গল্প: উড়ান পর্ব-২

0
1123

#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
গল্প: উড়ান পর্ব-২
লেখা: ফাহমিদা আঁখি

বিকেলবেলা স্কুল থেকে সবে ফিরেছে উড়ান। বড্ড ক্লান্ত লাগছে ওর। পূর্বা ওকে দেখতে পেয়েই বলল,
-‘উড়ান, রাশেদ এসেছে। বসার ঘরে বসে আছে। তোর জন্য এক গাদা গল্পের বই নিয়ে এসেছে দেখ গিয়ে।’
রাশেদ ভাই এসেছে, সঙ্গে আবার গল্পের বই। এ কথা শুনে উড়ান ওভাবেই বসার ঘরে দৌড় দিল। ওকে দেখে রাশেদ বলল,
-‘কিরে ভালো আছিস? পড়াশোনা হচ্ছে কেমন?’
উড়ানের চোখ তখন বইগুলোর দিকে। সেদিকে তাকিয়েই উত্তর দিল,
-‘আমি ভালো আছি। পড়াশোনা হচ্ছে ঠিকঠাক। আপনি কেমন আছেন রাশেদ ভাই?’
উড়ান, রাশেদের উত্তরের অপেক্ষা না করে বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো।
রাশেদ কি যেন একটা বলতে গিয়েও বলল না। উড়ানের দিকে অপলক চেয়ে রইলো। উড়ানের ঘর্মাক্ত মুখ এক অন্যরকম অনুভূতির সঞ্চার করছে তার মনে। এই নিষ্পাপ মুখটা দেখার জন্যই তো তার এতদূর ছুটে আসা।

হামিদা বেগম চায়ের ট্রে হাতে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,
-‘কেমন আছিস রাশু? বাড়ির সকলে কেমন আছে? ভাইজান অনেকদিন হলো এদিকে আসেন না। তার শরীর ভালো তো?’
ফুপুর কথায় উড়ানের দিক থেকে চোখ ফেরালো রাশেদ। হাসি হাসি মুখে বলল,
-‘ভালো আছি ফুপু। বাড়ির সকলেও ভালো। বাবার শরীর ভালো আছে। ব্যবসার কাজে একটু ব্যস্ত আছেন। এজন্য আসতে পারছেন না। তাই তো আমাকে পাঠিয়ে দিলেন। আপনি ভালো আছেন ফুপু?’
-‘তা আমি আছি বেশ।’

হামিদা বেগম এতোক্ষণে খেয়াল করলেন, উড়ান গল্পের বই নিয়ে মেতেছে। পরনে এখনো স্কুলের জামা। তিনি প্রায় চিৎকার করে উড়ানকে বললেন,
-‘ফের তুই গল্পের বইয়ে হাত দিয়েছিস। সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা। এখনো হুশ হলো না তোর? ক্লাসের পড়া তো পড়তে দেখি না তোকে। আর একি অবস্থা! স্কুল থেকে ফিরে নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে এইসব নিয়ে মেতেছিস? এই বইগুলোর যোগান কে দেয় তোকে শুনি?’
মায়ের কথায় উড়ান মুখ নিচু করে রইলো। চুপ থাকাটাই শ্রেয়। কথায় বললেই পিঠের উপর দু চারটে কিল পড়বে এখন। পূর্বা এ ঘরেই আসছিল, মায়ের কথা শুনতে পেয়ে বলল,
-‘মা, বইয়ের যোগান কে দেয় তা জানো না? তোমার সামনেই তো স্বয়ং বইদেবতা বসে আছেন।’ পূর্বার ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি।
পূর্বার ইঙ্গিত যে রাশেদের দিকে, হামিদা বেগম তা বুঝতে পারলেন। আর বুঝতে পেরে পূর্বার দিকে রাগত স্বরে বললেন,
-‘এসব কি কথা! বইদেবতা আবার কি?’
মায়ের কথায় পূর্বা মুখ টিপে হাসতে লাগলো। উড়ান ততক্ষণে বই নিয়ে পালিয়েছে। রাশেদ বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলল,
-‘ফুপু, আমাকে এখন উঠতে হবে।’
-‘সেকি! সবে এলি, খাওয়াদাওয়া কর। তারপর রাতটা থেকে ভোরবেলা না হয় যাস।’
-‘না ফুপু, আজ না গেলে হবে না। কাল কলেজে ইম্পর্ট্যান্ট একটা ক্লাস আছে। কোনো মতেই সেটা মিস দেওয়া যাবেনা। এখান থেকে ভোরবেলা গেলেও ক্লাস এটেন্ড পারবোনা।’
-‘তাহলে আর কি করার, এত অল্প সময় হাতে নিয়ে এলি। ঠিকমতো খাওয়াও হলো না তোর।’
হামিদা বেগম আপসোস করতে লাগলেন। রাশেদ যাওয়ার সময় এ মাসের সংসার খরচের টাকাটা হাতে দিয়ে গেল তার। টাকাটা হাতে পেয়ে অনেকটা নিশ্চিত হলেন তিনি। অন্তত একমাস তাকে আর সংসারের খরচ নিয়ে ভাবতে হবেনা ভেবে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।

ক্লাস শেষে বড় রাস্তার পাশ দিয়ে আনমনে একা একা হাঁটছিল আভা। ওর হাতে এখনো ফুল দু’ঘণ্টা সময় আছে। ঠিক পাঁচটায় টিউশনিতে যেতে হবে ওকে। দুটো টিউশনি শেষে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত আটটা। রোজকার এই রুটিন। হঠাৎ পেছন থেকে কাউকে ওর নাম ধরে ডাকতে শুনে দাঁড়িয়ে পড়লো সে। দেখতে পেল রেহান ওকে ডাকতে ডাকতে ওর দিকে ছুটে আসছে। এই ছেলেটাও না, পারেও বটে। রেহান, আভার সামনে এসে হাঁটুতে হাত রেখে হাঁপাতে লাগলো। একটু দম নিয়ে সে বলতে শুরু করলো,
-‘তোমার সমস্যা কী আভা? ফোন কেন তুলছো না? কতবার কল দিয়েছি দেখেছো? এভাবে ইগনোর করার মানে কী?’
-‘ইগনোর যে করছি এটাতো বুঝতে পারছো। তারপরও কেন…’
-‘ইগনোর করার কারণটা কী? কী করেছি আমি?’
-‘তুমি কিছু করোনি রেহান। আমি চাইনা তুমি আমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখো। আমি জাস্ট আমার পরিবারের কথা ভাবতে চাই। তাদেরকে হ্যাপী রাখতে চাই।’
-‘আর নিজের কথা? নিজের কথা ভাবতে চাও না?’
-‘আমার পরিবারই আমার কাছে সবকিছু।’
-‘বুঝলাম। কিন্তু তুমিও তো কারও সবকিছু হতে পারো।’
-‘আভা এ কথার মানে বুঝলোনা। আসলে বুঝতেই চাইলোনা। সে রেহানের দিকে নিশ্চুপ তাকিয়ে রইলো।’
-‘আমি তোমাকে ভালোবাসি আভা। খুব ভালোবাসি। আর আমি এও জানি, তুমিও আমাকে খুব ভালোবাসো। পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে তুমি হয়তো আমাকে দূরে সড়িয়ে দিচ্ছো। কিন্তু নিজের মনকে প্রশ্ন করে দেখো তুমি কি পারবে দূরে থাকতে?’
-‘পারতে আমাকে হবেই। ভালোবাসাই জীবনের সবকিছু নয় রেহান। এর বাহিরেও অনেককিছু আছে। আর সেই অনেককিছুর কাছে ভালোবাসা খুবই ম্লান।’
-‘ভালোবাসা হয়তো জীবনের সবকিছু নয়। কিন্তু আভা, জীবন তো ভালোবাসার বাহিরে নয়।’
-‘উফ! আমি তোমার সাথে তর্ক করতে চাইনা। আমাকে একা ছেড়ে দাও রেহান। তুমি নিজের কথা ভাবো। কেন আমার জন্য সময় নষ্ট করছো? আমি তো আগেই বলেছি, এসব ভালোবাসাবাসি আমার মতো সাধারণ মেয়ের জন্য নয়।’
-‘তুমি হয়তো জানো না আভা। সাধারণ মেয়েরাই খুব অসাধারণভাবে ভালোবাসতে জানে।’
-‘এ কথা শুনে আভার চোখে জল চলে এলো। চোখের জল লুকাতে সে অন্যদিকে মুখ ফেরালো।’
-‘রেহান, আভার দু’হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বেশ দৃঢ় স্বরে বলর, আমি তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করবো আভা। সে তুমি চাও বা না চাও।’
-‘আভার ইচ্ছে করলো, রেহানের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজের অস্তিত্ব বিলীন করে দিতে। কিন্তু নিজেকে সংযত করলো সে। মনে মনে বলল, এ জীবন কী চায় তার কাছে? সেই বা কি চায় জীবনের কাছে?’
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল আভার। দরজায় কে যেন ঠকঠক করছে মনে হলো। এত রাতে কে হতে পারে? খালা তো এত রাত অবদি জেগে থাকেন না। তাহলে কে? ফিরোজ ভাই? কিন্তু ফিরোজ ভাই তার কাছে কি চায়? বিছানায় উঠে বসে ভাবতে লাগলো আভা। কিছুক্ষণ পর আবার সেই আওয়াজ “ঠকঠক”। কিছুটা দ্বিধা নিয়ে দরজা খুলল সে। দরজায় ফিরোজ দাঁড়িয়ে।
-‘ফিরোজ ভাই আপনি? এত রাতে?’
-‘তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে আভা।’
-‘কি কথা?’
-‘চল ভিতরে গিয়ে বলছি।’
আভাকে ডিঙিয়ে ফিরোজ ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলো। অগত্যা আভাকেও ঘরের ভিতরে গিয়ে দাঁড়াতে হলো। ফিরোজ বিছানায় বেশ আয়েশ করে বসলো। আভার পা থেকে মাথা পর্যন্ত এক নজর চোখ বুলালো সে। তাতে আভার কেমন অস্বস্তি হতে লাগলো। ফিরোজ বলল,
-‘দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বোস না।’
-‘না আমি ঠিক আছি। আপনি কি বলবেন বলছিলেন।’
ফিরোজ উঠে দাঁড়ালো। তারপর আভার কাছে গিয়ে বলল, ‘তুই খুব সুন্দরী আভা। তোকে দেখলে যে কোনো ছেলের মাথা খারাপ হয়ে যাবে।’
এটুকু বলে কেমন বিশ্রীভাবে হাসতে লাগলো ফিরোজ। তাতে আভার অস্বস্তি আরও বেড়ে গেল। সে বিরক্ত হয়ে বলল,
-‘আপনি কি এসব কথা বলার জন্যই এসেছেন?’
আভার কথায় কান না দিয়ে ফিরোজ হঠাৎ ওর হাতদুটো টেনে বুকের কাছে নিয়ে, ফিসফিসিয়ে বলল,
-‘তুই আমার হয়ে যা না আভা। দেখবি তোকে আমি অনেক ভালোবাসবো।’
এ কথা শুনে, আভার কান ঝাঁ ঝাঁ করতে লাগলো। হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
-‘ছিঃ ছিঃ ফিরোজ ভাই, এসব কি বলছেন? আমি আপনাকে নিজের বড় ভাই মনে করি।’
-‘আমি তো আর তোর নিজের ভাই না। খালাতো ভাই। দেখ, আমাদের ব্যাপারটা আমাদের মধ্যেই থাকবে। কেউ জানতে পারবেনা।’
রাগে, দুঃখে গা কাঁপতে লাগলো আভার। ছোটবেলা থেকে যাকে এতদিন ভাই বলে ডেকে এসেছে। আজ সেই কিনা এমন…
-‘ফিরোজ ভাই, আপনি এক্ষুণি আমার ঘর থেকে বের হয়ে যান। না গেলে আমি, আমি খালাকে ডাকতে বাধ্য হবো।’
-‘তুই আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস?’
-‘ভয় নয়, সাবধান করছি।’
-‘তো ডাক মাকে। আমিও দেখি মা কেমন তোর কথা বিশ্বাস করে। মা এলে কি বলবো জানিস? বলবো, তুই আমাকে ডেকেছিস। ভাবতে পারছিস কেমন হবে? মা নিশ্চয় নিজের ছেলের কথা বিশ্বাস না করে, বোনের মেয়ের কথা বিশ্বাস করবেনা। তাছাড়া তুই যে আজকাল প্রেম করে বেড়াস, তার খবর কি আমি রাখিনা ভেবেছিস? আর এই খবরটা যদি বড় মামার কানে যায়। তখন? তখন কি করবি তুই? প্রেম করার অপরাধে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে সেই তো গ্রামে গিয়েই থাকতে হবে। তখন আর কি, তোর এতদিনের সব পরিশ্রম জলে যাবে।’
ফিরোজ আবারও তার সেই বিশ্রী হাসিটা হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। এক মুহূর্তের জন্য আভা যেন চোখে অন্ধকার দেখলো। তার সরলতার সুযোগ নিয়ে এ কেমন খেলা খেলতে চাইছে ফিরোজ? মানুষ এতটা নিচে নামতে পারে কি করে?

চলবে…