গল্প:সংগ্রামী জীবন – কলমে:সিয়াম হোসেন

0
738

#গল্পপোকা_ছোটোগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০
গল্প:সংগ্রামী জীবন
কলমে:সিয়াম হোসেন

মানুষ জন্মের পর থেকেই কখনো সুখী হয়ে জন্মাতে পারে না।একজন মানুষকে সুখী হতে হলে তাকে সংগ্রাম করতে হয়। আমি এমন একটি চরিত্র নিয়ে গল্পটি শুরু করবো।

একটি ছেলে নাম তার আকাশ। নামের মতো তার স্বপ্নটাও ছিলো আকাশের সমান। তার স্বপ্ন ছিলো সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়াশোনা করবে।কিন্তু মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা তাকে তার ভাগ্যের পরিনাম পরিবার থেকে শূন্যতা দিয়েছেন।তাদের গ্রামের মধ্যে আকাশ রাই ছিলো সবচেয়ে দরিদ্র। মানে তার পরিবারে তার বাবা মা ছাড়া আর কেউ ছিলো না। তাকে ঠিক মতো খাওয়া -দাওয়া,ভালো পোষাক পরার মতো সামর্থ্য ছিলো না তার পিতা-মাতার। ছেলেটি বাবাকে শুধু একটি কথাই বলেছেন, বাবা তুমি আমাকে এক বেলা না খেয়ে রাখলেও চলবে কিন্তু আমার পড়াশোনা টা চালিয়ে যেতে দিও। ওহ! আপনাদের কে তো বলাই হয় নি আকাশ কোন ক্লাসে পড়াশোনা করে?
আকাশ জে এস সি পরীক্ষা দিয়ে গোল্ডেন A+ পেয়ে এই বার নবম শ্রেণীতে পড়ে। তার পড়াশোনার প্রতি ছিলো গভীর নেশা। তারপর বাবার সাথে বিভিন্ন মানুষের কাজ করে তাদের সংসার চলে আর আকাশের পড়াশোনা। আকাশ সপ্তাহে ৩ দিন স্কুলে যেতে পারে আর বাকি দিন গুলো তাকে কাজ করে কাটাতে হয়। এভাবে চলতে চলতে আকাশ যখন এস এস সি পরীক্ষা দিবে তখন তার ফর্ম ক্লাবের টাকার প্রয়োজন।পরে আকাশ বাবাকে বললে বাবা টাকা জোগাড় করতে পারেন নাই। তখন স্কুলের শিক্ষক-গন তার বিষয় টা বিবেচনা করে তাকে ফর্ম-ক্লাব করিয়ে নেয়। তারপর আবার এস এস সি পরীক্ষায় আকাশ জেলাতে প্রথম হন। পিতা-মাতার মুখ উজ্বল হয়ে যায় সন্তানের সুসংবাদ পেয়ে। কষ্ট করে বাবার সাথে কাজ করে কলেজে ভর্তি হলেন আকাশ। প্রথম বছর পড়ার পর হঠাৎ করে তার বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে যান। ২/৩ দিন পরে তার পিতা মারা যান। তাদের পরিবারে আবার দুঃখের ছায়া পড়লো। বাবা মারা যাওয়ার কষ্ট কে বা সইতে পারে। একটি পরিবারের স্তম্ভ হলো পিতা। পিতার মৃত্যু মানে পরিবারে একটি স্তম্ভের পতন। আকাশ খুব চিন্তায় পরে গেলো তার মাকে নিয়ে কিভাবে সে তাদের সংসার সামলাবে। তার পড়াশোনা চালানো অনেক টা কষ্টের হয়ে গেলো। আকাশ এবার ভাবলেন তার পড়াশোনাটা ছেড়েই দিতে হবে এইবার।আকাশ তার মাকে নিয়ে শহরে গেলেন। তার মা বাসা-বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান আর আকাশ টিউশনি করে তার পড়াশোনা চালান। এভাবে এইচ এস সি পরীক্ষা টা শেষ করলো। এইচ এস সি পরীক্ষা টা তেও আকাশ GPA-5 পেলো। পরে আকাশ এডমিশন টেস্ট এর জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন। দিনে টিউশনি করে এসে রাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতেন আকাশ। এভাবে তার কয়েক মাস কেটে গেলো। মাকে নিয়ে তার স্বপ্নটাও যে অনেক বড়। এডমিশন টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ পরীক্ষা দেওয়ার সময় সে শুনতে পেলো তার মা মারা গেছেন। পরীক্ষা সম্পূর্ণ শেষ না করেই তিনি ছুটে চলে আসলেন মায়ের কাছে। তার জীবনের শেষ ভরসা টাও পৃথীবির বুক ছেড়ে চলে গেলো। তার স্বপ্ন টাও আজ থেকে শেষ হয়ে গেলো। শেষ পর্যন্তও মায়ের সাথে তার দেখা হলো না। মাকে ছাড়া আকাশ এখন শূন্য হয়ে গেছেন। তার স্বপ্নের সব পতন হয়ে গেলো। মাকে নিয়ে তার কত স্বপ্ন ছিলো।মাকে রাজরানি করে রাখবে যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়বেন।কিন্তু তার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো মা বিহীন। পরে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর যখন রেজাল্ট দেয় তখন আকাশ মেধাতালিকায় ২য় হয়েছে। কিন্তু আকাশ এর খুশির খবর দেওয়ার মতো এখন আর কেউ নেই। পিতা-মাতাকে হারানোর পর তার জীবন থেকে সব স্বপ্ন চলে গেছে। তার লক্ষে ঠিকি পৌঁছতে পারবে কিন্তু তার বাবা-মাকে নিয়ে নয়।
পরিশেষে বলতে চাই,একটা দরিদ্র মানুষের সংগ্রাম করে তার লক্ষে পৌঁছাতে হয়। সংগ্রামী জীবন মানে কষ্টের জীবন। বাব-মা ছাড়া পুরো পৃথীবিটা আমার কাছে অচল। কারণ,বাবা-মায়ের সাপোর্ট সব সময় লক্ষে পৌঁছাতে সাহায্য করে। পৃথীবির কোন মানুষই সংগ্রাম করা ছাড়া সফল হতে পারে নাই। তাই আমাদের সবাইকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সংগ্রাম করে যেতে হবে। তাই আমরা আমাদের লক্ষে পৌঁছাতে পারবো।

ধন্যবাদ সবাইকে

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে