খোলা জানালার দক্ষিণে পর্ব-৪+৫

0
438

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_০৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

বিষন্ন মন ছন্নছাড়া রাত বিষাদের ছোঁয়ায় আসক্ত শরীর। ক্লান্ত দেহটা ধীর গতিতে ব্যাগের মধ্যে সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গোছাচ্ছে। চারদিকে পিনপতন নীরবতা। বাহিরে থেকে গাড়ির কোলাহল কর্ণকুহরে ভেসে আসছে৷ মেহেভীন আজকে অফিসে ছুটি নিতে গিয়েছিল। কালকে নিজ জন্ম ভূমিতে যাবে। রুপা মেহেভীনের বিষাদগ্রস্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে কোনো বাক্য উচ্চারন করতে পারছে না। সে সবকিছু নিরবে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। মেহেভীন নিজের মুঠোফোনটা হাতে তুলে নিল। ফোন হাতে নিতেই মায়ের নাম্বারটা জ্বল জ্বল করে উঠলো। বুকের ভেতরটা ভারি হয়ে আসছে মেভেভীনের। আচমকা দম বন্ধ হয়ে আসার ব্যাপার টা মেহেভীন ভিষণ ভাবে উপলব্ধি করতে পারছে। আজকে সে মাকে ফোন দিবে কালকে বাসায় যাবে। সে কথা জানানোর জন্য অফিসে ছুটি নিতে গিয়েছিল মেহেভীন। মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে তো আর ঘরে বসে থাকা যায় না৷ মায়ের নাম্বারে কল যাচ্ছে। মেহেভীনের হৃদস্পন্দনের গতিবেগ তড়িৎ গতিতে ছুটে চলেছে। ভেতরে দারুন অস্থিরতা কাজ করছে।

–হ্যালো কে বলছেন?

–মা আমি মেহেভীন।

–মেহেভীন! তুই এতদিন কোথায় ছিলি? আমাদের খোঁজ খবর নিসনি কেন? তোকে কত খুঁজেছি। আমরা কি খুব বেশি অন্যায় করে ফেলছি। যে তুই আমাদের এত বড় শাস্তি দিচ্ছিস। তুই তোর স্বামী সহ বাসায় চলে আয় মা। আমি তোদের মেনে নিব। এভাবে আর বাবা-মায়ের ওপরে রাগ করে দূরে সরে থাকিস না। তোর চিন্তায় তোর বাবা আর আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি রে মা। রাইমা বেগম মেয়ের কল পেয়ে যেন উন্মাদ হয় গিয়েছে। মেহেভীনকে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না। মেহেভীন বিস্মিত হয়ে মায়ের কথা শুনছে। সে বিয়ে করেছে! অথচ সে নিজেই জানেনা। তার মা কি সবকিছু নিজের মন মতো বানিয়ে নিয়েছে। সে পালিয়ে এসে বিয়ে করে সংসার করছে। মেহেভীন শান্ত কণ্ঠে বলল,

–আম্মু তুমি উত্তেজিত হবে না। তুমি উত্তেজিত হয়ে গেলে এখনই অসুস্থ হয়ে পড়বে। তখন আমার সাথে কিভাবে কথা বলবে। সে কথা কি একবারও ভেবে দেখেছ? আমি তোমার সব কথা শোনার জন্যই তোমার কাছে এসেছি। তাহলে এত তাড়াহুড়ো কিসের। মেহেভীনের কথায় শীতল হলো মায়ের হৃদয়। শান্ত নদীর মতো স্থীর হয়ে গেল রাইমা বেগম। মেহেভীন আবদারের সুরে বলল,

–মা আমি কালে বাসায় আসি। কতদিন হয়ে তোমাদের দেখি না। তোমাদের ভিষণ দেখতে ইচ্ছে করছে। আমি তোমাদের বাসায় গেলে, আমাকে তোমাদের ঘরে তুলে নিবে। নাকি ছুরে রাস্তায় ফেলে দিবে।

–এসব তুই কি বলছিস মেহেভীন। নিজের সন্তানকে কেউ কোনোদিন রাস্তায় ফেলে দিতে পারে। আজকে বুঝবি না। একটা সন্তান তার বাবা-মায়ের কাছে কি? যেদিন মা হবি সেদিন বুঝতে পারবি।

–আমি যে অন্যায় করেছি মা। তোমাদের সন্মান নষ্ট করেছি। আমার কি ক্ষমা হবে। আমাকে আবার আগের মতো ভালোবাসবে তো।

–আমি মনে করি আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। আমাদের থেকে ভালো পরিকল্পনা কারী আল্লাহ। আমরা যা হারিয়েছি। তার থেকে দ্বিগুন আমাদের ফিরিয়ে দিবেন। প্রাপ্তির কাছে কত করে বলেছি। তোর সাথে কথা বলিয়ে দিতে প্রাপ্তি একদিনও কথা বলিয়ে দেয়নি। তুই নাকি আমাদের মুখ দেখতে চাস না। আমরা যেন তোকে না খোঁজার চেষ্টা করি। এবার বুঝতে পারছিস আমার ব্যাথাটা কোথায়। মায়ের কথায় মেহেভীন আশ্চর্যের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল!

–আম্মু আমি এসব কিছু বলনি। প্রাপ্তি আপু আমাকে বলেছে তোমরা আমার মুখ দেখতে চাও না। আমি বাসায় গেলে আমাকে ত্যাজ্য কন্যা করে দিবে। আমি তোমাদের হারাতে চাইনি আম্মু। সেজন্য এতদিন তোমাদের থেকে পালিয়ে বেড়িয়েছি। মেহেভীনের কথা শেষ হবার সাথে সাথে পরিবেশটা নিস্তব্ধ হয়ে গেল। মা-ও মেয়ের চারপাশে যেন নিস্তব্ধ রাজত্ব করছে। দু’জনের বুঝতে বেগ পেতে হলো সমস্যাটা কোথায়। নিরবতা ভেঙে রাইমা বেগম গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–তোর সাথে এমন হবার দরকার ছিল। না হলে জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারতি না। মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি। বাবা-মায়ের থেকে যেমন চাচাতো বোনকে বেশি আপন ভাবতে গিয়েছিল। সে তোকে তোর ভালোবাসার উপকার দিয়েছিল। তা এখনই সব শুনবি নাকি বাসায় আসবি সেটা বল আগে।

–আম্মু রাগ করছ কেন?

–রাগ করব না তো কি আদর করব। বাড়ি আগে আয় আগে পাজি মেয়ে একটা।

–সে আমাকে যা খুশি করার কর। কিন্তু আমাকে দূরে সরিয়ে দিও না আম্মু। তোমাদের ভালোবাসা ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না। ছোট বেলা থেকে এত কষ্ট করে মানুষ করেছ। আমার সাফল্যে অর্জনের পর তোমরা সুখ করবে না। তাহলে কে সুখ করবে আম্মু?

–তোর সাফল্য মানে?

–তোমাদের জন্য সারপ্রাইজ আছে।

–কালকে কখন আসবি?

–আজকে রাতে যাব আম্মু। সকালে পৌঁছে যাব। আব্বুর কি অবস্থা আম্মু। আব্বু কি আমার ওপরে খুব রেগে আছে। আমাকে যদি বাসা থেকে বের করে দেয়।

–তোর কি আমাদের এত খারাপ বাবা-মা বলে মনে হয়। তুই না জানিয়ে বিয়ে করেছিস। সেজন্য তোর বাবা রাগ করে আছে। তুই সামনে আসলে সব রাগ হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।

–তুমি একটু বুঝিয়ে বলো আব্বুকে, আব্বু যেন আমার ওপরে রাগ না করে থাকে। রাইমা বেগম আর মেহেভীন দীর্ঘ সময় নিয়ে কথা বলল। বহুদিন পরে মেয়ের সাথে কথা বলে রাইমা বেগমের বুকটা প্রশান্তিতে ভরে গেল। কালকে তার মেয়ে আসুক। প্রাপ্তির বাবাকে ডেকে প্রাপ্তির সব কুকীর্তি কথা জানাবে। মেহেভীন রুপাকে ডেকে বাসায় যেতে বলল। কয়টা দিন মেয়েটা বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নিক। সে রাতেই চলে যাবে। সে একটু মুক্ত পাখির ন্যায় চারদিকে উড়ে বেড়াতে চায়। তাই নিজের গাড়ি থাকা সত্বেও বাসের টিকিট কেটেছে সে। রাত বারোটায় গাড়ি। বাসায় যেতে যেতে প্রভাতের আলো ফুটে যাবে। বাসায় তালা লাগিয়ে এক ঘন্টা আগেই প্রাপ্তি বেড়িয়ে পড়লো।

শহরের পরিবেশ টা গ্রামের বিপরীত চিত্র। গ্রামের পরিবেশ রাত গভীর হবার সাথে সাথে মরুভূমিতে পরিনত হয়। আর শহরের অলিতে-গলিতে রাতভর গাড়ি চলাচল করে। মানুষ নিজ নিজ কর্মে ব্যস্ত থাকে। সোডিয়ামের হলুদ আলোয় পুরো শহর আলোকিত হয়ে থাকে। মেহেভীন বাসে উঠে বসলো। জানালার কাছে বসতে তার ভিষণ ভালোলাগে। কিন্তু ভাগ্য বসত তার সীট জানালার কাছে পড়েনি। তবুও সে জানালার কাছে গিয়ে বসলো। তার পাশের জনের সাথে কথা বলে ম্যানেজ করে নিতে হবে। মেহেভীন রাস্তার মানুষজন দেখতে ব্যস্ত তখনই কেউ বলে উঠলো,

–কাউকে না জানিয়ে তার সীটে বসতে হয় না। এটা আপনি জানেন না ম্যাডাম।

–আপনি এখানে।

–ভয় পাবেন না আজকে কিছু চাইতে আসিনি।

–সে কথা বলেছি আমি৷ আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

–আমাদের বাসায় একটু ঝামেলা হয়েছে। আব্বু ফোন করে বাসায় যেতে বলছে। আপনি আমার সীটে বসে আছেন। সরে আসুন। আমি সেখানে বসব।

–আপনি আমার সীটে বসুন। আমার জানালার কাছে বসতে ভালো লাগে।

–সব জায়গায় ক্ষমতার প্রয়োগ করবেন না ম্যাডাম।

–আশ্চর্য! আমি কখন ক্ষমতার প্রয়োগ দেখালাম। আচ্ছা বেশ উঠে যাচ্ছি। আপনি বসুন আপনার জায়গায়। মেহেভীনকে রেগে যেতে দেখে মুনতাসিম বুকে হাত রেখে বলল,

–সর্বনাশ! এভাবে কেউ রেগে যায়। আপনি রেগে যাবেন না ম্যাডাম। আমার ক্রোধের আগুনে আমি শেষ হবে যাব।

–আপনি আমার সাথে ফ্লার্ট করছেন।

–আপনি কি ফ্লাট করার জিনিস ম্যাডাম। আমার এত সাহস আছে। আপনার সাথে কথা বলতে পারছি। আমার পাশে বসতে পারব। এটাই আমার ভাগ্য। কথা গুলো বলেই মুনতাসিম কাঁধ থেকে ব্যাগ রেখে বসলো।

গাড়ি চলতে শুরু করেছে। মেহেভীনের ছোট ছোট কেশ গুলো মেহেভীনকে বিরক্ত করে যাচ্ছে। মেহেভীন গাড়ির জানালার নিচে চিবুক ঠেকিয়ে রাতের সুন্দর্য উপভোগ করছে। রাতের শীতল হাওয়া মেহেভীনের মুখশ্রী স্পর্শ করে যাচ্ছে। তা দেখে মুনতাসিমের ভিষণ ঈর্ষা হচ্ছে। ইশ সে যদি এভাবে তাকে ছুঁয়ে দেখতে পারত। সে বুঝতে পারছে না। মেয়েটা সামনে আসলেই তার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। মেয়েটা সামনে আসলে তার ক্রোধ, অহংকার, আত্মসম্মান সবকিছু কোথায় জানি হারিয়ে যায়। আজ ভিষণ করে বাবার কথা মনে পড়ছে। ধরনীর বুকে চলার পর এমন একজন মানুষ আসবে। যার কাছে তোমার ক্রোধ, অহংকার, আত্মসম্মান কিছুই থাকবে না। সবকিছু লুটে নিয়ে যাবে মানুষটা। তোমাকে করে তুলবে বেহায়া। সবকিছুর পরেও তুমি মানুষটাকে চাইবে। মানুষটাকে দেখার জন্য পাগলামি করবে। মানুষটার কণ্ঠস্বর শোনার জন্য ছটফট করবে। মানুষটার শূন্যতা তোমার ভেতরটাকে অস্থিরতায় কাঁপিয়ে তুলবে। যাকে ছাড়া তোমার নিজেকে শূন্য মনে হবে। অর্থহীন মনে হবে। এমন একটা সময় আসবে তুমিও পরিবর্তন হবে। তুমিও কারো বাধ্য হয়ে যাবে। তবে কি বাবার কথা সত্যি হয়ে যাবে। কথা ভাবতেই ভেতর থেকে ক্রোধ নিয়ে আসার চেষ্টা করল মুনতাসিম। নাহ আজ তার ক্রোধ তার নিয়ন্ত্রণের বাহিরে কিছুতেই ধরা দিতে চাইছে না। ভেতর থেকে অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। অনুভূতিরা আনন্দ মেতে উঠেছে। মনের শহরে আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছে। মনের অলিতে-গলিতে মিছিল করে বলছে। তোমাকে ভালোবাসার যুদ্ধে হারিয়ে দিব মুনতাসিম ফুয়াদ। তোমার ছন্নছাড়া জীবন গুছিয়ে দিব। কারো ভালোবাসার চাদের মুড়িয়ে দিব। সেদিন আর বেশি দেরি নেই। একা থাকার সব অহংকার মাটির সাথে মিশিয়ে দিব। মুনতাসিমের ভাবনার মাঝেই অনুভব করল। একটা মাথা তার কাঁধ দখল করে নিয়েছে। মুহুর্তের মাঝে মুনতাসিম নিজের কাঁধের দিকে দৃষ্টিপাত করল। এই তো সেই চেহারা যে চেহারা দেখে তার মনের দারুন সর্বনাশ হয়েছিল। কি আছে এই চেহারার মধ্যে যা তাকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দিয়েছে। এতগুলো বছরে যা কেউ করতে পারলো না। তা এই মেয়েটা কয়েক দিনে করে দেখালো। মুনতাসিম অনুভব করল মেহেভীন তার কাঁধে মাথা রাখায় তার ভিষণ আনন্দ লাগছে। অদ্ভুত এক অনুভূতি শরীরে বয়ে যাচ্ছে। মুনতাসিম নড়াচড়া করল না চুপ করে বসে আছে। যেন মেহেভীনের নিদ্রা না ভেঙে যায়।

চারিদিকে প্রভাতের আলো ফুটে গিয়েছে। গাড়ি এসে নিজ গন্তব্যে থেমে গিয়েছে। মুনতাসিম সারারাত ঘুমোয়নি। সে ঘুমালে যদি মেহেভীনের ঘুম ভেঙে যায়। অদ্ভুত একটা টান তৈরী হয়ে গিয়েছে মেয়েটার প্রতি। মেহেভীন সজাগ হবার আগেই খুব সাবধানে মুনতাসিম তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে নেমে চলে গেল। আস্তে আস্তে সব যাত্রী নামতে শুরু করেছে। মেহেভীন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। একজন বৃদ্ধা মহিলা মেহেভীনকে সজাগ করে দিয়ে গেল। মেহেভীনের আঁখিযুগল মেলতেই আঁখি জোড়া বড় বড় হয়ে গেল। রজনী কিভাবে পার হয়ে গেল সে টেরই পাইনি। পাশে তাকিয়ে দেখলো মুনতাসিম নেই। আচমকা মেহেভীনের একটু মন খারাপ হলো। সে মন খারাপকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বাস থেকে নেমে পড়লো। মনের মধ্যে ভালো লাগার শিহরণ বয়ে গেল। কতদিন পর নিজের জন্ম স্থানে আসলো। সবকিছু বদলে গিয়েছে। মেহেভীন হাঁটতে শুরু করল সামনেই তাঁদের বাসা পাঁচ মিনিটের রাস্তা। সে ভাবলো হেঁটে চলে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। চারদিকে সবুজ ধানক্ষেত আর মাঝখানে পিচ ঢালাই করা রাস্তা। দেখলেই মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। মেহেভীন যত বাসার দিকে অগ্রসর হচ্ছে ততই পুরো শরীর কাঁপছে। ভেতরটা ভয়ে কাবু হয়ে আসছে। তার বাবা যদি তাকে ফিরিয়ে দেয়। তাহলে সে কি করবে? ভালোবাসার মানুষের অবহেলা সে সহ্য করতে পারবে না। এসব ভাবতে ভাবতেই বাসার কাছে চলে আসলো। দরজার কলিং বেলে চাপ দিল মেহেভীন। ভেতরে দারুন অস্থিরতা কাজ করছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। তার বাবা যদি এসে দরজা খুলে দেয়। তখন সে কি করবে ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসলো।

চলবে…..

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_০৫
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

চৌধুরী বাড়ির প্রতিটি মানুষের মুখশ্রীতে বিষাদের স্বাদ এসে ধরা দিয়েছে। পুরো বাড়ি শীতল হয়ে আছে। কারো মুখে কোনো বাক্য উচ্চারিত হচ্ছে না। তখনই মুনতাসিম বাসার মধ্যে প্রবেশ করল। মুনতাসিমকে দেখেই সবার মুখশ্রীতে আঁধার ঘনিয়ে এল। মুনতাসিম কারো সাথে কথা না বলে নিজের কক্ষে চলে গেল। একটু পরে ফ্রেশ এসে হয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বসলো। মুনতাসিমের সামনে বসে আছে রিয়াদ চৌধুরী। সে মুনতাসিমের গম্ভীর মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। মুনতাসিম গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–কিসের জন্য ডেকেছেন আব্বা? আপনাদের জন্য একান্তে কিছু সময় কাটাতে পারব না। আমাকে ছাড়া আপনাদের জীবন বেশ চলে যায়। প্রয়োজন পড়লে আমাকে স্মরন করেন। তা আজ কে কি অন্যায় করেছে। যার জন্য আমাকে জুরুরি তলব করে ডাকা হলো। ছেলের কথায় বুকটা ভারি হয়ে আসলো। মনের মধ্যে হাহাকার নেমে এল। সে কি সত্যি ছেলেকে ভালোবাসে না। শুধু কি প্রয়োজনেই ছেলেকে কাছে ডাকে! ছেলে শুধু প্রয়োজন টাই দেখল। তার ভালোবাসা দেখল না। বুকটা খাঁ খাঁ করছে রিয়াদ রহমানের সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

— মাশরাফি আবার বাজে ছেলেদের সাথে গিয়েছিল। সেখানে ধুমপানসহ নেশাদ্রব্য শরীরের মধ্যে নিয়েছে। এলাকার বৃদ্ধ দেখে আমার কাছে বিচার দিয়েছে। আয়মান তার ছোট ভাইকে শাসন করতে দেয় না। এভাবে চলতে থাকলে পরিবারের মান সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে। এখন তুমি সিদ্ধান্ত নেও। তুমি কি করবে শাসন করবে নাকি আয়মানের মতো নিজের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ভাই হিসেবে গন্য হবে। রিয়াদ চৌধুরীর কথা কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই মুনতাসিমের শিরা-উপশিরা কেঁপে উঠলো। মস্তিষ্ক টগবগ করে উঠলো। আঁখিযুগল রক্তিম বর্ণ ধারণা করেছে। হুংকার ছেড়ে মাশরাফিকে ডাকল। মুনতাসিমের হুংকারে কেঁপে উঠলো চৌধুরী বাড়িরর প্রতিটি দেওয়াল। মুহুর্তের মধ্যে মাশরাফি, আয়মান, প্রাপ্তি এসে হাজির হলো ড্রয়িং রুমে। মুনতাসিম চোয়াল শক্ত করে মাশরাফিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–তুমি আবার এলাকার বখাটে ছেলেদের সাথে মিশেছো? তোমার সাহস কি করে নিষিদ্ধ জিনিস স্পর্শ করার! আমাদের পরিবারের একটা সন্মান আছে। আমার দাদার আমল থেকে কেউ এসব করার সাহস পেল না। তুমি কিভাবে এত সাহস পেলে!

–আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি। আমি কখন কোথায় কি করব? সেটার কৈফিয়ত আপনাকে দিতে বাধ্য না। আপনি সৎ ভাই আছেন। আপনি সৎ ভাইয়ের মতো থাকবেন। একদম ভাইয়ের অধিকার দেখাতে আসবেন না। মাশরাফির এই একটা বাক্যই ছিল আগুন ঘি ঢালার মতো। মুনতাসিম এক সেকেন্ড বিলম্ব করল না। নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে মাশরাফির গালে ক’ষে থা’প্প’ড় বসিয়ে দিল। মুনতাসিমের প্রহারের প্রখরতা এতটাই তীব্র ছিল। যে মাশরাফি তাল সামলাতে পারে না৷ পুরো ধরনী তার চারপাশে ঘুরতে থাকে। সে ছটফট করতে করতে ফ্লোরে পড়ে যায়। মাশরাফির মা রাগান্বিত হয়ে মুনতাসিমের দিকে এগিয়ে আসতে চাইলে, মুনতাসিম বজ্রকণ্ঠে বলে উঠলো,

–এই মহিলা যদি ভুল করেও আমার কাছে আসার চেষ্টা করে। আল্লাহর কসম এই মহিলাকে ধংস করে ফেলব। আপনি আপনার অর্ধাঙ্গিনীকে সতর্ক করুন আব্বা। সে কি জানেনা মুনতাসিম যখন কারো বিচার করে। তখন কেউ ব্যাঘাত ঘটাতে আসলে, তার পরিনাম কি হয়।

–আশ্চর্য! তুমি আমার ছেলেকে প্রহার করছ? আর আমি তোমাকে বাঁধা দিব না। মা হয়ে ছেলের কষ্ট পাওয়া দেখবো। এটা আদৌও মায়ের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যায়। আমার ছেলেকে প্রহার করার অধিকার আমি তোমাকে দেইনি মুনতাসিম।

–আমিও আপনার ছেলে আমার পরিবারের সন্মান নষ্ট করার অধিকার দেইনি। ছেলেকে অধঃপতনে যেতে দিবেন। তবুও শাসন করতে দিবেন না। এমন মা থাকার থেকে না থাকা অনেক ভালো। আপনার মতো মায়ের কোনো সন্তানের দরকার নেই। আমি আপনার সাথে কথা বলতে আসিনি। নিজের ভালো চান তো সামনে থেকে সরে যান। মিলি ওর মুখে পানি ছিটিয়ে দে। সে যে অভিনয় করছে এটা আমাকে বোঝানোর দরকার নেই। ওর মতো বয়স অনেক আগেই পার দিয়ে আসছি। তখনই শেহনাজ কক্ষ থেকে হয়ে আসে। মুনতাসিমকে দেখে মুখশ্রীতে আনন্দের রেশ ঘিরে ধরে। মাশরাফিকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে, অজান্তেই শেহনাজের মুখশ্রী খুশিতে চকচক করে উঠে। শেহনাজ হুংকার তুলে বলে,

–এই এতটুকু মা’র’লে’ন কেন ভাই? ওকে রক্তাক্ত করে ফেলুন। দিন দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে। আব্বু মান সন্মানের ভয়ে কিছু বলতেও পারে না। মায়ের প্রশ্রয়ে বেশি বিগড়ে গিয়েছে। মাশরাফির সাথে মাকে-ও কয়টা লাগিয়ে দিন। রুপালি চৌধুরী মেয়ের কথায় রক্তিম চোখে মেয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করেন। তার যদি সাধ্য থাকতো। তাহলে চোখ দিয়েই মেয়েকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতো। মুনতাসিম আঁড়চোখে শেহনাজকে পর্যবেক্ষণ করে নিল। তারপরে ফ্লোরে বসে মাশরাফিকে তুলে বসালো। আয়মান তাকে যতটুকু সাহস দিয়েছিল। সবকিছু হাওয়ার সাথে মিলিয়ে গিয়েছে। হৃদস্পন্দনের গতিবেগ তড়িৎ গতিতে ছুটে চলেছে। সমস্ত মুখশ্রী ভীত হয়ে আছে। আঁখিযুগল ছোট ছোট করে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে মাশরাফি। মুনতাসিম রক্তিম চোখে মাশরাফির দিকে দৃষ্টিপাত করেছে। সমস্ত ক্রোধ যেন নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে। সে মাশরাফির দুই গাল এক হাতে চেপে ধরলো। মাশরাফি সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে মুনতাসিমের হাত সারানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। মুনতাসিমের সুঠাম দেহের সাথে মাশরাফির ছোট্ট দেহটা পেরে উঠলো না। মাশরাফি কেমন ছটফট করতে লাগলো। মুনতাসিম ধাক্কা দিয়ে মাশরাফিকে দূরে সরিয়ে দিল। মাশরাফি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।

–এবার বল তুমি কাকে কৈফিয়ত দিবে মাশরাফি? আজকের পরে যদি আর দ্বিতীয় দিন এমন কথা শুনি। তাহলে তোমাকে জ্যা’ন্ত পুঁ’তে ফেলবো।

–আপনার ক্ষমতার প্রয়োগ আপনি বাহিরে দেখাবেন মন্ত্রী সাহেব। আপনার কথা জনগণ মানতে পারবে। কিন্তু আমি এই মাশরাফি কোনোদিন আপনার কথা মানবো না। আপনি যেটা করতে নিষেধ করবেন। আমি সেটাই বেশি করে করব। আমারে মেরে যদি ভাবেন দমিয়ে রাখবেন। তাহলে আপনার ধারণা ভুল। আমি আপনাকে ভয় পাই না। কথা গুলো বলেই দৌড়ে গিয়ে আয়মানের পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়লো। মাশরাফির কথা শুনে মুনতাসিম শব্দ করে হেসে উঠলো। সে কি ভয়ংকর হাসি। যে হাসির শব্দে পুরো পরিবারের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো।

–আয়মান সামনে থেকে সরে যা। ছেলেটার বড্ড বেশি কলিজা হয়েছে। আজকে আমি ওর কলিজা বের করে দেখব। সে কতবড় কলিজার মালিক হয়েছে। আয়মান প্রথম সরতে চাইলো না। কিন্তু মুনতাসিমের হুংকারে সরে দাঁড়াল। মাশরাফি দুই পাশে তাকিয়ে দেখলো। তাকে সাহায্য করার মতো কেউ নেই। মাশরাফি অসহায় দৃষ্টিতে আয়মানের দিকে তাকালো। সে তো আয়মানের ভরসায় এতগুলো কথা বলল৷ সেই আয়মান তার সামনে থেকে সরে দাঁড়াল। এখন সে হারে হারে উপলব্ধি করছে পারছে। এতদিন সে ভুল মানুষকে বিশ্বাস করেছে। এবার তাকে কে বাঁচাবে? ভয়ে সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসতে শুরু করল। থরথর করে কাঁপছে মাশরাফি। মুনতাসিম মাশরাফির গলা চেপে ধরলো। মাশরাফি ছটফট করতে লাগলো। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। কাশি শুরু হয়ে গিয়েছে। কাশির সাথে রক্ত আসছে। মুনতাসিম দম নেওয়ার জন্য একটু ছেড়ে দিল। মুনতাসিম ছেড়ে দিতেই মাশরাফি যেন প্রাণ ফিরে পেল। মুনতাসিম আবার মাশরাফির দিকে অগ্রসর হতেই মাশরাফি মুনতাসিমের চরণের কাছে বসে পড়লো। দু’টি চরণ জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিল। শরীরটা কেমন নেতি আসছে না৷ ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বলল,

–আমাকে মাফ করে দিন ভাই। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমি আর এমন ভুল কখনো করব না। আমাকে আর মা’র’বে’ন না। আমি আর নিতে পারছি না। এবার শরীরে হাত দিলে দেহ থেকে প্রাণ পাখিটা বের হয়ে যাবে। আপনার সাথে আর কখনো বেয়াদবি করব না। শেষ বারের মতো একটা সুযোগ দিন। কথা দিচ্ছি আর কখনো অভিযোগ করার সুযোগ পাবেন না। আপনি এত নিষ্ঠুর কেন? বাহিরে সবার সামনে নিষ্ঠুরের মতো আচরণ করেন। ঘরের লোকের সাথে তো একটু নরম হতে পারেন। মাশরাফির কথায় মুনতাসিম ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। হয়তো নিজের অনিয়ন্ত্রিত ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। ঝাড়ি দিয়ে নিজের দু’টি চরণ মাশরাফির থেকে ছাড়িয়ে নিল। আস্তে করে সোফায় গিয়ে পায়ের ওপরে পা তুলে বসলো। তারপরে শান্ত মস্তিষ্কে জবাব দিল,

–আমি নিষ্ঠুরদের সাথেই নিষ্ঠুর হই। নিষ্ঠুরদের সাথে নিষ্ঠুর না হলে ভালো মানুষ গুলো ভিষণ ভাবে ঠকে যাবে। তোমার বয়স কত কখনো ভেবে দেখেছো? তুমি সবে মাত্র দশম শ্রেণিতে পড়ো। কিন্তু তোমার কথাবার্তা বলে না তুমি এত ছোট! কিসের ক্ষমতা দেখাও তুমি। তুমি যদি ভুলে না যাও আমি তোমার সৎ ভাই। তাহলে আমিও ভুলে যাব না। তোমার সাথে আমার পরিবারের সন্মান জড়িয়ে আছে। আর আমার পরিবারের সন্মান যে নষ্ট করার চেষ্টা করবে। তার প্রতি আমি এতটা ভয়ংকর হব। যা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। আমাকে আরো কঠিন ও নিষ্ঠুরতম হতে বাধ্য কর না মাশরাফি বাঁচতে পারবে না। অন্যায়ের সাথে আমি মুনতাসিম ফুয়াদ কখনো আপস করিনি। আর ভবিষ্যতেও করব না। আমার পরিবারের নিয়ম নীতি মেনে চলতে পারলে আমাদের বাসায় থাকবে। আর না হলে আমাদের বাসা থেকে বের হয়ে গিয়ে যা খুশি করার করবে। আব্বাকে বলে দিব আব্বা যেন তোমাকে ত্যাজ্যা পুত্র করে দেন। মুনতাসিমের কথা শেষ হবার সাথে মাশরাফি ফ্লোরে ঢলে পড়লো। সবাই মাশরাফিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। রুপালি চৌধুরী রাগান্বিত হয়ে রিয়াদ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–তোমার ছেলের হাত আমি চূর্ণবিচূর্ণ করে দিব৷ তার সাহস কি করে হয়! আমার সামনে আমার ছেলেকে রক্তাক্ত করে ফেলছে। সে তো বুঝিয়ে বলতে পারতো৷ তুমি একটা টু শব্দ করলে না। কেমন বাবা তুমি! ঐ অমানুষের বাচ্চাকে আমি শেষ করে ফেলব।

–রুপালি কথা সাবধানে বলবে। তুমি নিজের ছেলেকে শাসন করতে ব্যর্থ হয়েছো। তাই বলে তার বড় ভাই তাকে শাসন করতে পারবে না। মুনতাসিম যা করেছে একদম সঠিক কাজ করেছে। এবার যদি মাশরাফি একটু ভালো হয়। রুপালি চৌধুরী রাগান্বিত হয়ে রিয়াদ চৌধুরীর দিকে দৃষ্টিপাত করে আছেন। রিয়াদ চৌধুরী রুপালি চৌধুরীর দৃষ্টি উপেক্ষা করে মাশরাফিকে নিজের কক্ষে নিয়ে চলে গেল।

প্রাপ্তি নিজের কক্ষের দিকে যাচ্ছিল। তখনই মুনতাসিম প্রাপ্তিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–প্রাপ্তি কেমন আছ? মুনতাসিমকে নিজ থেকে কথা বলতে দেখে, প্রাপ্তি বিস্ময় নয়নে মুনতাসিমের দিকে তাকিয়ে আছে! বিয়ে হয়ে আসা বয়সে কখনো মুনতাসিমকে আগে কথা বলতে দেখেনি সে। মুনতাসিমের সাথে তার দু’বার কথা হয়েছে। সেটাও প্রাপ্তি নিজে যেচে বলেছে। আজ হঠাৎ করে কি মনে করে মুনতাসিম তার সাথে কথা বলছে। প্রাপ্তি কিছুটা ইতস্তত বোধ করে বলল,

–আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

–আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো আছি। দিনকাল কেমন যায়? ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করছ তো। শরীরে কিন্তু প্রচুর শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। সামনে অনেক কিছু হবার বাকি। সামনে যে ধাক্কা গুলো আসবে। সেগুলো কিন্তু অল্প শক্তিতে খেয়ে সামাল দিতে পারবে না। তাই বেশি বেশি শক্তি সঞ্চয় কর। আর ধাক্কা খাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকো।

–এসব কি বলছেন ভাইয়া?

–সে কিছু না তোমার সাথে মজ করলাম। বলা তো যায় না। কখন কার মুখোশ সামনে চলে আসে। কথা গুলো বলেই মুনতাসিম নিজের কক্ষে চলে গেল। প্রাপ্তি অদ্ভুত দৃষ্টিতে মুনতাসিমের যাওয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। সে শুনেছে মুনতাসিম অনেক বুদ্ধিমান আর প্রচন্ড চালাক। সে কারণ ছাড়া কোনো কথা বলে না৷ তবে কি মুনতাসিম সবকিছু জেনে গেল। ভয়ে কাবু হয়ে আসছে প্রাপ্তির সমস্ত শরীর। সে হন্তদন্ত হয়ে নিজের কক্ষের দিকে চলে গেল।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে