গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব -১৯
লেখনীতে: ফাতিমা আক্তার অদ্রি
ছোঁয়া একটা ফুল হাতা জামা পরেছে। চুলগুলো এলোমেলো । উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের মায়াবী চেহারাটা খুব ফ্যাকাশে মনে হচ্ছে । মায়ার চোখেও জল চলে এসেছে। ছোঁয়াকে এভাবে দেখতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে । এমন অত্যাচার সহ্য করে মেয়েটা কীভাবে যে বেঁচে আছে মায়া তা বুঝতে পারে না! ছোঁয়ার কান্নার বেগ বেড়েই চলেছে। মায়া ছোঁয়ার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিতে চাইল। মাঝে মাঝে মনের অভিধানে শব্দের বড্ড অভাব বোধ হয়। মনে হয় যেন এই মুহূর্তে পৃথিবীর কোন শব্দই সান্ত্বনার বাণী শুনাতে সক্ষম হবে না। । তখন শুধু মাত্র বাহুডোরে আবদ্ধ করে রাখতে হয় প্রিয় মানুষটাকে। তখন নীরবতা কথা বলে। নীরবতারা ঝাঁক বেধে এসে ভর করে কষ্টে জর্জরিত মানুষটার চারপাশে। হয়তো সেটাই রেমেডি সেই মুহূর্তের জন্য। মায়া এই মুহূর্তে সেটাই করার চেষ্টা করছে।
মায়া রাজী হওয়ায় ছোঁয়া সোফা থেকে খুব ধীরে ধীরে উঠল। মায়া চকিতে বুঝে গেল যে ছোঁয়া চিঠি আনতে যেতে চাইছে। তাই সে ছোঁয়াকে ধরে ধরে তার রুমে নিয়ে গেল। ছোট্ট রুমটার একটা কোণে ছোটোখাটো একটা টেবিল আর একটা চেয়ার পাতানো আছে। মায়া ছোঁয়াকে সেখানে নিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিল। ছোঁয়া টেবিলের ড্রয়ার খুলে তার ডায়েরির মধ্য থেকে চিঠিটা বের করে নিয়ে মায়াকে দিল। বলল,’প্লিজ, এই চিঠিটা অতলকে দিতে ভুল করিস না। মনে করে চিঠিটা দিয়ে দিবি।’
মায়া তৎক্ষনাত মাথা নাড়ল । তার মনে বাজছে শুধু একটাই কথা ‘কীভাবে পারে এই মেয়েটা নিজের কষ্টের মাঝেও অন্যের কষ্টের কথা ভাবতে? কীভাবে?’ মায়া তা ভেবে পেল না। হয়তো এই পৃথিবীর হরেক রকমের মানুষের মধ্যে এটাও একটা শ্রেণী, যে শ্রেণীর মানুষগুলো নিজের আগে অন্যের কথা ভাবতে ভালোবাসে, নিজের কষ্টের মধ্যেও তারা ভাবে যেন অন্য কেউ কখনো কষ্ট না পায় । মায়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আর মনে মনে আওড়ালো,’ বড়ই অদ্ভুত এই শ্রেণী! বড়ই অদ্ভুত!’
‘চা খাবি? তুই বস। আমি এক্ষুণি চা নিয়ে আসছি।’ ছোঁয়ার কথায় মায়ার ধ্যান ভাঙলো। সে তৎক্ষনাত বলল,’আমি চা খাব না। খেয়েই তো এলাম।’
ছোঁয়ার ধূসর চোখগুলোতে যেন আরো এক রাশ ধূসরতা বিরাজ করলো । সে বলল,’কেন খাবি না? আমার চা কি খুব পচা হয়?’
এই কথা বলে ছোঁয়া উঠে দাঁড়াল । কিচেনে যেতে হবে তাকে। মায়া আর কথা বাড়াল না । তাকে ধরে নিয়ে গেল কিচেনে। ছোঁয়া তৃপ্তির সাথে চা বানাচ্ছে। মায়া খুব অবাক হয় মাঝেমধ্যে এই মেয়েটাকে দেখে। কেমন অদ্ভুত তার সহনশক্তি ! এমন সহনশীলতার মানুষও পাওয়া যায় ! মায়া ভেবে পায় না।
কিচেনের চারপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে মায়া প্রশ্ন করল,’শিহরণের সাথে কথা হয়েছে তোর?’
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
ছোঁয়া চকিতে তাকাল মায়ার দিকে। তারপর তার দৃষ্টিতে ভর করল এক গভীর শূন্যতা । সে বিমর্ষ গলায় বলল,’নাহ। কথা হয় নি। দেখাও হয় নি দুইদিন যাবৎ।’
একটু থেমে সে আবার বলতে শুরু করল,’কেনই বা কথা হবে বলতো? সে কি আমার বয়ফ্রেন্ড?’ এটা বলেই ছোঁয়া মায়ার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল।
‘তুই তো ওকে বলতে পারিস ওকে নিয়ে তোর অনুভূতিগুলো সম্পর্কে। রাজী না হলে হবে না। তবুও তো তুই অন্ততপক্ষে জানতে পারবি যে শিহরণ তোকে ভালোবাসে কি না। অথবা তার মনের মধ্যে তোর জন্য কোনো অনুভূতি আছে কি না।’ মায়া ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল।
ছোঁয়া চা বানাতে বানাতে বলল,’প্রথমত শিহরণ আমাকে কখনোই ভালোবাসবে না। আমি তার পছন্দের ধারে কাছেও নাই। আর অনুভূতি! ভালোবাসাহীন অনুভূতি ক্ষণস্থায়ী হয়। আমি সেই ক্ষণস্থায়ী অনুভূতি চাই না। তাসের ঘরের মতো যা সর্বক্ষণ ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কায় থাকে তার কোনো প্রয়োজন আমার নেই। আমি এখনই ভালো আছি।’
‘দেখ, ছোঁয়া । আমার মনে হয় শিহরণ তোকে পছন্দ করে। সে হয়তো অতলের কারণে দূরে সরে যাচ্ছে।’ মায়া শেষমেশ তার মনের কথাটা বলেই ফেলল। সে বেশকিছুদিন যাবৎ এই বিষয়টা খেয়াল করছে। শিহরণ ছোঁয়াকে নিয়ে কতটা উদ্বিগ্ন তা সে বুঝতে পেরেছে সেদিন; যখন শিহরণ বার বার রিকুয়েস্ট করেছিল তাকে, যাতে সে ছোঁয়ার খেয়াল রাখে। আর তাকে কেমন যেন ব্যাকুল দেখাচ্ছিল । মনে হচ্ছিল ছোঁয়ার কিছু হয়ে গেলে তার মতো কষ্ট আর কেউ পাবে না।
ছোঁয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকাল মায়ার দিকে। তারপর বলল,’মায়া, তোর মাথা কি ঠিক আছে? কি বলছিস তুই কি জানিস? শিহরণ আর আমাকে ভালোবাসবে! ক্লাসের সবচাইতে সুন্দর মেয়েটার দিকে পর্যন্ত সে তাকায় না। আর সে ভালোবাসবে আমাকে!’
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ছোঁয়া । তারপর আবার বলতে শুরু করল,’অতলের কারণে দূরে সরে যাচ্ছে মানে কী? অতলকে কি আমি ভালোবাসি? আমি কি তাকে একটা মুহূর্তের জন্যও প্রশ্রয় দিয়েছি? আমি কি তাকে কোনো প্রকার পজিটিভ সাইন দিয়েছি? কারো আমাকে ভালোলাগা মানে তো এটা নয় যে, আমারো তাকে ভালো লাগতে হবে বা ভালোবাসতে হবে। ঠিক তেমনি আমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । আমি শিহরণকে ভালোবাসি তার মানে এটা নয় যে, তাকেও আমাকে ভালোবাসতে হবে । ভালোবাসা জোর করে হয় না। জোরপূর্বক অনেক কিছু করা গেলেও হৃদয়ে ভালোবাসার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে না কেউ। এই ক্ষেত্রে শক্তিশালী মানুষকেও নিজের অক্ষমতা স্বীকার করতে হবে। বরঞ্চ করতে বাধ্য।’
এক নিঃশ্বাসে এত কথা বলাতে ছোঁয়া হাঁপাচ্ছে। মায়া ছোঁয়াকে ধরল যাতে সে পড়ে না যায় । খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে সে। মায়া এবার তিরিক্ষি মেজাজে বলল,’এত লেকচার দিতে বলছে কে তোকে? আমি কি তোর কাছে এত্ত লেকচার শুনতে চাইছি?’
ছোঁয়া কাতর নয়নে তাকাল মায়ার দিকে। বলল,’আমাকে নিয়ে এত ভাবিস কেন বলতো? আমার কিচ্ছু হবে না। এসব আমি ছোটোবেলা থেকে সহ্য করছি। দেখবি কয়েকদিনের মধ্যেই একদম ঠিক হয়ে যাব।’
‘হুম। তা তো দেখতেই পাচ্ছি। দুইদিন পর পর তোর ওই সৎ মায়ের উপরে যে দানব ভর করে তা আমি তো আর নতুন দেখতেছি না। নিজে যেমন রাক্ষসী জন্মও দিছে আরো দুই রাক্ষসীকে। তিন রাক্ষসী মিলে তোকে কবে যে একেবারে গিলে খাবে আমি সেই বিষয়টা নিয়ে চিন্তায় আছি।’ মায়ার কণ্ঠে ক্রোধ ঝরে পড়ছে ।
‘এসব কি বলছিস মায়া? বাদ দে তো এসব। আমার আর ওদের ব্যাপারে কথা বলতে ইচ্ছে করতেছে না।’ ছোঁয়া কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল।
‘দেখ, তুই বলে এসব সহ্য করতেছিস। আমি হলে কখনোই ওদের এমন অন্যায় সহ্য করতাম না। আমি হলে তাদের উচিত শিক্ষা দিতাম।’ মায়া রাগান্বিত কণ্ঠে বলল ।
‘নিজের অবস্থানে থেকে এমন কথা বলা খুব সহজ। একবার যদি আমার অবস্থায় থেকে আমার মতো করে আমার জীবনটা দেখতে পারতি, তবে বুঝতি আমার কাছে আর কোনো পথ খোলা নেই।’এই বলে ছোঁয়া কাঁদতে লাগল।
‘আচ্ছা ঠিক আছে। মানলাম তোর কথা। এবার কান্না থামা। জীবনে এতবার তোর কান্না দেখলাম তারপরেও তোর চোখের জল শুকায়না ক্যান? আমি এই বিষয়টা বুঝতেই পারি না! এত জল আসে কোথা থেকে বল তো?’ মায়ার কণ্ঠে খানিক কৌতুক মেশানো।
ছোঁয়া কান্না ভেজা চোখে তাকাল মায়ার দিকে। এই মেয়েটা তাকে খুব ভালোবাসে। তার কষ্টে যে সেও কষ্ট পায় তা লিখে বা মুখে বলার কিছু নেই। ছোঁয়া সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারে।
ছোঁয়া করুণ চোখে তাকিয়ে বলল,’আচ্ছা , এবার এসব কথা বাদ দে। চা বানিয়েছি সেই কবে। কথা বলতে বলতে ঠান্ডা হয়ে গেছে। আমি গরম করে দিই। খেয়ে বিদেয় হ।’
মায়া কপট রাগ দেখিয়ে বলল,’হুম। বিদেয় তো হব। আমাকে তুই বিদেয় করতে পারলেই খুশি।’
‘হুম। খুশি নয়তো আর কি?’ ছোঁয়া এ কথা বলেই মৃদু হাসল। ছোঁয়ার মুখে হাসি দেখে মায়া না হেসে পারল না।
চলবে….ইন শা আল্লাহ্