কি ছিলে আমার পর্ব-১+২

0
5507

#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-১

“এইযে মিস একটু চিনি হবে?”

“চিনি!”

“চিনি চিনেন না?”

“আপনাকে চিনতে পারছি না।”

“ওহ বলতে ভুলে গেছি আমি আপনাদের ভাড়াটিয়া। মানে আপনি যদি মুজিব আঙ্কেলের মেয়ে হয়ে থাকেন তাহলে। আম্মা ব্যস্ত তাই আমাকেই পাঠিয়েছে চিনি নিতে।”

“আচ্ছা দাঁড়ান।”

কথাটা বলেই মৈত্রী দরজা থেকে সরে ভেতরে চলে গেল। মিনিট দুয়ের মধ্যেই সে হাতে বাটি ভরে চিনি এনে দিলো দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ছযুবকটিকে৷ মৈত্রীদের নিচতলায় নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে আজ। ভাড়াটিয়া বলতে তার বাবার পরিচিত কেউ একজন সপরিবারে এসেছে৷ সেই পরিবারে একটি ছেলে আছে৷ যে কিনা বেসরকারি এক কলেজের শিক্ষক এ কথা জানে মৈত্রী। কিন্তু ছেলেটি যে দেখতে এমন বাউণ্ডুলে আর খে-চর টাইপের হবে তা ধারণার মধ্যে ছিলো না। সে চিনি ভর্তি বাটি এগিয়ে দিতেই ছেলেটি চোখ দুটো টেনে ঝকমকে হাসি দিয়ে বলল, “আরেহ বাহ্ আপনি তো দারুণ দয়াবতী দেখছি। একটু চিনি চেয়েছিলাম আপনি একদম বাটি ভরে এনেছেন৷ বোঝা গেল আপনি খুব…. বুঝে নিবেন!”

ছেলেটির এহেন কথাবার্তায় অবাক হতে গিয়েও হতে পারেনি মৈত্রী। সে নরম আর মুখচোরা স্বভাবের। সহজেই কিছু সহজভাবে নিতে পারে না। ছেলেটি তার আচরণে বুঝতে পারলো মেয়েটি তার সাথে কথা বলতে চাইছে না সেজন্যই চিনির বাটি নিয়ে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো। যেতে যেতে বলে গেল, “আবার আসবো কোন কিছুর প্রয়োজন পড়লে তখনও এমন ওপেন-হার্ট থাকবেন প্লিজ।”

মৈত্রী তাকিয়ে ছিলো ছেলেটির যাওয়ার পথে। পেছন থেকে রোকসানা বেগম জিজ্ঞেস করলেন, “কে এসেছিলো মৈত্রী?”

-নিচতলার ভাড়াটিয়া।

-কেন?

– চিনি চাইতে।

মৈত্রী সদর দরজা লাগিয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো। রোকসানা বেগম মৈত্রীর সৎ মা তবে সম্পর্কটা তাদের মধ্যে সৎ বা আপনের মত না। কিছুটা খাপছাড়া আর আবেগহীন তবে এতে মৈত্রীর জীবনে কোন অনুভূতির প্রকাশ নেই। না দুঃ-খ না আনন্দ সে স্বাভাবিক সর্বাবস্থায়। আজ রবিবার তার ক্লাস আছে বলে আর দাঁড়ালো না সে। নিজের ঘরে ঢুকে বোরকা পরে হিজাব বেঁ-ধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। আজ আব্বুর হয়ত খেয়াল ছিলো না তাই টাকা দিয়ে যায়নি। মৈত্রী বাড়ির গেইট পার হতে গিয়ে হঠাৎ কারো সাথে ধা- ক্কা লাগায় ক- কিয়ে উঠলো। ধা* ক্কাটা ঠিক বিপরীত দিক থেকে কেউ একজন আসার ফলেই লেগেছে। কপালে হাত ঘষতে ঘষতে মৈত্রী সামনে তাকিয়ে দেখলো সামনের ব্যক্তিটি থুতুনি ঘষছে তার দিকে তাকিয়ে। থুতুনি ছেড়ে এবার মুখের দিকে তাকালো সে লোকটার। এই চোখ তু’লে তাকানোটাই বুঝি বি-প-দ হলো! পুরু ভ্রুদ্বয়ের নিচে সফেদ দুটো চোখ ঠিক যেন সাদা আদুরে বিড়ালের নিষ্পা*প চোখ। সামনের ব্যক্তিটি মৈত্রীর চোখ দেখেই বুঝি একটু অপ্রস্তুত হলো। গেইটের এক পাশে দাঁড়িয়ে স্য-রি বলে মৈত্রীকে বেরুবার জায়গা করে দিলে। লজ্জা এতে মৈত্রীও পেল কিছুটা তবে সেই লজ্জার রেশ তার চেহারার দৃশ্যমান হলো না। মৈত্রী একটুখানি এগিয়ে আবার থামলো। ব্যাগের ছোট পকেটটাতে চেক করলো, নাহ আছে চল্লিশ টাকা। এতেই হয়ে যাবে বাস পেলে। মহল্লা ছেড়ে মেইনরোডে উঠে অপেক্ষা করতে হলো পাঁচ সাত মিনিট তারপরই বাস পেলো।

_______

“কিরে ময়ূখ তোকে বলেছি এককেজি চিনি আনতে তুই এমন বাটিতে করে চিনি কোথায় পেলি?”

ইরিন বেগম প্রশ্নটা করতেই ময়ূখ হি হি করে হাসতে লাগল। তার এই হাসিই বলে দিলো সে কিছু একটা গ- ড়-মি-ল করেছে। সবে মাত্র নতুন ফ্ল্যাটে এসে উঠেছে আজ তারা। ঘরদোর এখনও কিছুই গোছানো হয়নি কিন্তু চা ছাড়া ইরিন বেগমের ঘরের সদস্যগুলো কোন কাজে হাত দিতে পারেন না। কিন্তু নতুন বাড়িতে এসে হুট করেই চায়ের মশলাপাতি খুঁজতে গিয়ে বুঝলেন ময়ূখ আর ইরশাদ উনার রসুইয়ের মশলাপাতির সাড়ে সর্ব-না- শ করে দিয়েছে। তাই ছেলেটাকে পাঠিয়েছিলেন চিনি কিনে আনতে। ইরিন বেগম দেখলেন ইরশাদ এসে ঘরে ঢুকছে তাকেই প্রশ্ন করলেন, “চিনি কোথায় রেখেছিলি তোরা!”

“তোমার গুণধর বা-দ-ড়কে জিজ্ঞেস করো আম্মু।”
শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ইরশাদ চলে গেল খালি একটা ঘরে। ঘরটা তার পছন্দ হয়েছে বলে সকালেই বলেছে এ ঘর তার। কিন্তু সে খেয়াল করেনি সে কলেজে যাওয়ার পরপরই ময়ূখ এ ঘরে তার গিটার আর পিসি রেখে গেছে মানে এ ঘরটা তার চাই। ইরশাদ শার্ট,প্যান্ট বদলে ড্রয়িংরুমে ঢুকলো৷ ময়ূখ কাজকর্ম ফেলে সোফার ওপর গা এলিয়ে ছিল তা দেখে ইরশাদ গিয়ে ধা- ক্কা মেরে তাকে ফ্লোরে ফেলে দিল।

“আহ্ ভাই ধা-ক্কা দিলা ক্যান।”

ইরশাদ জবাব দিলো না। সে প্রথমেই তার পড়ার টেবিলে হাত দিল। ময়ূখ বুঝলো আর বসে থাকা যাবে না৷ ব্যস দু ভাই হাতে হাতে ফার্নিচার গুলো নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে শুরু করল। ইরিন বেগম ততক্ষণে চা আর নুডুলস তৈরি করে নিলেন। এখন আপাতত এসবই খেতে দিবেন ছেলেদের রান্না রাতে করবেন বলে ঠিক করেছেন। ঘন্টা দেড়েক এর মাঝেই বাবা- মায়ের ঘর আর বেলকোনিসহ দ্বিতীয় ঘরটা গোছানো হয়ে গেছে। রুমটা গুছিয়েছে ইরশাদের পছন্দানুযায়ী কারণ ইরশাদের পাখির খাঁচা আর ফুলের টবগুলোর জন্য হলেও বেলকোনিটা লাগবেই। বাধ্য হয়েই ময়ূখকে তৃতীয় এবং ছোট ঘরটাই নিতে হলো। তবুও সে নিতো না যদি না ইরশাদ বলতো, “দু দিন পর আমি বিয়ে করব তখন বউ বাচ্চা নিয়ে বড় একটা ঘর তো আমার লাগবেই তাই না তুই বরং একা মানুষ ওদিকে গিয়ে ম- র।”

ময়ূখ তার ঝাঁকড়া চুলে হাত চালাতে চালাতে বলল, “যাও ভাবীর নামে ছেড়ে দিলাম ঘরখানা এমনিতেও বউ ছাড়াই তোমার বাচ্চার অভাব নেই।” ইরশাদের পাখিগুলোকেই উদ্দেশ্যে করেছে ময়ূখ তা বুঝতে পেরে হো হো করে হেসে উঠল সে।

ক্যাম্পাসের উত্তরে লম্বা একটা পুকুর তার পাড় ঘেঁষে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া আর কদম গাছের সারি। বর্ষায় এ পুকুরের পানি হলদে, লালে সজ্জিত হয় ফুলে ফুলে৷ পড়াশোনা জীবনে মৈত্রীর প্রিয় জায়গা ছিলো স্কুলের লাইব্রেরি আর ইউনিভার্সিটির এই জায়গাটুকু। বন্ধু বান্ধব বলতে দুজন খুব কাছের বান্ধবী হয়েছে তার এই ভার্সিটিতে অথচ গোটা স্কুল আর কলেজ জীবন কেটেছে তার বন্ধুহীন৷ টিউশন পড়াতো যে আন্টি তাকে তিনিই একমাত্র বন্ধু তার শৈশব কৈশোরের। এখন অবশ্য সেই মানুষটার ছায়া পর্যন্ত মাড়ায় না। আজ বান্ধবীরা কেউ আসেনি বলেই একা একা বসে রইলো পুকুরের বাঁধানো ঘাটে। বান্ধবীদের ছাড়া তার ক্লাস করতে ইচ্ছে হয় না একদমই। ক্লাসের অন্যান্যদের সাথে তার একদমই কথা হয় না। অনেকে তাই আড়ালে তাকে ভাবওয়ালী বলেই সম্মোধন করে। পুকুরে শান্ত জল ক্ষণে মৃদু ছন্দ তুলে কেঁপে উঠছে হালকা বাতাসে। মৈত্রী নিষ্পলক চোখে সেদিকে তাকিয়ে ভাবছিল কি করে একটা চাকরি জোগাড় করা যায়! ব্যাগের ভেতর ফোনটা ভাইব্রেশনে তার ভাবনায় ছে-দ ঘটালো। ফোন তুলে কানে নিতেই দেখলো বাবা কল দিচ্ছে। ফোন তুলে সালাম দিতেই বাবা জিজ্ঞেস করলেন, “তুই আমাকে টাকার কথা মনে করাসনি কেন রে! বাবা তো ভুলে গিয়েছিলাম তাই দিয়ে আসিনি।”

“আমি বুঝতে পেরেছি বাবা। আমার কাছে আছে আজ।”

“তুই অপেক্ষা কর আমি তোর ক্যাম্পাসে এসে দিয়ে যাচ্ছি।”

মৈত্রী অবাক হয়নি একটুও বাবা এমনই করে। ভুল করে কখনো টাকা না দিয়ে গেলে কিংবা মৈত্রী কখনো নাশতা না করে এলে বাবা এসে হাজির হয় ক্যাম্পাসে। এই নিয়েও তাদের ডিপার্টমেন্টে বিভিন্ন হাস্যকর কথা হয়। মৈত্রী বাবাকে আটকাতে বলল, “এসো না বাবা আমি বাড়ি ফিরছি।”

“সেকি! আজ ক্লাস নেই?”

“একটা করেছি আর একটা তিনটা থেকে সেটা করব না।”

“আচ্ছা তবে বাড়ি যা আমিও একটু পরই বাড়ি ফিরব। বাপ- বেটি একসাথে লাঞ্চ করব তাহলে।”

বাবাকে বাই বলে ফোন কাটতেই মৈত্রীর চোখে পড়ল নয়নকে। এই ছেলে নিশ্চয়ই এখন তার পথ আটকাবে! ভয়েই আর বসল না সে। নয়ন যেন তাকে দেখতে না পায় এমনভাবে সরে পড়ল জায়গাটা থেকে। মিনিট কতক দাঁড়িয়ে থেকে বাসে উঠে পড়লো সে। বাড়ি ফিরে নিজেদের ডোর বেল বাজিয়ে হিজাবের মুখটা খুলছিল সবে । ভেতর থেকে দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সামনে পা বাড়াতে গিয়ে পা থেমে গেল মৈত্রীর।

“ওয়েলকাম হোম মিস।”

“আপনি!”

“আরে আরে ঘরে আসুন আগে পরে কথা। ”

নিজেদের ঘরের দরজা অচেনা একটি ছেলে খুলছে। তাও আবার এমনভাবে ওয়েলকাম বলছে যেন সে নিজেই মেহমান আর ছেলেটিই এ বাড়ির সদস্য। মৈত্রী ভেতরে ঢুকে বসার ঘরের সোফার দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল কিছুটা। সেখানে দু’জন নারী-পুরুষ বসে আছে সাথে আছেন রোকসানা বেগম। তিনি হাসিমুখে গল্প করছেন তাদের সাথে আর এই ঝাঁকড়া চুলের পাগ-লাটে ছেলেটা এসেছে দরজা খুলতে!

“অত কি ভাবছেন মিস আমরা আপনাদের ভাড়াটিয়া। আপনার আম্মু আমাদের লাঞ্চ করার ইনভাইটেশন দিয়েছেন।”

“ওহ” বলেই মৈত্রী নিজের ঘরে চলে গেল। ময়ূখ হা করে সেদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করল, “বাহ্ আজব সুন্দরী তো! সারাক্ষণ কি মুখটাকে অমন বাংলার পাঁচ করেই রাখে নাকি!”

ইরিন বেগম সোফা থেকে গেইটের দিকে তাকালেন ভয়ে ভয়ে। ছেলেটা এত পা-গ-ল যে কখন কি করে বসে সেই নিয়ে ভয় হয় খুব। এই যে, এখনি তো করলো একটা পাগলামি। বাড়িওয়ালা পরিচিত বলে দুপুরের খাবারের আমন্ত্রণ জানালেন। ইরশাদ আসেনি তাই ইরশাদের বাবা ফখরুল সাহেব, ইরিন বেগম আর ময়ূখ এসেছে লাঞ্চের দাওয়াত গ্রহণ করে। ওদের বাড়ির কলিংবেল বাজছে ছেলে নিজেই উঠে বলল, “আপনি বসেন আন্টি আমি দেখছি কে এসেছে।”
কে জানে বাড়িওয়ালি কি মনে করলো! দুপুর প্রায় আড়াইটার দিকে সকলে ডাইনিংয়ে গেল। মুজিব রহমান বাড়ি আসতে লেট করায় সবাই অপেক্ষা করছিল। এখন সবাই একসাথে টেবিলে বসতেই মৈত্রীকে ডাকলেন মুজিব।
“মৈত্রী আয় তোর আঙ্কেল আন্টির সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।”

গোসল সেরে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে বসেছিল মৈত্রী।বাবার ডাক শুনে তোয়ালে রেখে মাথায় ওড়না টেনে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। এক পলক দেখে নিলো ডাইনিংয়ে কে কে আছে। নাহ, সেই পরিবারটি এখনো বসা তার মানে এখনো কেউ খাওয়া শুরু করেনি। মৈত্রী গিয়ে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো নতুন আঙ্কেল আন্টির উদ্দেশ্য। তারা দুজনে সালাম গ্রহণ করে মিষ্টি হেসে তাকেও বসতে বলল, অল্প কথায় পরিচিত হলো তারা। বাবার দিকে তাকাতেই বুঝলো বাবাও তাকে এখন খেতে ডাকছে। মৈত্রী বসল বাবার পাশের চেয়ারটায়। মৈত্রীর ছোট ভাই মিশুও বসেছে খেতে তবে সে খাওয়া কম তার পাশে বসা উ-দ্ভ-ট ছেলেটার সাথে বকবকই বেশি করছে। খাওয়া পাতে এত কিসের গল্প করা! বিরক্ত হয়েই ভাত মেখে মুখে পুরল মৈত্রী। ঠিক সে সময়েই বেজে উঠলো কলিংবেল। রোকসানা বেগম নিজে খাওয়ার পাশাপাশি সবাইকে সার্ভও করছেন তা দেখে মৈত্রী উঠে গেল। বা হাতে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিতেই দেখলো সেই লম্বা করে বিড়ালচোখা লোকটা। ভাতের লোকমা মুখে থাকায় গালদুটো ফুলে আছে মৈত্রীর তা দেখেই কি লোকটা একটু মুচকি হাসলো! অপ্র-স্তুত হলো মৈত্রী লোকটাও বুঝতে পেরে একটা চাবি এগিয়ে দিলো, “আমার আম্মুকে চাবিটা দিয়ে দিবেন।”

কথাটা বলেই ইরশাদ সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে গেল। অবাক হয়ে আছে মৈত্রী, “এ কোন আজব ফ্যামিলি এসে জুটলো এ বাড়িতে!”

চলবে

#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-২

মেঘের পালক চাঁদের নোলক কাগজের খেয়া ভাসছে…..

“আম্মা এই মেয়েলি গান আমি গাইতে পারব না। অন্যকোন অপশন দাও তো!”

বির-ক্ত হয়ে নাকি সুরে বলে উঠলো ময়ূখ। আকাশ জুড়ে নক্ষত্রের রাজত্ব এক ফাঁকে কাঁ-চির মত বাঁকা চাঁদটাও যেন মুচকি হাসছে। একটুও আগেই কারেন্ট চলে যাওয়ায় ইরিন বেগম তিনটে চিপসের প্যাকেট নিয়ে এসে বসলেন ইরশাদের ঘরের বেলকোনিতে৷ ময়ূখও পেছন পেছন এসেছে এক হাতে তার গিটার অন্যহাতে শতরঞ্জিটা নিয়ে। নতুন ফ্ল্যাটে এসে আজ তারা ব্যস্ততার জন্য ঘরদোর মুছতে পারেনি শুধু ঝাড়ুতেই কাজ চালিয়েছে। এই পুরো ফ্ল্যাটে তাদের সবচেয়ে পছন্দ হয়েছে এই একটা বেলকোনিই। এটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ সবটাই এত দীর্ঘ যে অনায়েসে একটা সিঙ্গেল খাট বিছানো যাবে। ইরশাদ অবশ্য তার পাখির খাঁচা আর দুটো ফুলের টব রেখেছে। আসার সময় বেশিরভাগ ফুলগাছই সে রেখে এসেছে নিজ বাড়িতে৷ এই ভাড়াটিয়া জীবন তার আটাশ বছরের জীবনে দু বার থেকেছে দু বারই শখের গাছগুলো ফেলে এসেছে। তবে এ বাড়িতে বেলকোনি দেখে আফসোস হচ্ছে আরও কিছু গাছ আনলেই পারত!

“আম্মা এ্যাশেজ এর একটা গান ধরি?”

“লাগবে না তোর গান শোনা ওসব ছাইফাই এর গান আমি শুনি না। ইরশাদ তুই একটা গা।”

মুখ ঝামটি মে-রে বললেন ইরিন বেগম। চিপস মুখে পুরতে পুরতে ইরশাদ বলল, “আম্মু তোমরা দুজন যাও তো এ ঘর থেকে। সবসময় শুধু বাচ্চাদের মত লেগে থাকো এটা কেমন? আর তুই কেন আম্মুকে এমন রা-গা-স সেই তো একটু পর পিছন পিছন গিয়ে বলবি, আম্মা আসো তোমার মেয়েলি গানই গাইব!”

ময়ূখ চোখ মুখ কুঁচকে আঁধারেই দেখার চেষ্টা করলো ইরশাদের হাতটা। ছোঁ মে-রে চিপসটা নিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বলল, “আজ ভুলেও এমন হবে না। আমি তো আজ ওসব গান একদমই গাইব না। নতুন এলাকা আশপাশের মানুষ শুনলে আমার ইমেজ থাকবে না ভাই।”

এই ছেলের সর্বদা আ-র্তনাদের কারণ থাকে সুন্দরী মেয়েরা। সে সব করবে শুধু সেই করাটা যেন সুন্দরীদের সামনে তার ইমেজ ব্রাইট করার মত হয়। অন্যথা বেচারা হা-হুতাশ করে ম-রে। ইরশাদের ফা-জলা-মো করার মাঝেই ময়ূখ দোতলার ডান পাশের বেলকোনির দিকে তাকালো৷ আঁধারে আবছায়া চোখে পড়ছে সেখানে কেউ দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে। সারাদিনে এ বাড়ির প্রায় প্রত্যেকটা সদস্য সম্পর্কে জানা হয়ে গেছে তার তাই ইচ্ছাকৃতভাবেই ডাকলো, “আন্টি আমাদের ঘরে গানের কনসার্ট চললে কি খুব বেশি স-ম-স্যা হবে আপনাদের?”

ময়ূখের ডাক এবং উদ্দেশ্য সফল কতটুকু হলো কে জানে বেলকোনির মানুষটা তো তৎক্ষনাৎ ভেতরে চলে গেল। নিজ মনেই ভাবতে লাগলো সে ‘এটা কি হলো!’

ইরিন বেগম ছেলের বাহুতে চ-ড় মে-রে বললেন, ” এত ফাজিল হচ্ছিস কেন দিন দিন। ওটা বাড়িওয়ালি নাকি তার মেয়ে ছিল।”

ইরশাদ বেলকোনির গ্রিলে পিঠ এলিয়ে বসা ছিল মায়ের দিকে মুখ করে। মায়ের মুখের কথাটুকু শুনে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো, নাহ মেয়েটা চলে গেছে!

আম্মার ব-কাঝকা ময়ূখ কখনোই কানে তোলে না। সে দাঁত কে-লিয়ে বলল, মেয়েটা একটা পেঁ-চা-মুখী আম্মা তারে বললে সে জবাব দিত না। এই যে আন্টি ডেকে বললাম এখন দেখবে জবাব আসবে।

মৈত্রী আজ সন্ধ্যা থেকেই আর্ট পেপার, রঙতুলি এসব নিয়ে বসেছিল কিছু বুকমার্ক বানাবে বলে। শখের কাজ তার পেইন্টিং, বুকমার্ক বানানো আর অসংখ্য বইয়ের চরিত্রের মাঝে ডুবে থাকা। কিন্তু এখন কারেন্ট যাওয়ার পর চার্জার বাতিতেও দেখলো চার্জ নেই। ঘরে আরও একটা চার্জার বাতি আছে সেটা এখন মিশুর ঘরে সে পড়তে বসেছে। ভু-লটা তারই দিনের বেলায় খেয়াল করে চার্জ করলে এখন আর এমন হতো না। কিন্তু কি আর করা! এমনিতেও শীত আসছে আসছে করা বাতাসে হালকা হিম হিম আমেজ৷ গলায় ওড়ানাটা পেঁচিয়ে খোঁপা খুলে চুলগুলোকে এলিয়ে দিলো পিঠে। তারপর ফোন হাতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিল আকাশ দেখবে বলে। কিন্তু নিচতলার সেই পা-গল ছেলেটার অমন ফা-তরামো করা ডাক শুনে সে উল্টেপায়ে আবার ঘরে ফিরলো। রোকসানা বেগম সোফায় বসে মোমের আলোয় ছোট কাঁথা সেলাই করছিলেন রোকসানা বেগম। আর মাত্র মাস দুই পরেই উনার ছোট বোনের ডেলিভারি উপলক্ষে। মৈত্রী এসে জানালো নিচতলার ভাড়াটিয়া ডাকছে উনাকে। মৈত্রীর বাবাও সেখানেই ছিলেন। মেয়ের কথা শুনে বেলকোনিতে গিয়ে দাঁড়ালেন স্বামী-স্ত্রী দুজনাতেই। তাদের পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে মৈত্রী। অন্ধকারেই রোকসানা বেগম ডাকলেন, “ইরিন ভাবী! আমাকে ডেকেছেন?”

ইরিন বেগম বেলকোনি থেকে সরে গিয়েছিলেন মাত্রই। ডাক শুনে তিনি এদিকে আসার আগেই ময়ূখ বলল, “জ্বী আন্টি ডেকেছি। আমরা কি বেলকোনিতে বসে গিটার বাজিয়ে গানবাজনা করতে পারি? কোন স-ম-স্যা হবে নাতো!”

ইরশাদ খ-প করে কান চে-পে ধরলো ময়ূখের। বিড়বিড় করে বলল, “তুই এমন মেয়েদের মত এত কথা বলিস কেন রে! আম্মুর চেয়েও বেশি বকবক তুই করিস আজকাল ফা-লতু!”

“আহ্ ভাই কান ছাড়ো ওপর থেকে ওরা দেখলে আমার মান সম্মান কিছুই থাকবে না।”

ময়ূখ নিজের কান ছাড়াতে ছাড়াতে বলল। উপর থেকে জবাব এলো সমস্যা নেই এমনিতেও এ বাড়িতে জনসংখ্যা খুবই কম আর বাড়ির এরিয়া এতই বড় যে পাশের বাড়ি পর্যন্ত ততোটা আওয়াজ যাবে না। মৈত্রীর বাবা এও বললেন, রোকসানা বেগম ভালো গান জানেন যদিও বিয়ের পর হাতে গুণে দু একবারই গেয়েছিলেন। এ কথা শুনে ময়ূখ খুব খুশি হলো। তার অবস্থাটা এমন, “একে তো নাচুনি বুড়ি তারওপর ঢোলের বা-রি!” সে বসে প্ল্যানও করে ফেলল খুব শিগগিরই গানের আসর বসবে ছাঁদে।

নতুন বাড়িতে আসার প্রায় তিন কি চারদিন পরের এক সকালের ঘটনা, ইরশাদ এলাকায় একটু ঘোরাঘুরি করে আশপাশের লোকের সাথে পরিচিত হয়ে জানতে পারলো এখানে একটা খোলামেলা পার্ক আছে। ভোরে প্রায় বেশিরভাগ ডায়বেটিস রোগীরা সেখানে হাঁটতে যায়। মায়ের আজকাল ডায়াবেটিস আপ ডাউন করছে খুব তাই ঠিক করলো কাল থেকে হাটতে নিয়ে যাবে সকাল-বিকাল। সকালে ইরশাদ ফ্রী থাকলেও বিকেলে তার ব্যস্ততা আছে। তাই ঠিক হলো সকালে ইরশাদ বিকেলে ময়ূখ নিয়ে যাবে। ছুটির দিনে বাবা নিয়ে যাবেন তাই আজ বিকেল থেকেই শুরু হাঁটাহাঁটি। ইরশাদ বাড়ি ফেরার সময় বাজার থেকে কিছু ফল কিনেছিলো। বাড়ির গেইটে আসতে তার একটা জরুরি ফোনকল এলো। সেটা রিসিভ করে পাশে দাঁড়াতেই দেখল মৈত্রী নামছে রিকশা থেকে খুব সম্ভবত কিছু কেনাকাটা করে ফিরছে হাতে তার একটা পলি ব্যাগ। ইরশাদ সেই রিকশাটাকেই থামিয়ে মৈত্রীকে ডাকলো, “শোনো”

মৈত্রী ডাক শুনে অবাক হলো ঠিকই কিন্তু বরাবরের মতই সেই অবাক হওয়ার চিহ্ন তার চোখে মুখে নেই। সে জবাব দিলো স্বাভাবিক কণ্ঠে, “জ্বী!”

“বয়সে যথেষ্ট ছোট হবে তাই তুমি করে বলছি, এটা একটু আমার আম্মুকে দিয়ে যেতে পারবে?”

মৈত্রী তাকালো ফলের ব্যাগটার দিকে। সে মাথা নাড়িয়ে জানালো দিতে পারবে। ইরশাদ তার দিকে তাকিয়ে আবার বলল, “বলবে ইরশাদ ভাইয়া দিয়েছে।”

মৈত্রী সেকেন্ড কয়েক তাকালো ইরশাদের বিড়ালচোখে। সমুদ্রের সফেদ ঢেউ নাকি আকাশের পলকা মেঘের ছাপ ওই দু চোখে ঠিক বুঝে পায় না মৈত্রী। সে সাদা চোখের আরও অনেক মানুষ দেখেছে কিন্তু এমন তো কখনও অদ্ভুত লাগেনি তাদের! মৈত্রীর দৃষ্টি আজও অপ্রস্তুত করলো ইরশাদকে তাই সে ফলের ব্যাগটা দিয়ে দাঁড়ায়নি বরং মৈত্রীর আসা রিকশাটাতেই উঠে বসল।

ইরশাদদের ফ্ল্যাটের সামনে থেকেই দোতলায় উঠার সিঁড়ি। মৈত্রী হাতের ব্যাগটার দিকে তাকিয়ে অস্বস্তিবোধ করল। কিন্তু বারবার মনে পড়ছে বাক্যটা, “বলবে ইরশাদ ভাইয়া দিয়েছে।”

লম্বা একটা নিঃশ্বাস টেনে নিয়ে মৈত্রী কলিংবেল বাজালো। এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ মনে মনে সে পাঁচ কাউন্ট করতেই দরজাটা খুলে গেল। এটা তার পুরনো অভ্যাস, যখনই কোন কিছু নিয়ে অ-স্বস্তি, দ্বি-ধা কিংবা অ-স্থি-রতায় ভো-গে তখনই মনে মনে কাউন্ট করে। এতে করে কিছুটা হলেও মন শান্ত হয়। কিন্তু আজ হলো উল্টো দরজায় দাঁড়ানো ব্যক্তিটিকে দেখে। ঢিলেঢালা ছাইরঙা টি শার্ট, থ্রি কোয়ার্টার গ্যাবাডিন প্যান্ট পরনে মাথাভর্তি ঝাঁকড়া চুল যেন এই মাত্র এক ঝাঁক পাখি তার মাথার ওপরই তাদের যু-দ্ধ সমাপ্তি ঘটিয়েছে। মৈত্রীর দিকে তাকিয়ে ময়ূখ তার স্বভাবসুলভ প্রাণখোলা না মানে বলা যায় দাঁতখো-লা হাসিটা দিয়ে ‘হ্যালো’ বলল। মৈত্রী বি-ব্র-ত হলো এমন হুট করে হেসে ওঠা দেখে। হাতের ব্যাগটা ময়ূখের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “বলবে এটা ইরশাদ ভাইয়া দিয়েছে।”

“কিহ!”

“ইরশাদ ভাইয়া দিয়েছে” বলেই ব্যাগটা ময়ূখের হাতে হস্তান্তর করে দ্রুত পায়ে সিঁড়ির দিকে চলে গেল। এখানে আর একটা মুহূর্তে থাকলে নিশ্চিত এই ভ্যাব-লাকান্তের আরও হাসি দেখতে হবে। কি আজব এক ফ্যামিলি এসে জু-টেছে এখানে! একজন ঠিকঠাক পরিচয়ও নেই তবুও একটা মেয়ের হাতে নিজের ব্যাগ ধরিয়ে বলল, “বলবে ইরশাদ ভাইয়া দিয়েছে।”

মনে মনেই ইরশাদকে ব্যঙ্গ করতে লাগল মৈত্রী অথচ এই ব্যঙ্গত্বের একটু আভাসও পড়ল না তার মুখটিতে। একবার ফিরে যদি পেছনে তাকাতো তবে দেখতে পেতো সেই বা-দর ছেলেটা কেমন হাতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে মেঝেতে। দোতলায় নিজেদের ঘরে ঢুকতেই দেখল তিনতলার ভাড়াটিয়া বাচ্চা শিপলু এসেছে তাদের ঘরে। তিন তলায় থাকে হিন্দু একটি পরিবার৷ বছর তিনেক হল এই বাড়ির তৃতীয় তলা তৈরি করেছে মৈত্রীর বাবা। সেই নতুন ফ্ল্যাট হতেই এসেছে তারা। পাঁচ বছরের শিপলু তখন দুই বছরের ছিল। মৈত্রীদের ঘরে তার অবাধ আনাগোনা থাকলেও মৈত্রীকে সে বিশেষ পছন্দ করে না। তার এক কথা গো-ম-ড়ামুখো আপু তার পছন্দ না। মৈত্রীও খুব একটা আহ্লাদ দেখায় না তাকে তবে আজ তার মাথায় মাংকি টুপি দেখে একটু কপাল কুঁচকালো। কয়েক সেকেন্ড স্থির চেয়ে থেকে বলল, “তোকে একদম নিচতলার কোঁকড়াচুলো বাঁ-দড়টার মত লাগছে শিপু।”

নিচতলায় কোন বানর আছে শুনতেই চোখ মুখ বড় করে তাকালো শিপলু। সে চিড়িয়াখানায় গিয়ে একবার দেখেছিল কিন্তু বাড়িতেও যে বাঁদর থাকতে পারে তা শুনে ভীষণ অবাক হলো। মিশু এখন স্কুলে তাই সে তার বিষ্ময় প্রকাশ করার জন্য দৌড়ে মৈত্রীদের রান্নাঘরে ঢুকলো। রোকসানা বেগম দুপুরের রান্না চড়িয়েছেন চুলায়। ব্যস্ত হাতে সবজি কা-ট-ছেন পাশাপাশি চুলায় বসানো ভাতের দিকেও নজর রাখছেন। শিপলু গিয়ে তাকেই জিজ্ঞেস করলো, “আন্টি বাড়িতে কি বাঁদর থাকে!”

“বাড়িতে বাঁদর থাকবে কেন রে! বাঁদর তো চিড়িয়াখানায় অথবা বনে-জঙ্গলে থাকে।”

“মিতি আপু তো বলল নিচতলায় একটা বাঁদর আছে।”

“নিচতলায়!” বলে অবাকই হলেন রোকসানা বেগম পরমুহূর্তেই বুঝলেন মৈত্রী হয়ত কোন কারণে নতুন ভাড়াটিয়ার ছোট ছেলেটার কথা বলেছে। ছেলেটা খুব হাস্যরসাত্মক স্বভাবের আর ভীষণ চঞ্চল। কথাবার্তায় আপন আপন একটা ভাব আছে তার।

বাড়ির আবহাওয়া দু সপ্তাহের মধ্যে একদম পা-ল্টে গেছে। যে বাড়িতে সারাদিন একটা কাকপক্ষীর ডাকও শোনা যেতো না সে বাড়িতে এখন হরদম হৈ-হু-ল্লোড় লেগে থাকে। সকালের সময়টা মুরুব্বিদের কাটে নামাজ শেষে পার্কে গিয়ে হাঁটাহাঁটিতে। এর পেছনে হাত একমাত্র ইরশাদের। শান্তশিষ্ট অথচ খুব স্বাস্থ্যসচেতন আর অমায়িক স্বভাবের ছেলে সে। প্রতিদিন মসজিদ থেকে ফিরেই বাবা আর মাকে নিয়ে হাঁটতে বের হয় নিয়ম করে। ময়ূখ খুব ঘুমকাতুরে তারওপর রাত জেগে বিসিএসের জন্য পড়াশোনা করে সকালটা সে ঘুমেই পার করে দেয়। ইরশাদও তাই আর টানাটানি করে না তাকে নিজেই বাবা-মাকে নিয়ে বের হয়। এমনই দু দিন বের হওয়ার সময় বাড়িওয়ালা আঙ্কেলের সাথে দেখা হলো। কথায় কথায় তিনিও আনন্দের সাথে সঙ্গী হওয়ার আবদার করলেন। দিন কয়েক যেতেই রোকসানা বেগমকেও নিজেদের সঙ্গী করলেন মুজিব সাহেব। তিনতলার ভাড়াটিয়াদের মধ্যে শিপলুর বাবাও যুক্ত হলেন শুধু রান্নাবান্না আর ছোট শিপলু কান্না করবে বলে শিপলুর মা বাদ পড়লেন। হাটাহাটি পর্ব সেরে সবাই সকালের নাশতার পর নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার আগেই আবার বাড়ির সামনে খোলা একটুখানি জায়গাতে হৈ চৈ পড়ে যায় ক্রিকেট খেলার। তাতে খেলোয়াড় থাকে ময়ূখ, মিশু আর শিপলু। কখনো কখনো যুক্ত হয় বিড়ালচোখা মানুষটাও। মৈত্রী শো-রগো-ল শুনলে প্রায়ই মিশুর ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে। আজও সে রোদে ভেজা ঝলসানো বিকেলটাতে অসম প্রতিদ্ব-ন্দীদের খেলা দেখার উদ্দেশ্যেই উঁকি দিচ্ছিলো। ময়ূখের চোখে পড়তেই সে চেঁচিয়ে ডাকলো, “মিস চিনি ক্রিকেট খেলতে পারেন?”

ইরশাদের হাতে বল সে এখন বোলিংয়ের জন্য দাঁড়িয়েছিল গেইটের পাশে। ময়ূখের কণ্ঠ শুনে উপরে তাকাতেই দেখলো জানালার পর্দা নড়ছে দোতলার একটি ঘরের। মেয়েটি বোধহয় লজ্জা পেল। এই ময়ূখটা না!

চলবে
(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে