#কোনো_একদিন
#পর্ব_৪
#কলমে_অপরাজিতা_ইসলাম
২০১৯ সালের শেষের দিকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রান্সফার হয়ে আসি সিংগাপুর থেকে।তখন আমি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ শেষ করে তৃতীয় বর্ষে পড়ার জন্য তৈরি হচ্ছি।আমার সিংগাপুর থেকে এখানে আসার পেছনের গল্পটা না হয় অন্য কোন একদিন বলবো।আমি স্বভাবতই বেশ চঞ্চল স্বভাবের মেয়ে।ভার্সিটিতে আসার প্রথম দিন তেমন কারো সাথেই পরিচয় হয়নি।তবে ধীরে ধীরে আমার মিহি,সানভি,তুলি,সিয়াম,তাহা,রাজ,মাসফির সাথে বন্ধুত্ব হয়।ওদের বন্ধু মহলের একজন অন্যতম সদস্য হয়ে উঠি আমি।দিনগুলো বেশ ভালোই যাচ্ছিলো।আমার সবথেকে বেশি মিল ছিল মিহি আর সিয়ামের সাথে।আমার সিয়ামকে বেশ ভালো লাগতো।তবে সেটা বন্ধু হিসেবে।সিয়ামকে তুলি যে পছন্দ করে এটা আমি শুরু থেকেই জানতাম।কিন্তু সিয়াম ছিল একদম অন্য রকম।মেয়েদের সাথে তেমন কথা বলতো না।আমি নিজেই প্রথম ওর দিকে বন্ধুত্বের হাত বারিয়ে দেই।আর মাসফি ছিল সিয়ামের পুরো বিপরীত।মেয়েদের সাথে পর ফ্লার্ট করা নিয়ে আমরা সবাই ওকে অনেক কথা শোনাতাম।কিন্তু আমাদের কথাগুলো মনে হয় ওর কর্ণগোচর হতো না।যাইহোক,সবকিছু বেশ ভালোই চলছিল।কিন্তু একটা দুর্ঘটনা ঘটে ২০২০ সালের নভেম্বরে।সেদিন আমরা সব বন্ধুরা মিলে মাাফিদের ফার্মহাউসে যাই পার্টি করার জন্য।আর দুর্ভাগ্যজনক হলেও মাসফি আর সিয়াম আমাকে একই দিনে প্রপোজ করে।ব্যাপারটাতে আমি পুরো থমকে গিয়েছিলাম।সিয়াম আমাকে আড়ালে গিয়ে প্রপোজ করেছিল বিধায় ওর কথা কেউ জানতো না।কিন্তু মাসফি আমাকে সবার সামনে প্রপোজ করে।আমাকে সেদিন সবাই মাসফিকে হ্যা বলতে বলে।আফটার অল মাসফি ভার্সিটি ক্রাশ বলে কথা।তবে সিয়াম ছিল ভার্সিটি টপার।মাসফি পড়ালেখার প্রতি বেশ উদাসীন।আমি সেদিন সিয়াম আর মাসফিকে কিছু না বলেই বাসায় চলে আসি।এরপর আমি দুজনের থেকেই ভাবার জন্য সময় চাই।আর তারপর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমি মাসফিকে হ্যা বলি।সবদিক থেকে সিয়াম এগিয়ে থাকলেও আমার মাসফিকে ভালো লেগে যায়।তারপর থেকেই সিয়ামের সাথে আমার বন্ধুত্বে ফাটল ধরতে থাকে।এতসব কিছুর পর গত জুলাইয়ে আমার মাসফির সাথে এনগেজমেন্ট হয়।আর তারপর সেদিন আমি মাসফিদের অফিসের লিফটে যা দেখি তা তো সবারই জানা।আমি চাইলেও আর মাসফির থেকে দূরে যেতে পারবো না।কারণ দিন শেষে আমি মাসফিকেই ভালোবাসি।
___________________________
ফোনের রিংটোনে আমি বাস্তবে ফিরে আসি।আপু কল দিয়েছে।
“আসসালামু আলাইকুম আপু।”
“ওয়ালাইকুম সালাম।”
“কেমন আছো?”
“হুম আলহামদুলিল্লাহ।তুই?”
“আলহামদুলিল্লাহ।”
“কি ব্যাপার মেহেক।এই হঠাৎ করে বিয়ে করার মানে কি?”
“আপু প্লিজ এখন আমাকে এসব বলার জন্য ফোর্স করো না।তুমি তো জানো,আমি কোনোকিছুই অযথাই করি না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
“হুম আমার ইরজা মামনি টা কেমন আছে?”
“ওও তো ভালোই আছে।এখন ঘুমাচ্ছে।আর আমি অফিসের কিছু কাজ করছি।”
“আচ্ছা আপু তুমি আর ইরজা বাংলাদেশে কবে আসবে?”
“আসতে তো আমিও চাই মেহেক।কিন্তু…”
“আপু প্লিজ কেঁদো না।তেমার চোখের এক ফোঁটা পানি ও যে আমাকে কাঁদায়।”
“ধুর পাগলি মেয়ে।তুই কাঁদছিস কেন?যা হয়েছে তা তো আর ফিরে আসবে না।”
“তুমি তারাতাড়ি বাংলাদেশে চলে আসো প্লিজ।”
“আচ্ছা আমি দেখছি যত তারাতাড়ি সম্ভব বাংলাদেশে ফেরার জন্য কি করা যায়।”
“আপু আমি এখন ঘুমাবো।পরে কথা বলবো ওকে?”
“ওকে তুই ঘুমিয়ে পড়।আমিও কাজ শেষ করে একটু পরেই ঘুমাবো।”
“গুড নাইট।”
“গুড নাইট আমার সোনা বোনুটাহ্।”
আপুুর সাথে কথা বলা শেষ করে আমি ঘুমিয়ে পড়ি।সকালে ফোনের রিংটোনে ঘুম ভাঙ্গে আমার।মাসফি ফোন দিয়েছে।আমার মুখে আবারো বিরক্তির আভা ফুটে উঠলো।
“হ্যালো”
“গুড মর্নিং জান।”
“সকাল বেলা তুমি আমাকে এজন্য ফোন দিয়েছো?”
“হুম।আচ্ছা শুনো এখন নয়টা বাজে।তুমি ফ্রেশ হয়ে তারাতাড়ি তৈরি হয়ে নাও।আর হ্যা,ব্রেকফাস্ট করে নাও।আমি দশটার মধ্যে আসছি।”
“হুম ওকে।”
“বাই বাই”
“আল্লাহ হাফেজ।”
এটুকু বলেই আমি ফোন রেখে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।একটু পর একটা অফ ওয়াইট রংয়ের লং ড্রেস পড়ে বেরিয়ে আসলাম আমি।তারপর মাথায় হিজাব বেধে চোখে হালকা কাজল দিয়ে নিচে চলে গেলাম ব্রেকফাস্ট করার জন্য।
ব্রেকফাস্ট টেবিলে আম্মু আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
“কোথায় যাবি তুই?”
“মাসফির সাথে একটু বের হবো আম্মু।”
“এতে সকালে কেন?”
“এমনিতেই একটু কাজ আছে।”
আমি এখন কাউকে ডক্টরের কথা বলবো না।এমনিতেই কালকের ঘটনা নিয়ে সবাই একটু রেগে আছে।তার উপর আবার এই কথা বলে চিন্তা বাড়াতে চাই না।তার থেকে ভালো,আমি আর মাসফি গিয়ে ব্যাপারটা সল্ভ করে আসি।খাওয়া শেষে আমি উঠে উপরে যেতেই মাসফির আগমন।আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“চলো।”
আমিও কোনো কথা বলে চুপচাপ ওর সাথে বের হয়ে আসলাম।গাড়িতে বসে আমি বা মাসফি কেউ কোনো কথা বলিনি।হসপিটালে আসার পর টেস্ট করার জন্য স্যাম্পেল দিয়ে মাসফি আমাকে নিয়ে একটা ক্যাফেতে গেলো।আমি কোনো কথায় বলিনি এখনো।মাসফি হঠাৎই আমার হাতের উপরে হাত রেখে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।
“দেখো মেহেক আমি জানি তুমি আমার উপরে রেগে আছো।আর সেটা স্বাভাবিক।কিন্তু আমার কথাটা একবার শুনো।গতকালকে…”
এটুকু বলার পর আর কিছু বলতে পারলো না ওও।কারণ ওর ফোনে কল এসেছে।
“এটা কার নাম্বার?চিনিনা তো।”
মাসফি কলটা রিসিভ করতেই ওপাশের কিছু তো আমি শুনতে পেলাম না।কিন্তু মাসফির চেহারার রং পাল্টে গেল।পুরো মুখে ছেয়ে গেলো রাগের আভা।আচমকাই ওর এমন রাগের কারণ আমি চিহ্নিত করতে পারলাম না।ওও কোনোকিছু না বলেই আমাকে ক্যাফেতে রেখে কোথায় জানি চলে গেল।আর আমি নিরব দর্শকের মতো ওর কান্ডগুলো দেখতে লাগলাম।প্রায় ৩০ মিনিট পর ওও ফিরে এলো।আর তারপর আমাকে নিয়ো আবার হসপিটালে চলে আসলো।হসপিটালে এসে টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে আমরা হৃদি আপুর কাছে চলে আসলাম।অনেক্ক্ষণ যাবত রিপোর্টগুলো পর্যবেক্ষণ করার পর হৃদি আপু যা বললো তাতে করে আমার আর মাসফির চোখগুলো যেন কোটর থেকে বেড়িয়ো আসবে এমন অবস্থা।
চলবে?।