#গ্যাসবেলুন
#পর্ব_৪
লেখাঃ Nobonita Ferdows
.
“আসলে, মাধুর্য আমার ভাইয়ার নিজের মেয়ে…”
.
অরণী চারশো চল্লিশ ভোল্টের শক খেয়ে বললো, “তোমার ভাইয়া বিবাহিত?”
.
“হ্যাঁ! কিন্তু ভাবির সাথে ভাইয়ার দুবছর আগে ডিভোর্স হয়েছে!”
.
“কেনো? ডিভোর্স কেনো হলো?”
.
“ভাবির বিয়ের পর অন্য কারো সাথে অ্যাফেয়ার ছিলো।”
.
“তোমার ভাইয়াই ডিভোর্স দিয়েছে?”
.
“ভাইয়া চায়নি ডিভোর্স হোক। অনেকবার ভাবিকে বুঝিয়েছে সবাই। ভাবি থাকেনি!”
.
অরণী কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে হঠাত বললো, “অ্যারেঞ্জ ম্যারেজে এমন অনেকসময় হয়!”
.
“অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ না তো। ভাইয়া ভাবির আটবছরের লাভ ম্যারেজ ছিলো!”
.
“কিহ?! তাহলে বিয়ের পর আবার অ্যাফেয়ার কেনো?”
.
“জানিনা, অরুপু। ভাবি চলে যাওয়ার পর ভাইয়া খুব ভেঙে পড়েছিলো। মাধুর্যের জন্য খুব কষ্ট পেয়েছে ভাইয়া!”
.
অরণী চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
“মেয়েটা পাগল নাকি!”
.
অরণীর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো! আজকাল সম্পর্ক ভাঙ্গা যেনো খুব সহজ হয়ে গিয়েছে।
.
অন্তু বললো, “অরুপু, তুমি কিন্তু কাউকে বোলোনা!”
.
অরণী বললো, “অন্তু, রাত হয়েছে। সকালে তোমার স্কুল আছে! তুমি ঘুমিয়ে পড়ো!”
.
অন্তু শুয়ে পড়লো। অরণী বিছানার পাশে রাখা সমরেশ মজুমদারের গর্ভধারিণী বইয়ের ভাঁজ করা পৃষ্ঠাটা বের করে পড়ায় মনোযোগ দিলো!
.
রাত পৌনে দুটা বাজছে! অরণী এখনো বইয়ের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে বসে আছে! বইটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেনো সে মুখ তুলবেনা! এমন সময়ে সেদিনের সেই গিটারের আওয়াজে অরণী থমকে গেলো! অরণী বইটা উপুড় করে বিছানার ওপর রেখে বিছানা থেকে নেমে আস্তে আস্তে অরূপের ঘরের দিকে এগোলো। ঘরে আলো জ্বলছে, দরজা আধখোলা! অরণী বেশি এগোলোনা। দুর থেকে কান পেতে রইলো। ভেসে আসা সুরের মূর্ছনায় অরণী আবারো মুগ্ধ হলো।
.
“তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুণি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই
ছাদ ভেঙে যেই বাষ্প হবে জল
বাষ্প দিয়ে তুই কি করবি বল?
তারচেয়ে চল, এইবেলা মেঘ খুঁজে
দুজন মিলে ঝাপ দেই মুখ বুজে।”
.
.
একসময় গান থেমে গেলো। অরণীর মাঝরাতে কফি খাওয়ার অভ্যাস আছে। একয়দিনে সেই অভ্যাসে ব্যাঘাত ঘটেছে। এবাড়িতে আসার পর তার অনেক অভ্যাসই পরিবর্তন হতে শুরু করেছে।
.
অরণী নিচে নেমে রান্নাঘরের গেলো। তন্নতন্ন করে খুঁজেও কফির কৌটো খুঁজে পেলোনা। হঠাত কারো ভারী আওয়াজে চমকে উঠলো অরণী!
.
রান্নাঘরের দরজার কাছে অরূপ দাঁড়িয়ে আছে!
“এতরাতে রান্নাঘরে কি করেন আপনি?”
.
“কফি… কফি খুঁজছিলাম।”
.
“এতরাতে কফি খাওয়া ঠিক না। রাতে ঘুম হবেনা!”
.
অরণী ক্ষীণ কন্ঠে ধীরে ধীরে বললো, “আমার অভ্যাস, রাতে কফি খাওয়ার!”
.
“এটাকে অভ্যাস বলেনা। বদঅভ্যাস বলে!”
.
“আপনার কিছু লাগবে?”
.
“আপনার আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা। আপনি ঘরে যান!”.
.
অরণী প্রচন্ড বিরক্ত হলো। মনে মনে বললো, ” এমন ব্যবহার করলে, বউ এমনিতেও টিকবেনা। এই রাগী ছেলের সাথে সম্পর্কে গিয়েছিলো কোন পাগল?”
.
অরণী কিছু বললোনা। হাতের চিনির বয়ামটা টেবিলের ওপর ধরাম করে রেখে নিজের ঘরের দিকে এগোলো।
.
অরণীর রাতে ঘুম আসলোনা আর! এপাশ-ওপাশ করতে করতেই ভোর হয়ে গেল। ভোরের দিকে চোখদুটো লেগে আসতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো সে।
.
অরণীর ঘুম ভাঙলো এগারোটা দশে। এতক্ষণে বাড়ির সবাই স্কুলে, অফিসে চলে গিয়েছে। অরণী হাতমুখ ধুয়ে নিচে নামতেই অরূপের মা কে পেলো।
.
“অরণী, মা উঠেছো তুমি? সকালে অন্তুকে ডাকতে গেলাম,” ও বললো, তোমার নাকি রাতে ঘুম হয়নি। তাই আর সকাল সকাল ডাকতে দেইনি কাউকে। ঘুম ভালো হয়ে হয়েছে, মা?”
.
“জি আন্টি। রাতে বই পড়তে পড়তে একটু দেরী হয়ে গিয়েছিলো।”
.
“অন্তু বললো, তোমার নাকি রাতে কফি খাওয়ার অভ্যাস? আমার অরূপটাও তো রাতে উঠে বারবার কফি বানায়। কাল থেকে আমি দুজনার জন্য কফি বানিয়ে ফ্লাক্সে রেখে দেবো এখন। তোমরা নিয়ে খেও।
.
অরণী বেশ চমকালো। কাল রাতে যে অরণীর ঘুম হয়নি সেটা অন্তুর জানার কথা না। কারণ, অন্তু অনেক আগেই অরণীর পাশেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো; সারারাতে একবারও ওঠেনি সে।
আর রাতে যে সে কফি খায়, সেটাও অন্তুকে কখনো বলেনি সে! তাহলে আন্টিকে এসব কথা বললো কে!
.
অরণী নাস্তা করে ঘরে গিয়ে বসলো। আজ বাসায় তেমন কেউ নেই। যারা আছে, সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। অরণীর একা একা পুরোদিনটা কাটাতে হবে। এঘর থেকে ও ঘর ঘুরতে ঘুরতে অরূপের ঘরের সামনে এসে থমকে দাঁড়ালো সে। ঘরটা অগোছালো করে রেখে গিয়েছে ছেলেটা। মশারীটাও তোলেনি৷ অরণী ঘরে ঢুকলো। মশারী নামিয়ে, বিছানা গোছালো। টেবিলের ওপর এলোমেলো কতগুলো কাগজ ছড়ানো ছিটানো। অরণী সুন্দর করো গুছিয়ে একপাশে রাখলো। বন্ধ জানালা-দরজা খুলে দিয়ে বিছানার ওপর পা তুলে বসলো।
.
“আচ্ছা, অরূপ যদি বাড়িতে ফিরে হঠাত দেখে যে, তার বিছানার ওপর একটা মেয়ে হাত পা তুলে এভাবে বসে আছে, সে তখন কি করবে? জোরে ধমক দেবে? নাকি তাকে টেনে বিছানা থেকে নামিয়ে ঘর থেকে বের করে দিবে?”
.
অরণী এলোমেলো চিন্তা করতে করতে আনমনে ফিক করে হেসে দিলো। টেবিলের ওপর একটা বড় ছবির অ্যালবাম রাখা। অরণী উঠে গিয়ে অ্যালবামটা এনে বিছানায় উঠে বসে কোলে নিয়ে দেখতে লাগলো!
অ্যালবামটা সুন্দর। প্রতিটা ছবির নিচে ক্যাপশনের জন্য জায়গা আছে! অ্যালবামের প্রথম পৃষ্ঠায় বড় করে লেখা, “আমাদের সুখস্মৃতি” এই দুটো শব্দের মাঝে উপরে তীর চিহ্ন দিয়ে লেখা “অসমাপ্ত”। আর সুখ শব্দটা হালকা করে কেঁটে দেয়া।
তার মানে এই লিখাটার পরে লেখা হয়েছে- “আমাদের অসমাপ্ত স্মৃতি”।
.
.
অরণী পৃষ্ঠা ওল্টালো। কলেজ ইউনিফর্ম পড়া একটা মেয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে প্যাঁচানো ছোট্ট পাইপে ফুঁ দিয়ে বাবল বানাচ্ছে। তার পাশেই অরূপ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হাসছে! নিচে লেখা, “আমাদের প্রেমের শুরুটা বাবল দিয়েই হয়েছিলো।”
.
অরণী একটার পর একটা পৃষ্টা ওল্টাচ্ছে। অরূপের সাথে মেয়েটার অনেক ছবি; প্রতিটা ছবিতেই অরূপের মুগ্ধ করা হাস্যোজ্জ্বল ছবি দেখে অরণীর গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। একটা মানুষের হাসি এত সুন্দর হতে পারে!
.
অরূপের বিয়ের ছবি, বিয়ের পর হানিমুনে অস্ট্রেলিয়ার ছবি, দুজনার ঘর সাজানোর ছবি, প্রথম সন্তান মাধুর্যের ছবি ক্রমান্বয়ে সাজানো যেনো। শেষ ছবিটায় মাধুর্য কাঁদছে, আর অরূপ ও মেয়েটা মিলে তাদের মেয়েকে ধরে সামলাচ্ছে! কি সুন্দর একটা সংসার। সাজানো, গোছালো একটা সংসার! অরূপের প্রতিটা ছবি আর বাস্তবের অরূপের মধ্যে যেনো আকাশ পাতাল ফারাক।
.
অরণী কাল রাতে যা ভাবছিলো সব ভুল ছিলো। অরূপকে বাহির থেকে দেখে বোঝা দায়! অরণী যেনো একটা অদ্ভুত টান অনুভব করতে লাগলো অরূপের জন্য। অ্যালবামটা যেখানে ছিলো, সেখানে রেখে সে তার ঘরে গেলো।
.
পাঁচটা বাজতেই অরণীর অস্থিরতা যেনো বেড়ে গেলো। নিচ থেকে উপরে একবার যাচ্ছে, আবার উপর থেকে নিচে নামছে! কলিংবেলের আওয়াজ পেতেই অরণী ঘর থেকে বেড়িয়ে আড়াল হয়ে দাঁড়ালো। অন্তু দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই অরূপ ঠিক সেদিনের মতো ধমক দিলো। তারপর সিড়ি দিয়ে উঠে সোজা নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো। অরণী নিজের ঘরে এসে ঢোকার পরপরই অন্তুও এলো।
.
অরণীর আচমকা সকালের কথা মনে পড়তেই অন্তুকে বললো,
.
“আচ্ছা অন্তু, তুমি কিভাবে জানলে, আমার রাতে ঘুম হয়নি?”
.
“ভাইয়াই তো বললো, তুমি নাকি রাতে কফি বানাতে রান্নাঘরে গিয়েছিলে। তারপর ভোরবেলা আমাকে আমার ঘরে না দেখে এখানে খুঁজতে এসে নাকি তোমাকে জেগে থাকতে দেখেছে!”
.
অরণী মনে মনে বললো, “ওহ! তাহলে তো মশাই আড়ালে আবডালে ভালোই কেয়ারিং!”
.
“কি ভাবছো, অরুপু?”
.
“কিছু না! আচ্ছা, তোমার ভাইয়ার আবার বিয়ে দিবানা তোমরা?”
.
“ভাইয়া বিয়ে করবেইনা, আপু৷ আম্মু কত মেয়ের প্রস্তাব এনেছিলো ভাইয়ার জন্য। ভাইয়ার অফিসের জুনিয়র এক কলিগতো ভাইয়ার জন্য পাগল। কিন্তু ভাইয়া তো কোনোভাবেই বিয়ের জন্য রাজি হয়না!”
.
অরণী বিছানার ওপর থেকে বালিশটা কোলে নিয়ে বসলো৷ তার কেমন মন খারাপ হচ্ছে!
.
“আমি তো দেখতে খারাপ না, একটু ছেলেমানুষি নাহয় করি, কিন্তু এমন অগোছালো একটা মানুষকে গুছাতে ঠিক পারবো!”
অরণী আনমনেই মুচকি হেসে ফেললো!
.
আজ রাত এগারোটা বাজতে না বাজতেই অরণীর চোখ ঘুমে তলিয়ে আসলো। কোনোরকম জোর করেই চোখ মেলে রাখলো সে। মাঝরাতে সেই সুর শোনাটা যেনো তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
.
আজরাতে আর অরূপ গান গাইলোনা৷ অরণীর অপেক্ষার প্রহর ফুরোলো না। রাত সাড়ে তিনটে বাজছে। অরণী বিরক্ত হয়ে গায়ে চাদর জড়িয়ে বেরোলো ঘর থেকে। অরূপের ঘরে আলো জ্বলছে। তাহলে কি জেগে আছে সে?
.
অরণী দরজার কাছে গিয়ে পর্দা হালকা সরিয়ে উঁকি দিতেই দেখলো অরূপ হাফহাতা একটা পাতলা টি শার্ট গায়ে উপুড় হয়ে বিছানার কোনাকুনি শুয়ে আছে৷ অরণী খুব সাবধানে ভেতরে ঢুকে নিশ্চিত হলো, সে ঘুমিয়েছে কি না।
.
অরূপ ভুসভুস করে ঘুমাচ্ছে। অরণী এদিকওদিক তাকিয়ে বিছানার নিচে অরূপের কাঁথাটা গড়াগড়ি খেতে দেখলো।
.
খুব সাবধানে নিঃশ্বাস ফেলে বললো, “আদতে তো বাচ্চা একটা ছেলের চেয়েও বেশি ছেলেমানুষ, আর সবাইকে কি না দাপতে রেখে চলে সারাদিন!”
.
অরণী মেঝে থেকে কাঁথাটা তুলে নিয়ে অরূপের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো!
.
.
পরদিন বিকেলের দিকে ছোটফুপু এসে বললো, “মা, অরূপের সাথে একটু বাইরে যেতে পারবি? মার্কেট থেকে কিছু জিনিস আনাতে হবে।”
.
“উনার সাথে আমি কেনো যাবো, ফুপু?” অবাক হয়ে বললো অরণী!
.
“বাসার সবাই কাজে ব্যস্ত। মেয়েলি কিছু জিনিস আনতে পাঠাবো। অরূপ ছেলেমানুষ। ও বুঝবেনা। তুই গেলে কিনতে সুবিধা হবে।”
.
“কি কিনতে যাবো?”
.
“ওই যে তোর সিন আপু আছে না? ও কয়েকটা শাড়ি কিনে গিয়েছিলো এখান থেকে। ওগুলো নাকি চেঞ্জ করবে। ও তো রাজশাহীতে, শ্বশুরবাড়িতে। আমাকে বলেছে পছন্দ করে কয়েকটা কিনে পাঠাতে। তোর ফুপার শরীরটা ভালোনা। আমি আর কিভাবে এখন বেরোই। তোর পছন্দ ভালোই হবে। তুই একটু দেখেশুনে কিনে নিস!”
.
“আমি তো একাই যেতে পারি তাহলে…..”
.
“খবরদার না, তোর বাবা খুব খেপে যাবে আমার ওপর। অরূপ সাথে যাবে তোর। আর কোনো কথা বলবিনা!”
.
অরণী উপরে উপরে রাজি না হলেও ভিতরে ভিতরে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। অ্যাংগরি বর্ডের সাথে এই সুযোগে অনেকটা সময় কাটানো যাবে।
অরণীর শাড়ি পড়ার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো। কিন্তু এর আগে কখনো সে শাড়ি পড়েনি, পড়তেও পাড়েনা। শেষে লাল একটা কামিজ পড়লো। লাল কামিজের সাথে ম্যাচিং লাল সালোয়ার আর লাল ওড়না। কানে ছোট্ট দুটো লাল পাথরের দুল। হালকা সাজলো, কপালে লাল ছোট্ট একটা টিপ আর চোখে হালকা কাজলের ছোঁয়া দিয়ে চুলটা ছেড়ে দিলো।
.
সিড়ি দিয়ে নামতেই দেখলো, অরূপ মেরুন রঙের টিশার্ট আর ব্লাক জিন্স পড়ে ড্রয়িং রুমে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে!
.
অরণী নামতেই ছোটফুপু বললো, “ওই তো অরণী এসে পড়েছে, যা অরূপ বেড়িয়ে পড়!”
.
“মার্কেট যাওয়ার জন্য বিয়ের সাজের মতো সময় লাগালে বিয়েতে তো পাঁচদিন ধরে সাজতে হবে!”
.
অরণীর মুখ কালো হয়ে গেলো।
.
“আহা। মেয়েদের একটু সময় লাগেই। ওভাবে বলিস কেনো তুই? যা তো এখন। তাড়াতাড়ি ফিরিস!”
.
.
অরূপের পিছনে পিছনে অরণী বেরোলো। অরণীর মন প্রচন্ড খারাপ হলো। এতসুন্দর করে সাজার পড়েও একবার চোখ তুলে তাকালোনা পর্যন্ত! উল্টো কেমন কথা শুনিয়ে দিলো!
.
অরূপ বাইকে উঠে হেলমেট পড়তে লাগলো। অরণী বললো, “উঠবো?”
.
“না। দাঁড়িয়ে থাকুন। আমি যাই।”
.
অরণী কিছু বলতে গিয়েও বললোনা। উঠে বসলো। অরূপ বাইক স্টার্ট দিয়ে বললো, “ধরার জন্যও কি আপনাকে বলে দিতে হবে? নাকি নিজে পড়ে মরে, আমাকে জেল খাটাতে চাচ্ছেন?”
.
অরণী ডানহাতটা অরূপের ডানকাঁধে রাখলো। অন্যরকম একটা অন্ভূতি হলো তার। এটাই প্রথম কোনো পুরুষকে তার ছোঁয়া।
.
মার্কেটে এসে নামার পর অরূপ বাইক গ্যারেজে রেখে এসে অরণীর হাত ধরে ভিতরে ঢুকলো। অরণী চমকালো। অরূপের জায়গায় অন্য কোনো ছেলেকে কি সে এভাবে হাত ধরতে দিতো!
.
“বাচ্চা মানুষকে তো কথা বললেই শোনে। আপনি তো তাও শুনেন না। এই ভীড়ে হাত না ধরে হারিয়ে গেলে, চাচি আমাকে আর আস্ত রাখবেনা!”
.
“ওহ। একারণেই তাহলে তিনি আমার হাত ধরেছেন!” অরণী আহতমনে বিড়বির করলো।”
.
আচমকা অরূপ অরণীর হাত ছেড়ে দিয়ে বামদিকের কোনো শোরুমের দিকে ছুটে গেলল। অরণীকে এভাবে ভীড়ের মধ্যে একা ফেলে যেতে গিয়ে একবার পিছনে ফিরেও তাকালোনা অরূপ। অরণী কোনরকমে ভীর ঠেলে বেড়িয়ে অরূপের পিছু পিছু এগোলো। অরণী হঠাত থমে দাঁড়ালো অরূপকে দেখে। অরূপ ছুটে গিয়ে….
.
.
চলবে…