#কাঠগোলাপের মোহে
#মোনামি শেখ
#part:15
ঘরে শুয়ে শুয়ে ফোনে কথা বলছিলাম আহানের সাথে।নিরাপু ছাদে গিয়েছে।হঠাৎ কেউ আমার হাত টেনে শোয়া থেকে তুলে বুকে জড়িয়ে নিলো।আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে কে আমায় জড়িয়ে ধরেছে।প্রণয় ভাইয়া আমাকে জরিয়ে ধরছেন।তার পারফিউম ঘ্রাণ নাকে আসতেই বুঝতে পেরেছি।তার বুকের হার্ডবিড শুনতে পারছি।কেমন যেন এক অনুভূতি হচ্ছে আমার।মুখ দিয়ে কথাও বেড়োচ্ছে না।আমাকে জরিয়ে ধরে বড়বড় নিশ্বাস নিচ্ছেন প্রণয় ভাইয়া।আমি বুঝতে পেরেছি তার কিছু একটা হয়েছে।
__ভাইয়া কি হয়েছে আপনার???বলুন আমায়??আমি তার গালে হাত রেখে বললাম।
তিনি আমার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছেন?
__কি হয়েছে বলবেন তো??
আর কিছু বলতে পারলাম না তার আগেই আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে নিলেন প্রণয় ভাইয়া।আমি কেঁপে উঠলাম।অদ।অদ্ভুত এক অনুভূতির সাথে পরিচিত হলাম আমি।এইরকম কিছুটা সময় থমকে ছিলাম।পরে হুশ আসতেই তার কাছ থেকে নিজের ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম কিন্তু পারলাম নাহ।এবার তার পিঠে কিল ঘুসি মেরেই চলেছি কিন্তু এতে তার একফোটাও টনক নাড়লো না। নিশ্বাস আমার বন্ধ হওয়ার উপক্রম।তখনই আমাকে ছেড়ে দিয়ে বড়বড় শ্বাস নিতে লাগলো প্রণয় ভাইয়া।আমি রাগি চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি।রাগে আমার শরীর কাঁপছে। ইচ্ছে করছে তার গলাটা টিপে দি।
কিন্তু তিনি আমার দিকে না তাকিয়েই হনহন করে চলে গেলো।এবার আমার ভিষণ কান্না পাচ্ছে।
এদিকে প্রণয় নিজের রুমে এসে দরজা ঠাস করে বন্ধ করে দরজায় হেলান দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।আজ সে তার প্রয়সির খুব কাছে গিয়েছিলো।প্রেয়সির কাছে গিয়ে তীব্র অনুভুতিতে ভাসছিলো সে।
প্রেয়সির কাঁপা কাঁপা গোলাপি ঠোঁট জোড়া খুব টান ছিলো প্রণয়কে।নিজেকে দমানোর খুব চেষ্টা করছিলো প্রণয় কিন্তু তার বেহায়া চোখ তো শুধু অয়ত্রিতেই আবদ্ধ হয় বারবার।
তোমার প্রেমের তীব্র অনুভূতিতে আমি যতাটা পুড়েছি তার চেয়ে দ্বিগুণ অনুভূতিতে তোমার পোড়াবো।কাল থেকে শুরু তোমার প্রতি আমার ভয়ঙ্কর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।রেডি থেকো জান।কাল থেকে তুমি এক অন্য প্রণয়ের সঙ্গে পরিচিত হবে।বলেই ডেভিল স্মাইল দিলো প্রণয়।
___ নিরা ঘরে ধুকতেই দেখতে পায় অয়ত্রি একধান্দায় বসে আছে।চোখের কোণে পানি চিকচিক করেছে।নিরা দ্রুত পায়ে এগিয়ে অয়ত্রির পাশে গিয়ে বসলো।
___ অয়ত্রি তোর কি হয়েছে??কাদছিস কেনো??
নিরাপুর কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো আমার।চোখের পানি মুছে বললাম__ কই কাঁদছি আপু??চোখে কি জানি পড়ছে।আরও তুমি কখন ছাদ থেকে এলে??
___ এই এখনি এলাম।আর এসেই দেখলাম তুই কাঁদছিলি??
__আরেহ না আপু।চলো আপু ব্যালকানিতে গিয়ে বসি.
___চল!!!
ব্যালকানিতে গিয়ে বসলাম।পুষি ব্যালকানির কোণ ঘেঁসে গুটিশুটি মেয়ে শুয়ে আছে। বাইরে আজ আকাশটা পরিষ্কার। পুরো আকাশটাই গাড়োনিল রঙে ঢাকা।মাঝে মাঝে কয়েকটা সাদা মেঘের ভেলা ভাসছে।
আকাশটা দেখতে খুব আর্কষনীয় লাগছে।বিশেষ করে আমার কাছে।আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি নির্লিপ্ত কন্ঠে নিরাপুকে উদ্দেশ্যে করে বললাম___নিরাপদ তুমি যে এখানে এসেছো।মামা,মামি যদি জানতে পারে তাহলে তো খুব রাগ করবে!!
___হুম।তো??তার জন্য কি আমি আমার ফুফির বাড়ি আসবো না??তাদের মতো আমি নই।যে নিজের ফুপি আদর থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবো!!বাবা মা ফুপিকে
মানুক বা নায়ি মানুক কিন্তু আমি মানি।আমার মতে ফুপি সেদিন কোনো ভুল করেনি। নিরাপু কাঠকাঠ গলায় বললো।
[ আমার মায়ের বোন প্রণয় ভাইয়ার মা আর প্রণয় ভাইয়ার বাবা আমার ছোট বাচ্চু।প্রণয় ভাইয়ার মা বাবা তারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন।আমার মা যেহেতু খালামনির বোন সেই সুত্রে আমাদের বাড়ি প্রায় আসতেন।আর এদিকে আমার চাচ্চু খালামনি কে পছন্দ করতেন।এভাবেই হয়তো তাদের প্রেম হয়েছিলো।আর দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসতো।তাদের কথা বাড়িতে জেনে গিয়েছিলো।
কিন্তু তারা মেনে নিতে অস্বীকার করেছিলো।কারণ খালামনির বিয়ে নানুর বন্ধুর ছেলের সাথে ঠিক করা ছিলো।কিন্তু সেটা খালামনি জানতেন না।তার কিছুদিন পড় খালামনির বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়।ছোট আব্বু বিয়েটা কিছুতেই আটকাতে পারছিলেন না বলে খালামনিকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন ছোট আব্বু।পরে নানু খালামনি কে ত্যাগ করেন।আর আমার বাবাও ছোটআব্বুকে ত্যাগ করেন। খালামনির কাছে শুনেছি আমি]
__ নিরাপু তুমি বাড়িতে ফিরবে কখন??তুমি কিন্তু এখানে আর কয়েকমাস থাকবে বলে দিলাম হুম?!!মুখ ফুলিয়ে বললাম আমি।
___ এতোদিন থাকবো না।মাস খানিক পড় চলে যাবো।তোর বিয়ের দাওয়াত না খেয়েই আমি চলে যাব??এটা হয় নাকি??
আমি নিশাপুর কথা চোখ বরবড় করে তার দিকে তাকালাম।আর বললাম__ আমার বিয়ে??আমার বিয়ে কোথায় শুনলে তুমি??যেভাবে বলছো মনে হয় সত্যিই এই মাসে আমার বিয়ে!!হুহ
___ বিয়ে তো হতেও পারে বলাতো যায়না।আল্লাহ কার কপালে কি রাখছে বলা যায়???ভ্রু কুচকে মুচকি হেসে আমাকে বললো নিরাপু।
___ আপু তাহলে তুমি আমাকে বিয়ে করতে বলছো।কিন্তু আমিতো এখন বিয়ে করতে চাইছিনা।পড়ালেখা শেষ করবো তারপর বিয়ের কথা ভেবে দেখবো।
___পড়ালেখা বিয়ের পরেও করতে পারবি বুঝেছিস??
নিরাপু বললো।
___ তবুও পড়ালেখা শেষ করেই বিয়ে করবো আমি তার আগে না।
___ দেখা যাবে।বললো নিরাপু।তখনই তার ফোনটা বেজে উঠলো।
নিরাপু মুচকি হেঁসে ফোনটা রিসিভ করলো।আমি কফি বানাতে চলে গেলাম।
রান্না ঘরে গিয়ে দেখলাম শাপলা সবজি কাটছে।আমাকে দেখেই একটা মন ভুলানো হাসি দিয়ে বললো__আফা কেমন আছেন??আজই আপনারে একবারে নিচে আসতে দেখি নাই।
___ প্রয়োজন হয়নি তাই নিচে আসিনি।তোর বিয়ের কি খবর??কফির পানি চুলায় দিতে দিতে বললাম ওকে।
___বিয়া ঠিক হইয়া গেছে আফা।আইজ উনি আমারে নিয়া বেড়াইতে নিয়া যাইবো।লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বললো শাপলা।
___আমার কাছে আসিস আমি তো তোকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিবো।আর দেখবি তোর হবু বর তোকে দেখে প্রেমে পড়ে যাবে।চোখ মেরে শাপলাকে বললাম।
___শাপলা আমার কথায় ভিষন লজ্জা পেলো।আমি পর এমন কান্ড দেখে হেসেই ফেললাম।
এরপর কফি নিয়ে ব্যাকানিতে গেলাম নিরাপু ফোন ঘাটাঘাটি করছেন।তার সামনে কফির মগ্ন এগিয়ে দিলাম।তিনি thanks বলে আমার হাত থেকে কফির মগটা নিলো।
দুজনে কফি খাচ্ছিলাম আর গল্প করছিলাম।
রাতে বিছানায় শুয়ে ফেসবুকে চালাচ্ছিলাম।তখনি নিরাপদ রুমে এসে বললো__ অয়ত্রি তোকে প্রণয় ডাকছে।
নিরাপদ কথায় একটা শুকনো ঢোক গিললাম।আর অবাক ও হলাম।কারণ প্রণয় ভাইয়াতো আমাকে তার রুমে ধুকতেই দেয়না।সে নাকি আজ আমাকে তার রুমে ডেকেছে।ভাবা যায় বিষয়টা.?প্রণয় ভাইয়া বাসায় আসার পর থেকেই তিনি আমার একেরপর এক চমকে দিচ্ছেন।আমার মনে হয়ে ইনি প্রণয় ভাইয়া নয়।ইনি প্রণয় ভাইয়া জমজ!!!
এসব মনে মনে ভাবতে ভাবতে প্রণয় ভাইয়ার রুমে সামনে এসে দাড়ালাম। হাত পা কাঁপছে আমার সাথে ভয় ও করছে।না জানি এই বহুরূপী আবার কি রুপ দেখায়।
দরজায় টোকা দিয়ে বললাম ভাইয়া আসবো…এটুকু বলতেই দরজার ভিতর থেকে আমার হাত টেনে রুমের ভিতরে আনলো প্রণয় ভাইয়া।
তারপর আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে নিয়ে আমার কোলে শুয়ে বললো___ মাথাটা টিপে দে খুব ব্যাথা করছে।
আর কত অবাক হতবাক হবো আমি??না জানি কখন আমি এই অবাক, হতবাক হতে হতে হার্ডএ্যাটাক না করে বসি।
প্রণয় ভাইয়ার চুলগুলো খুব সফট ও সিল্ক।তার চুল গুলো আলতো করে বুলিয়ে দিচ্ছি আমি।আজ কেন জানিনা প্রণয় ভাইয়ের এহেন কান্ডগুলোতে বিরক্ত হচ্ছিনা আমি।শুধু দফায়,দফায় অবাক হচ্ছি।
🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼
এদিকে ইভানি রুমে পাইচারি করছে আর প্রণয়কে কে ফোনের উপর ফোন দিয়েই চলেছে।কিন্ত ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হচ্ছেনা।এবার ইভানি রেগে ফোনটা আছার মারলো।সাথে সাথেই ফোনটা চূণবিচূর্ণ হয়ে গেলো।রাগে নিজের চুল নিজেই টেনে ছিরতে চাচ্ছে ইভানি। তার মস্তিষ্ক যেন কাজ করাই বন্ধ হয়ে গেছে।
চোখ দুটো ঝাপছা হয়ে আসছে।হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলো ইভানি।
অপর রুম থেকে ইভানির ঘরে কিছু পড়ার শব্দে শুনে নিজের রুম থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে ইভানির রুমের দিকে গেলো ইভানির বাবা।
(গল্পটা রিচেইক করিনি। সরি গাইস)