কি ছিলে আমার পর্ব-১১+১২+১৩

0
2176

#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-১১

কুয়াশায় জমেছে গাছের ফাঁক-ফোঁকর, রাস্তার বাতির নিচ আর ঘুলঘুলির ফাঁকে। রাত পাহারায় থাকা জোনাকিরা একটু একটু করে পথ ভ্র-ষ্ট হয়ে ছড়িয়ে আছে মৈত্রীদের বাড়ির পেছনের লেবু বাগানে। ছাঁদ জুড়ে বসেছে আনন্দের মেলা। সেই মেলাতে ছুটোছুটি করছে মিশু, শিপলু আর ময়ূখ। মাদুর পেতে একপাশে বসে আছে বাড়ির বড়রা আর তাদের মুখোমুখি ইরশাদ আর মৈত্রী দাঁড়িয়ে কাঠ কয়লার তাপে গ্রিল চিকেন তৈরি করছে। হাসি হাসি মুখে বাড়ির প্রতিটা মানুষ গল্পে মশগুল শুধু ঠোঁট চওড়া হয়নি মৈত্রীর। অনুভূতিহীন, নির্লিপ্ততায় ঘেরা লাগছে তাকে বরাবরের মতই। ইরশাদ প্রতিটা লেগ পিসে ওয়েল ব্রাশ করতে করতে মৈত্রীকে বলছে শিকের ওপর ঠিকটাক করে রাখতে। মৈত্রীও শুনে তাই করছে কিন্তু কতক্ষণ! যে অনুভূতি তার চোখে মুখে ছাপ ফেলে না সেই অনুভূতি তার ভেতরের সবটা উ-ত্তা-ল ঢেউয়ের মত ত-লিয়ে দিচ্ছে। কতক্ষণ পারবে সে স্বাভাবিক থাকতে! পারবে না বোধহয় আর এই লেগপিস গুলোতে হাত দেওয়ার সময় অজান্তেই ইরশাদের আঙ্গুল ছুঁয়ে গেছে মৈত্রীকে। সেই একটুখানি ছুঁয়ে যাওয়া তাকে কাঁপিয়ে দিয়েছে ভেতর থেকে যা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে আসছে তার আঙ্গুলের কম্পনের মাধ্যমে। সবার আজ গল্পের মূল বিষয়বস্তু ছেলে মেয়েদের বিয়ে। তার মধ্যেও আবার প্রধান কেন্দ্র বিন্দু রয়েছে আর সেটা ইরশাদ। ঘুরেফিরে সবাই তাকাচ্ছে ইরশাদের দিকে আর একের পর এক প্রশংসা সাজিয়ে বলছে তার বউয়ের ভাগ্য খুব ভালো। শিপলুর মা তো বলেই ফেলল, আন্টি মেয়েটেয়ে দেখছেন না কেন ইরশাদের জন্য ও তো সব দিক থেকেই এখন উপযুক্ত। ইরিন তাকালেন ছেলের দিকে একবার তারপরই হেসে বললেন, “খুঁজো তো মা একটা ভালো মেয়ে। প্রাণচঞ্চল, একটু গল্পমুখর, হাস্যজ্জ্বল হলেই হবে আর শিক্ষা দীক্ষায় ইন্টার, অনার্স যেন ছেলের সাথে তাল মেলাতে পারে। আমারও আজকাল ঘরে সঙ্গী প্রয়োজন একজন।”

ইরিন কেমন একটা চা-পা শ্বাস ফেললেন কথাটা বলেই। ময়ূখ খুব হুড়োহুড়ি করছিলো মিশু, শিপলুর সাথে। আম্মার কথা শুনে সে চেঁচিয়ে বলল, ” ভাইকে কি দরকার আম্মা আমি তো কবে থেকেই বলছি বিয়েটা করিয়ে দাও। আমিও তো বুঝি তুমি এখন নাতি-নাতনির জন্য হা-পি-ত্যেশ করো।”

ময়ূখের কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো একসাথে আর ইরিন চোখ রা-ঙিয়ে তাকালেন।

“ওরে ফা-জি-ল আগে কিছু একটা কর তবে না বউ আনব তোর। পরের মেয়েকে খাওয়াবি এখনই বিয়ে করে? আমি বাপু আমার স্বামীর টাকায় তোদের বউ বাচ্চা পালবো না।” কপট রা-গের ভঙ্গিতে বললেন ইরিন। ময়ূখ দমে যাওয়ার নয় তাই সেও আবার বলল, “তোমার পালতে হবে না বাবা ঠিকই আমার বউ বাচ্চা পালবে শখে তাইনা বাবা!” ফখরুল সাহেব ময়ূখের সাথে তাল মিলিয়ে প্রথমে হ্যাঁ বলে পরে বললেন, না বাপু চিফ মিনিস্টারকে ক্ষে-পিয়ে চ্যালার কথা শুনব না৷ তুই বাবা তোর কাজকর্মে মন দে তবেই বউ পাবি।

আড্ডার আসর জমে উঠেছে ময়ূখের হু-ল্লো-ড়ে। সবসময় না হাসা ইরশাদ আজ প্রাণ খুলে হাসছে প্রতিটা মুহুর্ত। আর তারই পাশে দাঁড়িয়ে কখনো লু-কি-য়ে কখনোবা সরাসরি সেই হাসিতে হারিয়ে যাচ্ছে মৈত্রী৷ অ-গ্নিরঙে র-ঞ্জি-ত হয়ে হচ্ছে , মাঝে- মাঝে ধোঁয়ায় ঝাপসা হয়ে বড় রহস্যময় লাগছিলো ইরশাদের মুখটা। অলৌকিক কোন শক্তি আজ মৈত্রীকে বড় ক-ড়া নেশায় মাতিয়ে দিচ্ছিলো সেদিকে তাকিয়ে থাকতে। অপরদিকে বাচ্চাদের সাথে খু-ন-সুটিতে মেতে থাকা ময়ূখ ছাঁদের অন্ধকারের থেকে লক্ষ্য করছিলো মৈত্রীকে। নিজের মনকে সে সর্বদাই বে-হায়া, বে-শর-ম আর নির্লজ্জ বলেই জানে। এই মনটা তার কথায় কথায় সুন্দরী মেয়েতে গ-লে যায় বলেও তার ধারণা কিন্তু আজ সেই মনটা তাকে বড় ধ-ম-কে উঠলো এই বলে, “তুই বেহায়া শুধু এই একজনাতেই হবি। যা তুই এতদিন দেখিয়েছিস সবটাই ছিল মেকি আসল তো শুধুই এই মৈত্রী। ময়ূখের মৈত্রী ছাড়া আর কিছুই আসল নয় কেন বুঝতে পারছিস না!”
রাতের আকাশে আজ অর্ধচাঁদ আর মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে চাঁদের আলো। শীতগন্ধি বাতাসে হাসনাহেনার তীব্র সুবাস আর ঝিঁঝির ডাক রাতের এই সময়টা বড় মোহনীয় করে তুলছিল কিন্তু সেই মোহমত্ততায় ঠিকঠাক মেতে উঠতে পারছিল না ইরশাদ। থেকে থেকে আজ আবার মনে পড়ছে তার ক্যাম্পাসের সেই রাত। সে রাতেও এমন হিম হাওয়ায় গন্ধরাজের ঘ্রাণ আর সায়রার খোঁপার বেলীতে নে-শাগ্র-স্ত হয়ে উঠেছিলো ইরশাদ। ভেবেছিলো সেই নে-শাতেই সে সায়রাকে তার অর্ধাঙ্গিনী করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করবে এক দল বন্ধু বান্ধবের সামনে। সেদিনও জ্ব-লছিলো এমন কাঠ কয়লায় মাংস আর শেষ মুহূর্তে জ্ব-লে-ছিলো ইরশাদ নিজেও। স্বপ্নাতুর চোখে ঢেলে দিয়েছিল মেয়েটা গরম সীসা। চাইলেও আর ভোলা সম্ভব নয় সে রাত, সেই ধোঁকা। গুণে গুণে পাঁচটা বছরের সুখানুভূতি , আমৃত্যু যন্ত্রণায় বদলে দিয়ে গেছে সে। রাত বাড়ছে সবাই উল্লাসে মেতে উঠে চিকেন, নানে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মৈত্রীর নজর জোড়া এবার আর কোন অ-লৌকিক, অ-পার্থিব কোন আনন্দ টের পাচ্ছে না তবে রহস্যে ডু-ব-তে লাগল ইরশাদের চোখের অনুজ্জ্বল দৃষ্টিতে। লোকটা সদা না হাসলেও তার চক্ষুকোটরে স্নিগ্ধতা বিরাজমান থাকে। কিন্তু এই মুহুর্তে সে দৃষ্টি বড় আবছা মনে হচ্ছে তার। সবাই খাওয়ার ফাঁকে এটা সেটা নিয়ে কথা বলেই চলছিলো। ময়ূখেরও কথা থেমে নেই তবে তার চক্ষুও ব্যস্ত। মৈত্রীকে খুব ভালো করে লক্ষ্য করাটাই তার ভেতরের আচমকা এক ভী-তি সৃষ্টি করল। সে যা ভাবছে তা কি সত্যি! বড়দের কথার মধ্যে এবার মৈত্রীর বিয়ের আলোচনাও শামিল হলো। শিপলুর মা অরুণিমা বলল, “মৈত্রীর জন্য আর কোন সমন্ধ দেখছেন না আঙ্কেল?”

কথাটা মুজিব সাহেবের উদ্দেশ্যে ছিল। তিনি রুটি ছিঁড়ে মুখে পুরতে গিয়ে থামলেন। একপলক মেয়ের দিকে তাকিয়ে বড় উ-দা-স স্বরে বললেন, “সম্ভব নয় মা৷ প্রথমবারই গ-ল-দ করেছি এখন তার মামা -খালা মিলে স-ত-র্কবার্তা দিয়েছে যেন আমি কিছু না করি। তার মামা নিজেই ঢাকায় পাত্র দেখছে। উনার পছন্দমত হলে আমাকে জানাবে।”

“এ কেমন কথা মুজিব ভাই!” ইরিন বিষ্ময়ে জানতে চাইলেন। মুজিব সাহেব এবার লম্বা একটা নিঃশ্বাস টেনে বললেন, “হ্যাঁ ভাবি। আমি নিজ থেকে কিছু করলে আবারও স-ম্প-র্কের মাঝে রা-জনীতি ঢোকাবে। এই করেই তো আমার শান্তি নিয়ে নিলো কতগুলো বছর ধরে৷”

ময়ূখ অবাক হয়ে কথাটা শুনে জিজ্ঞেস করলো মৈত্রীর নানী বাড়ি কোথায় আর মামার পরিচয়। মুজিব সাহেব মৈত্রীর মামার পরিচয় দিতেই ময়ূখ কিছু একটা ভাবল তারপরই বলল, “আঙ্কেল আপনি পাত্র পছন্দ করুন তারপরের ব্যপার আমি দেখছি। চোখ কান খুলে আশপাশেই খোঁজা শুরু করে দিন ভালো পাত্র হাতের মুঠোয় পেয়ে যেতে পারেন।”

ময়ূখের শেষ কথাটা কি মজার ছ-লে ছিল নাকি সিরিয়াসলি ছিল তা যেন কারোই বো-ধগম্য হলো না। ইরশাদ ভাবলো ময়ূখ নিজের কথা বলছে, ইরিনও বুঝলেন ছেলে তার নিজেকেই উদ্দেশ্য করছে। মুজিব সাহেব ভাবলেন অন্যকিছু। তাঁর মনে হলো একটু আগে ইরশাদের বিয়ের কথা হলো ছেলেটা কি তবে তার ভাইয়ের কথা বোঝালো! রাতের আঁধারে মিশে থাকে প্রকৃতির হাজারো র-হ-স্য। কিছু রহস্য চক্ষু গোচর হওয়ার মত তো কিছু অদৃশ্য। মুজিব রহমানের বাড়ির ছাঁদের আজকের রাতের৷ আঁধারটাও তেমনই র-হ-স্যেঘেরা এক ক্ষণ তৈরি করেছে। আড্ডায় মজে থাকা মানুষগুলো শীত উদযাপনের উদ্দেশ্যেই তো আজ ছাঁদে এসে জমায়েত হয়েছিল। ইরশাদ সেই উদযাপনে দ্বিগুণ জৌলস আনার প্র-য়াসেই ময়ূখকে ইশারা করল গান গাইতে৷ গান মানেই ময়ূখের প্রাণ। এতে কখনো সে না বোধক জবাব দেয় না কাউকে। ইরশাদের ইশারা পেয়েই সে নিচে গিয়ে তার গিটার আনলো। সবাই মাদুরে যখন গোল হয়ে বসা তখন সে ইরশাদকে একটুখানি সরিয়ে তার পাশে বসে পড়ল। উপস্থিত প্রত্যেকেরই মনযোগ এখন তার দিকে৷ কয়েক সেকেন্ড এমনিতেই তার টেনে এলোমেলো শুরু তুলল। মনে করার চেষ্টা করলো কোন গানটা তার ঠিক গাইতে ইচ্ছে করছে। খুঁজে পেলো না মনপছন্দ কোন গান তখন ইরশাদই তাকে নাম বাতলে দিল, ” ভিনদেশী তারা গাইতে পারিস।”

মৈত্রীর দিকে এবার আঁড়চোখে তাকালো ময়ূখ। চিলেকোঠার বাতির আলোটা মৈত্রীর পুরো মুখটাতে পড়ছে না বলে একপাশই দেখতে পেল সে৷ বুঝে উঠতে পারলো না মেয়েটির দৃষ্টি কোথায় সেই দৃষ্টিতে এই মুহুর্তে কি ভাসছে! নিজেই তাই চোখ বুঁজে কল্পনায় তুলে নিলো মেয়েটির নির্জিব দৃষ্টি। মনে পড়ে কালকের সেই অ-প্রস্তুত সাক্ষাৎ। ময়ূখ ঢাকা থেকে ফিরেছে খুব ভোরে। রাতের আধঘুমন্ত দেহটা ক্লা-ন্তিতে বড় বেসামাল লাগছিলো তার। ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে কলিংবেল বাজানোর সময় সে হাতের ব্যাগটা দ-প করে ছেড়েছিল হাত থেকে তখনই টের পেল কেউ এসে দাঁড়িয়েছে পাশে। এবল তারই ভু-লের জন্য ব্যাগটা পড়েছে সেই মানুষটির পায়ের ওপর। কি আশ্চর্যজনক ঘটনা, মানুষটি পায়ের আঙ্গুলে ব্যাগের চাপ খেয়েও একটু আহ্ বলে আ-র্ত-নাদ করেনি। কুঁচকে উঠেনি তার বর্গাকৃতির কপালের চামড়াটা আর না ছোট-বড় হয়েছে তার চোখ। ময়ূখ কাঁচুমাচু করে ব্যাগ তুলে যখন স্য-রি বলল মেয়েটি তখন তাকিয়েছিল অচেনা পথিকের মতন যেন হঠাৎ তাদের দেখা হলো। স্মরণীয় থাকার মত কোন মুহূর্ত নয় তবুও স্মরণে বড্ড তো-লপা-ড় করছে ময়ূখকে এই চিমটি খানেক সময়। মুহূর্তটুকুর স্মৃতিচারণ করতে করতেই সে সুর তুলল, মুখ খুলল, আমার ভিনদেশী তারা, একা রাতেরই আকাশে

তুমি বাজালে একতারা, আমার চিলেকোঠার পাশে।

ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে; তোমার নাম ধরে কেউ ডাকে…..

“ইমরান তুমি কি তোমার মাকে একটু বোঝাতে পারো না, কেন সে আমাকে কথায় কথায় ফকিন্নির মেয়ে বলে? এভাবে আমার পক্ষে তোমার সংসারে টিকে থাকা অসম্ভব বলে রাখলাম।” চার বছরের সায়েমকে বই নিয়ে বসিয়েছে সায়রা। ছেলেটাকে আর কিছুদিন পরই স্কুলে দিতে হবে অথচ এখনও তার হাতেখড়ি হলো না শ্বশুড়ির জন্য। একমাত্র নাতি কি আর কারো বাড়িতে থাকে না! তাই বলে আদরে আহ্লাদে তাকে পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে রাখবে! প্রতিনিয়ত সায়রার ঝা-মেলা চলে তার শ্বাশুড়ির সাথে কখনো ছেলেকে নিয়ে, কখনো রান্না নিয়ে কখনোবা ইমরানের সাথে ঘুরতে যাওয়া নিয়ে। অর্থেবিত্তে তারা সমৃদ্ধ হলেও ইমরানের মা স্বভাবে বড্ড গোঁয়ার। পুরো বাড়িতে চার জায়ের মধ্যে বড় জায়ের সাথে এসব নিয়ে তার খুব মিল তবে ইরশাদের মা আর অন্তুর মায়ের সাথে মিল নেই তার কিছুতেই। কিন্তু সায়রার প্রতিদিনকার অভিযোগে অ-তিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে ইমরান। আজও অফিস থেকে ফিরে স্ত্রীর সেই অ-ভিযো-গের ঝুলি দেখেই তি-ক্ত হয়ে ধ-ম-ক লাগালো সে। টাইয়ের নট ঢিলে করতে করতেই সে সায়রাকে বলল, “মা কি তোমাকে এমনি এমনি ফ-কি-ন্নি বলে গালি দেয়! এই যে তোমার টিপিক্যাল বউদের মত স্বভাব স্বামী ঘরে ফিরতেই তার মায়ের নামে অভিযোগের পসরা সাজিয়ে বসো এসব তো ছোটলোকি স্বভাবই। তোমার বাড়িতে এসব সাধারণ ব্যাপার হলেও এই বাড়িতে নয় তা কি তুমি এত বছরেও বোঝোনি?”
রূঢ়ভাবে কথাগুলো বলে ইমরান অকস্মাৎ গাল চে-পে ধরলো সায়রার। আজ আবার তার মেজাজ বি-ক্ষি-প্ত হয়ে আছে সন্ধ্যে থেকে। পুরনো বন্ধুদের সাথে একটুখানি আড্ডা জমিয়েছিল অফিসেই। কথায় লথায় পুরনো সব গল্প উঠে এলো আড্ডায় আর তাতে ছিটকে বেরিয়ে এলো ইরশাদ-সায়রার প্রণয়ের গল্পটাও । অতীত পুরনো কাসুন্দি ঘাটলে তা শুধু দুর্গন্ধই ছড়ায় তার প্রমাণ যেন আরও একবার পেয়েছে ইমরান। আর তাই বাড়িতে পা রাখতেই সায়রার মুখের কোন কথায়ই তার সহ্য হচ্ছিলো না। রা-গে, ক্রো-দে সে গাল চেপে ধরল অথচ তার খেয়াল রইলো না বিছানার ওপর ভ-য়া-র্ত চেহারায় তাকিয়ে থাকা ছেলেটার কথা। মুখ চেপে ধরেই সে বলে গেল, “আমাকে ভয় দেখাস সংসার না করার! তুই আমার সংসার করবি নাতো কি ইরশাদের কাছে ফিরে যাবি? তোর কি মনে হয় তোর মত বে*শ্যাকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ইরশাদ ম-রে যাচ্ছে? তোকে আজীবন বেঁচে মরে আমারই থাকতে হবে এমনি এমনি তো আর তোর চৌদ্দ গুষ্টিকে পালছি না!”

চার বছরের সায়েম চুপটি করে বাবার আ-চর-ণ দেখছিল এবার তার মায়ের মুখটা দেখে মনে হলো মা খুব ক-ষ্ট পাচ্ছে। মায়ের জন্য ভয়ও হলো তার তাই আত-ংকিত হয়ে কান্না করে দিল। সায়েমের কান্নামাখা কণ্ঠ শুনতেই যেন হুঁশ এলো ইমরানের। সায়রাকে ছেড়ে দিয়ে ছেলেকে কোলে নিতে হাত বাড়াতেই সায়েম সরে গেল৷ ততক্ষণে ইমরানের মাও চলে এসেছেন নাতির কান্না শুনে। মাত্র মিনিট কয়েকের তফাতেই সায়রার সংসার হয়ে উঠলো জ্ব-লন্ত আ-গু-নের শ-শ্মা-নঘর। তবে সায়রা ভাবে এসব তো তার গা সওয়া হয়ে যাওয়ার কথা ছিল এতদিনে। গুণে গুণে পাঁচ বছর তো নেহায়েত কম সময় না তবুও কেন সে সইতে পারছে না!

চলবে

#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-১২

শীত পড়েছে জাঁকিয়ে; সকালসন্ধে কুয়াশায় চারপাশ বড় ঘোলাটে দেখায় এখন। মৈত্রীর ক্লাস আজ নয়টায় কিন্তু এক ভার্সিটি ফ্রেন্ড সুমির বিয়ে ঠিক হয়েছে হুট করে। আজ রাতেই আকদ তাই সকালেই বাড়ির লোকজন হলুদ, মেহেদী পরাবে তাকে। মৈত্রী ক্লাস মিস দিতে চায়নি বলেই তাকে সকালে গিয়ে মেহেদী দিয়ে দিতে হবে বলে আবদার জুড়ে দিলো বান্ধবীটি। তবে সে রাতের বেলায় যাবে না আগেই বলে রেখেছে। মৈত্রীর কাছে খুব বেশিই ঘনিষ্ঠ কেউ নেই তবুও বান্ধবীটির মন রাখতেই সে বাবাকে বলে সকাল সকাল তৈরি হলো। হলুদ আর গোলাপির মিশ্রণে সুতির মধ্যে চমৎকার একটি জামা পরেছে। দু হাতেই গোলাপি রঙের চুড়ি আর কানে ঝুমাকো দুল। এমনিতেও ক্লাসে যাওয়ার সময় সে চুড়িগুলো খুলে ব্যাগে পুরবে সেই পরিকল্পনা করাই আছে কিন্তু মুখটা একদম প্রসাধনবিহীন ভালো লাগবে না বলে হালকা মেকআপ করেই নিলো। ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক লাগিয়ে আবার ভাবলো মুছে ফেলবে পরমুহূর্তেই মনে হলো থাক টুকটাক মেহমান থাকবে বলেছে সুমি৷ চোখে কাজল আঁকতেও ভুল করল না মৈত্রী । কিন্তু বাড়ি থেকে বের হবে ভাবতেই কেমন লজ্জা লাগল। এত সকালে এমন মেকআপ নিশ্চয়ই হাসবে সবাই! আবার মনে হলো নিজেকে ভালো লাগছে এমন সাজগোজে দেখতে। নিজের ভালো লাগার উর্ধ্বে আর কি হতে পারে! ওড়না মাথায় দিয়ে পেঁচিয়ে তার ওপর শাল জড়িয়ে নিয়েছে মৈত্রী। বসার ঘরে ঢুকতেই দেখলো মিশু নাশতা করছে স্কুলে যাবে বলে। সেও গিয়ে পাশাপাশি বসতেই শেলি এলো রান্নাঘর থেকে। সেতো দেখেই চেঁচিয়ে উঠলো, ” হেব্বি লাগতাছে কিন্তু আফা। বিয়াতে কি সত্যিই যাইতাছেন?”

“চুপ কর তো এত চেঁচিয়ে কথা কেন বলিস শেলি?এতোটাও সাজিনি কিন্তু… ”

“এইটুকুনই ভাল্লাগতাছে মৈত্রী আপা। আপনের বেশি সাজ ভালা দেহায় না।” ফট করে মুখের ওপর কথাটা বলেই শেলির মনে হলো কাজটা ঠিক হয়নি। মৈত্রী আপা হয়ত ক-ষ্ট পেয়েছে তাই আঁড়চোখে তাকালো মৈত্রী আপার মুখের দিকে। না সেদিকে কোন চিহ্ন নেই রা-গ, দু-ঃখের। এএাই বড় কনফিউজড করে সবাইকে। মেয়েটার অভ্যন্তরীন অনুভূতির ছাপ কখনো তার চোখে মুখে পড়ে না৷ মৈত্রী চুপচাপ প্লেট টেনে টেবিলে থাকা দুটো পরোটা নিলো। নিঃশব্দে খাবার খেয়ে সে একটু জোরেই বলল, “আমি গেলাম সুমিকে মেহেদী দিয়ে দিতে। সেখান থেকে ভার্সিটিতে চলে যাব।”

কথাটা কার উদ্দেশ্যে বলা তা কেউ বুঝলো না৷ রোকসানার মনে হলো কথাটা হয়ত তাকে শুনানোর জন্যই জোরে বলল। জানিয়ে বের হলো এটাও ভালো।

“তুই এখন এই অবস্থায় যাবি মাছ আনতে?” ইরিন ছেলেকে প্রশ্ন করেই বাজারের ব্যাগটা তার হাতে দিল। আজও ইরশাদের বাবা মাছ কিনে বাড়ি আসতে পারছেন না৷ তাই ছেলেকে ফোন করে বললেন নিয়ে আসার জন্য কিন্তু ময়ূখ এখনো বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। ইরশাদ ভাবলো মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরে আবার তৈরি হয়ে লাইব্রেরির জন্য বের হতে হয়ত দেরি হয়ে যাবে। তাই একদম তৈরি হয়ে বের হচ্ছে তা দেখেই ইরিন তাকে না পাঠিয়ে ময়ূখকে পাঠাতে চাচ্ছিলো। ইরশাদ জাগাতে চাইলো না ভাইটাকে এজন্য নিজেই বের হলো। ব্যাগটাকে গুটিয়ে একদম ছোট করে পকেটে ঢুকিয়ে ঘরের বাইরে যেতেই দেখা হলো মৈত্রীর সাথে।

“হাই, কেমন আছো?”

“জ্বী! ভালো।”

হঠাৎ ইরশাদকে পাশে দেখে হ-ক-চকিয়ে গেছে মৈত্রী। নিজেকে অ,-প্রস্তুত সে কখনোই হতে দেয় না কারো সামনে কিন্তু ভেতরটা তো তেমন না। ভেতরে ভেতরে ঠিকই অ-প্রস্তুত হয়ে পড়ে, আ-তংকিত হয়, আনন্দে প্রফুল্লও হয় কিন্তু তার যে সেই প্রকাশ ক্ষমতা নেই এখন আর! ইরশাদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েও সে অপ্রস্তুত হয়ে গেছে। ইরশাদ তার লম্বা লম্বা পা ফেলে মৈত্রীর আগেই বাড়ির সীমানা পার করতেই মৈত্রীর মনে হলো ভদ্রতা দেখিয়ে তাকেও পাল্টা প্রশ্ন করা যেত, আপনি কেমন আছেন? কিন্তু না এতটুকু বিনয়ীও নয় সে। তারপরই মনে হয় ইরশাদ তাকে প্রশ্নটা করার সময় কি একবারও তাকায়নি? মনের ভেতর একটা খুঁতখুঁত রয়ে গেল ইরশাদ কি তাকে একদমই চোখে মেলে দেখেনা! মন থেকেই জবাব এলো, কেন দেখবে?

ফখরুল সাহেব আজ অফিসে যাওয়ার সময় বাজারে একবার মাছের আড়তে ঢু মেরেছিলেন। সেখানেই হলো অ-ঘ-টনটা। না চাইতেও চোখ আটকে গেল বড় মাপের একটা বোয়াল মাছে৷ এখন এটা যতক্ষণ না কিনবেন মনটা পড়ে থাকবে এখানেই। তাই মনকে খুশি করতে মাছটা কিনেই ফেললেন এবং আরও বড় এক ভু-ল করলেন সেটা না কা-টি-য়ে। তিনি ভাবলেন ছেলেরা এত বড় বোয়াল মাছ আগে কখনও দেখেনি৷ ইরশাদ এলেই তিনি মাছ হাতে দিতেই বড় বড় চোখে তাকালো বাবার দিকে। ফখরুল সাহেব ছেলের চোখ দেখে অর্থ পড়ে নিলেন, “এত বড় মাছ নিলে আম্মু মাছের আগে আমাকে আর তোমাকেই কে-টে ফেলবে আব্বু।”

তাই নিজেই এবার আমতা, আমতা করে বললেন, “দ্যাখ কত বড় আর টাটকা মাছটা। তুই আর ময়ূখ তো কখনো দেখিসনি এমন৷”

“তাই বলে না কে-টে নেব? আম্মু এটা তুলে ধরতে পারবে না কাটবে তো দূরর।”

“আরে নে না বাবা অত কথা বলিস না। তুই বাড়িতে রেখে চলে যাস নিজের কাজে তারপর তোর আম্মুই বুঝবে বাকিটা।”

ইরশাদও বাবার কথামতো বাড়ি গিয়ে মাছটা রেখেই চুপচাপ বেরিয়ে এলো। মনের মনে ভয় ঠিকই রইলো আজ আম্মু বাপ- ছেলেদের কি যে হাল করবে কে জানে! ইরশাদের ভয় সত্যি হলো। সে বাড়ি ফিরল দুপুর দুইটারও কিছুক্ষণ পর। এসেই সে উঠোনের এক পাশে ছোট্ট একটা জটলা দেখতে পেল। অবাক হয়ে সেদিকে পা বাড়াতেই তার চক্ষু ছানাবড়া। ময়ূখ বসে আছে ছোট পিঁড়িতে, তার সামনে রাখা মাংস কা-টা-র চা-পা-তি পাশেই বড় বোল, পানি মানে পুরো বিশাল আয়োজন নিয়ে বসেছে যেন মাছ নয় সে বড় কোন গরু জ-বা-ই করে বসেছে এখন মা-ংস কা-ট-তে। তার আশপাশে এখন ভীড় জমেছে শিপলু আর শেলির৷ আম্মু কোমরে হাত রেখে রা-গী চোখে তাকিয়ে তাকে ধ-মকে যাচ্ছে সমানে, ” ঠিক করে ধর, বড় কা-টাটা আগে কেটে নে।”

রোকসানা বেগম, শিপলুর মাও আছে তাদের পাশে। রোকসানাকে বলতে শোনা গেল, “আহা ভাবী ছেড়ে দেন ছেলেটাকে ফখরুল ভাই বোধহয় শখ করে পাঠিয়েছেন।”

“না ভাবী ওর শখ আজ আমি বের করে ছাড়ব। সাথে ছেলেদেরও। আরে এ্যাই তুই কখন এলি যা কাপড় পাল্টে আয় দুটো মিলে কা-ট-বি এটা আজ পারলে তোর বাপকেও নিয়ে আয়। কত্ত বড় ফাইজলামি করে এই বয়সে! মাছওয়ালারাই তো বললে কে-টে দিত তা না উনি ফোন করে বলে কিনা, ছেলে দুটোকে দেখানোর জন্য কিনেছে।”

ইরিন থামছেনই না। ইরশাদের বোঝা হয়ে গেল আজ মাছের একটা রফাদফা না করে আম্মু থামবে না। সে দ্রুত ঘরে গিয়ে শার্ট বদলে টি শার্ট গায়ে দিয়ে লুঙ্গি পরে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। তাকে দেখতেই ময়ূখের মুখ এবার উজ্জ্বল হয়ে গেছে। ভাই এসেছে মানে তার আর চি-ন্তা-র কিছু নেই। সত্যিই ইরশাদ এসে চা-পা-তি নিয়ে ময়ূখকে বলল সরে যেতে। সকলের মাঝে দাঁড়িয়ে শেলি বিড়বিড় করলো, “আল্লাহগো কেরাশে আবার লুঙ্গি পিন্দাই আইয়া পড়ছে হের কি এট্টু শরম করে না!”

অরুণিমা শুনলো শেলির বিড়বিড় সে ধ-ম-কে বলল চুপ কর তো! শেলি চুপ করলো কিন্তু থেমে থাকলো না। সে দৌড়ে দোতলায় গিয়ে মৈত্রীকে ডাকতে লাগলো।
“আপা গো জলদি সোফার ঘরের জানালায় খাঁড়ান মজার জিনিস দেখতে।”

মৈত্রী সবেই গোসল সেরে এক হাতে চুল মুছতে মুছতে অন্য হাতে মোবাইল স্ক্রল করছিলো৷ শেলির হড়বড়িয়ে ডাক শুনে বসার ঘরে ঢুকতেই দেখলো মেয়েটা জানালায় কিছু দেখছে। কৌতূহল নিয়ে সেও তাকাতেই চোখ দুটো ছোট ছোট হলো। এক হাতে চাপা-তি অন্য হাতটা মাছের মাথায় ধরা। ভীষণ মনযোগে একটা একটা করে কো-প লাগাচ্ছে মাছটা ধরে। আনমনেই সে হাতে থাকা ফোনটার ক্যামেরা অন করে ফুল জুম করে ভিডিও করলো দৃশ্যটা। শেলি তো একবার মৈত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেই ফেলল, “মৈত্রী আপা দেখেন কি সুন্দর দৃশ্য দেখেন না।”

“তুই-ই দ্যাখ।”

ইরশাদ সুন্দর করে মাছটা কে-টে ধুয়ে একদম রান্নার উপযোগী করে তবেই ছাড়লো। আর ময়ূখ ফোন করলো ফখরুল সাহেবকে। তিনি ফোন ধরতেই ময়ূখের প্রথম বাক্য ছিল, ” আজ বাড়ি আসো তুমি আম্মার সাথে আমিও তোমার খবর করব বলে রাখলাম।”

ফখরুল সাহেব তো বুঝে গেলেন আজ শ-নি আছে কপালে। মা ছেলেরা যে তাকে দেখে নেবে এক হাত ময়ূখের ফোন করাটাই তার প্রমাণ। ভদ্রলোক এবার শ-ঙ্কি-ত স্বরে বললেন, এত রে-গে কেন আছিস বলো তো। বাবা তো তোদের কথা ভেবেই অত বড় মাছ পাঠালাম।”

“আমরা বলেছি অত বড় মাছ এমন আস্ত রেখেই পাঠিয়ে দিতে!”

আর কিছু বলে লাভ নেই। ছেলের কথাও ঠিক এমনিতেই তো ইরিনের কোমরের হাড় ক্ষ-য় সে ওভাবে বসে বেশিক্ষণ কিছু করতেই পারে না।

রাতের খাবারে আজ ফখরুল সাহেব ভীষণ চুপচাপ। অন্যান্য সময় খাবার টেবিলে সবচেয়ে বেশি কথা বলে ফখরুল সাহেব আর ময়ূখ। আজ এ দুজনই বেশ চুপ কারণ একটু আগেই ইরিন চিৎ-কার চেঁ-চামেচি করেছে সেই সাথে বলেছে এক সপ্তাহ সকালের নাশতায় রুটি, পরোটা হবে না শুধু ভাত আর আলুর ভর্তা খেতে হবে। তাই মনের দুঃখে বাবা চুপচাপ খাচ্ছে কিন্তু ময়ূখ চুপ একটু আগেই মেহের বলেছে ছোট চাচা আর নোরা দেশে আসবে। নোরা দেশে আসা মানে তাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কত জায়গায় যে ঘুরতে যেতে হবে ঠিক নেই। ইরশাদ বরাবরই চুপচাপ খেতে পছন্দ করে সে নিজের মত খাচ্ছে এদিকে হাতও কে-টে গেছে অনেক জায়গায় সেটার জ্বলাও উপেক্ষা করছে জো-র করে। খাওয়া পর্ব চুকে যেতেই ইরশাদ চশমাটা চোখে এঁটে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছিল৷ ছোট মামার মেয়ে নোরা অনলাইন দেখতেই নক দিলো,

“হাই শাদ ব্রো।”

“হাই নোরা।”

“আর ইউ ফ্রী ফর ফিউ মিনিটস, আই ওয়ান্ট টু টেল ইউ সামথিং সিক্রেট।”

“আ’ম ফ্রী নোরা।”

“ওকে দ্যান…”

নোরা কথা কমপ্লিট না করেই কল দিলো ইরশাদকে। নোরা বলেছে সিক্রেট কথা ইরশাদের মনে হলো ঘরে কথা বলাটা তবে সেফ নয়। সে আম্মুকে বলে ছাদের জন্য বেরিয়ে গেল। ফোন কানে ধরতেই ওপাশ থেকে নোরা বলে উঠল তার বাবা আর মা ডি-ভো-র্স নিয়েছে। ইরশাদ কথাটা শুনে ভাবল, অনেক বিলম্ব করে নিয়েছে। তাদের তো আরও বছর তেইশ আগেই নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নোরার সামনে সেসব কথা শুনল না৷ ময়ূখের মুখে শুনেছে নোরা দেশে আসবে সাথে মামাও। কিন্তু এখন বুঝলো হুট করে দেশে আসার পেছনের কারণ তবে এটা। কানাডিয়ান মায়ের রঙটা ছাড়া আর কিছুই পায়নি নোরা তার চেহারায় আর অনুভূতিতে। নোরা দেখতে হুবহু মেহেরের মতই মানে তার বাবা চাচার সাদৃশ্য। অনুভূতি আর আচার আচরণে তো সম্পূর্ণ ফুপুর পেয়েছে। ইরিনও এ নিয়ে খুব গর্ব করে তার ভাতিজীরা তার মত হয়েছে। ইরশাদ অনেকটা সময় নিয়ে নোরার সাথে কথা বলল ছাঁদে দাঁড়িয়ে। কথা শেষে নিচে নামার জন্য সিঁড়ির দিকে এগোতেই দেখা গেল মৈত্রী উঠে আসছে ছাঁদে।

“কেমন আছেন?”

ছাঁদে ভাঙাচোরা একটা চিলেকোঠার কামরা। তার দরজার সামনেই অল্প আলোর হলদে বাতিটা জ্বলে আছে। ইরশাদ সে আলোয় দেখলো মৈত্রীকে। মেয়েটার চোখে মুখে আন্তরিকতা প্রকাশ পাচ্ছে না প্রশ্নটার সাথে। তবে কি আজ ফরমালি দেখাতেই প্রশ্ন করলো? কারণ, ইরশাদ তো সবসময় দেখলেই জানতে চায় সে কেমন আছে? ইরশাদ জানতে চায় আন্তরিকতার সাথে, একই বাড়ির সদস্য বলে, একে অপরের পরিচিত বলে। তার সেই প্রশ্নে কোন লৌকিকতা, আনুষ্ঠানিকতা থাকে না৷ তবে সে মৈত্রীর লৌকিকতাকেও সম্মান করে জবাব দিলো, “ভালো আছি, তুমি কেমন আছো?”

“ভালো।”

“এত রাতে ছাঁদে! বাতাসে প্রচণ্ড শীতল ভাব ঠান্ডার সমস্যায় ভুগতে পারো।” স-ত-র্ক বাক্যটা বলেই ইরশাদের মনে হলো এই মেয়েটাকে কথাটা বলা উচিত হয়নি। তাকে অবাক করে দিয়ে মৈত্রী কথার জবাব দিলো, ” জ্বী, আজ শীত বেশি পড়েছে বলেই বের হয়েছি। ঘরে থাকতে ভালো লাগছিলো না একদম।”

“ওহ!” ইরশাদ আর কি বলবে বুঝতে পারছিলে না। মৈত্রী সহজ করে দিলো কথার পর্বটা। সেই আবার বলল, “আপনি কি নিচে চলে যাচ্ছেন?”

“কথা বলতে এসেছিলাম ফোনে একটু।”

“কথা শেষ?”

“হু”

“নিচে চলে যাচ্ছিলেন বোধহয়! ”

“হ্যাঁ একা ছাঁদে বসে কি করতাম? তাই!…”

“একটু কি বসবেন?”

ঠিক মুখোমুখি দাঁড়ানো নয় তারা তবুও দুজনের মুখটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তারা আবছা আলোয়। কুয়াশা এসে ধোঁ-য়ার মত চিলেকোঠার বাতিটাকে ঘিরে ধরেছে। সেই ঘের ছাড়িয়ে আলোটা স্পষ্ট হয়ে পড়ছে না তবুও দুজনের চোখ স্পষ্ট দেখছে। একজন চশমার আড়ালো তো অন্যজন খোলা চোখে। একজন হৃৎপিণ্ড কাঁ-পা-নো অনুভূতির সাথে অন্যজন কৌতূহলী মন নিয়ে। ইরশাদ কৌতূহলী হয়েই তাকায় মৈত্রীর দিকে। এ বাড়িতে আসার পর কে-টে গেল আজ কত গুলো মাস। বছর হতে বাকি নেই বেশি অথচ এই মেয়েটাকে সে কখনো দু ঠোঁট ছড়িয়ে হাসতে দেখেনি, নাকের পাটা ফুলিয়ে কখনো রে-গে যেতে দেখেনি এমনকি মেয়েটা কথা বলার সময় যে কথাই বলুক তাতে এক্সপ্রেশনের ছিটেফোঁটাও উপস্থিত থাকে না৷ মৈত্রী এই যে মাত্রই বলল তাকে বসার কথা তাতেও বোঝা গেল না মেয়েটা কি তাকে আদেশ করল, অনুরোধ করলো নাকি আবদার! তবে মন বলল একটু না হয় বসাই যাক!

ইরশাদ চারপাশে নজর বুলিয়ে ছাঁদের ফুলগাছ গুলোর দিকে তাকালো। এটা বাড়ির পেছন দিকে হওয়ায় রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ালেও নিচ থেকে কারো দেখার সম্ভাবনা নেই। এ পাশে বাড়ির পরে মৈত্রীদেরই লেবু বাগান সাথে ঝোপঝাড়। ইরশাদ রেলিংয়ের গায়ে হেলে দাঁড়িয়ে বলল, এখানে তো বসার জায়গা নেই তাই দাঁড়ালাম। মৈত্রী কথাটা শুনে নিজেও একটু এগিয়ে গেল ইরশাদ যেদিকটায় দাঁড়িয়ে আছে। হাতের ফোনটার বারবার ফ্ল্যাশ অন অফ করতে থাকলো আর মনে মনে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করল। নিজেই দাঁড়াতে বলে এখন বলার মত কিছু না পেয়ে অ-স্থির হয়ে উঠলো মৈত্রী। ইরশাদ নিজেই কি মনে করে কথা বলতে শুরু করল।

” কোন ক্লাসে যেন পড়ো? ইন্টারে!”

“অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ।”

ইরশাদের মনে পড়লো এমন করে বলল, “আচ্ছা তুমি যে এত চুপচাপ থাকো এর পেছনে কি কোন কারণ আছে?”

ইরশাদের প্রশ্নটা ভালো লাগেনি মৈত্রীর। এমনিতেই তো বুকের ধু-কপুকা-নি লুকিয়ে রেখে সে কথা বলছে তার সাথে! কত যে ছ-টফটা-নি, কত উথাল-পাথাল ঢেউ হা-ম-লা চালিয়ে যায় অন্তর গহীনে সে খবর তো কেউ জানে না৷

চলবে

#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-১৩

ইরিনের ঘরে আজ চাঁদের হাট বসেছে। তার ছোট ভাই আফছার আর তার মেয়ে নোরা দেশে ফিরে সোজা তার বাড়ি এসেছে। ছোট ভাই বলতে ইরিনের ছোট নয় ভাইদের মধ্যে ছোট সে৷ আজ অনেক গুলো বছর পর ভাই এলো দেশে। নোরা অবশ্য প্রথমবার বাবার সাথে এসেছিলো, তারপর বাবা- মা দুজনের সাথে একটা ভ্যাকেশন কাটিয়ে গেছে। বয়স আঠারো পার করতেই সে আর কারো সাথে নয় একা একাই চলে আসতো দেশে। চাচা আর ফুপুর বাড়ি সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও ট্যুর দিত আর সঙ্গী হতে হতো ময়ূখকে। এজন্যই অনেকটা অপছন্দ করে ময়ূখ তার একমাত্র চাচাতো বোনটিকে। নোরা এলে সে ছাড়া সবাই খুশি হয়। আবরার খন্দকার বিধর্মী মেয়ে বিয়ে করায় ভাইকে তাড়িয়ে দিলেও ভাতিজীকে কখনো পরের মত দেখেনি। এই নিয়েই সকল ল-ড়া-ই ইরিনের তার বড় ভাইয়ের সাথে। তার এক কথা ভাতিজী তো সেই নারীরই জন্ম দেওয়া কেন তাকে মেনে নেয়! আবরার খন্দকার এর এক জবাব, ভাতিজি আমাদের র-ক্ত তাকে মানবোই, ভাই অন্যায় করেছে তাই শা-স্তি হিসেবে ভাইকে কাছে টানে না তার বউ বিধ-র্মী বলে তাকে বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নেওয়া হয়নি। বড় ভাইয়ের এ কথার প্রেক্ষিতে অবশ্য ইরিন ক-ড়া এক জবাব দিয়েছিলেন, “বিধর্মী বউ মানা যায় না কিন্তু অন্যের সংসারের বউকে নিজের বাড়ির বউ ঠিকই মানা যায় তাইনা!”

এই তো শেষ দু ভাই বোনের মধুর সম্পর্ক। এরপর আজ কতগুলো বছর চলে গেছে কেউ কারো সাথে দেখা করে না, কথা বলে না এমনকি ময়ূখের জন্য যে টাকা পয়সা পাঠাতো সেগুলোও একসময় ফেরত দিতে লাগল ইরিন৷ ময়ূখ যখন কলেজে পড়ে, মোটামুটি বুঝতে শিখেছে তখন থেকে সে নিজেই তার আব্বুর পাঠানো টাকা রাখতে শুরু করলো। ইরিন প্রথম প্রথম এই নিয়ে রা-গা-রা-গি করতে লাগলে ময়ূখ বোঝালো এটা কেন ছাড়ব? যা আমাদের তাতো বাইরের লোকই বেশি ভোগ করছে আমরা এখন ছাড় দিলে তারা আরও পেয়ে বসবে। ময়ূখের কথার অর্থ ছিল মেহেরের মায়ের আগের সংসারের ছেলে মেয়ের ভোগ করার কথা। সত্যিই তারা ভোগ করে অনেকটা যার একাংশও ময়ূখ নেয় না অথচ সে অর্থপ বিত্তে সর্বোচ্চ ভাগ ময়ূখের একার, নানা বাড়ি আর দাদা বাড়ি উভয় পক্ষ থেকেই৷ ইরিন রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে একবার তাকালো তার বসার ঘরটিতে। সোফার সামনে থেকে টি টেবিল সরিয়ে ইরশাদের বিছানা থেকে একটা তোশক এনে বিছানো হয়েছে। তাতে চাদর বিছিয়ে চার কাজিন ইরশাদ, ময়ূখ, মেহের আর নোরা বসে আছে পাশাপাশি। আফছার আর ফখরুল বসেছে সোফায়। সবার সামনে বড় এক বোল ভর্তি পপকর্ণ আর সমুচা। সবাই একসাথে খাচ্ছে আর হাজারো গল্প জুড়ে দিয়েছে। ইরিন কফি বানাচ্ছে আর এদিকে দেখছে সবাইকে। কত আনন্দ আজ তার ছোট্ট কুটিরে। বড় ভাইয়া যদি আজ মিল থাকতো তাদের সাথে তবে কি ইরশাদদের মত তারাও তিন ভাই বোন মিলে এমন আড্ডা জমাতে পারতো না! সেই কবে বয়স বিশ হবে তখন বোধহয় শেষবার একত্রে বসে গল্প করেছিলো তিনজনে। ইরিনের তখন বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। ঢাকা টু রাজশাহী কত দূর তাকে পর করে দিচ্ছে সে কান্না করলেও ভাইরা তাকে আনতে যাবে না। তার বাজে রান্না খেতে যাবে না এমন আরও কত কি বলে দু ভাই তাকে জ্বা-লিয়েছে খুব আর সেও বোকার মত সে কথা শুনে বিয়ে করবে না বলে কান্না জুড়ে দিলো। তার এই কান্না করা নিয়েও কত ক্ষে-পিয়েছে তারা। একসময় ইরিনের বিয়ে হলো সে অনেক দূর চলে এলো বড় ভাইয়া ব্যবসায়ের কাজে ব্যস্ত দিন কাটিয়ে বোনের কাছে আসতে পারে না খুব একটা। ছোট ভাইও পড়াশোনা পি এইচ ডির সুবাদে দেশ ছাড়লো এরপর সে বিদেশীই হয়ে গেল। বড় ভাই বিয়ে করলো তখন ইরশাদ ছোট। একমাত্র বোন হিসেবে বড় ভাইয়ের বিয়েতে বাইশ দিন আগেই বড় ভাই এসে নিয়ে গেল বোনকে। সেই তার শেষ লম্বা সময় কা-টানো মা- বাবা আর ভাইয়ের সাথে। এরপর বাবা- মা মা-রা গেল, ছোট ভাই বিয়ে করে বিদেশী হয়ে উঠলো ইরিনও পর হলো ভাইদের আহ্লাদ থেকে। ছোট ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ রইলো কিন্তু আগের মত আহ্লাদ রইলো না। ময়ূখের মা যখন মা-রা গেল তখন বড় ভাইয়ের আবারও সংসার হোক এমনটা ভেবে নিজেই চেয়ে এনেছিলেন ময়ূখকে সেই দু বছর বয়সে। সেই থেকে আজ তেইশ বছর পেরুচ্ছে ময়ূখ তারই সন্তান। ফখরুল সাহেবও এদিকে থেকে পিছিয়ে নেই। নিজের দ্বিতীয় সন্তান না থাকার আফসোস যেন তিনি ময়ূখেই পুষিয়ে নিয়েছেন। কোনদিন বলেননি এ আমার ছেলে নয়, সে আমার স্ত্রীর ভাতিজা বরং এটা আমার ছোট ছেলে এই বলেই পরিচয় দিয়েছেন। তবে তাঁর পরিবারের অনেকেই বিষয়টা পছন্দ করতেন না বলে আত্মীয়মহলে অনেক কথাই বলেছে। পুরনো সকল কথা ভাবে ভাবতে ইরিনের কখন যে গাল বেয়ে অ-শ্রু-স্রোত বইলো তার খেয়াল রইলো না। হুঁশ এলো ময়ূখের ডাকে, আম্মা কফি কি আজ দিবা না!

“এইতো নিয়ে আসছি।”

ইরিন চোখ মোছার জন্য ওড়না মুখের কাছে নিতেই ময়ূখ এসে দাড়ালো রান্নাঘরে৷ সে দেখলো আম্মার ভেজা গাল। অশ্রুর কারণ বুঝতে তার একটুও সময় লাগলো না। সে নিজেই হাতের তালুতে গাল মুছে বলল, “তোমার খেচর ভাইকে মিস করছো নিশ্চয়ই?”

ইরিন চোখ রাঙালেন, ধ-ম-কও লাগালেন, “লাগাব একটা অসভ্য ছেলে। আমার ভাইকে খে-চ-র বলিস কোন সাহসে?”

“যেই সাহসে সে আমার আম্মাকে কষ্ট দিলো।”

“সেটা আমি বুঝব, তুই আর কখনও আমার ভাইকে বাজে কথা বলবি না বলে দিলাম। আর হ্যাঁ তুই সেবার ঢাকা গিয়ে ভাইয়াকে কি বলে এসেছিস? আমার ভাই লোভী, ই-ত-র লোক! তোর মধ্যে কি একফোঁটা শিক্ষাও নেই আমার দেওয়া? আমি তো তোকে শি-ষ্টা-চার শিখিয়েছি আর সেই তুই কিনা তোর বাবাকে গা-লি দিয়েছিস?”

ইরিন প্রথমে আবেগে বিমর্ষ থাকলেও এবার যে রে-গে গেছে তা বুঝতে সমস্যা হলো না ময়ূখের। মেহের আজ এসেই ঢাকার সেদিনের ঘটনা আম্মার কানে দিয়েছে খ-ব-র আছে আজ ওই শ-য়-তানটা! আপাতত আম্মার সামনে থেকে সরে যাওয়া মঙ্গলকর হবে তার জন্য তাই কফি সাজানো ট্রে নিয়ে দ্রুত পায়ে রান্নাঘর ছাড়লো সে। মেহেরকে তো পরে দেখে নিবে একহাত। ইরিন একা একাই রান্নাঘরে বকে গেলেন ময়ূখকে তবে সেই আওয়াজ বসার ঘরের কেউ বুঝলো না কিছু। আড্ডা চলল অনেকটা সময় নিয়ে তারপর রাতের রান্নায় গেল ইরিন। ময়ূখ আর মেহের দু ভাইবোন মিলে রান্নাঘরে এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে ইরিনকে। ফখরুল আর আফছার বের হলেন বাড়ি থেকে একটু বাজারে ঘুরবেন শালা -দুলাভাই। ইরশাদের হঠাৎই কল এলো কলেজের কোন এক প্রফেসরের প্রশ্নপত্র নিয়ে। সে তাই সে কাজে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছিল নিজ বিছানায়। নোরা সবাইকে ব্যস্ত দেখে ঢুকলো ইরশাদের ঘরে। ইরশাদের বেলকোনিটা বেশ সুন্দর বলে তার ভালো লাগে সেখানে দাঁড়াতে৷ এখনো তাই সে ঘরে ঢুকে সোজা বেলকোনিতেই গেল। শীত শীত আবহে বাইরের বাগানের একপাশ আঁধারেও দারুণ লাগছিলো দেখতে। এই মফস্বল এলাকাও মৈত্রীদের বাড়ির এ অংশটাতে একদম গ্রাম্য ভাব পাওয়া যায়। রাত নামতেই আঁধারে ঢাকা লেবু বাগানের এক পাশ দেখা যায়। সেখানে জোনাক জ্বলে, ঝিঁঝির ডাকও আসে। লেবু বাগানের শেষ দিকের আম, জাম গাছগুলোর কোনটাতেই বোধহয় ঝিঁঝির বাস। আঁধারে জোনাকের জ্বলা নেভা দেখেই উৎফুল্ল হয় নোরা। শীতের নির্মল হাওয়ায় চোখ মুখ বুঁজে আসে আপনাআপনি। নাকের ডগা, হাতের আঙ্গুল ঠান্ডায় প্রায় বরফ হয়ে আছে। ইউরোপীয় ঠান্ডার কাছে এ ঠান্ডা হয়ত কিছুই না তবুও তার এই ঠান্ডা অনুভূতিটাকে পাতলা শার্ট গায়ে ভীষণ ঠান্ডা মনে হচ্ছে। দু হাতের তালু ঘষতে ঘষতে সে চারপাশে তাকাচ্ছিলো। চারপাশ দেখতে দেখতেই নক্ষত্রে ভরা আকাশটার দিকে তাকাতেই দোতলার বা দিকের বেলকোনিতে চোখ আটকে গেল। আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছিলো একটি নারী দেহ। ঘরের আলো হয়ত জানালা কাঁচ গলিয়ে বেলকোনিতে এসে পড়ছে তাতেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটার দৃষ্টি এদিকেই। হয়তবা এই বেলকোনিতে। নোরার মনে হলো বিকেলে যাকে দেখেছিলো এখানে সেই নিস্পৃহ, নিশ্চুপ মেয়েটিই বেলকোনিতে আছে এখনও। সে একবার উপরে তো একবার ইরশাদের দিকে তাকালো।

“ব্রো!”

“হু”

ইরশাদ ল্যাপটপে কাজ করতে করতেই সাড়া দিলো।

“হু ইজ শি?”

“হোয়াট?”

“হু ইজ শি?”

“হুম আর ইউ টকিং এবাউট?”

“ইন সেকেন্ড ফ্লোর’ বেলকোনি।”

ইরশাদ একটু ভাবলো পরে বলল, “ল্যান্ডলর্ড’স ডটার অর শেলি।”

“হু ইজ শেলি?”

কৌতূহলী শোনালো নোরার কণ্ঠস্বর। ইরশাদ তা বুঝতে পেরে শেলির পরিচয় বলল, “দ্য গার্ল স্টে’স মৈত্রী’স হাউজ।”

কথা বলতে বলতেও ইরশাদের হাত চলতে লাগলো ল্যাপটপে। এই ফাঁকে একবার মেহের এসে ঢুকেছিল কিন্তু তার মনে হলো নোরা রাতের আকাশ দেখছে আর ইরশাদ কাজে ব্যস্ত। কাউকেই ডিস্টার্ব করার ইচ্ছে হলো না বলে সে আবার চলে গেল। মেহের চলে গেছে বুঝতেই আবার মুখ খুলল, “শেলি ইজ আ মেইড অফ দেয়ার হাউজ? ”

“দে সিস হার এজ আ ডটার অফ হাউজ দ্যাটস হোয়াই কান্ট সে সারভেন্ট।”

“ওহ! আই গট ইট।”

“দ্য গার্লস ইজ ভেরি কাম এন্ড লুকস এট সামহোয়্যার ব্লা-ন্ক-লি। এজ ইফ হার টু আইস লাইক ডে-ড ফিশ।”

“আর ইউ টকিং এবাউট মৈত্রী!”

“দ্যাট গার্ল… লাভস ইউ ব্রো।” নোরা এবার কিছুটা থেমে থেমে বলল বাক্যটা। ইরশাদের কানে প্রবেশ করার ন্যানো সেকেন্ডেই সে ভীষণ চ-ম-কে উচ্চারণ করলো, “হোয়াট কাইন্ড অফ জোক ইজ দিস নোরা!”

নোরা জবাব দিলো না ইরশাদের কথার। সে আরও কিছুক্ষণ চুপচাপ চেয়ে রইলো উপরতলার বেলকনিতে। মৈত্রী উ-সখুস করছে, বারংবার বেলকোনিতে আসছে, যাচ্ছে আর অ-স্থির হয়ে ভাবছে ওই শ্বেতাঙ্গীনি কে! ওই বেলকোনিতেই বা এতক্ষণ ধরে কেন আছে ওটা তো সেই বিড়ালচোখা মানুষটার ঘর। তবে কি কেউ এসেছে সেখানে তার খুব কাছের! বুকের ভেতর দামামা বা-জ-ছে আনন্দের নয় ভ-য়ে-র। মন চঞ্চল হয়ে উঠছে অথচ কাউকে কিছু প্রকাশ করার মত নেই৷

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে