কে কোথায় যায়? পর্ব ২৭
আজকে রাফি,নীহারিকা,ভোর ও রুদ্র খুব সকালে বের হয়েছে। ওদের এবারের গন্তব্য হা ভ্যালি। থিম্ফু শহর থেকে যত দূরে গিয়েছে,ভুটানের আসল সৌন্দর্য তত দেখতে পেয়েছে। আকাশে এক গুচ্ছ মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে উদ্দেশ্যহীন হয়ে।ভোর লেডিস জিন্স ও টপস পড়েছে।চুল বিনুনী বাধা।চারিদিক দেখতে দেখতে সে রুদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
———-‘টুরের আগে ছবিতে যা দেখেছি তার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর। এমন দেশ আর পাওয়া যায়?’
নীহারিকা ভ্রু কুচকিয়ে বলল,
———‘রুদ্রকে ক্যান জিজ্ঞেস করছো?আমাকেও তো জিজ্ঞেস করতে পারতে।’
রাফি বলল,’আরে বাদ দাও তুমি,ওর যারে ইচ্ছা জিজ্ঞেস করুক।’
রাস্তায় কোন এক দোকানে ব্রেক দিয়ে নাস্তা সেরে নিল ওরা। ভুটানে সবচেয়ে বেশী সমস্যা হয়েছিল খাবার নিয়ে। তাদের ট্রেডিশনাল খাবার খেতে ভোর আর নীহরিকা পারেনি কেমন একটা গন্ধের জন্য। তাই অনেক সময় ইন্সট্যন্ট নুডলসের উপর নির্ভর করতে হয়েছে।
ওদের প্রথমে পুনাখা যাওয়ার প্লান ছিল তবে স্থানীয় কিছু মানুষের সাথে পরামর্শ করে হা ভ্যালির উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করল। থিম্ফু থেকে হা ভ্যালী যাওয়ার রাস্তাটা অসাধারন।
নীহারিকা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ভোর গাড়িতে বসে লাফাতে লাফাতে বলল,
———‘কি সুন্দর!অপূর্ব সৌন্দর্যের লীলাভূমি।’
সারি সারি পাহাড় দেখতে দেখতে হা ভ্যালির চলে আসে ওরা। হা ভ্যালি মুলত কোন পর্যটন কেন্দ্র নয়। এটি ভুটানের একটি ছোট্ট শহর। চারদিকে উচু উচু পাহাড় আর পাহাড়ী নদীর তীরে অবস্থিত একটি লোকালয়।
হা ভ্যালীতে আসতে আসতে প্রায় দুপুর হয়ে যায়। ওরা খাবার খাওয়ার জন্য হোটেল খুজতে থাকে। কিন্তু খাবার দেখে আর খেতে ইচ্ছা করতেছিল না। একটা রেস্টুরেন্টে পেয়ে গেল ফ্রাইড রাইস । তারপর দুপুরের খাবার খেয়ে হা নদীর ধারে কিছুক্ষন কাটাল। তারপর গেল ঝুলন্ত ব্রিজে । এখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে চলে যায় চেলালা পাস এর উদ্দ্যেশ্যে। চেলালা পাস যেতে হলে ড্রাইভারকে ১৫০০-২০০০ রুপী অতিরিক্ত দিতে হয়।
পারো ও হাভ্যালীর মাঝামাঝি অবস্থিত চেলালা পাস ভুটানের হাইয়েস্ট মটরেবল পাস। অর্থাৎ গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় এমন পাসের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ। এর উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৩৯৮৮মিটার অর্থাৎ প্রায় ১৩ হাজার ফুট। আর হা ভ্যালীর উচ্চতা সারে আট হাজার ফুট। অর্থাৎ ওরা এখন প্রায় সারে চার হাজার ফুট উপরে উঠবে।
চেলালা পাস পৌছার পর আমরা গাড়ি থেকে নেমে কিছুক্ষন চারপাশটা দেখে নিল। তারপর আরো উপরের দিকে হেটে উঠতে লাগল। যত উপরের দিকে যাচ্ছিল তত বেশী ঠান্ডা লাগছিল। জুন মাসেও মনে হচ্ছিল মাঘের শীত। শীতের কাপড় নিয়ে গিয়েছিল তবে সেটি ব্যাগে ছিল। বুঝতে পারেনি উপরে এতটা ঠান্ডা লাগবে।
আকাশ পরিস্কার থাকলে চেলালা পাস থেকে চীনের জমলহরি মাউন্টেন দেখা যায়। প্রথমে ওরা বরফে ঢাকা জমলহরি পর্বত দেখেছিল কিন্তু কিছুক্ষন পরে আবার এটি মেঘে ঢেকে গিয়েছিল। চেলালা পাস দেখা শেষ করে চলে যায় পারো শহরে।
ওখানে গিয়ে মুগ্ধ। সব যেন অদ্ভুত,অন্যরকম।শহরের লোকের ব্যাবহারও মুগ্ধকর।একজন অধিবাসী ওদের নিয়ে নিজ গৃহে চা খাওয়ালো।ভোর চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,
———‘ইটস সো টেস্টি।থ্যাংক ইয়ু।’
মহিলা হাসলো।হেসে সে ধন্যবাদের জবাব দিল।হাসিতেই জবাব,কি অদ্ভুত!
ভুটান আসলেই শান্তির দেশ।অন্যরকম প্রশান্তির দেশ।আজ তো চলে যাবার শেষ দিন,কাল দিনে ওরা নিজ দেশের জন্য রওনা দিবে।নীহারিকা, রাফি হাটছিল।রুদ্র আজ খানিকটা ভীত লাগছে।ভোর তার পা দিয়ে হাটছিল।রুদ্র কাপা কাপা গলায় বলল,
———-‘একটা কথা ব-বলি?’
ভোর মৃদু হেসে বলল,
———-‘বলুন।’
রুদ্র কাপা কাপা গলায় আবার বলল,
———‘আই ল-ল-ল।’
ভোর হাসতে হাসতে বলল,
———‘ল-ল?হিহিহি,কি ভাষা এটা?উর্দু?’
রুদ্র দাতে দাতে চেপে বলল,
———‘আই লাভ ইউ ভোর!’
কথাটা কানে যেতেই সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল ভোরের।মৃদু বাতাস বইতেছে।আকাশ ক্রমেই নীল থেকে নীলতর হচ্ছে।পানির ধ্বনি স্পষ্ট কানে আসছে।চুল উড়ছে,মন দুলছে।এ কেমন মায়াজাল?এ কেন এত গভীর?কেন এত টান বাড়ায়,কেন এত গভীরে নিয়ে যায়?ভোর কি ছাড় পাবে আর?
চলবে……
©ইভা আহমেদ চৌধুরী
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/