গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব-১৬
লেখনীতে: ফাতিমা আক্তার অদ্রি
অতল তাদের বাসার আঙিনায় পাতানো একটা চেয়ারে বসে ছোট্ট বাচ্চাদের খেলা দেখছিল। দুটো পিচ্চি ছেলে আর মেয়ে খেলছে। পুতুল খেলছে তারা। তার উপর কাগজ দিয়ে নৌকা বানিয়েছে, প্লেন বানিয়েছে। এসব বানানোর কারণ হলো আজ তাদের পুতুলের বিয়ে। এখন দু’জন বেশ তর্ক বিতর্ক করছে। তর্কের বিষয় হলো যে, পুতুল কিসে করে যাবে তার শ্বশুরবাড়িতে। ছেলেটা বলছে নৌকায় চড়ে নিয়ে যাবে। মেয়েটা বলছে প্লেনে করে নিয়ে যাবে। সাথে সাথে মেয়েটা এটাও বলছে যে তার খুব শখ যে সে প্লেনে চড়বে। তাই সে চায় তার মেয়ে পুতুলটাকে প্লেনে করে শ্বশুরবাড়িতে পাঠাবে। ছেলেটা বলছে নৌকাতেই নিয়ে যাবে। তার যুক্তি হলো নৌকায় চড়ে শ্বশুরবাড়িতে যাবার মজাটাই আলাদা। চারদিকে বিস্তীর্ণ জলরাশি থাকবে। থাকবে হিমেল হাওয়া । কত্ত মজা হবে। ছেলে বাচ্চাটার আরো একটা যুক্তি হচ্ছে যে যখন কনের খুব পিপাসা পাবে তখন সে টুপ করে নৌকা থেকে হাত নামিয়ে নদী থেকে পানি খেতে পারবে। যেটা প্লেনে করে গেলে কখনোই সম্ভব হবে না।
এই বাচ্চা দুটোর এমন যুক্তি শুনে অতলের হাসি না এসে পারল না। সে আপনমনে হেসে চলেছে। আর এদিকে বাচ্চা দুটো তুমুল ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে। এক পর্যায়ে ছেলেটা মেয়েটার চুলের বেণী ধরে টেনে দিলো। আর মেয়েটা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দিল।
অতল এমন ঝগড়া দেখে আর বসে থাকতে পারল না। সে দ্রুত তার জায়গা থেকে উঠে এসে বাচ্চা দুটোর পাশে বসল। তারপর বলল, ‘ কি সমস্যা তোমাদের?’
আতলকে দেখে বাচ্চা দুটোর মুখে ফুটল হাসির রেখা। পাশাপাশি দু’জনের অভিমান ও যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে আরো একধাপ উপরে।
তারা অতল ভাইয়া বলে ডেকে নিজেদের সমস্ত অভিযোগ পেশ করল তার কাছে। অতল তখন বলল,’ আমি যদি একটা সমাধান করে দেই তবে তোমরা কি তা মানবে?’
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
বাচ্চা দুটো অতলকে খুব ভালোবাসে। অতলদের বাসার নিচের তলায় ভাড়া থাকে তাদের পরিবার। দুজন কাজিন হয় সম্পর্কে । অতল নিজেও এই বাচ্চা দুটোকে খুব পছন্দ করে। অতল বলল,’ দেখ। প্লেনে চড়ে শ্বশুরবাড়িতে গেলে এক মজা আবার নৌকায় চড়ে গেলে আরেক মজা। একটাতে করে গেলে আরেকটার মজা তো নিতে পারবে না। পারবে কি?’
ছেলেমেয়ে দুটো একসাথে মাথা নাড়ল । তারপর দুজনেই হাত দিয়ে দেখাল তাহলে সমাধান কী এর।
অতল বলল,’ দুটোতেই চড়ে যাবে। তাহলে একটার মজাও আর মিস হবে না।’
ছেলে মেয়ে দুটোকে বিহ্বল দেখাল। যেন তারা অতলের কথা বুঝতে পারে নি। একসাথে দুটোতে চড়া তো যায় না। এটা তারা জানে।
অতল বলল,’ একবার প্লেনে করে যাবে আর একবার নৌকায় করে যাবে। ব্যস! হয়ে গেলো সমাধান।’
ছেলে মেয়ে দুটো একে অপরের দিকে বার কয়েক চাওয়া চাওয়ি করল । তারপর বিষয়টা বুঝতে পেরেই তারা দু’জন খুব খুশি হলো। তারা দু’জনেই অতলকে জড়িয়ে ধরল। তারপর দু’জনেই অতলের দু’গালে বসিয়ে দিল ভালোবাসার এক অকৃত্রিম পরশ। অতল তাতে খুব খুশি হলো। ছোট্ট বাচ্চাদের ভালোবাসায় থাকে বিশুদ্ধতা ও স্নিগ্ধতায় ভরা মিষ্টি অনুভূতি । অতলের এখন সেই অনুভূতি হচ্ছে। বাচ্চা দুটো এখন আপনমনে খেলছে। কোনো ঝগড়া নেই এখন তাদের মধ্যে।
অতলের মাথায় তৎক্ষনাত খেলল নিজের বিয়ের কথা! সে খুব আশ্চর্য হলো এই ভাবনাতে। কারণ আগে কখনোই ভাবা হয় নি তার এই বিষয়টি নিয়ে । স্কুলে থাকাকালীন এই ভাবনাটা খুব একটা সিরিয়াস ভাবে আসে না। মনে হয় অন্তঃকরণ ও জানে; বিয়ে! সে তো এখনো ঢের দেরি। তাই ওদিকে যেতে ইচ্ছে হয় না। তারপরেও আজ অতলের ভাবনায় হানা দিলো বিয়ের বাজনা। সে ভাবছে ছোঁয়াকে সে কীভাবে নিজ ঘরে আনবে! আর তাকে কেমনই বা দেখাবে বধূ বেশে। লাল টুকটুকে লজ্জাবনত বধূর মতো লাগবে নাকি হ্যাংলা পাতলা তার সাথেই রাগ দেখানো মেজাজি ছোঁয়ার মতো দেখাবে!
‘অতল! তাড়াতাড়ি ঘরে এসে পড়তে বস। নয়তো তোর বাবাকে পাঠাচ্ছি বেত দিয়ে । সাথে থাকবে ধমক ফ্রি।’ অতলের আম্মু গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ডাকল অতলকে। আর সেই ডাক অতলের সুন্দর ভাবনাগুলোকে থামিয়ে দিল একেবারে মাঝ পথে কোনো প্রকার ওয়ার্নিং ছাড়াই।
অতল প্রচণ্ড বিরক্ত বোধ করলো এই ডাকটাতে। কেন এমন সুন্দর মুহূর্ত গুলোতেই সবাই বাধা দেয় কে জানে! অতল একদম বুঝতে পারে না এই বিষয়টা। আর এটা যে প্রথম তা কিন্তু নয়! পড়ার টেবিলে বসেও মাঝেমধ্যে অতল হারিয়ে যায় সুন্দর কোনো ভাবনার দেশে। তখন ও ঠিক একই ভাবে তার আম্মু তাকে ঘাড় ধরে আব্বুর ভয় দেখিয়ে ভাবনার জগত থেকে বের করে নিয়ে আসে। অতল নিতান্তই নিরীহ। যাকে আমরা সচরাচর শান্ত শিষ্ট বলে থাকি সেই গোছের । উচ্চবাচ্য প্রয়োগ করা তার ধাতে নেই।
আর তার আব্বু আম্মু দুজন মিলেই বলবে খালি পড়তে । সে ভাবে সে কি কোনো পড়ার রোবট নাকি! যার কাজ শুধু সারাদিন ধরে পড়াশুনা করা । বিভিন্ন রোবট যেমন বিভিন্ন কাজ করার উদ্দেশ্যে বানানো হয় তাকেও কি বানানো হয়েছে শুধু পড়ার উদ্দেশ্যে! এই ভাবনাটা অতলকে খুব প্যারা দেয়। খুব!
অতল দ্রুত পা বাড়ালো সেকেন্ড ফ্লোরের উদ্দেশে। তার পড়ার টেবিলটা যে তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
______________
শিহরণের বাবা সাব্বির আহমেদ বেশ কিছুদিন যাবৎ ছেলের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন। একেবারে অন্যরকম ঠেকছে তার কাছে শিহরণের উদ্ভ্রান্ত আচরণ। কেমন যেন ভাবলেশহীন মনে হয় কখনো, আবার কখনো উদাসীন। তিনি এরকম আচরণ আর কখনো দেখেননি শিহরণের মাঝে। তবে তিনি এই বিষয়ে খুব বেশি একটা যে চিন্তিত তাও কিন্তু নয়। কারণ এই বয়সটা খুব আবেগী হয়। আর এমন সময়ে অধিকাংশ ছেলেমেয়েরাই এ ধরনের আচরণ করে থাকে।
শিহরণ টেবিলে এসে বসতেই তার বাবা তার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,’আই থিঙ্ক ইউ আর ইন লাভ।’
শিহরণ অসম্ভব রকমের অবাক হয়ে গেল। সে বুঝতেই পারেনি তার বাবা এমন একটা বেফাঁস মন্তব্য করে বসবেন। সে সচকিত হয়ে গেল। সাবিহা সাবরিন অবাক দৃষ্টিতে একবার ছেলের দিকে একবার নিজের স্বামীর দিকে তাকাচ্ছেন। বহ্নিও একই কাজ করছে। ওদের সকলের ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া মুখ দেখে শিহরণের বাবা সাব্বির আহমেদ হো হো করে হেসে উঠলেন। এবার সবাই আরো অবাক হয়ে গেল। পরক্ষণেই বুঝতে পারলো যে তিনি মজা করেছেন। তিনি মাঝেমধ্যেই এমন মজা করে থাকেন। তবে খুব বেশি সময়ের ব্যবধানে এরকম করার কারণে সবাই তব্দা খেয়ে যায় । পরক্ষণেই আবার সকলে আন্দাজ করতে পারেন যে তিনি আসলে মজা করছেন। তবে এভাবে তব্দা খাওয়ার মূল কারণ হলো তিনি খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে কথাগুলো বলে থাকেন।
শিহরণের উজ্জল ফর্সা রঙের চেহারা এবার তার স্বাভাবিক রং ধারণ করছে ধীরে ধীরে। সে বলল,’ড্যাডি ইউ আর জাস্ট আনপ্রেডিকটেবল!’
তার ড্যাডি যেন কথাটাতে মজা পেলেন । তিনি সহাস্যে বললেন,’তোমাদের মাম্মির সাথে যখন আমার পরিচয় হয়। আর আমি তার প্রতি আমার অনুভূতিগুলো চেপে রাখতে পারছিলাম না আবার তাকে বলতেও পারছিলাম না। তখন আমার ঠিক তোমার মতো বিষণ্ণ অবস্থা হয়েছিল । তাই ভাবলাম তুমিও বোধহয়…।’
শিহরণ তার ড্যাডির কথার মাঝখানে বাধা দিয়ে বলল,’ড্যাডি, প্লিজ ডোন্ট কমপ্লিট ইওর সেন্টেন্স । ইটস্ জাস্ট টু উইয়ার্ড টু লিসেন। ড্যাড ইউ নো ভেরি ওয়েল দ্যাট দেয়ার্স নো ওয়ান ইন মাই লাইফ।’
তার মাম্মি ধমক দিয়ে বললেন,’ জাস্ট স্টপ রাইট দেয়ার বোথ অব ইউ। শিহরণ তুমি এখনো অনেক ছোটো । এসব বিষয়ে নিজেকে জড়ানোর সময় এখনো হয়নি।’
সাবিহা সাবরিনের চোখে মুখে কিঞ্চিত রাগ দেখা গেল। তার চোয়াল শক্ত হয়ে যাচ্ছে। সাব্বির আহমেদ তার স্ত্রীর এই রূপের সাথে খুব ভালোভাবে পরিচিত। তাই আর কোনো কথা বাড়ালেন না। চুপচাপ খেতে লাগলেন। বহ্নি শুধু বসে বসে সবার অভিব্যক্তি দেখছিল। সে কিছুই বলল না। তার আসলে বলার কোনো ইচ্ছেই নেই। তাই চুপ থাকটাই শ্রেয় মনে হলো তার । শিহরণ ও মাথা নিচু করে খেতে লাগল।
চলবে…..ইন শা আল্লাহ্