#কবে হলো ভালোবাসা
#তাশফিয়া রহমান
#পর্ব :৫
(কপি করা নিষেধ)
দীবা অবাক হয়ে তাকাতে বাকা হাসলো দিবস। এদের দুজনের চোখাচোখি কারো নজরে পড়লো না।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে দিবসরা চলে গেলো।
দীবা একটু ঘুমিয়ে নিলো। বাবলির ডাকে উঠে গোসল করে, নামাজ পড়ে ফোন নিয়ে একটু ইনস্টাগ্রামএ ঢুকতেই সবার প্রথম এ দিবসের পিক দেখতে পেলো। যা মাএ দুই মিনিট আগে ছাড়া আর তাতে রিয়াকশন ৫০০+ দীবা একটু অবাক হলো। কমেন্ট গিয়ে আরো অবাক হাজার কমেন্ট সব মেয়ের অথচ কোনটাই দিবসের রিপলে নেই। দীবা কিছু ভেবে কমেন্ট করলো
– পিউর পাগল একটা। সাথে সাথে রিপ্লে আসতে ঘাবড়ে গেলো।
দিবস কমেন্ট কিছু না বলে ইনবক্সে মেসেজ দিলো
দিবস: পাগল তোমার জন্য।
– সরেনতো ।
দিবস: সরে কোথায় যাবো।
– যেখানে খুশি যান।
দিবস: ওকে তাহলে তোমার কাছে আসি।
– হাউ ফানি।
দিবস- হাউ হানি।
– আপনাকে কমেন্ট করায় আমার ভুল হয়েছে, ভাই মাফ চায়।
দিবস:আমার কি গান শুনতে চাও দীবানিশি?.
– আমার তো মনে হয় আপনি গান ই জানেননা। এত ফলোয়ার নিশ্চিত টাকা দিয়ে তৈরি করছেন ঠিক না?
দিবস মজা করে লিখলো
দিবস: আমার বিষয়ে এত ধারণা! ওয়াও নট ব্যাড, আমার ডাই হার্ট ফ্যান কিউটিপায় ।
– নট কিউটিপায় ওনলি দীবা।
দিবস: ওলে বেবিটা ।
– শুধু ফাজলামি, আমার একটা জিনিস মনে হচ্ছে।
দিবস: কি?
– আপনার গান শুনতে বোধহয় শুধু আমরায় যাবো। দেখা গেলো দর্শক আমরায়।
এদিকে দীবার এই মেসেজ দেখে দিবস বেশ জোরে হেসে উঠলো। যা কেউ জানলো না। হাসতে হাসতে টাইপ করলো দিবস
দিবস: যদি একজন দর্শক শুধু তুমি হও তো দিবস শুধু তোমার জন্যই গান করবে।
দীবা আর কোন কথা খুজে না পেয়ে ,অনলাইন থেকে বেরিয়ে গেলো।
বাবলির সাথে গল্প, বাবলির পড়াশোনা দেখিয়ে দেয়া, খাওয়া দাওয়া, নামাজ কালামের মধ্যে দিনটি শেষ হলো।
পরেরদিন সন্ধ্যাতে দীবা একটা গোলাপি রঙের গাউন , সাথে সাদা রঙের হিজাব বেধে, চোখে কাজল, আইলাইনার, ঠোঁটে হালকা লিপ বাম দিয়ে কোন মেক আপ না করে রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো। বাবলিও সেম ড্রেস পরেছে। কিন্তু অনেক মেক আপ করেছে। দুজন হাত ধরে গেইট দিয়ে বের হতে চোখ পড়লো দিবস এর দিকে। গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে একমনে ফোন দেখছে। বাবলি বলে উঠলো
বাবলি: দিবস আমাদের না দেখে ফোনে কি?
বলার সাথে সাথে দিবস একদৃষ্টিতে দীবার দিকে তাকালো ওর মনে হলো নি:শাস নিতে ভুলে গেছে!
দিবস আজ নেভি বল্লু কালার এর টি -শার্ট পড়েছে। চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা, হাতে রিস্ট ওয়াস উফ এতেই যেনো দীবার অবস্থা সেম হলো।দীবার কি হলো সেও চোখে চোখ রাখলো।দুজনের দৃষ্টিবিনিময় চলছে।বাবলি এদের চুপচাপ দেখে এগিয়ে এসে বললো
বাবলি: দিবস আমরা কি যাবো না?
বাংলার কথায় দুজনেই বাস্তবে ফিরে এলো।দিবস ঘোর থেকে বেরিয়ে বললো
দিবস: চলো কিউটি যাবো তো।
আজ ড্রাইভার নিয়ে যাচ্ছে দিবস। তাই তারা তিনজন পেছনে বসল। বাবলি একপ্রকার জোর করে জানালার পাশে বসলো। দিবস ও অপর দিকে জানালার পাশে তাই বাধ্য হয়ে দীবাকে ওদের মাঝে বসতে হলো।
দিবস বলে উঠলো
দিবস : তোমার কত ভাগ্য যে দিবস এর পাশে বসতে পারছো। বলেই ভাব নিতে লাগলো। তাই দীবা বললো
– এমন ভাগ্য আর কখনো না হোক।
দিবস: দেখো আবার এমন ভাগ্য না তোমার সারাজীবন হয়ে যায়। বলেই হাসতে হাসতে চোখ মারলো।
– এই আপনি নাকি সেলিব্রেটি! এই কি একটা সেলিব্রেটি হলো কোন লজ্জা নাই। বেশরম একটা।
দিবস: বেশরম গানটাও শুনে ফেলছো ?
– আমি ঐসব পচা গান শুনি নাই।
দিবস: গানটা পচা তুমি কেমনে জানছো। মজা করে বলতে লাগলো
দিবস : ছি তুমি এইসব ভাষা ঐসব গান দেখে শিখছো। ।
– বিলিভ মি আমি ঐ গান দেখে বলি নাই, যার লজ্জা শরম নাই তাকে বেশরম বলে।
দিবস : চোখ মারলে বেশরম হয় তা মাএ জানা আমি। তা আর কি করলে বেশরম হয় বলেনতো ?
-আজব এত কথা বলেন কেনো?
দিবস: জাস্ট একটা কথা মনে হচ্ছে আজ।
– কি?
খুব সিরিয়াস হয়ে বললো
দিবস:আই নেভার বিলিভড , ইন লাভ এত ফার্স্ট সাইট, বাট দেট ওয়াজ বিফোর আই স ইউ।
দীবার হার্ট বিট বেড়ে গেলো। দীবা অস্থিরতা নিয়ে বললো
– ক কি কি বলছেন এসব?
দিবস ওর অস্থিরতা দেখে হা হা করে হেসে ফেললো। এদের এতসময় এর কথা বাবলির কানে না গেলেও দিবস এর হাসির শব্দ এ উৎসুক হয়ে তাকালো।
দীবা রেগে বললো
– আবার মজা। বলে হাত বাড়ালো দিবসের চুলের দিকে ,দিবস সাথে সাথেই পেছনে হেলে বললো
দিবস: নো আজকে প্রোগ্রাম আছে।
– মন তো চাইছে আপনার গলা টিপে দেয়।
দিবস : গলা টিপলে তোমারি লস।
– আমার লাভও নাই লসও নাই।
দিবস: লাভ হলে তোমারি ক্ষতি হতো।
দীবা বুঝতে না পেরে বললো
– মানে?
দিবস: লাভ আই মিন ভালোবাসা ইউ নো। বলেই আবার হাহা করে হাসতে লাগলো।
বাবলি নিরব দর্শক হয়ে দেখছে আর হাসছে।
এভাবে খুনসুটি করতে করতে পৌঁছে গেলো তারা গন্তব্যে।
দিবস গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে চারিদিক থেকে চার জন বডিবিল্ডার লোক চলে এলো।
দীবা আর বাবলি নেমে চুপচাপ দেখ ছিলো। এমন সময় দিবস হাত বাড়ালো দুজনের দিকে, বাবলি সাথে সাথে হাত বাড়ালেও দীবা ইতস্ততবোধ করছিলো তা দিবস বুঝতে পেরে নিজেই হাত ধরে দীবার। দীবা সাথে সাথে কেপে উঠে। এক নতুন রকম অনুভূতির সাথে পরিচয় হলো।
দিবস হাত ধরে এগিয়ে ভেতরে নিয়ে যেতেই ,দীবা অবাক হয়ে গেলো এত মানুষ আসছে। দিবস এর এত দর্শক! এসব ভাবনার মাঝেই দিবস সামনে সিট দেখালো যেখানে মামনিরা সবাই আছে। তার কথা মত আগাতে যেতেই হাতে বাধা পেলো । দীবা অবাক হয়ে পেছনে ফিরে দেখলো দিবস এর হাতের ভেতরে দীবার হাত এখনো। দীবা কিছু বলতে নিতেই দিবস বললো
দিবস: আমার হাত কি সারাজীবন ধরে রাখতে চাও। ধরে রাখতে চাইলে রাখতে পারো। আমিও পারবো কিন্তু এখন আমার প্রোগ্রাম আছে তুমি যদি চাও হাত …
আর বলতে পারলো না কারণ দিবসকে থামিয়ে দীবা বললো
দীবা: হাত ছাড়বেন এটা কি ধরনের অসভ্যতা!
দিবস মৃদু হেসে হাত ছেড়ে দিতেই দীবা একপ্রকার দৌড়ে চলে গেলো।
তার কিছু সময় পর শুরু হলো অনুষ্ঠান।
দিবস এর নাম এনাউন্স হতেই কেমন যেন লাগলো দীবার।
দিবস মাইক হাতে নিয়ে বললো
দিবস: আসসালামুআলাইকুম এভরিওয়ান। সবাই ভালো আছেন তো?
সবাই উওর করলো।
এরপর গান শুরু হওয়ার আগেই হাজারো মেয়ে চিৎকার দিয়ে বললো দিবস দিবস।
দিবস আবার হাসলো। হাসিটা কেমন যেন দীবাকে আকৃষ্ট করলো। তাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দিবসের চোখে চোখ পড়লো দিবস এর হাসি আরেকটু গাঢ় হলো চোখ দিয়ে ইশারা করলো যেন তার গান মন দিয়ে শোনে। তারপর গিটার হাতে নিয়ে সুর তুলে গাইতে শুরু করলো ….
#চলবে ।।