কোথাও হারিয়ে যাব পর্ব-২১+২২

0
478

#কোথাও_হারিয়ে_যাব
#রূবাইবা_মেহউইশ
পর্ব-২১

ব্যাগপ্যাক গোছাগাছ হতেই যেন হাফ ছেড়ে বসলো অর্নিতা, নুপুর। অর্নিতার জীবনে কাঙ্খিত মুহুর্তগুলোর এটাও তো একটা। মনেপ্রাণে অপেক্ষা করছিল এই দিনগুলোর। যেদিন অর্ণব এসে বলল, ‘রেজাল্ট বেরিয়েছে অর্নি। রিদওয়ানকে বলে দে টিকিট কাটতে।’

-টিকিট!

আঁতকে উঠেছিল অর্নিতা তবে কি সে চান্স পায়নি কোথাও। তাকে আরও একটু ভড়কে দিয়ে অর্ণব নিজেই কল করলো রিদওয়ানকে।

-হ্যালো, রিদু টিকিট কাটতে হবে রে…..
অর্ণব আর কথা শেষ করতে পারেনি। তার চোখ পড়েছে অর্নিতার মুখে। নোনা জলে গাল চিকচিক করছে। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার দমকে দুলে উঠছে তার শরীর তা দেখেই দুষ্টুমিতে রাশ টেনে বলে উঠলো, ‘হলে সিটের ব্যবস্থা করব নাকি বাইরেই কোন ফ্ল্যাট বাড়ি ঠিক করব বল তো।’

সেদিন প্রথমবার ভাইয়াকে দেখলো কিরকম মজা করতে। টিকিটটা বলেছিলো চট্টগ্রামের জন্য৷ অর্নিতা চট্টগ্রামে চান্স পেল সেই সাথে পেয়ে গেল তা জেনেই অর্ণব বোনের সাথে একটু মজা করতে ছেয়েছিল। বোকা মেয়েটা ভেবেছে সে চান্স পায়নি বলে রিদওয়ান ফিরে আসবে। পরে বুঝলো তার চট্টগ্রামের টিকিটের কথা বলছে। সেই থেকেই গোছগাছের শুরু কি নেবে কি নেবে না এই করতে করতে কখনো রিদওয়ান, কখনো অর্ণব আর কখনো খালামনির তাড়া। শেষ পর্যন্ত কাপড়চোপড় ছাড়া কিছুই নেওয়া হচ্ছে না। আজ জোর করেই নুপুরকে আনা হয়েছে তাদের বাড়ি। কথা ছিল বৃষ্টি আপুও আসবে কিন্তু কোন একভাবে নুপুরের কথা জানতে পেরে এলো না বৃষ্টি। অনেক আগে থেকেই কেন যেন মেয়েটা শ্যামাকন্যাটিকে সহ্য করতে পারে না। অর্নিতার বিয়ের দিনেও বেশ সুক্ষ্মভাবে তাকে এড়িয়ে গেছে সে কিন্তু আজকেও নুপুর আসবে শুনে মুখের ওপর কিছু কথা বলে দিয়েছিল। অর্নির মন খারাপ হলেও ঠিক বুঝে উঠেনি এমন কি করল সে যার জন্য বৃষ্টি আপু রেগে গেল!

– আমার খুব খিদে পেয়েছে অর্নি চায়ের খিদে।

-একটু বোস আমি আনছি।

-আচ্ছা।

অর্নিতা ঘর ছেড়ে বের হতেই নুপুর হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। বছরেরও বেশি সময় হলো নুপুরের এ বাড়িতে যাতায়াত চলছে। প্রথম দিকে সংকোচ হলেও ধীরে ধীরে তা দূর হয়েছে। অর্ণবকে নিয়ে মনের ভেতরের স্নিগ্ধ অনুভূতি এখন অনেকটা শিথিল, শান্ত। এর কারণ বোধহয় বাড়িতে লেগে থাকা তার বিয়ের আলোচনাই মূল কারণ৷ আজ সকালে এ বাড়িতে পা রেখেই টের পেয়েছে অর্ণব বাড়িতে নেই তবুও অস্থির হয়নি সে লোকটাকে দেখার জন্য৷ যেন এটাই স্বাভাবিক তার জন্য অথচ মাস দুই আগেও কেমন পাগল পাগল লাগতো ওই জল্লাদমুখে মানবের একপলক দর্শনের অপেক্ষায়।

-এই নে…. চা করা হলো না ভাইয়ার কফির জন্য।

কফির একটা মগ নুপুরকে এগিয়ে দিয়ে পাশেই বসলো অর্নি। মুহূর্তেই ফোন বাজলো তার রিদওয়ান কল করেছে। কল ধরতেই ওপাশ থেকে উত্তেজিত স্বর, ‘ব্যাগ গোছানো হয়ে গেছে?’

-হ্যা

– বের হবি কখন?

-কাল ভোরে।

– শুভ কামনা….. আর কি বলা যায় বল তো!

-আমার জন্য শুভেচ্ছা সম্ভাষণ আমিই বলে দেব?

– বউকে শুভেচ্ছা জানাতে হয় বুকের মাঝে চেপে ধরে ললাটে উষ্ণ স্পর্শে আমার নসীবে তো তেমন কিছু নেই রে। এক কাজ করলে হয় আমি চলে আসি? তারপর সবটা পূরণ করবো।

হা হুতাশে ভরা রিদওয়ানের কণ্ঠ। সত্যিই তার খুব ইচ্ছে করে অর্নিকে একটিবার বুকে চেপে ধরে লম্বা একটা নিঃশ্বাস টেনে নিতে। কবে আসবে সেই দিন ভাবতেই বুকের ভেতর ফাঁপা লাগে। দুজনে কথা চলতে লাগলো আর নুপুর বিছানায় বসে কফির মগে তাকিয়ে আছে নিষ্পলক। সন্ধ্যের আগেই এখান থেকে বেরিয়ে যেতে হবে তাকে৷ ভেবেছিল ঘন্টা দুয়েক থেকেই চলে যাবে তা আর হলো কই! অর্নিটা বড্ড আপন তার এ জীবনে৷ নিজের আত্মার আত্মীয় বলতে এক ওই তো আছে৷ মা নেই, বাবা থাকলেও বন্ধুতা নেই বাবার সাথে। যা আছে শুধুই আদর, স্নেহের সম্পর্ক যেমনটা সাধারণত হয়। স্কুল জীবনে বান্ধবী তেমন হয়নি তার কলেজে এসে প্রথম এই শান্ত শীতল মেয়েটাই তার কাছের হলো। বলতে নেই, তার চঞ্চল, ছটফটে স্বভাবটাকে নিশ্চুপে গ্রহণ একমাত্র অর্নিতাই করেছিল বলে গড়েছে তাদের এই মজবুত বাঁধন। অর্নি কথা বলায় ব্যস্ত তাই নুপুর কফিতে চুমুক দিতে দিতে ফোন স্ক্রল করছিল। দরজায় ঠকঠক শব্দ হতেই চোখ তুলে সে চাইলো সেদিকে। অর্ণব দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে চেয়েই। শিরশির করে উঠলো তার মেরুদণ্ড এ কেমন দৃষ্টি!

– কথা ছিল আমার একটু নিচে আসবে?

কথাটায় মিনতি ছিল কি আদেশ ঠিক বোঝা গেল না। আধ খাওয়া কফিসহ মগটা খাটের ওপর রেখেই নুপুর পা বাড়ালো অর্ণবের দিকে। অর্নি তখনও বারান্দায় দাঁড়িয়ে রিদওয়ানের সাথে কথায় ব্যস্ত।
________

-কাল ভোরেই অর্নি চট্টগ্রামে চলে যাবে। আমি আজ একটু ও বাড়ি যাই…..

– কেন? আর কখনো ফিরবে না তোমার বোনঝি?

বাশার শেখের কথার ধরণে থমকে গেছে রায়না। মেয়েটা কাল গেলে প্রথম সেমিস্টারের আগে আর ঢাকায় ফিরবে না এ কথা তিনি আন্দাজ করতে পারেন। এদিকে তিনি নিজেও মেয়েটাকে দেখতে অতদূর যেতে পারবেন না জানেন বলেই আজ যেতে চাচ্ছিলেন। কত সাধ করে মেয়েটার পছন্দের হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি রেঁধেছেন নিজ হাতে। নিজ হাতে না খাইয়েও শান্তি পাবেন না। আজ কতগুলো মাস হয়ে এলো অর্নিতা এ বাড়িতে পা রাখেনি কে জানে কখনো রাখতে পারবে কিনা! রায়না মনে মনে খুব কষ্ট পান স্বামীর আচরণে তবুও মুখ ফুটে কিছু বলেন না। শেষ পর্যন্ত বিরিয়ানি বক্সে ভরে রিমনকে দিয়েই পাঠিয়ে দিলেন ও বাড়িতে। বৃষ্টি বসেছিল তার বাবার পাশে আজকের সকালের পত্রিকা নিয়ে৷ বাবা-মায়ের কথা শুনে তার বিরক্ত লাগল খুব রাগও হচ্ছে। এই যে সামান্য বিরিয়ানি নিয়ে একজন মন খারাপ করছে এটা কিছুতেই হতো না যদি সে যেতো। সে নিজেই আব্বুকে বলে আম্মুর যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতো কিন্তু এখন তো সে নিজেই যাচ্ছে না। সব দোষ ওই কালী মেয়েটার হাহ! মনে মনে বৃষ্টি ওই মেয়েটিকেই গালি শোনাচ্ছে৷

_______

রাতটা থাকার জন্য বড় জোরজারি করেও নুপুরকে রাজি করানো গেল না। অর্নিতা বুঝতেই পারছে একটুখানি সময়ে এমন কি হয়ে গেল যার জন্য নুপুর বেঁকে বসলো! প্রথমে তো তার কথাতে রাজিই হয়েছিল রাতটা থাকবে সকালে দাদীর সাথে নাশতা করে তারপর যাবে সে। রিদওয়ানের সাথে কথা শেষ করে অর্নিতা তাকে রুমে খুঁজে পায়নি। নিচে গেলে দেখতে পায় বাগানের দিক থেকে অন্যমনস্ক হয়ে আসছে সে একটু দূরে চোখে পড়লো ভাইয়ার রাগান্বিত মুখটা। কিছু কি হয়েছে দুজনাতে! হবে বোধহয়, রিদওয়ান অনেক আগেই তো বলেছিল ভাইয়া আর নুপুরের মাঝে কিছু চলছে। অর্নিতা এ নিয়ে ঘাটায়নি কাউকে। তার আত্মকেন্দ্রিক স্বভাব আর চিন্তা চেতনাই তাকে বারংবার চুপ রেখেছে। মনে মনে অপেক্ষা করে গেছে সঠিক সময়ের। সময় হলে তারাই কিছু জানাবে কিন্তু আজকের দৃশ্য দেখে ভয় হলো। তারপরই নুপুর কেমন যাওয়ার জন্য উতলা হয়ে গেছে। রিমন ভাইও ঠিক সে সময়ে এসে উপস্থিত হলো বিরিয়ানি নিয়ে। বেশি সময় নেই রিমন আবার অফিসেও যাবে তাই সে দ্রুতই অর্নির সাথে কথা বলে বিদায় নিচ্ছিলো অমনি এসে নুপুর বলল, ‘ রিমন ভাইয়া আমাকে কি সাথে নেয়া যাবে?’

নুপুর ততক্ষণে একদম প্রস্তুত হয়েই সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল৷ রিমন তার সহজাত প্রবৃত্তিতেই জবাব দিলো, কেন নয় সুন্দরী। চলো চলো… ‘

– থেকে যা না নুপুর।

-না অর্নি কাজ আছে বাড়িতে। বাবা ফোন করছে তাড়াতাড়ি ফিরতে।

-থাকো না বুবু অর্ণব আইসা দিয়া…..

দাদীকে থামিয়ে দিয়ে নুপুর বলল, ‘না দাদী রিমন ভাইয়ার সাথেই বাজার পর্যন্ত চলে যাই। বাজারের মোড় থেকে রিকশা নিয়ে চলে যাব।’

অর্নি আর কিছুই বলতে পারেনি। নুপুর চলে গেল সন্ধ্যের অনেক আগেই। অর্ণব লাঞ্চ না করেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। মূলত নুপুরের ওপর রাগ প্রকাশ করতে অপারগ হওয়ায় সে অফিসে ফিরে বসেছিল চুপচাপ নিজ কেবিনে। মাথা ঠান্ডা করে ভেবে নিয়েছে রাতে ফিরে আরেকবার কথা বলবে মেয়েটির সাথে। কাজেকর্মে মন বসলো না তার ঠিকঠাক তাই সন্ধ্যের পরই বাড়ি ফিরে এলো। বাড়িতে নুপুরকে না দেখতে পেয়ে আমতা আমতা করেই অর্নিকে জিজ্ঞেস করলো, তোর বান্ধবী চলে গেছে?

অর্নি বিষ্ময় চেপে মাথা নেড়ে জবাব দিল, রিমন ভাইয়ার সাথেই বেরিয়েছিল।

জবাবটা বোধহয় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ করল অর্ণবকে। ক্ষুরধার মুখটাতে ধার আরো দ্বিগুণ হয়ে উঠলো তার। অর্নি কিছু বলতে চেয়েও চুপ রইলো রিদওয়ানের কথা মনে করে৷ সে তাকে আগেই সতর্ক করেছিল অর্ণব, নুপুরের মাঝে কিছু চলছে এ নিয়ে সে যেন আগ বাড়িয়ে কিছু বলে না বসে কখনো৷ সময় একদিন ঠিক করে দেবে তাদের গন্তব্য।

________

অর্নি চলে গেছে চট্টগ্রামে। নতুন পরিবেশ, পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ততা সেই সাথে রিদওয়ানকেও সময় দেয়া সব মিলিয়ে কিছুটা আলগা হয়েছে সবার সাথে যোগাযোগ। শুরু হয়ে গেছে নুপুরেরও নতুন ভার্সিটিতে ক্লাশ। সে ঢাকারই একটি ভার্সিটিতে থাকতে পেরেছে এই যেন তার জন্য ঠিকঠাক। এখন আর আগের মত উচ্ছ্বসিত সময় কাটে না তার কিছুতেই। ক্লাশ, টিউশন আর বাড়ি এই করেই হাঁপিয়ে উঠেছে অল্প কদিনেই। তারওপর অর্ণবের সাথে শেষ বার হওয়া কথপোকথন মনে হলেই ভেতরটা তার ভেঙেচুরে একাকার হয়ে যায়। লোকটা কি শেষ পর্যন্ত তার দিকে আগ্রহের সাথে আগাতে চাইছে! নইলে অমন করে কেন বলল, ‘ও পাড়াটা ভাল নয় সন্ধ্যের পর বের হলে আমায় নক দিও অথবা আঙ্কেলকে বলবে তোমায় নিয়ে যেতে।’

চলবে

#কোথাও_হারিয়ে_যাব
#রূবাইবা_মেহউইশ
পর্ব-২২

পরের চেয়ে ঘরের শত্রুই ঘাতক হয় বেশি এ কথাটা অর্ণব মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে। চোখ, কান খোলা রেখেও সেইসব শত্রুকে প্রতিরোধ করা মুশকিল এ কথাও তার জানা। বিগত সময়গুলোতে খুব সতর্কতার সাথে সে খুঁজে বেরিয়েছে তার মূল শত্রু কে আর কেন? সন্দেহের তীর বংশেরই লোকদের ওপর ছিল কিন্তু তারা ঠিক কতটুকু খতরনাক তা ঠাওর করতে পারছিলো না। অর্নিকে নিয়ে মস্ত যে ভয় ছিল তা এখন নেই অনেকটা। খালুজান ছেলের বিয়ে নিয়ে রুষ্ট এ কথা তার জানা তবুও মন বলে ঠিক হয়ে যাবে সব৷ কিন্তু ঘরকোণের শত্রুর বিষদাঁত কেমন করে খুজেছে বের করবে সে! ব্যাংক লোন ক্যান্সেল হওয়ার ঘটনা ঘটেছে আরও দশ কি এগারো মাস আগে তখন অর্নি ঢাকাতেই ছিল। সে নিয়মিত কলেজে যেত আর তখন আতঙ্ক ছিল কেউ অর্ণবকে ফলো করে। অর্নিতার কলেজের আশেপাশেও দেখা গেছে সেই লোকটাকে তাতে শতভাগ নিশ্চিত হয়েছিল বিপদ শুধু তার একার নয় বরং তার বোনের আশেপাশেও ঘুরছে৷ সন্দেহ দূর করতে আর বিপদ এড়াতেই অর্ণব নিজে একজনকে রেখেছিল অর্নিতার সেফটির জন্য তবে লোকটির কাজ ছিল আড়ালে থেকে অর্নিকে নিরাপদ রাখা। এরই মাঝে ঘটে গেছে কতশত ঘটনা। অর্ণবের লোন ক্যান্সেল হওয়া, জমির দলিলের আসল কপি গায়েব, শিবলীর সাথে অর্নিতার বিয়ে ঠিক হওয়া, রিদওয়ানের সাথে বিয়ে হওয়া এসবের মাঝে হঠাৎই অর্ণবের উপলব্ধি হলো বিপদ কেটে গেছে। আদৌও কেটেছে কিনা তখনও অর্ণবের সঠিক জানা নেই সে মনের কথাটাই ঠিক ধরে নিয়েছিল। তার ধরে নেওয়া ভাবনাটা যে কতবড় ভুল ভাবনা তা সে আজ টের পেল নুপুরের সাথে দেখা করার সময়। আজ হঠাৎই তার মনে হলো নুপুরকে সে মিস করছে। যেন তেন মিস নয় একেবারে অন্তর পুড়ে যাওয়া কমতি যাকে বলে ঠিক তেমনটাই অনুভূতি। গত কয়েকদিন জোর জবরদস্তিই সে চেষ্টা করছিলো মেয়েটাকে মন থেকে সরিয়ে ফেলতে। তার সেই চেষ্টাই বিফল হলো শেষ অব্ধি। যত ভুলতে চায় ততই মনে পড়ে আর এটাই স্বাভাবিক। আমরা ভুলে থাকার চেষ্টায় প্রতিনিয়ত মনে করতে থাকি এই জিনিসটাই বুঝে উঠতে পারি না। পরিচয়ের শুরু থেকে কড়া দৃষ্টিতে অবহেলা করা, এড়িয়ে চলা মেয়েটা শক্ত খুটির ন্যায় কবে যেন গেড়ে বসলো অর্ণবের হৃদয়ে টের পেলো না সে। আর তাতেই আজ উতলা হয়ে পৌঁছে গেল নুপুরের ভার্সিটির সামনে। বাইক দাঁড় করিয়ে দাঁড়িয়েছিল গেইটের এক পাশে। জানা নেই কখন নুপুর বের হবে তাই প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিল ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করার। তার অপেক্ষায় সময় খুব বেশি লাগেনি৷ ঘন্টা খানেক পর প্রায় কড়া রোদের দুপুরটাতেই দেখা মিলল শ্যামাকন্যার। নুপুর উদাস মুখে, শুষ্ক চোখে দৃষ্টি নিচে রেখে বের হতেই কানে এলো অর্ণবের ডাক, নুপুর!’

এই প্রথম! হ্যাঁ পরিচয়ের বছর আড়াই কি তিনের মাঝে এই প্রথমই বোধহয় অর্ণব তাকে নাম ধরে ডাকলো৷ এই ডাক কান পেরিয়ে অন্তস্থলের গভীরে কোথাও গিয়ে স্পর্শ করলো নুপুরের। গায়ে, পায়ে শিরশিরে অনুভূতি, হৃদস্পন্দনেও উঠলো ঝড়। ঝংকার তোলা স্বরের স্পষ্ট উচ্চারণ, নুপুর! এই ডাক শুনে জবাব দিতেও যেন ভুলে গেল সে। জবাবের অপেক্ষা না করে অর্ণব এগিয়ে এসে বলল, ‘টিউশনি আছে এখন?’

মাথা নেড়ে না জানায় নুপুর।

-একটু কথা ছিল আমার একটু সাথে আসবে?

আগের বার ঠিক এমন করেই বলেছিলো না লোকটা, ‘কথা ছিল আমার একটু নিচে আসবে?’
ভয় হলো সেদিনের মত আবারও বলবে না তো কেন জ্বালিয়ে মারছো আমায়। এখন তো সে আর অর্ণবকে কল, মেসেজ দেয় না৷ সেদিন অর্নি যখন বারান্দায় ফোনে কথা বলায় তখন অর্ণবের ডাকে নুপুর নিচে গিয়েছিল। বসার ঘরে তারা ব্যতিত অন্য কেউ ছিল না। অর্ণব কোন ভণিতা না করে সরাসরিই বলে বসল, কেন জ্বালিয়ে মারছো আমায়? আগে বারণ করতাম তবুও কল, মেসেজ দিয়ে বিরক্ত করতে। বিরক্ত করতে করতেই একদিন আমার অভ্যাসে জায়গা নিয়ে এখন আবার ঢং জুড়েছো আমাকে এড়িয়ে চলার! ফাজলামো পেয়েছো, সবকিছুই ফাজলামো মনে হয়! নুপুরের মন সতর্ক করলো তাকে দরকার নেই লোকটার কথা শোনার।

– আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে এক্ষুনি।

-আমি বেশি সময় নেবো না।

-একটুও দেরি করা যাবে না বাবা ফোন করেছে জলদি ফেরার জন্য।

প্রতিটা কথা নুপুর অন্যদিকে তাকিয়েই বলেছে৷ অর্ণবের মনে হলো ইচ্ছে করেই দৃষ্টি লুকিয়েছে নুপুর। সে আর জোর করেনি তাকে নুপুরও দ্রুত চলে গেল জায়গাটা থেকে। নুপুরের প্রস্থানের পরই অর্ণবের চোখে পড়লো রাস্তার বিপরীতে থাকা একটি লোককে। অনেকদিন পর দেখলেও তার চিনতে ভুল হয়নি এই বেঁটেখাটো লোকটিকে। এই লোক তাকে অনেকবার ফলো করেছিল সে কয়েকবার লোকটাকে ধরার চেষ্টা করেও ধরতে পারেনি। আজ আর সময় নষ্ট না করে সে দৌড়ে নেমে গেল রাস্তায়। নুপুরের এড়িয়ে যাওয়াটা তাকে খুব পীড়া দিচ্ছে সেই সাথে পুরনো এই শত্রুপক্ষের নজরদারি তাকে শঙ্কিতও করলো। হঠাৎই খেয়াল হলো তার পাশে নুপুরকে দেখে ফেলল নাতো! তার সাথে সাথে মেয়েটিরও বিপদ হবে নাতো আবার? সে আর কিছুই ভাবতে পারে না দিক বিদিক ভুলে লোকটাকে ধরতে এগিয়ে যায় সামনে। রাস্তার দু পাশ থেকে চলন্ত গাড়ি ছুটছে তাও যেন চোখে পড়লো না। রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশে পৌছানোর ঠিক আগেই ঘটলো ঘটনাটা। ডান পাশ থেকে দ্রুত বেগে ছুটে আসা সিএনজির ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়লো অর্ণব কিছুটা দূরে। মুহূর্তেই লোকের ভীড় জমে গেল রাস্তায়। অর্ণব শুধু বোকার মত তাকিয়ে রইলো তাকে ঘিরে রাখা মানুষগুলোর দিকে।

_______________

কাঁদতে কাদতে টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার গুছিয়ে নিচ্ছে বৃষ্টি। আধঘন্টারও বেশি সময় ধরে চলছে এই কান্না আর রিমনের ধমক। কাল শেষ রাতে ঢাকায় ফিরেছে অর্নিতাকে নিয়ে সেই মেয়েও কান্না করে কানে তব্দা লাগিয়ে দিয়েছে আজ আবার বৃষ্টি! মেজাজের পারদ উঁচুতে উঠছে তার এখন। অর্ণবের এক্সিডেন্টের খবর পেয়ে রিমনই করছে সকল ছুটোছুটি। কাল ঘটনাস্থল থেকে কেউ একজন অর্ণবের ফোন অক্ষত অবস্থায় পেয়ে কল করেছে তাকে। সর্বশেষ কলটা তারই ছিল ব্যক্তিগত কোন কাজে তাই রিসেন্ট কলে তাকেই পেয়েছে লোকটা। কিন্তু দূর্ভাগ্য তাকে দূর্ঘটনার কথা জানালেও ফোন আর ফেরত দেয়নি। সে যাহোক, যথাসময়ে খবর দিয়েছে এই ঢের। রিমন নিজেই গিয়ে অর্নবকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। পায়ের হাড়ে চির ধরেছে, হাত ভেঙেছে সেই সাথে ডান গালটাও চোট পেয়েছে ফলে হাত, পায়ে প্লাস্টার আর মুখটা ফুলে ঢোল হয়ে আছে৷ সন্ধ্যের মধ্যেই তার চিকিৎসা প্রদান সম্পন্ন হলেও জ্ঞান ফিরেছে আজ ভোর চারটার দিকে। কাল তাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে দিয়েই সে আবার ফ্লাইট ধরে চট্টগ্রাম গিয়েছে অর্নিতার হলে। ফিরতেও চেয়েছিল ফ্লাইটেই কিন্তু সম্ভব হয়নি বিধায় ক্যাব নিয়ে রাতভর জার্নি করেছে। সারা রাস্তা অর্নি কেঁদেকেটে হয়রান। হাসপাতে পৌঁছে অর্নিকে রেখে বাড়ি ফিরে ঘন্টা দুই ঘুমিয়ে আবার ছুটেছে অফিসে। দুপুরে বাড়ি ফিরে গোসল সেরে লাঞ্চ করতেই কানে এলো বৃষ্টির কান্না। রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে খাবার গোছাচ্ছে আর নাকি সুরে কাঁদছে কারণ জিজ্ঞেস করলে জানতে পারলো অর্ণব ভাইয়ার কথা মনে করেই কাঁদছে। সেই থেকে আধ ঘন্টা পেরিচ্ছে চলছেই কান্না৷ রিমন নিজের ঘরে ফিরে গাড়ির চাবি আর ফোন নিয়ে বৃষ্টিকে ডাকলো, ‘কান্না শেষ হলে বের হ আমি আর দেরি করতে পারবো না আর।’

চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দ্রুত নিজে ঘরে ঢুকে মুখে সানস্ক্রিন, ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিলো বৃষ্টি। আর যাইহোক অর্ণব ভাইয়ার সামনে সে কোন অবস্থাতেই অগোছালো, অসুন্দর হয়ে যেতে চায় না। নিচে থেকে গাড়ির হর্ন কানে আসছে। রিমন এবার পুরোপুরি বিরক্ত। আর দেরি করা চলে না তাই এবার একরকম দৌড়ে বের হলো টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই কান্না থেমে গেছে বৃষ্টির। অর্ণবকে পাওয়া গেল ঘুমন্ত অবস্থায়। এনেস্থেসিয়ার ঘোর এখনো পুরোপুরি কাটেনি বলেই হয়ত ঘুমেই সময় পার হচ্ছে তার। মুখটা এখনো কি ভীষণ ফোলা! বৃষ্টির আনা খাবার খেয়ে রায়না বেগম একটু পিঠ ঠেকিয়েছেন চেয়ারে৷ অর্নিকে জোর করেই বৃষ্টি একটুখানি খাবার খাইয়ে বাড়ি পাঠালো। রাত অবধি এখন বৃষ্টি আর রায়না বেগমই থাকবেন এখানে। রাতে বাশার শেখ এলে সাথে যাবেন তারা রাতটা রিমনই থাকবে সাথে এমন কথা হয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যের পর আর তা হলো না। হাসপাতালে ঔষধের গন্ধে বৃষ্টি টিকতে পারে না বিকেলেই শুরু হলো মাথাব্যথা। বাধ্য হয়েই তাকে নিয়ে রায়না ফিরে গেলেন বাড়িতে৷ সন্ধ্যের পর আর জোর করেও অর্নিকে বাড়িতে রাখা গেল না। কান্নাকাটি করে দাদীকে বুঝিয়ে একাই চলে এলো হাসপাতালে ভাইয়ের পাশে থাকবে বলে। এরই মাঝে একবার নুপুরের সাথে কথা হওয়ায় নুপুর জানতে পারলো অর্ণবের দূর্ঘটনার কথা। ঘটনার মোটামুটি ব্যাখ্যা শুনতে বুকের ভেতর যন্ত্রণা বাসা বাঁধলো। ঘটনার সময় তার সাথে দেখা হওয়ার সময়টা তারমানে কি দেখা হওয়ার পরই হলো! নিজের মনকে বোঝাতে লাগলো অনেক কিছুই মন কি বুঝলো তার কথা? বোঝেনি একটুও বরং অন্তর্দাহ তাকে এক কদম এগিয়ে নিলো অর্ণবের দিকে। কোন দিক বিবেচনা না করেই বাবার কাছে মিথ্যে বলে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। পরনে ছিল বহুদিনের পুরনো এক জামা তার ওপরই ওড়না বদলে কোনরকমে বেরিয়ে এলো সে। সন্ধ্যার পর বান্ধবীর বাড়ি যাওয়ার কথাটা ঠিক হজম হলো না বাবা আর ছোট মায়ের। নাজিম সাহেব মেয়েকে কষ্ট দিতে চাননা বলেই রাজি হলেন তবে তিনি চাইলেন নিজেই পৌঁছে দিয়ে কথা বলে যাবেন অর্নিতার সাথে। সে সুযোগ আর নুপুর তাঁকে দেয়নি। মেয়ের কথামতো নাজিম সাহপব নুপুরকে নিয়ে এলেন অর্ণবদের বাড়িতে। নুপুরই বলেছে অর্নি ঢাকায় এসেছে দুদিনের জন্য তাই খুব করে চাইছে নুপুরকে সাথে রাখতে। নুপুরের মিথ্যে বলার ধরণটা পাকা না হলেও বাবা মেনে নিলেন। বিপত্তিটা হলো অর্ণবদের বাড়ির গেইটে। রিকশা থেকে নেমেই নুপুর বলল, তোমার তো দেরি হয়ে যাবে বাবা তুমি চলে যাও বাড়ি পৌঁছে কল দিও আমায়।

এইটুকু কথার পর আর একটুও দাঁড়ায়নি নুপুর তাতে যেন আরও বেশি সন্দিগ্ধ হলেন নুপুরের বাবা। তিনি পুনরায় রিকশায় চড়ে চলে যেতেই নুপুর গেইট পেরিয়ে আবারও এলো রাস্তায়। সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত নেমেছে শহর জুড়ে। রাস্তার ধারে সোডিয়ামের কৃত্রিম আলোয় রাস্তাঘাট হলদে সাজে সজ্জিত। ভেতর ভয়ে অন্তর পুড়ছে অথচ শরীর জুড়ে সীমাহীন কাঁপন। এ কাঁপুনি শুধুই কান্না চাপা দেওয়ার সাক্ষী। মিনিট কয়েক নিশ্চল দাঁড়িয়ে থেকেই যেন নিজের অস্তিত্বে বিস্বাদ অনুভব করছিলো নুপুর। তারপর…. পরের সময়ুটুকু জোর করেই নিজেকে এগিয়ে নিলো রিকশায়, রিকশা থেকে হাসপাতাল আর তারপর প্রিয় সেই জল্লাদমুখো প্রাণসখার কেবিনের সামনে। ঘড়ির কাঁটা তখন টিকটিক করে জানান দিচ্ছে আটটা বাজার কথা। ঝোঁকের বশেই হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে চলেই এসেছে সে হাসপাতালে কিন্তু এরপর কি! এতক্ষণে যেন হুঁশ ফিরলো তার৷ প্রিয় বান্ধবীর ভাইয়ের দূর্ঘটনা শুনে এই তমসাঘেরা রাতেই সে এভাবে ছুটে এলো! এমনটাই কি হয়! হতে পারে! কিন্তু এখন কি হবে চলে তো এসেছে তবে কি ফিরে যাবে আবার? কাল না হয় দিনের আলোয় এসে দেখে যাবে। মন যে মানে না অথচ মস্তিষ্ক তাকে সতর্ক করছে ফিরে যা নুপুর। মন, মস্তিষ্কের চরম লড়াইয়ে যখন মস্তিষ্কের জিত হলো উল্টো ঘুরে ফিরে যেতে উদ্যত হলো নুপুর ঠিক তখনই ডাক এলো, নুপুর!

আহ্ বড্ড মিল তাদের দু ভাই বোনের। একই সুরে, একইরকম জোর খাটিয়ে ডেকে ওঠে তারা। নুপুরের শক্তি কই এমন ডাক উপেক্ষা করার? সে পিছন ফিরলো। কফি হাতে অর্নিতা ভাইয়ের কেবিনেই ঢুকতে যাচ্ছিলো।

-তুই কখন এলি?

-আমি… আমি মাত্রই এসেছি।
চোখে-মুখে সংকোচ, ঠোঁটে তার জড়তা।

-তাহলে ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস?

– ওদিকে তো… আসলে রিকশাওয়ালাকে দাঁড়াতে বলতে ভুলে গেছি তাই ভাবলাম….

অর্নিতা জানে তার ভাইকে নিয়ে প্রিয় এই বান্ধবীটির মনে কি চলে। তাই আর ঘাটাতে না চেয়ে সহজ করলো আলাপটা।

-থাক, চলে যাক রিকশা। রিমন ভাই আসবে আবার তিনিই না হয় ব্যবস্থা করবে একটা।

-আচ্ছা।
আর কথা বাড়ায়নি কেউ বরং অর্নিতা ইচ্ছে করেই নুপুরকে কেবিনে পাঠিয়ে আবারও গেল ক্যান্টিনে। নুপুরের জন্যও এক কাপ কফির উছিলায় অনেকটা সময় বসে রইলো নিচে। নুপুর কেবিনে ঢুকে বিছানায় তাকালো। লম্বা, চওড়া মানুষটা যেন অসুস্থ হয়ে আরো বেশিই লম্বা হয়ে গেছে। পা থেকে মাথা অবধি পলক ফেলেই ডুকরে কেঁদে উঠলো নুপুর। কালও তো তার সামনে ছিল সটান দাঁড়ানো গম্ভীর মুখে কপাল কুঁচকে। আর আজ! জ্বলে যাচ্ছে অন্তর এ কেমন বেদনা। যার সাথে প্রণয় নেই আর না ভাবের সম্পর্ক অথচ একতরফা ভালোবাসায় কি ভীষণ যন্ত্রণা তার জন্য ! কান্না চাপার চেষ্টা করেই আরেকটু এগিয়ে অর্ণের মাথার কাছে দাঁড়ালো নুপুর। আলতো হাতে স্পর্শ করলো অর্ণবের ফোলা মুখটা। গাল ছুঁয়ে, কপাল ছুঁয়ে আনমনে চোখ বুঁজলো সে। তাতেই যেন চোখের কার্নিশ ছুঁয়ে টুপ করে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো অর্ণবের চোখের পাতায়। খানিকটা কেঁপে উঠলো চোখের পাতা ঘুমের রেশও কাটতে লাগলো একটু একটু। নুপুর খেয়াল করলো না তা। কোনদিক না দেখেই সে করে বসলো দুঃসাহসিক একটি কাজ। একটু ঝুঁকে ঠোঁট ছোঁয়ালো অর্ণবের কপালে। বুঝতেই পারলো না তার অধর পল্লবের উষ্ণ ছোঁয়া ঘুমন্ত মানুষটির ঘুমকে কেমন তাড়িয়ে দিয়েছে ফু দিয়ে। সে জানতেই পারলো না তার এই চুম্বনের স্বাদ যেমন অনুভব করেছে ঘুমন্ত মানুষটা তেমনই সেই দৃশ্য দূর থেকেই দেখে নিয়েছে আরও একজন।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে