“গানের ওপারে তুমি”
পর্ব- ৮
(নূর নাফিসা)
.
.
সোমবার সন্ধ্যায় বিয়েটা হয়েই গেলো। ঘরোয়া ভাবে। বরপক্ষ হয়ে মিহির, তার মা এবং ড্রাইভারই গেলো শুধু। রিপ্তিদের বাড়িতেও সেভাবে আয়োজন করেনি। একপক্ষ আয়োজন করবে না, আরেকপক্ষ করবে, সেটা কেমন দেখায়? তবে দুই ফুপি আর নানাবাড়ির সদস্যদের আমন্ত্রণ করা হয়েছে কেবল। এই আয়োজনেই রিপ্তি বউ সেজেছে। মিহিরও শেরওয়ানি পরেছে। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর তাকে আজ রিপ্তিদের বাড়িতেই রেখে দিয়েছে। পরবর্তী দিন রিপ্তিকে নিয়ে চলে যাবে তাদের বাড়ি। বিয়ের রেজিস্ট্রি, খাওয়াদাওয়া ও আলোচনা পর্ব পর্যন্ত ড্রয়িং রুমেই বসেছিলো মিহির। পরক্ষণে রিপ্তির সাথেই রিপ্তির অগোছালো রুমটায় এলো সে।
“এটা আমার রুম।”
রিপ্তি কর্তৃক সদ্য পরিচিত রুমটায় মিহির প্রবেশ করে দেখতে লাগলো চারপাশ। সবটা গুছানোই। দেয়ালে শান্তিদায়ক পেইন্টিং, এদিকসেদিক বেশ কিছু ছবিও ঝুলে আছে। তার মধ্যে মিহিরের ছবিই বেশি। সবমিলে ছয়-সাতটার মতো হবে। কিন্তু সবটা ঠিক জায়গায় বিন্যস্ত থাকা সত্ত্বেও রুমকে অগোছালো লাগলো এই কারণে, মিহিরের ছবিগুলো সব আঁকাবাঁকা হয়ে ঝুলে আছে। ওয়্যারড্রোবের উপরে রাখা ছবিটাও কাত হয়ে আছে। মিহির সেদিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,
“দেয়ালের পেইন্টিং তুমি করেছো?”
“জ্বি, সুন্দর হয়নি?”
“হুম, সুন্দরই হয়েছে।”
বলতে বলতে ছবিটা সোজা করতে মিহির হাত বাড়াতেই রিপ্তি বাধা দিয়ে বললো,
“খবরদার, ওটা ঠিক করবেন না।”
“কেন?”
“এমনি, ওটা এভাবেই থাকবে। কাত করে রেখে আপনাকে শাস্তি দিচ্ছি এভাবে।”
মিহির হাত সরিয়ে এনে কিঞ্চিৎ বিস্ময়ের সাথে বললো,
“আমাকে শাস্তি কেন?”
“আপনি সেদিন আমাকে বকেছিলেন না? তাই বাসায় এসে সবগুলো ছবিকেই লটকে দিয়ে আপনাকে শাস্তি দিচ্ছি।”
মিহির হেসে উঠলো দুষ্টুর পাগলামোতে।
“এতোদিন যাবত ঝুলিয়ে রেখেছো! এতোটা শাস্তি দিলে আমি বাঁচবো?”
“হ্যাঁ, বাঁচতে হবে। আমাকে বকেছেন কেন তবে! আমি বেঁচে আছি না?”
লাজুক লাজুক ভঙ্গিতে কথার জবাব দিয়ে গেলো রিপ্তি। লাজুক মুখে আকৃষ্ট মিহির হাত বাড়িয়ে গেলো দুষ্টুকে জড়িয়ে নিতে। রিপ্তির লজ্জাময়ী হাসি যেন আরও গেছে বেড়ে। সরে যাওয়ার আগেই টেনে ধরেছে মিহির তাকে।
“আমার কণ্ঠে ভক্ত তুমি? না চেহারায়?”
“আপনার আকর্ষণ কোথায়?”
“তোমার দুষ্টুমিতে।”
“আমার আকর্ষণ সম্পূর্ণ আপনিতে।”
মিহিরের খুব পাশে থেকেই লাজুক দৃষ্টি নত রেখে জবাব দিলো দুষ্টুপরী। জবাবের সাথে সাথে যেন চোখদুটোও হালকা ভিজে এসেছে। কেন ভিজেছে, তা সংজ্ঞায়িত নয়। হয়তো পছন্দকে আপন করে পাওয়া থেকেই। মিহিরেরও ভালো লাগছে দুষ্টুর মিটিমিটি লজ্জাবোধ দেখতে। এরইমধ্যে চোখ পড়লো সেই ছবিটির কাছেই রাখা এক ছোট বক্সের দিকে। হাতের চাপে চ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছিলো বক্সটা, এখনো তেমনই আছে। মিহির সেটি হাতে নিয়ে বললো,
“এটা সেই গিফট না, আমার জন্য নিয়েছিলে যে?”
মুখে আর জবাব দিতে হলো না। লাজুক চোখে তাকানোতেই যেন নিশ্চিত হয়েছে মিহির। বক্স খুলে ভেতরে একটা গিটার লকেট পেলো। হাতের তালুতে লকেট নিয়ে দেখতে দেখতে বললো,
“সুন্দর তো! আমারও একটা আছে, বাসায়। একটু অন্যরকম। মাঝে মাঝে পরি।”
বলতে বলতে গলায় দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। আয়নাতেই রিপ্তিকে জিজ্ঞেস করলো,
“ভালোই দেখায়, না?”
রিপ্তি বিড়বিড় করে বললো,
“খারাপ দেখায় কবে!”
এমনি রোহান এসে দরজা ঠেলে উঁকি দিলো। হাতের ফোনটা দেখিয়ে বললো,
“আপু, তোমার ফোন।”
রিপ্তি পেছনে ফিরে হাত বাড়ালো দিয়ে যাওয়ার জন্য। রোহান এসে তার হাতে ফোন দিলেও সাথে সাথেই প্রস্থানের সুযোগ হলো না। এদিকে এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে রোহানের হাত ধরে হাঁটু ভেঙে বসে গেলো মিহির। জানতে চাইলো কিছু সন্দেহভাজন তথ্য।
“রোহান, আমি তোমার কি হই?”
রোহান যেন চিন্তায় পড়ে গেলো কি জবাব দিবে! সেদিন তো দুলাভাই বলায় মুখ চেপে ধরেছিলো রিপ্তি। তাই একবার মিহিরের দিকে, আবার রিপ্তির দিকে তাকালো সে। মিহির তার মুখ নিজের দিকে টেনে বললো,
“আমার দিকে তাকাও। কি হই আমি?”
“ভাইয়া।”
“দুলাভাই না?”
“হ্যাঁ, দুলাভাইও।”
“আপু শিখিয়েছিলো না এটা?”
“হ্যাঁ, আপুই।”
“কবে শিখিয়েছিলো?”
রিপ্তি আবারও মুখ চেপে ধরলো রোহানের। মুখাবয়বে চাপা বিস্ময় জুড়ে বললো,
“আল্লাহ! ও তো বাচ্চা মানুষ। ও কি বলতে পারবে এসব? আমি কেন দুলাভাই শিখাতে যাবো! আমার বিয়ে হলো মাত্র আজকে। দুলাভাই কোত্থেকে আসবে তখন!”
রিপ্তি মুখ চেপে ধরায় রোহানেরও হাসি পেলো। মাথায় নাড়া দিলো দুষ্টুমি। সে দুই হাতে রিপ্তির হাত টেনে নামিয়ে চেঁচালো,
“ভাইয়া, আপুই শিখিয়েছে আমাকে। তোমার ওই ছবিগুলো দেয়ালে টানিয়েছে আর প্রত্যেকদিন বলেছে এসব আমার মিহির দুলাভাইয়ের ছবি। প্রতিদিন যেন ছবি দেখে দেখে দুলাভাই ডেকে যাই এখানে এসে।”
কথা শেষ করেই দৌড়ে ছুঁটে চলে গেলো। চাপা কথা ফাঁস করে দেওয়ায় রোহানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো রিপ্তি। কে দেখে তার চোখ রাঙানোকে? মিহির তার উপর হেসেই উঠে দাঁড়ালো। পরবর্তী দিন বিকেলে তাদেরকে নিতে গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে জিনিয়া তাবাসসুম। রিপ্তির মনোভাব, এইটুকুর জন্য গাড়ি না হলেও চলতো। ধীর পায়ে দুজন গল্প করতে করতে প্রথমবার শ্বশুর বাড়ির দুয়ারে উঠে গেলে বেশ মজার হতো না? কিন্তু প্রথমদিনই হেঁটে কিংবা রিকশায় বউ শ্বশুর বাড়ি আসবে, এটা কেমন দেখায়? তাই তার মজাকর ভাবনাটা ঠিক ফলে উঠলো না। বিদায় পর্ব জমজমাট না হওয়ায় রিপ্তি কাঁদেওনি। বরং একটু অন্যরকম আনন্দই বিরাজ করছিলো শ্বশুরবাড়ি যাওয়া নিয়ে। এক দুয়ার থেকে অন্য দুয়ারে পায়ে হেঁটে তিন-চার মিনিটের পথ। দেখতে ইচ্ছে হলে দিনে বারবার যেতে আসতেই আর কি?
বাড়িতে আয়োজন না করলেও পরবর্তীতে বিয়ে উপলক্ষ্যে অফিসের ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের নিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে একটা পার্টির আয়োজন করতে হয়েছে মিহিরকে। জিনিয়া তাবাসসুম, রোহান এবং রিপ্তিকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়েছে মিহির। তার আগে বাড়িতে আপ্যায়ন হয়েছে রিপ্তির পরিবারের সদস্যদের। ফ্রান্সে যাওয়ার দিনক্ষণ এগিয়ে আসায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই কার্যক্রমগুলো সেরে উঠতে হয়েছে। সেই সাথে সময় পেলেই নিজের ঘরেও বিভিন্ন গানের লিরিক কণ্ঠে তোলে, সুর জাগাতে একটু স্পর্শ করে পরিচিত সরঞ্জামগুলো। রিপ্তিও পাশে থাকে সময় হলে। সামনে থেকে মনযোগে শোনে তার কন্ঠ, তার সুর। বিমোহিত হয়ে প্রণয়ের হাওয়ায় হাওয়ার ভেসে হারায় সে বহুদূর।
বিয়ের সপ্তাহখানেক যেতেই সকাল নাগাদ খুশু ফুপু এলো বাড়িতে। মিহির তখন নাস্তা করতে বসেছে ডাইনিং টেবিলে। রিপ্তি দরজা খুলে দিয়েছিলো কলিং বেল বাজলে। খুশু ফুপুকে দেখে মাথার কাপড়টা টেনে আরেকটু তুলেছিলো রিপ্তি। সে চিনে না তাকে। তবে বুঝতে পেরেছে এ পরিবারের আত্মীয়বর্গের কেউ। সালামও দিয়েছে। সালামের জবাব দিতে দিতে রিপ্তির দিকে কেমন কেমন চোখ বুলিয়ে তাকাচ্ছিলো, যা কিছুটা অস্বস্তি বয়ে আনে। মিহির খেতে থেকেই তাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
“কেমন আছেন, ফুপু?”
“আছি, আল্লাহ রাখছে ভালোই। এইটা বউ?”
মিহির সৌজন্যতা সূচক ঠোঁট টানা দিয়ে জবাব দেয়,
“হুম।”
“তোর মা কই?”
“ওইতো, রান্নাঘরে চা করে।”
রিপ্তি দরজা চাপিয়ে এগিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,
“কে উনি?”
“ফুপু হয়। নাস্তা করছো না কেন তুমি?”
“মা আসুক।”
“মা চা পান করবে আগে। বসে যাও, ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
“একটু পরে খাই।”
রিপ্তি না খেলেও পাশের চেয়ারে বসেছে মিহিরের কথায়। ওদিকে ফুপুর কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে সমালোচনামূলক জবাবদিহিতা! জিনিয়া তাবাসসুম তাকে দেখেই জিজ্ঞেস করলো,
“কেমন আছেন, আপা?”
“হুম, ভালোই। কি করো?”
“এইতো, চা বসালাম।”
“ছেলের বউ এনে নিজের কাজ করতে হয়?”
জিনিয়া তাবাসসুম হাসিমুখে জবাব দেয়,
“ছেলের বউ এনেছি বলেই কি সংসার বোজা ফেলে দিয়েছি নাকি? যতদিন বাঁচি আগলে রাখবো ইনশাআল্লাহ।”
“তা তো আছেই। কাজকর্ম পারে না বউ কিছু?”
“হ্যাঁ, পারে তো। সকাল থেকে উঠেই আগেপিছু ঘুরে নাস্তা রেডি করলো। বসুন, আপা। নাস্তা করুন।”
“না, করেই আইছি। ভাবলাম দেখে যাই বউ। দাওয়াত তো করলাই না।”
“বলিনি তো কাউকেই। জানেন ই তো অবস্থা। আয়োজন করতে পরিবেশ পরিস্থিতি ভালো হওয়া লাগে। তা বউ কেমন দেখলেন?”
“হু, দেখলাম। বলছিলাম তো ফাতিহার মেয়েটার কথা। এতো ফুল পরীর মতো সুন্দরী একটা মেয়ে, ওইটা পছন্দ করলা না। এহন তুমিই তুলনা করে কও, কোনটা বেশি সুন্দরী ছিলো?”
“অযথা তুলনার কি দরকার, আপা? যার জুড়ি আল্লাহ যেখানে রাখছে। নয়তো কি আর ফুলপরী রেখে আমাদের জলপরী পছন্দ হয়?”
এপ্রান্তে থাকা মিহির এবং রিপ্তির কানে সবই হুড়হুড়িয়ে এসে লাগছিলো। ফুপুর তিরস্কৃত তীক্ষ্ণতায় মিহির মনে মনে নারাজ হলেও চুপচাপ খাওয়ার দিকে মনযোগ রাখার চেষ্টা করছিলো। পিছু পড়া লোকের স্বভাব যেন কখনোই বদলায় না। এরইমধ্যে একবার রিপ্তির দিকে তাকিয়ে তার মুখাবয়ব দেখে নিলো। নিশ্চিত ছিলো সে কষ্ট পাবে ফুপুর উতলানো মন্তব্যে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে রিপ্তির মুখাবয়বে যেন বড্ড রস জমেছে। এতোক্ষণ কান তো ওদিকেই সজাগ ছিলো, তবে চোখদুটো মিহিরের দিকে স্থির ছিলো। মিটমিট করে ঠোঁটের কোণে জমে উঠেছিলো রসের হাড়ি। মিহির এখন লক্ষ্য করে তাকাতেই রিপ্তি ক্ষীণ আওয়াজে ফিক করে হেসে উঠলো জিনিয়া তাবাসসুমের শেষ উক্তি শুনে। যা মিহিরের চেহারাকেও হাস্যোজ্জ্বল বিস্ময়ে রাঙিয়ে দিলো। রিপ্তি হাসি নিয়ন্ত্রণে এনে চামচ ছুঁয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“সবজি দিবো?”
মিহির দুদিকে মাথা নাড়লো, তার সবজি লাগবে না। রিপ্তি পুনরায় হাত গুটিয়ে ফিসফিস করলো,
“খুব বেশি সুন্দরী ছিলো?”
মিহির ঠোঁটের ধারে ঈষৎ হাসি মেখে ‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা নাড়লো। রিপ্তি আবার জানতে চায়,
“আমার চেয়ে অনেকটা বেশি?”
“হুম।”
“তবে বিয়ে হলো না কেন?”
“কারণ, আমার পছন্দের মতো সুন্দরী নয়।”
খাবার মুখে তোলার আগে জবাবটা দিয়ে নিলো মিহির। রিপ্তি একটু ভাব মেখে বললো,
“আহ! তবে আমি আপনার পছন্দের মতো সুন্দরী বুঝি?”
মিহিরের মুখের হাসি প্রশস্ত হয়। মুখের খাবার গিলে সে প্রত্যুত্তরে বলে,
“নয়তো আর বউ কি করে হও? তোমার চেয়ে বেশি সুন্দরী বলতে ওই মেয়েটা তোমার চেয়েও ফরসা বেশি। এতোটাও উজ্জ্বলতা ভালো লাগে না আমার। আঁধারে ঘুম ভাঙলে না আবার ভয় পেয়ে যাই!”
এতোক্ষণ মৃদুস্বরে দুজন গল্প করে গেলেও মিহিরের কথায় রিপ্তি খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো স্বাভাবিক স্বরে। মিহিরের কানে যেন প্রশান্তির ঢেউ হয়ে ভাসছে তার হাসির শব্দ। এমনি খুশু ফুপু কিচেন থেকে এগিয়ে এলেন জিনিয়া তাবাসসুমের সাথে। তাদের দেখে রিপ্তি ইচ্ছাকৃতই হাসি থামিয়ে নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু খিলখিল হাসির বিপরীতে একটু না বললেই যেন হচ্ছিলো না খুশু ফুপুর।
“নতুন বউ, এমন করে হাসতে নাই। বেশি হাসলে দুঃখ আসে।”
মিহির অপ্রকাশ্যে বিরক্তবোধ করলো। রিপ্তি চুপ রইলো। নিষেধাজ্ঞাতেই তার হাসি মিলিয়ে যায়নি যেন। প্রত্যুত্তরটা করলো জিনিয়া তাবাসসুম।
“দুঃখ ভাগ্যে লেখা থাকলে আসবেই। তাই বলে হাসি গুজে রাখবে কেন, আপা? হাসলে মন ভালো থাকে। দুঃখের আগাম চিন্তা করে হাসি লুকানো জরুরী নয়। এক কাপ চা খাবেন না তবে, আপা?”
“না। আজ কিছু না। বাড়ি যাই।”
“ঠিক আছে। আবার আসবেন।”
খুশু ফুপু বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। জিনিয়া তাবাসসুম গেলেন দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে দরজা লাগাতে। মিহির সন্তুষ্ট হলো মায়ের চিন্তাধারার উপর। সে মৃদু স্বরে রিপ্তিকে বললো,
“তুমি সবসময় হাসবে। এভাবেই হাসবে।”
মিহিরের মধ্যে ফুপুর বিপরীতধর্মী ভাবধারার স্পষ্টতায় রিপ্তি আবারও হাসলো শব্দহীন। নাস্তা করার জন্য প্লেট টেনে নিলো পরক্ষণে। জিনিয়া তাবাসসুম চেয়ারে বসতে বসতে বললো,
“কি যে মানুষ তারা, বুঝি না কিছু! ছেলের বউ নিয়ে সংসার করবো আমি, আর যত জ্বালাযন্ত্রণা সব তাদের।”
মিহির প্রত্যুত্তর করে,
“পাছে লোকে কিছু তো বলবেই, মা।”
“হু। মন খারাপ করেছো নাকি মেয়ে? তোমার হাসি কিন্তু আমার খুব প্রিয়।”
রিপ্তির উদ্দেশ্যে বলতেই রিপ্তি প্লেটে খাবার তুলতে তুলতে জবাব দেয়,
“করেছিই তো। ফুপু শ্বাশুড়ি এলেন, নতুন বউয়ের হাতে করা কিছু খেয়ে গেলেন না। এটা কিছু হলো?”
মা ছেলে দুজনেই হাসলো দুষ্টুর কথায়। আসলেই, হাস্যকর আফসোস রেখে গেলো বোধহয় খুশু ফুপু কিছু মুখে না তুলে!
চলবে।