কে কোথায় যায়? পর্ব ২৪
——–‘দোস্ত, তুই আর আমি?হোয়াই?অন্য সবাই কোথায়?’
তামিম শুভার কথার জবাব দিবার দায়িত্ব নিজ কাধে নিল না।শুভা আবার জিজ্ঞেস করল,
———‘ওরা কোথায়?’
তামিম এবার ছোট্ট করে বলল,
———‘গেছে।’
শুভা হতচকিত।হতচকানো কন্ঠে বলল,
——–‘কই গেছে?গাড়িতে নেই কেন?বল।’
তামিম বলল,
——–‘ওরা ভুটান আর আমরা রওনা দিয়েছি কলকাতার উদ্দেশ্য। কেন তোর মনে নেই?’
শুভা ভাবলো।
——-‘না তো,ওরা আসবে বলেছিল।’
তামিম নির্বিকারভাবে বলল,
——–‘আসেনাই তো কি করবি?এত পথ ফিরে আবার আনতে যাবি ওদের?’
শুভা সরু গলায় বলল,
——–‘তাই করব।চল,ফিরে চল।’
তামিমের গলা শুকিয়ে গেল।জিভে জল এনে বলল,
———-‘ইন্ডিয়া এসেই পড়লাম।প্লিজ দোস্ত আর প্যাঁচাল পারিস না,ঘুমা।’
শুভা চুপসে গেল।তামিমের কাধে মাথা রাখল।
তখন বাজে প্রায় ৮টা। ইন্ডিয়ার মাটির স্পর্শ পেল দুজন। দেশের বাইরে কোথাও এই প্রথম পা রাখল একাকি এই দুই মানুষটা। ইন্ডিয়ার সাইডের বাসে উঠে পড়ল। কিছুক্ষণ পরেই বাস ছেড়ে দিল। বাংলাদেশের সাইডের বাস বর্ডার পর্যন্ত এসে থেমে যায়। ইন্ডিয়ার পার থেকে ঐ কোম্পানীরই আরেকটি বাস যায়। তবে এসি বাসগুলো শুনেছে ডিরেক্ট যায়। ইন্ডিয়ার সাইডের বাসটি এসি এবং ভেতরে বসতেই ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি ভাষায় যাত্রীদের কথা শুনলাম।
শুভা গোমড়া মুখ করে বলল,
——-‘ওরা যে কি করেতেছে।’
মাঝখানে খানিক নিরবতা।
৪ ঘন্টার বেশি জার্নি শেষে বাস তাদের নামিয়ে দিলো। কোথায় নামালো ঠিক জানে না শুভা। সেখান থেকে হাটা দিল। আগে থেকে হোটেল ঠিক করা হয়নি। একজন লোক হোটেলের খোজ দেবার জন্য এগিয়ে এলো। তার সাথে হোটেল দেখতে গেল দুজন। ৩টি হোটেল দেখাল দুজন!তামিম হোটেল পছন্দ করার দায়িত্ব শুভাকে দিল।শুভা পরপর তিনটা দেখার পর বলল,
———‘হোটেল ম্যাজেস্টিক ইন্টারন্যাশনাল’ শুভার এই হোটেল পছন্দ হলো। এটি রাফি আহমেদ খির্দওয়া স্ট্রিটে। বুঝা গেল এটি মুসলিম এরিয়া। এখানের হোটেলগুলোর লিফট খুবই অদ্ভুত। লিফটের দরজায় কাচিগেইট থাকে। একটি বাইরের গেট আরেকটি লিফটের সাথে লাগানো ভেতরের গেইট। দুইটি গেইট টেনে বন্ধ করলে তবেই লিফট চলা শুরু করবে। লিফট চলা শুরু করলে দেখা যায় যে ফ্লোর পার হচ্ছি একটি একটি করে। লিফটের গেট থেকে হাত বের করলো তো মরলো!
রুমের চাবি নিয়ে দুজন রুমের দিকে হাটা দিল।দরজা খুলতেই দুজন অবাক!কি সুন্দর সব!
শুভা চারদিক দেখল।রুমের সাথে একটা বারান্দাও আছে।ফুল দিয়ে সাজানো বারান্দা।রুমে ফুলের ফ্রেম,লাইট,আর একটিমাত্র বিছানা।
শুভা অবাক হয়ে বলল,
——–‘দুজন এক বেডে?কিরে এসব কোন কুখ্যাত হোটেলে উঠলাম?জানে না আমরা অবিবাহিত এন্ড আমরা ফ্রেন্ড।’
তামিম বসল।নির্বিকারভাবে বলল,
——–‘এভাবে একসাথে থাকতে দিবে না জেনেই আমি বলেছি, উইয়ার ম্যারিড।পরে একা একা রুমে থাকলে টাকা বেশি উঠবে।’
শুভা ছোট্ট করে বলল,
——-‘হু!’
তামিম পৈশাচিক হাসি হেসে বলল,
———‘তাছাড়া তুই একা রুমে থাকতেও ভয় পাস,ভূত টূত যদি চলে আসে।’
শুভা ঢোক গিলে বলল,
——–‘হ্যাঁ,তাইতো।’
দুপুরে একটি হোটেলে ভাত, মুরগী, ভর্তা, ডাল খেল। দেরী করে যাওয়ায় সব ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিলো। খাবার খুব একটা পছন্দ হলো না। খাওয়ার পর্ব শেষ করে চলে গেল নিউ মার্কেট। সেখানে নানান মানুষ ও তাদের কেনাকাটা দেখতে লাগলাম। এদের মধ্যে বেশিরভাগই বাংলাদেশ থেকে এসেছে এবং সবার হাতেই শপিং ব্যাগ। “শ্রী লেদার” লেখা ব্যাগ দেখল খুবই কমন। আজ কিছুই কিনতে চাইল না তামিম। শুধু ঘুরে ঘুরে দেখার ইচ্ছে ছিল।তবে তামিম হয়তো ভুলে গিয়েছিল সে কোনো মহিলা মানুষকে সাথে নিয়ে মার্কেটে এসেছে।শুভা একটা টপ ও জিন্স কিনল।মেচিং ব্রেসলেট, লকেট,কানের দুল,স্কাফ তো আছেই।হাজারটা দোকান ঘুরে কিনল শুভা।তামিম খানিকটা রেগে বলল,
———-‘শেষ তোর?’
শুভা সরু গলায় উত্তর দিল,
——–‘আচ্ছা, তাইলে কাল আবার আসব নে।আজ একটু কিনলাম।’
তামিম হতবাক।হতচকানো কন্ঠে বলল,
———-‘এতটুকু?বাপরে বাপ!’
সন্ধ্যার পর রুমে চলে এল।সবকিছু ঠিক করতে করতে ও গোছাতে গোছাতে রাতের খাবারের টাইম হয়ে গেল।
রাতে খেতে বের হল। “নবাব ইটিং হাউজ” নামের একটি হোটেল পেল। সেখানে গরুর চাপ, শিক কাবাব আর বিরিয়ানি খেল।শুভা বিরিয়ানি খেতে খেতে বলল,
——–‘ওয়াও!তামিম দেখ,কি মজা!’
মাত্র ৭০টাকায় খুবই মজাদার বিরিয়ানি। খাওয়ার পর রাস্তায় বেশ খানিকটা হাঁটাহাঁটি করে খাবার একটু হজম করে চলে গেল রুমে।শুভা রুমে গিয়ে নীহারিকার ফোনে কল দিল।নীহারিকা কল ধরেই বলল,
——–‘কেমন আছিস বেবি?জামাই কেমন খাওয়াচ্ছে?ইনজয় করতেছিস?’
শুভা একটু জোরেই বলে উঠল,
———‘জামাই খাওয়াবে মানে?জামাই কই?’
তামিম টিশার্ট বদল করছিল।এরইমাঝে এমন কথা শুনে সে চুপ হয়ে গেল।শুভা ফিরে তাকাল তামিমের দিকে,তামিম চোখ ফিরিয়ে কাজে লাগল।শুভা ভ্রু কুচকালো।নীহারিকাকে জিজ্ঞেস করল,
———-‘কিসব বলতেছিস?’
নীহারিকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
———-‘সময় হলে বুঝবি।’
নীহারিকা ফোনে কেটে দিল।ভোর নীহারিকাকে বলল,
———‘ভালোই বলেছো আপুনি।’
রাফি আয়েশ করে বসল।তারপর গালে এক গামলা পান ভর্তি করল ও বলল,
———‘হ।কাল রাত তামিম যেভাবে কোলে করে গাড়িতে উঠাইছে সেখান থাইক্কা বুঝেছি, কত্ত কেয়ারিং জন্মাইছে ওর মাঝে।বুঝসোস?’
রুদ্র আঙুল দিয়ে বিছানায় আকিবুকি করতে করতে বলল,
———‘হ ভাই।তামিম আমাদের মাঝে সবচেয়ে অন্যরকম।’
নীহারিকা হাসলো।সবাই হাসলো মৃদুস্বরে।
চলবে……
©ইভা আহমেদ চৌধুরী
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/