#কবে_হলো_ভালোবাসা
#তাশফিয়া_রহমান (লেখিকা)
#পর্ব :৯
(কপি করা নিষেধ)
দিবস খাবার নিয়ে আনতেই ,হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো।
অথচ একটু আগেও রোদ এ ঝকঝকে ছিলো।
বৃষ্টির মধ্যেই দিবস দীবার পাশে বসার সাথে সাথে দীবা বলে উঠলো
– আরে উঠে পড়ো, বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর হবে, তখন এই দীবারই দোষ হবে।
দীবা যে আনমনে দিবসকে, তুমি বলে ফেলেছে এখনো বুঝতে পারে নি।
কিন্তু দিবস ভীষণ অবাক হয়েছে! সাথে ভালো লাগা কাজ করছে।
দিবসকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে দীবা দিবস এর হাত ধরে গাড়ির কাছে টেনে নিয়ে গেলো।
দিবস ও যেন বাধ্য ছেলের মতো গাড়িতে উঠলো।
দীবা গাড়িতে উঠার পর ওর খেয়াল হলো, ও দিবসকে তুমি করে বলেছে । আর হাত ধরে নিয়ে আসছে ভাবতেই লজ্জা পেলো ভীষণ। আমতা আমতা করে বললো
– আ আমি
দিবস ওর কথা শুনে হেসে বললো
দিবস: হুম তুমি তো দীবানিশি আই নো।
– না মা মা নে বলতে চাইছি যে
দিবস বুঝতে পেরেছে দীবা কি বলতে চাইছে তাই ভীষণ উপভোগ করছে।
দীবা আবার বললো
– আমার কথাটা শোনার ইচ্ছা আছে?
দিবস: অবশ্যই আমি তো শুনতে চাইছি, কিন্তু তুমি তো বলতেই পারছো না।
– আসলে তখন বৃষ্টির মধ্যে আমি আপনাকে …
আর বলতে পারলো না ,কারণ দিবস থামিয়ে বলে উঠলো
দিবস: আর আপনি না, তুমি ঠিক আছে ওকে।
– নট ওকে আমি তো তখন ভুল করে বলেছি।
দিবস একটু সিরিয়াস হয়ে বললো
দিবস: ধরে নাও তোমার ভুলটায় আমার জন্য সঠিক।
দীবা বুঝতে না পেরে বললো
– মানে কি ?
দিবস একটু হেসে বললো
দিবস: আরে তুমি আমার ডাই হার্ট ফ্যান ।সো তুমি আপনি করে বললে কেমন যেন পর পর মনে হয়। তাই তুমি করে বলো। আই নো আই এম ভেরি স্পেশাল ফর ইউ।
দীবা ভেঙচি কেটে বলে উঠলো
– হাহ স্পেশাল না কচু। আর আমি মোটেও ডাই হার্ট ফ্যান না, সেটা আপনিও খুব ভালো জানেন।
দিবস : তাহলে কি আমার প্রেমে অন্ধ পাগলী প্রেমিকা । বলেই হাহা করে হাসলো।
দিবসের সাথে তাল মিলিয়ে মনের অজান্তেই বলে ফেললো
– অন্ধ হতে যাবো কেনো? হলে চোখে দেখে হবো।
বলেই জীভ কাটলো দিবসের কথার সাথে তাল মিলিয়ে মনের অজান্তেই বলে ফেলেছিলো।
দিবস বেশ জোরেই হেসে দিলো।
দিবস: আমি ঠিক জানতাম তুমি আমার প্রেমে হাবুডুবু খাও । উফ আফটার অল আই এম ফারদিন আহমেদ দিবস প্রেমে পরবা এটা নরমাল। কিন্তু পাগলী প্রেমিকা হয়ে যাও নিতো আবার?
বলেই চোখ মেরে হা হা করে হাসলো।
দিবস এর হাসি দেখে দীবার কোন রাগ হলো না। বরং ভালো লাগা কাজ করলো। নিজের মনকে নিজেই বকে দীবা বলে উঠলো
– আপনার প্রেমিকা হওয়ার থেকে সারাজীবন সিঙ্গেল থাকা অনেক বেটার।
দিবস : ওহো এবার বুঝেছি তুমি একচুয়ালি কি চাও।
-আমি কি চাই আমি জানিনা ,আর আপনি জানেন, বাহ ভালো তো।
দিবস খুব সিরিয়াস হয়ে বললো।
দিবস: তুমি আমার জীবনে আসলে শুধু মাত্র তোমার জন্য একটা পারমানেন্ট জায়গা দিবস রাখবে।
দীবার হার্ট বিট বেড়ে গেলেও নিজেকে নরমাল করে বললো
– পারমানেন্ট জায়গা মানে?
দিবস: আমার বউ এই জায়গা টা শুধু তোমার জন্য রাখবো।
দীবা যেন দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে শ্বাস নিতে ভুলে গেছে।
দীবার অস্থিরতাময় মুখ দেখে দিবস জোরে জোরে হেসে ফেললো।
দীবার বুঝতে দেরি হলো না, দিবস এর হাসির কারণ। দীবার ভীষণ রাগ উঠে গেলো।
দীবা দিবসের চুল ধরে খামচে বললো
আবার মজা। মানুষের অনুভূতি নিয়ে মজা করতে ভালো লাগে না?
দীবা কথা বলতে বলতে কেদে ফেললো। দীবা নিজেও জানেনা কান্না করার কারণ।
দিবস ও ভাবতে পারেনি ,ওর মজার কারনে দীবা কেদে ফেলবে!
দিবস অপরাধীর মতো মুখ করে
কানে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বললো
দিবস: আই এম রিয়েলি সরি , আমি জানি না তুমি তোমার কোন অনুভূতির কথা বললে, কিন্তু যে অনুভূতি হোক আমি তোমার সব অনুভূতিকে রেস্পেক্ট করি।প্লিজ ডোন্ট ক্রাই ।
দিবস ওর পকেট থেকে একটি চকলেট এনে দীবার দিকে এগিয়ে দিলো।
দীবা চকলেট এর উপর বরাবর ভীষণ উইক। কান্নাকাটি থামিয়ে বলে উঠলো।
– চকলেট!
হাত বাড়িয়ে নিতে যেয়েও হাত গুটিয়ে নিলো।
দিবস বলে উঠলো
দিবস: একচুয়ালি চকলেট আমি মাঝে মাঝে খেয়ে থাকি, আর আমি জানি তোমার ফেবারিট ঠিক না?
– আপনি কীভাবে জানেন?
দিবস: বাবলি বলেছিলো।
-ওহ।
দিবস: দীবানিশি আম সরি তো বাবু।
– আমি বাবু না।
দিবস হেসে বললো
দিবস : হ্যাঁ তুমি বাবু কেনো হবে, তুমি তো আমার দীবানিশি।
দীবার কানে কথাটি বার বেজে উঠলো “আমার দীবানিশি “।
ওর ভাবনার দিবস আবার বললো
দিবস: চকলেট খেলে আমি ভাবতাম আমার সরি কেউ একসেপ্ট করেছে। বলেই ইনোসেন্ট ফেইস করে থাকলো।
দীবার কী হলো হঠা,ৎ দিবস এর এমন মুখ দেখে ভীষণ মায়া হলো। তাই হাত বাড়িয়ে চকলেট নিলো।
চকলেট নিতেই দিবস এর মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটলো।
চকলেট নিয়ে আপন মনে খেতে শুরু করে দিয়েছে দীবা।
দিবস: চকলেট কি বেশি টেস্টি?
আনমনে দীবা বললো
– হুম। আমাকে তো ৫০ টি দিলেও খেয়ে ফেলবো।
দিবস শব্দ বীহিন হাসলো।
দিবস এক দৃষ্টিতে দীবার চকলেট খাওয়া দেখছে। দীবা চকলেট একদম বেবিদের মতো খাচ্ছে। সারা মুখে লাগিয়ে ফেলেছে। দিবস ভাবছে, চকলেট খাওয়ার সময় কোন মানুষকে এতটা কিউট লাগতে পারে ধারণার বাইরে ছিল!
দিবস টিস্যু নিয়ে দীবার দিকে এগিয়ে দিতেই ,দীবা ভুরু কুচকে প্রশ্ন করলো ইশারায়। দিবস এর আজ কেনো জানি দীবার সব কিছুতেই একটা বাচ্চামো খুজে পাচ্ছে। যেটা ওর ভালো লাগছে।
দিবস কিছু না বলায় দীবা চকলেট খেতে ব্যস্ত হতেই, অনুভব করলো ওর মুখে কেউ টিস্যু দিচ্ছে, তাকাতেই দেখতে পেলো দিবস খুব যত্ন সহকারে টিস্যু দিয়ে মুছে দিচ্ছে আর বলছে
দিবস: চকলেট মুছে দিচ্ছি, বেবিদের মতো মুখে লাগিয়ে ফেলেছো ।
– আমি বেবি না।
দিবস হেসে বললো
দিবস: আচ্ছা বেবি না মানলাম ,তাহলে কি ধরে নেবো বেবির মা। বেবির মা হলে কিন্তু তোমারি প্রবলেম।
দীবা বুঝতে না পেরে বললো
– কি সমস্যা?
দিবস দুষ্ট হেসে বললো
দিবস: বেবির মা হলে, চকলেট এভাবে মুখে লাগিয়ে ফেললে আমার মতো পিপড়া চলে আসবে, পিপড়া কিন্তু মিষ্টি বেশি লাইক করে। বলেই চোখ মারলো।
দীবা বোঝার সাথে সাথে হার্ট বিট বেড়ে গেলো। তবুও নিজেকে নরমাল করে বলে উঠলো
– একদম অসভ্য মার্কা কথা বলবেন না।
দিবস হেসে বললো
দিবস: অসভ্য মার্কা কি নতুন?
দীবা বুঝতে না পেরে বললো
– মানে কি বলেন না বলেন মাথা কি গেছে নাকি?
দিবস: বিভিন্ন মার্কার নাম শুনেছি তো এটি কি নতুন কোন মার্কা আগে শুনিনোতো?
– আপনি আসলেই ফাজিল।
দিবস: আচ্ছা আজকে কি বাসায় যাওয়ার ইচ্ছা নাই , অবশ্য তুমি বললে আমার কোন প্রবলেম নাই।
দীবা দিবস এর চুল ধরতেই, দিবস পিছিয়ে গিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করলো।
গাড়ির ভেতরে আর কেউ কোন কথা বললো না।
প্রায় ৪০ মিনিট পরে দীবার ফুফুর বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো ।
গাড়ি থামাতে দীবা সিটি বেলট খুলতে গেলো কিন্তু কিছুতেই পারলোনা।
দিবস এক দৃষ্টিতে দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে।
– এইভাবে না হেসে একটু হেল্পও তো করা যায়।
দিবস দুষ্ট হেসে বললো
দিবস: করতেই পারি, কিন্তু তোমাকে বলতে হবে।
– কি বলতে হবে?
দিবস: সে দিবস বেবি প্লিজ হেল্প করো।
বলেই হাসলো।
দীবা ভীষণ লজ্জা পেলো। কাপা কাপা গলায় বললো
– এ এ সব মোটেও বলতে পারবোনা।
দিবস ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলো
দিবস: তাহলে বসে থাকো গাড়িতে, আমার কি আমি গেলাম।
#চলবে ।