কে কোথায় যায়? পর্ব ১১

0
680

কে কোথায় যায়? পর্ব ১১
নেটওয়ার্কের সম্পূর্ণ বাহিরে, নির্জন ও শব্দ বিহীন দেবতাখুম, কি এক ভুতুড়ে পরিবেশ! বিন্দুমাত্র কোনো শব্দ নেই এখানে। শব্দ না থাকার ফলে যখন কেউ তার শাস- প্রশ্বাস নিবে তার শব্দও কানে বিঁধে যায়।
আশেপাশের বিশাল পাহাড়ের আনাচে কানাচে সরু ও সংকীর্ণ তৈরী আঁকাবাঁকা সুন্দর পথ। যে পথের সাহায্যে মানুষ তার নিজ চোখে দেবতাখুমের সৌন্দর্য দেখে উপভোগ করতে পারে। এই পথ পাড়ি দিতে হয় ভেলায় করে। মূলত দেবতাখুমের প্রধান বৈশিষ্টই হচ্ছে তার বুক চিড়ে ভেলার চলাচল..
অসম্ভব রকমের এডভেঞ্চার, একেবারে মনকে ভয়ার্ত করে দিতে পারে, যাকে বলে তার জন্য পারফেক্ট দেবতাখুম। ট্রেকিং, এডভেঞ্চার, রিস্ক, ভেলার কায়াকিং সবকিছুর কম্বো এই দেবতাখুম। একেবারে নেটওয়ার্ক এর বাইরে এক ভিন্ন পরিবেশ। অাশেপাশে সব সুনসান! শব্দ হিসেবে থাকবে উপর থেকে পানির ফোটা পরার শব্দ, নিজেদের ভেলার অাওয়াজ অার অাপনার কথারই প্রতিধ্বনি! অার পানি এতটাই ঠান্ডা যে অাপনার হিমশীতল শরীরকে অারো ভয়ার্ত করে তুলবে। পানির টেম্পারেচার মোটামুটি ১০ ডিগ্রীর মধ্যে! অাশেপাশের পরিবেশটা এত ভুতুড়ে অার নিরবতার যে এটা সত্যি সত্যিই রিয়্যল এডভেঞ্চারে নিয়ে যাবে। এটা শুভাদের গ্রুপের অনেকের কাছেই এখন পর্যন্ত লাইফের ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট এডভেঞ্চার! বড় বড় দুই পাহাড়ের মাঝখানের এই খুম(গর্ত/যেখানে পানি জমে) ভিতরের দিকে একদমই অন্ধকার। সূর্যের অালো খুবই সংকীর্ণ। স্থানীয়দের মতে এই খুমের গভীরতা প্রায় ৬০ মিটারের বেশী। শীতে অবশ্য পানি কম থাকে।
দেবতাখুমের সৌন্দর্য বড়ই মনোমুগ্ধকর এবং রহস্যময়। পানি বেশ স্বচ্ছ, রং সবুজ। দুই পাহাড়ের পুরো পাথর ছোটবড় শ্যওলা এবং লতাপাতা দ্বারা অাবৃত। খুমের কোথাও কোথাও একটু অন্ধকার অার একেবারেই সুনসান এই খুম।
শুভা আর তামিম এক ভেলায়!শুভা এমন ভয়ংকর স্থান আগে কখনো দেখেনি।গা যেন শিউরে উঠছে ওর।খানিক পর পর খামচি দিচ্ছে তামিমকে শুভা!
তামিম বিরক্তি নিয়ে বললো,
——‘খামচি দিয়ে দিয়ে লাল করে ফেলেছিস!’
শুভা কাপা কাপা গলায় বললো,
——-‘দোস্ত,চারদিক দেখছিস না?ও মা মাগো!’
তামিম সরু চোখে তাকালো শুভার দিকে।ফর্সা গাল লাল হয়ে গেছে!দীঘল কালো চোখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট!আকস্মিক তামিম শুভার গালে একটা চুমু খেলো।শুভা হতচকিত হলো!হতচকানে কন্ঠে বললো,
——‘দোস্ত তু-তুই কি-কি করলি এএটা?’
তামিমও এমন কাজে লজ্জিত! এমন তো করার কথা ছিল না ওর, তবে?শুভা খানিকটা সরে বসলো তামিমের কাছ থেকে।ছেলেটা কি ওকে ভালোবাসে চুমু খেয়েছে না আবেগে?শুভা ভাবতে লাগলো!
দেবতাখুম অাসলে কয়েকগুলো স্টেপে। প্রথমে ভেলা পাড়িয়ে স্টেপগুলো এগুতে হবে। স্টেপগুলো ভিতরের দিকে অার বেশী ভয়াবহ। স্থানীয়রাও এখনো দেবতাখুমের সম্পূর্ণ ভিতরে প্রবেশ করেন নাই। ইভেন অনেকেই এখনো দেবতাখুম চিনেনও না। দেবতাখুম বর্ষাকাল অার শীতকালে অালাদা। বর্ষায় প্রচুর পানি থাকে। তখন একেবারে কচ্ছপতলী থেকে বোট নেওয়া যায়। শীতকালে হেটে যেতে হয় শেয়ালপাড়া পর্যন্ত, শেয়ালপাড়া কচ্ছপতলা থেকে ২ কি.মি. দূরে। এখানে প্রথমে হেটে যেতে হবে। এই পথটাতে মাঝে একটু সাপের ভয় অাছে।
শুভ ও তামিমের সামনেই একটি সাপ পরেছিল।
শুভা এটা দেখে চিৎকার করে উঠলো!তামিমের সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছা ছিল না তার তবুও সেও ভয়ে তামিমকে জড়িয়ে ধরলো!দু’জনই শরমে শরবত!কেমন একটা গিলটি ভাব হচ্ছে ওদের মাঝে!
ওদের সাথে যিনি ছিলেন এক স্থানীয় লোক, উনি দৌড়ে সেই সাপটি মারার ট্রাই করছিলেন।
তামিম কৌতুহলবশত লোকটাকে জিজ্ঞেস করে,
——-‘মারতেছেন যে?’
জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,
——–‘স্থানীয়রা সাপগুলো মেরে খেয়ে ফেলি আমরা স্থানীয়রা!’
শুভার বমি বমি ভাব চলে আসে!তামিম খোচা মেরে বলে,
——–‘ওরকম বমি ভাবটা কিন্তু ওইরকম মহিলারাও করে না।’
শুভা ভ্রু কুচকে বললো,
——‘কোন মহিলারা?’
তামিম তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,
——-‘বাকিটা নিজে বুঝে নে!’
দেবতাখুমের বেলায়ও স্থানীয়দের মুখ থেকে এরকম শুনা যায়। একসময় নাকি দেবতাখুম পুরোটাই শ্বাপদসংকুল ছিল। স্থানীয়রা এগুলো মেরে ফেলেছে। এখন সবই বিলুপ্তি প্রায়। দেবতাখুম নামের কারণ হল কোনো এক বৃদ্ধা নাকি একবার বিশালাকৃতির এক মাছ দেখছিলেন এই খুমে। বৃদ্ধা এই বিশালাকৃতির মাছকে দেবতানামে অাখ্যায়িত করেছিলেন। তখন থেকে এর নাম দেবতাখুম!
পুরাই লোমহর্ষক জার্নিং!তবে খুব ভালোই লাগছে দু’জনের!এমন অনুভূতি যে কারো জন্য ওরা ফিল করেনি।শুভার মুখে এক চিলতি হাসি ফুটে উঠলো। শুভা ভাবলো, এই মানুষের এত কাছে আসার ভাগ্য কি ওর কাম্য ছিল?
চলবে…..
©ইভা আহমেদ চৌধুরী
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে