#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_২৯
.
শাকিলের বিরুদ্ধে থানায় কেস করেছে অর্ঘমা। তাকে সাহস জুগিয়েছে নীরদ। কিন্তু কেস করেও কোনো লাভ হলো না। অফিসার কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না এই কেসে। উল্টো ডায়েরি করার সময় অর্ঘমাকে অনেক আপত্তিকর প্রশ্ন করছিলেন থানার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। মাঝে মাঝে অশ্লীল ভঙ্গিতে হাসছিলেন। অর্ঘমার কান্না পাচ্ছিল প্রচন্ড কিন্তু সে কাঁদেনি। কারণ পাশেই বসেছিল নীরদ। নীরদ কোনো কথা না বলে চুপচাপ অফিসারের প্রশ্নগুলো শুনছিল। অর্ঘমাকে দেখে অফিসারের চোখে জেগে ওঠা লালসা তার চোখ এড়ায়নি। সে আর এক মুহূর্তও দেরি করল না। অর্ঘমাকে নিয়ে চটজলদি বেরিয়ে পড়ল থানা থেকে। সারা রাস্তায় কোনো কথা হলো না দু’জনের মাঝে। অর্ঘমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে আবারও বেরিয়ে পড়ল নীরদ।
___
রাত বাজে প্রায় সাড়ে দশটা। নীরদের খবর নেই সারাদিন। কোথায় যে গিয়েছে ছেলেটা কে জানে! অভ্রও বাসায় আসেনি এখনো। নিধি পড়াশোনা করছে নিজের রুমে। ভার্সিটিতে পরীক্ষা চলছে। অর্ঘমা এই সেমিস্টার ড্রপ দিবে ভেবেছে। নীরদ বা অভ্রও এতে আপত্তি করেনি।
বেলের শব্দ শুনতেই অর্ঘমা দৌড়ে গেল দরজা খুলতে। কিন্তু দরজা খুলে সে নিরাশ হলো। নীরদ নয় বরং অভ্র এসেছে। ভাইকে দেখে জোর করে হাসার চেষ্টা করল অর্ঘমা। অভ্রও হেসে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলল,
-“সবসময় এভাবেই হাসিখুশি থাকবি। বিগত দিনগুলোতে তোর মুখে এই হাসিটা আমি বড্ড মিস করেছি।”
কোনো জবাব দিল না অর্ঘমা। তাবে তার মুখের হাসিটা চওড়া হলো। কিছুর শব্দ পেয়ে অভ্রর পেছনে তাকিয়ে দেখে নীরদ আসছে সিঁড়ি বেয়ে। তার হাতে একটা কার্টন। তাকে দেখেই অভ্র তার কাঁধ জড়িয়ে ধরল। নীরদ পাশ ফিরে অর্ঘমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-“সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম। সেজন্য আসতে পারিনি। তুমি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করেছ?”
অর্ঘমা ভদ্র বাচ্চাদের মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। নীরদ মুচকি হেসে বলল,
-“গুড গার্ল। তুমি ঘরে যাও। আমি আসছি একটু পরে।”
নীরদের কথা মেনে চুপচাপ চলে গেল অর্ঘমা। নীরদ অভ্রকে নিয়ে অভ্রর রুমে গেল। তার কিছু কথা আছে অভ্রর সাথে।
___
নীরদ যখন অর্ঘমার ঘরে এলো তখন অর্ঘমা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল জানালার সামনে। নীরদ পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরতেই ভয়ে আঁতকে উঠল অর্ঘমা। ঘাড় ঘুরিয়ে নীরদকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। ভয়ের কারণে তার হৃদপিণ্ড খুব জোরে ধুকপুক করছে। নীরদ বুঝল ব্যাপারটা, কিন্তু কিছু বলল না। অর্ঘমার মাথার একপাশে চুমু খেয়ে বলল,
-“বাসায় দিয়ে যাওয়ার পর সারাদিন কী কী করেছ?”
আস্তেধীরে অর্ঘমা বলা শুরু করল,
-“কিছুক্ষণ বিশ্রাম করেছি, গোসল করেছি, খাওয়া-দাওয়া করেছি, একটু ঘুমিয়ে ছিলাম। বিকালে ঘুম থেকে উঠে বসেছিলাম কিছুক্ষণ। নিধি আসার পর ওর সাথে টুকটাক কথাবার্তা হয়েছে। তারপর থেকে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম আপনার অপেক্ষায়।”
-“মিস করছিলে আমায়?”
-“হুঁ।”
-“এখন থেকে বাসায় একা থাকলে যাতে আর বোর না হও তাই তোমার জন্য একজন সঙ্গী এনেছি।”
অর্ঘমা অবুঝ দৃষ্টিতে তাকাল নীরদের পানে। নীরদ মৃদু হেসে অর্ঘমার চোখের পাতায় চুমু খেয়ে তার হাত ধরে অভ্রর রুমের দিকে নিয়ে যেতে লাগল। দরজার সামনে এসে তার চোখজোড়া হাত দিয়ে ঢেকে তাকে নিয়ে রুমের ভেতরে ঢুকল। অর্ঘমাকে বিছানায় বসিয়ে চোখ খুলতে বারণ করল। কোলের উপর নরম তুলতুলে কিছুর আভাস পেয়ে চট করে চোখ মেলল অর্ঘমা। দু’চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল কোলের দিকে। নীরদ হেসে বলল,
-“আমি জানি বিড়াল তুমি পছন্দ করো কিন্তু একটু ভয়ও পাও। তাই কখনো কাছে যাও না। কিন্তু এই বিড়াল ছানা তোমাকে কিচ্ছু করবে না। তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ওকে?”
-“কিন্তু!”
-“কোনো কিন্তু না। হাত বুলিয়ে দেখো ওর গায়ে।”
-“ভয় করছে।”
-“আরে বাবা, কোনো ভয় নেই। তুমি হাত বুলিয়ে তো দেখো।”
-“যদি কামড় দেয়?”
-“তোমার কোলেই তো বসে আছে। কামড় দিয়েছে কী? দেয়নি তো! তাহলে ভয় কীসের? কিচ্ছু করবে না। হাত বুলিয়ে দেখো তুমি।”
পাশ থেকে অভ্র আর নিধিও বলছে বিড়াল ছানাটিকে কোলে নিতে। অর্ঘমা কাঁপা কাঁপা হাতে আস্তে করে এক আঙুল দিয়ে প্রথমে স্পর্শ করল বিড়াল ছানাটির শরীরে। সাথে সাথেই ছানাটি মিউ মিউ করে উঠল। ভয়ে তৎক্ষণাৎ পিছিয়ে গেল অর্ঘমা। হেসে উঠল সকলে। নীরদ একপ্রকার জোর করে ছানাটিকে অর্ঘমার হাতে দিল। প্রথমে ভয় পেলেও পরে যখন দেখল ছানাটি কিছু বলছে না, উল্টো তার হাতে মাথা ঘষছে তখন ভয় কিছুটা কেটে গেল অর্ঘমার। সে একহাতে ছানাটিকে কোলে নিয়ে অন্য হাত দিয়ে আদর করতে লাগল। নীরদ খুব খুশি হলো অর্ঘমাকে বিড়াল ছানাটির সাথে খুশি দেখে। মৃদু হেসে বলল,
-“হ্যাপি বার্থডে মাই লাভ।”
চমকে উঠল অর্ঘমা। আজ তার জন্মদিন! মনে মনে হিসাব কষে দেখল। আসলেই আজ তার জন্মদিন। অথচ তার মনেই ছিল না। পাশ থেকে অভ্র আর নিধি দু’জনকে টিয করে বলল,
-“মাই লা..ভ!”
কিছুটা শব্দ করেই হেসে ফেলল নীরদ। লজ্জায় লাল হলো অর্ঘমা। তা দেখে আরও হাসল সকলে। অভ্র আর নিধিও তাকে জড়িয়ে ধরে উইশ করল। কিছুক্ষণ পর নিধি কেক হাতে উপস্থিত হলো। পর পর দু’টো কেক দেখে একটুও অবাক হলো না অর্ঘমা। কারণ সে জানে একটা কেক অভ্র এনেছে আর অন্যটা নীরদ এনেছে। এমনটাই হয়ে আসছে বিগত কয়েক বছর ধরে।
___
ব্যালকনির সামনে জানালায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অর্ঘমা। বাইরে মেঘের গর্জনের পাশাপাশি অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। একটু আগে অব্দিও বৃষ্টি পড়ার কোনো নাম নিশানা ছিল না। হুট করে এই বৃষ্টির আগমের কী কারণ কে জানে! বৃষ্টির সাথে সমান বেগে হালকা ঠান্ডা বাতাসও বইছে। জানালার সাথে দেয়ালের ওপর বিড়াল ছানাটি লেজ গুটিয়ে বসে জিহ্ব দ্বারা নিজের হাত লেহন করছে। নীরদ এসে পেছন থেকে অর্ঘমাকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে নিল। বিষয়টাতে বড্ড অবাক হলো অর্ঘমা। আগে নীরদ কাছেই আসতে চাইত না সহজে আর এখন সুযোগ পেলে কাছে আসা হাতছাড়া করে না। এত পরিবর্তনের কারণ কী? কোনোভাবে কী নীরদ তাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে আছে? হয়তো। কারণ নীরদের পরিবার তো সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা অর্ঘমাকে মানবে না। অর্ঘমার চুল ঠিক করতে করতে নীরদ বলল,
-“আমার কণ্ঠ তোমাকে আকর্ষণ করে বলে তুমি সবসময় আমার কণ্ঠে গান শুনতে চাইতে। কিন্তু আমি কখনো শোনাইনি, লজ্জা লাগত বলে। ভাবছি আজ শোনাবো।”
-“হঠাৎ?”
-“মনে হলো তোমার ইচ্ছেটা পূরণ করা উচিত। কারণ আমি চাই না তোমার জীবনে কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ থাকুক।”
কথাগুলো বলেই নীরদ ব্যালকনিতে গিয়ে অর্ঘমার সামনের জানালার পাশ ঘেঁষে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। হাতের গিটারটা দেখিয়ে বলল,
-“স্টুডেন্ট লাইফের গিটার। কলেজে থাকতে কিনেছিলাম। তখন বন্ধুদের সাথে প্রায় প্রায়ই গান গাওয়া হত। ভার্সিটি লাইফেও গেয়েছি কিন্তু কম।”
অর্ঘমা কিছু না বলে অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছে নীরদের কণ্ঠে গান শোনার অপেক্ষায়। হালকা কেশে নীরদ বলল,
-“গান শুনে একদম হাসবে না ওকে? খারাপ হতেই পারে তাই বলে হেসে আমাকে লজ্জা দিবে না।”
মৃদু হেসে অর্ঘমা বলল,
-“আচ্ছা, হাসব না।”
গলা ঝেড়ে নিল নীরদ। গিটারে টুংটাং শব্দ তুলে দেখে নিল তার গিটার বাজানোর স্কিল ঠিক আছে কিনা। কয়েকবার চেক করে নিয়ে অর্ঘমার দিকে তাকিয়ে হেসে গিটারে সুর তুলল।
তোর মন খারাপের দেশে
যাবো প্রেমের খেয়ায় ভেসে
তোর মনটা ভালো করে
দেবো অনেক ভালোবেসে
ও, তোর মন খারাপের দেশে
যাবো প্রেমের খেয়ায় ভেসে
তোর মনটা ভালো করে
দেবো অনেক ভালোবেসে
ডাকলে কাছে আসিস
পারলে একটু হাসিস
বুকটা রাখিস পেতে
ভালোবাসা নিতে
সব অভিমান ভেঙে দেবো
তোর কাছে এসে
তোর মন খারাপের দেশে
যাবো প্রেমের খেয়ায় ভেসে
তোর মনটা ভালো করে
দেবো অনেক ভালোবেসে
নীরদ গান গাওয়ার পুরোটা সময় তাকিয়ে ছিল অর্ঘমার দিকে। অর্ঘমার চোখজোড়া ছলছল করছে। সে অন্যদিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে চোখ মুছে নিল। তার যে মন খারাপ সেটা যে নীরদ বুঝে গিয়েছে তা বুঝতে বাকি রইল না। আজকাল সে চেয়েও পারে না মন ভালো রাখতে। আশেপাশের মানুষজন সারাক্ষণ আনাগোনা করতেই থাকে তার মন খারাপ করিয়ে দেওয়ার জন্য। আরও তার সাথে যা ঘটেছে এই ঘটনা অবশ্যই ভুলার মতো নয়। অর্ঘমা খুব করে চেষ্টা করছে চোখের জল আটকানোর, কিন্তু সে পারছে না। হাতের বাহুতে টান লাগতেই সামনে তাকানোর সাথে সাথেই কারো প্রশস্ত বুকের সাথে মিশে গেল সে। এটা নীরদের বুক বুঝতে পেরে এবার কিছুটা শব্দ করেই কেঁদে ফেলল। নীরদ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল তাকে। তার চোখ থেকেও কয়েক ফোঁটা অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়ল। সেই সাথে মনে মনে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল সে।
___
অর্ঘমাকে ঘুম পাড়িয়ে দরজা চাপিয়ে নীরদ গেল অভ্রর রুমে। কিন্তু অভ্র তার রুমে নেই। কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরে নীরদ আশেপাশে তাকিয়ে অভ্রর নম্বরে কল দিল। প্রথমবার রিসিভ হলো না। দ্বিতীয়বার কল দিতেই দু’বার রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে কল রিসিভ করল অভ্র।
-“হ্যাঁ, নীরদ, বল।”
অভ্রর কণ্ঠস্বর কিছুটা অস্বাভাবিক শোনাচ্ছে। গলা ঝেড়ে নিয়ে নীরদ বলল,
-“আমি তোমার রুমে বসে আছি। কিছু কথা ছিল। রুমে আসো একটু।”
-“আসছি।”
কল কেটে গেল ওপাশ থেকে। নীরদ ফোন পকেটে ঢুকিয়ে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। অর্ঘমাকে ঘুম পাড়াতে খুব একটা কষ্ট হয়নি আজ। মেয়েটা তার বুক মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে একাই ঘুমিয়ে গিয়েছিল। নীরদ তাকে ঠিকঠাক ভাবে শুইয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে এসেছে।
অভ্র এলো মিনিট দশেক পরে। চুল ঠিক করতে করতে রুমে ঢুকে জিজ্ঞেস করল,
-“কী হয়েছে?”
নীরদ পেছন ঘুরে অভ্রর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
-“নিজেকে যখন কন্ট্রোলই করতে পারছ না তখন বিয়ে কেন করে নিচ্ছ না?”
দুটো শুঁকনো কাশি দিয়ে গলা ঝেড়ে নিল অভ্র। চুলে আঙুল চালাতে চালাতে কিছুটা বোকাসুলভ হাসল। নীরদও পাল্টা হেসে বলল,
-“দেখো আবার বেশি কিছু করতে যেয়ো না। আন্টি দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। তাই বলছি এত কষ্ট না করে এর থেকে বিয়ে করে ফেলো নিধিকে।”
-“মাকে নিয়েই তো যত ভয়। দেখি কিছুদিনের মধ্যেই বাসায় জানাব ওর ব্যাপারটা। মা কী বলবে জানি না। তবে বিয়ে তো আমি ওকেই করছি এটা শিওর থাক।”
-“আচ্ছা।”
-“এবার বল কী বলবি।”
নীরদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-“আমার মনে হচ্ছে এখন আর দেরি করা ঠিক হবে না।”
-“কোন ব্যাপারে?”
-“অর্ঘমা আর আমার বিয়ের ব্যাপারে বলছি।”
অভ্র চিন্তিত হয়ে বলল,
-“কিন্তু তোর পরিবার?”
-“তুমি তোমার পরিবারের জন্য নিধিকে ছাড়বে? না তো! তাহলে আমার পরিবারের জন্য আমি অর্ঘমাকে ছেড়ে দিব ভাবাটা বোকামি না?”
-“পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নে নীরদ। এভাবে হুটহাট কোনো সিদ্ধান্ত নিস না। তোর সারাজীবনের ব্যাপার এটা।”
-“সিদ্ধান্ত তো আমি বহু আগেই নিয়েছিলাম। যখন প্রথম অর্ঘমাকে দেখেছিলাম, তখনই। এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার সাধ্য এখন আমারও নেই।”
-“তাহলে এখন কী করতে চাচ্ছিস?”
-“অর্ঘমাকে এখানে রাখা যাবে না। আশেপাশের পরিবেশ ওর জন্য এখন আর সেইফ না। দূর্ঘটনার জন্য এমনিতেই অর্ঘমা ডিপ্রেশনে ভুগছে। ওকে কিছুটা বের করতে পেরেছি এই ডিপ্রেশন থেকে। কিন্তু এখানে থাকলে আশেপাশের লোকজনের কটু কথা ওকে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে শুনতে হবে। তখন নিজেকে সামলাতে পারবে না ও। পরে আবারও ডিপ্রেশনে ডুবে যাবে। আর ডিপ্রেশনের কারণে যদি নিজের কোনো ক্ষতি করে বসে তাহলে? এজন্য আমি ওকে এখান থেকে দূরে কোথাও নিয়ে যেতে চাইছি।”
অভ্র নীরদের বলা কথাগুলো ভেবে দেখল। ভুল কিছু বলেনি নীরদ। তবুও একটা কিন্তু থেকেই যায়।
-“এক্সাক্টলি করতে কী চাচ্ছিস সেটা বল।”
-“আমি অর্ঘমাকে বিয়ে করে, ওকে নিয়ে দেশের বাইরে চলে যেতে চাইছি। যাতে আশেপাশের কোনো বিষাক্ততা ওকে ছুঁতে না পারে।”
অভ্র কিছু বলল না। চুপচাপ বসে পড়ল বিছানার একপাশে। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে অনেক কিছু ভাবছে। তার ভাবনার মাঝেই নীরদ তার হাত ধরে আশ্বাস দিয়ে বলল,
-“আমার ওপর বিশ্বাস রাখো ভাইয়া। আমি ওর খেয়াল রাখব।”
এই কথাটাই যেন শুনতে চাইছিল অভ্র। নীরদের কাঁধে হাত রেখে সম্মতি দিল সে।
চলবে….
#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_৩০
.
তখন সময়টা সন্ধ্যা। অর্ঘমা নিজের রুমে বসে বসে বিড়ালছানার সাথে সময় কাটাচ্ছিল। বাসায় সে আর মিনা বেগম ছাড়া কেউ নেই। কলিংবেলের শব্দে উঠে দাঁড়াল অর্ঘমা। কিন্তু সে যেতে যেতেই মিনা বেগম দরজা খুলে দিয়েছেন। তিনি ড্রয়িংরুমেই ছিলেন। অর্ঘমা গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখল দরজার ওপাশে অভ্র আর নিধি দাঁড়িয়ে আছে। অবাক হয়ে গেল সে। এবার কিছুটা এগিয়ে গিয়েই দাঁড়াল ব্যাপারটা বোঝার জন্য। দরজা খুলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সামনে তাকালেন মিনা বেগম। পরক্ষণেই হুংকার ছেড়ে বললেন,
-“এই মেয়েটার সাথে তুই কোত্থেকে ফিরছিস অভ্র?”
নিধি কাচুমাচু ভঙ্গিতে অভ্রর পেছনে চলে গেল। মিনা বেগমকে সে বড্ড ভয় পায়। ভদ্র মহিলা যে তাকে একেবারেই সহ্য করতে পারে না সেই সম্পর্কে সে অবগত। অভ্র পেছন থেকে নিধিকে সামনে এনে তার হাত ধরে বলল,
-“এই মেয়েটা এখন থেকে তোমার পুত্রবধূ।”
-“কীহ্?”
ভীষণ রকমের ভড়কে গেলেন মিনা বেগম। তার চোখ দু’টো যেন কপালে উঠে গেল। কিছু বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। সেই সঙ্গে চমকে গেছে অর্ঘমাও। তার ভাই বিয়ে করে ফেলেছে? তাও আবার তারই বান্ধবী নিধিকে? তার মুখেও কোনো শব্দ নেই বলার মতো। সে শুধু আড়চোখে মিনা বেগমের দিকে তাকাচ্ছে।
আজ অভ্রর অফিস বন্ধ ছিল। সকালে নিধি ভার্সিটি যাওয়ার পর অভ্র ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে বাবা-মাকে নিধির ব্যাপারে জানালে তৎক্ষণাৎ বেঁকে বসেন মিনা বেগম। অভ্রর বাবার তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না। তিনি শুধু বলেছেন,
-“দেখো বাবা, সারাজীবন সংসার তুমি করবে। ওই মেয়ের সাথে জীবন তুমি কাটাবে। তাই তুমি যা ভালো বুঝো সেটাই করো। জীবন তোমার, সিদ্ধান্তও তোমার। তুমি তো আর সেই ছোট্টটি নেই যে তোমাকে এই বয়সে ভালোমন্দ বোঝাব আমি। নিজের ভালোমন্দ অবশ্যই তুমি নিজে বুঝতে শিখেছ। তোমার যদি মনে হয় নিধি তোমার উপযুক্ত তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই ওকে পুত্রবধূ হিসেবে মানতে।”
বাবার সহজসরল স্বীকারোক্তি শুনে অভ্র খুশি হলেও পরক্ষণেই মায়ের চেঁচামেচির কারণে তার সেই খুশিতে ভাঁটা পড়ল। তিনি কোনোভাবেই তার একমাত্র ছেলের বিয়ে এমন মেয়ের সাথে হতে দিবেন না যার কিনা নিজের বলতে কিছুই নেই। এমন কি পরিবারও না। মায়ের সাথে বহুক্ষণ কথা কাটাকাটি হওয়ার পর অভ্র রেগে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। আর এখন ফিরল নিধিকে সাথে নিয়ে।
-“তোর মাথা ঠিক আছে অভ্র? কী বলছিস এটা তুই?”
-“ঠিকই বলেছি মা। নিধি এখন থেকে তোমার পুত্রবধূ। আমি আর ও বিয়ে করে নিয়েছি।”
-“অভ্র!”
-“আমি সকালেই বলেছিলাম, বিয়ে করলে আমি নিধিকেই করব।”
-“আমার কথার কী কোনো দাম নেই তোর কাছে? এতবার বারণ করা স্বত্বেও তুই এই মেয়েকে বিয়ে করতে পারলি?”
-“প্রথমত, নিধিকে আমি ভালোবাসি। দ্বিতীয়ত, ও প্রেগন্যান্ট। আর বেবিটা আমার।”
ঝড়ের গতিতে একটা থাপ্পড় পড়ল অভ্রর গালে। থাপ্পড়টি মেরেছেন মিনা বেগম। রাগে তার পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। যে ছেলেকে নিয়ে তিনি এত গর্ব করতেন, সেই ছেলে কিনা শেষমেশ এমন একটা কাণ্ড ঘটাল? ছিঃ ছিঃ! আর কোনো শব্দ অপচয় না করে তিনি হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। অভ্র নিধির হাত ধরে ভেতরে ঢুকল। অর্ঘমা এগিয়ে এসে কিছু না বলে নিধিকে নিয়ে রুমের ভেতরে গেল। রুমে যেতে যেতে চোরের মতো আশেপাশে তাকিয়ে গলার স্বর নিচু করে প্রশ্ন করল,
-“তুই সত্যি সত্যি প্রেগন্যান্ট?”
অপ্রস্তুত হলো নিধি। লজ্জাও পেল কিছুটা। অস্বস্তিতে কাচুমাচু অবস্থা তার। অর্ঘমা কী বলবে ভেবে পেল না। শুধু মৃদু হেসে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বান্ধবীকে অভিনন্দন জানাল।
___
নীরদ নিজের আর অর্ঘমার বিদেশে যাওয়ার সকল কাগজপত্র তৈরি করছে। কাগজপত্র পুরোপুরি তৈরি হয়ে গেলেই সে অর্ঘমাকে বিয়ে করে নিবে। কোনো অনুষ্ঠান করবে না। একদম ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা সেরে ফেলবে। যদি তার পরিবার না মানে তাহলে শুধু বন্ধু-বান্ধব, অভ্র আর নিধিকে নিয়ে বিয়েটা সেরে ফেলবে। নীরদ শতভাগ নিশ্চিত তার পরিবার থেকে এই বিয়ে কোনোভাবেই মানবে না। তবুও বিয়েটা করলে তার ওপর রাগ করবে সবাই। বড়জোর কথা বলবে না কয়েকদিন। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। হয়তো অর্ঘমার সাথে সহজ হতে পারবে না তারা, ব্যস! এইটুকুই।
এর মাঝে বেশ কয়েকবার থানায়ও গিয়েছিল নীরদ। কিন্তু ফলাফল সেই শূন্যই। অফিসার মোটা অংকের টাকা খেয়ে বসে আছে শাকিলের কাছ থেকে। তাই তার বিরুদ্ধে কোনো স্টেপ সে নিচ্ছে না। উল্টো এই কেসটা মিথ্যে প্রমাণ করার সকল চেষ্টা করছে। নীরদ বুঝে গেছে পুলিশ তাদের সহায়তা করবে না। এখন যে পক্ষের টাকা আছে আইন সেই পক্ষকেই সমর্থন করে। আর তাদের টাকা থাকলেও শাকিলের মতো অতো টাকা নেই যে আইনকে কিনে নিবে। পুলিশের অযৌক্তিক কথাবার্তায় একরাশ রাগ নিয়ে থানা থেকে ফিরে এসেছে নীরদ। অর্ঘমাকে এসবের কিছুই জানায় নি। মেয়েটা এমনিতেই প্রতিনিয়ত কষ্ট পাচ্ছে দূর্ঘটনাটার কথা ভেবে। এসব বলে সেই কষ্টের দাবানলে আর ঘি ঢালতে চায় না সে।
___
দু’হাত ভরতি মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে বাসায় এসেছে নীরদ। অভ্রর দিকে তাকিয়ে সেই কখন থেকে মিটমিট করে হাসছে সে। অভ্র বেচারা একটু পর পর শুঁকনো কাশি দিয়ে ফোনের দিকে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছে। এভাবে যদি লজ্জার হাত থেকে বাঁচা যায় নীরদের কাছ থেকে। কিন্তু নীরদ তো নীরদই। অভ্রর পাশে বসে গলা ঝেড়ে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
-“কী ভাই? কী হলো এটা?”
-“কোনটা?”
-“বাচ্চাটা কোত্থেকে এলো?”
অভ্র বেশ বুঝতে পারছে নীরদ তাকে খোঁচাতে এসেছে।
-“আকাশ থেকে টপকেছে।”
-“তুমি ঢিল না মারলে তো টপকানোর কথা ছিল না, তাই না?”
-“তোর এই খোঁচাখুঁচির অভ্যাস যাবে না?”
-“কেন যাবে? আমি তো শুধু সত্যিটা বলি।”
-“অনেক সত্যি বলে ফেলেছিস ভাই। এবার চুপ থাক।”
-“ঠিক আছে, থাকলাম চুপ। তবে আমি এখনো একটা জিনিসই ভেবে পেলাম না। তোমার বোনের সাথে আমার এতদিনের সম্পর্ক। আজ পর্যন্ত তো ওকে একটা কিসও করলাম না। আর তুমি আমার পরে নিধির সাথে সম্পর্কে জড়িয়েও ডিরেক্ট বাবা হয়ে গেলে?”
অভ্র খুকখুক করে কেশে উঠল। সে চেয়েও পারছে না নীরদকে কিছু বলতে। আড়চোখে নীরদের দিকে তাকিয়ে একপ্রকার বিরক্ত হয়ে বলল,
-“বোন হয় আমার। এসব কী বলিস তুই আমার সামনে? এর থেকে অর্ঘমাকে নিয়ে বাইরে থেকে ঘুরে আয়। তবুও তোর এই খোঁচাখুঁচি বন্ধ কর।”
-“হবু বাবাদের এত রাগ করতে হয় না। বাবুর উপর এফেক্ট পড়বে।”
-“চাচ্ছিসটা কী তুই?”
-“তোমার মতো সাহসী হতে চাইছি।”
-“ভাই, হাতজোড় করে মাফ চাইছি তোর কাছে। তুই আর এই ব্যাপারে কোনো কথা বলিস না।”
-“ভেবে দেখব। তবে তার আগে তোমার বোনকে একটু দেখে আসি।”
অভ্র হাতজোড় করে নীরদকে যেতে বলল। নীরদও হাসতে হাসতে উঠে এগিয়ে গেল অর্ঘমার রুমের দিকে।
___
অর্ঘমা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল ব্যালকনির জানালার সামনে। সে গভীর ভাবে কিছু একটা ভাবতে ব্যস্ত। নীরদ রুমের দরজা চাপিয়ে দিয়ে গিয়ে পেছন থেকে অর্ঘমাকে জড়িয়ে ধরে টুপ করে গালে একটা চুমু খেয়ে নিল। চমকে উঠল অর্ঘমা। নীরদ দিন দিন বেপরোয়া স্বভাবের হয়ে উঠছে তার জন্য। ব্যাপারটা বেশ উপভোগ্য হলেও সে উপভোগ করতে পারছে না আজ। বরং তার খারাপ লাগছে, কষ্ট হচ্ছে। যার ফলে মেজাজটাও বিগড়ে আছে তার। ছেলেটা এত অবুঝ কেন? কেউ কীভাবে জেনে শুনে নিজের জীবনটাকে এমন একজনের সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছে যে মেয়ে কী না একজন ধর্ষিতা?
নীরদ তাকে এসব ভাবতে বারণ করেছিল। সে-ও ভাবা বাদ দিয়েছিল। কিন্তু লোকজন তাকে ভুলতে দিলে তো! আজ নীরদের মা ফোন দিয়েছিল তাকে। ফোনে নীরদের মায়ের সাথে নুসরাতও ছিল। তারা অনেক কিছুই বলেছে। যদিও ভদ্রভাবে বলেছে কিন্তু অর্ঘমা তো আসল খোঁচাটা ঠিকই বুঝেছে। নুসরাত একদম সাফ সাফ ভাবে বলে দিয়েছে সে নিজের ননদকে নীরদের বউ করে নিয়ে আসতে চায়। মেয়েটা নাকি অনেক ভালো। নীরদকে পছন্দও করে। এর বিপরীতে অর্ঘমার বলার কিছুই ছিল না। সে শুধু এতটুকুই বলেছিল যে নীরদ তাকে ভালোবাসে। তখন নীরদের মা বলেছেন, ‘ভালোবাসা আজ আছে। এখন তোমাদের বিয়ে হলে আশেপাশের লোকজনের কথা রোজ রোজ শুনতে হবে নীরদকে। কয়েক মাস পর বা কয়েক বছর পর তখন আর এই ভালোবাসাটা থাকবে না। থাকবে শুধু তিক্ততা আর বিরক্তি। তখন ভালোবাসাটা গায়েব হয়ে যাবে। তাই তোমাদের ভালোর জন্যই বলছি তুমি নীরদের থেকে দূরে থাকো। ও এখন আবেগের বশে এতবড় সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে। পরে ওকেই ভুগতে হবে। আর আমি চাই না আমার ছেলের ভবিষ্যত নষ্ট হোক। আমার কথাটা বুঝতে পেরেছ তুমি?’ অর্ঘমা তখন নীরব ছিল। মুখে আর কোনো শব্দ ছিল না বলার মতো। সত্যি কথাগুলো সবসময় তেঁতো হয়। তার কাছেও তেঁতো লেগেছে। কল কাটার পর থেকে বারবার নীরদের মায়ের বলা কথাগুলো তার কানে রেডিওর মতো বেজে চলেছে। নীরদের কাজকর্ম তার রাগের আগুনে ঘি ঢালার কাজ করছে।
একসময় আর সহ্য করতে না পেরে নীরদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে মাথার চুল দু’হাতে খামচে ধরে ফ্লোরে বসে পড়ল অর্ঘমা। নীরদ বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে অর্ঘমার দিকে। চোখের জলে নিমিষেই ভিজে উঠেছে গালজোড়া। চোখ বন্ধ করে অর্ঘমাকে অনবরত কিছু বিরবির করতে দেখে তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসল নীরদ। অর্ঘমার মাথায় হাত রাখতেই ছিটকে সরে গেল সে। চোখেমুখে একরাশ ভয় নিয়ে বারবার দূরে যেতে বলতে লাগল নীরদকে। হঠাৎ এসবের মানে নীরদ বুঝল না। তার চোখে শুধু বিস্ময় খেলা করছে। অর্ঘমার ব্যবহারে পাগলামো প্রকাশ পাচ্ছে। ধক করে উঠল তার হৃদয়। মেয়েটাকে আবার কেউ উল্টো পাল্টা কিছু বলেনি তো? এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই অর্ঘমা জোরে কেঁদে উঠল। বিষয়টাতে চমকে উঠল নীরদ। কী থেকে কী হলো বা কী হচ্ছে কিছুই তার বোধগম্য হচ্ছে না। অভ্র আর নিধি একপ্রকার দৌড়ে এলো। অর্ঘমাকে কাঁদতে দেখে কারণ জিজ্ঞেস করলে নীরদ চুপ রইল কিছু সময়। অর্ঘমার দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে এগিয়ে গেল তার দিকে। অর্ঘমা পেছাতে চাইলেও পারল না। পিঠ দেয়ালের সাথে ঠেকে গিয়েছে তার। নীরদ হাঁটু গেড়ে বসে তার গালে হাত রাখতেই গাল ঘুরিয়ে নিল অর্ঘমা। এবার দু’হাতে অর্ঘমার গাল ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল। চোখ বন্ধ করে নীরদের হাত সরানোর জন্য জোরাজোরি করতে লাগল। অভ্র আর নিধি একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবারো ওদের দিকে তাকাল। তারা নীরব দর্শকের মতো দেখছে সবকিছু।
নীরদ কোনো প্রশ্ন না করে অর্ঘমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। অর্ঘমার ধৈর্যের বাঁধ পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে। রাগের মাথায় হাত দ্বারা উল্টো পাল্টা আঘাত করতে লাগল সে নীরদকে। নিজের মুখ অর্ঘমার কাঁধে গুঁজে চুপচাপ তাকে জড়িয়ে ধরে বসে আঘাত সহ্য করতে লাগল। অর্ঘমা কান্নার পাশাপাশি নিজের সকল অভিযোগ খোলাসা করে দিল নীরদের কাছে। কিছু বলল না নীরদ। চোখ বন্ধ করে সেভাবেই বসে রইল। হুট করে অর্ঘমাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। টেবিলের উপর থেকে গ্লাস নিয়ে পানি খেয়ে চোখ বন্ধ করে মাথার চুলগুলো মুঠোয় নিয়ে টানতে লাগল। চোখ মেলে অর্ঘমাকে একবার দেখে নিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল। অভ্রও বের হয়ে গেল নীরদের পেছন পেছন।
অর্ঘমা শান্ত হয়েছে অনেক সময় নিয়ে। শান্ত হওয়ার পর থেকে বিছানায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে। পাশেই নিধি বসে অর্ঘমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। একটা সময় পর অর্ঘমা ঘুমিয়ে গেল। কান্নার ফলে ঘুমের রেশটা বেশ গাঢ়ই হলো তার।
চলবে…