#গোধূলি_রাঙা_দিগন্ত
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃফারিহা_খান_নোরা
অপেক্ষা! অপেক্ষা সত্যই বিরক্তিকর একটা অনুভুতি।সকাল বেলা আধঘন্টা হলো জামা কাপড় হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরিবা। অপেক্ষা করছে প্রণয়ের বেড়িয়ে আসার।কাল রাত থেকে প্রণয় কেমন জেনো অদ্ভুত কর্মকাণ্ড করছে।এই যেমন আজ সকালে আরিবা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হতে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে হঠাৎ করেই ঝড়ের গতিতে প্রণয় ওয়াশরুমে ঢুকে চোখের পলকেই আরিবার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেয়।আরিবা সেই তখন থেকে আহাম্মকের মতো অপেক্ষা করছে কিন্তু প্রণয়ের বের হওয়ার কোনো নামই নেই। শেষ পর্যন্ত আরিবা অধৈর্য্য হয়ে প্রণয়কে মনে মনে কিছু ভদ্র ভাষায় গা’লি দিতে দিতে প্রেমার রুমের দিকে এগোয় । পথিমধ্যে নাসিমা শেখের সঙে দেখা হয় উনিও এই দিকেই আসছেন।আরিবাকে দেখে চোখ মুখ কুঁচকে রুক্ষ সুরে বলেন,
‘কোথায় যাচ্ছো?’
আরিবা চোখ পিটপিট করে বলে,
‘প্রেমার রুমে।’
আরিবার হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘জামা কাপড় নিয়ে যাচ্ছো যে?’
আরিবা বেশ অস্বস্তি বোধ করে তবুও আমতা আমতা করে বলে,
‘ফ ফ ফ্রেশ হতে।’
সাথেই সাথেই নাসিমা বেগম নাক সিঁটকায়। ধ’ম’কে’র স্বরে বলে,
‘এতো বড় মেয়ে তোমার কোনো কান্ড জ্ঞান নেই।এই অবস্থায় ঘর থেকে বের হয়ে ধেই ধেই করে ঘুরছো।ছিঃ এই নোং’রা শরীর নিয়ে গোসল না করেই আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছো?’
নাসিমা শেখের কথা প্রথমে আরিবা না বুঝলেও পরবর্তীতে উনার বলা শেষের কথায় বুঝতে পারে আসলে উনি কি মিন করছে। আরিবা এখন এই মহিলাকে কিভাবে বুঝাবে তার ছেলের সাথে এমন কোনো সম্পর্ক এখনো তৈরি হয় নি যাতে করে আরিবার শাওয়ার নিতে হবে সে তো জাস্ট ফ্রেশ হতে প্রেমার ওয়াসরুমে ইউজ করার উদ্দেশ্য বেরিয়েছিলো এই বজ্জাত প্রণয়ের জন্য এই সকাল বেলা এই মহিলার এতো কথা ফেস করতে হচ্ছে আরিবাকে। আরিবা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসে অত্যন্ত শান্ত কন্ঠে বলে,
‘শাশুড়ি আন্টি আমি ইচ্ছে করে আপনার সামনে এসে দাঁড়ায় নি আপনি নিজেই চলে এসেছেন।আপনাকে আগে থেকে আসতে দেখলে এই অবস্থায় আমি আপনার সামনে নয় পিছনে গিয়ে দাঁড়াতাম।’
একটু চুপ করে দাঁত কেলিয়ে বলে,
‘এখন কি করবেন শাশুড়ি আন্টি সামনে যখন এসে পড়েইছি নোং’রা হয়ে গেলেন, যান আপনিও বরং ফ্রেশ হয়ে নিন।’
নাসিমা বেগম রা’গে ক্ষো’ভে ফুঁ’সে উঠে। উচ্চস্বরে বলে,
‘ফাজিল মেয়ে।’
গজগজ করতে করতে আরও কয়টা কথা বলে।আরিবা সেসব পাত্তা না দিয়ে উল্টো ঘুরে তাদের রুমেই আসে।প্রেমার রুমে আর যায় না।
___________________________
সকালের পর থেকে আরিবা প্রণয়ের সাথে আর কোনো কথা বলছে না।কথা বলবে কেন? এই লোকটার জন্যই তো সকালে এমন কান্ড ঘটলো।আরিবাকে জ্বালাতেই প্রণয় ওয়াশরুম থেকে একঘন্টা সময় লাগিয়ে বের হয়েছে আরিবা বেশ বুজতে পারছে।প্রণয় অবশ্যই আরিবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য অনেক চেষ্টা করছে তবে আরিবা প্রণয়কে পাত্তা দেয় নি।আজ বাদে কাল আরিবার কলেজে পরিক্ষা।ইনকোর্স পরিক্ষা তিন সাবজেক্ট একসাথে সেজন্য সে মনোযোগ সহকারে পড়ছে।এ বাড়িতে আসার সময় এবার আরিবা তার প্রয়োজনীয় সকল জিনিস এনেছে।বই খাতা থেকে শুরু করে জামাকাপড় সব কারণ সে চায় না রূপার জন্য নিয়ে আসে কোনো কিছু ব্যাবহার করতে।তারপর থেকে আরিবা নিজের ড্রেস ইউজ করছে। আজ আরিবা নিচে তেমন নামে নি কিন্তু নাসিমা শেখের সাথে আরিবার যতো বার দেখা হয়েছে নাসিমা শেখ ততোবার ই বিরবির করে আরিবাকে অসংখ্য গা’লি দিয়েছে।আরিবা সেসব গায়ে মাখে নি কারণ আরিবা জানে মৌচাকে ঢিল ছুঁড়লে মৌমাছি পিছু নিবেই সেখানে তো আরিবা সকাল বেলা নিজ দায়িত্বে নাসিমা বেগমকে বেশ চটিয়ে দিয়েছে।
রাতের বেলা প্রণয় রুমে এসে দেখে দুই ননদ ভাবী গল্প করছে।আরিবার কোলের উপর একটা বই আর বিছানায় ছড়িয়ে আছে বেশ কিছু বই সেসবে কারো গুরুত্ব নেই।দুই বাঁচাল গল্পে মশগুল প্রণয় দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফ্রেশ হতে যায়। বেরিয়ে আসার পর ননদ ভাবী দুই জনের দিকে দুইটা চকলেট বক্স এগিয়ে দেয়।প্রেমা তো খুব খুশি।
‘থ্যাংক ইউ ভাইয়া।’
আরিবা হাতে বক্স নিয়ে দুই ভাইবোনের কথা শুনে।প্রণয় দেখে আরিবা বেশ চুপচাপ।সে হালকা হেঁসে বলে,
‘ওকে বাট এক বারে সব খেয়ে ফেলিস না।তোর কিন্তু চকলেট খেলে এসিডিটির সমস্যা হয়।তোরা দুটোতে একবারেই সব খেয়ে ফেলে গতবার অসুস্থ হয়ে পড়ছিলি সো বি কেয়ার ফুল।’
আরিবার ভ্রু এবার কুঁচকে আসে দু’টোতে মানে? সে তো তেমন চকলেট পছন্দই করে না তার উপর আবার একবক্স খাবে? আর সবচেয়ে বড় কথা প্রণয় এর আগে কখনো আরিবাকে চকলেট এনে দেয় নি।তাহলে প্রণয় কার কথা বলছে একজন তো প্রেমা অন্যজন কে?
আরিবাকে আর প্রশ্ন করতে হলো না তাঁর আগেই প্রণয় উচ্ছ্বাস এর সাথে বলতে শুরু করে,
‘জানো আরিবা এই প্রেমা ও রূপা দুজন ভীষণ দুষ্টু।আমি যা নিষেধ করবো এরা সেটাই করবে।দুইজন বাঁদরের মতো লাফায় আর সারাদিন ভাবতে থাকে কি কি অকাজ করা যায়।এদের মাথা থেকে এতো শয়তানি বুদ্ধি কি করে বের হয় আমি সেটায় ভাবি। দু’টোতে মিলে বাড়িটা মাতিয়ে রাখে।’
আরিবা নির্বিকার।প্রেমা অবাক হয়ে যায় ভাইয়ের আচারণে। তাঁর ভাই রূপা আপুর কথা ভাবির সামনে এভাবে বলছে? মেয়েটা স্বামীর মুখে প্রাত্তনের কথা শুনে কষ্ট পাবে না! আসলেই তার ভাই ব’ল’দ কি ভাবে হাঁসি দিচ্ছে আবার। পরিবেশ গুমোটে প্রণয় খেয়াল করে রূপার কথা এভাবে বলা ঠিক হয় নি।
প্রেমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘গল্প হয়ে গেলে পড়তে যা। সারাদিন শুধু গল্প আর গল্প।’
প্রেমা পরিবেশ স্বাভাবিক করতে ভেংচি কেটে ভাইকে বলে,
‘আমার গল্প তোকে কোনো সমস্যা করছে না।ভাইয়া আসলে তুই এখন আমাকে এই রুম থেকে যেতে বলছিস।ভাবির সাথে প্রেম করবি আমি জানি তো ।আমি এমনিও চলে যেতাম কাবাব মে হাড্ডি হতে চাই না আমি।’
বলেই প্রেমা দৌড় দেয়। প্রণয় প্রেমার পিছু নেয়। চেঁ’চি’য়ে বলে,
‘তবে রে দাঁড়া!’
প্রেমাকে আর পায় কে? প্রণয় রুমের দরজা লক করে আরিবার পাশে এসে বসে।শান্ত স্বরে বলে,
‘আজ এতো চুপচাপ যে?’
আরিবা ঠেশ দিয়ে বলে,
‘আমি তো আর আপনার রূপার মতো চঞ্চল না যে হৈ চৈ করে বাড়ি মাতিয়ে রাখবো।আমি আরিবা আমি চুপচাপই থাকি।’
প্রণয় আরিবার কাছে ঘেষে বসে আরিবা সড়ে যেতে নিলে প্রণয় আরিবার কমোড়ে হাত রাখে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে।এতে করে আরিবা কেঁপে উঠে অদ্ভুত চোখে প্রণয়ের দিকে তাকায়।প্রণয় আগে থেকেই আরিবার দিকে তাকিয়ে ছিলো ফলে দুইজোড়া চোখ একত্রিত হয়।প্রণয় ফিসফিস করে বলে,
‘রূপা আমার অতীত তুমি আমার বর্তমান। অতীত টেনে এনে আমি আমার বর্তমান নষ্ট করতে চাই না।রূপা ছোট থেকে আমাদের বাড়িতে বেশি সময় থাকতো যার জন্য অনেক সময় ওর কথা বলে ফেলি যা আমার উচিত হয় নি। আমি ওকে পছন্দ করতাম অস্বীকার করি না,তবে ও পছন্দ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকুক।আমি চাই পছন্দের গভীরে যে সকল সম্পর্ক সবকিছু তোমার সঙে গড়ে উঠুক।সব কিছু ঠিক করতে একটু তো সময় লাগবে কারণ আমরা মানুষ হঠাৎ করে সব কিছু ন’ষ্ট করতে পারলেও হঠাৎ করে কিন্তু কোনো কিছু জুড়তে পারি না।
আরিবা মনোযোগ দিয়ে প্রণয়ের কথা শুনে প্রণয় চুপ হয়ে যায় আরিবা গোলাপী ঠোঁট জোড়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এই ঠোঁট জোড়া তাকে বড্ড টানছে। প্রণয় তার একটা হাতে আরিবার মাথার চুল গলিয়ে দেয় আর অপর হাত আরিবার কোমড়ে রেখে তার সাথে জড়িয়ে নেয় , ঠোঁট দুটো বাড়িয়ে ধীরে ধীরে আরিবার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যায় আরিবা বুজতে পেরে কাঁপতে থাকে চোখ বন্ধ করে নেয়।তারা একে অপরের নিঃশ্বাসের আওয়াজ শুনতে পারছে,যেই মাত্র ঘনিষ্ঠ হবে ঠিক তখনি দরজায় কেউ ধুমধাম বা’ড়ি দিতে শুরু করে।প্রণয় বিরক্ত হয়ে উঠে পড়ে এই মুহূর্তে এমন না হলেও পারতো।আরিবা বন্ধ করে রাখা নিঃশ্বাস ছাড়ে নিজেকে গুছিয়ে নেয়।প্রণয় দরজা খুলতেই প্রীতম হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
‘ভাইয়া সর্বনাশ হয়ে গেছে জারিফ সুইসাইড এটেম করছে। তার অবস্থা খুবই খারাপ!’
।চলবে।