গোধূলির_আলোয় পর্ব-০৮

0
1250

#গোধূলির_আলোয়
#পার্টঃ৮
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
পশ্চিমের বাগান থেকে গোলাপের সুন্দর মন মাতানো সৌরভ ভেসে আসছে৷ সামনে থাকা লেকের পানির উপর সূর্যের কিরণের মাতামাতি চলছে৷ কোথা থেকে একটা হলুদ রাজ্ঞা পাখি কিচকিচ শব্দ করে উড়ে এসে পাশে থাকা বেঞ্চের উপর বসে খুটখুট করছে৷ নিনীতা আনমনে তাকিয়ে আছে সেই দিকে৷বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত সে!আধঘন্টার উপর তাকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে রেখে কোথায় যে চলে গেছে আদ্র তার ঠিক নেই৷ নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে নীরবে কেঁদে উঠে সে৷ সত্যি সেদিন যদি বোকামো না করতো তবে আজ নিজের পায়ে হাটতে পারতো৷ আদ্রের কথা শুনে তার মনে হচ্ছিলো এইখানে দুনিয়া থেমে যাক নয়তো সে৷ তাই তো অত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে দুবার ভাবে নি৷মাথায় ব্যাথা হয় প্রচন্ড,কিছু ভাবতে পারে না সে৷অতিরিক্ত প্রেশার ক্রিয়েট হলে নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হয় সমানে৷ আদ্রের জীবনে সেতো পার্মানেন্ট কিন্তু তার জীবনে কি আদেও সে পার্মানেন্ট?অকেজো জীবন নিয়ে চলাফেরা করা বড্ড ভারী লাগে তার৷

–‘নুনতা তুই ভয় পেয়েছিস?’

আদ্রের কন্ঠ শুনে চোখের পানি মুছে রাগী স্বরে নিনীতা বলল,

–‘ভয় পাবো কেন?তুই বুঝি আসতি না আমায় নিতে?আর কোথায় গিয়েছিলি তুই আমায় এখানে রেখে?’

–‘এইযে এইগুলো আনতে…নিনীতার হাতে অনেক গুলো টিউলিপ দিয়ে বলে আদ্র৷’

নিনীতার হাতে জায়গা হচ্ছে না এতো গুলো টিউলিপ৷ নানা রঙের ফুল৷ নিনীতা ফুল গুলো ছুয়ে দেখছে আর হাসছে৷ তার অনেক দিনের ইচ্ছা মুঠোভরতি টিউলিপ নিয়ে আদ্র তাকে দিবে৷নিনীতা ফুল গুলো সামলাতে ব্যাস্ত আর আদ্র ছবি তুলতে৷ গোধূলির আলো নিনীতার উপর পড়ছে৷ সেই আলো রুপোলী রাঙা মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে টিউলিপ হাতে তার নুনতার উপর৷

নিনীতার অনেক গুলো ছবি তুলে ওর কাছে হাটুমুড়ে বসে বলে,
–‘পছন্দ হয়েছে তোর?’

–‘তোর মনে ছিলো?’

–‘অবশ্যই!আমার কিছু মনে না থাকলেও তোর সব আমার মনে থাকে৷ কারণ পুরো মনটাই তো তোর!’

–‘মেয়ে পটানো ডায়ালগ,কার কার উপর এপ্লাই করেছিস বল তো?’

–‘অনেকের উপর ট্রায় করেছি বাট তোর উপর প্রথম৷’

নিনীতা হাতে থেকে একটা ফুল আদ্রের দিকে ছুড়ে মেরে বলে,

–‘তাহলে তাদের কাছেই যা আমার কাছে কি?’

–‘আমার শান্তি৷’

নিনীতার শরীরে ভালোলাগার শিহরণ বয়ে যায়৷ মৃদু বাতাসে কেপে উঠে সে৷ আদ্র তার কেপে উঠা দেখে তড়িঘড়ি করে নিজের ব্লেজার খুলে পড়িয়ে দেয়৷ শাসনের সুর তুলে বলে,

–‘ছেলে মানুষি কবে যাবে তোর?ঠান্ডা লাগলে কি হবে বল তো!ডাক্তার কি বলেছে মনে নেই ঠান্ডা লাগলে তোর প্রব্লেম হতে পারে৷কেয়ারলেস মেয়ে একটা৷ আমি না বললে কিছুই করতে চায় না৷’

–‘কারণ তুই তো আছিস আমার৷’

আদ্রের রাগ পড়ে যায়৷ মুচকি হাসে সে৷ খারাপ দিনের পর ভালো দিনে আসবে৷ অবশ্যই আসবে!তাদের আজ ভালো দিন,ভালোবাসার দিন৷এতোটা খারাপ সময়ের পর ভালো দিন পেয়েছে সে৷ তার নুনতাকে কখনো একা ছেড়ে আর যাবে না৷ এই মেয়েটাকে না দেখলে তার আগে দম বন্ধ লাগতো আর এখন পুরো হৃদপিণ্ড টাই বন্ধ হয়ে যায়৷ নিনীতার মাথা তার বুকে রাখে৷ পরম শান্তি অনুভব হয় তার৷ এতোটা শান্তি নিনীতা চলে গেলে কোথায় পেতো সে?ভেবেই ভেতরে ভেতরে শিউরে উঠে নিনীতার মাথা হালকা করে চেপে ধরে তার বুকের মাঝে৷ নিনীতা আবেশে চোখ বুজে ফেলে৷ শান্তির আস্ত এক ভান্ডার এই ছেলেটা৷

ঘড়িতে রাত ১ঃ৪৫ প্লেন একটু আগে লেন্ড করেছে৷ নিনীতা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে লেপ্টে আছে আদ্রের সাথে৷ আদ্র আলতো করে কোলে উঠিয়ে নেয় নিনীতাকে৷ ধীরপায়ে এগিয়ে যায় বাইরে রাখা গাড়ির দিকে৷ গার্ড তার জিনিসপত্র নিয়ে তুলে রাখে গাড়িতে৷ আদ্র চোখের ইশারায় তাকে চলে যেতে বলেই নিজেও নিনীতার পাশে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে৷ টানা এক বছর পর তারা দেশের মাটিতে পা রেখেছে৷ আদ্রের মন খুশিতে ভরে উঠে৷ আজ নুনতাকে তার নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবে৷ তাদের সংসার হবে৷ ভাবতেই কেমন সুন্দর ফিলিংস হচ্ছে৷ নিনীতার দিকে ঝুকে তার কপালে উষ্ণ পরশ দিতেই নিনীতা চোখ খুলে তাকায়৷ আদ্র উঠে ঠিক হয়ে বসে৷ নিনীতা হাই তুলতে তুলতে বলে,

–‘প্লেন এখনো নামে নি?’

–‘না,নামে নি তো!তুই ঘুমিয়ে পড় আরো ছয় ঘন্টা লাগবে৷’

সত্যিই নিনীতার আবারও সিটে মাথা হেলিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়৷ আদ্র অবাক হয়ে যায়,এই মেয়ে সত্যিই তার কথা বিশ্বাস করছে৷ ভেবেই গা দুলিয়ে হেসে উঠে সে৷ আদ্রের হাসির শব্দে নিনীতা ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,

–‘তোকে প্লেন থেকে বের করে দিবে,এতো জোড়ে হাসিস না পাগল৷’

–‘আমার গাড়ি থেকে কে বের করবে?’

নিনীতা এইবার চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে সত্যিই তারা গাড়িতে বসে আছে৷ দ্রু কুচকে বলে,

–‘প্লেন থেকে নামলাম কখন?এই তুই কি যাদু জানিস!প্লেন থেকে না নামিয়ে সোজা গাড়িতে নিয়ে এসেছিস৷’

–‘মানুষ পাগল হলে উল্টা-পাল্টা মানুষ বলে৷ তা এক ঘুমে কি নুনতা জাম পাগল হয়ে গেলো?মানুষ তো আমায় পাগলের জামাই বলবে৷’

–‘বলতেই পারে তবে পাগলের না ল্যাংড়ার জামাই বলবে নির্ঘাত৷’

গাড়ি জোড়ে ব্রেক করে আদ্র৷ নিনীতা সামনে ঝুকে পড়তেই হাত দিয়ে ধরে ফেলে সে৷ ওকে উঠিয়ে দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে যায়৷ নিনীতা বার বার ডেকেও সারা পায় না৷ নিজের ভুল বুঝতে পেরে লজ্জিত হয় সে৷ সত্যিই তো এতো সুন্দর একটা মূহুর্ত নষ্ট না করলে কি এমন ক্ষতি হতো তার?অনেকক্ষণ বসে থেকেও আদ্রের আসার নাম পায় না সে৷ ভয়ে তার কান্না পাচ্ছে৷ ফোন দিয়েও মোবাইল বন্ধ পেয়েছে৷ জানালার কাঁচ নামিয়ে চিল্লিয়ে বলে,

–‘আদ্র….প্লিজ এমন করিস না!আমি সত্যিই সর‍্যি…এমনি বলেছি আমি!দেখ আমার মাথা ব্যাথা করছে৷ প্লিজ ফিরে আয়৷’

নিনীতার ডাকেও আদ্র আসে না৷ জোরে জোরে কান্না করে দেয় নিনীতা৷ এই অন্ধকারে কোথায় গেলো সে?কিছু হয়ে গেলেও তো কোনো কিছু কর‍তে পারবে না সে৷ বাইরে অন্ধকার সামনের কিছুই নজরে পড়ছে না তার৷ হঠাৎ তীব্র আলো চোখে পড়তেই চোখ মুখ কুচকে ফেলে সে৷চোখ খুলতেই ফুল নামক জীবনের বিষ টাকে নজরে পড়ে তার৷ মূহুর্তেই রেগে যায় নিনীতা!রেগে কিছু বলার আগে ফুলের পাশে কাওকে দেখে অবাক হয়ে যায় সে!!!!!
চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে