#কোন_কাননের_ফুল_গো_তুমি
#পর্ব_৫
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
____________
অস্থিরচিত্তে অপেক্ষা করেও নওশাদ আজ মিতুলের দেখা পেল না। ভেবেছিল ক্লাস নিতে গেলে হয়তো দেখতে পাবে। কিন্তু ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো মিতুল বিহীন ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার পর। মেয়েটা আজ ক্লাসে কেন আসলো না? রায়া কিংবা আর্শিকে জিজ্ঞেস করাটাও দৃষ্টিকটু দেখায়। তাই সে তার অস্থিরতা মনেই চেপে রাখল আপাতত।
___
বিউটি বেগম দুপুরের আয়োজন বেশ চমকপ্রদ-ই করেছেন। খাবারের ডেকোরেশনই এত সুন্দর লাগছে যে প্রয়োজনের চেয়েও বেশি ক্ষুধা অনুভব করছে মিতুল। টুটুল অফিস থেকে সরাসরি রিনভীদের বাড়িতে চলে এসেছে। ফ্রেশ হয়েই খেতে বসেছে সবার সঙ্গে। ওর ভাব-ভঙ্গি একদম স্বাভাবিক। এটা যে অপরিচিত জায়গা, সামনে এতগুলো অপরিচিত মানুষ তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই। সে তার মতো স্বাভাবিকভাবে খেয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে নিজের বাড়ি, নিজের মানুষজন সামনে থাকার পরও আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে রিনভী। সে কিছুক্ষণ বাদে বাদে বাবা-মায়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। দুজনই ভীষণ খুশি। চোখে-মুখে হাসির ছড়াছড়ি। টুটুলের বিশেষ যত্ন নিচ্ছেন। বাবা-মা উভয়েরই যে টুটুলকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তার বুকের গহীন থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। এই দীর্ঘশ্বাসের শব্দ আর কেউ না শুনলেও পাশে বসে থাকা টুটুল ঠিকই শুনতে পেয়েছে। সে সকলের অগোচরে ফিসফিস করে বলল,
“খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে!”
রিনভী ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাল। জবাব দিল না। টুটুল নিজে থেকেই বলল,
“বিয়ের কথা কি পাকাপাকি হয়ে গেছে?”
রিনভী মৃদুস্বরে বলল,
“এখনো না। তবে হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।”
“আপনি রাজি?”
রিনভী প্রশ্নটি শুনেও এড়িয়ে গেল। সে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তাই উত্তর দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করল না। টুটুলকে এড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই মিতুলের প্লেটে পোলাও দিতে দিতে বলল,
“তুমি তো একদমই খাচ্ছ না। দেখি, আরেকটু পোলাও নাও।”
“আমি এত খেতে পারব না আপু।”
“এত কই? সেই কখন থেকে তো ঐটুকুই খাবার খাচ্ছ। চুপচাপ খাও বলছি। গরুর গোশত নাও। আমি রান্না করেছি। খেয়ে বলবে কিন্তু কেমন হয়েছে।”
মিতুলের কানে গুঁজে থাকা ফুলটি প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। রিনভী ফুলটাও ঠিক করে গুঁজে দিল এবং বাম হাতে মিতুলের চুলগুলো একপাশে এনে দিল। টুটুলের কেন জানিনা রিনভীর এই আচরণ, যত্নগুলো মনে ধরে গেছে। মিতুলের প্রতি কেয়ারটা না চাইতেও তার মনে গেঁথে গেছে।
খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকিয়ে মিতুলকে নিজের রুমে নিয়ে এলো রিনভী। সঙ্গে আয়ানও আছে। অনিক খাওয়া শেষ করেই নিজের রুমে চলে গেছে। মিতুল রিনভীর বুকশেলফ দেখে বলল,
“এত বই! তুমি পড়ো আপু?”
রিনভী মুচকি হেসে বলল,
“হ্যাঁ। তুমি পড়বে?”
“না, না। আমার এত পড়াশোনা ভালো লাগে না। অনার্সেও পড়ছি আব্বু-আম্মুর জন্য। নয়তো কবেই বিয়ে-শাদী করে ফেলতাম!”
মিতুলের কথা শুনে রিনভী খিলখিল করে হেসে উঠল। আয়ান বেশ ভাবসাব নিয়েই বলল,
“আমারও তো পড়তে ভালো লাগে না। তোমার সাথে আমার কত মিল!”
মিতুল আয়ানের গাল টেনে দিল। রিনভী বলল,
“ওকে বেশি আশকারা দিও না। মাথায় চড়ে বসবে একদম।”
মিতুল প্রত্যুত্তরে হাসল। বিশ্রাম নিয়ে বিকেল অব্দি থেকে ওরা রিনভীদের বাড়ি থেকে চলে এলো। আসার সময় অনিকের সঙ্গে দেখা হয়নি। বাড়িতে ছিল না সে। গাড়িতে ওঠার পর টুটুল ফিসফিস করে মিতুলকে জিজ্ঞেস করল,
“রিনভীকে কেমন লাগল তোর?”
মিতুল খুশিতে প্রায় আত্মহারা হয়ে বলল,
“ভীষণ ভালো! আমার খুব পছন্দ হয়েছে। কী মিষ্টি! তুমি প্লিজ রাজি হয়ে যাও ভাইয়া।”
“শুধু আমি রাজি হলেই কি হবে?”
“কেন হবে না?”
“রিনভীকে ভালো করে দেখেছিস? সুন্দরী, স্মার্ট, গোছালো একটা মেয়ে। আমাকে ওর পছন্দ হবে কেন?”
“আমার ভাই কি কোনো অংশে কম? নায়কের মতো দেখতে। লাখে একটা। রিনভী আপু তোমাকে রিজেক্ট করবে না।”
“তুই এত শিওর হয়ে বলছিস কী করে?”
“আমার মন বলছে, রিনভী আপু বিয়েতে রাজি হবে।”
“তাই নাকি? দেখা যাক, তোর মনের কথা কতটা সত্য হয়।”
“সত্যি হলে কী দেবে?”
“আমার একটা শালাবাবু তোকে দিয়ে দেবো।”
“মানে কী!”
“মানে আবার কী? অনিক, আয়ান দুজনই সুন্দর। যাকে ভালো লাগবে তার গলায় তোকে ঝুলিয়ে দেবো।”
“তোমার শুধু ফা’ল’তু কথা! যাও সরো।”
মিতুলকে রাগি দিয়ে টুটুল বেশ মজা পেয়ে হাসছে।
.
.
নওশাদ বাড়িতে ফিরে গোসল করে খেতে বসেছে। শামসুন নাহার খাবার বেড়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলেন,
“চৈতির সাথে আর কথা হয়েছিল?”
“না। কেন?”
“মেয়েটা ওভাবে বাড়ি আসলো! আবার কাঁদল। ব্যাপার কী বল তো?”
“আমি জানিনা, মা।”
“ওকে তোর পছন্দ হয়েছে?”
“অপছন্দের কিছু নেই। মেয়েটা বেশ ভালো। কিন্তু আমি এখন বিয়ে করব না।”
“এ আবার কী কথা! গতকালও বললি বিয়ে করতে চাস না এখন। তোর হয়েছে কী বল তো? কী যেন বলতে না চেয়েছিলি?”
নওশাদ নিজেও ভেবে নিয়েছে আজ সে মাকে মিতুলের কথা বলবে। সে খেতে খেতেই বেশ স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,
“মিতুলের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে মা।”
শামসুন নাহার বিস্মিতকণ্ঠে বললেন,
“বলিস কী! কোথায়?”
“কলেজে।”
“তুই যেখান আছিস?”
“হ্যাঁ। অনার্সে ভর্তি হয়েছে এখানে।”
“কথা হয়েছে তোদের?”
“হ্যাঁ।”
“এত বছর পর দেখা হলো। কিছু বলেছে?”
“ও আমার সাথে কথা বলতেই ইচ্ছুক না।”
“তুই কি ওর জন্যই এখন বিয়ে করতে চাচ্ছিস না?”
“জানিনা, মা।”
“জানিনা তো কোনো উত্তর হলো না। নওশাদ, তুই কি ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিস? মিতুলের জন্য উতলা হওয়ার কারণ তো দেখছি না আমি।”
“আমি এখন আর এসব নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। তুমি বাবাকে বলে বিয়ের কথাবার্তা পিছিয়ে দাও। আমার কিছু সময় প্রয়োজন।”
“নওশাদ…”
নওশাদ চোখ তুলে তাকাতেই শামসুন নাহার চুপ হয়ে গেলেন। শান্ত দৃষ্টি তবুও তিনি আর কিছু বলতে পারলেন না। আধখাওয়া প্লেটেই হাত ধুয়ে নওশাদ রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিল। আলমারির তাক থেকে খুঁজে বের করল কালো রঙের একটা পুরনো ডায়েরি। ডায়েরিটা মিতুল তাকে জন্মদিন উপলক্ষে উপহার দিয়েছিল। তখন মিতুল ভীষণ ছোটো। ক্লাস এইটে পড়ে।
ডায়েরির ওপর হাত বুলিয়ে নওশাদ মুচকি হাসে। চোখের দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে মিতুলের ছোটোবেলার চাঞ্চল্য। নওশাদ মিতুলের প্রাইভেট টিচার ছিল। নওশাদের বাবা নাইয়ুম মৃধা পেশায় একজন ব্যাংকার। চাকরীসূত্রেই তার বদলি হয় শরীয়তপুর। ছেলে এবং স্ত্রী নিয়ে তিনি শরীয়তপুরেই বসবাস শুরু করেছিলেন। নওশাদ একা ঢাকায় থাকতে চাইলে বাবা-মা কেউ-ই রাজি হননি। একমাত্র ছেলেকে রেখে তারা দূরে থাকতে পারবেন না। পড়াশোনা গ্রামে থেকেও করা যাবে। শরীয়তপুর থেকে ঢাকার দূরত্বও আহামরি কিছু নয়। নওশাদ নিজেও বাবা-মায়ের ভীষণ ভক্ত। মায়ের হাতের রান্না না হলে সে পেট ভরে খেতেও পারে না। তাই বাবা-মায়ের সঙ্গে তারও নতুন ঠিকানা হয়েছিল শরীয়তপুর নামক জেলা। এখানে এসে সে বসে থাকেনি। বেসরকারি স্কুলে চাকরি করত এবং পাশাপাশি অনেকগুলো টিউনশনি করাত। তাদের মধ্যে একজন ছিল মিতুল। নওশাদ মিতুলকে বাড়িতে গিয়ে পড়াত। ক্লাস এইট থেকে টেন পর্যন্ত সবকিছুই স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী চলছিল। মিতুলের মাঝে পরিবর্তন আসে ওর এস.এস.সির টেস্ট এক্সামের পর। হয়তো পরিবর্তন আরও আগেই এসেছিল, নওশাদ বুঝতে পারেনি। মিতুলের ফাইনাল পরীক্ষার এক মাস আগে আচানক মিতুল একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। সে নওশাদকে ভালোবাসার কথা জানায় এবং এটাও বলে সে যদি মিতুলকে বিয়ে না করে তাহলে সে পরীক্ষা দেবে না। এমন একটা সিচুয়েশনে পড়ে নওশাদ দিকদিশা হারিয়ে ফেলে। মিতুলকে নিয়ে সে কখনোই সেভাবে কিছু ভাবেনি। অনেকভাবে সবার অগোচরে সে মিতুলকে বোঝানোর চেষ্টা করে। ওর আবেগকে প্রশ্রয় না দিয়ে বকাঝকাও করে। কিন্তু মিতুল ছিল বুঝতে নারাজ। কথা এক কান থেকে আরেক কানে গেল। গ্রামে গুঞ্জন উঠল নওশাদের সাথে মিতুলের প্রণয়ের সম্পর্ক। গ্রামে অবশ্য আরও একটু মশলা মাখিয়ে কথাটি রটানো হয়েছিল। বন্ধুমহল এবং গ্রামে নওশাদের মান-সম্মান খোয়ানো গিয়েছে নওশাদ এটা মানতেই পারেনি। অল্প বয়সের রাগ সামলাতে না পেরে মিতুলের বাড়িতে গিয়ে রাগারাগি করে এবং এক পর্যায়ে সে মিতুলকে সবার সামনে একটা থাপ্পড়ও দিয়েছিল। ঐতো শেষবার দেখা মিতুলের কান্না কান্না মুখ। এরপর এতগুলো বছরেও আর কখনো মিতুলকে সে দেখেনি। গ্রামেও যায়নি। সেদিনই সে ঢাকায় এসে মেসে থাকা শুরু করেছে। এর মাস ছয়েক পর নাইয়ুম মৃধা বদলি নিয়ে ফের ঢাকায় চলে আসেন।
নওশাদের মাঝে অনুতপ্ত বোধ যখন হয় তখন অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। সে একবার গ্রামে গিয়েছিল। তখন মিতুলের খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ওরা এখন আর এখানে থাকে না। ঢাকায় থাকে। এত বড়ো ঢাকা-শহরে কাউকে খুঁজে পাওয়া এতটাও সহজ-সাধ্য নয়। মিতুলের ফোন নাম্বার নেই, ছবি নেই। কোন উপায়েই বা খুঁজবে? মিতুলের চাচা-চাচির থেকে যে জিজ্ঞেস করবে কিংবা গ্রামে মিতুলের ঘনিষ্ঠ কারও নিকট থেকে ঠিকানা, নাম্বার জোগার করবে সেই মুখটাও তো ছিল না। মিতুলদের সাথে শেষদিনের ঝামেলা গ্রামের কে না জানে?
নওশাদ দগ্ধ হতে থাকে। বুঝতে পারে নিজের ভুলও। সেদিন ওভাবে রিয়াক্ট না করে অন্যভাবেও বোঝানো যেত। সবচেয়ে বাড়াবাড়ি করেছিল সে মিতুলের গায়ে হাত তুলে। মিতুলের তখন অল্প বয়স। চোখে রঙিন চশমা। খুব কাছ থেকে কোনো পুরুষের সঙ্গ পেলে সেটা নওশাদ-ই ছিল। এমতাবস্থায় মিতুলের দুর্বল হওয়াটা কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার ছিল না। সমস্যাটি ছিল নওশাদের তরুণ বয়সের টগবগে রাগ। যা সে এখন বুঝে তিলে তিলে শেষ হচ্ছে। তার সেই অনুতপ্ত ও দগ্ধতা কখন যে মনের মাঝে মিতুলের জন্য আলাদা একটা ঘর তৈরি করেছে তা সে জানে না। এমনকি মিতুল নিজেও জানে না। কখনো জানানোর সুযোগটা সে পাবে কিনা নওশাদ সেটাও জানে না।
অতীত কল্পনার পরিশেষে নওশাদ ডায়েরির পাতায় হাত বুলিয়ে স্বগতোক্তি করে বলে,
“আই মিস ইউ মিতুল।”
_______
ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে মুখরিত চারিপাশ। সবদিকে বৃষ্টির ছমছম আওয়াজ। ঠান্ডা পরিবেশ। কম্বল গায়ে দিয়ে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর মতো ওয়েদার। এমনই পরিবেশে মিতুলও বেশ আয়েশ করেই ঘুমুচ্ছিল। তার আয়েশ বেশিক্ষণ টিকল না। মায়ের ধাক্কাধাক্কি, চেঁচামিচিতে বাধ্য হয়েই উঠতে হলো তাকে। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে মিতুল বিরক্ত হয়ে বলল,
“ডাকো কেন?”
মমতা বেগমের ঝাঁঝাল কণ্ঠ ভেসে আসে,
“ডাকি কেন মানে? ক্লাসে যাবি না?”
“এই বৃষ্টির দিনে ক্লাসে যায় কে?”
“কেউ না গেলেও তুই যাবি। জলদি ওঠ।”
“আজ থাক মা। বৃষ্টি তো বাইরে।”
“বেশি বৃষ্টি নেই। গুড়িগুড়ি পড়ছে। ছাতা নিয়ে যাবি। ওঠ এখনই।”
মমতা বেগম এক প্রকার জোর করেই মিতুলকে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দিলেন। রাগে চিৎকার করে মিতুলের এখন কাঁদতে ইচ্ছে করছে। পড়াশোনার পিণ্ডি চটকাচ্ছে সে। কেন যে পড়াশোনা আবিষ্কার হয়েছিল! পড়তে পড়তেই তার ইহকাল শেষ হয়ে যাবে। আজ ভার্সিটিতে না গেলে কী এমন ক্ষতি হয়ে যেত?
সে রাগ করে কোনো রকমভাবে তৈরি হয়ে ছাতা না নিয়েই বেরিয়ে গেল। এমনকি নাস্তাও করল না। মমতা বেগম এতবার করে ডাকলেন কিন্তু মিতুল শোনার মতো পাত্রী নয়। সে আজ ইচ্ছে করেই বৃষ্টিতে ভিজবে। ভিজে জ্বর বাঁধাবে। তারপর বাড়ির মানুষ বুঝবে মজা। বাড়ির সামনে দিয়েই অহরহ খালি রিকশা যাচ্ছে আজ। কিন্তু মিতুল কোনো রিকশায় উঠছে না। সে বৃষ্টিতে ভিজে হাঁটছে। পাশ থেকে কেউ একজন তখন মিতুলের মাথায় ছাতা ধরল। ব্যক্তি নিজেও তার সঙ্গে একই ছাতার নিচে। মিতুল বিস্ময় নিয়ে তাকানোর পর রূপককে আবিষ্কার করে।
মায়ের ওপর রাগ সে রূপকের ওপর খাঁটিয়ে ঝাঁঝাল স্বরে বলল,
“আপনি এখানে?”
“ছাতাটি নাও। তোমার মা পাঠিয়েছে।”
মিতুল আরও গম্ভীর হয়ে বলল,
“না। আপনি ছাতা নিয়ে চলে যান।”
“জেদ করছ কেন?”
“আমার জেদ আছে আমি জেদ করি। তাতে আপনার সমস্যা কী? আমি কি আপনার জেদ ধার নিয়েছি?”
মিতুল ছাতার নিচ থেকে সরে গেল। এবার রূপক শুধু মিতুলের মাথার ওপরেই ছাতা ধরল। সে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বলল,
“প্লিজ মিতুল! তোমার মা চিন্তা করবে। ছাতা নিয়ে যাও।”
“করুক চিন্তা। আপনার কী? মা আমার। আপনার তো না।”
“ঝগড়া পরে করা যাবে। তুমি ছাতাটা ধরো প্লিজ!”
মিতুলের এক জেদ। সে দু’হাত বগলদাবা করে সরে দাঁড়িয়ে বলল,
“না।”
রূপক কতক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে রইল। এরপর উপায়হীন হয়ে পেছন থেকে মিতুলের ব্যাগ টেনে ধরে ছাতার নিচে নিয়ে এলো। নিজেও যদিও ছাতার নিচে, কিন্তু ছাতার বেশিরভাগ অংশটাই মিতুলের দিকে। রূপক বৃষ্টিতে ভিজছে সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এমনকি মিতুল যে রেগেমেগে তাকে কথা শোনাচ্ছে সেদিকেও সে কোনো ভ্রুক্ষেপ করছে না।
“অ’স’ভ্য, ফা’জি’ল, ব’দ লোক আমার ব্যাগ ছাড়েন বলছি! নয়তো এখনই খামচি দেবো। মেজাজ খারাপ হচ্ছে আমার।”
রূপক শান্ত কণ্ঠে বলল,
“যা ইচ্ছে বলো, যা ইচ্ছে করো। আমি তো ছাড়ব না।”
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]