#গ্যাসবেলুন
#পর্ব_৯
লেখাঃ Nobonita Ferdows
.
অরণীর পরীক্ষা শুরু হয়েছে আজ থেকে। পরীক্ষার সময় দিয়েছে বিকালে। সে যতটা ভয় পেয়েছিলো, পরীক্ষা ততটাও খারাপ হয়নি। অরণী বাড়িতে ফিরলো বিকাল সাড়ে পাঁচটায়। ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে নামতেই দেখলো অরূপের বাবা সোফারঘরে সেই প্রথমদিনের মতো পেপারে মুখ ঢেকে বসে আছে। অরণী এই বাড়িতে আসার পর থেকে এই লোককে পেপার থেকে মুখ তুলে তাকাতে দেখেনি। সারাদিন যেনো পেপারে মুখ ঢেকে রাখা আর খাওয়া ছাড়া তার কোনো কাজ নেই। অরণী ঠিক করেছে, আজ সে এইলোকের সাথে কথা বলবেই।
অরণী তাকে দেখে গিয়ে বসে বললো, “আঙ্কেল, ভালো আছেন?”
.
ভদ্রলোক মুখের সামনে থেকে পেপার নামিয়ে গম্ভীর মুখে অরণীকে কিছুক্ষণ নিরীক্ষণ করে বললো, “জি। ভালো!” এতটুকু বলেই আবার পেপারে মুখ ঢাকলেন।
.
অরণী চোখ সরু করে তাকালো। আজব তো! এভাবেও কেউ কথা বলে! এই জন্যই ছেলেও এমন গম্ভীর হয়েছে।
.
“আঙ্কেল, আন্টিকে কোথাও দেখছিনা! আপনি জানেন, আন্টি কোথায়?”
.
তিনি পেপার পড়তে পড়তেই বললেন, “উনি রেনুকে নিয়ে বাইরে গিয়েছেন সকালেই!”
.
অরণীর আচমকা মনে পড়লো আন্টি আর ছোটফুপু সকালে মার্কেটে গিয়েছিলেন। কিন্তু সে ভাবতেই পারেনি তারা এখনো ফিরে আসেনি৷ অবশ্য ঢাকা শহরের জ্যামে কোনোকিছুই অসম্ভব না।
.
অরণী উঠে রান্নাঘরে গেলো। সে যা ভেবেছিলো ঠিক তাই। সকালের নাস্তার পর বাড়িতে আর কোনো রান্না হয়নি!
.
“অরুপু, তুমি রান্নাঘরে? মা, আর চাচি এখনো আসেনি জানো?”
.
“হ্যাঁ তো, শুনলাম। তোমরা তো মনে হয় দুপুরে কেউ খাওনি!”
.
“হ্যাঁ। ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। তুমি একটা কিছু রান্না করে দাও না। আমি তো কিছু বানাতে পারিনা!”
.
অরণী হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। বাড়িতে সে, অন্তু আর আঙ্কেল ছাড়া কেউ নেই। কোনোদিন রান্নাঘরের ধারেকাছেও যায়নি সে, এখন এই বাচ্চা মেয়েকে সে কিভাবে বলে যে সে, এক পোয়া ভাত ও রান্না করতে জানেনা!
.
অরণী ফ্যাকাসে হেসে বললো, “অন্তু, আমি তো জীবনেও রান্না করিনি!”
.
অন্তু ফিক করে হেসে ফেলে বললো, “আচ্ছা, চলো তুমি আমি মিলে ইউটিউব দেখে কিছু বানিয়ে ফেলি। বাবাও না খেয়ে আছে!”
.
“আচ্ছা, তাই করি। কি আর করা!”
.
অরণী বেশি কিছু করতে পারলোনা। কোনোমতে আনাড়ি হাতে ভাত, ডিমভুনা, বেগুনভাজা আর ফ্রিজে মুরগীর মাংস কেটে রাখা ছিলো; সেটা দিয়ে বুটের ডাল করে ফেললো।
.
সাহস করে অরূপের বাবার সামনে গিয়ে খেতে ডাকতে পারলোনা। অন্তু গিয়ে বাবাকে ডেকে এনে খেতে দিলো। তিনি খাবার মুখে দিয়ে শুধু প্রশ্ন করলেন, “রান্না কে করেছে?”
.
অন্তু অরণীর দিকে তাকিয়ে বললো, “কেনো বাবা, খাওয়া যাচ্ছেনা?”
.
“ভালো হয়েছে। তুমি করেছো?”
.
“না বাবা৷ আমি তো রান্না পারিনা। অরণী আপু করেছে!”
.
তিনি আর কিছু বললেন না। খেয়ে উঠে হাত ধুয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন। এরপর অরণী ভয়ে ভয়ে প্লেটে ভাত নিয়ে খেতে গিয়ে বুঝলো, রান্না অতটাও খারাপ হয়নি। ডালে লবণের পরিমাণ কম হয়েছে, আর বেগুনটা একটু বেশি পোড়া পোড়া হয়েছে। তবে খিদের পেটে অন্তু, অরণী দুজনেই পেট ভরেই খেলো।
.
অরণীদের খাওয়ার মাঝেই ছোটফুপুরা চলে এলো। এসেই তড়িঘড়ি করে রান্নাঘরে ঢুকে দেখলো, রান্নাঘরের বেহাল অবস্থা। অন্তু আর অরণী সবকিছু খুঁজে খুঁজে কোনোমতে রান্নাটা সেরেছে। অরণীর রান্না দেখে দুজনেই হেসে কুটিকুটি। নিঁখুত রান্না না হলেও, প্রথমবার করা রান্না হিসেবে অনেক ভালো হয়েছে। অরণী তিনজনের রান্না করতে গিয়ে ছয়-সাতজনের রান্না করে ফেলেছে। ছোটফুপু আর আন্টি ওগুলোই নিয়ে খেতে বসে গেলো।
.
.
রাত তিনটে বাজছে। মাধূর্য আজ প্রথম অরূপের কাছেই ঘুমিয়েছে। একয়দিনে কখনো ওর বুবুর কাছে, আর কখনো অরণীর কাছেই থেকেছে। আজকে অরূপের সাথে খেলতে খেলতেই ঘুমিয়ে পরেছে মেয়েটা। অরূপ একহাতে সাবধানে মেয়েকে টেনে বিছানার মাঝখানে এনে তার দুপাশে দুটো বালিশ দিয়ে দিলো। তারপর মেয়েটার কপালে চুমো এঁকে মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে অরণীর কথা ভাবলো। মেয়েটার বয়সই বা কতো! মা-বাবাকে ছাড়াই একা একা বড় হওয়া একটা মেয়ে, বিশাল বাড়িতে যার দেখাশোনা করার জন্যই তিন-চারজন লোককে রাখা হতো, সেই মেয়েটা মধ্যবিত্ত পরিবারে কয়েকদিনের জন্য এসেই কত আপন করে নিয়েছে সবাইকে। রাতে খেতে বসে শুনলো, অরণী নাকি কাল থেকে মায়ের কাছে রান্না শিখবে, আজ নাকি রান্নাও করেছিলো। বিকালে সবাই খাওয়ার পরেও কিছু খাবার বেচে গিয়েছিল। অরূপের মা, ওগুলো অরূপকে আর খেতে দেয়নি, সে খেতে পারবেনা বলে। অরূপ খাওয়া নিয়ে অনেক বেশি খুঁতখুঁতে হলেও অরণীর রান্না খাওয়ার ইচ্ছে ছিলো তার৷ মাকে সে কথা সাহস করে বলে উঠতে পারেনি সে।
.
অরণীর কালকেও পরীক্ষা আছে। অরূপ মাধূর্যের কপালে আরেকবার চুমো এঁকে দিয়ে গায়ে চাদরটা ভালো করে টেনে দিয়ে উঠে পড়লো। রাতে ঘুম হয়না তার, রাত জাগতে জাগতে বাজে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। অরূপ উঠে ঘর থেকে বেড়িয়ে দেখলো অন্তুর আর অরণীর দুজনের ঘরেই আলো জ্বলছে; দরজা ভিজিয়ে দেয়া! দুজনেই কি তাহলে জেগে আছে?
.
অরূপ ভ্রু কুঁচকে অন্তুর ঘরে ঢুকলো। অন্তু বিছানার মাঝখানে কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। ঠান্ডায় হালকা হালকা কাঁপছে। অরূপ তার গায়ে চাদরটা মুড়ে দিয়ে রুমের লাইট নিভিয়ে দরজা ভিজেয়ে বের হলো।
.
অরণীর ঘরের দরজার সামনে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। অরণী হয়তো পড়ছে! কিছুটা ইতস্তত করে শেষে দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকলো। অরণী ঘরের কোণার টেবিলের ওপর রাখা বইয়ের স্তুপের ওপর মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে। অরূপ অরণীর ঘুমন্ত মুখ দেখে হেসে ফেললো। কেমন বাচ্চা মেয়েদের মতো লাগছে তাকে। অরূপ আস্তে করে অরণীর কোমরের নিচে হাত দিয়ে পাঁজাকোলা করে তাকে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। মাথা নিচে বালিশটা টেনে দিয়ে গায়ে চাদর দিয়ে, লাইট নিভিয়ে ঘর থেকে বের হলো।
.
আজরাতে তার আর ঘুম আসবেনা। রান্নাঘরে গিয়ে এককাপ কফি বানিয়ে বারান্দায় এসে বসলো। কফি শেষ হতেই ফজরের আজান শুনলো। মা নামাজ পড়তে উঠবেন এসময়। ওযু করে অরূপের ঘর থেকে একবার ঘুরে গিয়ে নামাজে বসবেন। এঘরে এসে যদি দেখেন, ছেলে বারান্দায় বসে কফি খাচ্ছে, তাহলে ধরেই নেবেন, ছেলে ডিপ্রেশনে ভুগছে। অরূপ মাকে এই মানসিক কষ্ট দিতে চায় না। ছেলে কষ্টে আছে, এটা বোধহয় পৃথিবীর কোনো মা ই মেনে নিতে পারেন না।
.
অরূপের ধারণা, সে যদি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষও হয়, তারপরেও তার মা সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকবে। কিছু কিছু মানুষের শরীরের শিরায় শিরায় রক্ত সঞ্চালনের সাথে সাথে টেনশন সঞ্চালন হয়। তার মা ঠিক সেই ক্যাটাগরির মহিলা!
.
.
অরণীর পরের পরীক্ষাগুলো তেমন ভালো হলোনা। আগে থেকে পড়ায় অনেক গ্যাপ ছিলো। একসাথে এতকিছু পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হলোনা। পরীক্ষার কয়দিন সে মাধূর্যকে সেভাবে সময়ই দিতে পারেনি৷ সন্ধ্যা হলেই মাধূর্য থপথপ পায়ে হেঁটে অরণীর ঘরের দরজায় এসে কয়েকবার মা মা করবে। এই ডাকটা শুনতেই অরণীর মন খুশিতে ভরে ওঠে। তখনই যা একটু মাধূর্যকে কাছে পায় সে। আবার নয়টা বাজতে না বাজতেই আবার ঘুমিয়ে পড়ে মাধূর্য।
.
.
আতাহার সাহেব এমাসের উনিশ তারিখে ঢাকায় ফিরবেন। এবার টানা দু’সপ্তাহের ছুটি নিয়ে আসছেন তিনি। অরণীর পরীক্ষা শেষ হবে সতেরো তারিখ। সে ঠিক করেছে, পরীক্ষা শেষ হলেই সে বাড়িতে ফিরে যাবে৷ বাবা আসার আগেই নিজের হাতে রান্না করে খাইয়ে বাবাকে চমকে দেবে। অরূপের সাথে তার যোগাযোগ এখন প্রায় নেই বললেই চলে। একইবাড়িতে থেকেও অরূপ যেনো তাকে কিছুটা এড়িয়েই চলে, অরণীও আর অরূপকে বিরক্ত করতে চায়নি৷ সেই পরীক্ষা শুরুর আগে শেষ কথা হয়েছিলো তার অরূপের সাথে। মাধূর্য না এলে হয়তো সে আর এবাড়িতে থাকতোও না। কিন্তু এখন কি একটা মায়ায় পড়ে গেছে সে। এবাড়িটা ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবলেই মন খারাপের ঘন কালো মেঘ এসে মনের ওপড় গাঢ় আস্তরের ফেলে যায়। কিন্তু এবার যখন বাবা এতদিন পর ছুটি নিয়ে আসছে, সে অন্তত দু’সপ্তাহের জন্য তার নিজের বাড়িতে, বাবার কাছে গিয়ে থাকবেই।
.
অরূপ অরণীর চলে যাওয়ার কথা ষোলো তারিখ রাতে ডিনার করতে বসে জানতে পারলো। আচমকা যেনো তার মনে হলো, অরণী না থাকলে এবাড়িটা শূণ্য হয়ে যাবে, মাধূর্য একা হয়ে যাবে, আর…. সে? সে নিজেও হয়তো… কিংবা হয়তো না!”
.
অরূপ রাতে খেয়ে উঠে নিজের ঘরে এসে অনেক্ষ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলো। হয়তো ভাবলো অনেককিছু। ঘরের এমাথা থেকে ওমাথায় পাইচারি করে একসময় ঘর থেকে বের হয়ে অরণীর ঘরে এসে দরজায় নক করলো। দরজা খোলাই ছিলো। অরূপ ঘরে ঢুকে দেখলো, অরণী ঘুমিয়ে পড়েছে। অরূপ অরণীর বিছানার পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলো।
.
সারারাতে গ্লাস ভর্তি করে তিনবার কফি খেলো। আজরাতে এমনিতেও তার ঘুম আসবেনা; অজানা কিছু হারানোর আশঙ্কায় সে সারারত ছটফট করলো। ভোরের দিকে দুচোখ লেগে আসলো তার। ঘুম ভাঙলো সকাল দশটায়। আজ আর তার অফিসে যাওয়া হলোনা। সকালে নাস্তার টেবিলে আড়চোখে অরণীর দিকে তাকালো। অরণী যখন এবাড়িতে প্রথম এসেছিলো, প্রতিদিনই অরূপ খেতে বসে খেয়াল করতো, মেয়েটা মাথানিচু করে আড়চোখে তাকিয়ে তাকে খেয়াল করে। আজকে অরূপ আঁড়চোখে বেশ কয়েকবার তার দিকে তাকালো। কিন্তু অরণী একবারও চোখ তুলে তাকালোনা তার দিকে। আচ্ছা, অরণী কি আগেরমতো তার কথা ভাবেনা!
.
আনমনে এসব ভাবতে গিয়েই বোধহয় তা গলায় খাবার আটকে গেলো। কাশতে কাশতে তার চোখে পানি এসে গিয়েছে। অরণী তড়িৎ গতিতে উঠে তাড়াহুড়ো করে গ্লাসে পানি ঢালতে গিয়ে অনেকটা পানি টেবিলের ওপর ফেলে দিলো। গ্লাসভর্তি পানিটা অরূপের দিকে বাড়িয়ে ধরে বললো, “আস্তে আস্তে খাবেন না? অমন তাড়াহুড়ো করে গিললে তো গলায় খাবার আটকাবেই!”
.
.
অরণীর অস্থিরতা দেখে খাবার টেবিলের সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। পানিটা খাওয়ার পর অরূপের কাশি কিছুটা কমলো….
.
অরূপের আজ সারাটাদিন অন্যমনস্কতায় কেটে গেলো। বারকয়েক অরণীর ঘরের সামনে ঘুরঘুর করে নিজের ঘরে ফিরে গেলো। তার বারবারই কেবল মনে হচ্ছে, অরণীর সাথে তার কথা বলাটা খুব জরুরী। কিন্তু সে কি বলবে, সেটাই বুঝে উঠতে পারতিছেনা!
.
অরণী বিকালে পরীক্ষা দিতে চলে যাওয়ার পরপরই আকাশে মেঘ জমতে শুরু করলো। আকাশ দেখে মনে হচ্ছে, এই বুঝি ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামবে। অথচ বৃষ্টি হচ্ছেনা, কেবল আকাশে আঁধার নেমে আসছে। অরণীর পরীক্ষা শেষ হবে পাঁচটার দিকে। বৃষ্টি আসলে মেয়েটা একা একা আসতে পারবে তো?
.
পাঁচটা বাজতেই অরূপ বাইরে বের হওয়ার জন্য বাইক বের করলো; অরণীর ভার্সিটি সামনে এসে দাঁড়ালো পাঁচটা বাইশে। অরণী ক্যান্টিনে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলো। সে গেটের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো। অরূপ বাইক নিয়ে এসে তার ঠিক সামনে দাঁড়ালো। অরূপের দিকে তাকিয়ে তার মনে হলো, এই ছেলেটাকে এই শার্টটা ছাড়া আর কোনো শার্টে মানাবেনা! হালকা আসমানী রঙের শার্টের হাতাটা গোটানো নেই। অরূপকে কি সে বলবে, হাতাটা গুটিয়ে নিলে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগতো!
.
না সে বলবেনা, তার সেই অধিকার নেই।
“উঠে পড়ুন!”
.
“আপনি আমাকে নিতে এসেছেন?”
.
“না। আমি আপনার বান্ধুবীদের নিয়ে যেতে এসেছি!” বিরক্তমুখে বললো অরূপ।
.
অরণী এতটাই অবাক হয়েছে যে কথা বলার শক্তিটা পর্যন্ত সে পাচ্ছেনা। অরূপের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে শুধু।
“আরে কি হলো? উঠুন। হা করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কি দেখছেন?”
.
অরণী অরূপের কাঁধে একটা হাত রেখে বাইকে উঠে বসতেইয় পিছন থেকে বাচ্চা একটা ছোকরা চেঁচিয়ে উঠলো, “আপা, চায়ের ট্যাকা?”
.
অরূপ পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে বললো, “কতো হয়েছে?”
.
“বিশ ট্যাকা!”
.
অরূপের কাছে খুচরো নেই। পঞ্চাশ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে বললো
“রাখো।”
তারপর বাইকে স্টার্ট দিয়ে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে আসলো।
.
অরণীর ঘোর এখনো কাটেনি। সে বিশ্বাসই করতে পাচ্ছেনা যে, অরূপ তাকে ভার্সিটি থেকে নিয়ে যেতে এসেছে।
.
“পরীক্ষা কোমন হলো?”
.
“ভালোনা!”
.
“পড়াশুনা না করে ড্যাংড্যাং করে ছেলেদের সাথে রিকশায় করে ঘুরে বেড়ালে অমনই হবে!”
.
অরণী প্রচন্ড বিরক্ত হলো।
.
অরূপ আবার বললো, “ভালোর জন্যই বলি, কথা তো শুনবেন না। যেদিন দেখবেন ওইসব বদ পোলা সর্বনাশ করে দিয়েছে, তখন বুঝবেন!”
.
“আপনি কিন্তু আমার ফ্রেন্ডকে অপমান করছেন!”
.
“কি একটা৷ ছোকরা, তার আবার মান-অপমান!”
.
অরণী আর কোনো কথা বললোনা৷ এই ছেলের সাথে কথা বলা না বলা একই কথা।
.
অরূপ বাসার সামনে এসে বাইক থামালো। অরণী বাইক থেকে নামতেই অরূপ বললো, “আপনাকে আধঘন্টা সময় দিচ্ছি। এখন গিয়ে খেয়ে নিয়ে গোসল করে বিছানার ওপর রাখা কালো শাড়িটা পড়বেন। শাড়ির সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি আর টিপ রাখা আছে৷”
.
অরণী বিস্মিত হয়ে বললো, “কি বললেন?”
.
“কথা শুনতে পাননি? আপনি কি বধির?”
.
“শাড়ি পড়বো কেনো আমি?”
.
“আমি পড়তে বলেছি, আপনি পড়বেন। আর অযথা মুখের মধ্যে রঙচঙ মাখামাখি করবেন না। হালকা কাজল দিলেই হবে!”
.
অরণী আগের চেয়েও বেশি অবাক হয়ে বললো, “আপনি কি বলছেন, আমি কিছু বুঝতে পারতিছিনা!”
.
অরূপ ধমক দিয়ে বললো, “আপনি কিন্তু বড্ড বেশি কথা বলেন। এখন বাজছে পাঁচটা পঞ্চান্ন। ঠিক ছয়টা পঁচিশে আমি আপনাকে এখানে দেখতে চাই!
.
অরণী ঘরে গিয়ে দেখলো, বিছানার ওপর নতুন একটা শাড়ি রাখা। কালো জর্জেটের ওপর কালো সুতার আর পাথরের কাজ করা! অরণী কিছু বুঝতে পারছেনা; তারপরেও সাজলো। খুব দ্রুতই সাজলো।
.
শাড়ি পড়ে সে যখন বাড়ির নিচে এসে দাঁড়ালো, তখন বাজছে ছয়টা পঁয়ত্রিশ। অরণী অরূপের বাইকে পাশে এসে দাঁড়াতেই অরূপ বাইক থেকে নেমে অরণীর খোঁপার কাটা খুলে দিয়ে বললো…..
.
.
চলবে…