#এবং_স্ত্রী
#পর্ব_১৭
#Jannatul_Ferdos
উৎস আর নিরুপমা মুসকানকে নিয়ে খেলছিল।নিরুপমার কোলে ছিল মুসকান।উৎস বাবাই বাবাই করে ডাকছিল আর মুসকান খিল খিল করে হাসতেছে।তখনই কলিংবেলের আওয়াজ পাওয়া যায়।ওদের কাজের মেয়ে ফুলি দরজা খুলে দেয়।মিসেস ডালিয়া একটু বিরক্ত মাখা মুখে ফুলির দিকে তাকায়।মেয়েটাকে তার পছন্দ না, পছন্দ না বলতে তার কাছে এদের ছোটলোক মনে হয়।তিনি একটু নাক ছিটকে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন “উৎস কোথায়?
” জ্বি খালাম্মা উৎস ভাইজান ভিতরে।
“খালাম্মা হোয়াট ডু ইউ মিন বাই খালাম্মা? বলেছি না আমাকে ম্যাডাম ডাকবে?
” ভুল হয়ে গেছে ম্যাডাম
তিনি আর কিছু বললেন না সোজা উৎসের রুমে চলে গেলেন।কিন্তু ভিতরে উৎস ও নিরুপমার মুসকানকে ঘিরে হাসি তামাশা দেখে তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন।নিরুপমার সাথে উৎসের এই হাসাহাসি তিনি সহ্য করতে পারলেন না।
“আরে বাহ আমি ভেবেছিলাম আমার মেয়েকে তুমি সত্যিই ভালোবাসো।সে মারা যাওয়ায় হয়তো তুমি খুব বেশি কষ্ট পেয়েছ।অন্য কাউকে হয়তো আর লাইফে আনবে না।যদি ও এই কথাটা তোমারই ছিল আমার না।আর এখন দেখি তুমি তোমার সো কলড ২য় বউয়ের সাথে রঙ্গতামাশা করছো?
” আপনি ভুল করছেন আম্মু এমন কিছুই না।
“হোয়াট?এমন কিছুই না মানে কি?এমন কিছু কিনা আমি নিজেই দেখতে পারছি।
মিসেস ডালিয়া নিরুপমার কোল থেকে একপ্রকার জোর করেই মুসকানকে নিয়ে যায়।মুসকান নিরুপমার শাড়ি ধোরে রাখে সে যাবে না মিসেস ডালিয়ার কোলে কিন্তু মিসেস ডালিয়া ও নাছোরবান্দা সে জোর করে মুসকানকে নিয়ে যায়।মুসকান এবার খুব জোরে কান্না করে উঠে।তার কান্নার আওয়াজ পেয়ে প্রেমা আর তানিমা বেগম ছুটে আসেন।
” আরে আপা আপনি কখন আসলেন?আর মুসকান এভাবে কাঁদছে কেন?
“এইটা কি ওমন কান্না নাকি?আমি ওর নানু ওর মায়ের মা।আমার কাছে ওর মায়ের গন্ধ আছে তাই তো সে তার মায়ের কথা মনে করে কাঁদছে।
মিসেস ডালিয়ার এমন কথা নিরুপমার কাছে নিছকই শিশুসুলভ কথা বার্তা মনে হলো তাছাড়া আর কিছুই না।
” এইটুকু বাচ্চা সে কিভাবে বুঝবে যে তার মা নেই?আপনি তার নানু?সে তো নিরুপমাকেই তার মা ভাবে…প্রেমা বলে
“কে মা?কার মা?এই ছোট লোকের মেয়ে কখনো আমার নাতনির মা হতে পারে না।তাছাড়া সৎ মা কখনো মা হতে পারে না।
নিরুপমা চুপ করে সব শুনছে আর মাঝে মধ্যে উৎসের দিকে তাকাচ্ছে।সে দেখতে চাচ্ছে উৎস তার জন্য প্রতিবাদ করে কিনা। কিন্তু না উৎসের কোনো হেল দুল নাই।
” ভালো ভাবে কথা বলুন আন্টি…প্রেমা এবার রেগে বলল
“খারাপ কথা কি বলেছি?ওর কি যোগ্যতা আছে আমার মেয়ের স্থান নেওয়ার?কোথাকার কোন বস্তির মেয়ে আসছে আমার নাতনির মা হতে।তোমরা কি ভেবেছো ও ভালোবাসে মুসকানকে?আরে না ওতো তোমাদের সম্পত্তির জন্য এসেছে।ফকিন্নির বাচ্চা।ফকিন্নি ফকিন্নিই থাকে কোনোদিন রানী হতে পারে না।
নিরুপমা এবার আর চুপ থাকতে পারল না।রাগে দুঃখে শরীর জ্বলে যাচ্ছে।
” অসভ্য মহিলা চুপ করুন।ভদ্র ভাবে কথা বলুন।কথায় আছে শিক্ষিত হলেই নাকি মানুষ শিক্ষিত হয় না।আপনি সেই পর্যায়ের মানুষ। নামে মাত্র শিক্ষিত। তাই কাউকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে শিখেন নাই।আর হ্যা কি বললেন ফকিন্নি বাচ্চা?আপনার সাহস কি করে হয় আমার বাবা তুলে কথা বলার?আর হ্যা আপনি কোথা থেকে উঠ এসেছন এবং কার জন্য এসেছেন ভুলে গেছেন?আমি অতীত তুলতে চাচ্ছি না তবে এরপরের বার আমার সাথে কথা বলতে হলে ভেবে চিন্তে কথা বলবেন।
“ইউ????? তোমার সাহস কি করে হয় আমার সাথে এভাবে কথা বলার?
” আপনি এমন কেউ না যে আপনার সাথে ভদ্র ভাবে কথা বলতে হবে আপনি তো সম্মান পাওয়ার যোগ্যই নন।ভদ্রতা বলতে তো কিছু নেই আর আপনাকে সম্মান দিতে আমার রুচিতে বাধে…
নিরুপমার কথা শেষ হতে না হতেই উৎস ঠাস করে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় নিরুপমাকে।নিরুপমা মুখে হাত দিয়ে ছল ছল নয়নে তাকিয়ে আছে উৎসের দিকে।
“তোমার সাহস কি করে হয় আম্মুর সাথে এভাবে কথা বলার হ্যা?ওনি কে জানো?আমার অরিত্রার আম্মু। অরিত্রা ওর আম্মুকে যতোটা ভালোবাসে, সম্মান করে আমি ও তাকে ততোটা ভালোবাসি,সম্মান করি।যদি আর কখনো তার সাথে তোমাকে উচু গলায় কথা বলতে দেখি তোমার মুখ আমি ভেঙ্গে দিব।তোমার সাথে আমার বন্ধুত্ব করাই ভুল হয়েছে।
” কিন্তু উৎস তিনি আমাকে অপমান করেছেন আপনি দেখেন নি?
“তিনি গুরুজন একটা কথা কষ্টের মাথায় বলতেই পারে।যেহেতু তার মেয়ে হারিয়েছেন তার মেয়ের জায়গায় অন্য কাউকে দেখলে তার খারাপ লাগবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে তুমি তাকে অসভ্য মহিলা বলবে?
” অসভ্যকে অসভ্যই বলতে হয়।যতোদিন চুপ করে ছিলাম সবাই আমাকে যেভাবে পেরেছে অত্যাচার করেছে অপমান করেছে।আমি ও সহ্য করেছি আজ ও করতাম কিন্তু সে আমাকে বস্তির মেয়ে বলেছে ফকিন্নির বাচ্চা বলেছে।তাকে জিজ্ঞেস করুন আজ আমাদের এই অবস্থা কেন, কার জন্য?ফকিন্নি কে ছিল আমরা না সে?সে কোন জায়গায় থেকে উঠে এসেছে তাকে একবার জিজ্ঞেস করুন।মানুষকে মানুষ বলে দাম দিতে জানে না।ঠিকি বলেছে ফকিন্নি কখনো রানী হতে পারে না আর রানীর জামা কাপড় পড়ে আর ২/৪ টে ইংলিশ পারলেই সে রানী হয়ে যায় না।সে ফকিন্নিই থেকে যায়।
উৎস এবার আরেক দফা চড় মারে নিরুপমাকে।
“আমি তার কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করব না।তার ব্যাকগ্রাউন্ড আমি তোমার থেকে শুনব না।আর একটা কথা বললে থাপ্পড়িয়ে দাঁত ফেলে দেবো।তোমরা আসলেই এসব ভালো ব্যবহারের যোগ্য না।
মুসকান যে সেই তখন থেকেই কান্না করছে কারোর সেদিকে খেয়াল নেই।তারা কথা তর্কাতর্কি করেই চলছে।উৎসের কাজে প্রেমা ও তনিমা বেগম ও নিস্তব্ধ।উৎস যে সামান্য কথায় এতোটা বাড়াবাড়ি করবে ভাবে নাই।মিসেস ডালিয়া যেভাবে নিরুপমাকে অপমান করছিল উৎসের উচিত ছিল নিরুপমার হয়ে প্রতিবাদ করা।কিন্তু উল্টে সে নিরুপমার গায়ে হাত তুলল। উৎস আজ বড্ড বাড়াবাড়ি করলো এর ফল সে একদিন পাবে।উৎস মিসেস ডালিয়াকে নিয়ে চলে যায়।মুসকানের কান্নার বাধ ভেঙ্গে যাওয়াই প্রেমা তার থেকে মুসকানকে নিয়ে যায়।নিরুপমা এখনও কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অপমান, লজ্জায়, রাগে, জীদে সে থর থর করে কাঁপছে।এই মহিলা তার জীবনের জন্য কতোটা কাল তা কেউই জানে না।তার সবকিছু হারানোর পিছনে যে এজ গভীর অতীত আছে তা হয়তো কেউ জানতেই পারবে না।
চলবে!
#এবং_স্ত্রী
#পর্ব_১৮
#Jannatul_Ferdos
“এই মেয়েকে তুমি ডিভোর্স দাও উৎস….খুব সহসায় কথাটি বলল মিসেস ডালিয়া বেগম।উৎস নির্জীব হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।তার থেকে হয়তো এমন কিছু আশা করেনি উৎস।
” কি বলছেন আম্মু ডিভোর্স কিভাবে
“কেন যেভাবে দেয়
” কিন্তু আম্মু
“কিসের কিন্তু উৎস?ও তোমার অরিত্রার আম্মুকে আমাকে অপমান করেছে। আর তাছাড়া ও যে মুসকানের ক্ষতি করবে না এর কি গ্যারান্টি আছে?
” না আম্মু ও এমনটা করবেন না
“আমি তাহলে মুসকানকে নিয়ে যাবো
” না আম্মু প্লিজ আপনি মুসকানকে নিবেন না।আমি মুসুকে ছাড়া থাকতে পারব না
“তাহলে নিরুপমাকে ডিভোর্স দাও
” আম্মু আমার বাবামা কখনোই রাজি হবে আর আমি তাদের কষ্ট দিতে পারব না
“ও তুমি তাদের কষ্ট দিতে পারবে না কিন্তু অরিত্রাকে কষ্ট দিতে পারবে?ঠিক আছে আর এক মূহুর্ত নয় এই বাড়িতে…. মিসেস ডালিয়া গজ গজ করে রুম থেকে বের হলেন।উৎস কয়েকবার আম্মু দাঁড়ান বল ডাকে কিন্তু তিনি শুনেন না।উৎসের রুম থেকে বের হয়ে সোজা প্রেমার রুমে যায়।মুসকান প্রেমার কোলে ছিল। নিরুপমা খাটের এক কোনায় বসে চুপ করে ছিল।তিনি হন্তদন্ত হয়ে প্রেমার থেকে মুসকানকে নিয়ে যায়।ঘটনার আকস্মিকতায় প্রেমা ঘাবড়ে যায়।তনিমা বেগম উঠে দাঁড়ান।কি হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করছেন।
” আমি মুসকানকে নিয়ে যাবো। এইখানে ওকে রাখব না।
কথাটি শুনে যেন তনিমা বেগম আর প্রেমা আকাশ থেকে পড়লেন।নিরুপমা এবার তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।সে উঠেই নিরুপমাকে তার কোল থেকে নিয়ে যায়….
“কোন অধিকারে মুসকানকে নিবেন?
” কোন অধিকার মানে?আমি মুসকানের নানু।
“নানু?কথাটা হাস্যকর লাগলো না?মুসকানের বয়স কত ১০ মাসের কাছাকাছি আমি এই বাড়িতে এসেছি প্রায় ৭ মাস।কই এই ৭ মাসে তো দেখি নাই আপনি একবারের জন্য এ বাড়িতে মুসকানের জন্য এসেছেন।তার জন্য কোনো খেলনা কিনে পাঠিয়েছেন তাহলে আজ কেন নিজেকে তার নানু বলে পরিচয় দিচ্ছেন অধিকার খাটাচ্ছেন।মুসকান আমার মেয়ে আর আমি মুসকানকে কখনোই আপনার কাছে দিব না।
” এই মেয়ে একদম দরদ দেখাইতে আসবা না।মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি?তুমি ওর সৎ মা।আর সৎ মা কখনো মা হয় না।
“এই কথা গুলো বলেই তো উৎসকে ফোন দিয়ে ব্রেইন ওয়াশ করতেন। সৎ মা সৎ মাই হয়।যার দরুন উৎস কখনোই আমাকে মুসকানের মা হিসাবে এবং স্ত্রী হিসাবে মানত না।
নিরুপমা লাস্ট বলা কথা গুলোই এবার প্রেমা আর তনিমা বেগম অবাক হয়ে গেল।
” উৎসকে তিনি এসব বলতেন?….তনিমা বেগম অবাক সুরে জিজ্ঞেস করলেন
“হ্যা মা
” কিন্তু তুমি কিভাবে জানলে?
“মা বউ আমি এ বাড়ির সব খবরই রাখতে হই। মিসেস ডালিয়া উৎসকে ঠিক মধ্য রাতে ফোন দিত।যেহেতু অফিস টাইমে তিনি সুযোগ পেতেন না।রাতে কল দিলে উৎস বারান্দায় গিয়ে কথা বলত।আর ছোট থেকেই আমার ঘুম খুব পাতলা আবার মুসকানের জন্য আমি সেভাবে ঘুমাই না।তো উৎসকে আমি প্রায় দেখতাম বারান্দায় গিয়ে কারোর সাথে কথা বলত। আমি এইভাবেই তাকে লক্ষ্য করি আর তাদের কথার সারাংশ সারমর্ম দ্বারা বুঝতে পারি আমার প্রতি উৎসের এমন অবহেলা, অবজ্ঞার মূল কারন এই মানুষটা।
” আমি ভুল কি বলেছি?সৎ মা কখনোই আপন হয় না
“একদম ঠিক সৎ মা কখনোই আপন হয় না।যেমনটা আপনি কখনোই অরিত্রা আপুর মা হতে পারেন নাই।আর না পেরেছেন শুভাকাঙ্ক্ষী হতে।
এবার যেন আরেক দফা শক খেল সকলে।উৎস চোখ সরু করে তাকিয়ে আছে।
” তুমি কি বলছো ভাবি এসব আগা গোড়া মাথা কিছুই বুঝতেছি না।
“এগুলা তোমাদের বুঝতে হবে না।সময়ের অপেক্ষা করো সব জানতে পারবে।আর হ্যা আপনাকে বলছি মুসকানের দিকে হাত বাড়ানোর ও চেষ্টা করবেন না।ওকে আমি দিব না।ও আমার সন্তান বুঝতে পেরেছেন আপনি????…শেষের কথাটি চিৎকার করে বলে নিরুপমা।
” তুমি খুব বাড়াবাড়ি করছো।উৎস তুমি কিছু বলছো না কেন?
“আম্মু আমি মুসকানকে রেখে থাকতে পারব না….উৎস একটু অসহায় ভঙ্গিতে বলল
মিসেস ডালিয়া কিছু বললেন না নিজের রুমে চলে গেলেন।তার ভাব দেখে বোঝা গেল এতো সহজে তিনি যাবেন না।নিরুপমাকে জ্বালিয়ে তবেই যাবেন।তিনি পারুল বেগমের থেকে ও সাংঘাতিক।
চলবে!