#কেয়ারিং_হাসবেন্ড
[২য় পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
— সবুজ মেয়েটা খুব ভালো। আর তোর না বাচ্চা খুব পছন্দের তার একটা ফুটফুটে মেয়ে আছে খুব সুন্দর এই দেখ মেয়েটার ছবি।
সবুজের ফুফি তার দিকে মোবাইলটা এগিয়ে দিলো। আর মেয়ের ছবি দেখেই খুব ভালো লেগো। সবুজ বলল — আচ্ছা ঠিক আছে।
— আমি জানি তুই আমার কথা ফেলবি না। এখন তাহলে উঠি আমরা বিকালে যাবো ওই বাড়িতে।
— আচ্ছা।
তারপর ফুফি চলে গেলো। দেখতে দেখতে বিকাল হয়ে গেলো। সবুজ সহ সবাই মিলে চলে গেলো নেহাদের বাসায়। সবাই নিজেদের মধ্যে পরিচয় হয়ে নিল। একটু পরে নেহার আম্মু নেহার মেয়ে মাইসা চলে আসলো তাদের কাছে। ছবিতে যেমন মিষ্টি লাগছিলো বাস্তবে মেয়েটা আরো বেশি মিষ্টি।
সবুজ মাইসার দিকে তাকাতেই মাইসা ও সবুজের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি করে হাসি দিলো। একটু পরে নেহা সবার জন্য চা নিয়ে আসলো।
সবাইকে চা দিয়ে নেহা সবার সামনে বসল। সবুজের আব্বু নেহাকে কিছু প্রশ্ন করলো আর নেহা সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিলো৷ নেহাকে সবার পছন্দ হয়েছে। আর সবুজ নেহার দিকে ভালো ভাবে তাকালোও না সবুজের নজর ছিলো মাইসার দিকে। মেয়েটা এতো মিষ্টি যে চোখ সরাতে পারছেনা।
নেহা বলল — আমার ওনার সাথে একটু কথা ছিল!
— হুম বলতে পারো সমস্যা নাই। তোমাদের মধ্যে কথা থাকতেই পারেই। যাও তোমরা আলাদা ভাবে কথা বলে আসো।
এবার নেহা সবুজকে নিয়ে নেহার রুমে চলে গেলো।সবুজ নেহার রুমে গিয়ে দেখে রুমটা খুব সুন্দর করে ঘুছিয়ে রেখেছে। সবুজ গিয়ে খাটের উপরে চুপচাপ বসে রইলো।
নেহা সবুজকে বলল — আপনাকে আলাদা ভাবে ডেকে আনার কারণটা হচ্ছে আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাইলে আমার মেয়েকে মেনে নিতে হবে। আপনি কি আমার মেয়ের দ্বায়িত্ব নিতে পারবেন?
— আমার বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে ছিলনা। আমি আপনার মেয়েকে দেখেই আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। আমি আপনার মেয়েকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসবো।
সবুজের কথা শুনে নেহা অনেক খুশি হয়ে গেলো। সবুজ বলল — আর কিছু?
— না।
— চলুন তাহলে সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে।
— জ্বী চলুন।
তারপর দুজনে এক সাথে সবার কাছে চলে গেলো। বিয়ের দিন ঠিক করা হলো। দেখতে দেখতে বিয়েও হয়ে গেলো। বড় করে কোনো অনুষ্ঠান করা হয়নি। ছোটখাটো ভাবে অনুষ্ঠান করে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হলো। বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে নেহাকে নিয়ে যাওয়া হলো সবুজের বাসায়।
বাসর ঘরে বসে আছে নেহা। তার পাশেই শুয়ে আছে নেহার বাচ্চা মেয়ে মাইসা। নেহা বাসর ঘরে চুপটি করে বসে আছে। কিন্তু সবুজের আসার কোনো খবর নেই। রাত অনেক হয়ে গেলো কিন্তু সবুজ এখনো আসছেনা। লাল শাড়ি তে নেহাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। হালকা সাজে নেহাকে অনেক সুন্দর লাগছে। কিছুক্ষণ পরে দরজার শব্দ শুনে নেহা নড়েচড়ে বসে। আর বুঝতে পারে তার স্বামী বাসর ঘরে প্রবেশ করছে। নেহা উঠে এসে সবুজের পায়ে সালাম করলো। তারপর নেহা আবার খাটের উপরে চলে গেলো। সবুজ নেহার পাশে গিয়ে বলল — লেট হওয়ার জন্য দুঃখিত। সারাদিন হয়তো বিয়ের দখলে কিছু খেতে পারেননি। খাবার নিয়ে আসছি আসেন খেয়ে নেই। আমিও খাইনি অনেক্ষন হলো অনেক খিদে পেয়েছে আমার।
— আপনি খেয়ে নিন আমার খিদে নেই।
— রাতে খাবার না খেলে শরীর খারাপ করবে। আসেন খেয়ে নিন।
নেহা আর কোনো কথা না বলে সবুজের সাথে খাবার খেতে বসে গেলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে নেহা আবার খাটের উপরে চলে আসলো। সবুজ খাটের দিকে তাকিয়ে দেখে মাইসা ঘুমিয়ে আছে।
নেহা বলল — ওকে কি অন্য রুমে রেখে আসবো?
— না ও এখানেই থাকবে আমাদের সাথে। আমার কোনো সমস্যা নেই।
নেহা আর কিছু না বলে নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো। তখন সবুজ বলল — আমি আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই। এই রাতটা আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত। আর আমরা বিয়ের আগে কেউ কাওকে ঠিক করে চেনারও সময় পায়নি। আচ্ছা আপনার কি কোনো কথা আছে?
— হুম আছে সেটা আমি পরে বলব আগে আপনার কথা বলুন। আর হ্যাঁ! আপনি না বলে আমাকে তুমি করে বলুন।
— ঠিক আছে। দেখো নেহা আমার পরিবারে আমি আর আমার বাবা ছাড়া আর কেউ নাই। আমাদের পরিবারটা খুব ছোট হলেও ভালোবাসার কিন্তু কোনো কমতি নেই। আমি চাই তুমি আমার বাবার সাথে ভালো ব্যবহার করবে। আমার বাবা যেনো তোমাকে এই বাড়ির বউ না মনে করে মেয়ে মনে করে। আর যতই খারাপ সময় আসুক আমরা এক হয়ে থাকবো। আর একজন ভালো স্বামী হওয়ার জন্য যা করতে হয় আমি তাই করবো। ওহ ভুলেই গিয়েছিলাম আমি তো শুধু স্বামী না তোমার বাচ্চার বাবাও আমি। একজন ভালো স্বামী হওয়ার আগে ভালো ফ্রেন্ড হতে হয়। আমি আমার সবটা দিয়ে তোমাদের ভালো রাখার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
সবুজের কথা শুনে নেহার মন খুশিতে ভরে গেলো। নেহা বলল — আচ্ছা আমাদের যখন বাচ্চা হবে তখনকি আমার মেয়েটা অবহেলিত হয়ে যাবে? কারণ আর যাইহোক কোনো মানুষ তার রক্তের কাওকে ছাড়া অন্য কাওকে এতোটা ভালোবাসেনা।
নেহার কথা শুনে সবুজ চুপ হয়ে গেলো। চুপ থাকার কারণ টা নেহা বুঝতে পারেনি। হয়তো আপনাও বুঝতে পারেন নাই গল্পের সাথে থাকুন বুঝতে পারবেন।
নেহা সবুজকে চুপ হয়ে থাকতে দেখে নেহা ভাবছে তার কথা সবুজের কাছে হয়তো খারাপ লাগছে তাই নেহা আবার বলল — সরি আমি ওই ভাবে বলিনি।
— সরি বলার কিছুই হয়নি।
— তাহলে চুপচাপ হয়ে আছেন কেন?
— এমনি। আচ্ছা চলুন ছাদে যাই। আজকের আকাশটা খুব সুন্দর।
— মাইসা?
— ও তো ঘুমিয়ে আছে। আর আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবো।
— আচ্ছা ঠিক আছে চলুন তাহলে।
এবার দুজনেই ছাদের উপরে চলে আসলো। সবুজ নেহাকে সাথে ছাদের এক কোণে চলে গেলো। আর দুজনেই দাঁড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইলো। হালকা বাতাসে শরীর যেনো শীতল হয়ে আসছে।
সবুজ বলল — আকাশ টা আজ অন্যরকম লাগছে কেনো জানি। যেনো অন্যরকম ভাবে সেজেছে আকাশ।
নেহা সবুজের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল — আকাশ দেখতে ভালোবাসেন বুঝি?
— হুম খুব। যখন মন খারাপ হয় তখন আমি এখানে আসলেই আমার মন ভালো হয়ে যায়। আর চাঁদ দেখতে আমার অনেক বেশিই ভালো লাগে। আর এখানে আসলে আমার মনে হয়না আমি একা।
— কেন?
— কারণ আমি মনে করি আমার মা আমার সঙ্গে আছে।
— আপনার মাকে অনেক ভালোবাসেন তাইনা?
— হুম। আমার সব আপন লোক আমাকে ছেড়ে চলে যায়।
— সব মানে?
— কিছুনা।
— ওহ।
— তোমার ভালো লাগে না চাঁদ দেখতে?
— আমি তেমন একটা দেখিনা আজ কেনো জানি খুব ভালো লাগিছে। শীতল বাতাসে খুব ভালোই লাগছে আমার কাছে।
— হুম। আমি প্রায় সময় ছাদের উপরেই কাটিদেই অনেক রাত।
— ওহ।
— আচ্ছা অনেক রাত হচ্ছে এবার আমাদের রুমে যাওয়া উচিৎ।
— হুম চলুন।
তারপর দুজনেই রুমে চলে গেলো। সবুজ নেহাকে বলল — এবার ঘুমিয়ে পড়ুন। আপনি হয়তো খুব ক্লান্ত। আর রাত ও অনেক হয়েছে।
নেহা কোনো কথা না বলে শুয়ে পড়ে। সবুজ ও শুয়ে পড়ে। তাদের মাঝা খানে মাইসা ঘুমাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে দুজনের চোখেই ঘুম নেমে আসে। সকালে নেহা ঘুম থেকে উঠে দেখে সবুজ বিছানায় নেই। নেহা তাড়াতাড়ি উঠে বসে পড়ে। নেহা ভাবতে থাকে এতো সকালে লোকটা কোথায় যেতে পারে?
চলবে??