ক্যালেন্ডার! পর্ব: ০৮!

0
890

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ০৮!
লেখক: তানভীর তুহিন!

মুবিন বাইক চালাচ্ছে। মিছিল লেডি স্টাইলে বাইকে বসে মুবিনের কাধে ধরেছে। তাতে মুবিনের একদমই পোষাচ্ছে না, সে তো এই আশায় ছিলো যে মিছিল তার পেট জড়িয়ে ধরে বসবে। কিন্তু না, মিছিল বসলো এইভাবে। মুবিন উসখুস না করে মিছিলকে সোজা বললো, ” মিছিল মনি, কাধ থেকে হাত নামিয়ে পেট জড়িয়ে ধরে বসো! ”
মিছিল চুপচাপ। সে রাগ সঞ্চার করছে মুবিনের ওপর রাগ ঝাড়ার জন্য। মিছিলকে চুপ থাকতে দেখে মুবিন আবার বলে, ” কী হলো? পেট জড়িয়ে ধরো না! ”
মিছিল এবার উত্তর দিলো। কর্কশ গলায় বললো, ” এতোটা চিপ কেনো তুমি? ”
মুবিন মুখ পেছনে ঘুরিয়ে নিয়ে মিছিলকে একপলক দেখে নিলো। তার কেমন যেনো অপমানবোধ হয়েছে মিছিলের কথায়। মুবিন আবার একপলক পেছনে তাকায়। তারপর বলে, ” কোনদিক থেকে চীপ দেখলে? ”
– ” কদিন হয়েছে তোমার আমার পরিচয়? কদিন হয়েছে তুমি আমায় প্রোপোজ করেছো? আচ্ছা বাদ দাও তুমি প্রোপোজ করেছো ঠিক আছে। কিন্তু আমি কী তোমায় সম্পর্কে সম্মতি দিয়েছি? নাকি সম্পর্কের আস্থা দিয়েছি? এসব কিছুই যখন আমি করিনি তাহলে কেনো এতোটা অনধিকারচর্চা করছো? পেট জড়িয়ে ধরে বসতে বলছো এটা চীপ এর কাতারে পড়ে না? ইজন্ট ইট সো চীপ? ”
মিছিলের কথায় মুবিন খানিক বিজ্ঞ হাসি হাসে। মিছিলের কথায় মুবিনের ভেতরকার ঘুমিয়ে থাকা সুপ্ত দার্শনিক জেগে যায়। মুবিন বলে, ” জানো মিছিল আমাদের জীবনে আমাদের জন্যই সবচেয়ে খারাপ জিনিস কোনটা? সিরিয়াসনেস! খুব ছোটো ছোটো জিনিস নিয়ে ওভার সিরিয়াস হয়ে যাওয়া, ওভার এক্সাইটেড হয়ে যাওয়া। আমি কিন্তু কথাটা তোমায় হাসি-মজার ছলেই বলেছি, অনেকটা রসিকিতার আদলে বলেছি। কিন্তু তুমি সেটা নিলে কীভাবে? অপমান হিসেবে! তোমার মনে হলো আমি তোমায় সস্তা ভাবছি, আমি তোমার সুযোগ নেবার চেষ্টা করছি কিন্তু আদৌ তোমার সুযোগ নেবার অধিকার আমার হয়নি। তাই তুমি চীপ বলছো তাইনা? এখন পর্যালোচনা করে দেখো, আমি মজার ছলে বলেছি এটা তুমি না বুঝে আমায় কথা শোনালে। আমিও অপমান বোধ করেছি। কিন্তু আমি কী তোমার মতো প্রতিক্রিয়া করেছি? করিনি! এজন্যই ছোটোখাটো ব্যাপার নিয়ে সিরিয়াস হয়ে যাবে না। ব্যাপারটা একদমই ফালতু এবং অনর্থক। জীবনটাকে উপভোগ করতে শেখো, বিস্তর ভাবে বাচতে শেখো! ”
মিছিল চুপচাপ। সে বেশ জোড়ালো যুক্তি খুজে পেয়েছে মুবিনের কথায়। কিন্তু সেটা স্বীকার সে মোটেই করবে না। স্বীকার করলেই মুবিন একদম তার মাথার উপর উঠে তালুতে ঘাটি গেড়ে বসবে। সে মোটেই তা চায় না। তাই মিছিল বেহুদা তর্কে জড়ানোর জন্য বললো, ” তুমি কী নিজেকে ফিলোসফার মনে করো নাকি? ফিলোসফার তুমি? তোমার কী মনে হয় আমি তোমায় একটু এলাউ করেছি বলেই আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি? মোটেই তা না কিন্তু, আমি শুধুই তোমায় ক্লাসমেট স্ল্যাস বন্ধু ভাবি! ”
মুবিন বাইক চালাতে চালাতেই হো হো করে হেসে ওঠে। মুখে হাসি বজায় রেখে মুবিন বলে, ” আমি কখন বললাম যে তুমি আমার প্রেমে পড়েছো? প্রেমে তো আমি পড়েছি। মরন প্রেমে পড়েছি, যে প্রেম শুধু অবিচল প্রত্যয়ে প্রকাশই হতে চায়। অপরদিক থেকে প্রেম ফিরে আসুক না আসুক তাতে তার কিচ্ছু যায় আসে না। সে শুধু নিজেকে গভীর থেকে গভীরে নিয়ে যেতে চায়। বিপরীতের স্বায়ের তার প্রোয়োজন পড়ে না! ”
মুবিনের কথাগুলোর প্রত্যেকটা অক্ষরেই বারবার হার্টবিট মিস হচ্ছিলো মিছিলের। বুকের ভেতরটায় কেমন যেনো তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে, একদম প্রচন্ড তীব্র তোলপাড়। তার অন্তরাত্মার ভাবনায় এখন মুবিন। আসলেই কী এভাবে প্রেমে পড়া যায়? যে প্রেমে শুধু প্রকাশেই স্বস্তি? আদৌ কী এমন কিছুর অস্তিত্ব বিরাজ করে এই ত্রিলোকে? কীভাবে যাকে ভালোবাসে তার কোনোপ্রকার প্রতিক্রিয়ার আশা করা ছাড়াই ভালোবাসা যায়? মন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় না এই প্রেমপ্রেম খেলায়? আসলেই কী মুবিন আমায় ওভাবে, অতটা উর্ধ্বে ভালোবাসে? নাকি কথার কথা’ই পাঞ্চি ডায়লগ মেরে দিলো?
মিছিলকে সাড়াশব্দহীন দেখে মুবিন আবার বলে, ” কী হলো মিছিল মনি আমার প্রেমে আছাড় খেয়ে পড়লে নাকি? ”
মিছিলের ঘোর ভাঙে মুবিনের কথার শব্দে। মনের অজান্তেই তার হুশ কোথায় যেনো চলে গিয়েছিলো, কোথায় গিয়েছিলো তার উত্তর অজানা তার। সে ব্যাপারে একদমই সন্দিহান মিছিল। হুশ ফিরতেই খানিক থতমত খেয়ে যায় মিছিল, কারন সে আসলেই এই মাত্র পা পিছলে মুবিনের প্রেম উঠোনে আছাড় খেয়েছে। আছাড় খেয়ে একদম এবরোথেবড়ো হয়ে গেছে সে, দাত ভেঙে গেছে তার, হাত! পা! কোমড় ঘাড় সবই ভেঙে গেছে প্রায়…!
মিছিল গলা খাঁকারি দিয়ে মুবিনের প্রশ্নের জবাব দেয়, ” আমার জুতোয় বেশ ভালো খাজ আছে। তোমার প্রেমের ওই বেহায়া পিছলে কাদায় আমার জুতো পা পিছলে আমায় কখনই পড়তে দিবে না! ”
মিছিলের কথায় খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে মুবিন। হাসির চোটে কান-কর্তাল বন্ধ হয়ে যাবার পালা তার। কোনোমতে খুব কষ্টে হাসি খানিক চেপে মুবিন বলে, ” তুমি সব কথার যুক্তিখণ্ডনে যম ওস্তাদ তাই না? ”
মিছিলও পেছনে বসে নিশ্চুপ হাসছিলো। মিছিল বলে, ” হ্যা ওস্তাদই, এখন থেকে ওই মিছিল মনি ন্যাকা নামটা ধরে না ডেকে ওস্তাদ বলে ডাকবা! ”
– ” আচ্ছা ওস্তাদ! ”
মুবিনের কথায় দুজনেই একত্রে শব্দ করে হেসে ওঠে!

ভার্সিটিতে পৌছে ক্লাসে ঢুকে যায় দুজনে। ক্লাশ শুরু হবে হবে তখনই ঢুকেছে দুজনে। শাওন-সীমান্ত পেছনে বসে মেয়েদের সাথে টিটকারি করছে। মুবিন আর মিছিল পেছনে গিয়ে বসতেই শাওনের ক্ষ্যাপা প্রশ্ন মিছিলের জন্য, ” কেমন আছো ভাবি? ”
মিছিল স্ট্যাচু হয়ে গেছে, সাথে মুবিনও। মিছিলের সামনে বসা মেয়েগুলো মিছিলের পানে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। মিছিলের মনে হচ্ছে সে লজ্বা আর বিব্রতি’র আগুনে পুড়ছে। আগুনে একটু এক্সট্রা ঘি! ঢালার জন্য চৈতি এসে বলে, ” তা ভাবি আজ কী ভাইয়ার বাইকে করে এলেন নাকি? ”
চৈতি শাওন, সীমান্ত, মুবিনের খুব ভালো বান্ধবি। মিছিলের সাথেও তার সম্পর্ক বেশ মধুর এবং খুনসুটির। চৈতির কথায় যেনো লজ্বায় একদম পাথর হয়ে গেছে মিছিল। মুবিন চৈতির মাথায় গাট্রা মেরে, ” হারামজাদি দেখছিস এম্বারেসড ফীল করছে, তারপরেও এসব বলছিস কেনো? ”
চৈতি মুবিনের কথার পাত্তা না দিয়ে মিছিলকে আবার বলে, ” দুই চাকার চেয়ে চার চাকায় বেশি প্রাইভেসি ছিলো না বেহেনজি? দুই চাকাটা একদম খোলামেলা হয়ে গেলো না? ” কথাটা বলেই চৈতি শাওন-সীমান্তের সাথে এক হাতে তালি নেয়। মুবিন বেচারা অসহায় ভঙ্গিতে বসে আছে, মিছিল রেগে ফুসে তাকিয়ে আছে মুবিনের দিকে। চৈতি মিছিলের চেহারায় ক্ষ্যাপা ষাঁড় মার্কা ভাব দেখে মিছিলের কাধ জড়িয়ে ধরে বলে, ” আরে মামানি জাস্ট চীলল! এতো প্যারা নিচ্ছিস ক্যান তুই? ”
মিছিল অবাক হয়ে ভ্রু-কুচকে চৈতিকে বলে, ” এই মাত্রই না ভাবি বললি? এখন আবার মামানি বলছিস কেনো? ”
চৈতি খিটখিট করে হেসে বলে, ” আরে মুবিনকে তো প্রায়ই মামা বলে ডাকি। সেই খাতিরে হইলি না তুই আমার মামানি? এখন তুই’ই বল তুই কোনটায় কমফোর্টেবল ভাবিতে নাকি মামিতে? কী বলে ডাকবো তোকে ভাবি নাকি মামি? ”
মিছিল চ্যাতা দেখিয়ে বলে, ” বাল বলে ডাকবি বাল! ”
মিছিলের জবাবে সবাই একসাথে শব্দ করে হেসে ওঠে। চৈতি হাসতে হাসতেই বলে, ” আচ্ছা বালাপা! ”

চলবে!
#thetanvirtuhin

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে