কাছের মানুষ দূরে থুইয়া পর্ব-০৪

0
414

#কাছের_মানুষ_দূরে_থুইয়া
#পর্ব৪
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ কি দেখে এমন মুচকি হাসছিস তুই?
তুহিনের কথায় হাসির আভা সরে গিয়ে মুখে জুড়ে বসে গম্ভীরতা। তুহিন ঘাড় এগিয়ে দেখে ফোনের স্কিনে তটিনীর গায়ে হলুদের ছবি জ্বলজ্বল করছে।
-“ ও এই ব্যাপার। আচ্ছা তাসফি ভেবে দেখেছিস আদিল যদি তটিনী কে বলে দেয় তুই থ্রেট দিছিস ডাই ও তটিনী কে ছেড়ে দিছে, তখন ও তো তোকে ভুল বুঝবে।
তাসফি এবার বিরক্ত বোধ করলো।
-“ তুই কি আমার ফ্রেন্ড? নেগেটিভ চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে কেনো তোর মাথায়? আদিল এসব বললে তোর কি মনে হয় তটিনী আদিল কে ছেড়ে দিবে? শুনেছি আদিল চড় মেরেছে গতকাল তটিনী। এবার অন্য কিছু দিয়ে পিটাবে। যে অন্য কারো সামান্য ভয়ে সে তাকে ছেড়েছে বলে। আর আমার ভুল বুঝবে হ্যাঁ এটা আমিও জানি। কথা বলবে না রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যাবে,ডিভোর্স ও হয়তো দিতে চাইবে। বাট এটা হতে হতে তটিনী আমার উপর দূর্বল হয়ে পড়বে। সে মুখে মুখে আমার উপর রেগে থাকলেও মনে একটু হলেও ততদিনে আমি জায়গা করে নিব। এটা আমার বিশ্বাস।
-“ এতো ঝামেলা না পাকিয়ে মেয়েটাকে আদিলের আগে প্রপোজ করলেই তো পারতি।
-“ তোর মাথায় বুদ্ধি নেই? তুই জানিস না তটিনীর ফ্যামিলি কেমন? ওদের কানে যদি যেত আমি তটিনী রিলেশন টিলেশন হারাম কিছু করছি তাহলে আমার ইমেজ টা থাকতো? কথাটা বলে তাসফি উঠে দাঁড়ালো, গায়ে হলুদের সময় হয়ে গেছে।
-“ এসব সবাই জানার পর কি তোর ইমেজ থাকবে তাদের সামনে?
-“ বিয়ের পর সব উচ্ছন্নে চলে যাক আমি কেয়ার করি শুধু তটিনী আমার পাশে আমার সাথে পার্মানেন্ট থাকলেই চলবে।
তুহিন আর কথা বাড়ালো না। তাসফির পেছন পেছন চলে গেলো। তাসফিকে স্টেজে বসাতেই তাসফির বাবা,মা,ভাই,কাজিন সার্কেল,দাদি,মামা,মামি এসে এক এক করে হলুদ ছোঁয়াল। তারপর কাজিন মহলের থাকা রিমি আর সিমি,সম্পর্কে তাসফির মামা তো বোন, যারা জমজ দু বোন। ওরা হলুদের অনুষ্ঠান টাকে আরো মোহনীয় করে তোলার জন্য ডান্স দিলো।

তুহিন আড় চোখে তাকিয়ে দেখলো দু বোনের নাচ। এই নিয়ে দু বার সাক্ষাৎ হয়েছে এই দু বোনের সাথে। সিমি মেয়েটা কে কেনো যেনো রিমির থেকে একটু আলাদা লাগে। আর আলাদা লাগবেই না কেনো। মেয়েটা রিমির থেকে বেশ গোছগাছ পরিপাটি। দেখা হলে সালাম দিবে কুশলাদি করবে। আর রিমি মেয়েটা কেমন যেনো উশৃংখল টাইপের।
নাচ শেষ হতেই সিমি হাঁপিয়ে যায়। পানি খাওয়ার জন্য নিচে চলে যায়। আর তখনই রিমি এগিয়ে আসে তুহিনের দিকে। তুহিন ভ্রু কুঁচকায়।
-“ আপনি হা করে সিমি কে দেখছিলেন কেনো?
তুহিন ভরকে গেলো। -“ আমি হা করে তাকিয়ে দেখছিলাম?
-“ তা নয়তো কি? আমি বেশ খেয়াল করেছি।
-“ তার মানে আপনিও আমার দিকে নাচের মধ্যে থেকে লক্ষ রেখেছেন!
বিস্ময়ের সাথে পিঞ্চ মেরে কথাটা বলল তুহিন।
-“ আমার বোনের দিকে নজর দিচ্ছেন আর আমি খেয়াল করবো না?
-“ কোথায় নজর দিলাম? এখনও তো দেওয়া শুরু করি নি। লাস্টের কথাটা বিরবির করে বলল তুহিন। যা রিমির কান অব্দি পৌঁছালো না।
-“ দূরে দূরে থাকবেন আমার বোনের থেকে।
-“ কবেই বা কাছাকাছি ছিলাম আপনার বোনের?তবে আপনি একটু হেল্প করলে আপনার বোনের কাছাকাছি থাকতে পারি।
-“ মানে?
-“ মানে টানে কিছু না। থাকুন আপনি আমি গেলাম।
তুহিন কথাটা বলে নিচে নামতে গেলে রিমি বলে উঠে – আরে নিচে যাচ্ছেন কেনো? নিচে তো সিমি।
-“ আমার বাসায় যেতে হবে না? আমি কি পাখির মত উড়ে উড়ে যাব আকাশ দিয়ে?
পেছনে ফিরে কথাটা বলে আবার সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটা ধরে। সিমি পানি খেয়ে ছাঁদে আসার পথে সিঁড়িতে দেখা হয় তুহিনের সাথে। তুহিন আলতো হাসে।
-“ চলে যাচ্ছেন?
তুহিন ছোট্ট করে জবাব দেয় -হুমম।
-“ আচ্ছা।
কথাটা বলে সিমি সাইড দিয়ে উপরে উঠে যেতে নিলে তুহিন দৃষ্টি সামনে রেখেই বলে- আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে সিমি?
সিমি দাঁড়িয়ে যায়। পেছন ফিরে ভ্রু কুঁচকে বলে- কেনো?
-“ না এমনি জেনে রাখা ভালো তো সেজন্য।
-“ না নেই।
-“ না থাকাই ভালো তা না হলে তাসফির মত আমাকেও সেম কাজ করতে হতো। কথাটা বিরবির করে বলে চলে যায় তুহিন। সিমি তুহিনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে ছাঁদে চলে আসে।

গায়ে হলুদ লাগানোর পরপর ই তাসফি নিজের রুমে চলে আসে। ওয়াশরুমে ঢুকে গোসল সেরে নেয় হলুদ পরিষ্কার করার জন্য। তারপর বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দিতেই রাজ্যের সকল ঘুম এসে হানা দেয় চোখে।

সকালে সূর্যের আলো চোখে পড়তেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে তটিনী। মুখের সামনে হাত দিয়ে আলো টাকে আড়াল করার বৃথা চেষ্টা করে। বিরক্তি নিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে। পড়নে থাকা হলুদ শাড়ি দেখতেই মনে পড়ে যায় গতকাল তার হলুদ হয়েছে। ফ্রেশ না হয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিল। বসা থেকে এবার উঠে দাঁড়ালো। তড়িঘড়ি করে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হলো। লাল রঙের থ্রিপিস পড়ে বের হলো ওয়াশরুম থেকে।

এরমধ্যে খাবার নিয়ে রুমে ঢুকলো লায়লা বেগম। খাবার টা টি-টেবিলের উপর রেখে গম্ভীর কন্ঠে বলল- খাবার টা তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। পার্লার থেকে লোক আসবে একটু পরই।
তটিনী হাতে থাকা ভেজা টাওয়াল টা বিছানায় রেখে পেছন থেকে লায়লা বেগম কে জড়িয়ে ধরে- এখনও রেগে থাকবা মা? আমি অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। একটু তো ক্ষমা করে দেখো। জীবনেও তোমাদের কথার অবাধ্য হব না। তোমাদের কথা মেনে তো বিয়ে টা করে নিচ্ছি । প্লিজ ক্ষমা করো। এই দেখো পায়ে পড়ছি প্লিজ ক্ষমা করো।

কথাটা বলে পা ধরতে গেলে তড়িৎ গতিতে মেয়েকে টেনে তুলে লায়লা বেগম- পাগল হয়েছিস? পা ধরছিস কেনো?
-“ ক্ষমা করছো না কেনো? ধরা গলায় বলে তটিনী।
লায়লা বেগম বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে ভেজা টাওয়াল বিছানার মধ্যে পড়ে আছে। মেয়ের মাথায় গাট্টা মেরে বলে-
-“ বড় হবি কবে? ভেজা টাওয়াল টা কেউ এভাবে বিছানায় ফেলে রাখে?
ভেজা টাওয়াল টা বিছানা থেকে তুলে নিয়ে বেলকনিতে মেলে দিয়ে আসে লায়লা বেগম। তারপর মেয়ের গায়ে আলতো ভাবে হাত রেখে বলে-
-“ এমন ভুল জীবনে করো না তটু। তোমার বাবা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে তোমায় আর তানু কে বড় করেছে শেষ বয়সে এসে এসব দেখার জন্য না। আমরা তোমার খারাপ চাই না৷ সুপাত্রের হাতেই তোমার বাবা তোমাকে তুলে দিচ্ছে। তাসফি তোমার পড়াশোনায় কখনও বাঁধা দিবে না। তোমার যত ইচ্ছে পড়াশোনা করবে৷ যারা বাবা মাকে কষ্ট দেয় তাদের জীবনে সুখ ধরা দেয় না মা। আল্লাহ নারাজ থাকে তাদের উপর। এমনি এমনি তো বলা হয়নি মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত ।
তটিনী ডুকরে কেঁদে উঠলো। সে মস্ত বড় অপরাধ করে ফেলছে কাছের মানুষ দের সাথে ঐ আদিলের জন্য। ইচ্ছে করছে আদিল কে পঁচা পানিতে চুবাতে। লায়লা বেগমের হাত দুটো আঁকড়ে ধরে বলল- আমি আর তোমাদের বিরুদ্ধে কখনও যাব না মা। তোমাদের সব কথা মেনে চলবো।
-“ সেটা হলেই ভালো। এবার খেয়ে নাও,বেলা অনেক হয়েছে।

লায়লা বেগম প্রস্থান করতেই তানু রুমে ঢুকে।
-“ কি বলল মা তোকে? আবার রাগ করেছে?
-“না। তটিনী ছোট্ট করে জবাব দিলো।
-“ আচ্ছা খেয়ে নে তাহলে তাড়াতাড়ি।
-“ আচ্ছা আপু একটা কথা বলতো।
-“ কি কথা? ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো তানু।
-“ তুমি জানতে আমি ফিরে আসবো বাসায়?
তানু কিছুটা ভরকে গেলো। তবে সেটা তটিনীর সামনে প্রকাশ করলো না।
-“ আ..আমি কি করে জানবো?
-“ না মনে হলো তুমি জানতে আমি ফিরবো।
-“ আচ্ছা বাদ দে সেসব কথা।

————————–

এগারো টার দিকে পার্লার থেকে লোকজন এসেছিল তটিনী কে সাজাতে। ডার্ক রেড কালারে বেনারসি পড়ানো হয়েছে। সাথে স্বর্ণের কিছু গহনা। খুব বেশি গর্জিয়াছ সাজ না। সাদামাটাই সাজ। লাবন্য বেগম তটিনীর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। তটিনী থুতনি ধরে বলে- মাশা-আল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে তোকে। তাসফি চোখই সরাতে পারবে না।
তটিনী প্রথম কথাটার জন্য হাসলো তবে পরক্ষনে দ্বিতীয় কথাটা শুনে মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো।

লোকটার কাছে তার ইমেজ কতটা নিচে চলে গেছে তার ধারনা বুঝার বাকি নেই। অন্য কোনো লোক থাকলে জেনেশুনে নিশ্চয়ই এমন মেয়েকে বিয়ে করতে চাইবে না। কিন্তু লোকটা কেনো করছে বিয়ে?
এসব ভাবনার মাঝ তানু লাবন্য কে ডেকে বলল- খালামুনি আম্মা ডাকছে তোমায় তাসফিরা চলে এসেছে।

লাবন্য চলে গেলো। তানুও পেছন পেছন যেতে নিলে তটিনী ডেকে উঠে। তানু পেছন ফিরে বলে- কিছু বলবি?
তটিনী কিছু বলার জন্যই ডেকেছিল কিন্তু পরমুহূর্তে মাথা দুদিকে নাড়িয়ে না বলে। তানু কিয়ৎ ক্ষন তটিনী কে দেখে চলে যায়।

কাজি সাহেব বসে আছে তাসফির সামনে। কবুল বলার পালা। তাসফি কে কবুল বলতে বললে তাসফি ফটাফট কবুল বলে দেয়। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে।

তানু চলে যেতেই কিছুক্ষণ পর দুটো মেয়ে হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকে তটিনীর। তটিনী মাথা তুলে তাকায়। জমজম মেয়ে দুটো এসেছে রিমি সিমি। সিমি তটিনীর পাশে বসে বলে-
-“ কেমন আছো আপু?
তটিনী স্মিত হেঁসে বলে- ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো?
-“ এই তো তোমাকে দেখে আগের থেকেও বেশি ভালো হয়ে গেলাম। বাই দ্যা ওয়ে তোমাকে কিন্তু দারুন লাগছে আপু। রিমি তটিনীর পাশে বসতে বসতে কথাটা বলে।
এরমধ্যে তাসফির দাদি জাহানারা বেগম লাঠি ঠক্ ঠক্ করে ভেতরে ঢুকে। রিমি সিমি কে উদ্দেশ্য করে বলে- তরা এহনও গল্প করতাছোস? ওদিকে যে আমার নাতি ডা অধৈর্য্য হইয়া বইসা আছে হের বউ রে একপলক দেখার লাইগা। তরা নিয়া যাস না ক্যা? বিয়ের সময় হইয়া গেছে কাজি আইসা বইসা আছে সেদিকে তগো হুঁশ নাই?
-“ তুমি কাজি কে পাঠাও দাদি। ভাবি তো রেডিই।

জাহানারা বেগম রুম থেকে বের হয়ে কাজি কে পাঠিয়ে দেয়। কাজির সাথে রুমে ঢুকে তানু,লাবন্য, তানিয়া বেগম,লায়লা বেগম।
তটিনীর মুখের সামনে ইয়া বড় ঘুমটা টানানো। কাজি তটিনীর সামনে বসে বলে- জাহাঙ্গীর হোসেনের ও মেঘলা হোসেনের ছেলে তাসফি হোসেন তিন লক্ষ এক টাকার দেনমোহর ধার্য্য করিয়াছে। তাসফি হোসেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে রাজি থাকলে বলো মা কবুল।
তটিনী অসহায় চোখে বোনের দিকে তাকালো। তানু তটিনীর পাশে বসলো। ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো- ভয় পাচ্ছিস?
তটিনী মাথা ঝাকালো। তানু স্মিত হেঁসে বলল- ধূর পাগলি ভয় পাচ্ছিস কেনো। নির্দ্বিধায় কবুল বলে দেয়। তাসফি অপেক্ষা করছে তো দেখার জন্য।
তটিনী ধরা গলায় বলল-“ আব্বুকে একটু আনো না আমার সামনে। একু বসতে বলো না আমার পাশে।

তানু বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। রুম থেকে বের হয়ে তরিকুল ইসলাম কে খুঁজতে লাগলো। তরিকুল ইসলাম হাসি মুখে কথা বলছে বেয়াই জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে।
-“ বাবা একটু সাইডে আসবে?
তানুর কথায় ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় তরিকুল ইসলাম। সাইডে এসে বলে-
-“ কিছু হয়েছে?
-“ তটিনী কবুল বলছে না। তোমাকে পাশে চাইছে। একটু যাওনা ওর কাছে। আর কত রেগে থাকবে। ভীষন অনুতপ্ত ও।

তরিকুল ইসলাম দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে গেলেন রুমে। জাহাঙ্গীর হোসেন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল- সব ঠিকঠাক তো তানু?
তানু স্মিত হেঁসে বলল- জ্বি বাবা সব ঠিকই আছে।

তরিকুল ইসলাম রুমে ঢুকে মেয়ের পাশে বসে। তটিনীর মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। তরিকুল ইসলাম মেয়ের বাম হাত খানা চেপে বলে-
-“ এখনও কবুল বলতে আপত্তি আছে?
তটিনী মাথা নাড়িয়ে না জানালো। সুপ্ত হাসি ঠোঁটে কোনে ফুটিয়ে কবুল বলল।
সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো। তরিকুল ইসলাম চলে গেলো রুম থেকে। তটিনীর মন আবার বিষাদে ভরে গেলো। তরিকুল ইসলামের চোখ জলে টইটম্বুর করছে। আর একটু থাকলে গড়িয়ে পড়তো মেয়ের সামনে। সন্তপর্ণে জল টুকু মুছে নিচে গেলো।

তটিনী কে নিয়ে বসানো হয়েছে তাসফির পাশে। তটিনীর দমবন্ধ লাগছে। তটিনীর মুখে এখন ঘোমটা নেই। তাসফি বারংবার আড়চোখে দেখছে তটিনী কে। তটিনীর নজরে এসেছে বিষয় টা সেজন্য আরো লজ্জার প্রখরতা বাড়ছে। তুহিন তাসফির কানের কাছে ফিসফিস করে বলে- একটু কন্ট্রোল কর নজর টা ভাই। পরেও দেখতে পারবি।
তাসফি রাগী চোখে তাকালো।

রাত আটটার দিকে বিদায়ের পালা ঘনিয়ে এলো। তটিনীর মোটেও যেতে ইচ্ছে করছে না। লায়লা বেগম কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে চলছে। লায়লা বেগমের চোখেও পানি। মাকে ছেড়ে দিয়ে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে বলে-
-“ এখনও রেগে থাকবে আব্বু আমার উপর? আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তোমার এই কঠোরতায়। একটু জড়িয়ে বুকে আগলে নাও না ছোট বেলায় ব্যাথা পেলে যেভাবে জড়িয়ে ধরতে সেভাবে।

তরিকুল ইসলাম মেয়েকে বুকে জাপ্টে ধরলো। শব্দ করে কেঁদে উঠল তটিনী। নোনা জল গড়ালো তরিকুল আলমের গাল বেয়ে। মেয়েকে ছেড়ে দিয়ে তাসফির হাতে মেয়ের হাত দিয়ে বলে-
-“ অনেক মূল্যবান জিনিস তোমার কাছে দিয়েছি বাবা। এর অমর্যাদা কখনও করো না। মারি বকি যাই করি না কেনো অন্য কেউ মেয়ে দুটো কিছু বললে ভীষণ কষ্ট হয়। আমার মেয়ে ভুল করলে একটু বুঝিয়ে বলো। কিন্তু কষ্ট দিয়ো না। বাবা হিসেবে সইতে পারবো না মেয়ের কষ্ট। অনেক ভরসা করে আমার মেয়েকে তোমায় দিয়েছি। আমি জানি আমার মেয়ের কষ্ট হবে এমন কিছু তুমি করবে না। তবুও ভবিষ্যতের কথা বলা তো যায় না।
তাসফি তটিনীর হাত শক্ত করে ধরে বলল-
-“ এই যে আপনার মেয়ের হাতটা শক্ত করে ধরেছি। মৃত্যুর অগ অব্দি ছাড়ছি না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।

তরিকুল ইসলাম স্বস্তি পেলো। তানু তটিনী কে ধরে গাড়িতে বসালো। তারপর তাসফির কাছে গিয়ে বলল- তোমার কথাতে সব হলো তাসফি। আমি জানি তুমি তটিনী কে ভালোবাসো। আদিল যদি তটিনীর হাত না ছাড়তো তাহলে হয়তো আমি কখনই এসবে তোমার সঙ্গ দিতাম না৷ আশা করছি ওকে কষ্ট দিবা না। এখন যেভাবে ভালোবাসো ভবিষ্যতে ও ভালোবাসবে।
তাসফি স্মিত হেঁসে বলল- ধন্যবাদ ভাবি আমাকে হেল্প করার জন্য।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে