কবে হলো ভালোবাসা পর্ব-০৭

0
849

#কবে_হলো_ভালোবাসা
#তাশফিয়া_রহমান (লেখিকা)
#পর্ব :৭

(কপি করা নিষেধ)

প্রায় আধাঘণ্টা পর, পিট পিট করে চোখ খুললো দীবা। চোখ খুলে তাকাতে নিজেকে গাড়ির ভেতরে আবিষ্কার করে অবাক হয়ে গেলো!

গাড়ি থেকে নামতে যেতে হাতে টান পরায় পাশে তাকাতে আরো একধাপ অবাক হলো! কারণ তার পাশে দিবস। দীবা ভাবতে লাগলো তবে কি সে দিবসের গাড়িতে! কিন্তু কীভাবে! এসব ভাবনার মাঝেই দিবস বলে উঠলো
দিবস: এখন কেমন লাগছে?
– হুম ভালো । কিন্তু আমি এখানে কি করে!
দিবস: ভার্সিটিতে অজ্ঞান হয়ে গেলে সেই দিবসকেই তোমাকে ধরতে হলো।
– সরি ।
দিবস ভেবেছিলো হয়তো এই কথা নিয়ে দীবা ঝগড়া করবে। কিন্তু তার ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করলো দীবা।

দিবস দীবার মনের অবস্থা বুঝে বললো
দিবস: গাড়ি থেকে নামো ঐ দেখো নদী। চলো ওখানে বসি।
দীবা বাধ্য মেয়ের মতো গাড়ি থেকে নেমে, নদীর তীরে গিয়ে বসে পড়লো।
দিবস ও পাশে বসলো। দীবা এক ঝলক দিবস এর দিকে তাকিয়ে সামনে নদীর দিকে চেয়ে থাকলো।
বেশ কিছু সময় নীরবতার পর দিবস বললো
দিবস: আমি কখনো জোর করে ,তোমার পারসোনাল বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইবো না। দীবা একটা জিনিস জানোতো যে বিষয় আমাদের কষ্ট দেয় তা হয়তো সবাই নিবারণ করতে পারে না ।কিন্তু তুমি তোমার কষ্ট কারো সাথে শেয়ার করলে তোমার মাইন্ড ফ্রেশ হবে। মনটা হালকা হবে।
দীবা অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো, কারণ এই প্রথম দিবস তাকে দীবা বলে ডেকেছে।

তার সাথে এত সিরিয়াস হয়ে কথা বলছে, ভীষণ অবাক হচ্ছে। এসব ভাবনার মাঝেই দিবস আবার বললো
দিবস: বিলিভ না থাকলে বলতে হবে না।
দীবার কি হলো জানেনা সাথে সাথে বললো
– আমার একটা অতীত আছে।
দিবস: আমি জোর করে শুনতে চাইনা। যদি তুমি আমাকে বিলিভ করে থাকো বলতে পারো।
দীবার চোখ দিয়ে পানি পরলো। চোখের পানি মুছে অতীতের কথা বলতে শুরু করলো।

_______
অতীত
দীবা তখন এস এস সি ক্যান্ডিডেট। সবে দুইদিন তার টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়েছে। দীবা ঘরে বসে গল্পের বই পড়ছিলো। এমন সময় দীবার মা রিনা ফারহা এসে বললেন
রিনা ফারহা: দীবা মা আগামীকাল দাদু বাড়ি যেতে হবে।
দীবা বই থেকে মুখ উঠিয়ে বললো
– কেনো? এখন আমার সামনে পরীক্ষা মা।
রিনা ফারহা: ওরে আমার মা, তোমার পলা আপুর বিয়ে, তাই যেতে হবে।
– পলার আপুর বিয়ে! তাহলে যেতেই হবে।
পরের দিন সকালে দাদুর বাড়ি পৌঁছে গেলো।
সেদিন সন্ধ্যায় হলুদ এর অনুষ্ঠান হচ্ছিলো। দীবা শাড়ি পরে ছাদে উঠতে যেতেই কেউ পেছন থেকে বলে উঠলো
“পরি কোথা থেকে আসলো ”
দীবা পেছনে তাকাতে এক সুদর্শন ছেলেকে দেখলো,

বয়স কম আবেগী বয়সে তাঁর ঐ ছেলের প্রথম দর্শন এ ভালো লেগেছিল।
ছেলেটি বলে উঠলো
আমি ফাহাদ খান। তুমি?
-তাশফিয়া ফারহা দীবা।
ফাহাদ: তুমি কে হও পলা আপুর?
-আমি ওনার ছোট চাচার মেয়ে। আপনি?
ফাহাদ: পলা আপুর ছোট খালার ছেলে। তুমি কোন কলেজ এ পড়ো?
– আমি এবার এস এস সি দিবো।
ফাহাদ ভীষণ অবাক হয়ে হা হা করে হেসে বললো
ফাহাদ: ফান করো কেনো? আরে আমি জাস্ট বন্ধু হতে চাইতাম। তাই বলে এসব ফান করো না।
– আপনাকে মিথ্যা কেনো বলবো। আজব!
বলেই দীবা চলে যায়। পেছন থেকে ডাকলেও সাড়া দেয়নি। পরের দিন পলা আপুর বিয়ে।

পার্লার থেকে সেজে বের হতেই ফাহাদকে দেখলো দীবা। কানে হাত দিয়ে ইশারা করে বলছে
ফাহাদ: সরি ।
দীবা হেসে ফেললো। দীবার হাসি দেখে সামনে এগিয়ে এসে বললো
ফাহাদ: আম রিয়েলি সরি, ছোট মানুষ এত রাগ করে নাকি। অবশ্য রাগলে তোমাকে খারাপ লাগেনা।
দীবা কিছু না বলায় ফাহাদ বললো
ফাহাদ: তোমরা কবে ফিরে যাবে?
-আজকেই আসলে সামনে পরীক্ষা।
ফাহাদ: হুম বুঝেছি। আচ্ছা তোমার ফেসবুক আছে?
– না কি বলেন আমার ফোনই নাই। প্রয়োজন হলে মায়ের ফোন ব্যবহার করি।
ফাহাদ: ওহ। আমার ফেসবুক আইডি হলো ফাহাদ খান। যদি কখনো সুযোগ পাও নক দিও। অপেক্ষায় থাকবো।

তারপর দাদু বাড়ি থেকে ফিরে আসা ১০ দিন হয়ে গেছে। দীবার আবেগী মনে একটি কথায় বাজতে থাকে “ফাহাদ বলেছিলো অপেক্ষায় থাকবে “। সত্যিই কি অপেক্ষা করছে।
এসব ভেবে একদিন মায়ের ফোন দিয়ে চুরি করে একটা ফেসবুক খুললাম অপেক্ষার দীবা নামে। খুলেই ফাহাদ এর আইডি খুজে তাকে মেসেজ করলাম।
সাথে সাথে রিপলে এলো
ফাহাদ: ফাইনালি আমার অপেক্ষার অবসান হলো। জীবনেও ভাবতে পারেনি ,ফাহাদ তার এইরকম আইডির নাম দেখেও চিনবে!
দীবা বোকার মতো বললো
– আপনি সত্যিই আমার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন?
ফাহাদ: হুম করেছিলাম। একটা কথা তুমি খুব সুন্দর দীবা।
– তাই?
ফাহাদ: হুম।
এভাবে কথা চলতে লাগলো শুধু মেসেজে ১০ দিন। এতদিন দীবার আবেগী মন ভীষণ দুর্বল হয়ে পরে ফাহাদ এর উপর। হঠাৎ ফাহাদ একদিন বললো
ফাহাদ: আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো।
দীবা কখনো রিলেশনে জড়াতে চাইনি। হ্যাঁ ফাহাদকে ভালো লেগেছিলো ,কিন্তু ফাহাদ এভাবে বলবে ভাবেনি। তাই মেসেজে লেখলো
– আমি ভালোবাসি না। আমরা তো বন্ধুই ভালো আছি।
ফাহাদ: না, তুমি আমাকে ভালোবাসো আর না ভালোবাসলে ,আমি ধরে নেবো অন্য কাউকে ভালোবাসো।
-বিলিভ মি আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি না।
ফাহাদ: তাহলে কি ধরে নেবো তুমি আমাকেই ভালোবাসো।
এইভাবে একপ্রকার জোর করেই রিলেশনে জড়িয়ে যায় দীবা।
এভাবেই শুধু মেসেজে কথা হতো। ফাহাদ মাঝে মাঝে কল দিলেও কখনো দীবা ধরতো না।
২মাস কেটে যায়। দীবা ভীষণ দুর্বল হয়ে পরেছে এতদিনে। কিন্তু ইদানীং ফাহাদ আর আগের মতো তাকে মেসেজ করে না। যেটা দীবা খেয়াল করলেও অতোটা গুরুত্ব দিতো না। ফাহাদ তার ছবি অনেক দিয়েছে। দীবা কখনো দেয়নি। দীবার এই রিলেশনের কথা শুধু তিশু জানতো তাকে সব কিছু বলতো এমনকি ফাহাদ এর পিক ও দেখিয়েছিলো।
দীবা এত বিলিভ করতো যে ,একদিন তিশু বলেছিলো ছেলেটি তেমন ভালো না। অন্য অনেক মেয়েদের সাথে রিলেশন আছে ও নাকি কোথায় থেকে খোজ নিয়ে জেনে ছিলো। এমনকি একদিন পলা আপুর মুখেও শুনে ছিলো ফাহাদ ভালো ছেলে নয়। তবুও কারো কথা দীবা বিলিভ করেনি এতটাই ভালোবাসা ছিলো।

হঠাৎ একদিন দীবা মেসেজ করতে গিয়ে দেখে ব্লক দেয়া। কেমন জানি পাগল পাগল লাগছিল। তাই কোন কিছু না ভেবে আরেকটি আইডি খুলে ফাহাদকে মেসেজ দিলো
– ব্লক কেনো দিছো ?
ফাহাদ ও রিপলে দিলো
ফাহাদ: আমার ইচ্ছা।
দীবা অবাক হয়ে গেলো। তাই বললো
– আমার ইচ্ছা মানে কি? এসব কি? আমি কি করেছি জানতে পারি?
ফাহাদ: দেখো আমি ডাইরেক্ট বলে দেয় ,এই রিলেশন কন্টিনিউ করা আমার আর পসিবল না।
দীবা থমকে গেলো! চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়তে লাগলো
– আমার দোষটা কোথায়?
ফাহাদ: তোমারি সব দোষ এটা কোন রিলেশন হলো, ফাহাদ এর আগে বহু রিলেশন করেছে ।কিন্তু তোমার মত এমন মেয়ে আমার জীবনে আসেনি। এখন রিলেশন এ দেখা করা যেখানে মাস্ট, সেখানে দেখা হওয়া তো দূরের বিষয় আজ পর্যন্ত তোমার সাথে কলে ও কথা বলতে পারলাম না। কল দিলে জীবনেও ধরো না। আবার বলো ভয় লাগে। ফালতু মেয়ে একটা।

দীবা ফুপাতে ফুপাতে টাইপ করলো
– তুমি কি আর আমাকে ভালোবাসো না?
ফাহাদ: ভালোবাসা হাহ একটা সত্যি কথা কি জানো তোমার প্রতি আমার কখনো কোন ফিলিংস কাজ করেনি।

#চলবে ।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে