#কোনো_একদিন
#পর্ব_৫
#কলমে_অপরাজিতা_ইসলাম
“মেহেকের পিরিয়ড জনিত কিছু প্রবলেম হয়েছে।যার জন্য তলপেটে চাপ পরলে ওর সমস্যা হতে পারে।এই অবস্থায় কোনোভাবেই মেহেকের সাথে ফিজিক্যালি ইনভল্ভ হতে পারবে না তুমি মাসফি।যদি হও তাহলে মেহেকের অনেক বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।”
ডক্টর হৃদির কথায় আমি চুপ করে রইলাম।কারণ এখন আমি বলার মতো কিছু পাচ্ছি না।কিন্তু মাসফির চেহারায় আমি গাম্ভীর্যতা দেখতে পেলাম।পাশাপাশি ওর মনে যে আমাকে নিয়ে ভয় কাজ করছে তাও টের পেলাম।আমার ভাবনার মাঝেই মাসফি হৃদি আপুর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,
“আপু এক্ষেত্রে মেহেকের ভালো হতে কতদিন লাগতে পারে?আর ওর কোনো বড় ক্ষতি হবে না তো?”
“না।কোনো ক্ষতি হবে না যদি মেহেক আর তুমি আমার কথাগুলো মেনে চলো।আর রেগুলার মেডিসিন নিলে তিন-চার মাসের মধ্যেই মেহেক পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।”
“তিন-চার মাস?এর আগে ভালো হওয়া কি কোনোভাবেই সম্ভব নয়?”
“না।কারণ এটা দীর্ঘদিনের একটা প্রসেস।তারাহুরো করতে গেলে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।আর এটার জন্য অপারেশন করাও সম্ভব নয়।তাই আমি যা বলি শোনো,মেহেককে রেগুলার মেডিসিনগুলো খেতে হবে।আর পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া অবধি ফিজিক্যালি ইনভল্ভ হতে পারবে না তোমরা।”
“ওকে আপু।মেহেকের যেন কিছু না হয় তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমার।”
মাসফির কথা শুনে আমি মুচকি হাসলাম।কিন্তু সেটা মাসফির আড়ালে।মাসফি যে এতো কেয়ারিং তা আজকে জানলাম।
এরপর আপুর সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে মেডিসিন কেনার জন্য আমরা প্রথম ফ্লোরে চলে আসলাম।মেডিসিন কিনে নিয়ে মাসফি আমার হাতে দিয়ে বললো,
“নিয়মিত নিজের যত্ন নিবে।আর আমি তো আছিই।চিন্তা করো না।সব ঠিক হয়ে যাবে আল্লাহর রহমতে।এখন চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।”
এটা বলেই মাসফি আমার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াল।আমিও ওর কথায় মাথা নাড়িয়ে হ্যা সম্মতি দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।মাসফি আমাকে নামিয়ে দিয়ে হালকা হেসে বাই বললো।আমিও কোনোকিছু না বলে শুধু একটু হাসার চেষ্টা করে বাসার ভেতরে চলে আসলাম।আমার হাতের মেডিসিন আর রিপোর্ট টা ব্যাগে ঢুকিয়ে আমি রুমে চলে আসলাম।অনেক ক্লান্ত লাগছে আজ।তাই আগে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।তারপর চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পরলাম বিছানায়।সারাদিন ক্লান্ত থাকায় শোয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুম পরিরা আমার চোখে এসে ভর করলো।রাত প্রায় নয়টার দিকে মাথায় কারো হাত বোলানিতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।পাশে তাকিয়ে দেখি আব্বু আমার মাথায় পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আমি কিছু না বলে হেসে আব্বুকে জড়িয়ে ধরলাম।
“তুমি কখন এসেছো আব্বু?”
“এইতো একটু আগেই মামনি।”
“তো আমাকে ডাকলে না কেন?”
“তুমি ঘুমাচ্ছিলে।তাই আর জাগায়নি।”
“ওওও আচ্ছা।”
“হুম।এখন উঠে পড়ো তো মামনি।ডিনার করতে চলো সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে ডাইনিং এ।”
“আচ্ছা তুমি যাও।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
“ঠিক আছে তারাতাড়ি এসো।”
এটা বলেই আব্বু চলে গেল।আর আমি ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে একটু পানির ঝাপটা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলাম।তারপর সবাই মিলে একসাথে খেয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম।রাত দশটার পর রুমে আসতেই দেখলাম ফোনের স্ক্রিনে আলো জ্বলছে।কাছে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখি মাসফি কল করেছে।রিসিভ করে বললাম,
“হ্যা বলো।”
“কি করছো?”
“ডিনার করে আসলাম।তুমি?”
“আমি একটু কাজ করছি।”
“খেয়েছো?”
“না।একটু পর খাবো।”
“আচ্ছা তুমি তাহলে কাজ করো।আমি এখন রাখি।”
“আরে যে জন্য ফোন দিয়েছি সেটাই তো বলিনি এখনও।”
“হুমমম বলো কি বলবে?”
“কালকে আমাদের ফার্মহাউসে সবাই আসবে।লকডাউন এর জন্য অনেক দিন হলো সবাই মিলে আড্ডা দেই না।তাই কাল সারাদিন আমরা ফার্মহাউসে থাকবো।তুমি একাই আসবে?নাকি আমি গিয়ে নিয়ে আসবো?”
“না না আমি একাই যেতে পারবো।তোমার আসতে হবে না।”
“তাহলে কালকে দশটার মধ্যে ফার্মহাউসে চলে এসো।আসলে আমিই নিয়ে আসতাম তোমাকে।কিন্তু আমার সাথে সিয়াম আর সানভি ও যাবে।আর কিছু কাজও আছে তাই আর কি।”
“সমস্যা নেই।আমি একাই যেতে পারবো।”
“ঠিক আছে।মেডিসিন গুলো খেয়েছো রাতেরটা?”
“হ্যা খেয়েছি।আচ্ছা কাল কথা হবে এখন রাখি।”
“ওকে গুড নাইট।হ্যাভ আ সুইট ড্রিম উইথ মি।”
“আচ্ছা গুড নাইট।”
কল কেটে দিয়ে আমি ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম কিছু কাজ করার জন্য।কিছুক্ষণ পর আমি ল্যাপটপ অফ করে শুয়ে পরলাম।তারপর ফেসবুকিং করে রাত প্রায় একটার দিকে ঘুমালাম।
অন্যদিকে মাসফি খেয়ে এসে ল্যাপটপ অন করতেই একটা নোটিফিকেশন আসলো।কে যেন ইমেইল করেছে ওকে।ইমেইল টা ওপেন করতেই দেখতে পেলো,
“ডিয়ার মাসফি।আশা করি ভালো আছো।এখন তো ভালো থাকারই কথা।নতুন বিয়ে করেছো।বউটাও সুন্দরী।তার উপর তোমাকে অন্য মেয়েদের সাথে দেখেও কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ তোমাকে বিয়ে করে নিল।অনেক লক্ষ্যি একটা মেয়েকে বউ হিসেবে পেয়েছো।মেহেকের জায়গায় আমি হলে তোমাকে আর ঐ মেয়েটাকে ওখানেই শেষ করে দিতাম।কারণ আমার কাছে বিশ্বাসঘাতক আর অন্যায়কারীদের কোনো মাফ নেই।হোক সে আমার শত্রু অথবা আমার ভালোবাসা।যাইহোক,এখন মূল কথায় আসি।যত দ্রুত সম্ভব বিয়েটা করে নাও আনুষ্ঠানিকভাবে।কারণ দেরি হয়ে গেলে হয়তো নিজের বউকে আপন করে পাওয়ার আগেই হারিয়ে ফেলবে।তোমার পাপের প্রত্যেকটা হিসাব আমার কাছে আছে।তুমি যদি আন্ডার ওয়ার্ল্ডের কিং “সানফ্লাওয়ার” হও তাহলে আমি ও যে আন্ডার ওয়ার্ল্ড এর কুইন “ব্ল্যাক রোজ”।তোমার জন্য আমি অনেক কিছু হারিয়েছি।এবার তোমার ধ্বংস নিশ্চিত।আর তোমার বিনাশ করবো আমি।এখন থেকে ঠিক চার মাসের মধ্যে তোমাকে সর্বহারা করে দিবো আমি।আর এটা আমার নিজেকে করা প্রতিজ্ঞা।আমি নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও নিজেকে দেওয়া প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবো।তাই মিস্টার মাসফি চৌধুরী,আজ থেকেই নিজের সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার কাউন্টডাউন শুরু করে দাও।”
ইতি,
তোমার জানেমান
“ব্ল্যাক রোজ”
ইমেইল এ লেখা এই কথাগুলো পড়েই মাসফির রাগে কপালের শিরা গুলো ফুলে উঠলো।চোখ লাল করে হাতের কাছে থাকা সবকিছু ঠাস ঠাস করে নিচে ফেলে দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই ভেঙ্গে ফেললো।মাসফির রুম সাউন্ডপ্রুফ হওয়ায় কাচ ভাঙ্গার কোনো শব্দ বাইরে গেলো না।মাসফি ইমেইলটা চেক করে দেখলো ইমেইলদাতার নাম ও “ব্ল্যাক রোজ দেওয়া।”
“মিস ব্ল্যাক রোজ তুমি যেই হও না কেন,আমার দুনিয়ায় এসে খুব বড় ভুল করে ফেলেছো।তোমার ধারনাও নেই যে আমি ঠিক কি কি করতে পারি।তুমি আমার ধ্বংস দেখতে গিয়ে নিজেই না ধ্বংস হয়ে যাও।”
বলেই হাহা করে হেসে উঠলো মাসফি।হঠাৎই মেহেক আর ওর বিয়ের কথা মনে করে মাসফি আৎকে উঠলো।কারণ ওর দুর্বলতা এখন শুধুই মেহেক।মেহেককে যে ওও অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছে।ওর জন্য মেহেকের কিছু হয়ে গেলে মাসফি নিজেকে কখনোই মাফ করতে পারবে না।তাই এখন থেকে মেহেককে চোখে চোখে রাখতে হবে।এক মুহূর্তের জন্যও ওকে চোখের আড়াল করা যাবে না।আর তাছাড়া মাসফির আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সাথে যুক্ত থাকা এবং সেখানকার কিং হওয়ার কথা ওর অ্যাসিসটেন্ট আহিল আর আন্ডার ওয়ার্ল্ডের লোকেরা ছাড়া কেউ জানে না।তাই এই কথা আর কাউকে জানানোও যাবে না।সবার আগে এই মেয়েটাকে খুঁজে বের করতে হবে।কে এই ব্ল্যাক রোজ?যার এত্তো সাহস যে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের মাফিয়াদের সাথে লাগতে আসে।এইখানে তো সবাই ছেলে।তাহলে এই মেয়েটা আসলো কোথা থেকে?আর ওর সাথেই বা মেয়েটার কিসের শত্রুতা?
এসব ভাবতে ভাবতেই মাসফির সারারাত আর ঘুম হলো না।পুরো একটা নির্ঘুম রাত কাটিয়ে ভোরের দিকে দুচোখের পাতা এক করে ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো মাসফি।
চলবে?