গোধূলির_আলোয় পর্ব-০৬

0
1317

#গোধূলির_আলোয়
#পার্টঃ৬
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)

‘শরৎ এর আকাশ জুড়ে শুভ্রের ছড়াছড়ি!’
‘অদ্ভুত মায়ায় পড়েছি তোমার শুভ্রতায়৷’
‘ভালোবাসি প্রিয় ভালোবাসার চেয়ে বেশি!’
‘মনের গহীনে লিখা আছে তোমার নাম গোধূলির আলোতে৷’

–‘এতো সুন্দর মনের ভাব কার জন্য আদ্র?’

ফুলের কথায় নিনীতার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে আদ্র বলে,

–‘শুধুই আমার নুনতা জামের জন্য৷’

আর কেও আদ্রের কথা না শুনলেও নিনীতা ঠিক শুনেছে৷ মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করতে আদ্র আবারও বলে,

‘তোমার হাসির প্রেমে পড়ি বারবার!’
‘প্রিয় তুমি কি মারতে চাও আমায় এই অবেলায়?’

নিনীতা এইবার জোরে হেসে উঠে৷ ফুল আর রায়হান ওদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে৷ একজন হুটহাট প্রেমের ছন্দ বলছে আবার অন্যজন হু হা করে হেসে চলেছে৷ অকালে পাগল হয়ে গেলো নাকি দুজনে?

–‘নিনীতা তুমি হাসছো কেন?’
–‘পাগলের প্রলাপ শুনে৷’নিনীতা হাসি আটকিয়ে বলে আর আদ্র আফসোসের সুরে বলে,

‘এই ভুবনে তুমি ছাড়া কারো কাছে পাগল হতে চাই না৷’
‘আমি তো তোমার ভালোবাসার পাগল৷’

রায়হান আদ্রের কথা বুঝতে পেরে নিজেও হাসিতে ফেটে পড়ে৷ ফুল আর তার সামনে কতো সুন্দর ভালোবাসার কথা বলে দিলো৷আর ফুল বোকা টাও কিছু বুঝে না৷ আহারে বেচারি!তার ক্রাশ এতো সুন্দর তাকে ছ্যাকা দিলো৷রায়হান নিনীতা আর আদ্র সমানতালে হেসে চলেছে৷ ফুল বোকার মতো নিজেও হাসিতে তাল মেলায়৷ ফুলের হাসি দেখে রায়হার আরো জোরে হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে উল্টে পড়ে যায়৷ নিনীতা হাসতে হাসতে ওকে টেনে তুলতে গেলে আদ্র ওর হাত চেপে ধরে রায়হান কে বলে,

–‘আমার চেয়ার ভেংগে যাওয়ার আগে উঠে বস কুমড়ো৷ আর একা না উঠতে পারলে ফুলের সাহায্য নে কুমড়ো পটাস৷’

–‘উঠছি!এই ফুল হাত বাড়াও আমায় একটু সাহায্য করো৷’

ফুল মুখ গোমড়া করে হাত বাড়িয়ে ঝুকতেই আদ্রকে নিনীতাত হাত ধরে থাকতে দেখে সমস্ত কিছু বুঝতে পারে৷ তাহলে প্রেম প্রেম খেলা চলছে তার সামনে দিয়ে৷ তার জন্য এতো শত অভিনয়৷ আন্টির কাছে খবর সময় অনুযায়ী পৌছে যাবে আদ্র৷ আমার সামনে অভিনয় এইটা তো আমি মেনে নিতে পারি না৷
.
.
.
চৈএ মাসের কাঠফাটা রোদের কারণে মাথা ঝিমঝিম করছে নিনীতার৷ কলেজ মাঠের একপ্রান্তে আদ্র আর সে দাঁড়িয়ে আছে৷ ঝি ঝি পোকার ডাকে সারা ক্যাম্পাস মুখরিত হয়ে আছে৷ কোথা থেকে মৃদু হাওয়া একটু একটু শরীরে লাগতেই গরমের মাএা যেন আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ রোদের কারণে ক্যাম্পাসের দিকে তাকানো যাচ্ছে না৷ কলেজ ছুটি হয়েগেছে সেই বারোটা সময়৷ দপ্তরি কাকা আর দারোয়ান কাকা ছাড়া পুরো ক্যাম্পাসে আর কেও নেই৷ থাকবেই বা কি করে এখন বাজে দুপুর দুটো৷ আদ্র ঘেমে নেয়ে একাকার৷ রাগে তার শরীর কাপছে৷ নিনীতা আদ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে,

–‘ও ও আমাকে প্রপোজ করবে আমি সত্যি জানতাম না বিশ্বাস কর৷ক্লাসে ঢোকার আগে ডেকেছিলো আমি গিয়েছিলাম আর গিয়েই দেখি ও লালা গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ আমি ফুল নিই নি৷ শান্ত জোর করে আমার হাতে দিয়েছে৷ আর তুই তখন ই ওইখানে গিয়েছিস৷ আগের কাহিনী না জেনে আমার সাথে এমন রাগ দেখানো কি উচিৎ হচ্ছে তোর?আর তুই ও তো ফুল কে গোলাপ দিয়েছিলো রোজ ডে তে!তখন আমি কি কিছু বলেছিলাম তোকে?’

–‘চুপ একদম চুপ!তুই ভালো করেই জানিস ফুল কে আমি গোলাপ দিই নি ওর কাছে টাকা ভাংতি ছিলো না বলে আমি টাকাটা দিয়েছিলাম৷ আর শান্তর হাব ভাব দেখে তুই বুঝিস নি ওর মোটিভ কি?এতোটাই সরল তুই?’

–‘আদ্র না বুঝে উল্টাপাল্টা কথা বলবি না৷ শান্তকে আমি বাকি ক্লাসমেট দের মতোই দেখি আমি কি করে জানবো ওর মনের মাঝে কি চলছে?’

আদ্র ঘুরে নিনীতার দুইহাত শক্ত করে ধরে বলে,

–‘তার মানে তুই কারো মনের মাঝে কি চলছে বুঝিস না?’

–‘হাত ছাড় আদ্র,আমি ব্যাথা পাচ্ছি৷ বোকার মতো কথা বলছিস কেন তুই?’

–‘হ্যাঁ!হ্যাঁ,আমি তো বোকা তুই তো চালাক তাহলে কেন গেলি শান্ত ডাকার পরে?’

–‘বার বার এককথা বলছিস কেন তুই!আমি তো আগেই বললাম ও ডেকেছিলো তাই গিয়েছিলাম আমি কি করে জানবো বল তো?’

আদ্র নিনীতাকে ছেড়ে দিয়ে রেগে ওর ব্যাগ ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে যায়৷ নিনীতা ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আদ্রের ব্যাগ উঠিয়ে ওর পিছে পিছে যায়৷ এই ছেলেটা সব সময় এমন করে৷ বুঝেও না অবুঝের মতো করে৷ নিনীতা খুব করে বুঝতে পারছে,এইসব ছোট ঝামেলার জন্য তাদের মধ্যকার সম্পর্ক যে কেও নষ্ট করে দিতে পারে৷ আদ্র রেগে গেলে তার উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে৷ এই একটা কারণেই অনেকে সুযোগ নেয় আর তাতে সফল ও হয়৷ আজকের পুরো ঘটনা আদ্রকে দেখানোর জন্যই ক্রিয়েট করে ছিলো ফুল৷ আর তাতে সে সফল৷ সম্পর্কের মাঝের ভীত নড়বড়ে হলে সেটা যেকোনো মূহুর্তে ভেংগে গুড়িয়ে যেতে সময় নেয় না৷ এই ঘটনার পর একমাস হয়ে গেলেও আদ্র আর নিনীতার সম্পর্ক আগের মতো হয় নি৷ আদ্র তো কথাই বলে না তার সাথে৷ ফুলের সাথে তার বন্ডিং প্রচুর ভালো হয়েছে৷ নিনীতার মনের অনুভূতি গুলো কষ্টে ভরে উঠে৷ সে আদ্রের সাথে কথা বলতে গেলে আদ্র শুনেই না৷

বোর্ড এক্সামের একমাস আগে আদ্রদের কলেজে বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ নিনীতার পড়ার চাপ থাকায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ৷ কিন্তু ফুলের জোরাজোরিতে এক প্রকার যেতে বাধ্য হয়৷ হালকা গোলাপি কালারের কালো পাড়ের শাড়ি পড়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হয় সে৷ চুল গুলো হাত খোপা করে বাধা৷ নিনীতা যখন ক্যাম্পাসে পৌছায় গিয়ে দেখে এখনও কোনো ছেলে-মেয়ে আসে নি ইভেন কেও না৷ ফুল ওকে টেক্সট করে বলেছিলো সকাল আটটা সময় প্রিন্সিপাল স্যার সবাইকে উপস্থিত থাকতে বলেছেন৷ এইজন্য সে সাড়ে সাতটা সময় তৈরি হয়ে চলে এসেছে৷ নিনীতা ঘুরে ঘুরে দেখছে সব৷ আজকের পর থেকে এই কলেজ ক্যাম্পাসে তাদের আড্ডা,ক্লাস কিছুই হবে না৷ কতশত সৃতি বিচরণ করছে ক্যাম্পাস জুড়ে ভেবেই কষ্ট লাগতে শুরু করে তার৷ আদ্রের সাথে কাটানো হাজারো মূহুর্ত সাথে রাগ,অভিমান সব এই ক্যাম্পাসের প্রতিটা কোণায় কোণায় আছে৷ বাহারি ফুলের গাছটা আজকের পর থেকে ছুয়ে দেখা হবে না৷ এতোশত ভাবনায় নিনীতা হারিয়ে গিয়েছে৷ শান্ত পিছন থেকে এসে হাত দিয়ে নিনীতার চোখ আটকে ধরলে নিনীতা ভয় পেয়ে যায়৷ কিছুমূহুর্ত পরেই তার মনে হয় এইটা আদ্র তাই ভয় পাওয়া দূরে রেখে মুচকি হাসে সে৷ আদ্র ভাদ্রের রাগ তাহলে কমেছে আজ৷ আবার সেই আগের মতো পিছন থেকে চোখ ধরে তাকে চমকে দেওয়ার জন্য এসেছে৷ নিনীতা ওর হাত শান্তের হাতের উপর রেখে বলে…….
চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে