#কোনো_একদিন
#পর্ব_৭ ও ৮
#ভালেবাসার_সজ্ঞা_স্পেশাল_পর্ব
#কলমে_অপরাজিতা_ইসলাম
“ভালোবাসা!চার অক্ষরের ছোট্ট একটা শব্দ।কিন্তু এই একটি মাত্র শব্দের মাঝেই লুকিয়ে আছে হাজারো না বলা কথা,নাম না জানা অনুভূতি,কৈশোরকালের আবেগ,অদৃশ্য মায়ার বন্ধন আর রাতের অন্ধকারে গড়িয়ে পরা অশ্রু।ভালোবাসা শুধুমাত্র তখনই পূর্ণতা পায় যখন দু’জন ভালোবাসার মানুষ একত্রিত হয় এমনটা তো অনেকেই মনে করে আবার অনেকে বিশ্বাস করে।কিন্তু আমার ভালোবাসার সজ্ঞা অনুযায়ী দূর থেকেও ভালোবাসা যায়।হোক না সে অন্য কারো।তার কাছে যেতে না পারলেই কি আমার ভালোবাসা অপূর্ণ রয়ে যাবে?নাহ,বরং তখন আমার ভালোবাসা সঠিকভাবে পূর্ণতা পাবে।কারণ ভালোবাসার মানুষটি ভালো থাকলেই কেবল সেই ভালোবাসা স্বার্থক হয়।আমি তাকে ভালোবাসি কিন্তু সে আমাকে ভালেবাসে না।তার মনে অন্য কারো বসবাস।এখন আমি চাইলেই তাকে জোর করে নিজের করে নিতে পারি।কিন্তু তাতে কি আদৌ আমরা কেউ ভালো থাকবো?সে তো আমাকে মামুষের সামনে মেনে নিলেও মন থেকে মেনে নিতে পারবে না আর না পারবে ভলোবাসতে।তখন আমি হয়ে যাবো তার কাছে অভিশপ্ত।শুধুমাত্র কাছে পেলেই ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না।ভালোবাসার মানুষটির হাসি মুখ দেখার মধ্যে যে আনন্দ আছে সেটা তাকে জোর করে কাছে পাওয়ার পর বিষন্ন মুখ দেখে অনুভব করা যায় না।তাই আমার কাছে ভালোবাসার মানিষটির মুখের হাসিই সেরা।তার মুখের এক চিলতে হাসি আমাকে হাসতে অনুপ্রেরণা দেয়।এতেই তো আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পায়।এই পূর্ণতা একবার নয় বরং বারবার আমাকে নতুন করে প্রিয় মানুষটিকে ভালোবাসতে শেখায়।অপূর্ণতার মাঝেও জোনাকি পোকার আলোর মতো পূর্ণতা উকি দেয় আমার মনের মাঝে।”
এতোক্ষণ ধরে সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছিল তুলির ‘ভালোবাসার সজ্ঞা”।একটা মানুষের চিন্তা ধারায় বলে দিতে পারে সেই মানুষটি আসলে কেমন।তুলির কথাগুলো শুনে আজ সবাই আবারো প্রমাণ পেল মেয়েটা আসলেই ওদের বন্ধু মহলের একজন হওয়ার পূর্ণ অধিকার রাখে।
এদিকে তুলি ওর ‘ভালোবাসার সজ্ঞা’ বলতে বলতেই সিয়ামের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো সিয়াম অবশ্য তুলির দিকে তাকাতেই ওদের মধ্য বেশ কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে তাতে সিয়াম বিব্রতবোধ করলেও তুলি শুধু এক ধ্যানে দেখেছে সিয়ামকে।কথা বলা শেষ করেই তুলি মাথা নিচু করে ফেলল।হয়তো নিজের চোখ থেকে গড়িয়ে পরা অশ্রুগুলো কাউকে দেখাতে চায়না তাই!
রাত এখন দশটা।সবাই সারাদিন ইচ্ছা মতো হৈ-হুল্লোড় করে রাতের খাবার খেয়ে আড্ডা দিতে বসেছে।মাসফি অনেক আগেই চলে এসেছে।আর তারপর মেহেক একটা নতুন খেলার আবিষ্কার করলো।সবার কাছে ‘ভালোবাসার সজ্ঞা’ জানতে চাইলো।চিরকুটে প্রথম নাম ছিল তুলির।তাই তুলি নিজের ‘ভালোবাসার সজ্ঞা’ সবার সামনে উপস্থাপন করলো।সবাই তুলির ভালোবাসাকে সম্মান জানিয়ে আবার খেলায় ফিরে গেল।
মেহেক চিরকুটের বক্সটা সামনে নিয়ে আরেকটা চিরকুট তুললো।এবার চিরকুটে নাম এসেছে মিহির।মিহি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলতে শুরু করলো,
“একেক জনের কাছে ভালোবাসার সজ্ঞা একেক রকম।আমার কাছে ভালোবাসার সজ্ঞাটা খুব সাধারণ।তবে এটাকে সাধারণের মাঝে অসাধারণ ও বলা যায়।অনেক সময় আমরা নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পেয়েও দূরে ঠেলে দেই।অবহেলা করি।কথায় আছে না,না চাইতেই পাওয়া জিনিসগুলোকে আমরা ঠিকভাবে গুরুত্ব দেই না।তেমনি ভালোবাসার ক্ষেত্রেও তাই।মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো যদি কেউ আমাদের সামনে চলে আসে তাকে আমরা পাত্তা দেই না।কিন্তু যখন সে আমাদের থেকে অনেক দূরে চলে যায় ঠিক তখনই আমার আমাদের ভালেবাসার মানুষটির গুরুত্ব বুঝতে পারি।তার ভালোবাসার সুপ্ত অনুভূতিগুলো উপলব্ধি করতে পারি।কিন্তু তখন আমাদের আফসোস করা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।কারণ আমাদের বুঝতে যে অনেকটা দেরি হয়ে যায়।তাই ভালোবাসার মানুষটিকে কখনো অবহেলা না করে আপন করে নেওয়ায় শ্রেয়।আমরা হয়তো ভাবি,সে তো আমাকে ভালোবাসে।তাই আমি শত অবহেলা করলেও ছেড়ে যাবে না।এমনটা ভাবা ভুল।নিজেকে এতো বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়েই তো আমরা ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলি।তাই আমার কাছে ‘ভালোবাসার সজ্ঞা’ প্রিয়জনকে অবহেলা না করে আগলে রাখতে শেখাই ভালোবাসার মূল চাবিকাঠি।”
মিহির কথা শুনে সানভি ওর দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি উপহার দিল মিহিকে।এই হাসির মানেটা আর কেউ না বুঝলেও মিহি খুব ভালো করেই বুঝেছে।তাই সে নিজেও হেসে অন্যদিকে তাকালো।
“এইবার চিরকুট আমি তুলবো।”
এটা বলেই রাজ বক্স থেকে একটা চিরকুট তুলে নেয়।তারপর চিরকুটের ভাজ খুলতেই রাজ ওর নামটা দেখতে পায়।
“নে তোর নামই এসেছে।এবার বল তোর ‘ভালোবাসার সজ্ঞাটা’ কি রকম?”
তাহার কথায় রাজ হেসে চাঁদের আলোয় আলোকিত আকাশের দিকে তাকালো।বেশ অনেক্ক্ষণ কিছু একটা ভেবে তারপর বলল,
“ঐ যে দূরের আকাশটা চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে না?আমার কাছে ‘ভালোবাসার সজ্ঞাটা’ ঠিক সেই রকম।আমি যাকে ভালোবাসি অথবা বাসবো তাকে হতে হবে আকাশের ঐ চাঁদ।কারণ আমার মতো লক্ষ্যহীন ছেলের জীবনটাকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আনার জন্য একটা চাঁদ খুব প্রয়োজন।হুমম চাঁদ ছড়াও আরো অনেকে আলো দিতে সক্ষম।কিন্তু কথায় আছে না,চাঁদের গায়েও কলঙ্ক থাকে।আমার সেই কলঙ্কিনীকেই চাই।তার একটা ব্যাখ্যা আছে অবশ্যই।সবার মতো আমারও কিছু অতীত আছে।আমি জানি অতীতের বিষাক্ত দিনগুলোর চেয়ে রাতগুলো বেশি ভয়ংকর হয়।রাতের আঁধারে চিৎকার করে কাঁদলেও কেউ দেখতে আসে না কি জন্য আমরা কাঁদছি।এই জন্য একটা সঙ্গীর প্রয়োজন আমাদের।যে যে এই বিষাক্ত অতীতের সাথে পরিচিত একমাত্র তারাই বাকিদের কষ্টগুলো অনুভব করতে পারবে,বুঝতে পারবে।আমার সলিড কাউকে লাগবে না।আমার এমন একজনকে লাগবে যে আমার আমি টাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিবে।আমার কাছে ‘ভালোবাসার সজ্ঞাটা’ এমনই।”
রাজের কথা শুনে তাহার অজান্তেই তাহার চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রুকণা গরিয়ে পরলো।ওও কেন কাঁদছে সেটা শুধু ওও নিজেই জানে।সবাই তাহাকে কাঁদতে দেখে বেশ অবাক হলো।তাহা কোনো কিছু না বলেই ছুটে রুমের ভেতরে চলে গেলো।বাকি সবাই ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।রাজ সবার আড়ালে মুচকি হেসে ওখান থেকে উঠে গেলো।বাকিদের আর ‘ভালোবাসার সজ্ঞা’ জানা হলো না।হয়তো আজ না জানলেও সঠিক সময়ে ওদের ‘ভালোবাসার সজ্ঞাটা’ জানা যাবে।ধীরে ধীরে সবাই উঠে নিজেদের রুমে চলে গেলো।রাত বারোটা বাজতে চললো।এখন সবার একটু ঘুমানো প্রয়োজন।তাহার ব্যাপারটা সবাইকে ভাবালেও আপাতত রাতের বেলা আর কিছু না বলে পরে সবটা শোনা যাবে।তাই সবাই ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
সকাল সাতটার সময় মেহেকের ঘুম ভাংলে একে একে সবাইকে উঠিয়ে ফ্রেশ হয়ে হালকা একটু নাস্তা করে সবাই লং ড্রাইভে বের হলো।তাহা এখনো বেশ চুপচাপ।মাসফি তাহাকে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই রাজ ওর হাত চেপে ধরে এখন কিছু বলতে না করলো।তাই মাসফি ও আর কিছু না বলে গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দিল।সারাদিন ঘুরাঘুরি করার পর সন্ধ্যার দিকে সবাই যার যার বাসায় গিয়ে পৌঁছাল।দুইদিনের জার্নিটা বন্ধু মহলের সাথে বেশ ভালোই কেটেছে সবার।তাই সবাই ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিতে চলে গেল।
চলবে?
বিঃদ্রঃ সবার ‘ভালোবাসার সজ্ঞা’ কেমন লেগেছে আপনাদের?আর কার ‘ভালোবাসার সজ্ঞাটা’ সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে?
#কোনো_একদিন
#পর্ব_৮
#কলমে_অপরাজিতা_ইসলাম
“আগামী ১৫ই আগস্ট মেহেক আর মাসফির বিয়ে হবে!”
এই কথাটা বলেই মিস্টার আরহাম চৌধুরী মেহেকের বাবা মিস্টার তানজিম রাহমানকে নিয়ে উঠে গেলেন।আর বাকি সবাই বিয়ে নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো।আজকে মেহেকদের বাসায় মাসফির বাবা,মা,চাচ্চু,চাচিমা,ছোট বোন সবাই এসেছে।আবার সিয়াম,তুলি,মিহি,সানভি,তাহা,রাজ,মাাফি,মেহেকও উপস্থিত আছে।মূলত আজ বিয়ে নিয়েই সবাই আলোচনা করতে এসেছিল।মেহেকের আম্মু,ফুপ্পি আর মামিরা মিলে খাবার তৈরি করে নিয়ে আসলেন।সবাই মিলে বিকেলের নাস্তা খেতে খেতে আলোচনা করছে কখন কি কি করতে হবে।
মেহেক সকালে ঘুম থেকে উঠতেই মাসফির কল আসে।
“গুড মর্নিং”
“হুম মর্নিং”
“আজ আমরা সবাই তোমাদের বাসায় যাবো।”
“কেন?”
“আজকে আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক করা হবে।”
“আজকে?কিন্তু কেউ আমাকে বললো না কেন?”
“সারপ্রাইজ”
“হুম বুঝলাম।”
“এখন রাখছি।বিকালে দেখা হবে।”
“ওকে”
এরপর বিকালে সবাই এসে মেহেক আর মাসফির বিয়ের তারিখ ফিক্সড করে।মেহেক পুরোটা সময় চুপ করে ছিল।হঠাৎই মেহেক বলল,
“আচ্ছা আপু আর ইরজা তো এখন আসতে পারবে না।তাহলে কি আমার বিয়েতে ওরা থাকবে না?”
“এখন এই করোনার মধ্যে তো আমরা আর বড় করে অনুষ্ঠান করছি না।শুধু পরিবারের লোকজন।ওরা আসলে নাহয় বড় করে রিসিপশন করবো।তাহলে তো আর সমস্যা নেই।”
“আচ্ছা”
“বউমনি আমরা কিন্তু মেহেন্দির অনুষ্ঠান করবো।”
মিহুর কথায় সবাই তাল মিলালো।তাই মেহেক আর কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ালো।তানভীর আর রাজ মেহেকের দুই পাশে বসে বলল,
“হলুদের অনুষ্ঠান আমরা মেহেক আর মাসফির হলুদ একসাথে করবো।এর জন্য আমাদের একটা রিসোর্ট বুক করতে হবে।”
“হ্যা আপুর আর জিজুর বিয়ের সব আয়োজন আমরা বান্দরবানে গিয়ে করবো।”
“হলুদের আগের দিন রাতে মেহেন্দির অনুষ্ঠানে আমরা কিছু গেম আর নাচ-গান তো মাস্ট করবোই।”
তুলির কথায় সবাই হেসে ফেললো।
“এগুলো তো থাকবেই।তবে বিয়ে আর বউভাত ও আমরা ওখানেই করবো।শপিং গুলো শুধু ঢাকা থেকেই করে নিয়ে যাবো।মোট সাতদিন আমরা বান্দরবানে থাকবো,ঘুরবো,মজা করবো।অনেক মজা হবে।”
মিহির কথায় সবাই হ্যা বলে আরো বিভিন্ন প্ল্যান করতে লাগলো।মেহেক শুধু চুপ করে কিছু একটা ভাবছে।মাসফি হঠাৎই উঠে কোথায় জানি চলে গেল।মেহেক ও ওর পেছন পেছন গিয়ে মাসফির পেছনে দাঁড়াতেই মাসফি রীতিমতো চমকে উঠলো।
“ওহ তুমি!”
“হ্যা আমি।কিন্তু তুমি চমকে উঠলে কেন?”
“ওও কিছু না।তো বলো কিছু বলবে?”
“না তেমন কিছু না।এখন তো সবাই ওখানে আড্ডা দিচ্ছে।তুমি উঠে আসলে তাই আর কি!”
“ওহ আসলে আমি একটা জরুরি কল করার জন্য আসছিলাম।আচ্ছা চলো যাই।”
মেহেক আর মাসফি ভেতরে আসতেই সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাকলো।ওরা সবাই গিয়ে খেতে বসলো।খাওয়ার পর আজকেই রিসোর্ট বুক করে ফেললো মেহেক আর মাসফির বাবা।আগামীকাল সকালে সবাই শপিংয়ে যাবে।তারপর রাতের দিকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে।সবকিছু ঠিক করে মাসফিরা চলে গেল।আর মেহেকের পরিবারের লোকজন বাকি সবকিছু গোছগাছ করতে শুরু করলো।প্রায় রাত বারোটা কি একটার দিকে ঘুমাতে গেলো সবাই।এত দ্রুত বিয়েটা শুধু মাসফির জেদের জন্যই দেওয়া।নয়তো আরো কিছুদিন সময় নিত সবাই।
________________________
অন্যদিকে রাত প্রায় একটার দিকে একটা গেডাউনের মধ্যে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একটা ছেলেকে মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেলেছে কোন এক আগন্তুক।পড়নে কালো হুডি পড়া থাকায় মুখটাও দেখা যাচ্ছে না।তবে শারীরিক গঠন দেখে মনে হচ্ছে এটা কোনো মেয়ে।ছেলেটার সারা শরীর রক্তে লাল হয়ে গিয়েছে।নাক,মুখ থেকে রক্ত পরছে।তাতে কোনো ভাবান্তর নেই আগন্তুক মেয়েটার।সে একধ্যানে তাকিয়ে আছে ছেলেটার পাশে থাকা ব্রিফকেসের দিকে।
কিছুক্ষণ পর মাসফি গোডাউনে আসতেই দেখতে পেল ওর দলের লোকজন সবাই মাটিতে পড়ে আছে।সবার অবস্থায় খারাপ।মাসফি আর আহিল এসব দেখে চমকে উঠলো।আজ এখানে একটা জরুরি মিটিং করার কথা ছিল।মাসফির এত দিনের পরিশ্রম যে ফাইলের জন্য সেই ফাইলটা নিয়েই আজ এখানে তিনজনের আসার কথা।এটা ভাবতেই মাসফি আর আহিল দৌড়ে গোডাউনের ভেতরে এসে আরো অবাক হলো।কারণ ঐ তিনজন গার্ড নিচে পড়ে আছে অজ্ঞান অবস্থায়।আর চেয়ারের সাথে রক্তাক্ত অবস্থায় ওদের গ্যাং লিডার আর মাসফির প্রিয় একজন বন্ধু ‘আয়ান আহমেদ’ মৃত অবস্থায় পড়ে আছে।এসব দেখে মাসফির মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গেল।আহিল একটা ব্রিফকেস পেয়ে ওখানে গিয়ে দেখলো ব্রিফকেস ফাঁকা।আর সেখানে একটা চিঠিতে লেখা আছে,
“ডিয়ার মাসফি,বিয়ের জন্য তো অনেক খুশি তুমি তাইনা।কিন্তু সেই খুশিতে এক মুঠো ছাই ঢেলে দিলাম আমি।তোমার এত দিনের পরিশ্রমের ফল এখন আমার হাতে।এই ফাইলের জন্যই তো তুমি তোমার বিপক্ষ দলের গ্যাং লিডার ‘ফাইরুজ খান ফায়াজ’কে মেরেছিলে তাইনা।তুমি শুধু ফায়াজকে নয় বরং আরো দু’জনকে মেরেছো আর তার সাথে সাথে আমার মুখের হাসিটাও কেড়ে নিয়েছো।এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।এটা তো মাত্র ট্রেইলার।তোমার বাম হাত কেটেছি কেবল।এখনো অনেক কিছু বাকি আছে।তেমার কাউন্টডাউনের সময় আজ থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে।নভেম্বর মাসের কোনো একটা দিনই হবে তোমার শেষ দিন।উহুম তোমাকে আমি মারবো না।তুমি তো তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবে।আর আমি সেটা দেখবো।ভালো থেকো।আর হ্যা,এই ফাইলটা তুমি আর কখনোই পাবে না।”
ইতি,
ব্ল্যাক রোজ
চিঠিটা পড়েই মাসফি ছিড়ে ফেললো।আর চিৎকার করে উঠলো।
“ব্ল্যাক রোজ,তুমি যেই হওনা কেন।তোমার মৃত্যু আমার হাতেই লেখা আছে।তুমি নিজেও জানো না কার গুহায় এসে পড়েছো।আমি ঐ ফাইলটার জন্য সব করতে পারি।ফাইলটা আমার যেভাবেই হোক চাইইইইই।আর তার জন্য আমি ফায়াজের মতো তেমাকেও খুন করতে দু’বার ভাববো নাহ্।”
আহিল মাসফির রাগ সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানে।মাসফি যে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের কিং এটা শুধু ওও আর আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সদস্যরা ছাড়া আর কেউ জানে না।মাসফি যে ফাইলটার জন্য ফায়াজ সহ ওর পুরো গ্যাংকে শেষ করে দিয়েছে সেটার জন্য মাসফি আরো খুন করতেও দু’বার ভাববে না।কারণ ঐ ফাইলে মাসফির সবচেয়ে মূল্যবান কিছু আছে।মাসফি লেখাপড়ায় ভালো না এটা তো সবাই জানে।কিন্তু সবার জানার পেছনের বড় একটা সত্যি লুকিয়ে আছে।আর সেটা হলো মাসফি একজন সাইনটিস্ট।এই কথাটা মাসফি কাউকে জানায়নি।আন্ডার ওয়ার্ল্ডে মাসফি এই কারণেই এসেছে।ওর ক্যামিকেল নিয়ে রিসার্চ করার পর শ্রেষ্ঠ এক আবিষ্কার ছিল ‘পাওয়ার অব এসেন্স’।এই ক্যামিকেলের মাধ্যমে পৃথিবীর সব কঠিন রোগগুলো সারানো সম্ভব ছিল কিন্তু সেটার অপব্যবহারের মাধ্যমে হাজারো মানুষের প্রাণ যেতে পারে।ক্যামিকেল তৈরির বিস্তারিত বর্ণনা এবং এর সঠিক ব্যবহার ও অপব্যবহারের সম্পূর্ণ ডিটেইলস ঐ ফাইলটাতে আছে।আগে ফায়াজ ছিল আন্ডার ওয়ার্ল্ডের কিং ‘রোবটিক হিরো’।ফায়াজ নিজেও একজন সাইনটিস্ট ছিল।এবং মাসফিকে হেল্প করেছিল সেই ক্যামিকেল বানাতে।তবে কোন এক কারণে ফায়াজ ফাইলটা নিয়ে পালিয়ে যায়।আর ঠিক সেই জন্যই মাসফিকে মাফিয়া জগতে প্রবেশ করতে হয়।ফায়াজ মারা যাওয়ার আগে এক গোপন স্থানে ফাইলটা রেখে যায়।সেটা খুঁজে বের করে মাসফওর একজন প্রিয় মাফিয়া বন্ধু আয়ান।এতসব কিছু যেই ফাইলটার জন্য সেটাই আজ হাত ছাড়া হয়ে গেল।
চলবে?