#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-১৪
নিশুতি রাতে বাড়ির প্রতিটা কোণায় কোণায় যখন নিস্তব্ধতার শো-র-গো-ল তখন ইরশাদের চোখের তারা হঠাৎ জেগে ওঠা বাঘের চোখের মতন জ্বলজ্বল করছে৷ ঘুম নেই চোখের পাতায় শুধু ঘরের অন্ধকার ভেদ করে তারা দুটি কোন এক অদূর দুশ্চি-ন্তায়। ছোট মামার জন্য ময়ূখের ঘরখানা ছেড়ে দিতে হয়েছে। মেহের আর নোরার জন্য ইরশাদের ঘরটাও ছাড়তে হয়েছে তাই দু ভাই মিলে ড্রয়িংরুমের মাঝখানে পাতা তোশকটাতেই নিজেদের বিছানা পেতেছে। বালিশ পেতে ময়ূখ রুমটাকে অন্ধকার করে চোখ বুঁজে শুয়ে আছে। ঘুম নেই তার চোখে তবে সজাগ মস্তিষ্ক বিভোর হয়ে আছে গতকাল বিকেলের ছাঁদের দক্ষিণ কোণটাতে। কাল বিকেলে সে গিয়েছিল ছাঁদ থেকে কাপড় তুলতে। তাদের জন্য নতুন রাখা কাজের বুয়াটা ঠিকঠাক কাজে আসে না বলে কখনো ময়ূখ কখনো ইরশাদ গিয়ে সন্ধ্যের আগে কাপড় ছাঁদ থেকে নিয়ে আসে। ইরশাদ না থাকায় ময়ূখ যায় গিয়েই তার চোখ আটকায় রেলিংয়ে হেলে বসা মৈত্রীর দিকে। পা দুটো সামনে ছড়িয়ে রাখা, কোলের উপর কোন উপন্যাসের বই সেই সাথে সেলফোন৷ মাথাটা কাৎ করে হেলে আছে রেলিং ঘেঁষে আর চোখ দুটো বোজা। দশ কদমের দূরত্বে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো গোলগাল মুখটা সরু নাকটা কেমন অহং নিয়ে পুরো মুখটাকে তীক্ষ্ণ করে রেখেছে। বোজা চোখের পাতায় ঘোর বি-ষা-দের ছাপ আচমকাই ময়ূখের বুকটাতে অসময়ি এক ঝ-ড় তুলে দিল। কয়েক সেকেন্ড আগেও যে মনটা বড় প্রফুল্লচিত্তে ফরফর করে উড়তে উড়তে ছাঁদে উঠছিল সে মনটা ওই এক টুকরো বি-ষা-দ-ময়ী মুখে তাকিয়ে ডানা জাপটানো বন্ধ করে দিলো৷ বুকের কোথাও একটা চি-নচি-নে অনুভূতি যে অনুভূতির বর্ণনা একদিন ভাইয়ের কাছে শুনেছিল। কতক্ষণ ছিল এই অনুভূতি মনে নেই তার শুধু মনে পড়ে সে নিজের অনুভূতিকে মোহ ভেবে দ্রুত পায়ে ছাঁদ ত্যা-গ করেছিল। কিন্তু আজ এই ক্ষণে মন বি-দ্রো-হ করে উঠলো, এই অনুভূতির নাম মোহ নয় অন্যকিছু। বোঝার চেষ্টা করো মন মিথ্যে বলে না।
ময়ূখ নিজের অনুভূতি বরাবরই ঠুনকো ভেবে আসছে কারণ সেতো মজার মানুষ । সুন্দরী মেয়ে দেখলে ফ্ল্যার্ট করে কথা বলা তার পুরনো অভ্যাস। এই নিয়ে তো বছর কয়েক আগেও আম্মার কাছে এক মেয়ে এসে না-লি-শ করে গেল তার নামে। মৈত্রীর ক্ষেত্রে তারচেয়ে বেশি কিছু নয় নিশ্চয়ই। গাঢ় আঁধারে সে তার ভাবনাকে এ পর্যায়ে রেখে অনুভূতিতে লা-গা-ম টেনে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো। ইরশাদ ছটফট করছে; ঘুম আজ তার চোখে আসতে এত বাহানা করছে কেন! নোরার কথাগুলোই কেন এত ঘুরপাক খাচ্ছে মন-মগজ সবটাতে! আবার মনে পড়ে সেসব মুহূর্তগুলোও যেগুলোতে মৈত্রীর অ-স্বা-ভাবিক দৃষ্টি, পরিবর্তনীয় আচরণ৷ আর কারো সামনে তো সে তেমন দৃষ্টি দেখেনি শুধু মাত্র তার সাথের একলা মুহূর্তে মৈত্রীর চোখের ভাষা ভিন্ন দেখেছে। এর মানে কি নোরা যা বলছে তাই সত্যি! না না এসব কিছুই নয় মৈত্রীই মানুষটাই একটু অন্যরকম। অ-স্থি-র ভাবনায় নিজেকে মগ্ন রাখতেও অস্ব-স্তি হচ্ছে ইরশাদের। ময়ূখের দিক থেকে পাশ ফিরে চোখ বুঁজে ফেলল। ঘুমটাই একমাত্র পথ এমন ভাবনাগুলো থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার। যে ভুল বছর দশ আগে করেছে সে ভুলে আর জ-ড়ি-য়ে পড়ার মানে হয় না৷ এমনিতেও তো সে আম্মুর কাছে ওয়াদাবদ্ধ জীবনে কখনো কাউকে ভালো লাগলে সরাসরি বিয়ে করে সংসারী হবে। অথবা আম্মু নিজে কারো কথা বললে তাকেই বিয়ে করবে। তবে আম্মুই কেন জানি পাঁচটা বছর এমন কথা বলেও নিজে থেকে আগাননি পাত্রী খোঁজার কাজে। হয়ত আম্মু চান ইরশাদ যাকেই জীবনসঙ্গী করে নিজে থেকে করুক যেন কখনো মন থেকে জীবনসঙ্গীনির প্রতি বিতৃ-ষ্ণা প্রকাশ না করতে পারে আর আম্মুকেও যেন কোন কথা না শোনাতে পারে।
ঘড়ির কাঁ-টা টিকটিক করে নৈশব্দকে খানখান করে দিচ্ছে শীতল ঘরটাতে। নোরার চোখে ক্লান্তির ঘুম নামছে কিন্তু মেহেরের ছ-টফ-ট আর বারবার পাশ ফিরতে গিয়ে কম্বল টানাটানিতে বিরক্ত হয়ে গেল সে। কিছুক্ষণ চুপচাপ স-হ্য করলেও এবার বেশ রে-গে শোয়া থেকে উঠে বসল৷ চোখ-মুখ কুঁ-চ-কে বি-রক্তি-র সাথে বলে বসল, “হোয়াট’স ইউর প্রবলেম গার্ল? আ’ম সো টায়ার্ড মেহের স্লিপি অলসো…প্লিজ ডু নট ডিস্টার্ব মি!”
“স্যরি নোরা আপু। আমার ঘুম পাচ্ছে না।”
“হোয়াই?”
“প্লিজ নোরা আপু তুমি কি একটুখানে জেগে থেকে আমার মনের কথাগুলো শুনবে? আমার তো বড় আপু তুমিই একমাত্র তাইনা! বান্ধবীদের সাথে সব শেয়ার করি কিন্তু তারা আমাকে ঠিকঠাক বুদ্ধি দিতে পারে না প্লিজ তুমি হেল্প করো একটু। আর অবশ্যই সব বাংলায় বলবে আমি ইংলিশে সবটা বুঝতে পারবো না।”
“হ্যাঙ্গ অন,, হোয়াট ইউ…. আই মিন, কি বলব, কি বোঝাব আর কি হেল্প করব?”
“আমি একজনকে ভালোবাসি সেটা নিয়ে কিছু কথা জানতে চাই, বলতে চাই তুমি কি আমাকে একটু হেল্প করবে?”
ঘরময় অন্ধকার ঘাপটি মেরে চোখের সামনে সবটা কালো করে রেখেছে৷ নোরার চোখ খোলা তবুও সামনে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না এই আঁধারে এমনকি তার গা ঘেঁষে বসা মেহেরকেও না৷ বালিশের পাশ হাতড়ে মোবাইলটা নিয়ে টর্চ অন করতেই গাঢ় অন্ধকারে চির ধরলো। বিছানা থেকে ঘরের সিলিং পর্যন্ত আলোয় পরিষ্কার সবটা। ততক্ষণে চোখের কা-ন্তিকর ঘুমটাও পালাই পালাই করছে। নোরা ভালো করে তাকানোর চেষ্টা করলো মেহেরের দিকে৷ তার মুখটা দেখে আন্দাজ করা যায় বয়সটা অথচ নোরা যখন পনেরো, ষোলো ছিল তখন তাকে দেখে মনে হতো বিশ-বাইশের যুবতী মেয়ে। সে বয়সেই তার দুই কি তিনটা ব্রে-কা-প হয়ে গেছে। কিন্তু তখনও সে ভালোবাসা শব্দটা ব্যবহার করতো না কারণ তার কাছে ভালোবাসা শব্দের কোন অর্থ ছিলো না। যা ছিল তা বয়ফ্রেন্ড -গার্লফ্রেন্ড রিলেশন৷ ইন রিলেশন একটা ছেলের সাথে ডেট, কি-স এসবই তবে তার বান্ধবীরা কেউ কেউ তারও অধিক এগিয়েছে নিজেদরই পরিবারের অবাধ সুযোগ পাওয়ায়। নোরার এইটটিন হওয়ার পর মম সুযোগ দিয়েছিলো কিন্তু তা কাজে লাগেনি পাপার নজরদারিতে আর তারপর দেশের এক ব-দমে-জাজি ছেলে আর ফুপুর বিভিন্ন কথাবার্তার জন্যই সে এখনও ভা-র্জি-ন। কিন্তু আজ মেহেরের মুখে অত বড় একটা শব্দ শুনে তার কেমন মায়া মায়া হলো মেয়েটার প্রতি৷ তাইতো চোখের ঘুমকে পাত্তা না দিয়ে মুখোমুখি বসলো মেহেরের৷ বড় বোন সে এই মেয়েটির। আপন চাচার মেয়ে অথচ এর সাথে তেমন গভীর কোন সম্পর্ক অনুভবই করেনি সে৷ তবে আজ তার ভালোবাসার নামেই হয়ত বোনের ভালোবাসাও জাগলো। সে মেহেরের হাতে একটা হাত রেখে বলল, “বলো, ভালোবাসার গল্পটা।”
“গল্প তো এখনো তৈরি হয়নি আপু৷ আমি ভালোবাসি তাকে কিন্তু সে আমার চেয়ে অনেক বড় তাই সাহস পাই না জানাতে। ভাই বলেছে সে জানতে পারলে আমাকে বকবে। প্রেমিকা হিসেবে মানবে না কখনো।”
“হোয়াট দ্য… আহ্…. মানে কি করে সে ছেলে, আমাদের পরিচিত নাকি স্কুল অথবা অন্য কোথাও দেখেছো?”
“আমাদের পরিচিত আমাদের সবার কাছের।” কথাটা বলার সময় মেহের মাথা নিচু করে নিলো। নোরা খেয়াল করলো মেহের কথা বলতে বলতেই কেমন কাঁচুমাচু করছে। নোরার জানা নেই এ দেশে তাদের আত্মীয় কেমন আছে আর ক’জন আর না মেয়েরের মায়ের বাবার বাড়ির আত্মীয়দের চেনে। সে শুধু তার ফুপির শ্বশুরবাড়ির লোকদের চিনে সেখানে বেড়ানোর কারণেই। তবে মেহের বলছে তারও পরিচিত তার মানে…. মিনিট গড়িয়ে গেল কিন্তু নোরা কিছুতেই আন্দাজ করতে পারলো না ছেলেটা কে হতে পারে। সে নাম জানতে চাইলো৷ মেহের বলল, আমাদের খুব কাছের তো একজনই আছে আপু৷ সে একজন ব্রো-কে-ন মানুষ আর এজন্যই বোধহয় আমি তাকে ভালোবাসি। তার চুপ থাকা, হঠাৎ হেসে ওঠা আবার…”
“এ্যাই ওয়েট মেহের৷ হোয়াট ইউ সে ইউ নো!”
নোরা যেন আঁতকে উঠলো মেহেরের ভালোবাসার মানুষটিকে চিনতে পেরে। তার রীতিমতো মাথা ঘুরাচ্ছে ভাবতেই মেহের এমন একজনকে কি করে ভালোবাসছে বলছে! সে আবারও বলে বসলো, “ব্রো কে নিয়ে কি করে ভাবতে পারো মেহের৷ ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া ব্রো’র বয়স কত?”
“উফফ এমন করে রি-য়া-শন দিও না নোরা আপু। বান্ধবীরাও তো এমন করে সেজন্যই তো তোমাকে জানালাম যেন আমাকে হেল্প করতে পারো।”
অ-ধৈ-র্য্য গলায় বলল মেহের। নোরার তখনও বি-ষ্ম-য় কা-টেনি। মেহের তো বয়সে নোরার থেকেই প্রায় দশ বছরের ছোট সেখানে ইরশাদ তেরো। তার ওপর ইরশাদ বরাবরই মেহের, নোরা আর ময়ূখের কাছে আপন বড় ভাইয়ের মতই আচরণ করেছে সেখানে মেহেরের এমন প্রেমে পড়া সত্যিই হ-ত-বুদ্ধি করল নোরাকে। সে তার বিষ্ময় কাটিয়ে মেহেরের দিকে তাকিয়ে বলল, “লিসেন মেহের, এই যে আমাকে বললে কথাগুলো এগুলো এখানেই বা-ক্সব-ন্দি করে ফেলো৷ প্রথমত তোমার মুখে এগুলো শুনলে ব্রো তোমাকে সবসময় মাথায় টোকা স্যরি ঠোকা ওই যে আঙ্গুল দিয়ে মাথায় মা-র-তো না সেটা এবার আঙ্গুলের পরিবর্তে হাতের তালুতে মারবে সোজা তোমার গালে। চুপচাপ ঘুম দাও সকালে উঠে ব্রো’র দিকে তাকিয়ে তিনবার তওবা করবে। ওই যে ফুপি বলে না তওবা করলে পাপ থাকে না। তোমারও থাকবে না।”
“নোরা আপু এমন বলছো কেন? আমি তো আর কিছুদিন পরই এসএসসি পরীক্ষা দেব। তখন তো আমি আরেকটু বড় হয়ে যাবো। আমার এক ফ্রেন্ড এর বিয়ে ঠিক কলেজে পরীক্ষা দিলেই বিয়ে…”
মেহেরকে থামিয়ে দিয়ে নোরা বলল, “আর তাই তুমিও ভাবছো ব্রো তোমাকে বিয়ে করে নিবে কারণ তোমার বান্ধবী তো কলেজে উঠেই সংসার করবে তুমিও তাই ভাবছো! সিরিয়াসলি মেহের! আমি এক্ষুনি ব্রো’কে ডেকে বলছি সব তোমার বিয়ের শখ এখনই মিটিয়ে দিবে।”
“আপুওওও তুমি এত খা-রা-প কেন? তুমি যে ভাইকে ভালোবাসো সেটা কিন্তু আমি বলে দেব সবাইকে।”
“রিয়্যালি!”
” এখন ক্লিয়ার হলো ব্যাপারটা… গুড নাইট ডিয়ার।”
ফোনের টর্চ অফ করেই নোরা শুয়ে পড়লো কম্বল জড়িয়ে। তার ধারণাই ঠিক মেহের ইম্যাচিউর তাই এটা তার ভালোবাসা কিছুতেি হতে পারে না। শাদ ব্রো তার জন্য শুধুই আবেগ। হয়তো জীবনের প্রথম মোহ শাদ ব্রো তবে এটা একসময় নিশ্চিত কেটে যাবে সো নো ওয়্যারি এবাউট হার৷ নিজেি নিজেকে কথাগুলো মনে মনে শুধিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো নোরা। মেহের হতভম্ব হয়ে বসে আছে তখনও।
রাত বারোটা বাজতে চলল মৈত্রীর ঘুম আসছে না। শেলীর মুখে সন্ধ্যায়ই শুনেছে ইরশাদের মামা আর মামাতো বোনেরা এসেছে বেড়াতে। কিন্তু কথা হলো, দুটো মেয়ে এসেছে তার মধ্যে যে মেয়েটা প্রায় তার বয়সী সে সারাক্ষণই ইরশাদের বেলকোনিতে আসছিল, যাচ্ছিলো। কিন্তু কেন! মনের ভেতর দুটো জিনিস খুব অ-রা-জ-কতার সৃষ্টি করছে খুব৷ এক সেই শ্বেতাঙ্গীনি আর দুই ইরশাদের কথাগুলো। মৈত্রী সেদিন ছাঁদে মৈত্রী নিজে থেকে রু-খে-ছি-ল ইরশাদকে৷ অবচেতন মন আবদার জানিয়েছিল মানুষটার সামনে কিছু সময় বসার। বাতাসের তীব্র হিমকে উপেক্ষা করেই ইরশাদ দাঁড়িয়েছিল রেলিংয়ের পাশে৷ মৈত্রী অনেকটা সময় চুপচাপ যখন কা-টি-য়ে দিচ্ছে তখন ইরশাদ নিজেই বিভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে কথা বলল৷ একসময়ে ইরশাদ দ্বিতীয় বারের মত মৈত্রীর সর্বসময় মৌন থাকার কারণ জানতে চাইলে সে বড় দ্বি-ধা মিশিয়ে জবাব দিয়েছিল, “মুখ খুললেই আপন মানুষ হারিয়ে যায়। চুপ থেকে যদি আপন আর প্রিয় মানুষগুলোকে আশপাশে পাওয়া যায় তবে চুপ থাকাটাই শ্রেয়।”
ইরশাদ তার কথার সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে বলেছিল, “ভুল জানো মেয়ে, চুপ থাকা মানেই দূরত্বের সৃষ্টি। প্রিয় মানুষগুলোর কাছে অনুভূতিরা পৌঁছায় না আর তাতেই হারিয়ে যায় সেই মানুষগুলো। কখনো অনুভূতি লুকানোর চেষ্টা করবে না এতে তোমার প্রিয়রা কখন যে অন্যের প্রিয় হয়ে উঠবে টেরই পাবে না৷” ইরশাদ কথাগুলো বলার সময় তার কণ্ঠ কেমন ধরে এসেছিল তা বুঝতে একটুও ভুল হয়নি মৈত্রীর। তার বুকের কাছে কোথাও একটু চিনচিনে ব্যথার উদ্রেক হয়েছিল ইরশাদের বি-ষ-ন্ন-তা-র আভাস পেয়ে।
চলবে
#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-১৫
“কখনো অনুভূতি লুকানোর চেষ্টা করবে না এতে তোমার প্রিয়রা কখন যে অন্যের প্রিয় হয়ে উঠবে টেরই পাবে না।” ইরশাদের বলা এই একটা কথাই মৈত্রীর ভেতরে বাঁধ ছেঁ-ড়া এক ঢেউ তুলে দিয়েছে। সেই ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছে অন্তর জমিন প্লাবিত হচ্ছে প্রতিক্ষণে। তবে কি তারও এই কথাকে গুরুত্ব দিয়ে নিজের অনুভূতিকে প্রকাশ করা উচিত! কিন্তু কি করে! সেই মানুষটা কি নিজেও কাউকে হারিয়েছে এই ভুলে? সে রাতের পর থেকে মৈত্রীর মাথায় এখন ইরশাদের কথাগুলোই ঘুরে সারাক্ষণ। কাল রাতে ইরশাদের বেললোনিতে দুটো মেয়ের মধ্যে একজন ছিল শ্বেতাঙ্গীনি। মন যে এখন তার আরও ভীত হয়ে পড়েছে ওই শুভ্র কায়া মেয়েটিকে দেখে। নাকি হিংসে হচ্ছে মেয়েটির সৌন্দর্যে আর ভয় হচ্ছে ওই পুরুষটি যদি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে সেই রূপে! কি যে ভাবে তার অবুঝ মনটা কেন যে এত ভাবে! আজও ইউনিভার্সিটিতে যাবে না বলে ঠিক করল কিন্তু বাড়িতেও থাকতে ইচ্ছে করছে না। যতক্ষণ বাড়ি থাকবে ততক্ষণই মন পড়ে থাকবে সেই বেলকোনি আর মানুষটার কাছে। নিজের মনে লাগাম লাগানো জরুরি ভাবতেই সে ঝটপট তৈরি হয়ে নিলো। বাবা এখনও বাড়ি আছে তাই প্রথমেই গেল বাবার কাছে। বাবা অফিসের জন্য তৈরি হয়ে গেছে এখন চুল আঁচড়ে নিচ্ছে যদিও মাথায় তাঁর তালুতে চুলের উপস্থিতি খুবই কম। মৈত্রী বাবার ঘরের সামনে এসে ডাকলো, বাবা আসব?
“হ্যাঁ মা আয়।”
মুজিব সাহেব হাতের চিরুনীটা ড্রেসিংটেবিলে রেখে দরজায় তাকালেন। রোকসানা বেগমও ঘরেই ছিলেন তিনি আলমারিতে কিছু খোঁজাখুঁজি করছেন। মৈত্রী সেদিকে একপলক তাকিয়ে বাবার উদ্দেশ্যে বলল, ” বাবা কিছু টাকা হবে?”
“কত টাকা লাগবে?” মেয়ের মুখে তাকিয়ে জানতে চাইলেন। পেছনে এসে মিশুও দাঁড়ালো। সে পড়তে যাবে সেখান থেকেই স্কুলে তাই স্কুল ইউনিফর্ম পরে একদম তৈরি হয়ে এসেছে। সেও বোনের পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “বাবা আমাকেও দিবে?”
মৈত্রী বলল, “চার পাঁচশো হলেও হয়ে যাবে। আমি আসলে লাইব্রেরীতে যাব একটু সেখান থেকে আবার মার্কেটে৷ ভালো লাগলে দু একটা বইও কিনব তাই।”
“আর তুই কি করবি টাকা দিয়ে?”
“বাবা আমার বন্ধুরা কাল আমাকে চাইনিজ খাইয়েছে তাই আমারও আজ খাওয়ানো উচিত না!” মায়ের দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে বলছে মিশু। রোকসানা বেগম ছেলের কথা শুনে তে-ড়ে এলেন, “কি বললি! তুই না পরশুই নিলি তিনশো টাকা বন্ধুরা তোকে আইসক্রিম খাইয়েছে তাই তুই বার্গার খাওয়াবি বলেছিস। আবার এখন বলছিস চাইনিজ! দাঁড়া আজ তোর পিঠ যদি আমি না ভা-ঙ-ছি তবে রে…” ছেলের প্রতি রে-গে অ*গ্নিশর্মা হলেন রোকসানা। মৈত্রী আর মুজিব সাহেব দুজনেই অবাক হয়ে তাকালেন মিশুর দিকে। এইটুকু ছেলে এখনই টাকা পয়সা নিয়ে এমন লুকো-চু-রি করছে! মুজিব সাহেব পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে এক হাজার টাকার নোট দিয়ে মেয়েকে বললেন, তুই যা মা।
মৈত্রী বুঝলো বাবা তাকে পাঠিয়ে তবেই মিশুর ওপর চড়বেন তাই সে গেল না। আগে মিশুর হাত ধরে বলল, “তুই আমার সাথে আয়।”
“তুই যা মৈত্রী আমি দেখছি।” মুজিব সাহেব আবারও মেয়েকে তাড়া দিলেন। রোকসানা বেগমও স্বামীর কথায় সায় দিয়ে মৈত্রীকে যে বলছেন। মৈত্রী শুনলো না সে বাবাকে আরেকটু বুঝিয়ে মিশুকে সাথে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলো। গেইট থেকে বের হতেই রাস্তা হওয়ায় রিকশা, অটো পেতে আর স্ট্যান্ডে যেতে হয় না তাদের। মৈত্রী ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে জানতে চাইলো সে কি করছে এত টাকা নিয়ে! মিশু আমতা আমতা করে বলল, সে তিন দিন আগে ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছে বাজিতে আর সেখানে বাজি ছিল পাঁচ হাজার টাকা। দলের বাকিরা মিলে বিয়াল্লিশ টাকা জোগাড় করেছে কিন্তু আর আটশো টাকা কিছুতেই সম্ভব নয় তাদের পক্ষে । সবাই মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত পরিবারের তাই দুশো, তিনশো এমন করে কালকের মধ্যে জমা করেছে কিন্তু তাতে টাকা পূরণ হয়নি। এখন সবাই মিলে ধরেছে মিশুকে। মিশুর বাবার টাকা পয়সা সব বাকিদের চেয়ে অনেক বেশি। দলের বেশিরভাগেই টাকা এনেছে মা বাবাকে না জানিয়ে। এক কথায় চু-রি করেছে তারা নিজেদের ঘরে।
“খুব খারাপ কাজ! আমাদের মিশরী এত বড় অ-ন্যা-য়ে সঙ্গ দিচ্ছে এটা তো ভালো কথা নয়।”
মৈত্রী, মিশুর পেছন থেকে হঠাৎ বলে উঠলো ময়ূখ। এত সকালে তাকে আগে কখনো দেখেছে বলে মনে পড়ে না মৈত্রীর। কিন্তু লোকটা কি পরিমাণ বদ! একদম চুপিচুপি পেছনে দাঁড়িয়ে অন্যের কথা শুনছে? প্রচণ্ড রা-গ হলো মৈত্রীর তবে সে তা প্রকাশ করলো না। ময়ূখ তাের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো তার সেই প্রাণখোলা হাসি যা মৈত্রীর কাছে দাঁতখোলা হাসি হিসেবেই ঠিক মনে হয়।
“মিশুর সাথে আমি একটু কথা বলি কেমন! যদি কিছু মনে না করেন মিস চিনি।”
মিশুও মনে মনে চাইলো আপু চলে যাক এখন তাহলেই বেঁচে যাবে সে এখনকার মত।
ময়ূখের কথা শুনে মৈত্রী বলতে চাইলো তার এখন কথা আছে মিশুর সাথে। হয়তো তার অভিব্যক্তিহীন মুখটাকে দেখেও ময়ূখ বুঝে নিলো তার কথা। সে বলল, “আপনি চলে যান মিস চিনি। আমি টিচার না হলেও আপনার চেয়ে ভালো বোঝাতে পারব মিশরীকে।” কথাটা বলতে বলতেই মাথা নেড়েও মৈত্রীকে ইশারা করলো চলে যেতে। আশ্বস্ত না হতে পারলেও মৈত্রী চলে গেল রিকশায় উঠে। মিশুর কাঁধে হাত রেখে ময়ূখও এগোতে লাগলো মিশুর স্কুলের দিকে।
“ক্রিকেট তোমার পছন্দের খেলা তাই না মিশু?”
“জ্বী ভাইয়া।”
“সেই পছন্দের খেলাটার জন্য তুমি অ-ন্যা-য় করতেও পিছপা হও না!”
এবার মিশু চুপ করে থাকলো। সদ্য ক্লাস সিক্সে পড়া বাচ্চার মস্তিষ্ক খুব একটা আত্মসচেতনতা বুঝবে বলে মনে হয় না ময়ূখের। তাই সে চেষ্টা করে মিশুকে তার ভুলটাকে খুব সহজভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার। তাকে বড় স্নেহের সুরে ময়ূখ বলতে লাগলো, পছন্দের কাজের জন্য আমরা অনেক কিছুই করতে পারি কিন্তু সেই করাটা যদি ভুল কাজ হয় তবে তা না করাটা মঙ্গলকর আমাদের জন্য । মঙ্গল কি তা জানো তো মিশু!”
“জ্বী ভাইয়া মঙ্গল মানে ভালো, শুভ।”
“হু আমাদের কি উচিত নয় সে কাজগুলোই করা যেগুলো আমাদের জন্য ভালো!”
“জ্বী”
“বাবা মাকে না জানিয়ে তাদের থেকে টাকা নেওয়া কি সঠিক কাজ?”
“না ভাইয়া।”
“আচ্ছা বলোতো চোর কি কখনো চু-রি করতে এসে বলে কয়ে চুরি করে?”
“না”
“তাহলে তোমার বন্ধুরা তাদের বাবা মায়ের কাছ থেকে না বলে টাকা আনলো সেটা কি চুরি হয়নি?”
এবার মিশু মাথা নিচু করে ফেলল। সত্যিই তো তারা যেভাবে টাকা এনেছে সেটা চুরি করা হয়েছে। ময়ূখ স্কুল পর্যন্ত পৌঁছুতে মিশুকে আরও অনেক কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করলো বাজি ধরা, বাড়ি থেকে না বলে টাকা নিয়ে আসা সবটাই ভু-ল কাজ। এবং সে এও বলে গেল স্কুল ছুটির সময় আসবে আবার এবং মিশুর সকল বন্ধুদের সাথে কথাও বলবে। মিশু স্কুলে ঢুকে যেতেই ময়ূখ চলে গেল বাজারের দিকে। বাবা আজও কোন মাছ পছন্দ করে বসে আছেন। সাথে যথেষ্ট টাকা নেই বলে ইরিনকে ফোন করে বললেন ছেলেদের একজনকে দিয়ে টাকা পাঠাতে। আর তা শুনে আজ আর র-ণমূর্তি হয়নি ইরিন বরং খুশিতে গদগদ হয়ে বলে দিলেন আজও বড় কোন মাছ পেলে যেন পাঠায়। নোরাকে দেখাবে বলেই এত এক্সাইটমেন্ট। নোরা বিদেশে সবই তো খায় ফ্রোজেন, প্যাকেটজাত হোক সেটা মাছ কিংবা সবজি অথবা যেকোন খাবারই। আর সেসব টাটকা পেলেওবা কি দেশের গুলোও তো তাকে দেখাতে হবে। এমন ভাবনা ইরিনের নতুন নয় নোরা যখনি আসে তখনি সে এটা সেটা নিয়ে নোরাকে কত কি দেখাতে চায় কিন্তু নোরা তা আগ্রহ নিয়ে দেখলেও সেগুলো মনে রাখার আগ্রহবোধ করে না। ময়ূখ বাজারে গিয়ে মাছ আর কিছু সবজি নিয়ে বাড়ি ফিরল। আম্মা রান্নাঘরে বসে তখন গাজর গ্রেট করছিলেন দেখে তার বুঝতে বাকি নেই আজ গাজরের হালুয়া হবে৷ সে মাছের ব্যাগ রেখে আম্মার হাত থেকে গাজর নিয়ে নিজেই গ্রেট করে দিল। নোরা আর মেহের এখনো ঘুমে তাই ইরিন পরোটা বেলে চুলার কাছেই রেখে দিয়ে ব্যাগ থেকে মাছ বের করতেই চেঁচিয়ে উঠলেন, “একি কান্ড! আমি না বললাম আস্ত মাছ আনতে এ তো দেখছি পিস করা?”
“এত বড় রুই মাছ কে কাটবে আম্মা আজ তো ভাইও ব্যস্ত সারাদিনের জন্য!”
“অত ভাবনা তো আপনাদের না আমি বার বার করে বলে দিয়েছি মাছ কা-টাবে না। আজ আসুক ওই মতিছাড়া লোক যখন তখন ভু-ল কাজ করাই যেন তার মূখ্য উদ্দেশ্য!”
একা একাই বিড়বিড় করতে করতে কাজ করছেন ইরিন। ময়ূখ সেদিকে ধ্যান না দিয়ে নিজের কাজে মন দিল।
ইরশাদের আজ মাত্রই দুটো ক্লাস। কলেজে এসেই সে জানতে পারলো ইংলিশ টিচার আজ ছুটিতে আছেন আর সেই ক্লাসটা ইরশাদকেই নিতে হবে। প্রথম দুই ক্লাস শেষ করতেই সে ক্লাস রুটিনটা চেক করলো। ইংলিশ ক্লাসে এখনো প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট বাকি৷ কলেজের গেইট থেকে বেরিয়ে লাইব্রেরিতে যেতে হয় বলে সে অফিস রুমে একজন প্রফেসরকে বলে গেল সে লাইব্রেরিতে আছে৷ ইরশাদের পরনে আজ লাইট স্কাই ব্লু রঙের শার্ট৷ স্বভাববশত হাতা ফোল্ড করে কনুইয়ের কাছে গুটিয়ে রেখেছে সে। চুলগুলোও একদম পরিপাটি করে রাখা গালে দু দিনের না কামানো ছোট ছোট দাঁড়ি। এই দাঁড়িতে তার সৌম্য চেহারার সৌন্দর্য একটুও ম্লান হয়নি বরং আরেকটু বড় হলেই হয়ত তার সৌন্দর্য বেড়ে শতসহস্র গুণ বেড়ে যেত। লম্বা লম্বা পা ফেলে ইরশাদ মাত্র মিনিট দয়ের মধ্যে লাইব্রেরিতে গিয়ে ঢুকলো৷ হাতের ফাঁকা সময়টুকু বই পড়ে কাটানো ম-ন্দ হবে না বলেই এখানে আসা। লাইব্রেরির দরজাটা উত্তরমুখী আর তাতে খুব লম্বা একটা টেবিল উত্তর-দক্ষিণমুখী। তাই টেবিলে দক্ষিণে বসে থাকা যে কেউ অনায়েসেই দেখতে পারবে গেইট দিয়ে অন্যদের প্রবেশ। মৈত্রী মার্কেটে ঘুরাঘুরি করে সবেই এসেছে লাইব্রেরিতে। বুদ্ধদেব গুহ’এর বাবলি বইটা সে আগে পড়েনি তবে এক বান্ধবী সাজেস্ট করেছিল এটা। সে কখনোই বইয়ের দু এক পাতা না পড়ে বই নেয় না। যে বইয়ের প্রথম পেজ পড়েই আকর্ষণ বোধ করে সেটাই নিয়ে যায়। আজও তেমনই বইটা একটুখানি পড়ে দেখার উদ্দেশ্যে বসেছিল। প্রথম পৃষ্ঠা শেষ হওয়ার আগেই তার চোখ আটকে গেল লাইব্রেরি দরজায় দাঁড়ানো ইরশাদে। চোখ আর স্থির রইলো না বইয়ের পাতায়। সোজা মাথা আরও বেশি ঝুঁকিয়ে একদম বইয়ের সাথে মিশিয়ে নিচ্ছিলো। ইরশাদের চোখ এড়ায়নি এইটুকু ঘটনাই৷ তৎক্ষনাৎ তার মাথায় এলো নোরার বলা ওই একটা বাক্য, “দ্যাট গার্ল…. লাভস ইউ ব্রো!”
“আসলেই কি তাই!” আনমনেই স্বগোতক্তি করল ইরশাদ৷ চোখের পলক না ফেলেই সে এগিয়ে গেল টেবিলের শেষ প্রান্তে। ইচ্ছাকৃতভাবে সে এগিয়ে একদম পাশাপাশি এসে দাঁড়ালো মৈত্রীর।
“আরেহ তুমি এখানে! আজও কি বই নিতে এসেছো?”
“জ্বী”
“তোমার এই ব্যাপারটা দারুণ তা কি বই পড়ছো?”
“বাবলি।”
“বুদ্ধদেব গুহ’র লেখা! পড়া শেষ হলে রিভিউ শেয়ার কোরো ভালো লাগলে পড়া যাবে। এমনিতেও বুদ্ধদেবের লেখা মানেই দারুণ কিছু।” ইরশাদ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কথা বলতে থাকলো আর অপলক তাকিয়ে রইলো মৈত্রীর দিকে৷ মেয়েটা তার সাথে কথা বলতে গিয়ে সরাসরি একটিবারও তাকায়নি তবে চো-রা চোখে যে তাকে দেখার চেষ্টা করছে সেটা স্পষ্ট টের পেল ইরশাদ। এমনকি তার বলা কথাগুলোর জবাব দিতে গিয়েও কেমন অপ্রস্তুত কণ্ঠ শোনালো মৈত্রীর। সবচেয়ে আ-জ-ব ব্যাপার হলো মেয়েটি আজও বিড়বিড় করে কিছু আওড়াচ্ছিল। ইরশাদ যেমনটা বোঝে মেয়েরা পছন্দের মানুষের সামনে পড়লো লজ্জায় রা-ঙা হয়, তাদের চোখ মুখের রঙ হয় উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত অথচ এই মেয়েটির চোখে মুখে অপ্রকৃতস্থ ভাব, বি-র-ক্তি মিশ্রিত তার ঠোঁটের বিড়বিড়ানি। নিজের উপরই চ-টে গেল ইরশাদ। নোরা কাল কি না কি বলল আর সেও তাই সত্যি ভেবে এই মেয়েটাকে এমন খুঁটিয়ে দেখছে! এভাবে তাকিয়ে থাকলে মৈত্রী কেন যে কোন মেয়েই এমন অস্ব-স্তি বোধ করবে। ইরশাদ আর বেশিক্ষণ থাকলো না সেখানে। বই নিতে এসেছে এমন বাহানায় কিছুক্ষণ শেলফের বই কয়েকটা নেড়েচেড়ে ক্লাস আছে বলে চলে গেছে।
মেহেরের সামনেই বোর্ড পরীক্ষা তাই জোর করেই অনেকটা ঢাকায় পাঠাতে হয়েছে। আফছার নোরাকে বোনের কাছে রেখেই ঢাকায় গেলেন কিছু ব্যক্তিগত কাজে আর মেহেরকে তিনিই নিয়ে গেলেন বাড়ি পৌঁছে দিবেন বলে৷ মেহের যেহেতু আপাতত আর আসছে না রাজশাহী তাই নোরাও মেহেরের ভালোবাসার ব্যাপারটাকে চে-পেই রাখলো। তার মনে হলো মেহের এখনও যথেষ্ট ইমম্যাচিউর তাই হয়ত ইরশাদকে নিয়ে মেহেরের ভাবনা গাঢ় কিছু নয়। কিন্তু তার ভাবনায় ডুবে আছে দোতলার মেয়েটি। শাদ ব্রো হয়ত সায়রাকে নিয়ে আর আবেগতা-ড়ি-ত নয় কিন্তু ব্রো’র মনে যে প্রেম নামের গভীর এক ক্ষ-ত আছে তা কারো অজানা নয়। নোরা ভেবে রেখেছে সে এবার যে কদিন থাকবে ওই ছ-ন্ন-ছা-ড়া, পাগলটাকে নিজের কথা না বলতে পারলেও শাদ ব্রো’র যেই মানসিক টানাপোড়েন তা অন্তত শেষ করে বাড়িতে একটা ভাবি জু-টি-য়ে যাবে।
চলবে