#কে_আপনি
#পর্বঃ০৮
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
কিভাবে কি হলো বুঝতে পারছে না শ্রেয়া। তার যেন পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। তারা দুইজন পানি নিয়ে খেলছিল দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে এমন সময় হঠাৎ একটা ঢেউ আসে। আলিফ তা বুঝতে পারে কিন্তু শ্রেয়া বুঝতে পারেনি। শ্রেয়া পানি দিয়ে খেলতে খেলতে অনেকটাই দূরে চলে এসেছিল আলিফের থেকে আলিফ ও পলকহীন ভাবে তার বউয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল। এমনসময় সে ঢেউ খেয়াল করে কিন্তু তার কাছে করার কিছু ছিল না। সে আতকে একটা চিৎকার করে উঠে শ্রেয়া বলে। আলিফের এমন চিৎকার শুনে শ্রেয়া পিছন ঘুরে এমন অবস্থা দেখে সে পাথর হয়ে যায়। কি করবে সে কিছুই বোধগম্য হচ্ছেনা তার। সবকিছু বুঝে আসতেই সে আলিফ বলে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যায় সেখানে।
—————————–
কেটে গেছে দুইমাস। শ্রেয়া এখন তার সব কাজ ছেড়ে দিয়েছে। মনের দিকদিয়ে একদম ভেঙে পরেছে। সে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছিল আলিফকে। সে প্রথম প্রথম পাগলামি করতো কিন্তু এখন একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। সে এখন তার বাবা মার কাছেই থাকে। ওর বাবা মা ওর এইরকম অবস্থা দেখে ওকে বিয়ে করতে বলে। কিন্তু শ্রেয়া তাতে রাজি হয়নি। শ্রেয়া নিজেকে চারদেয়ালের মধ্যে বন্ধ করে ফেলেছে। তার চোখমুখে আর আগের মতো উজ্জ্বলতা নেই। কেমন যেন হয়ে গেছে মেয়েটা। সবসময় মেয়েটা রুমের বারান্দায় বসে থাকে আকাশের দিকে তাকিয়ে। বিস্বাদপূর্ণ জীবন হয়ে গেছে। আলিফকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগে না। সবার কথামতো আলিফ মারা গেছে। কিন্তু এটা বিশ্বাস করতে নারাজ শ্রেয়া।
শ্রেয়া আগের দিনের কথাগুলো ভাবছিল তখন ওর আম্মু রুমে প্রবেশ করে হাতে তার খাবার প্লেট। শ্রেয়া একবার ওর আম্মুর দিকে তাকালো তারপর আবার বাহিরে চোখ রাখলো। ও খাবে না বলে জানিয়ে দেয়। তখনই ওর আম্মু ওর গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। আর উচ্চসরে বলে উঠে “যে মারা গেছে তার জন্য কি তুই নিজেও মরবি। এমন করলে তোর কি মনে হয় আলিফ ফিরে আসবে। একা একা কেসের জন্য আমাদের বুঝিয়ে বিয়ে করলি। এখন আবার সে মরায় নিজের কি অবস্থা করেছিস। মরবি নাকি!”
শ্রেয়া ফুপিয়ে উঠলো। শ্রেয়াকে ফোপাতে দেখে ওর আম্মু দমে গেল। শ্রেয়াকে নিজের বুকের মাঝে আকড়ে ধরলো সে। শ্রেয়া কিছুটা স্বাভাবিক হতেই ওর আম্মু ওকে খাইয়ে দিতে লাগলো। দুইবার মুখে খাবার নিতেই সে বমি করে দিলো। ইদানিং কেন যেন খাওয়ার সময় তার বমি আসে। যা ওর আম্মু রেজিয়া বেগম খেয়াল করছেন। রেজিয়া বেগম কিছুক্ষণ কপাল কুচকে শ্রেয়াকে পর্যবেক্ষণ করে চলে গেলেন।
আফজাল সাহেব নিজের স্ত্রীকে চিন্তিত মুখে মেয়ের রুম থেকে বের হতে দেখে তার কপাল ও কুচকে গেল। সে গম্ভীর কন্ঠে রেজিয়া বেগমকে জিঙ্গাসা করলেন “কি হয়েছে!”
রেজিয়া বেগম নিজের মুখে চিন্তিত ভাব ঝুলিয়েই আফজাল সাহেবের পাশের সোফায় বসলে তারপর বলতে লাগলেন “মেয়েটাকে নিয়ে একবার হাসপাতাল যেতে হবে চেকআপ করাতে।”
আফজাল সাহেব চোখ ছোট ছোট করে রেজিয়া বেগমের দিকে তাকালেন। রেজিয়া বেগম আবার বলে উঠলেন “আমার সন্দেহ যদি ঠিক হয়। তাহলে কি হবে বুঝতে পারছিনা। শ্রেয়ার কি রিএকশন হবে তাও বুঝতে পারছিনা।”
আফজাল সাহেব রেজিয়া বেগমের কথার মানে কিছুটা আচ করতে পেরে উনিও চিন্তায় পরে গেল।
তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো। রেজিয়া বেগম উঠে গেলেন দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই মাহিনের হাসোজ্জ্বল চেহারা দেখতে পেলেন। তিনি ও ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে মাহিনকে বাসার ভেতরে আনলেন।
মাহিন খেয়াল করলো আফজাল সাহেব আর রেজিয়া বেগমকে চিন্তিত দেখে হাসিমুখেই জিঙ্গাসা করে কি হয়েছে।
তারা কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে কিন্তু পরে বলে দেয়। কারণ ওদের থেকে মাহিন শ্রেয়াকে বেশি সামলাতে পারে। ওকে বোঝাতে পারে। ওদের কথা শুনে মাহিনের ঠোঁটে এক রহস্যময় হাসি ফুটে উঠে। যা কারো চোখে পরলো না। মাহিন চিন্তিত হয়ে উঠে দাড়িয়ে পরে। আর শ্রেয়ার সঙ্গে সে কথা বলবে বলে জানায়।
মাহিন ধীরগতিতে এগিয়ে যায় শ্রেয়ার রুমে দিকে। শ্রেয়ার রুমের দরজায় নক করতেই। সে দরজা খুলে দেয়। শ্রেয়াকে দেখে সে ভাবনায় চলে যায় আসলেই ভালোবাসা অদ্ভুত। কি মানুষকে কি করে দেয়। উজ্জ্বল চঞ্চল চেহারাটা হারিয়ে গিয়ে চোখগুলো ফোলা ফোলা চোখের নিচের কালো দাগ বুঝিয়ে দিচ্ছে নির্ঘুম রাতে কথা। গোছানো চেহারার মেয়েটি অগোছালো শুধুমাত্র ভালোবাসার জন্য। মাহিনের ভাবনায় ছেদ ঘটে শ্রেয়ার কথায়।
শ্রেয়া মাহিনকে এমন ভাবনায় পরতে দেখে মুখে ফেক হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠে “কিরে কার চিন্তায় পরলি। ভাবির নাকি।”
মাহিন শান্ত দৃষ্টিতে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল “আমাকে ভুল বোঝাচ্ছিস। আমার সামনেও নিজের ফেক হাসি ঝোলাচ্ছিস। আমি তোর ছোট বেলার ফ্রেন্ড শ্রেয়া।”
মাহিনের কথায় করুণ চোখে শ্রেয়া মাহিনের দিকে তাকালো। মাহিন শান্ত দৃষ্টিতেই তাকিয়ে রইলো শ্রেয়ার দিকে। শ্রেয়া দরজার সামনে থেকে সরে বেডে গিয়ে হেলান দিয়ে বসলো। শরীরটা ভালো লাগছে না তার।
মাহিন গিয়ে রুমে থাকা একটা চেয়ার টেনে শ্রেয়ার পাশে টেনে বসে বলল “জবটা ছাড়লি কেন! আর আহমেদ শাওন চৌধুরীর কেসটাও তো সমাধান করলি না। এই কেসটা নিয়ে তো তোর অনেক কৌতূহল ছিল। তা কি হলো রেএ হঠাৎ। এমনকি তুই তো আলিফকে কেসের সঙ্গে জরিত থাকায়। কেসের গভীরে যেতে বিয়ের নাটক করেছিলি। তাহলে ওর মৃত্যুতে এতো ভেঙে পরেছিস কেন। বল আমায়। কেন এমন করছিস তুই।”
মাহিনের কথায় শ্রেয়া একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়। তারপর চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো “হ্যাঁ আমি আলিফকে বিয়ে করেছিলাম কেসের জন্যই। তাও বিয়েটা ছিল নাটকের। কিন্তু বিয়েতে কবুল কিন্তু ঠিকি বলা হয়েছে। আমি জানিনা কিভাবে কখন আমি আলিফকে ভালোবেসে ফেলেছি। তবে এইটুকু জানি আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমার মাথায় কেন যেন এখন আলিফ ছাড়া আর কিছু আসে না। আমার ভালো লাগেনা ওকে ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে। আমার মন চাইছিল না আর জবটা করতে তাই ছেড়ে দিয়েছি। আর শাওনের কেসের জন্য যে কৌতূহল ছিল। এখন কেন যেন আলিফ আমায় ছেড়ে যাওয়ার পর তা মরে গেছে। কেন এমনটা হয়েছে তাও জানি না। আর জানতেও চাইনা কখনো।”
মাহিন শ্রেয়ার প্রতিটা কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনে শান্ত চোখেই তাকিয়ে রইলো শ্রেয়ার দিকে। দুইজনই নিরব হয়ে আছে। নিরবতা ভেঙে শ্রেয়াই বলে উঠলো “যাইহোক বাদ দে আমার কথা। তোর কি খবর সেটা বল।”
শ্রেয়ার কথায় মাহিন কিছুটা নড়েচড়ে বসে। মাহিন চোখ এইদিক ওদিক ঘোরাফেরা করছে। সে আমতা আমতা করে বলল “এই তো ভালোই।”
শ্রেয়া চোখ বন্ধ রেখে আলতো হাসলো আর বলল “আর কতোদিন পরে থাকবি অতীত নিয়ে। ওর তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ওকে নিয়ে আর কতোদিন কষ্ট পাবি।”
মাহিন করুন চোখে তাকালো শ্রেয়ার দিকে। সে ইনিয়েবিনিয়ে কথা কাটিয়ে দ্রুত রুম ত্যাগ করলো সে। মাহিনের এমন কাজে আলতো হাসলো শ্রেয়া। কারণ মাহিন সবসময়ই এরকম করে। শ্রেয়া অনেক চেষ্টা করেছে মাহিনকে আবার স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসতে। কিন্তু সে পারেনি। আগে বোঝেনি মাহিনের এমন পাগলামি করার মানে কি। অন্য একজন বিয়ে করে সুখে থাকতে পারে। কিন্তু এখন সে বোঝে মাহিন কেন এমন করে। কারণ তারও যে একি অবস্থা। এগুলো ভেবেই চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরলো শ্রেয়ার।
চলবে……
( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)