#কবে হলো ভালোবাসা
#তাশফিয়া রহমান (লেখিকা)
#পর্ব ১(শুরু)
ভার্সিটিতে আজ প্রথম দিন। শিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে যেতেই, হঠাৎ মাথার ময়লা পানি পড়লো। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল।
উপরে তাকিয়ে দেখি দুইটা ছেলে হাসছে ,আরো এক দফা মেজাজ খারাপ হলো। মনে মনে বললাম পচা পানি ফেলে আবার হাসা হচ্ছে। দেখাচ্ছি মজা।
শিড়ি দিয়ে উপরে উঠে চারিদিকে ময়লা পানি খুজতে খুজতেই ,সামনে তাকিয়ে দেখি ময়লার একটি বালতি। উফ এত মেঘ না চাইতে জল। খুশি হয়ে বালতি বাম হাতে নিয়ে ডান হাতে নাক ধরলাম পচা গন্ধ জন্য। বালতি নিয়েই পেছন থেকে ঐ ছেলেদের গায়ের উপর ফেলতেই পাশের ছেলেটি সরে দাড়ালো। যার ফলে একজনের উপর পড়লো। পড়ার সাথে সাথে ছেলেটি সামনে ঘুরেই একপ্রকার চিৎকার দিলো। আমি কেপে উঠলাম।
ছেলেটি বলে উঠলো
ছেলেটি: হাউ ডেয়ার ইউ?
– আমার সাহস একটু বেশিই ওলয়েজ মিস্টার হোয়াটহেভার।
ছেলেটি আবার বললো
ফারদিন আহমেদ দিবস কল মি ওকে?
– আপনার নাম কি ,নাম থাকুক বা না থাকুক আই ডোন্ট ইন্টারেস্টেড ওকে।
দিবস : এটিটিউড তাও আবার দিবসকে! তা আপনার নাম কি রাজকন্যা?
– তাশফিয়া ফারহা দীবা।
নাম শুনে দিবস সহ তার সব বন্ধু একসাথে হেসে উঠলো। আমি চলে আসতেই পেছন থেকে বললো
দিবস: দীবানিশি আমার মাথায় ময়লা ঢালার কারণ বলে যাও।
-ও হ্যালো আমি দীবা, নট দীবানিশি ওকে ।
দিবস : কি দীবা আবার আমাকে?
– আজব আমি কি দিবো? কানে কি কম শুনেন?
বলার সাথে সাথে হাসলো দিবস ।
দিবস বন্ধুদের ডেকে বললো এই তোরা তো শুনছিস ও বলছে আমি দীবা বলছে কি না? বন্ধুরা সব হ্যা হ্যাঁ করলো আমার মেজাজ খারাপ হলো তাই চলে আসতে আবার বললো
দিবস : কি হলো কি দীবা? না দিয়ে কোথায় যাও বলেই হে হে করে হাসলো।
আমার পরিচয় হলো আমি তাশফিয়া ফারহা দীবা। বাবা মা আর ছোট ভাই এই নিয়ে আমাদের পরিবার। আমাদের বাড়ি কুষ্টিয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ায় আমি আমার ফুফুর বাসায় এসেছি।
অপরদিকে ফারদিন আহমেদ দিবস যে বাবা মার একমাত্র সন্তান। সে দ্বিতীয় বর্ষ এর ছাএ।যেমন মেধাবী, তেমন সুন্দর, হাইট ৬ ফিট, মুখ সাদা ধবধবে , ট্রিম করা দাড়ি, আবার গানের গলাও অসাধারণ। সে একজন সিঙ্গার সেলিব্রেটিও অলরাউন্ডার। এক কথায় যে কোন মেয়ে প্রেম এ পড়তে বাধ্য হবে। সব দিক দিয়ে অলরাউন্ডার।
আজকে ক্লাস ঢুকে ১ম পরিচয় হলো একটি মেয়ের সাথে ,গল্প করতে করতে হঠাৎ পেছন থেকে কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরলো ,সাথে সাথে পেছনে তাকাতে আমি অবাক হয়ে গেলাম !আমার স্কুল জীবনের বেস্ট ফ্রেন্ড । স্কুল জীবনের বলছি কারণ কলেজে উঠে ও ঢাকা চলে আসে। তাই আমরা আলাদা হয়ে যায়।
আমার ভীষণ ভালো লাগছে ওর নাম আনিশা রহমান তিশা। আমার তিশু ।
আর যে মেয়ের সাথে কথা বলছিলাম ,ওর নাম মেহরোজ আফরোজ রিয়া। ও বেশ ভালো।
ক্লাস করে বের হতেই তিশু চিৎকার দিয়ে উঠলো।
– কি হলো এইভাবে চিৎকার করছিস কেনো?
তিশা: সামনে দেখ এখনকার বিখ্যাত ইয়াং ডেশি্্ হ্যান্ডসাম সিঙ্গার ।
সামনে তাকাতেই মেজাজ খারাপ হলো, আমি কিছু বলার আগেই তিশু বলে উঠলো
তিশা: দোস্ত আমি ভাবতে পারিনি দিবস এখানে পড়ে।
-কেনো না পড়ার কি আছে উনি কি মানুষ না আজব।
তিশা: আরে তুই উনাকে চিনিস না নাকি?
– না আর যদি চিনতাম ও তবুও এত আদিখ্যেতা করতাম না, আরে আমরা যেমন সাধারণ মানুষ উনি ও তেমন। রিয়া কিছু না বললেও ওর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে ওরো ভালো ক্রাশ।
গেইটের সামনে যেতেই দিবস সামনে এলো এসেই বললো
দিবস: দীবানিশি ময়লা ফেলছিলে কেনো, আমি বুঝতে পারছি।
– সরেন তো।
তখনই তিশু বলে উঠলো
তিশা: দিবস আমি আপনার ভীষণ ফ্যান। একটা সেলফি তুলতে পারি।
দিবস আমার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বললো
দিবস: অফ কোর্স আই নো আই এম সো হ্যান্ডসাম এন্ড গুড লুকি্্ ।
তিশু ও হেসে রিয়াকে সাথে নিয়ে বেশ কিছু পিক তুলে আমাকে ডাকতেই, আমি চোখ বড় করে তাকালাম যা দিবসের চোখে পড়তেই বলে উঠলো
দিবস: দীবা কিবার সাথে পিক তুলতে চাইছিনা ।
– আহা ভাব দেখো যেন এমন তার সাথে ছবি তোলার জন্য মরে যাচ্ছি।
দিবস: মনে মনে মরো আমি জানি আমার মতো গুড লুক ছেলের এটেনশন পেতেই ময়লা ঢেলেছিলে। আমি গুড বয় তাই কিছু বলিনি।
মুখের কথা থামিয়ে আমি বললাম
– এহ গুড না পচা আপনাকে একদম হনুমানের মত লাগে।
দিবস কিছুটা রাগ নিয়ে কিছু বলতে যেতেই তাকে থামিয়ে আবার বললাম
– দীবা মোটেও আগে কিছু করে না ওকে। আমাকে বিরক্ত করলে আমিও করবো ইট মারলে পাটকেল দীবা দিতে জানে। বলেই রিয়া আর তিশুর হাত ধরে গেইটের বাইরে বের হয়ে গেলাম।
ওদেরকে বিদায় দিয়ে রিকশা করে ফুফুর বাসায় চলে আসলাম। ফুফুর বাসায় খুব একটা আশা হয়নি আমার কারণ ফুফু বেশি যেতো আমাদের বাড়ি। তার বাসায় আসা এই দিয়ে ৩বার । আমার একটা ফুফাতো বোন আছে সিক্স পড়ে। ভীষণ পাকনা কিন্তু আমাকে খুব ভালোবাসে আর আমিও।
____
এদিকে দিবস বাড়িতে ঢুকেই রুমের দরজা আটকে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। দিবস এর মন মেজাজ খারাপ থাকলে, সে তার বেলকনিতে সময় কাটায়। তাই বেলকনিতে গিয়ে দাড়াতে এক আকাশ সমান অবাক হলো! কারণ তার বেলকনির অপজিট বেলকনিতে দীবা দাড়িয়ে এটা কীভাবে সম্ভব! বারবার চোখ খুললো বন্ধ করলো কিন্তু সে সত্যিই দীবাকে দেখছে।
দীবা তার ফুফাতো বোন বাবলির সাথে বেলকনিতে গল্প করছিলো। এমন সময় কোন পুরুষ ভয়েস শুনে চমকে গেল!
দিবস: দীবানিশি ফলো করতে করতে আমার বাড়ি পর্যন্ত চলে আসছো, নট ব্যাড আমার পাগল ফ্যান। উফ সরি পাগলী।
এখন দীবা খেয়াল করলো তার সামনে দিবস দাড়িয়ে সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাবলি বলে উঠলো
বাবলি : উফ দিবস ইউ আর সো হ্যান্ডসাম এন্ড কিউট এত কিউট কেনো তুমি?
দিবস হাসলো দীবা এক ঝলক তাকাতেই তার হার্ট বিট বেড়ে গেলো! হাসিটা ভীষণ সুন্দর নিজের মনকে নিজেই বকা দিলো এসব উলটো পালটা ভাবার জন্য আরো ভাবলো হাসি সুন্দর কিন্তু জীবনেও বলবোনা ভাবে তাহলে উড়েই যাবে। এসব ভাবনার মাঝেই দিবস বললো
দিবস: থ্যাংক ইউ সো মাচ কিউটি বাবলি।
বাবলি এসব পাগল ফ্যান আই মিন পাগলী তোমার বাসায় কি করে বাবলি? আমি জানি আম গুড লুক হ্যান্ডসাম তাই বলে যাকে তাকে তোমার বাড়িতে ঢুকতে দিতে নায়?
– এহ কে পাগল ফ্যান আপনার মতো হনুমানকে আমি চিনিও না আবার আমাকে পাগল ফ্যান বলেন কোন দিক দিয়ে! আমার মনে হয় আপনি পাবনা থেকে পালায়ে আসছেন। বলেই অনেক হাসতেই উনি আবার বললেন
দিবস: বাবলি আমার মনে হয় এই মেয়ের চোখ নাই। চোখ নাই যাদের কি বলে?
বাবলি: কানা, কিন্তু দিবস সি ইজ মাই কাজিন
দিবস একটু অবাক হয়ে বললো
দিবস: এই কানি তোমার কাজিন কীভাবে!
– মুখ সামলে কথা বলেন।
দিবস: মুখ সামলিয়ে আবার কীভাবে কথা বলে? ওহ মেবি তুমি মুখ সামলিয়ে কথা বলতে পারো, আমাকে একটু শিখিয়ে দাও।
– অসভ্য।
দিবস: অসভ্যতার মত কি করলাম। আজকাল ভালোর জামানা নাই কিছু না করেই অসভ্য। নিজে কি বেয়াদব মেয়ে আমি যে তোমার সিনিয়র সেটা মাথায় রেখে কথা বলবা।
– সিনিয়র তো আমি কি নাচবো। যে যেমন তার সাথে দীবা ঠিক সেভাবেই কথা বলে।
এর মাঝে ফুপু ডাকায় বাবলি চলে গেছে। দিবস ও দীবার কারো খেয়াল নেই। এরা ঝগড়া করতে ব্যস্ত।
দিবস আবার মজা করে বললো
দিবস: কী দীবা?
– অসহ্য, বলেই চলে আসলাম।
এদিকে দিবস চিৎকার করে বললো
দিবস: অসহ্য কেমনে দেয় ভাই!
#চলবে ।।