গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব-২৩
লেখনীতে: ফাতিমা আক্তার অদ্রি
প্রিয়’র রাগের মাত্রা যেন আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেল। সে রাগে ফুঁসছে । প্রিয়’র রাগ বরাবরই বেশি। সে গটগট করে বের হতে উদ্যত হতেই বহ্নি ওর হাত ধরে অনুনয়ের সাথে বলল,’আপু প্লিজ এভাবে যেওনা। বললাম তো ভুল হয়ে গেছে।’
প্রিয়’র রাগ তখনো কমেনি । ফাহমি এতক্ষণ চুপচাপ বসেছিল । কিন্তু এখন আর চুপ থাকতে পারলো না। সে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,’প্রিয়, এসবের মানে কী? বহ্নি তো সরি বলেছে। আর ওই মেয়েটা তো একটা বাচ্চা। বাচ্চাদের কথায় কি মানুষ এভাবে রিয়েক্ট করে?’
ফাহমির কথা শুনে প্রিয়’র রাগের মাত্রা তখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে । সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,’ছোট বাচ্চা না? তুই এতক্ষণ পরে আসছিস কথা বলতে? এতক্ষণ কই ছিলি? যখন আমাকে অপমান করা হয়েছিল।’
ফাহমি এবার তিরিক্ষি মেজাজে বলল,’তুই এমনিতেই খুব বেশি বাড়াবাড়ি করিস!’ তারপর গলার স্বর যথাসম্ভব নামিয়ে নরম সুরে ফাহমি বলল,’এই সামান্য বিষয়টা বাদ দিলেও তো হয়। আজকের দিনটা স্পয়েল যেন না হয় কোনোভাবেই। আমরা সবাই কতদিন পর একসাথে হলাম! আমার তো রীতিমতো দম বন্ধ হয়ে আসছিল এভাবে সব বন্ধুরা একে অপর থেকে দূরে চলে যাবার কারণে।’
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
বন্ধুদের বন্ধুত্বের কথা বলাতে প্রিয়কে খানিক ভাবুক দেখাল। বহ্নি এবার প্রিয়’র ডান হাতটা ধরে করুণ মুখে তাকালো প্রিয়’র দিকে। প্রিয় সেদিকে তাকিয়ে অনেকটা জোরপূর্বক মৃদু হাসল। তারপর বলল,’ঠিক আছে, বহ্নি । আমি কোথাও যাচ্ছি না।’
বহ্নি তৎক্ষনাৎ প্রিয়কে জড়িয়ে ধরে বলল,’ধন্যবাদ আপু।’
প্রিয় প্রত্যুত্তরে শুধুই হাসল। সে কিছু বলার ভাষা পেল না। বহ্নির দিকে অবাক দৃষ্টিতে সে তাকিয়েই থাকল।
মাঝেমধ্যে কিছু শক্ত অনুভূতির মানুষের হৃদয়েও দোলা দিয়ে যায় অমায়িক ব্যবহার । ভালোবাসা দিয়ে কঠিন হৃদয়েও ঝরনা ধারা প্রবাহিত করা সম্ভব। আর তাই প্রিয় কঠিন হৃদয়ের একজন মানুষ হওয়া সত্ত্বেও তার মস্তিষ্ক কিছুটা সময়ের জন্য বিভ্রম খেলো, চিন্তা করতে বাধ্য হলো যে, কেন কিছু মানুষ এত্ত ভালো হয়!
রাদিদ সব বন্ধুদের থেকে একটু বেশ দূরত্বে গিয়ে বসেছিল । তাকে দেখতে কুণ্ঠিত মনে হলো। যেন সে খুব করে চাইছে সব বন্ধুদের সাথে আগের মতো মিশতে কিন্তু কিছু একটা তাকে ক্রমাগত বাধা দিচ্ছে । তার পরনে একটা হোয়াইট শার্ট। খানিক ঢোলা শার্টটা। তবে এতে তাকে দেখতে আরো বেশিই ভালো লাগছে। আজ কেনো যেন সে হাসতে পারছে না, পারছে না বন্ধুদের সাথে থেকেও তাদের সাথে আগের মতো এনজয় করতে।
রাদিদের হাসিটা খুব সুন্দর । একদম মন ভুলানো হাসি যাকে বলে। চিবুকের নিচে একটা গর্ত মতন আছে। সেটাতে তাকে আরো বেশি ভালো লাগে। দ্বিগ্বিদিক অকারণে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই তার নজরে পড়লো বহ্নি । আর আবছা আলোয় দেখা মুখের উপরেই তার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়ে রইল। বহ্নিকে এখন একদম বাচ্চা মনে হচ্ছে না। ওরা বন্ধুরা সবাই বহ্নিকে বাচ্চাই মনে করে। রাদিদ ও বাচ্চাই ভাবত। তবে আজ তার অন্যরকম লাগছে। কেমন যেন কিছু একটা ফিল করছে সে। সামথিং স্পেশাল বাট নট ক্লিয়ার টু হিম। রাদিদের দৃষ্টির নড়চড় নেই। বহ্নি প্রাণখুলে হাসছে। হাসছে তার চোখ ও । রাদিদ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে পিচ্চিটার দিকে। তার মনে হলো এই হাসিটা সে আজীবন দেখতে চায় ।
হঠাৎ গিটারের টুং টাং শব্দ আর গান থেমে যাওয়াতে সকলের মনোযোগ তখন এই ঘটনা থেকে পুরোপুরি সরে গেছে। সবাই তখন গান বন্ধ করেছে সেজন্য শিহরণের উপর প্রচণ্ড বিরক্ত বোধ করছিল। সবাই হতভম্ব চেহারা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলেও রিয়া চট করে তার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলল,’শিহরণ,ভাইয়া । ওয়ান্স মোর।’
ব্যস! এই ওয়ান্স মোর পুরো ইয়ার্ড জুড়ে ধ্বনিত হতে থাকল। বাধ্য হয়ে শিহরণকে আবার গান শুরু করতে হলো।
You’re the light, you’re the night
You’re the color of my blood
You’re the cure, you’re the pain
You are the only thing I wanna touch.
You’re the fear I don’t care
Cause I have never been so high
Follow me to the dark
Let me take u’r past our satellite .
You can see the world
You brought to life
So love me like u do
Love love love me like u do
Touch me like u do
Touch touch touch me like u do
What are u waiting for?
……………………
……………………
গান শেষ করেই সবাই খাবার পর্ব শেষ করে ফেলল। রাদিদ খাবার খাওয়ার সময়েও খুব চুপচাপ ছিল। শুধু বার কয়েক চোরা চোখে বহ্নিকে দেখেছে। সবাই খেয়াল করেছে রাদিদের চুপ থাকার বিষয়টা! তবে কেউ আর ওকে ঘাটায়নি। আর অতল সে তো কোনো এক অতল গহ্বরেই যেন নিমজ্জিত হয়ে গেছে! যেন মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীর খাদে আটকা পড়েছে সে! শিহরণ যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছে । বলা যায়, রাখতে হয়েছে।
পার্টি শেষ হবার একটু আগেই সাব্বির আহমেদ আর সাবিহা সাবরিন সবার সাথে গোল বৈঠকে বসলেন। এরপর শুরু হলো জম্পেস আড্ডা। এমনিতেই সাব্বির আহমেদ গল্প করতে খুব ভালোবাসেন। তবে শিহরণের বন্ধুদের সাথে খুব একটা গল্প করা হয় না তার। সেই সময়ই বা কোথায়? তবে যে কয়েকবার শিহরণের বন্ধুরা এসেছে। সেই সময় ফ্রি থাকলেই বেশ জমিয়ে আড্ডা দেন তিনি। সময় থাকলে আড্ডা মিস হয় না। এই আরকি! সাবিহা সাবরিন এসব একটু কম পছন্দ করেন। তার নিয়ম হলো সব কিছুর ক্ষেত্রেই লিমিটিশন মেইনটেইন করা। এত্ত বলেন তিনি কিন্তু সাব্বির আহমেদ শুনলে তো! আড্ডায় বসলে তিনি যেন নিজেকেই ভুলে যান!
সবাই মিলে তুমুল আড্ডা দিচ্ছে। মোহনা আর প্রিয় এক এক রকম প্রশ্ন করছে । আর সাব্বির আহমেদ উৎসাহের সাথে সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। আর সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তাকে যেতে হচ্ছে তার শৈশবকালের নানান ঘটনার স্মৃতিচারণে।
গল্প চলাকালীন রাদিদের চোখ নিবদ্ধ ছিল বহ্নির দিকে। কেন যেন সে চোখ ফেরাতে পারছে না এই মেয়েটার দিক থেকে। তার অনেক মেয়ের সাথেই এই পর্যন্ত রিলেশন হয়েছে। কিন্তু কখনোই এমন ব্যাকুল করা অনুভূতি সে অনুভব করেনি। আজ একদম অন্যরকম কিছু ফিল করছে। এই তো যেমন বহ্নির হাসি দেখেই তার মনে হলো যে, সে সারাজীবন বহ্নির হাসি দেখতে চায়। তার চোখের তারার খুশির তোড়ে ঝিলিক দেয়াটা দেখতে চায় । আরো কত্ত কী! মন হচ্ছে সব থেকে দ্রুত গতিসম্পন্ন মাধ্যম, যা মুহূর্তের মধ্যেই পুরো বিশ্বভ্রমণ করে ফেলতে পারে। এই যেমন রাদিদ এখন করছে ভ্রমণ বহ্নিকে নিয়ে ।
এক ফাঁকে বহ্নি তার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল । গটগট করে হেটে চলে যেতেই তার মা সাবিহা সাবরিন প্রশ্ন করলেন,’কোথায় যাচ্ছ, মামুণি?’
বহ্নি হাতের ইশারায় তার মাকে আশ্বস্ত করে বলল,’আই নিড সাম রেস্ট, মাম্মি। ইউ অল এনজয়।’
বহ্নির বিশ্রাম দরকার ভেবে সাবিহা সাবরিন আর তেমন কিছু বললেন না। তারপর তিনিও সাব্বির আহমেদের গল্পে মনোযোগ দিলেন।
রাদিদের দৃষ্টি তৎক্ষনাত বহ্নির চলে যাওয়ার দিকে নিবদ্ধ হলো। তার মন আজ তার সাথে বিট্রে করছে। কেন যেন আজ তার মন শুধু বহ্নির দিকেই চলে যাচ্ছে। আজ তার মনটা নিয়ন্ত্রণে নেই একদম। সে মন্ত্রমুগ্ধের মতন নিজের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল । তারপর হেঁটে চলল বহ্নি যেদিকে গিয়েছে সেদিকে।
পেছন থেকে মোহনা ডাকলেও শোনেনি সে। মোহনাও খুব একটা পাত্তা দিল না। ভেবেছে হয়তো ওয়শরুমে যাচ্ছে ।
চলবে….ইন শা আল্লাহ্
বি.দ্র. গতকালের গানটা আমি লিখেছিলাম। আজকের গানটি অরিয়ানা আজরিন সংগ্রহ করে দিয়েছে । গায়ক সম্ভবত জাস্টিন বিবার। আমি আসলে গান শুনি না। তাই এসব গান ও গায়ক সম্পর্কে জানিও না।