কেন আমি ডাকি তারে পর্ব-১৭+১৮

0
2098

কেন আমি ডাকি তারে -১৭

নিতু, কোথায় লেগেছে, আমাকে দেখতে দাও!-রেহান হাত ধরে নিতুর পাশে বসল৷

নিতু বলল, পা মচকে গেছে মনে হয়, ভর দিতে পারছি না।

আই এ্যাম সরি নিতু। আমার জন্য তোমাকে এইরকম হ্যাজার্ড পোহাতে হলো!

নিতু একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, আপনার আর কি দোষ!

রেহানের বন্ধুরা চলে এসেছে, রেহান মনে মনে বলল, থ্যাঙ্কস গড, যে ওরা দেরী করে এসেছে। তাই পুরো বিষয়টা দেখতে পায় নি।

কি হলো, ভাবী পড়ে গেলেন কি করে?

রেহান বলল, পা মচকে গেছে। রিসোর্টের স্টাফও এসে পড়েছে।

রেহান মনে মনে বলল, মাঝে মাঝে স্লো হওয়াও ভালো।
ভাগ্যিস সিনটা সায়রার কলিগ দুজন ছাড়া কেউ দেখে নি।

স্যার কি সমস্যা? ম্যাম ব্যাথা পেয়েছেন?

হ্যা পা মচকে গেছে, আপনার এখানে ডাক্তার পাওয়া যাবে?

যাবে স্যার একটু সময় লাগবে। কল দিচ্ছি, মেডিকেল অফিসার আসবেন৷

আর ব্রেকফাস্ট রুমে দেওয়া সার্ভ করে দিতে হবে।

স্যার ম্যাম কি হাঁটতে পারবেন?

অটো ডাকা যাবে ভেতরে, কটেজ তো বেশ কিছুটা দূরে।
-রেহান জানতে চাইল।

দেখছি, স্যার।

লোকটা চলে গেল। রেহান বলল, তোরা ব্রেকফাস্ট করে বের হয়ে পড়। আমি নিতুকে নিয়ে রুমে যাচ্ছি৷

নিতু পায়ে ভর দিতে পারছে না৷ রিসোর্টের স্টাফ হুইল চেয়ার নিয়ে আসছে, স্যার ম্যাম এটা ইউজ করতে পারবেন।

নিতু একবার তাকিয়ে রেহানের বাহুতে মুখ গুজে ফেলল। না প্লিজ, হুইল চেয়ার না। আমার আনইজি লাগবে।

কেন নিতু, এটাই তো ভালো হতো!

না না, প্লিজ না!

নিতুর এত প্রবল আপত্তির কারণ রেহান বুঝতে পারল না৷

ইশারায় হুইল চেয়ার নিয়ে সরে যেতে বলল।

নিতু রেহানের হাত ধরে হেঁটেই কটেজে ফিরল।
রুমে পৌছাতে বরফ দিয়ে গেল স্টাফ। নিতু বরফ সেক দিয়ে দিই?

আমি দিচ্ছি৷ আপনি এখন গিয়ে সায়রার সাথে মিট করতে পারেন।

হোয়াট! তুমি ভাবলে কি করে আমি এখন সায়রার সাথে মিট করতে যাব।

অভিমান ভাঙা প্রয়োজন না?

নিতু তুমি আমাকে চেনো না! – রেহান হেয়ালি করে বলল।

নিতু বলল, সায়রা চেনে, আমি না চিনলেও। ও ঠিক ফোন করবে।

বলতে বলতে রেহানের ফোন বেজে উঠল।

রেহান হ্যান্ডসেট বের করে দেখল, সায়রা!

রেহান কেটে রেখে দিলো।

নিতু বলল, না কেটে কথা বলে ঠিক করে নিন। তবে প্লিজ আমার এই ঘরে ওকে নিয়ে আসবেন না। কিছু বিষয়ে আমার একটু এলার্জি আছে। নিজের বেডরুমে আমি বাইরের কোনো মেয়েকে এলাউ করব না।

রেহানের কথাটা কানে লাগল! নিজের বেডরুম! কথাটা অনেক কিছু মিন করে!

রেহান ফোন রিসিভ করে বলল, সায়রা, আমাকে আর ফোন করো না।

রেহান প্লিজ, আমার ভুল হয়ে গেছে, তোমাকে ওই মেয়েটার সাথে আমি সামনাসামনি দেখে আমি মেনে নিতে পারিনি।
আমার কটেজ ৪৪ নম্বর, মল্লিকা। আমি এখন একাই আছি, আসবে একটু।

রেহান বলল, না। তুমি আপাতত আর আমাকে ফোন করো না। ঢাকায় ফিরে তোমার সাথে কথা বলছি!

রেহান প্লিজ, আমার খুব গিল্ট ফিল হচ্ছে, আমি আসি তোমাদের কটেজে?

একদম না! নিতুর আসেপাশেও তোমাকে দেখতে চাই না।
সমস্যাটা তুমি তৈরি করেছ সায়রা!

সায়রা ফোন রেখে দিলো, যে রেহানকে সে চিনত, তার সাথে এখনকার রেহানকে মেলাতে পারে না সায়রা।

ব্রেকফাস্ট চলে এসেছে। স্যুপ, পাউরুটি ফ্রেন্চ টোস্ট করা,
কলা, দুধ, সাথে ডিম পোচ, কর্ণফ্লেক্স, সসেজ, ফ্রেশ জুস অনেক আইটেমই দিয়েছে সাজিয়ে। বুফে নিলে আরো অপশন থাকত! রেহান ইংলিশ মেনু দিতে বলেছিল।

নিতু, একটু খেয়ে নাও প্লিজ। তারপর দেখি, নাপা আছে ব্যাগ, একটু পরে শহরে গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে আসব। এক্স রে করাতে হবে, ফ্রাকচার হলো কিনা!

নিতু বলল, কিছুই লাগবে না। আমি একটু শুয়ে থাকি, আপনি ঘুরে আসুন ব্রেকফাস্ট করে।

রেহান বলল, এসো, আগে খেয়ে নাও।

নিতু যত যাই বলুক, রেহানের কেয়ারিং ভাবটা কিছুতেই ইগনোর করতে পারে না। মা নেই প্রায় দশ বছর, ভাবী সংসারে আদরের অভাব না হলেও মায়ের যত্নটা আর কেউ করে না।

নিতু নিজে নেওয়ার চেষ্টা করছিল, রেহান এগিয়ে দিলো।
টোস্টে কামড় দিয়ে নিতু বলল, আমার কপাল, দেখছেন! বেড়াতে এসেছিলাম রিফ্রেশ ট্যুর করতে!

রেহান একটু লজ্জা পেয়ে বলল, আমি খুবই সরি, এখানে সায়রা আসবে আমি জানতাম না। আর এমন সিন ক্রিয়েট করবে, সেটাও বুঝিনি।

মচকানো পা নিয়ে আমি কোথাও যাব না। আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে ঘুরে আসুন।

রেহান বলল, সেটা আমি বুঝব৷

রিসোর্ট থেকে ডাক্তার নিয়ে এসেছিল, নিতুকে দেখে ওষুধ দিয়ে গেছেন। একটা এক্সরে করিয়ে নিতে বলে গেছেন।

খাওয়ার পরে নিতুকে বালিশে হেলান দিয়ে শুইয়ে দিলো রেহান৷
নিতুর একটু অস্বস্তি লাগছিল, নতুন শাড়ি ব্লাউজে।
রেহান বলল, চেইন্জ করবে?

নিতু বলল, হুম, ভালো হতো।

দাঁড়াও একসেট চেইন্জ বের করে দিচ্ছি – রেহান নিতুর ব্যাগ থেকে পোশাক বের করল।

পারবে একা একা? – নিতুকে সাধারন ভাবে জিজ্ঞেস করল রেহান৷

নিতুর মাথায় কিছু একটা খেলে গেল, নিতু বলল, না, পারব না। হেল্প করবেন?

রেহান রুমের পর্দাগুলো টেনে দিলো। আধো আলোতে নিতুর কাছে এসে কানের ইয়ারিং খুলতে গেল!

নিতু হেসে বলল, আপনার আমার ইয়ারিংয়ের প্রতি এত রাগ কেন! সব সময় ইয়ারিং খুলতে চান!

রেহান পাত্তা দিলো না নিতুকে। ও যেন সম্মোহিতের মত নিতুকে নিরাভরণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

চলবে

কেন আমি ডাকি তারে -১৮
গলায় পরা হারটা খুলে বেডসাইড টেবিলে রেখে রেহান নিতুর শাড়ির আঁচলের সেফটিপিন খুলে নিলো। নিতু আঁচল ধরে বলল, রেহান, আমি পায়ে ব্যাথা পেয়েছি, হাতে না৷ আপনি ফান বোঝেন না!! আশ্চর্য তো!

রেহান অপ্রস্তুত না হয়ে বলল, বুঝব না কেন, এটা তো ফান ছিল না।

নিতু একটু লজ্জা পেয়ে বলল, মোটেই না। ফানই ছিল। আমি দেখে নিচ্ছি।

রেহান সরে গিয়ে বলল, ঠিক আছে৷

নিতু আশা করেনি রেহান সরে যাবে৷ ওর পরক্ষণেই মনে হলো, রেহান একটা জটিল অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সায়রাকে বিয়ে করার জন্য রেহান এমন অদ্ভুত একটা শর্তে নিতুকে বিয়ে করেছে, সেই সায়রা! এতটাও অগুরুত্বপূর্ণ কেউ নয়! আর নিতু কিনা রেহানের সাথে একটা মিথ্যে নাটকীয় সম্পর্কে ঢুকতে যাচ্ছে!
নিতু এটা কীভাবে করতে পারল!

নিতু বলল, রেহান, আপনি একটু রুমের বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করবেন প্লিজ!

রেহান অবাক হলো, প্রথমে ভেবেছিল, নিতু রিয়াক্ট করবে, সেটা তখন করল না কিন্তু এখন কিছু একটা ভেবে রেহানকে বাইরে পাঠাতে চাইছে। রেহান বলল, যাচ্ছি।

সায়রা ফোন করছিল বারবার, তাই রেহান এগিয়ে গিয়েছে, সায়রাও বের হয়ে এসেছে৷

রেহান- বলে সায়রা রেহানের বুকে মাথা গুজল।

রেহান ধরল না সায়রাকে৷ কয়েক সেকেন্ড পরে সায়রাকে সরিয়ে দিলো।

রেহান আমি কি করলে তোমার রাগ কমবে?
আমি ভুলে গিয়েছিলাম, মাত্র আর কয়েকটা মাস।

রেহান বলল, যেটা করেছ, সেটা খুব খারাপ করেছ। আমি স্বাভাবিক হতে পারছি না সায়রা। বেটার আমাকে আর ফোন করো না।

মানে কি, তুমি কী ব্রেক আপ করতে চাইছ?

ব্রেক আপ কিনা জানি না, তবে ব্রেক চাইছি।

আমি এমন কি করলাম, তোমার পাশে অন্য কাউকে আমি কীভাবে সহ্য করব? আমাকে বলে দাও! তুমি পারতে আমার পাশে অন্য কাউকে দেখতে?

রেহান বলল, সব সময়ই দেখে আসছি, তোমার অসংখ্য ছেলেবন্ধু যাদের সাথে তুমি ডে নাইট আউট করো। আমি কখনো অন্যভাবে নিই নি। সত্যি বলতে তোমার শপিং বা টাকার দরকার ছাড়া আমার সাথে ভালো করে কথা বলারও তোমার সময় হয় না!

রেহান এত বড় কথাটা তুমি আমাকে বলতে পারলে!

পারলাম, এর চাইতেও বড় কাজ তুমি করেছ সায়রা। লিসেন, আমার একটা ব্রেক প্রয়োজন। আরো ছয়মাস নিতু আছে, এই সময়টা আমি ব্রেক চাই। নিতু আমার সাথে থাকতে আসে নি। ও চলে যাবে। এর পরে আমি ভেবে দেখব, আমি তোমাকে বিয়ে করে আমার মন স্যাটিসফাইড হবে কিনা৷ আশা করি আমার থেকেও ভালো এটিএম কার্ড তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে।

সায়রা ফোন হাতে নিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং থেকে রেহানকে ত্রিশ হাজার টাকা ব্যাক করে বলল, এই টাকাটার জন্য তুমি এতগুলো কথা বললে আমাকে। আগে কখনো বলো নি।
তুমি ব্রেক নিতে চাও, নাও। কিন্তু আমাকে অপমান করার আগে আমার লেভেল সম্পর্কে তোমার ধারনা করা উচিৎ ছিল৷

ভালো থেকো রেহান। আমরা একটু পরে চলে যাব। সরি এগেইন৷ আমি তোমাকে ভালোবাসি, এটা মনে রেখো।

রেহান কিছুই বলল বা। সায়রাকে কখনো এতটা বিরক্তিকর মনে হবে, ভাবতেও পারে নি রেহান। সায়রা চলে যাবে শুনে হাপ ছেড়ে বাঁচল মনে হচ্ছে।

নিতু চেইঞ্জ করে বিছানায় বসে রেহানকে ফোন করল। রেহান বাইরে চলে গিয়েছিল। সায়রা হেঁটে হেঁটে আসছে দেখে রেহান এগিয়ে গেল৷ নিতু বারান্দা থেকে দেখল, রেহান সায়রার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কেন যেন নিতুর প্রচন্ড রাগ হলো, রাগের জন্য কান্না পেয়ে গেল। নিতু ভেতরে যেতে পারল না। দূর থেকে রেহান আর সায়রাকে দেখতে লাগল।

রেহানকে ফিরে আসতে দেখে নিতু চট করে রুমে ঢুকে গেল।

রেহান ঘরে ঢুকে সোফায় বসে পেপারটা হাতে নিলো।
নিতু কিছু বলল না, গাল ফুলিয়ে বসে রইল।

রেহান খেয়াল করে পেপারে চোখ রেখে বলল, আকাশে এত মেঘ কেন? কি হলো আবার?

নিতু চোখ মুছে বলল, কিছু হয় নি।

রেহান বলল, বারান্দায় গিয়েছিলে?

নিতু বলল, কেন, বারান্দায় যাওয়া কি নিষেধ?

রেহান বলল, না নিষেধ হবে কেন!

নিতু উত্তর দিলো না। রেহান পেপার রেখে উঠে নিতুর কাছে গিয়ে বলল, রাগ করো না। একটু দরকার ছিল, তাই কথা বলতে গিয়েছিলাম।

নিতু বলল, রাগ কেন করব, আশ্চর্য! রাগ করার কি আছে! আপনি যাবেন এটাই স্বাভাবিক। তুহিন ফোন করলে কি আপনার রাগ হয়?

রেহান নিতুর চোখে চোখ রেখে বলল, হয়!

নিতু হতভম্ব হয়ে চুপ করে গেল।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে