#কলঙ্ক
#২৭_তমো_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। কথাটা আপনার পড়ার টেবিলের সামনের দেয়ালে রঙিন কালি দিয়ে লিখে রাখুন। তারপর পরিশ্রম করুন।যদি সফল না হন তবে আমি আপনার কাছে জবাবদিহি করবো! কিন্তু আপনি ফাঁকিবাজ হলে আমার ধারে কাছেও ঘেঁষবেন না!
আমার ইন্টারভ্যু ভালো হয়েছিল। এবং এক সপ্তাহ পরেই ডিপার্টম্যান্ট আমায় ডেকেছে।
আমি যে ভয় পেয়েছিলাম তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।ভিসির ভাগ্নে কিংবা ডিপার্টম্যান্ট হেডের ছোট ভাইয়ের চাকরি হয়নি।কারণ ওদের চেয়ে যোগ্যরাও এখানে ছিল।
আমার চাকরি হয়ে গেছে। কারণ ওদের চোখে আমি যোগ্য। এখন আমার একটা পরিচয় হয়েছে। ইউনিভার্সিটি লেকচারার।
‘
মা খুশি হয়েছেন খুব।আমায় জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছেন একেবারে।আর বলেছেন,’আমি এটা আগেই জানতাম।প্রথম যেদিন তুই তোর হোস্টেলের সিট ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আমার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলেছিলে তখনই বুঝে গিয়েছিলাম তোর দ্বারাই সবকিছু সম্ভব।তোর ভেতর একটা আগুন আছে।আমি শুধু তোকে এই আগুনের কথাটাই জানিয়ে দিয়েছিলাম!’
‘
একটু খেয়াল করুন প্লিজ!হ্যা আপনাকে বলছি আপু, আমার একটা কলঙ্ক ছিল।এই কলঙ্কের জন্য অনেক কিছুই সয়তে হয়েছে আমার।মা,বাবা, ভাইয়া আর নিজের বাড়ি ছেড়ে দূরে লুকিয়ে থেকেছি দীর্ঘ পাঁচটি বছর। লজ্জায় মরতে গিয়েছি কতোবার!ভীতু হওয়ার কারণে মরতে পারিনি! কিন্তু এখন আমি নিজেকে ধন্যবাদ জানাই।কারণ সেদিন আমি মরে গেলে আমার এই সফলতা কিছুতেই দেখতে পেতাম না!
‘
মেহরাবকে ফোন করেছিলাম।আজও সে ফোন ধরেনি।ও এমন মানুষ কেন?এতোদিন ওকে অনেক সহ্য করেছি। এখন আর না। এবার ওকে ইচ্ছে মতো বকে দিবো।কান টেনে ছিঁড়ে ফেলবো!
অবশ্য তা করা সম্ভব না।ওর প্রতি আমি খুব দূর্বল!
এই মানুষটা আমার জন্য যা করেছে তা কিছুতেই ভুলা সম্ভব নয়।আমি যদি সহজ করে বলি তবে বলবো আমি একটা ত্রিভুজের মতো।যার একদিকে আছে আমার পরিশ্রম আর দুদিকে আছে ম্যাম (মা)আর শিশির ভাইয়া।আর এই ত্রিভুজটি এঁকেছে মেহরাব। তাকে ছাড়া আমার কোন অস্তিত্ব নেই।যদিও বাহ্যিকভাবে দেখা যায় আমি এখন নিজের পায়েই দাঁড়াতে পেরেছি। কিন্তু সত্য হলো এটাই যে মেহরাব আমার পায়ের তলার মাটি! ওকে ছাড়া আমার আর কোন গন্তব্য নেই!
‘
ইউনিভার্সিটিতে প্রথম দিন ক্লাস করিয়েছি।মনে খুব ফূর্তি। তাছাড়া আজ বাবা মা আর ভাইয়ার সাথে দেখা হবে।তারা ট্রেনে আছে। বাসায় আসছে।হয়তোবা দেখা যাবে হুট করে মেহরাবও এসে উপস্থিত হবে।ও এমনই। সবকিছুতেই চমকে দিতে ভালোবাসে।
‘
ইউনিভার্সিটি গেটে এসে রিক্সা নিবো ঠিক তখন একজনকে দেখে আমি চমকে উঠলাম।নিতু!
চোখ মুখ শুকিয়ে একেবারে কেমন হয়ে আছে।
আমি ওকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতে চাইছিলাম।কারণ আমি এখন আর চাই না অতীত নিয়ে ঘাঁটতে।
কিন্তু ও আমায় দেখেই তাড়াহুড়ো করে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর বললো,’তূর্ণা,তোর সাথে আমার জরুরি কথা আছে। খুব জরুরি কথা!’
আমার ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। ইচ্ছে করে ওর গালে শক্ত করে দুটো চড় বসিয়ে দিতে। কিন্তু চড় দিতেও আমার বাঁধে। ঘেন্না হয় কেমন।তাই আমি ওকে এড়িয়ে একটা রিক্সায় উঠে যেতে চাই। কিন্তু তখন সে আমার সামনে এসে বাঁধা হয়। আমার শাড়ির আঁচল শক্ত করে টেনে ধরে ফেলে।
‘
#চলবে
#কলঙ্ক
#২৮_তমো_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
আমি বিরক্ত মুখে নিতুকে বলি,’কী সমস্যা তোর? আমার শাড়ির আঁচল টেনে ধরেছিস কোন সাহসে তুই?’
নিতু মুখ ভেঙে জড়জড় করে কেঁদে উঠে। তারপর কান্নাভেজা করুণ গলায় বলে,’আমায় দশটা মিনিট সময় দে না প্লিজ! শুধু দশটা মিনিট!’
আমার মায়া হয় ওর কান্না দেখে। আমি বলি,’ঠিক আছে।আয় ওই গাছটার নীচে গিয়ে দাঁড়াই।’
নিতুকে নিয়ে আমি দাঁড়াই একটা বড় রেইন্ট্রি গাছের নীচে । তারপর বলি,’জলদি করে কী বলতে চাস তা বলে শেষ কর। দশ মিনিটের উপর আমি থাকতে পারবো না। আমার হাতে অনেক কাজ আছে!’
নিতু হঠাৎ ধপাস করে আমার পায়ে পড়ে যায়। তারপর আমার পা ছুঁয়ে বলে,’আমান আসলে আমার কাজিন ছিল না।সে ছিল আমার বড় বোনের হাসব্যান্ড!’
নিতুর কথা শুনে আমি চমকে উঠি।গা কাঁটা দিয়ে উঠে আমার।এটা কী শুনালো নিতু!যদি আমান ওর বোন জামাই হবে তবে ও আমার সাথে আমানকে কাজিন বলে পরিচয় করিয়েছিল কেন? কিংবা আমার সাথে প্রেম, বিয়ে,সাক্ষাত করিয়ে দেয়া এসবে সাহায্যই বা করেছিল কেন!’
আমি জিজ্ঞেস করতে যাবো কিন্তু এর আগেই নিতু হড়বড় করে বলতে শুরু করে।বলে যে,’আমান কতটা জঘন্য তুই ভাবতেও পারবি না নিতু!ওর কাছে আপুর বিয়ের পর থেকেই আমাদের দুর্দিন শুরু হয়। বিয়ের পর আপুর যখন প্রথম বেলা প্রেগন্যান্সি পিরিয়ড চলে তখন আমাকে চারমাস ওদের বাসায় থাকতে হয়েছিল। তখন আমি উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ি। ওখানে থেকেই পড়াশোনা করতাম।আপুর প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডের শেষ দিকে তার শরীর বেশি খারাপ হয়।শরীরে পানি এসে যায়।ফুলে যেতে থাকে হাত পা। বিছানা থেকেই উঠতে পারে না।ঘরের সবকিছু আমাকেই করতে হয়। তাছাড়া তার শশুর শাশুড়িও তখন কাছে ছিল না।ওরা হজ্জ করতে চলে গিয়েছিল ।ঘরের সবকিছু আমার ঘাড়েই এসে চাপলো।আমানকে খাবার দেয়া,কাপড় ইস্ত্রি করে দেয়া,চা-কফি করে দেয়া এইসব কিছুও আমাকেই করতে হতো।
আমি যেদিনের ঘটনা বলবো সেদিন ছিল ঝড়।ঝড়ের সাথে প্রচন্ড বৃষ্টি। বারবার বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিলো।বাজ পড়ছিলো বারবার আকাশ ভেঙ্গে! আবার ইলেকট্রিসিটিও নাই। শুধু দুটি মোমবাতি জ্বলছে দু ঘরে।একটা আপুর ঘরে।আর অন্যটা আমানের ঘরে।আমি ওদের বাসায় যাওয়ার পর থেকে আমি থাকতাম আপুর সাথে।আর আমান থাকতো তার মায়ের ঘরে।সে রাতে খাওয়া দাওয়ার পর হঠাৎ আমান বললো, তার মাথাটা ঘুরছে। খারাপ লাগছে খুব।তাই সকাল সকাল গিয়ে শুয়ে পড়লো।এর খানিক পর আপু বললো, নিতু দেখে আয়তো তোর ভাইয়ার অবস্থা কী!মাথা ঘুরানো টা কমেছে কি না!না কমলে একটা ভারগন টেবলেট খেতে বল।সোকেশের উপর অষুধের বক্সে ভারগন টেবলেট আছে। সাথে করে নিয়ে যা।
আমি ভারগন টেবলেট আর গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে গেলাম আমানের জন্য। কিন্তু গিয়ে দেখি ভয়ংকর দৃশ্য।সে বিছানায় পড়ে আছে কেমন ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে।চোখ কেমন লাল লাল।মুখ দিয়ে ফেনার মতো বেরুচ্ছে।আমি ভয়ে আঁতকে উঠলাম। দৌড়ে গেলাম আপুর কাছে। গিয়ে বললাম সবকিছু। আপু কেঁদে উঠলো হাউমাউ করে। তারপর বললো, বাথরুম থেকে বালতি ভরে পানি নিয়ে যা।ওর মাথায় পানি ঢাল গিয়ে জলদি করে।আমি আসছি।
আমি বললাম, তোমার আসতে হবে না আপু।এই শরীর নিয়ে তুমি আসলে উল্টো তুমিই অসুস্থ হয়ে যাবে।
আপুকে এই কথা বলে আমি বাথরুম থেকে বালতি ভর্তি পানি আর মগ নিয়ে আমানের কাছে যাই।ওর মাথায় পানি ঢালতে শুরু করি। আমানের কোন সাড়া শব্দ নাই!
খানিক পর কষ্ট করে হেঁটে হেঁটে আপু আসে।সে এসে আমানকে এই অবস্থায় দেখে নিজেই রোগা হয়ে যেতে শুরু করে।আরেকটু হলে মাথা ঘুরিয়ে পড়েই যাচ্ছিল।আমি ভাবি, এখানে যদি ও থাকে আর আমানকে এই অবস্থায় দেখে তবে আমানকে রেখে ওকে নিয়েই দৌড়াদৌড়ি শুরু করতে হবে!তাই আপুকে জোর করেই ধরে ধরে তার ঘরে দিয়ে আসি। এবং তখন একটা ভয়ংকর বোকামি করে ফেলি আমি।আপুর ঘরের দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে আসি যেন সে বেরিয়ে আসতে না পারে। অবশ্য তা করা আমার উচিৎও ছিল তখন। দরজা বন্ধ না করলে সে আবার একা একাই উঠে আসতে চাইবে।আর মাথা ঘুরে পড়ে গেলে তখন কী বিপদটা ঘটবে!
আপুকে ঘরে রেখে দরজা বন্ধ করে আমি আবার আমানের কাছে যাই। গিয়ে দেখি ওর দশা আরো করুণ।মুখ দিয়ে ফেনা এখনও বেরুচ্ছে।আর কেমন গোঙাচ্ছে ও।আর ওদিকে ঝড়টা দৈত্যকার রুপ ধারণ করেছে। বাতাসের ঝাপটায় মোমবাতি নিভে যেতে চাইছে।আমি জলদি করে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আসলাম। তারপর এসে আবার আমানের মাথায় পানি ঢালতে শুরু করলাম।
হঠাৎ বাজ পড়লো। ভয়ংকর শব্দ।ঝড়ের তান্ডবও বাড়লো।শা শা শব্দে কান তব্দা খেয়ে যাচ্ছে।আর তখন আমান একটু কথা বললো। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,নিতু, আমার কপালটায় একটু হাত বুলিয়ে দাও।ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে একেবারে কপালের রগগুলো।
আমি অতি কষ্টের মাঝেও তখন মৃদু হাসলাম।কারণ তখন মুমুর্ষু অবস্থা থেকে ফিরে এসেছে আমান। আমি এবার ওর কপালে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।আর তখনই ভয়ংকর কান্ডটা করে সে। মৃত্যুসয্যা রোগী থেকে সে মুহূর্তে দানবে পরিণত হয়ে উঠে।এক হাতে আমার মুখ চেপে ধরে টেনে শুইয়ে দেয় বিছানায় আমায়। আমি চিৎকার পর্যন্ত করতে পারিনি কারণ ও আমার মুখ চেপে ধরে রেখেছিল। কিংবা চিৎকার করলেও তখন আপু শুনতে পেতো না।ঝড়ের তান্ডব অতটাই ছিল যে তখন আমি নিজেই নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দটা শুনতে পাচ্ছিলাম না!’
নিতুর কথা শুনে আমার শরীর কাঁপতে থাকে। এসব কী বলছে নিতু!
আমি তখন বলি,’নিতু, তারপর কী হলো?’
নিতু বলে,সে রাতেই আমার যা হারাবার হারিয়ে ফেলি আমি। কিন্তু সে রাতে সবকিছু শেষ হয়ে গেলেই বাঁচতাম। বাঁচার সুযোগ হয়নি।আমান তার ফোনের ক্যামেরা দিয়ে আমার কিছু ন্যুড পিক তুলে ফেলে। তারপর ভয় দেখিয়ে বলে যে আমি যদি কাউকে এই বিষয়ে কিছু বলি তবে সে নাকি এইসব পিক সোস্যাল মিডিয়ায় দিয়ে দিবে!’
আমি অবাক হই এবং ভাবতে থাকি তখন নিতুর জীবনটা কী তবে আমার চেয়ে আঁধার?
নিতু আবার বলতে শুরু করে। অবশ্য তার চোখ জলে ভুরভুর করছে।সে তার ওড়নার কোনা দিয়ে জল মুছে আবার বলে।
বলে,’তূর্ণা, বোন বিশ্বাস কর আমায়। এরপর আমি কাউকে বলার সাহস শক্তি কোনটাই পাচ্ছিলাম না।ও তো দিনের পর দিন আমায় ভয় দেখাচ্ছিল।আর আমরা সবচেয়ে বেশি যা ভয় পাই তা হলো আমাদের মান সম্মান।আমি আমার মান সম্মান রক্ষা করার জন্যই ওর সব কথা শুনতাম।শুনতে বাধ্য হতাম।
একবার যখন তোর সাথে আমায় ও দেখলো তখন থেকেই আমার পেছনে উঠে পড়ে লাগলো সে। যেভাবেই হোক তোর সাথে প্রেম করিয়ে দিতে হবে ওর। আমি বললাম,তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। কিছুতেই এটা করা সম্ভব না। কিন্তু তখন সে আমায় আবার ভয় দেখাতে শুরু করে।বলে, সবকিছু কিন্তু ফাঁস করে দিবো।
আমি উপায়হীন হয়ে তখন তার কথামতো কাজ শুরু করি।তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই তাকে আমার কাজিন বলে। নিজের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল থাকা সত্ত্বেও বলি ফুলপুরের কথা। তারপর তোর সাথে মিছেমিছির বিয়ে। আমার সাথে থেকে থেকে ওর সব স্বার্থ শেষ হলে ও আমেরিকা চলে যায়। বলেছিল পরে এসে আপুকে নিয়ে যাবে। আর আমিও তখন আপুকে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছিলাম। এছাড়া তো আর উপায় ছিল না আমার।তুই আমার বাসায় কখনো না গেলেও ঠিকানা জানতি।তুই যদি তখন আমায় খুঁজে বাসায় চলে যেতি তখন তোকে মুখ দেখাতাম কী করে বল?কী বলতাম তোকে?’
তূর্ণার মুখ থেকে কথাগুলো শুনে আমার মাথা কেমন যেন চক্কর দিয়ে উঠছে।গা গুলিয়ে বমি আসছে।কী ভয়ংকর কথাগুলো সে আমায় বলেছে! আবার প্রচন্ড রাগও হচ্ছে ওর প্রতি। ওর সাহায্যেই তো আমান আমার সর্বনাশ করেছে। শুধুমাত্র ওর জন্য আমার জীবনে কত কী বয়ে গেছে!
আমার এখন ইচ্ছে করছে নিতুকে গলা চেপে ধরে মেরে ফেলি। কিন্তু পারছি না।নিতু আমার পা ধরে আছে এখনও। খুব করে কাঁদছে। হাউমাউ করে কাঁদছে।
আমি চুপ করে আছি।একদম চুপ করে।
নিতু নিজেই আবার বলতে শুরু করলো।
সে বললো,’
আমি ইচ্ছে করে করিনি এসব তূর্ণা। নিজেকে বাঁচানোর জন্য শুধু এসব করেছি ।কিন্ত তখন আমি বুঝতে পারিনি অতকিছু। আসলে আমার নিজের মান সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে আরেকজনের জীবন জাহান্নাম করে দেয়াও যে ভয়ঙ্কর অপরাধ! তূর্ণা, বোন আমার, আমি তোর সাথে যা করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য।তাই ক্ষমাও আমি চাইবো না। আমানের শাস্তি সে পেয়ে গেছে।আমেরিকা যাওয়ার পাঁচ মাস পরেই কার এক্সিডেন্টে মারা গেছে সে।ক্লাব থেকে মাতাল হয়ে বাসায় ফিরছিলো ড্রাইভ করে। তখন এক্সিডেন্ট করে।ওর শাস্তি শেষ হলেও আমার শাস্তি পাওয়া এখনও বাকী।আমি তোর কাছে এসেছি শুধুমাত্র আমার শাস্তিটা মাথা পেতে নিতে।তুই আমায় যেভাবেই শাস্তি দিতে চাস তা আমি মাথা পেতে নিবো!’
নিতু কাঁদছে। খুব করে কাঁদছে।
আমি বুঝতে পারছি না এখন আমার কী করা উচিৎ!আমি কী ওকে মাফ করে দিবো?জানি সে ভুল করেছে। কিন্তু ভুল সে বুঝতেও তো পেরেছে।আর ভাইয়াই তো বলেছিলো একদিন,যে ভুল করে ভুল বুঝতে পারে তাকে ক্ষমা করতে হয়!
তাছাড়া নিতু নিজেও তো ভোক্তভোগী!ও তখন এসব না করেই বা কী করতো তখন?
আমি ডাকলাম,’নিতু!’
নিতু উপর দিকে মুখ তুললো।অধিক কান্নার কারণে ওর চোখ মুখ লাল টুকটুকে হয়ে গেছে।
আমি এবার ওকে বললাম,’আপু কোথায় আছে?’
নিতু বললো,’আপু নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকায় থাকে। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করে।ওর আট বছর বয়সী এক ছেলে।ছেলের পড়াশোনার খরচ, সংসারের খরচ চালাতে খুব কষ্ট হয়!’
‘আর তুই?’
নিতু বলে,’কিছুই করি না। নিজেকে নিয়ে সারাদিন ভাবি। নিজের অপরাধ নিয়ে ধুঁকছি শুধু।দেখিস না চেহারার কী হাল করেছি!’
আমি ওর একটা হাত ধরে বললাম,’আয় বাসায় যাই!’
নিতু বললো,’আমার সে যোগ্যতা নাই রে বোন আর।আমি সেই যোগ্যতা কবেই হারিয়ে ফেলেছি।’
আমি বললাম,’এমন করে বলছিস কেন?আমি তো তোকে ক্ষমা করে দিয়েছি!’
নিতু তখন বললো,’তুই ক্ষমা করলেও আমি নিজে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।আমি শুধু তোর সাথে দেখা করতেই এসেছিলাম।শেষ দেখা।’
কথাটা বলেই আমায় আর কোন কথা বলার সুযোগ দিলো না নিতু।বড় রাস্তা দিয়ে তখন একটানা বাস ট্রাক ছুটে যাচ্ছে ভয়ানক গতিতে।নিতু বড় রাস্তাটার দিকেই দৌড়ে গেল। এবং বড় রাস্তায় গিয়ে ভয়ানক কান্ডটা সে ঘটিয়েই ফেললো।
‘
নিতুর এক্সিডেন্টের পর ওকে সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছি। ডাক্তার বলছে অবস্থা আশঙ্কাজনক।রাত আটটায় অপারেশন। অপারেশনের আগে বলা যাচ্ছে না কী হয়!
আমার খারাপ লাগছে। খুব খারাপ লাগছে।আমি
ফোন করেছি মাকে।
মা (ম্যাম), শিশির ভাইয়া, মেহরাব,বাবা-মা,আর ভাইয়া এসেছে হসপিটালে।কত কত দিন পর ওদের সাথে দেখা। কিন্তু কারোর সাথেই আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। নিতুর জন্য খারাপ লাগছে।ভাবছি,ও কেন নিজের অতবড়ো ক্ষতিটা করতে গেলো!
মা (আমার মা) আমার কাছে এসে বললেন,’ওকে হসপিটালে নিয়ে এলি কেন?মরে পড়ে থাকতো!যে তোর সর্বনাশ করে ফেলেছে তার জন্য অত মায়া!’
তখন আমার আলোকদাত্রী মা মায়ের কাছে এলেন। এসে মার হাতটা ধরে বললেন,’মেয়েটা তার ভুল বুঝতে পেরেছে।যে ভুল বুঝে ক্ষমা চায় তাকে ক্ষমা করতে হয়!আর যে ক্ষমা করতে জানে সে মহান হয়!’
মা মৃদু হাসলেন।এই হাসিটা দেখেই অনুভব করা যায় তিনি সব রাগ অভিমান ভুলে গিয়েছেন মুহূর্তে!
‘
অপারেশন হয়ে গেছে।ডাক্তার এসে জানিয়েছে,’ আলহামদুলিল্লাহ পেশেন্ট আশঙ্কা মুক্ত।ভাগ্যিস মগজে প্রেশার পড়েনি!পড়লে আর বাঁচার পসিবিলিটি ছিল না!’
আমরা সবাই তখন বললাম, আলহামদুলিল্লাহ।
‘
আজ ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখ। নিতুকে হসপিটাল থেকে ছাড়বে তেরো তারিখ।মা (ম্যাম)আর বাবা আমাদের বিয়ের ডেট ঠিক করেন ডিসেম্বরের পনেরো তারিখ। বিয়ে হবে আমাদের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার বারহাট্টায়।
বাবা, মা, ভাইয়া আর মেহরাব ওরা আগামীকাল সকালেই বাড়ি চলে যাবে। বাড়িতে অনেক কাজ করতে হবে।আমরা বাকীরা যাবো তেরো তারিখ সকাল বেলা।
#চলবে