#খুশনূর
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
০৬
নিবেদিতার আজ বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠান অ্যারেঞ্জ করেছেন। চারপাশের হলুদ লাল টিমটিম আলোর সীমা নেই। সকলেই ফর্মাল ড্রেস আপ পড়েছেন। রং কালো। উপর থেকে মনে হচ্ছে ছোট ছোট কালো পিপড়া। খুশনূর ছোট শ্বাস ছাড়লো। মনের মাঝে চলছে এখনো দ্বিধা দন্দ। কি হবে শেষ পর্যন্ত??
নিবেদিতাদের ডুপ্লেক্স ভবনটি আজ ফুলের বাগান মনে হচ্ছে। বড়ই খরচ করেছেন তারা। নিবেদিতা আজ সেজেছে খুব। হালকা সাদা রঙ্গের সিল্ক জামদানী পড়েছেন। মাথায় খোপা করে লাল গোলাপ গুঁজেছেন। বয়স ত্রিশ এর কাছাকাছি হলেও বোঝার উপায় নেই। তার পাশে ছিলেন তার অর্ধাঙ্গ ডাঃ সমিত। নিবেদিতার ৭ বছরের বড় তিনি। তার পড়নেও সাদা পাঞ্জাবি। তিনিও সুদর্শন কোনো এঙ্গেলে কম নন। তার বাবা-মা নিবেদিতাকে পছন্দ করে বিয়ে করিয়েছিলেন তাকে।
নিবেদিতার দিক হাত বাড়ালো সমিত। গালে তার টান টান হাসি। চোখ দেখে মনে হচ্ছে তার অর্ধাঙ্গীনি তার পাশে তাই সে গর্বিত? কিন্তু তা কি সত্যি?
দূরে দাঁড়িয়ে ছিল অঞ্জলি। নিবেদিতা সমিতকে পাত্তা না দিয়ে নিজেই নিচে চলে আসে অঞ্জলির কাছে। ডাঃ সমিত মনে মনে ক্ষুন্ন হন খুব। নিবেদিতার এহেন কাজে আশেপাশের মানুষের কানাঘুষা শুরু। সেদিকে খেয়াল করেই সমিত রাগে ফেঁটে পড়লেও মুখে তার প্রকাশ করলো না। হাসি মুখে সেও নিচে এসে অঞ্জলির পাশ। সে বিরক্তি নিয়ে এক পলক তাকিয়ে অঞ্জলির সাথে ভাল মন্দ জিজ্ঞেস করতে লাগলেন।
খুশনূর আজ অবাক হয়েছে যেনে। যে হসপিটালটিতে সে যব করে সেটির মালিক অঞ্জলি। আরও অবাক হয় যেনে নিবেদিতা অঞ্জলির ছায়াতেই মানুষ হয়েছে। খুশনূর ফোঁসকরে শ্বাস ছাড়লো। তারপর পা বাড়ালো ড্রিংকিং এরিয়ায়।
শুদ্ধ আর তার কিছু বন্ধু মিলে গ্লাসে সুরা ডালছে আর গিলছে।তখনি দূর থেকে একটি কমলা কালার ড্রেস পড়া মেয়েটিকে আসতে দেখে কঁপাল কুঁচকায় সে। তার পাশে বসে ছিল মুসফিক। শুদ্ধর কাঁধে চাপর মেরে বলল,,
—” দোস্ত দেখ সামনে। তোর মাথা ব্যথা আসচ্ছে!”
শুদ্ধ ভ্রূ কুটি কুচকে ফেলে। বলে,,
—” ফাজলামো করিস কেন? ”
—” ফাজলামো কই করলাম? সামনে তাকা!”
শুদ্ধ সামনে তাকালো। রাগে, বিস্ময়ে ফেঁটে পড়লো। এগিয়ে গিয়ে মুখো মুখি দাঁড়ালো খুশনূরের। কাঠ, কাঠ গলায় বলল,,
—” আমাকে ফোলো করছো কেন? ”
খুশনূর আকাশ থেকে পড়লো যেন। চারিদিক চোখ বুলিয়ে নিলো। সকলেই সবার কাজে ব্যস্ত। বললো,,
—” নিজেকে এতো প্রায়োরিটি দিয়ার কোনো প্রয়োজন নেই! আপনি আমার পায়ে জুঁতো সমানো না। একজন চোরকে আমি ফোলো করবো নো ওয়ে…! হা। ”
পাশ কেঁটে চলে গেল খুশনূর। রাগ মাথার রগ ধপধপ করতে লাগে শুদ্ধের। এমেয়েটিকে সে যত এরিয়ে যেতে চায়। ততই তার সামনে এসে হাজির। সেতিনে পর থেকে আরো বেশি। ভার্সিটিতে শুদ্ধদের দল একটু দাপটি বটে। স্যারাও ভয় পায় এদের। শুদ্ধ সে দল নেতা বলে পরিচিতি। বাবা ভার্সিটির ট্রাস্টি হওয়াতে পাওয়ার যেন দু গুন। তবে সে মেয়েদের সম্মান করে চলে। কিন্তু এই মেয়েকে সে সহ্য করতে পারে না। ছোট ছোট বিষয়ে যেন লেগে যায় তারা।
এই তো সেদিন পরীক্ষার আগের দিন ভার্সিটি বন্ধ ছিল। অফিস রুম খোলা ছিল শুধু বেতন, ভর্তির জন্য। সেদিন খুশনূর আসে বেতন দিতে! বেশি ভির ছিল না আবার কমও ছিল না। সেই সুযোগে সে লাইব্রেরি ঘর ঘুরে আসতে যায়। বড় মাঠ পেড়িয়ে যখন প্রিন্সিপালের রুম ক্রস করে তখনি খট খট শব্দ হয় ভিতরে। মনের মাঝে খুশনূরের কেমন সন্দেহ হয়। কারণ সে যত টুকু জানে প্রিন্সিপাল স্যার না থাকলে তার রুমে আসা নিষেধ। খুশনূর দরজা ফাঁক দিয়ে উঁকি দিল। বিস্ময়ে চোখ জোড়া বেড়িয়ে আসার উপক্রম। শুদ্ধ আর তার এক বন্ধু মিলে প্রশ্ন চুরি করছে। খুশনূর আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না ভিতরে এসে চেঁচিয়ে উঠলো,,
—” আপনারা প্রশ্ন চুরি করছেন কেন? আমি স্যারকে বলে দেবো!”
শুদ্ধ ভরকে গেলো। নিজেকে সামলে বললো,,
—” তুমি এখানে কি করছো? যাও এখান থেকে। নয়তো তোমাকে ফাসিয়ে দিবো।”
খুশনূর ভ্রু কুচকে বললো,,
—” আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমি এখনি পিয়নকে ডাকছি।”
শুদ্ধ হাসলো। বলল,,
—” তোমার কষ্ট করতে হবে না। আমি ডাকছি!”
পিয়নকে ডাকা হলো। পিয়ন দাঁত বের করে হাসি দিলো,,
—” মামা কাজ হইছে আপনাগো?”
শুদ্ধ কঁপাল চুলকিয়ে দু হাত পকেটে গুঁজে বলল,,
—” কেমনে হবে মামা! দেখছেনি তো!”
পিয়ন খুশনূরকে দেখে অবাক হয়ে বললো,,
–” মামা আপনে কি করেন এনে যান বাহিরে!”
খুশনূর অবাকের শেষ চুড়ায়,,
—” মামা অনৈতিক কাজ তারা করছে আর আপনি আমায় তাড়াতে চাইছেন?”
শুদ্ধ বলল,,
—” আমরা অনৈতিক কাজ করি না। কাজ করছো তুমি!”
খুশনূর চোখ বড় বড় করে বলল,,
—” মানে!”
শুদ্ধ হেসে পিয়নের দিক এগিয়ে গেল। তার কাঁধে মাথা রেখে আলাদে সুরে বলল,,
—” মামা ও মামা, প্রশ্ন কে চুরি করছে?”
পিয়ন দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,,
—” এই যে এই মামায়!”
খুশনূর চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম তাকেই চোর বানিয়ে দিলো এরা! খুশনূর শুখনো ঢুক গিললো। আঙ্গুল উচিয়ে বলল,,
—” সব কটার চেহারা আমি সামনে আনবো। ওয়েট এন্ড ওয়াচ।”
শুদ্ধ হাওয়া হাত নাড়িয়ে বললো,,
—” অপেক্ষায় থাকবো!”
মাইকের আওয়াজে ধ্যান ভাঙ্গে শুদ্ধের। খুশনূরে উপর রাগ ক্ষোভ এক সাইডে রেখে সামনে যায়।নিবেদিতা কিছু বলছে। আর তখনি স্ক্রিনে ভেসে ওঠে…!
চলবে,
বলেন তো কি ভেসে উঠলো??