#কাছের_মানুষ_দূরে_থুইয়া
#পর্ব৬
#Raiha_Zubair_Ripti
সন্ধ্যার দিকে তরিকুল ইসলাম মেয়ে ও মেয়ের জামাই দের নিয়ে আসেন তার নিজ বাড়িতে। লায়লা বেগম বাসায় এসেই রান্নার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। লায়লা বেগম কে সাহায্য করছে লাবন্য আর তানিয়া বেগম। চার পাঁচ রকমের পিঠে বানিয়েছে সাথে সুস্বাদু খাবার, ভাত,ডাল,দু রকমের ভাজি,মাংস,পোলাও,ডিম। আর শেষ পাতে সেমাই।
তটিনী ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে লাবন্যর বাচ্চাকে কোলে নিয়ে গল্প করছে ঐশী আর তানুর সাথে। আজ তানিয়া বেগমের মেয়ে তাসলিমা ও এসেছে। সে এবার অনার্স ১ম বর্ষে পড়ে। পরীক্ষা থাকায় আসতে পারে নি আগে। পরীক্ষা শেষ হতেই আজ এসেছে।
তটিনীর রুমে বসে আছে তাজদিদ আর তাসফি। তাসফি নতুন জামাই কিন্তু তাজদিদ তো নতুন জামাই নয়। সেও এসে ঘাপটি মেরে বসে আছে তাসফির সাথে। এতে বরং তাসফির সুবিধাই হলো। বোরিং নেস টা কিঞ্চিৎ কম লাগলো। তটিনী এসে থেকে তার সামনে ভুলেও আসে নি। এ নিয়ে কিছুটা খারাপ লাগছে তাসফির। তবে বাহিরে প্রকাশ করলো না।
তাজদিদ তাসফির পাশে বসে থাকতে থাকতে বোরিং ফিল করলো সেজন্য তানু কে ডাক দিয়ে দু মগ কফি চেয়ে নিলো। তানু রান্না ঘরে গিয়ে দু মগ কফি বানিয়ে তটিণী-র সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ তোর ভাইয়া আর তাসফি কে কফি টা দিয়ে আয়।
তটিনী তাসলিমার সাথে কথা বলছিল,তানুর কথায় কথার মাঝে বাঁধা পায়। কফির মগটার দিকে তাকিয়ে লাবন্যর বাচ্চা টাকে তাসলিমার কোলে দিয়ে কফির মগ নিয়ে রুমে দিকে হাঁটা ধরে। দরজার কাছে আসতেই দেখে তাজদিদ বের হচ্ছে রুম থেকে। তটিনী সৌজন্যমূলক হাসি উপহার দিতেই তাজদিদ হাসি মুখে তটিণী-র হাত থেকে কফির একটা মগ হাতে নিয়ে বলে-
-“ তাসফি রুমেই আছে। তাকে গিয়ে দিয়ে আসো।
তটিনী মাথা নাড়ায়। তাজদিদ প্রস্থান করলেই তটিনী রুমের ভেতর ঢুকে। তাসফি তখন আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে। তটিনী কে দেখে শোয়া থেকে উঠে ভালো হয়ে বসে। তটিনী তাসফির দিকে কফির মগ টা এগিয়ে দেয়। তাসফি নীরবে কফির মগ টা নিয়ে কফিতে চুমুক বসিয়ে দেয়। তটিনী কিয়ৎ ক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে ঘর থেকে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলে তাসফি ডেকে উঠে। তটিনী পেছন ফিরে তাকায়। তাসফি কফির মগ হাতে নিয়ে তটিণী-র সামনে দাঁড়ায়।
-“ তোমার পড়াশোনা করার ইচ্ছে আছে আর?
তটিনী তাকায় তাসফির পানে। মাথা নাড়িয়ে মৃদু সুরে বলে- হ্যাঁ আছে।
-“ রাজশাহী তেই?
-“ হুমম।
তাসফি কফির মগে চুমুক বসিয়ে বলে-“ কবে থেকে? আই মিন রাজশাহী যেতে চাচ্ছো কবে?
-“ আপনার অনুমতি পেলেই যাব।
-“ যদি না দেই?
তটিনী তাসফির দিকে তড়িৎ গতিতে তাকায়। তাসফি আগের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে।
-“ আপনি কি অনুমতি দিবেন না তাহলে যাওয়ার?
-“ না না তেমন কিছু না। বাট হলে থাকা টা তো বাসা থেকে এলাও করবে না।
-“ আগেও তো ছিলাম হলে।
তাসফি ভ্রু কুঁচকে বলে- আগে কি ছিলে আর এখন কি তুমি? এখন তুমি কারো মেয়ের সাথে সাথে কারো বাড়ির পুত্র বধূ।
-“ তাহলে কি করবো?
-“ সপ্তাহ খানেক ভাবার জন্য সময় হবে?
-“ দশ দিন পর আমার এক্সাম।
-“ ওহ্। আচ্ছা তাহলে দু তিন দিন ভাবার জন্য সময় দাও। আমি ম্যানেজ করে ফেলবো।
-“ আচ্ছা।
তটিনী চলে যায়। রাতে মেয়ে জামাই দের এক সাথে নিয়ে খাবার খায় তরিকুল ইসলাম। খাওয়া দাওয়া শেষে মেয়ের জামাই দের সাথে গল্প গুজব করে রুমে যায় ঘুমাতে। লাবন্য আর তানিয়া বেগম এক সাথে এক রুমে থাকে আর ঐশী তাসলিমা অন্য রুমে। তাজদিদ আর তানু দাঁড়িয়ে আছে তাদের রুমের বেলকনিতে। চারিদিকে শীতল ঠান্ডা বাতাস বইছে। তানুর শরীর কেঁপে উঠলো বাতাসে। তাজদিদ নির্দ্বিধায় বেলকনিতে পাশে বউ রেখে সিগারেটে টান দিচ্ছে আর ধোঁয়া গুলো বাতাসের সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে। তানু ফোনে সময় দেখে নিলো। তারপর হাই তুলতে তুলতে বলল- শেষ হচ্ছে না কেনো তোমার সিগারেট খাওয়া? আর কতক্ষণ থাকবো দাঁড়িয়ে এই ঠান্ডায়?
তাজদিদ আড়চোখে তাকালো। আধ খাওয়া সিগারেট টা ফেলে দিলো। নিত্যকার অভ্যাস রাতে তানু কে পাশে রেখে সিগারেট খাওয়া।
-“ চলো রুমে যাই।
তানু আধ খাওয়া সিগারেটের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ফেলে দিলে কেনো?
-“ এমনি, খাওয়া মুড নেই সেজন্য।
-“ আচ্ছা রুমে গেলাম আমি আসো।
তানু রুমে যায় পেছন পেছন তাজদিদ ও।
মাথার উপর সিলিং ফ্যান টা ঘূর্ণিপাকের মতো ঘুরে চলছে। তাসফি আর তটিনী সেই ঘুরন্ত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে। ঘর জুড়ে চলছে পিনপিনে নিরবতা। আর নিঃশ্বাস ফেলার শব্দ। তটিনীর চোখে সকল রাজ্যের ঘুম এসে হানা দিচ্ছে। কিন্তু তাসফি নির্ঘুমে। বউ পাশে অথচ বউকে ছুঁতে পারছে না। নীরবতা কে সাইডে ফেলে তাসফি তটিনী কে ডাকে- ঘুমিয়ে গেছো তটিনী?
তটিনী ঘুমঘুম চোখে বলে-“ না কেনো?
-“ একটু কাছে আসবে?
বন্ধ করে রাখা চোখ ফট করে মেলে ফেলে তটিনী। তাসফির দিকে ঘুরে বলে-“ আমি তো সময় চেয়েছি।
তাসফি স্মিত হেঁসে বলে- আমি ওসবের জন্য কাছে আসতে বলি নি। আমার বুকে মাথা রাখবে এসো।
নিজের বোকামির জন্য লজ্জা পেলো তটিনী।
-“ বুকে মাথা রেখে কি হবে?
-“ বুকের মধ্যে থাকা হৃদপিণ্ডটা শীতল হবে এই আর কি।
তটিনী ঠোঁট কামড়ে কিছু ভেবে তাসফির কাছে গেলো। তাসফি তটিনী মাথাটা নিজের বুকের উপর নিয়ে বলে- কিছু শুনতে পারছো?
তটিনী তাসফির শার্ট খামচে ধরে। -“ হুমম।
-“ কি?
-“ কেমন ধুকধুক শব্দ হচ্ছে।
-“ হুমম। আস্তে আস্তে শীতল হয়ে থেমে যাবে।
কিছুক্ষণ পর সত্যি সত্যি আওয়াজ টা থেমে গেলো।
তাসফি তটিনীর চুলের ভাজে হাত রেখে হাত নাড়াতে থাকে। এতে যেনো আরাম বোধ করলো তটিনী। ঘুমের দিকে ঝুঁকে পড়লো। তাসফি কপালে চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বলে- সরি ফর এভরিথিং তটু।
পরের দিন দুপুরের খাবার খেয়েই তটিনী কে নিয়ে রওনা হয় তাসফি। আগামী কাল থেকে অফিসেও জয়েন হতে হবে।
তাজদিদ তানু কে নিয়ে বিকেলের দিকে আসে বাসায়। ড্রয়িং রুমে সিমির সাথে বসে আছে তটিনী। মেঘলা হোসেন আর তানু রান্না ঘরে রান্না করছে। রিমি চলে গেছে বাসায়। তাসফি বাসায় ফিরেই ল্যাপটপে মুখ গুঁজে বসে আছে। প্রচুর কাজ বাকি আছে তার।
সিমি তার ভার্সিটির গল্প বলছে তটিনী কে। আর তটিনী চুপচাপ শুনছে সেসব। জাহানারা বেগম তটিনী কে ডেকে বলে- নাত বউ আমার কাছে আসো তো।
তটিনী এক ঢোক গিলে তার কাছে যায়। জাহানারা বেগম আশেপাশে একবার তাকিয়ে নেয়।- তোমাগোর মধ্যে এহনও কিছু হয় নাই?
তটিনী চোখ মুখ খিঁচে ফেলে। এই মহিলাটাও না যাচ্ছে তাই।
-“ কি হবে আমাদের মাঝে দাদি?
তটিনীর পাল্টা প্রশ্নে জাহানারা বেগম ভ্রু কুঁচকায়।
-“ জানো না কি হইবো? ক্লাস ফোর ফাইভের মাইয়া রাও তো জানে। আর তুমি জানো না?
তটিনী জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কিছু বলার জন্য উদ্যত হলে,পেছন থেকে ভেসে আসে- দাদি এটা নিয়ে তোমার এতো চিন্তা হচ্ছে কেনো? আমার তো হচ্ছে না চিন্তা। একটু সময় নিক, পালিয়ে যাচ্ছে না ও। সময় পরে আছে অনেক ওসবের জন্য। প্লিজ এসব বলে আমার বউকে লজ্জায় ফেলো না।
জাহানারা বেগম তাসফির দিকে তাকায়। তাসফি গ্লাস হাতে করে পানি খাচ্ছে। কথাটা বলে তাসফি তটিনী কে একটু রুমে আসতে বলে চলে যায়। জাহানারা বেগম তটিনী উঠে যেতে নিলে হাত টেনে ধরে। পাশে আবার ফের বসিয়ে বলে- এই ছ্যামড়ি আর কত সময় নিবার চাও? বিয়ের তিনদিন হয়ে যাচ্ছে এখনও সময় লাগে? আমার নাতি রে খুশি করতে পারো না? তুমি কি পিচ্চি যে তোমার সময় লাগবো? আমার নাতি ভালা মানুষ দেইখা তোমারে সময় দিতাছে। অন্যরা হইলে তো এতক্ষণে পুরো বাড়ি মাথায় করে ফেলতো।
তটিনী কি বলবে বুঝতে পারছে না। তাসফির সমস্যা না কিন্তু এই মহিলার সমস্যার শেষ নেই। নিশ্চুপে উঠে রুমে চলে গেলো।
তাসফি শার্ট পড়ে রেডি হচ্ছে। এই অবেলায় তাসফি কে রেডি হতে দেখে তটিনী জিজ্ঞেস করে – কোথাও যাবেন?
-“ হুম। একটু কাজ আছে।
-“ ওহ্ ফিরবেন কখন?
-“ একটু লেট হবে। তুমি খেয়ে শুয়ে পড়ো কেমন?
তটিনী এর বিপরীতে কিছু বললো না। তাসফি পকেটে মানিব্যাগ ভরে হাতে ঘড়ি পড়ে তটিনীর সামনে দাঁড়িয়ে কপালে চুমে খেয়ে বেড়িয়ে যায়।
রাতে খুব একটা ফিরতে লেট করে নি তাসফি,রাতের ডিনারের আগেই ফিরেছে। হাতে ছিল কয়েকটা শপিং ব্যাগ। সেগুলো তটিনীর হাতে ধরিয়ে ফ্রেশ হতে যায়। তটিনী প্যাকেট গুলো উল্টেপাল্টে দেখে। কয়েকটা শাড়ি আর থ্রিপিস। তাসফি ওয়াশরুম থেকে বের হলে তটিনী জিজ্ঞেস করে – এগুলো কার জন্য?
তাসফি তটিনীর দিকে তাকিয়ে বলে- তোমার জন্য।
-“ এতোগুলা কেনো?
-“ এমনি। পছন্দ হলো তাই নিয়ে আসলাম।
এরমধ্যে তানু ডেকে যায় খাবার খাওয়ার জন্য। তাসফি তটিনী কে নিয়ে খাবার খাওয়ার জন্য নিচে নামে।
খাবার টেবিলে জাহাঙ্গীর হোসেন,মেঘলা হোসেন, তাজদিদ আর তানু রয়েছে। জাহানারা বেগম আর সিমি আগেই খেয়ে রুমে চলে গেছে।
তাসফি তটিনী কে নিয়ে বসতেই মেঘলা হোসেন খাবার বেড়ে দেয় প্লেটে। তাসফি খাবার প্লেটে হাত দিয়ে ভাত মুখে তুলতে তুলতে বলে- বাবা আমি রাজশাহী তে ট্রান্সফার হচ্ছি। তটিনী কে নিয়ে রাজশাহী থাকবো।
জাহাঙ্গীর হোসেন অবাক হয়। -“ রাজশাহী!
-“ হুমম। ট্রান্সফারের জন্য আগে সিলেট এসেছিল,তো অফিসের আরেক জনের এসেছিল রাজশাহী। তো আমি তাকে সিলেট পাঠিয়ে রাজশাহী যাচ্ছি। আর তটিনীর ভার্সিটিও রাজশাহী।
মেঘলা হোসেন চেয়ার টেনে বসে বলে,- তা যাচ্ছো কবে?
-“ এই তো ট্রান্সফারের কাজকর্ম শেষ হলেই। তিন চারদিনের মধ্যে।
-“ ওহ্। ওখানে গিয়ে ফ্ল্যাট নিতে হবে তো।
-“ হুমম।
-“ আচ্ছা যেটা ভালো হয় সেটা করো।
তটিনী চুপচাপ শুনলো। খাওয়া দাওয়া শেষে শ্বাশুড়ির হাতে হাতে এঁটো প্লেট ধুয়ে দিলো। মেঘলা হোসেন প্লেট গুলো উপর করে রাখতে রাখতে বলে- তুমি তো তাসফির পছন্দ অপছন্দ জানো না তাই না?
তটিনী ছোট্ট করে জবাব দিলো- না।
-“ ওর তেমন অপছন্দ নেই৷ খাবার প্রায় সবই খায়। তুমি যা রাঁধবে সেটাই খাবে। এটা নিয়ে প্যারা নিতে হবে না। তবে ওর অবাধ্য হয়ে কোনো কাজ করো না। মানে ও যা নিষেধ করবে সেসব করবে না কেমন? তা না হলে ভীষণ রেগে যায়।
-“ আচ্ছা।
——————————–
সিমি চলে গেছে দু দিন হয়েছে। বাড়িতে তানু,জাহানারা বেগম,মেঘলা হোসেন আর তটিনী থাকে দিনে। আর রাত হলে বাড়ির পুরুষ গুলো বাড়ি ফিরে। কাল তটিনী আর তাসফিও চলে যাবে। তানু জামাকাপড় গুছিয়ে দিচ্ছে তটিনীর আর তাসফির। আর তটিনী বিছানায় বসে বসে ভাবছে। তটিনী কে ভাবনায় মগ্ন থাকতে দেখে তানু বলে- কি ভাবছিস এতো?
তটিনীর বিঘ্নিত হয় ভাবনায়। -“ আচ্ছা আপু উনার কি রং পছন্দ?
-“ কার?
-“ উনার।
-“ তাসফির?
-“ হুমম।
-“ হোয়াইট।
-“ আমার কাছে তো সাদা কালারের কোনো শাড়ি নেই। তোমার কাছে কি আছে?
-“ হুমম আছে কেনো?
-“ আমি পড়বো।
-“ এই রাত করে শাড়ি পড়বি কেনো?
-“ এমনি তুমি দিবে শাড়ি?
-“ হুমম দিব।
-“ একটু সাজিয়ে দিয়ো সাথে?
তানু সন্দেহান চোখে তাকায়। কাপড় গোছানো বাদ দিয়ে তটিনীর পাশে বসে বলে- ব্যাপার কি?
-“ কিসের ব্যাপার? চোখ ছোট ছোট করে বলে তটিনী।
-“ হঠাৎ সাদা রঙের শাড়ি পড়তে চাইছিস সাথে সাজতেও।
-“ এমনি আমি কি সাজতে পারি না?
-“ হ্যাঁ পারিস তবে…
-“ তবে কি? তুমি বেশি ভাবছো।
-“ তুই বুঝলি কি করে আমি কিছু ভাবছি?
তটিনী আমতা আমতা করে বলে-
-“ ঐ আ…আরকি
-“ যাক সুবুদ্ধি উদয় হয়েছে তাহলে।
তটিনী মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে হাসে।
-“ বয়ফ্রেন্ড কে মন থেকে ভুলে গেছিস?
তড়িৎ গতিতে মাথা তুলে তাকায়।
-“ না মানে,মনে পড়ে ওর কথা?
তটিনী চোখ মুখ শক্ত করে বলে- না।
তানু অবাক হওয়ার ভান করে বলে- “ তুই না ভালোবাসতিস?
-“ হুমম তাতে কি?
-“ তাহলে মনে পড়বে না কেনো?
-“ জানি না। বাটপার দের কথা মনে পড়ুক আমি চাই না। ফর্ট ছেলে একটা।
-“ আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে। আমি শাড়ি এনে দিচ্ছি।
কথাটা বলে তানু নিজের রুমে চলে যায়।
তাসফির অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে রাত আট টা বেজে যায়। এমনি সময় বসার ঘরেই দেখে তটিনী কে। আজ দেখতে না পেয়ে তানুকে আস্তে করে জিজ্ঞেস করে- তটিনী কোথায়?
তানু হেঁসে বলে- রুমে গিয়ে দেখো।
তাসফির তানুর অযৌক্তিক হাসির মানে বুঝলো না। ক্লান্ত শরীর নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে। রুমের দরজা চাপানো। সেটা আস্তে করে খুলতেই দেখে সাদা রঙের শাড়ি পরিহিত রমণী ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল বাঁধছে। তাসফি অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো। সাদা রঙের শাড়িতে একদম শুভ্র পরীর মতো লাগছে তটিনী কে। তটিনী দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে তাকায় পেছনে। তাসফি কে দেখে ভরকে যায়। তাসফি নীরবে রুমে ঢুকে দরজাটা চাপিয়ে কাঁধের ব্যাগ টা সোফায় রাখে। শার্টের উপরের দুটো বোতাম খুলতে খুলতে বলে-
-“ আজ হঠাৎ সেজেছো যে?
তটিনী মিনমিনে সুরে জবাব দিলো- এমনি। আপনার পছন্দ হয়েছে?
-“ তোমাকে সাজ ছাড়াই সুন্দর লাগে। বাট এখনও লাগছে সুন্দর।
তটিনী তাসফির চোখের দিকে তাকিয়ে বলে- ধুয়ে আসবো মুখ?
-“ ধুয়ে ফেলবে কেনো? সুন্দর ই লাগছে।
-“ সত্যি?
-“ মিথ্যা বলি না আমি।
-“ আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।
তাসফি মাথা নাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। তটিনী ফোনে মেসেজ দেয় তানু কে খাবার টা রুমে দিয়ে যাওয়ার জন্য। তানু মেসেজেরই অপেক্ষায় ছিলো। খাবারের প্লেট টা তটিনীর রুমে এনে দিয়ে যায়। তটিনী খাবার টা নিয়ে টেবিলের উপর রাখে। তানু চোখ টিপ দিয়ে বলে- এনজয়।
তটিনী লজ্জা মাখা মুখ করে তানুর দিকে তাকায়৷ তানু তটিনীর থুতনিতে হাত দিয়ে বলে- এখনই লজ্জায় লাল নীল হচ্ছিস,পরে কোন রঙে নিজেকে রাঙাবি তাহলে?
-“ উফ যাবে তুমি?
তানু হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর তাসফি বের হয় ওয়াশরুম থেকে। তাসফি বের হতেই তটিনী তাসফি কে বলে- খাবার টা খেয়ে নিন। ক্ষুধা লেগেছে নিশ্চয়ই?
তাসফি ভ্রু কুঁচকে বলে- খাবার হঠাৎ রুমে কেনো?
-“ আপু দিয়ে গেছে।
-“ ওহ্ আচ্ছা। তুমি খেয়েছো?
-“ হুমম।
তাসফি খেতে বসে আর তটিনী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত কচলাতে থাকে। তাসফি খাওয়ার মাঝে তটিনী কে বলে উঠে – কিছু হয়েছে তোমার?
তটিনী আকস্মিক তাসফির গলার আওয়াজে চমকে উঠে। -“ ক…কই না তো।
তাসফি চুপচাপ খাবার টা খেয়ে শেষ করে। তারপর বিছানায় গিয়ে শুতে নিলে তটিনী বলে উঠে -“ আপনার জন্য এত সুন্দর করে সাজলাম আপনি ঘুমাতে যাচ্ছেন কেনো?
তাসফি পেছন ফিরে। -“ আমার জন্য সেজেছো?
-“ তা না হলে আর কার জন্য সাজবো?
-“ আজ কি আমার জন্য বিশেষ কেনো দিন?
-“ হতেও তো পারে বিশেষ দিন।
-“ ওহ্।
-“ আবার ওহ্ কি?
-“ নাহ কিছু না। শুয়ে পড়ো।
তটিনী বিছানার কাছে আসলো। -“ আপনি না আমায় সময় দিয়েছিলেন। আপনার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য।
-“ হুমম।
-“ আমার আর সময় লাগবে না।
তাসফি সবেই চেখ বন্ধ করতে চেয়েছিল। কিন্তু তটিনীর কথা শুনে চোখ আর বন্ধ করলো না। শোয়া থেকে উঠে বিস্ময় হয়ে বলে- সময় লাগবে না আর শিউর?
-“ না লাগবে না।
-“ সত্যি?
-“ হুমম।
তাসফি তড়িৎ গতিতে তটিনী কে টেনে কোলে বসায়।
-“ তাহলে আর আমার ধৈর্য্য ধরে রেখে কি লাভ? অনুমতি তো পেয়েই গেছি।
তটিনী চোখ বন্ধ করে ফেলে। তাসফি তটিনীর গলায় মুখ গুঁজে দিতেই শিউরে উঠে। আস্তে আস্তে হাতের ছোঁয়া গাঢ় হতে থাকে। সেই সাথে তটিণী-র নিঃশ্বাস ভারী হতে থাকে।
#চলবে?