#কাঠগোলাপের_মোহে🌼
#মোনামী_শেখ
#part:6
আজ প্রণয় ভাইয়া চলে যাচ্ছেন।ওনি
রাজশাহী মেডিকেল কলেজে সিনিয়র ডক্টর হিসেবে জয়েন করেছেন।প্রণয় ভাইয়া চলে যাচ্ছে এই খবরটা শুনে যে আমি কতটা খুশি হয়েছি তা বলার বাহিরে।
যখনি খালামনি এই খবরটা আমাকে দিয়েছেন।তখনি আমি খুশির জোয়ারে ভাসছিলাম।মুখে প্রকাশ করিনি যে আমি তার যাওয়ায় খুশি।কিন্তু মনে মনে আমার লাড্ডু ফুটছিলো।
ঘরে গিয়ে উরাধুরা ডান্স করেছি।মন খারাপ টাও নিমিষে উধাও হয়ে গিয়েছে।
আজ রাতে তিনি রাজশাহী যাওয়ার পথে রওনা দিবেন। আর আমি এক নতুন ভোরের মুখ দেখবো।আমার জন্য বিষয়টা প্রাণখোলা শান্তির নিশ্বাসের মতো।
এখন বিকেল ৪ঃ৩০ বাজে ছাদে দাড়িয়ে আছি।
আজ বিকেলটা অনেক সুন্দর শান্ত ও নিরবতায় পরিপূর্ণ।তার সাথে সূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্যটা আরো বেশি রোমাঞ্চকর।বাবুইপাখির ঝাকগুলো মুক্ত আকাশে স্বাধীন ভাবে আপন মনে উড়ে বেড়াচ্ছে।আকাশের দিকে তাকিয়ে এসব দেখছি প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিয়ে।
হঠাৎ ইচ্ছে হলো তাই আপন মনে গুনগুনিয়ে একটা গানের সুর তুললাম গলায়_
আমার কল্পনা জুড়ে যে গল্পেরা ছিলো!!
আড়ালে সব লুকোনো!
সেই গল্পেরা সব __রঙিন হলো পলকে!!!
তোমাকে হঠাৎ পেয়ে যেন!!
প্রেম তুমি আসবে এভাবে!!
আবার হারিয়ে যাবে ভাবিনি!!!
আজও আছে সে পথ!!!
শুধু নেই তুমি!!!
বলো কোথায় আছো অভিমানী!!!
আমার কল্পনা জুড়ে যে গল্পেরা ছিলো!!
আড়ালে সব লুকোনো!
সেই গল্পেরা সব __রঙিন হলো পলকে!!!
তোমাকে হঠাৎ পেয়ে যেন!!
অয়ত্রি বাদেও একজন আছে যে তার গানটা মন দিয়ে শুনছে। সে আর কেউ নয় প্রণয়!!!
____________________________________________
ছাদের দরজায় হেলান দিয়ে বুকে হাত গুজে বাঁকা চোখে অয়ত্রিকে দেখছে আর মন দিয়ে গানটা শুনছে।
গানটা কেনো জানিনা প্রণয়ে বুকে গিয়ে বিধছে।কেমন যেন রকমের অদ্ভুত কষ্ট হচ্ছে প্রণয়ের তা সে জানেনা।অপাদত সে এখন তা জানতেও চাইছেনা।
বাতাসে অয়ত্রির কোমর পর্যন্ত ছেয়ে যাওয়া চুল গুলো উড়ছে আপন ছন্দে। মুখে লেগে থাকা মিষ্টি হাসি নিয়ে গানটা গাইছে অয়ত্রি। তা মন দিয়ে পর্যবেক্ষন করছে প্রণয়।
এক কথায় বলতে গেলে সে এখন অয়ত্রিতেই আবদ্ধ।
প্রতিবারি তাকে অয়ত্রির বিভিন্ন রুপ আকর্ষিত করে।
কখনো ভিতু মুখখানা কখনো তার দুষ্টমিগুলো কখনো কান্নামিশ্রিত লাল আভায় ছেয়ে যাওয়া নাক ও গালদুটো। বা কখনো এই উদাসিনী রুপ।সবগুলোতেই ঘায়েল প্রণয়।কিন্তু কেন তা সে জানেনা।
এসব মনে মনে ভাবছে প্রণয়।
🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
গানটা শেষ হতেই চোখ দুটো খুললাম।এতক্ষণ গানটা খুব মন দিয়ে গেয়েছিলাম আর কল্পনার জগৎ এ ভাসছিলাম।
যে গানটা গাইলাম সেটা তাহসানের কন্ঠে গাওয়া।
আমার প্রিয় গান।
হঠাৎ আমার চোখ গেলো পাশের বিল্ডিংয়ে।সেখানে
আহান তার সাথে আর কয়েকজন মেয়ে ছেলে বসে আছে।তারা কি করছে তা বোঝা যাচ্ছেনা।হয়তো গল্প করছে।কারণ আমাদের বিল্ডিংটা থেকে প্রায় কিছুটা দুরত্ব আছে যার কারণে তাদের দেখা গেলেও তাদের কথাবাত্রা শোনা যায়না।
আমি সরু চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম।সে আজ এ্যাশ কালারের একটা টিশার্ট ও আর সেইম কালারের থ্রিকোয়ার্টার পেন্ট। দেখে আরেক দফা ক্রাশ খেলাম।হার্ডবিড জোরে লাফাচ্ছে।অজ্ঞান হওয়ারি শুধু বাকি আছে আমার!!!আজ সেই হ্যাডসাম লাগছে আহানকে। আজ তাকে দেখে কত মেয়ে যে পুনরায় ক্রাশ খাবে তার কোনো হিসাব নেই।
এসব ভাবতে ভাবতে মনে আসলো একটা ইচ্ছে। তাই হাতে থাকা ফোনটা দিয়ে আহানের ছবি তুলতে লাগলাম।
তখনি কেউ ঝড়ের বেগে এসে আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে দিলো এক আচাড়।শেষ আমার মোবাইলের জাহানডা শেষ। নিচে মোবাইলটার ভাঙ্গা টুকরাগুলো থমকে দেখতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পড় মাথা তুলে সেই মানুষটার দিকে তাকাল। সে আর কেউ নয় এলিয়েন প্রণয় ভাইয়া।
লাল লাল চোখ নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে সাপের মতো ফনা তুলে ফুস ফুস করছে আর আমার দিকে চেয়ে আছে। আমি ভয়ে সিটিয়ে গেলাম।মোবাইল ভাঙার শাস্তি তো দূর কথাই মুখ দিয়ে বেড়োচ্ছে না আমার। আমি শুকনো ধোক গিলছি আর মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছি।আজ আমায় এলিয়েন দের মতো আস্ত চিবিয়ে খাবে এই খবিশ প্রণয় ভাইয়া।
কিছুক্ষণ পর মনে সাহস জুগিয়ে প্রণয় ভাইয়াকে বললাম— ভাইয়া আপ–নিই? আর কিছু বলতে পারলাম না।তার আগেই ঠাসসস করে বাম গালে একটা চড় বসিয়ে দিলেন প্রণয় ভাইয়া। আমি গালে হাত বেকুবের মতো তার দিকে তাকিয়ে আছি???
তিনি এবার রেগে হুঙ্কার দিয়ে বললেন— তোর যদি এতই ইচ্ছে নাগরকে দেখার তো যা তো সেই নাগরের বাসা যা!!আমার বাড়ির ছাদে তোর কিসের এত নষ্টামি?? এই জন্যই তোর বাবা মা তোকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।
তোর মতো নষ্টা চরিত্রহীন মেয়েকে কে নিজের ঘরে রেখে মুখদাড়ি পোড়াতে যাবে??? আমি এখনই গিয়ে মাকে বলছি এই নষ্টা মেয়েকে বাড়ি থেকে বেড় করে দেয়।আমি চাইনা আমাদের এই পাড়ায় নিজের রেপুটেশন নষ্ট করতে।
আমি পুনরায় নতুন করে প্রণয় ভাইয়া বলা কথা গুলো শুনছি আর কেঁদেই যাচ্ছি। কারণ কথাগুলো ডাইরেক্টলি বুকে গিয়ে বিধেছে!!! খুব কষ্ট হচ্ছে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছিনা। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। একসময় জ্ঞান হারালাম।
রাত ১১টা বাজে____
পিটপিট করে চোখ খুলে নিজেকে রুমে আবিষ্কার করলাম।ঘড়ির কাটায় দেখলাম ১১ বেজে ৩০ মিনিট।
বিছানা থেকে উঠতে নিলেই মাথার ব্যাথা অনুভব করলাম। আবার শুয়ে পড়লাম। মাথাটা কেমন জানি ভার ভার লাগছে।
হঠাৎ বিকেল কার কথা মনে পড়লো। আপনাআপনিই
চোখ দিয়ে ঝড়তে শুরু করলো অঝোর শ্রাবণ।
তখন প্রণয় ভাইয়ার কথাগুলোয় খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।যা বলার বাহিরে।নিজেকে আজ নতুন করে অসহায় মনে হচ্ছে।যেখানে নিজের বাবা মা আমাকে কত অপমান করে বাড়ি থেকে বেড় করে দিয়েছে সেই তুলনায় প্রণয় ভাইয়া কথা গুলো কিছুই না। তবুও কষ্ট হয়। সব কষ্ট সয্য করে দিন শেষে মিথ্যা অভিনয়টা করতেই হয়।হেঁসেই অভিনয়টা করি।
এসব ভাবতে ভাবতেই খালমনি আমার আমর রুমে প্রবেশ করলো।
ধীর পায়ে এসে আমার পাশে বসলো।পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিলো মাথায় আর বললো— মা অয়ত্রি এখন ঠিক আছিস তো???
__হ্যাঁ খালামনি এখন একটু বেটার ফিল করছি।কোমল কন্ঠে বললাম।
__ হ্যাঁরে তুই কিভাবে অজ্ঞান হয়ে গেলি???কি হয়েছিলো???প্রণয় তোকে ছাদ থেকে কোলে কেটে নিয়ে এসে তোর রুমে এনেছে।আমি তো অবাকই হয়েছিলাম কলিজাটা ধক করে উঠেছিলো আমার রে মা।ধরা গলায় বললো খালামনি।
___মাথাটা ঘুরছিলো খুব তো হয়তো তাই বললাম খালামনিকে।
___ মা নিজের একটু খেলার রাখ সামনে পরিক্ষা। এইসময় কোনো টেনশন করবিনা।তাহলে পড়ালেখা থেকে মনোযোগ উঠে যাবে।আর মানসিক স্ট্রেজ বেশি হওয়ার ফলে তুই অজ্ঞান হয়ে গেছিস তা আমি ভালো করেই জানি। শক্ত গলায় বললো খালামনি।
___আরে না খালি তুমি যা ভাবছো তা নয়।
___ তোর কি বড় আপার কথা মনে পড়ছে অয়ত্রি???
___না খালামনি তাদের কথা আমার আর মনে পড়েনা।
তুমিই আমার মা আর ছোট আব্বু আমার বাবা এটাই আমার বর্তমান পরিচয়। আর আমি এটা মানি।
___ মারে তুই আমার মেয়ে এটা আমি আর তোর ছোট আব্বু মানে।তোকে খুব ভালোবাসে তোর ছোট আব্বু।
তোকে নিজের মেয়ের স্থান দিয়েছে।আর আমিও তোকে খুব ভালোবাসি মা। তুই কখনো ভাবিসনা তুই একা।তোর কেউ নেই।আর কেউ পাশে না থাকলেও তোর এই খালামনি ও তোর ছোটআব্বু তোর পাশে আছে।
__ হুম খালামনি তা আমি ভালোকরেই জানি।যখন আমার নিজের বাবা মা আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো তখন তোমার আমার পাশে ছিলো।আমার মাথা তোমাদের আর্শীরবাদের হাত রেখেছিলে। সযত্নে বুকে আগলে রেখে ছিলো।কোনো দিন ও বিন্দু পরিমাণ কষ্ট দাওনি।
___ আসলেই তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস মা। ঐ মানুষ নামের জানোয়ারদের হাত থেকে তুই বেঁচে গেছিস এটাই অনেক।
___হুম।
___ওহ তোকে তো বলাই হয়নি প্রণয় চলে গেছে।তুই ঘুমোচ্ছিলি বলে তোকে আর ডাকিনি।
___ওহ।আচ্ছা।
___তুই বোস।আমি তোর খাবার নিয়ে আসছি।কেমন??
বলেই রুম থেকে চলে গেলো খালা মনি।
___প্রণয় ভাইয়া চলে গিয়েছেন।এটা শুনে মনটা প্রশান্তিতে ছেয়ে গেলো।আর যাই হোক ওই মানুষটাকে আর আমায় ফেস করতে হবেনা।
👉continue 👈