কাছের মানুষ দূরে থুইয়া পর্ব-০৫

0
425

#কাছের_মানুষ_দূরে_থুইয়া
#পর্ব৫
#Raiha_Zubair_Ripti

ফুলের সজ্জিত রুমে গুটিশুটি হয়ে বিছানায় বসে আছে তটিনী। একটু আগেই সব নিয়মিত কানুন শেষ করে তানু আর সিমি তাসফির রুমে বসিয়ে দিয়ে গেছে। পুরো রুম মৌ মৌ করছে গোলাপ আর রজনীগন্ধা ফুলে। হঠাৎ পায়ের শব্দ কানে আসতেই আরো জড়োসড়ো হয়ে বসে তটিনী। নিশ্চয়ই তাসফি আসছে,কারন রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে তানু বলেছে তাসফি কে পাঠিয়ে দিবে। হঠাৎ পায়ের শব্দ বন্ধ হয়ে গেলো। তটিনী ঘোমটা ভেতর থেকে চেয়ে দেখলো তাসফি দরজার সিটকানি লাগাচ্ছে। তারপর এগিয়ে আসলো তটিনীর কাছে। তটিনী শাড়ি খামচে ধরলো। তাসফি আলতো হাতে তটিনীর ঘোমটা সরালো,তটিনী চোখ বন্ধ করে ফেললো। কেমন অস্বস্তি লাগছে। দম বন্ধ লাগছে। তাসফি তটিনীর চোখ বন্ধ করা দেখে আলতো হাসে। তারপর থুতনিতে হাত দিয়ে বলে- মাশা-আল্লাহ।
তারপর কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয়। এতে যেনো পুরো শরীর বরফের ন্যায় জমে যায় তটিনীর। চোখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।

তাসফি তটিনী কে ছেড়ে দিয়ে পকেট থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করে। তটিনীর বা হাত টা টেনে অনামিকা আঙুলে একটা ডায়মন্ডের আংটি পরিয়ে দেয়। আকস্মিক হাতে কিছু পড়ানোর অনুভব হতেই চোখ মেলে তাকায় তটিনী। মুহূর্তে হাতে দেখতে পায় আংটি। তাসফির হাতের মধ্যে এখনও তার হাত। হাতটা উঁচু করে আঙুলে চুমু খেয়ে বলে-
-“ আমার তরফ থেকে ছোট্ট একটা গিফট তোমার জন্য।
তটিনী হাত টা টেনে আংটি টা ভালো করে দেখে বলে-
-“ দেখে তো মনে হচ্ছে ডায়মন্ডের।
-“ হুমম।
-“ দাম তো অনেক।
-“ নিশ্চয়ই তোমার চেয়ে বেশি নয় এটার দাম।
তটিনী ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তাসফি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। -“ এই শাড়ি পড়ে থাকতে নিশ্চয়ই অসুবিধে হচ্ছে?
তটিনী হ্যাঁ জানালো। -“ তাহলে শাড়ি টা পাল্টে আসো।
-“ আমার ল্যাগেজ টা মনে হয় আনা হয় নি এ ঘরে। আপনি কি একটু এনে দিবেন?
তাসফি আলমারির কাছে এগিয়ে গেলো। নীল রঙের একটা সুতি কাপড় বের করে বলে- আপাতত এখানে যেটা আছে ওটা পড়েই ফ্রেশ হও। সকালে এনে দিব ল্যাগেজ।
তটিনী তাই করলো। বসা থেকে উঠে নীল রঙের কাপড় টা নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ততক্ষণে তাসফি রুমের মধ্যেই শেরওয়ানি পাল্টে ব্লু কালারের টি-শার্ট পড়ে নিলো।

মিনিট বিশেক পর তটিনী বের হলো হাতে বেনারসি শাড়ি টা নিয়ে। -“ শাড়ি টা কোথায় রাখবো?
তটিনীর কথায় ঘাড় ফিরিয়ে তাকায় তাসফি,মূহুর্তে সারা শরীরে অদ্ভুদ এক অনুভূতি বয়ে যায় মেরুদণ্ড দিয়ে। ভেজা চুলে খুব আকর্ষণীয় লাগছে তটিনী কে।
-“ সোফায় রেখে দাও।

তটিনী শাড়ি টা নিয়ে সোফায় রাখলো। তারপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো ভালো করে মুছে নিলো। ভেজা টাওয়াল টা বেলকনিতে মেলে দিয়ে রুমে আসতেই তাসফি লাল খামে মোড়ানো একটা প্যাকেট তটিনীর দিকে এগিয়ে দেয়। তটিনী ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে -কি এটায়?
তাসফি প্যাকেট টা ইশারায় নিতে বলে। তটিনী প্যাকেট টা তাসফির হাত থেকে নিজের হাতে নেয়।
-“ এটায় তোমার দেনমোহরের টাকা টা আছে৷ ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী টাকা টা তোমার প্রাপ্য তাই তোমাকে দিলাম।
-“ কিন্তু এই টাকা দিয়ে আমি কি করবো?
-“ সেটা তুমি জানো কি করবে না করবে টাকা টা দিয়ে।
তটিনী কিয়ৎ ক্ষন চুপ থেকে বলে- আপাতত আলমারি তে তুলি রাখি?
-“ তোমার ইচ্ছে।
তটিনী টাকাগুলো আলমারি তে তুলে রাখলো। তাসফি ঠোঁট কামড়ে কিছু ভেবে তটিনী কে ডেকে উঠলো। তটিনী পেছন ফিরলো। তাসফি ইশারায় কাছে আসতে বলল। তটিনি আলমারি টা লাগিয়ে গুটিগুটি পায়ে তাসফির সামনে আসলো। তাসফি পাশে বসতে বলল। তটিনী চুপচাপ পাশে বসলো। তাসফি তটিনীর বাম হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে-
-“ আমরা এখন স্বামী স্ত্রী রাইট? তটিনী মাথা ঝাকায়। “ আই থিংক তুমি জানো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হয়। আমি তোমাকে ফোর্স করবো না। তুমি জানো পুরুষ মানুষের ধৈর্য্য একটু কম থাকে তবে তোমার যত সময় লাগে নাও নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে এই সংসার জীবনে আমাকে ইজিলি মেনে নিতে। আমি অপেক্ষা করবো।

তটিনী এদিক ওদিক চোখ ঘুরালো। মিনমিন সুরে বলল- আমার সময় লাগবে।
-“ হুমম। অপেক্ষায় থাকবো।
তারপর পুরো রুম জুড়ে চলল পিনপিনে নিরবতা। কয়েক মূহুর্ত এভাবে নিরবতা কেটে যেতেই তাসফি বলে-“ শুয়ে পড়ো,আমি লাইট নিভিয়ে দিচ্ছি।
তটিনী বিছানার একপাশ ঘেঁষে শুয়ে পড়ে। তাসফি লাইট নিভিয়ে তটিনী পাশে দূরত্ব রেখে শুয়ে পড়ে। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে হাজার ও দুশ্চিন্তা। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বিয়েটা তো করে নিলো,ভবিষ্যৎ কিছুটা এখনও অনিশ্চিত তো বটেই।

সকালের ফজরের আজান কানে আসতেই ঘুম ভেঙে যায় তটিনীর। তটিনী আড়মোড়া ভেঙে উঠতেই অনুভব করে কেউ তাকে জাপ্টে ধরে আছে। তটিনী সামনে তাকিয়ে দেখে সে তাসফির বুকের সাথে লেগে আছে আর তাসফি এক হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। মুহূর্তে কেমন লজ্জা পেলো তটিনী। আস্তে করে তাসফির হাত সরিয়ে উঠে পড়লো। তটিনী ভালো করেই জানে এই কাজ টা হয়তো তটিনী ঘুমের তালেই করে ফেলছে। কারন তটিনীর ঘুমানো ভালো না। বাবার বাসায় থাকতে পুরো খাটে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাতো আর তানু আসলে তানুর উপর ধুপধাপ করে হাত পা উঠিয়ে দিত। এরজন্য বকাও খেতে হয়েছে।

বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে ওজু করে বের হয়। গতকাল রাতে দেখেছে আলমারি তে জায়নামাজ। সেটা বের করে ফজরের নামাজ আদায় করে নেয়। তারপর তাসফির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে আলতো সুরে ডেকে বলে-
-“ এই যে শুনছেন?
তাসফি নড়েচড়ে উঠে কিন্তু চোখ মেলে তাকায় না। তটিনী আরো দু বার ডাক দিতেই তাসফি চোখ মেলে তাকায়।
-“ আজান দিয়েছে নামাজ পড়তে যাবেন না মসজিদে?
তাসফি চোখ ডলতে ডলতে শোয়া থেকে উঠে বসে। চোখ তার অসম্ভব লাল। সারা রাত না ঘুমালে যেমন চোখ লাল হয়ে যায় ঠিক তেমন। তাসফি কোনো কথা না বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে হাত মুখ ধুয়ে করে বের হয়। ওজু টা মসজিদে গিয়ে করবে। তারপর টাওয়াল দিতে হাত মুখ মুছতে মুছতে তটিনী কে উদ্দেশ্য করে বলে-
-“ আলমারি থেকে পাঞ্জাবি টা বের করে দাও তো।
তটিনী আলমারির কাছে এগিয়ে গিয়ে সাদা একটা পাঞ্জাবি বের করে তাসফির দিকে এগিয়ে দিলো। তাসফি তটিনীর সামনেই টি-শার্ট খুলে পাঞ্জাবি টা পড়ে নিলো। টি-শার্ট খুলার সময় তটিনী চোখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল। কেমন অস্বস্তি ব্যাপার ছিল৷

তাসফি ড্রেসিং টেবিল থেকে টুপি নিয়ে সেটা মাথায় পড়ে নেয়। তারপর তটিনীর সামনে দাঁড়ায়। হঠাৎ মসজিদে না গিয়ে নিজের সামনে তাসফিকে দাঁড়াতে দেখে তটিনী ভরকে যায়। তাসফি চোখ ঝাপ্টা দিয়ে তটিনীর গালে হাত দিয়ে কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয়।
-“ এটায় অভ্যস্ত হয়ে নিবে। রোজ নিয়ম করে এটা হবে আমি বাসা থেকে বের হবার সময়। আপত্তি থাকবে?
তটিনী মাথা নত করে মাথা দুদিকে নাড়িয়ে না জানায়। তাসফি তপ্ত শ্বাস ফেলে রুম থেকে বের হয়।
তটিনী তাসফির যাওয়ার পানে তাকিয়ে দরজাটা চাপিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। বাড়ির সদস্য গুলো হয়তো এখনও উঠে নি। উঠলে নিশ্চয়ই কথার শব্দ ভেসে আসতো।

শুয়ে পড়তেই আবার ঘুমে তলিয়ে যায় তটিনী। বোনের গলার আওয়াজে ঘুম ভাঙে। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে তার বোন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তটিনী উঠে বসে। ফোনে টাইম দেখে নেয়,৯ টা ২০ বাজে। তানু তটিনীর পাশে বসে বলে-
-“ তাসফি কোথায়?
তটিনী এদিক ওদিক তাকায়। ঘুমের রেশ এখনও কাটে নি। অবাক হয়ে বলে- “ উনি ফিরে নি এখনও?
-“ কোথায় গেছে?
-“ মসজিদে নামাজ পড়তে।
-“ ওহ্ আচ্ছা। গোসল করছিস সকালে?
তটিনী বিরক্ত হয়ে বলে-“ এখনই গোসল করবো কেনো?
তানু তটিনীর মাথার চুলে হাত দেয়।-“ তোদের মধ্যে কিছু হয় নি?
তটিনী একই চাহনি নিয়ে বলে-“ কি হবে?
-“ যা হয়।
তটিনীর বুঝতে কিছুটা সময় লাগলো। বিষয় টা বোঝার পর লজ্জা অস্বস্তিতে ইচ্ছে করলো মাটি ফাঁক করে ভেতরে চলে যেতে। ছোট্ট করে জবাব দিলো- না সেসব কিছু হয় নি। সময় চেয়েছি।
-“ ওহ্ আচ্ছা। বেশি সময় লাগাস না। ছেলেরা বেশি সময় নেওয়া পছন্দ করে না।
-“ হুমম।
-“ আচ্ছা এবার বাহিরে চল। আশেপাশের লোকজন এসেছে তোকে দেখতে।
-“ দেখেনি এর আগে আমাকে?
-“ দেখেছে। তখন তো তুই আমার বোন হয়ে এসেছিলি আর এখন এ বাড়ির ছেলের বউ। বিষয় টা তো আলাদা।
তটিনী উঠে দাঁড়ালো। শাড়ির কুঁচি গুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। তানু সেটা ঠিক করে দিয়ে আঁচল টেনে মাথায় ঘোমটা দিয়ে দেয়।

চার থেকে পাঁচ জন মহিলা বসে আছে ড্রয়িং রুমে। তাদের পাশেই বসে আছে মেঘলা হোসেন আর জাহানারা বেগম। তটিনী কে দেখা মাত্রই মেঘলা হোসেন মুচকি হেঁসে বলেন-
-“ ঐ তো এসে গেছে তটিনী।
সবাই তটিনীর দিকে তাকায়। তানু তটিনী কে জাহানারা বেগমের পাশে বসায়৷ সবাই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে তটিনী কে। তাদের মধ্যে রহিমা নামের এক মহিলা বলে উঠে –
-“ ভালোই করলে দু বোন কে দু ছেলের জন্য নিয়ে এসে। মেয়ে দুটো দেখতে মাশা-আল্লাহ।
-“ তা যা বলেছেন। আমাদের বাড়ির দুই লক্ষী।

জাহানারা বেগম তটিনীর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে- ঐ মাইয়া তর চুল ভিজা না ক্যা?
তটিনী এটারই ভয়ে ছিলো। ইয়া বড় ঘোমটা দেওয়ার পর ও মহিলার নজর থেকে বাঁচলো না। এখন এটার জবাব কি দিয়ে দিবে?
এরমধ্যে তাসফি বাড়িতে প্রবেশ করে। ক্লান্ত শরীর। একপলক ড্রয়িং রুমে বসে থাকা সকলের দিকে তাকিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে চলে যায়। যাওয়ার আগে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি চেয়েছে। তানু তটিনী কে উদ্দেশ্য করে বলে-
-“ পানি টা দিয়ে আয় তাসফি কে।
তটিনী হাফ ছেড়ে বাঁচলো। বসা থেকে উঠে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে চলে গেলো উপরে।

বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে তাসফি। তটিনী পানির গ্লাস টা তাসফির দিকে এগিয়ে দেয়। তাসফি গ্লাস টা সাইডে রেখে তটিনী কে পাশে বসতে বলে। তটিনী পাশে বসে।-“ দাদি কিছু বলেছে তোমায়?
তৎক্ষনাৎ জবাব দিতে পারলো না তটিনী।
-“ বলেছে কিছু?
-“ হুমম।
-“ কান দিয়ো না দাদির কথায়। বয়স হয়েছে তো। হুটহাট বলে ফেলে যা বলা উচিত না সেসব ও।
তটিনী মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা জানায়।

মেঘলা হোসেন তানু কে দিয়ে সকালের খাবার টা পাঠিয়ে দেয় তাসফির রুমে। তাসফি আর তটিনী খাবার টা খেয়ে নেয়। দুপুরের আগ দিয়ে পার্লারের লোক এসে সাজিয়ে যায় তটিনী কে। তাসফি তখন বাহিরে খাবারের বৈঠক খানায় দেখভাল করছিল।
পার্পল কালারের লেহেঙ্গা পড়ানো হয়েছে তটিনী কে। রিমি সিমি তটিনী কে নিয়ে স্টেজে বসায়। তাজদিদ তাসফি কে স্টেজে তটিনীর পাশে গিয়ে বসতে বলে। সে এদিক টা সামলে নিবে। তাসফি স্টেজের দিকে এগিয়ে যায়। ব্লেজারের নিচে থাকা সাদা শার্ট টা ভিজে গেছে ঘামে। তটিনীর পাশে বসতেই পাশে থাকা ফ্যান থেকে শীতল ঠান্ডা বাতাস শরীর টাকে আরাম দায়ক করে তুললো তাসফির। এক-এক করে সবাই তাসফি আর তটিনী কে শুভেচ্ছা আর গিফট দিয়ে গেলো। তটিনী চাতক পাখির মতো বসে আছে। বারবার গেটের দিকে তাকাচ্ছে তার বাবা মা কে দেখার জন্য।

তাসফি বিষয় টা বুঝতে পারে। -“ আঙ্কেল আন্টি গাড়িতে আছে। এসে পড়বে কিছুক্ষণের মধ্যে।
তটিনী গেটের দিকে তাকিয়ে রইলো। মিনিট কয়েক পর আগমন হলো তার বাবা মায়ের। মুখে ফুটে উঠলো এক চিলতে হাসি। সেই হাসির দিকে কিয়ৎ ক্ষন চেয়ে রইলো তাসফি। তটিনীর মা এগিয়ে এলেন মেয়ের দিকে পেছন পেছন তরিকুল ইসলাম। আর সাথে রয়েছে লাবণ্য, তানিয়া বেগম আর ঐশি।
তটিনী বসা থেকে উঠে মা’কে জড়িয়ে ধরে। খুশিতে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
-“ কেমন আছিস?
তটিনী মাকে ছেড়ে দিয়ে বলে- ভালো আছি তোমরা?
-“ হুমম ভালো আছি।
তটিনী তরিকুল ইসলামের সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ তুমি কেমন আছো আব্বু?
তরিকুল ইসলাম মেয়ের পানে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রয়। ছোট্ট করে জবাব দেয় -“ ভালো আছি তুমি?
-“ হুম ভালো আছি।

তরিকুল ইসলাম কে দেখতে পেয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন এগিয়ে আসেন। তরিকুল ইসলাম কে নিয়ে সাইডে যান। লায়লা বেগম মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বলে-
-“ কাল রাতে মানুষ টা ভীষণ ভেঙে পড়েছিল তুই চলে আসার পর। বড্ড ভালোবাসে তোকে।
তটিনী চুপ হয়ে থাকে।
তানিয়া বেগম আশেপাশে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। এমন একটা বাড়ির ছেলের সাথে তার মেয়ে কে বিয়ে দিতে পারলে কপাল খুলে যেত। লাবন্যর কোল থেকে বাচ্চা টাকে তটিনী কোলে নেয়। আর তখনই সিমি আসে। তটিনীর থেকে বাচ্চা টাকে কোলে নিয়ে বলে- আপু ওহ্ সরি ভাবি ওকে আমি নিচ্ছি। তুমি আর ভাইয়া খেয়ে এসো।

তাসফি তটিনী কে নিয়ে খেতে যায়। সিমি বাচ্চা টাকে কোলে নিয়ে ঘুরে। তুহিন হাঁপিয়ে গেছে বন্ধুর বিয়েতে কাজ করতে করতে। তাই একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য চেয়ারে বসেছিল। সিমিকে বাচ্চা কোলে নিয়ে ঘুরতে দেখে সিমি কে ডেকে বলে-
-“ হেই বাচ্চা নিয়ে ঘুরছো কেনো?
সিমি হাঁটা থামিয়ে দেয়। তুহিনের দিকে এগিয়ে এসে বলে- ভাবি আর ওর মা খেতে বসেছে সেজন্য।
-“ ওহ্ আচ্ছা। কথাটা বলে তুহিন দাঁড়ায়৷ তারপর পকেট থেকে ফোন বের করে বলে-“ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকো একটা সেলফি তুলি।
কথাটা বলে ফটাফট একটার জায়গায় দু তিনটে সেলফি তুলল। সিমি ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ সেলফি তুললেন কেনো?
তুহিন সেলফি টা জুম করে দেখতে দেখতে বলল-
-“ আমার ভবিষ্যত ক্যামেরায় মুঠোবন্দি করে রাখলাম।
-“ মানে?
-“ মানে টানে কিছু না। খেয়েছো?
-“ হ্যাঁ।
-“ আমি খাই নি।
-“ কেনো?
-“ কাজ করেই তো সারতে পারছি না। তুমি এখানে বসো তো আমি খাবো।
কথাটা বলে একটা ওয়েটার কে এক প্লেট খাবার দিতে বলে তুহিন।
ওয়েটার এক প্লেট খাবার এনে তুহিনের হাতে দেয়। তুহিন খাবার টা খেতে আরম্ভ করে। সিমি পাশেই চেয়ার টেনে বসে রয়। তুহিনের খাওয়া শেষ হতেই সিমি বলে-“ খাওয়া শেষ এবার উঠি?
-“ হুমম।
সিমি চলে যায়। দূর থেকে রিমি ফোনে কথা বলতে বলতে এদিক টায় আসছিলো। সিমি আর তুহিন কে এক সাথে দেখতে পেয়ে ভ্রু কুঁচকায়। ফোন টা কেটে দিয়ে সিমির সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ তুহিনের সাথে তোর কিছু চলছে?
সিমি ভ্রু কুঁচকে বলে- কি চলবে?
-“ কোনো সম্পর্ক টম্পর্ক?
-“ পাগল নাকি তুমি? কিসব বলছো।
-“ সত্যি করে বল।
-“ তেমন কিছুই না। উনি ভীষণ ভালো।
-“ সেজন্যই সন্দেহ টা হচ্ছে।
-“ তবে কিছু হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে মন্দ হবে না। বিকজ আই লাইক হিম।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে