#কোনো_একদিন
#পর্ব_১
#কলমে_অপরাজিতা_ইসলাম
লিফটের ভেতরে নিজের ফিয়ন্সে কে একটা মেয়ের সাথে এতো ক্লোজভাবে দেখে আমার পুরো দুনিয়া যেন ঘুরতে লাগলো।নিজের চোখকে কি করে অবিশ্বাস করা যায়?আমি ঠিক কি করবো বা বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।নিজের অজান্তেই আমি চিৎকার করে উঠলাম।আমার চিৎকারে মাসফি আর ওর সাথে থাকা মেয়েটা একে-অপরকে ছেড়ে দিয়ে অবাক চোখে আমার দিকে তাকালো।আমি নিকাব পড়ে থাকায় মাসফি প্রথমে চিনতে না পারলেও আমার চোখ দেখে চিনে যায় যে এটা আমি।আমি আর কোনো কিছু না বলেই লিফটের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসি।আমি এখন কোথায় যাবো ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ পেছন থেকে মাসফি আমার হাত ধরে ফেলে।আমি নিজের হাত ওর থেকে ঝাড়া মেরে সরিয়ে নিয়ে বলি,
“খবরদার,ঐ নোংরা হাত দিয়ে আপনি আমাকে স্পর্শ করবেন না।”
মাসফি অবাক হয়ে বলে,
“তুমি এসব কি বলছো মেহেক?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
আমি কান্নারত অবস্থাতেই বললাম,
“কিচ্ছু বুঝতে পারছেন না তাইনা?নিজেকে ধোয়া তুলশী পাতা মনে করেন আপনি?”
“মেহেক প্লিজ চুপ করো।তুমি কি বলছো তা হয়তো নিজেও জানোনা।”
“হ্যা সত্যি আমি কিছুই জানিনা।আপনি কেন আমার জীবন নিয়ে খেললেন সত্যি আমি জানিনা।”
“আমি তোমার জীবন নিয়ে খেলেছি?এটা তুমি কিভাবে বলতে পারো?”
“হ্যা হ্যা আপনি আমার জীবন নিয়ে খেলেছেন।আমার জীবনটাকে শেষ করে দিয়েছেন আপনি।”
“আরে বাবা তুমি কেন এমন করছো,সেটা তো বলো আমাকে।”
“সবকিছু বলবো তবে এখানে নয়,দুই পরিবারের সামনে।”
“পরিবার,এখানে পরিবার আসলো কোথা থেকে?”
“কেন?পারিবারিকভাবেই তো আমাদের এনগেজমেন্ট হয়েছে।তাই এই এনগেজমেন্টটা ভাঙ্গার জন্যও তো দুই পরিবারকে লাগবে।তাইনা?”
“মেহেককককককক”
আর কিছু বলার আগেই আমার গাল লাল করে পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ বসিয়ে দিলো মাসফি।আমি হতবাক চাহুনি নিয়ে মাসফির দিকে তাকালাম।মাসফির চোখগুলো লাল বর্ণ ধারণ করেছে।আমার দিকে তাকিয়ে মাসফি কোনোকিছু না বলেই টানতে টানতে গাড়িতে এনে বসিয়ে দিলো।চারপাশের মানুষজনের অবাক চাহুনি দেখে আমি অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম।মাসফি কোনোদিকে না তাকিয়ে ফুল স্পিডে গাড়ি চালাতে লাগলো।ভয়ে আমার হাত-পা কাঁপছে এতো স্পিডে গাড়ি চালালে ওও নিজেও মরবে আর আমাকেও মারবে।এদিকে থাপ্পর খাওয়ার পর ভয়ে আর কিছু বলতেও পারছি না আমি।প্রায় বিশ মিনিট পর গাড়ি এসে থামলো আমাদের বন্ধু মহলের আড্ডা দেওয়ার যায়গায়।ওখানে সবাই দাড়িয়ে আছে।মাসফি ইশারায় সবাইকে গাড়িতে এসে বসতে বললো।ওরাও চুপচাপ এসে বসে পড়লো।চারিদিকে পিন পতন নিরবতা।এ যেন ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস।নিরবতা কাটিয়ে মিহি বলে উঠলো,
“মাসফি আমরা কোথায় যাচ্ছি?এতো জরুরি তলব কেন?”
মাসফি এখনো চুপচাপ ড্রাইভ করছে।সবাই একের পর এক প্রশ্ন করলেও মাসফি কোনো উত্তর না দিয়ে গাড়ি চালিয়ে একটা জায়গায় এসে থামলো।তারপর আবারো আমাকে টেনে নামিয়ে সোজা একটা বিল্ডিংয়ের সামবে এসে দাড়ালো।আমি সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলাম।কারণ সাইনবোর্ডের উপরে বড় বড় অক্ষরে লেখা “কাজি অফিস”
আমার পাশাপাশি আাকি সবাই ও অবাক হয়ে মাসফির দিকে তকািয়ে আছে।সেদিকে ওর কোনো হেলদোল নেই।ওও সোজা কাজি সাহেবের সামনে গিয়ে বললো,
“আমরা দুজন আজ এখখই বিয়ে করতে চাই।”
আমি এতোটাই শকের মধ্যে আছি যে কথা বলারও ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।কি থেকে কি হয়ে গেলো এসব?আমার ভাবনার মাঝেই মাসফি একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বললো,
“সিগনেচার করো।”
“একদম না।আমি সিগনেচার করবো না।”
“সিগনেচার করো বলছি।”
“না আমি মরে গেলেও সিগনেচার করবো না।”
মাসফি আমার দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
“হয় তুমি সিগনেচার করবে।আর নাহলে তোমার সব সার্টিফিকেট আমি নষ্ট করে ফেলবো তোমার স্বপ্ন একজন সিআইডি অফিসার হওয়াও আর হবে না।এখন চয়েস ইজ ইউর’স”
মাসফির কথা শুনে আমার পিলে চমকে উঠলো।এই ছেলেটা খারাপ আমি জানতাম।কিন্তু এতো খারাপ সেটা জানতাম না।আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য সবকিছু করতে পারি।কিন্তু এমন কিছু নিয়ে যে মাসফি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করবে এটা আমার কল্পনার বাইরে ছিলো।
“কি হলো সিগনেচার করবে না?”
বলেই বাকা হাসি দিয়ে অন্যদিকে তাকালো মাসফি।আমিও রাগে-দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে সিগনেচার করে দিলাম।
“এইতো গুড গার্ল মিস ওপস্ স্যরি মিসেস চৌধুরী।”
আমি শুধু ওর দিকে রাগী চোখে তাকালাম।এছাড়া আর কী-ই বা করার আছে আমার।ইচ্ছে করছে এই ভাল্লুকটাকে তুলে আছাড় মারতে।কিন্তু আমার মতো শুটকি মাছ কি আর ভাল্লুককে তুলে আছাড় মারতে পারবে।এই ভেবেই আমার কান্না আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।মাসফি আবারো আমাকে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে আসলো।তারপর বাকি সবাইকে বললো,
“তোদেরকে এখানে সাক্ষী হওয়ার জন্য ডেকেছিলাম।আমাদের বিয়ে তো হয়ে গেলো এখন তোরা যা।”
“যাবো মানে,তুই এসব কি করলি সব মাথার উপর দিয়ে গেলো আমাদের।”
সানভির কথায় বাকি সবাই তাল মিলিয়ে তুলি বললো,
“তোদের তো আর দুমাস পড়েই বিয়ে হয়ে যেতো। তাহলে এইভাবে বিয়ে করার কি দরকার ছিল?”
“আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই এভাবে বিয়ে করেছি।এখন তোরা যা তো।বাকি কথা পড়ে বলবো।”
আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমাকে গাড়িতে বসিয়ে আবার ড্রাইভ করতে লাগলো।আমার হাত রীতিমতো ব্যাথা করছে।সকাল থেকে আমার হাত টানতে টানতে শাঁকচুন্নিদের মতো লম্বা করে ফেলেছে শালা ভাল্লুক।
“আমাকে মনে মনে বকা দেওয়া শেষ।”
মাসফির কথা শুনে আমি বিরক্ত হলাম প্রচুর।কারণ এই ছেলের অত্যাচারে আমি মনে মনে কোনো কথা বলেও শান্তি পাইনা।কিভাবে যেন আমার মনের কথাও বুঝে যায়।
“নামো।”
“নামবো কেন?”
“তো কি এখানেই বসে থাকতে চাও সারাদিন?”
মাসফির কথায় আমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম এটা মাসফিদের একটা ফার্মহাউস।এখানে এর আগেও কয়েকবার বন্ধুরা সবাই মিলে আসা হয়েছে পার্টি করার জন্য।আমি গাড়ি থেকে নেমে ধীরে ধীরে ভেতরে যেতে লাগলাম।তখনই মাসফি আমাকে……
চলবে?