জানেন কার সাথে কার জুড়ি লিখা হবে।আমি আসছি।রেনু নিজের কথাগুলো ব’লেই স্বামীর সামনে থেকে সরে পরে।স্বাধীন বউয়ের চলে যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে বিরবির করে কিছু ব’লে চুপ হয়ে যায়।

পুতুলের গায়ে কলেজের ড্রেস।তার ওপর এপ্রোন পড়া।আজ থেকেই তার এইচএসসি পরীক্ষা শুরু।পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যাস্ত সময় পার করছে।বোর্ড পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই দ্বিতীয় তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে পুতুল পড়াগুলো মনে মনে রিভিশন দিচ্ছে।ওপর দিকে অর্পণ এক পলকে পুতুলের দিকে তাকিয়ে রয়।ছোট করে নিশ্বাস ফেলে চোখে কালো সানগ্লাস পরে পাশের ছোট চায়ের দোকানের ছেলেটিকে ডাকতেই সে হাজির।

জি,ভাইয়া।

ওর দিকে খেয়াল রেখো।কোনো সমস্যা হলে আমাকে সাথে সাথে জানাবে।আমি আজই ঢাকায় ফিরছি।ওর পরীক্ষা শেষ যে দিন হবে।সেই দিনই আমি ফিরে আসব।তারপরই হবে অর্পণের প্রেমের গল্প কাহিনি।আসছি।

১২০.

সময়টা মে এর শেষের দিক।পুতুলের পরীক্ষা আজ শেষ হয়েছে।আজ প্যাক্টিক্যাল মৌখিক পরীক্ষা এবং লিখিত খাতা জমা দিয়ে বাড়ির পথে ফিরে যাচ্ছে।ছয় সিটওয়ালা টমটমে বসেই চারদিকে সবুজের সমারোহ দেখতে দেখতে দূর থেকে বহুদূর গন্তব্যটি ছুটে চলছে।পিছনে বড় বড় গাছগুলো সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে।পুতুলের সাথে আজ স্বাধীন রয়েছে।

স্বাধীন ভাবছে পুতুলকে মেডিকেল ভর্তি করাবে।কিন্তু অনেক টাকার ব্যাপার স্যাপার রয়েছে।এতদিন সব খরচই ভালোই সামলে নিয়েছে।কিন্তু এবার হয়তো আর বেশি টাকা যাবে।টাকা লাগলে লাগুক।মেয়ের স্বপ্ন নষ্ট হতে দিবেন না।প্রয়োজন পড়লে নিজের চাষের শেষ জমিটুকু বিক্রি করে দিবেন।ওটাই ছিলো বাপ,দাদার আমলের তেরো শতাংশ জমি।এক শতাংশ করে হলেও কমছে কম আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করা যাবে।স্বাধীন যখন চিন্তায় ব্যাস্ত তখনই টমটমটিকে অপর পাশ থেকে একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দিতেই টমটমে থাকা যাত্রীরা হুড়মুড়িয়ে একজন আরেকজনের ওপর পড়ে গেলো।কেউ আবার হাত,পায়ে ব্যাথা পেলো।পুতুলের হাঁটু ছিলে সাদা সালোয়ার ওপর দিয়ে রক্ত ভেসে ওঠে।আবার স্বাধীন কপালে আঘাত পায়।কিন্তু মেয়ের হাতটা এক হাত দিয়ে শক্ত করে ধরেছে।আর ছাড়ার নাম নেই।হঠাৎ আগ্রমনে পুতুল চমকে উঠে।মামার দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায়।মামার কপালের তরল জাতীয় জিনিসটা হাতে তুলে নিতেই ভেসে ওঠে র*ক্ত।পুতুল জানালা দিয়ে বাহিরে মাথাটা বের করে কিছু বুঝতে গেলেই কেউ তাকেই দ্বিতীয় বার আঘাত মাথায় করতে হকিস্টিক উঠায়।পুতুল মাথায় টান দেওয়ার আগেই সে হকিস্টিকের লোকটির হাতে কেউ গুলিয়ে চালিয়ে দেয়।যাত্রীরা যার যার জান বাঁচাতে চলতি টমটম থেকে লাফিয়ে পড়ে।একেকজন পালিয়ে যায়।কিন্তু পুতুল আর তার মামা বের হওয়ার আগেই টমটম ছোট খালের মধ্যে পড়ে যায়।পুতুল বাম হাত দিয়ে মামার হাত ঘামছে ধরে।পুতুল আগেও সুস্থ হলেও স্বাধীনের শরীরের মারের দাগগুলো এখনো শুকায়নি।তার ওষুধ এখনো চলছে।সেই পুরনো ব্যাথার মধ্যে কপালে দ্বিতীয় আঘাত লাগাটা ভালো লক্ষ্মণ নয়।এইদিকে পুরো রাস্তা ব্লক হয়ে গেছে বাসে আগুন, রাস্তা মধ্যে যাকে সামনেই পাচ্ছে তাকেই দুবৃত্তরা আঘাত করছে।পুতুল কি করবে বুঝতে পারছে না?হাত পা,কাপছে।এদিকে স্বাধীনের রক্ত বন্ধ হওয়ার নামই নেই।পুতুল মামার রক্ত বন্ধ করতে নিজের সাদা হিজাবের এক অংশ খুলে মামার মাথাটা চেপেই ধরে আছে। নিজের চারদিকে এত উচস্বরগোল্লে পুতুলের জানটা বের হয়ে যাচ্ছে।পুতুল চোখ বন্ধ করে আল্লাহ নাম নিয়ে দোয়া পড়তে থাকে।

আর ইউ ওকে।

পুতুল চোখের পানি নিয়ে আঁখি পল্লব মেলে সামনে তাকাতেই দেখলো অর্পণ তালুকদার তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।অথচ যে পুতুল,অর্পণ তালুকদারকে ঘৃণা করে।আজ তাকে দেখেই ভরসার সাহস টুকু ফিরে পায়।ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি দেখা যায়।কিন্তু অর্পণের সেসবের খেয়াল নেই।পুতুলকে ঠিকঠাক দেখেই স্বাধীনকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে।নিজের গাড়ির পিছনে সিটে মামাকে বসিয়ে দিলো।পুতুলকে পিছনে মামার সাথে বসিয়ে গাড়ি টান দিলো।

অর্পণ কেবিনের বাহিরে পায়চারি করছে।কানে তার ফোন গুছে।সাদা পাঞ্জাবিতে হালকা ছোপ,ছোপ রক্তের দাগ।

হ্যালো ভাই,আমরা যা সন্দেহ করছিলাম।এটা তারই কাজ।

অপর পাশ থেকে কথাটি কানে আসতেই অর্পণের চেহারায় রাগ স্পষ্ট ফুঠে ওঠে।রাগী স্বরেই বলল,

হারামির বাচ্চাদের মরার জন্য পাখনা গজায়ছে।আমি যদি এবার গ্রামে ফিরি না।তাহলে একটাকেও ছাড়বো না।সাত হাত মাটির নিজে গেড়ে ফেলব।ওই রমিজ মেম্বার কি ভেবেছে?একটা অসহায় পরিবারের ওপর জুলুম একের পর এক অন্যায় করে যাবে।আর তাকে এমনই ছেড়ে দেওয়া হবে।ওকে আর ওর চামচাদেরকে গর্ত থেকে টেনে বের করতে কিন্তু আমার এক মিনিট লাগবে না।ফোন রাখ।

অর্পণ প্রথম ফোনটা কে*টে দিয়ে।দ্বিতীয় ফোনটা কাউকে করে বসে।ওপাশ থেকে রিসিভ করে কানে নিয়ে কেউ হ্যালো বলতেই,

অর্পণ বাজ গলায় চিতকার করে বলল,

হোম মিনিস্টার।তোমার পাগলা কুত্তাগুলোকে সামলাও।যদি তুমি তোমার কুত্তাগুলোকে সামলাতে না পারো।তাহলে আমাকে বলো।ভাদ্র’র মাসের কুত্তাগুলোকে কি করে পানিতে নামাতে হয়?তা আমি অর্পণ তালুকদারের খুব ভালো করেই জানা আছে।আমি এর আগেরবার সর্তক করেছি।কিন্তু এরপর কিন্তু কোনো সর্তকবানী থাকবে না।পূর্বের ইতিহাস পূর্ণরাবৃত্তি করার চেষ্টা করোনা।তোমার ছোট ছেলের রহস্য আমি কিন্তু খুব ভালো করেই জানি।আর এবার পূর্বের ইতিহাস পূর্ণরাবৃত্তি হলে বেলণার মাটিতে যেটা হয়নি।এবার সেটা রোহিতপুরের মাটিতে হবে।র’ক্তের খেলা তোমরা শুরু করেছো।আর শেষ যদি আমাকে করতে র’ক্তের ময়দানে নামতে হয়।তাহলে তোমার বংশের শেষ বাতি জ্বালানোর কেউ থাকবে না।

অর্পণের ধমকিতেই হোম মিনিস্টারের কপালে ঘাম জমেছে।তার শ্বাসকষ্ট শুরু হতেই ইনহোনাল মেশিন দিয়ে শ্বাস নিলেন।পাশেই তার পি এ খলিল দাঁড়িয়ে আছে।পকেট থেকে রুমাল বের করে স্যারের দিকে ঘাম মুছতে বাড়িয়ে দিলে।সেটা হোম মিনিস্টার জামশেদ উল্লাহ খান নিয়ে নেন।

স্বাধীনের মাথায় ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।চোখ মেলে পুতুলকে সামনে বসে কাঁদতে দেখে উঠার চেষ্টা করেন।পুতুল হাত দিয়ে বুঝালো এখন উঠো না।শুয়ে থাকো।

আম্মা তুমি ঠিক আছো?পুতুল ইশারায় বলল।সে ঠিক আছে।এরমধ্যেই অর্পন ফোনে কথা বলতে বলতে নির্জন এক সাইডে চলে আসছে।তার কথা শেষ করে ফোন পকেটে ভরে কেবিনে পা রাখে।

মামা আপনি কেমন আছেন?

অপরিচিত ছেলের কথায় স্বাধীনের কপালটা কুঁচকে আসে।পরবর্তীতে এই ছেলে তাদের বাঁচিয়েছে।মনে পড়তেই বলল,ওহ।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।হঠাৎ বিপদে পড়ে কি করব যখন বুঝতে পারছিলাম না?তখন-ই আপনি এসে আমাদের বাঁচালেন।

আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবেন না।আমি আপনার বয়সের অনেক ছোট।আমি আপনাদেরই গায়ের ছেলে।আর রইল বাঁচানোর কথা।সেটা মাত্র উসিলা ছিল।আল্লাহ চেয়েছিলেন ব’লে আমি ওখানে উপস্থিত হতে পেরেছি।বিপদ কখন,কার ওপর আসবে সেটা আমরা পূর্বে কেউ জানি না।বিপদকে সামনে দেখে ভয় পেয়ে গুটিয়ে যাওয়া ভীতুদের কাজ।আমি জানি আপনি একজন সাহসী।মনের সাহসী বড় সাহস।আর ভয় পেলেই মনের বাঘ’ই তারে আগে খায়।আমি আসছি।ভালো থাকবেন।অর্পণ শেষের কথাগুলো পুতুলকে ইঙ্গিত করে আড়চোখে তাকিয়ে ব’লে চলে গেছে।এইদিকে পুতুল হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।নার্স পুতুলের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,আপনি আসুন আমার সাথে।আপনার হাটুতে রক্ত জমাট বেঁধে আছে।স্বাধীনকে ইশারায় ব’লে যেতে।পাশের কেবিনে নিয়ে তার পা ডেস্টিন করে দিতে দিতে নার্স বলল,

আপনার হাঁটুতে রক্ত জমে আছে।আগে বলেননি কেন?এমপি সাহেব না ব’লে তোও জানতেই পারতাম না।নার্সের কথায় পুতুল অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।তারমানে সেই লোকটা তার খবরটা রেখেছে।

ডেসিন শেষ হতেই পুতুল বেড সিট থেকে নেমে যেতে নিলেই হাতে ছোট চিরকুট বাড়ি খায়।লাল কাগজের চিরকুট খুলতেই লেখাগুলো স্পষ্ট হয়।

প্রিয় আদূরণী ছোট্ট ছোট্ট খবর আমার নক দর্পণেই এখন থাকে।যাকে ভালোবাসি তার খবর টুকু রাখা আমার দায়িত্ব বলতে পারেন।তার ভালো থাকাতেই আমি ভালো আছি।আপনি আমার মন ভালো রাখার মিষ্টি মেডিসিন।

ইতি অর্পণ তালুকদার।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে