গোধূলি রাঙা দিগন্ত পর্ব-০৯

0
495

#গোধূলি_রাঙা_দিগন্ত
#লেখিকাঃফারিহা_খান_নোরা
#পর্বঃ০৯
ভালোবাসা! সুন্দর একটি অনুভূতি। এই সুন্দর অনুভূতির সাথে সে সকল মানুষ পরিচিত যাদের জীবণে ভালোবাসা এসেছে। যে সকল মানুষ ভালোবাসা নিজের করে পায় তাদের থেকে সেই সকল মানুষ ভালোবাসার মর্ম একটু হলেও বেশি বুঝে যারা ভালোবাসা হারায়। সেই ঘটনার পর আরিবার দুই মাস পেরিয়ে গেছে এই বাড়িতে। সেইদিন জারিফ ও আরিবাকে অই অবস্থায় কে দেখে নিয়েছে তা জানতে পারে নি কারণ পিছন ফিরে দেখতে পারে দ্রুত গতিতে একটা ছায়া সড়ে যায়।আরিবা ও জারিফ উভয়‌ই রুমের বাহিরে এসে দেখে মানুষের কোনো চিহ্ন নেই শুধু নিচে পড়ে আছে বড় ফুলদানিটি।আরিবা জারিফের উপর রেগে যেয়ে বলে দেয় তার সাথে জেনো কোনো রকম যোগাযোগ সে আর না রাখে। এখন আরিবা বিবাহিত তার একটা সম্মান আছে।জারিফ তার প্রেমিক ছিলো ঠিক তবে বিয়ের পর একটা মেয়েকে পরিচিত ছেলের সাথে দেখলেও সবাই সন্দেহের চোখে দেখে এটাই নিয়ম।মাঝে মাঝে জারিফ বিভিন্ন নাম্বার থেকে আরিবার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কিন্তু আরবি পুরোপুরি ইগনোর করে।

এই দুইমাসে প্রেমার সাথে আরিবার ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তবে মাঝেমধ্যে প্রেমার মুখে রহস্য জনক কথা শুনা যায় যা আরিবাকে পরবর্তীতে বেশ ভাবিয়ে তোলে অন্যদিকে নাসিমা বেগম সেই রিনা খানের চরিত্রে আটকিয়ে আছে। আরমান শেখ আরিবাকে বরাবরই সার্পোট করে একদম নিজের মেয়ের মতো দেখে।প্রণয়ের সাথে আরিবার সম্পর্ক আগের থেকে সহজ হয়ে উঠেছে তবে আর পাঁচটা স্বামী স্ত্রীর মতো স্বাভাবিক সম্পর্ক এখনো গড়ে উঠে নি।এই কয়দিনে আরিবা বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে প্রণয় হলো মা ভক্ত ছেলে।মা যা বলবে প্রণয় সেটাই শুনবে।প্রণয় মাকে যেমন ভক্তি করে তেমন অন্ধের মতো বিশ্বাস করবে এই পয়েন্ট কাজে লাগিয়ে নাসিমা শেখ তাদের মধ্যে ঝামেলা তৈরি করার চেষ্টা করছে বার বার।

আকাশটা আজ মেঘলা। আকাশে রোদ মেঘের কানামাছি চলছে।আরিবা প্রেমার জন্য কলেজের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দুইজন এক‌ই ভার্সিটির স্টুডেন্ট হবার সুবাদে এক সাথে আসা যাওয়া করে। হঠাৎ করেই অচেনা একটা ছেলে আরিবার সামনে এসে মুখে হাঁসি নিয়ে বলে,

‘হাই মিস।’

আরিবা বিরক্ত হয় তবুও সৌজন্যমূলক আচরণ করে,

‘হ্যালো।’

ছেলেটি সাড়া পেয়ে দিন দুনিয়া ভুলে যায়। আরেকটু এগিয়ে এসে বলে,

‘হেই সুন্দরী আমারা কি বন্ধু হতে পারি। আপনার মতো সুন্দরী মেয়েকে বন্ধু হিসাবে পেলে আর কি লাগে বলুন এমনিতেও আপনাকে দেখে সিঙ্গেল‌ই মনে হয় তেমনাটা হলে আমাকে বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে নিতে পারেন আমার কোনো সমস্যা নেই।’

অচেনা ছেলের এতো বড় স্পর্ধা দেখে রা’গে আরিবার শরীর রি রি করে।ফর্সা মুখ লালচে বর্ণ ধারণ করে এমন গায়ে পড়া ছেলে আরিবা আর একটাও দেখেনি। কিছু বলতে যাবে তার আগেই ছেলেটির ক’লা’র চেপে ধরে প্রণয় ধ’ম’কে’র সুরে বলে,

‘তোর এতো বড় সাহস ভরা রাস্তায় মেয়েদের সাথে ফ্লাট করিস?’

ছেলেটি প্রণয়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।এতে করে প্রণয় ক’লা’র আর‌ও শক্ত করে ধরে। ছেলেটি আর্তনাদ করে হাঁসফাঁস করে বলে,

‘আপনার সমস্যা কি ভাই? ফ্লাট করলে আমি এই মেয়েটির সাথে করছি আপনি আপনার রাস্তা মাপেন।’

আরিবা ভ’য়ে জড়সড় হয়ে আছে প্রণয়ের এমন রা’গ সে এর আগে দেখে নি তার মধ্যে ছেলেটির এমন কথায় প্রণয় যে কি করবে তা ভাবাচ্ছে।এতো ভাবাভাবির আগেই প্রণয় ছেলেটির নাক বরাবর গায়ের জো’রে দুটো ঘু’ষি মে’রে দেয়।ছেলেটি নিচে পড়ে কাতরাতে থাকে নাক দিয়ে র’ক্ত বের হচ্ছে। আরিবা মুখ চেপে পিছনে সড়ে আসে।প্রণয় গজরাতে গজরাতে ছেলেটিকে তুলে আরেক ঘা লাগিয়ে দেয়। দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠে কন্ঠে তার কঠোরতা,

‘হা’রা’মি’র বাচ্চা আমি আমার রাস্তায় মাপছি। তুই যে মেয়েটির সাথে ফ্লাট করছিস সে আমার ব‌উ। আমার ব‌উয়ের দিকে আর একবার যদি চোখ তুলে তাকাস তোর চোখ উপড়ে ফেলবো।’

বলেই ছেলেটির প্রাইভেট জায়গায় লাত্থি মা’রে। প্রণয়ের মুখে ব‌উ কথাটি শুনে আরিবার শরীরে অদ্ভুত শিহরণ জাগে।পুরো শরীর জুড়ে অদৃশ্য ভালো লাগায় ছেয়ে যায়।এর মধ্যে প্রেমা এসে পড়ে বড় ভাইকে এমন রে’গে যেতে দেখে আরিবাকে জিজ্ঞেস করে।আরিবা শুরু থেকে বলে প্রেমা যেয়ে প্রণয়কে থামিয়ে দেয় প্রণয় রা’গে বিরবির করতে করতে গাড়িতে গিয়ে বসে।আরিবা ভয়ে জড়সড় হয়ে প্রণয়ের পাশে যেয়ে বসে পড়ে। প্রণয় আরিবার দিকে তাকিয়ে আওড়ায়,

‘এসেছিলাম বোনকে কেউ ডিস্টার্ব করে কিনা সেই টা দেখতে এখন এসে দেখি উল্টো কাহিনী।বোনকে নয় আমার ব‌উকেই ডিস্টার্ব করছে ছেলেরা।’

আরিবা আর‌ও চুপসে যায়। ভাইয়ের কথা শুনে প্রেম হাঁসবে না কাঁদবে ঠিক বুজতে পারছে না। সুন্দরী ব‌উ হলে যা হয় আর কি!

____________________________

গাড়ি থেকে নামতেই প্রণয় আরিবাকে সবার সামনে দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করে নাসিমা শেখ দেখে বেজায় খুশি হয়।সাইট থেকে গজগজ করতে করতে উস্কে দিয়ে বলে,

‘নিশ্চয়‌ই কোনো আকাম করছে।যা রুমে যেয়ে আচ্ছা মতো দুই চারটা লাগিয়ে দে। আমি আগেই বলেছিলাম এই মেয়েকে আর পড়াতে হবে না।কেউ শুনে নি আমার কথা।দেখবি একদিন এই মেয়েই মির্জা বাড়ির সম্মান ধূলোয় মিশে দিবে ছো’ট’লো’কের মেয়ে কি না?’

প্রণয় চুপ করে শুনে গেলো মাকে কিছুই বলল না। কলেজে সবার সামনে আরিবাকে ব‌উ বলায় প্রণয়ের প্রতি আরিবার যতোটা না ভালো লাগা তৈরি হয়েছিলো এখনকার এই ঘটনায় প্রণয়ের প্রতি সেই ভালো লাগা মিশে যায়।প্রণয় তো পারতো তাঁর মাকে ভালো করে বুঝাতে।

প্রেমা তাঁর মাকে চুপ করিয়ে দিতে বিরক্তের সহিত বলল,

‘আহ্ মা চুপ করো।যা জানো না তা নিয়ে কথা বলতে যাও কেন?’

নাসিমা শেখ ফুঁ’সে উঠে বলেন,

‘এখন তুই অই ছো’ট’লো’কের মেয়ের পক্ষ নিয়ে আমায় কথা শুনাবি।এটাই তো বাকি ছিলো হবেই না কেন বাপ তো মির জাফর।মিরজাফরের বাচ্চা কি আর আমার পক্ষ নিয়ে কথা বলবে।শুন যতোই বাপ বাপ করিস না কেন দশ মাস কিন্তু আমিই পেটে জায়গা দিয়েছি তোর বাপ কিন্তু জায়গা দেয় নি।’

ল্যাও ঠ্যালা! মাকে ভালো বুঝাতে এসে মা কিনা তার জন্মের কথা অবধি চলে গেছে।এমন ভাবে কথা বলছে মনে হচ্ছে বাবা প্রেমাকে জন্মের আগেই জায়গা থেকে বিতারিত করেছে তার মা দয়া করে প্রেমাকে দশমাস জায়গা দিয়েছে! এখন কথা হলো মায়েরা তো জন্ম দেয়, বাবারা তো জন্ম দেয় না।

____________________________

রুমে এসে দরজা লক করে দেয় প্রণয়।আরিবা প্রণয়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য হাত মুচড়া মুচড়ি করে তবুও পারে না।প্রণয় এক ঝটকায় আরিবাকে নিজের সাথে মিশিয়ে চাপা স্বরে চেঁ’চি’য়ে বলে,

‘কলেজে পড়তে যাও নাকি নিজের রূপ দেখতে যাও?’

আরিবা ব্যা’থা পাচ্ছে। টলমল চোখ জোড়া নিয়ে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘কলেজে মানুষ রূপ দেখাতে যায়?’

প্রণয় হিসহিসিয়ে বলে,

‘তুমিই তো যাও অই ছেলের তো তোমার রূপের প্রতি এতো ইন্টারেস্ট।’

‘আমি ছেলেটাকে চিনি না। হঠাৎ করেই উনি আমার সামনে চলে এসে এসব বলছে।’

প্রণয় ব্যাঙ্গ স্বরে বলে,

‘তুমি বলো নি তুমি বিবাহিত! আমার কথায় চলবে তুমি আর কোনো ছেলের সাথে জেনো তোমায় না দেখি।’

আরিবা এবার জেনো রা’গে ফুঁসে উঠে এরা মা ছেলে পেয়েছেটা কি! তাকে যেভাবে খুশি সেভাবে ট্রিট করবে?

দন্তপিষে আরিবা বলল,

‘আপনি আমাকে ব‌উ বলে মানেন অদ্ভুত পুরুষ মানুষ।ব‌উ বলে মানেন না আবার জোর দেখায়।মায়ের উপর তো একটা কথাও বলেন না।আমি কি করি না করি আপনাকে বলতে যাবো কেন? যেদিন ব‌উ বলে মানবেন সেদিন স্বামী বলে আমিও আপনার সব কথা শুনবো।’

প্রণয় আকস্মিক একটা কাজ করে বসে।আরিবার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বসিয়ে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,

‘ব‌উ না মানলে এতো গুলো মানুষের সামনে তোমায় ব‌উ বলে স্বীকার করি? এখন থেকে কলেজে যেতে হলে সবাইকে বলবে ‘তুমি বিবাহিত’

।চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে