এটা গল্প হলেও পারতো পর্ব-৭+৮

0
1142

#এটা গল্প হলেও পারতো
#পর্ব ৭+৮
বেল বাজার আওয়াজে চমকে খাটে উঠে বসলো দিতি, বিছানায় শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে কখন যেনো চোখটা একটু লেগে এসেছিলো। কাল বাড়িতে ঢোকার পর থেকেই অর্ক ওর সঙ্গে একটাও কথা বলে নি, রাতে অন্য ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েছিলো! কিন্তু ওই বা কি করবে! ও তো আর পাগল নয় যে অহেতুক বানিয়ে বানিয়ে অর্ক কে তার বাবা মায়ের সামনে ছোটো করতে চাইবে! অর্ক কে ছোটো করা মানে যে নিজেকেও ছোটো করা সেটা কি ও বোঝে না!

এলোমেলো ভাবনার মধ্যেই দ্বিতীয় বার বেলটা বেজে উঠলো, এবার বেশ কয়েকবার একসঙ্গে, অদিতি তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। খাট থেকে মাটিতে পা দিতেই মাথাটা হালকা একটু ঘুরে গেলো, শরীরটা খুব দূর্বল লাগছে, বেডরুমের দেওয়ালটা ধরে ফেললো অদিতি। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকার উপায় নেই, এবার বেলটা একটানা বেজে যাচ্ছে, কেউ অধৈর্য্য হয়ে বারবার বেল টিপছে, কোনরকমে দেওয়াল ধরেই এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুললো অদিতি।

অর্ক আর ধৈর্য্য রাখতে পারছিলো না, প্রায় মিনিট পনেরো ধরে বেল বাজানোর পরেও যখন অদিতি দরজা খুললো না তখন ওর হটাৎ করেই ভীষণ ভয় লাগলো। ওর কি শরীর খারাপ হলো হটাৎ! না হলে এই ভর সন্ধ্যেবেলা একটা মানুষ এতো ঘুমোতে পারে নাকি! কি করা উচিৎ এই ভাবনার মধ্যেই অদিতি দরজা খুললো, নিজের অজান্তেই অর্কর গলা থেকে উৎকণ্ঠার আওয়াজ বেরিয়ে এলো,

দরজা খুলছিলে না কেনো? শরীর খারাপ নাকি!

দেওয়াল ধরেই ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে, মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়লো অদিতি, অর্কর একটু অস্বাভাবিক লাগলো। ও আস্তে আস্তে পেছনে পেছনে ঢুকে এলো। হাত, মুখ ধুয়ে সঙ্গে করে নিয়ে আসা চাইনিজ এর প্যাকেটটা দুটো প্লেটে ঢেলে নিয়ে ঘরে ঢুকলো অর্ক, অদিতি একটু অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।

নাও, খেয়ে নাও, তোমার পছন্দের জিনিস, দিদির রান্না গুলো আমি ফ্রিজে তুলে রেখেছি,

যেনো দুদিন ধরে কোনো কিছুই ঘটেনি এমন ভঙ্গিতে বললো অর্ক, একটু চুপ করে থেকে অদিতি প্লেটের দিকে হাত বাড়ালো।

তোমার শরীর কি খুব খারাপ? বাপ্পার বিয়েতে যেতে পারবে না?

খেতে খেতেই জিজ্ঞেস করলো অর্ক।

শরীর খারাপ তবে যেতে পারবো না এমন নয় এখনও, চেষ্টা করবো যেতে, ও অনেক বার বলেছে আমাকে,

অদিতির কথায় অর্ক একটু নিশ্চিন্ত হলো। আগামী মাসে ওর মাসতুতো ভাইয়ের বিয়ে, অনেকদিন ধরেই যাওয়ার ঠিক হয়ে আছে, এখন এই পরিস্থিতিতে অদিতি যদি না যেতে রাজি হতো তাহলে আবার মাসী কে কিছু মিথ্যে কথা বলতে হতো।

ও আসলে আমাকেও অনেক বার ফোন করেছে সেই কবে থেকে, আমি ওকে কথাও দিয়েছি আসবো বলে। কিন্তু তুমি না গেলে তোমাকে একা রেখে তো যেতে পারবো না, তাই তোমার শরীর যদি ভালো না থাকে তাহলে ওকে জানিয়ে দেবো না হয়।

অর্কর কথায় একটু খুশি হলো অদিতি, যাক! তাহলে ও ওকে নিয়েই যেতে চায়। কিন্তু এখনই কিছু বলবে না ও, এমনও হতে পারে শুধুই বিয়ের অনুষ্ঠান টা একসঙ্গে বাধ্য হয়ে কাটানোর জন্যেই ও দিতি কে ম্যানেজ করতে চাইছে।

সে তো এখন দেরি আছে, তখন যদি ভালো থাকি তাহলে যাবো,

ইচ্ছে করেই বললো অদিতি,

দেরি আর কোথায়! আমি ভেবেছিলাম আমাদের শান্তিনিকেতন তো যাওয়া হয়নি, দুদিন আগেই যেতাম তাই। শনিবার কলেজ করে চলে যেতাম, তাহলে বিয়ের আগে দুদিন ঘুরে নিতাম একটু, কিন্তু তোমার শরীর ভালো না থাকলে তো ঘুরতেও ভালো লাগবে না

এবার একটু ভাবলো অদিতি, ওর নিজেরও শান্তিনিকেতন যাওয়ার ইচ্ছে অনেকদিন থেকেই, ওরা দুজনেই অনেকবার ভেবেছিলো যেহেতু মাসিরা বোলপুরে থাকেই তাই ওদের বাড়িতে গেলে ঘুরে আসবে। কিন্তু প্রায় বছর খানেক ধরে সেটা প্ল্যান হয়েই থেকে গেছে শুধু, এই সুযোগে সেটা হলে খুব খারাপ হবে না। আর অর্কর সঙ্গেও সম্পর্কটা ভালো হবে হয়ত।

যাবে তো?

অদিতি কে অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো অর্ক, অদিতির ডিসিশনের ওপরে সবটাই নির্ভর করছে। ও সত্যিই ভেবেছে বেড়ানোর কথা, এর থেকে ভালো সুযোগ আর আসবে না কখনো। এখন দিতি যদি না যেতে চায়, তাহলে ওর প্ল্যানটা সম্পূর্ন পাল্টে যাবে, ও ভেবেছিলো বেড়াতে গেলে দিতি র মন টাও ভালো হয়ে যাবে, আগামী দিনগুলোতে আর কোনো ঝগড়া রাখতে চায় না ও।

একবার একটা ভুলের জন্যে তো আর সারাজীবনের মতো অশান্তি টেনে নিয়ে যাওয়া যায় না! আর একই রকম কথা ও ও বলেছে সেদিন, তাই এবার এই পর্ব টা শেষ করতে চাইছিলো ও। এই যে দুজনে দু ঘরে শুয়েছিলো কাল, তাতে ও ও তো ভালো থাকে নি, ওর নিজেরই তো রাগ কমে আসার পর থেকেই উঠে চলে আসতে ইচ্ছে করেছে রাতে এঘরে, কিন্তু নিজের ইগো সরিয়ে সেটা করা সম্ভব হয়নি। আজ সাথীর কথা শোনার পর ও এগুলো ভুলে যেতে চাইছে। আর ইগো নিয়ে বসে থাকলে চলবে না, দিতির মনের কথাটাও ভাবতে হবে। এই বেড়াতে যাওয়ার সুযোগে যদি এগুলো মিটমাট হয়ে যায় ক্ষতি কি!

কি হলো বললে না কিছু! তাহলে আমি কাল সকালেই ফোন করে দিতাম বাপ্পা কে।

বলতে বলতে খাটে বালিশ টেনে নিয়ে শুয়ে পড়লো অর্ক। গত কাল রাতে ও আলাদা ঘরে ছিলো, অদিতি ঠিক করেই নিয়েছিলো আর নিজে থেকে এঘরে ডাকবে না অর্ক কে, আজ ওকে নিজে এসে শুতে দেখে খুশি হলো ও, তারমানে অর্ক সত্যি সবকিছু ঠিক করে নিতে চাইছে!

যাবো, ফোন করে দিও বাপ্পা কে,

লাইট নিভিয়ে দিয়ে অর্কর পাশে শুয়ে পড়লো দিতি, অর্কও খুশি হলো, ওর ধারণা ছিলো ওকে এই খাটে শুয়ে পড়তে দেখে দিতি নিশ্চয়ই কিছু বলবে। কিন্তু ওকে চুপ করে শুয়ে পড়তে দেখে বুঝলো ও ও মিটিয়ে নিতেই চাইছে গন্ডগোল, তাই মিটিয়ে নেওয়ার এই সুযোগটা ও একটুও নষ্ট করতে চাইলো না ও, পাশ ফিরেই জড়িয়ে ধরলো অদিতি কে।

পরের দিন সকালে চায়ের টেবিলে বসে অদিতি কে অনেকটাই স্বাভাবিক লাগছে দেখে একটু দোনোমনো করে প্রসঙ্গটা তুলেই ফেললো অর্ক,

তুমি কি এখনো আমার ওপরে রেগে আছো দিতি?

অদিতি মাথা নাড়লো, আস্তে আস্তে বললো,

রাগ নয় আমার খুব কষ্ট হয়েছিলো, ওই ফোনটা এলো আর তার ঘন্টাখানেক পর থেকেই তুমি আর আমার ফোন রিসিভ করলেনা। এমনকি রাতের দিকে বন্ধও করে দিলে! সবটা মিলিয়েই মনে হচ্ছিলো তুমি আমাকে অ্যাভয়েড করতে চাইছো!

বিশ্বাস করো, সত্যি আমি ফোনটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তুমি দিদি কে জিজ্ঞেস করো, আমি পরের দিন ওকেও জিজ্ঞেস করেছিলাম। অথচ তুমি ফোন না ধরলে টেনশন করো বলেই আমি কিন্তু সত্যি এবার খুব সতর্ক ছিলাম। আমার স্পষ্ট মনে আছে ক্লাসের পরে আমি সাইলেন্ট মোডে রাখিনি আর, এমনকি বাড়িতেও ওটা সোফার ওপরেই ছিলো। তাও কি করে যে হলো! যাকগে, ছেড়ে দাও, আর কোনোদিনও হবে না! সরি!

অদিতি খুশি হলো, অর্কর হাতটা ধরে বললো,

আমারও ভুল হয়ে গেছে, বাইরের কারোর কথায় আমি কেনো যে তোমাকে ভুল বুঝলাম! কিন্তু এরকম একটা ফোন কে আমাকে করলো বলোতো? যদি রান্ডম কল করে কেউ মজা করতো, তাহলে সে তোমার নাম জানতো কি করে? এটাই না আমার খুব আশ্চর্য্য লাগছে!

অর্ক এই সুযোগের অপেক্ষাই করেছিলো, অদিতির হাতটা ধরে রেখেই বললো,

জানো তো, আজ মেট্রোতে ফেরার সময় অরিন্দমের এক বন্ধুর সঙ্গে হটাৎ দেখা হলো। ভদ্রমহিলার নাম সাথী, অরিন্দম পরিচয় করিয়ে দিলো, উনি নাকি সাইকোলজিস্ট, খুব ভালো কাউন্সিলিং করেন। তোমার প্রেগন্যান্সির কথা শুনে কথায় কথায় বললেন যে, এই সময় নাকি কারো কারো মুড সুইং, ডিপ্রেসন এসব হতে পারে। তুমি কি ওখানে একা একা খুব ডিপ্রেসড ফিল করছিলে দিতি?

দিতি একটু চুপ করে থাকলো, তারপর বললো,

এমনিতে তো কোনো অসুবিধা ছিলো না, তবে মা তো আমাকে কিছুই করতে দিতো না, তাই সারাদিন শুয়ে শুয়ে একটু বোর হচ্ছিলাম তো বটেই।

এখানেও তো সেটাই হবে তাই না? আমি কলেজে চলে যাবো, তোমার তো আবার সারাদিন একা কাটানো মুশকিল হয়ে যাবে! একা একা থাকলেই মনের মধ্যে আজেবাজে চিন্তা আসবে! সাথী বলছিলো, তোমার যদি খুব ডিপ্রেসড লাগে তাহলে তুমি ওর সাথে কথা বলতে পারো, নাহলে হয়তো পরে আরো বেড়ে যাবে!

কিছুক্ষন চুপ করে থেকে সায় দিলো অদিতি,

ঠিক আছে! কথা বলো তাহলে। ওনার সঙ্গে কথা বলেই দেখি একবার!

কলেজের দেরি হয়ে যাচ্ছিলো, অদিতি যে এতো সহজে রাজি হয়ে যাবে এটা ওর ধারণা ছিলো না। তাই সোজাসুজি না বলে সাথীর কথাটা একটু বানিয়েই বলতে হলো। স্নানে যাবার জন্যে উঠতে উঠতে ঘাড় নাড়লো অর্ক,

ঠিক আছে, অরিন্দম কে দিয়ে আজই কলেজে গিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে নিচ্ছি।

কলেজে ঢুকেই নিজেই অরিন্দম কে খুঁজে নিলো অর্ক,

ভাই, দিতি রাজি হয়ে গিয়েছে! তুই একটা তাড়াতাড়ি অ্যাপয়েন্টমন্ট করে দে না প্লিজ!

অরিন্দম অবাক হলো,

এতো সহজে রাজি হলো! কি করে অসাধ্য সাধন করলি!

অর্ক হাসলো,

শোন না, আমি একটু মিথ্যে বলেছি! বলেছি তোর আর আমার সাথে সাথীর মেট্রোতে হটাৎ দেখা হয়েছিলো। ওকে ফোন করেছিলাম জানলে দিতি রাগ করতো, ভাবতো আমি ওকে পাগল ভাবছি। তুই সাথী কে একটু বলে রাখিস সব টা।

পরের দিন বিকেলেই সাথীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া গেলো অরিন্দমের চেষ্টায়, দিতি কে নিয়ে অর্ক চেম্বারে ঢুকলো। সাথী বেশ হাসিখুশি, দিতির বেশ পছন্দ হলো। সাথী দিতি র দিকে তাকিয়ে হাসলো,

বলুন, কেমন আছেন? কি সমস্যা হচ্ছে আপনার?

একটু ভেবে সবটাই বেশ গুছিয়ে বললো অদিতি, যেটুকু ভুল হচ্ছিলো, পাশে বসে অর্ক হেল্প করলো। দুজনের সঙ্গেই আলাদা করেও কথা বললো সাথী।

আপনি কি করে শিওর হচ্ছেন অর্ক বাবু, যে সত্যিই কোনো ফোন আসে নি?

অর্ক একটু ভাবলো, তারপর বললো,

কারণ আমার এমন কাউকে মনে হচ্ছে না, যে কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকে এই কাজটা করতে পারে। আমার সেরকম কোনো শত্রু নেই, সবার সঙ্গেই আমার সম্পর্ক খুব ভালো। তাছাড়া এমনিতেই ও একটু এরকমই, মাঝে মাঝেই ফোন বন্ধ রাখা বা সাইলেন্ট রাখা নিয়ে ওর সঙ্গে আমার ঝামেলা হয়েছে। আমার মনে হয় এবার ও ওখানে এই অবস্থায় একা ছিলো, তাই একটু বাড়াবাড়ি ভেবে ফেলেছে।

আলাদা করে দিতির সঙ্গেও কথা বললো সাথী, ঘটনা টা সত্যিও হতে পারে এটা মেনে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এর পেছনের কোনো কারণ দিতির কাছে জানতে চাইলো সাথী। আগে কোনোদিন অর্কর ব্যবহারে ওর এরকম কিছু মনে হয়েছে কিনা, বা অর্ক সত্যি এরকম করতে পারে কিনা এর উত্তরেও নাই বললো দিতি। সাথীর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষন যুক্তি তর্ক দিয়ে বিচার করার পরে অদিতি নিজেই বিশ্বাস করলো যে এটা ওরই মনের ভুল। কেউ ওকে ফোন করেনি, ও নিজের কল্পনায় এসব ভেবে নিয়েছে।

যখন দুজনেই কথা বলে খুশি মনে বেরোচ্ছিল, তখন সাথী অর্ক কে আলাদা করে ডেকে দিতির দেওয়া ফোন নম্বরটা একটু সেভ করে রাখতে বললো, একটু অনিচ্ছা সত্বেও সেভ করলো অর্ক।

দিন দুয়েকের মধ্যেই অদিতি একদম স্বাভাবিক হয়ে গেলো, গত এক সপ্তাহের ঘটনা মন থেকে মুছে ফেললো দুজনেই। এমনকি শাশুড়ি কে ফোন করে নিজের পাগলামির জন্যে লজ্জা প্রকাশ করলো অদিতি, রুমা এবং সমরেশ দুজনেই শান্তি পেলেন। ছেলে, বউয়ের গন্ডগোলের জন্যে তাঁদের মধ্যেও অশান্তির সৃষ্টি হয়েছিলো। কোনো কিছু সঠিক ভাবে না জেনেই অর্ক কে ডেকে পাঠানোর জন্যে স্ত্রীর ওপর যথেষ্টই বিরক্ত হয়েছিলেন সমরেশ।

প্রায় মাসখানেক কোনো সমস্যা ছাড়াই কেটে গেলো, অর্কও নিজে যথেষ্ট সতর্ক থাকলো, ফোন বন্ধ বা সাইলেন্ট যাতে না থাকে সে বিষয়ে মনোযোগী হলো। সাথীর সঙ্গে বার দুয়েক সিটিংয়ে সব কিছুই স্বাভাবিক হয়ে গেলো। ক্রমশ বাপ্পার বিয়ে এগিয়ে আসছিলো, অদিতি গোছগাছ শুরু করলো। মাঝে মধ্যে টুকটাক অশান্তি হলেও সেগুলো বিরাট আকার ধারণ করছিলো না।

শান্তিনিকেতন যাওয়ার দিন তিনেক আগে একদিন কলেজে ঢুকেই ছুটির দরখাস্ত লিখতে বসলো অর্ক, যাবার দিন প্রায় এসে গিয়েছে অথচ আসল কাজটাই করা হয় নি এখনো। দরখাস্ত লিখে ছুটির ব্যবস্থা করে অফিস থেকে বেরিয়ে এসে কলেজ ক্যান্টিনের সামনে ও থার্ড ইয়ারের গ্রুপটার মুখোমুখি হলো। ওকে দেখেই কৌশিক এগিয়ে এলো,

স্যার, কিছু জিনিস একটু অসুবিধা হচ্ছে, দু একদিনের মধ্যে আপনি ফ্রী থাকলে বুঝতাম একটু!

অর্ক মাথা নাড়লো,

এ সপ্তাহে হবে না কিছুতেই! আমি দিন তিনেকের জন্যে একটু বাইরে যাচ্ছি, নেক্সট উইকে একটা দিন দেখো তোমরা।

কোথায় যাচ্ছেন স্যার?

অর্কর কথা শুনতে পেয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়েই অনির্বাণ জিজ্ঞেস করলো, অর্ক একটু হাসলো,

শান্তিনিকেতন।

#এটা গল্প হলেও পারতো
#পর্ব ৮
পরশুই যেতে চাইছিস? এতো তাড়াহুড়ো কিসের? আগে তো তোর এতো উৎসাহ ছিলো না?

তিয়াসার ধেয়ে আসা প্রশ্নবাণে র সামনে কেমন যেনো থতমত খেলো কৌশিক, একটু তড়িঘড়ি উত্তর দিলো,

আরে, না ভাই! সেই কবে থেকেই তো যাচ্ছি, যাবো হচ্ছে! কিন্তু বারবার ক্যান্সেল হয়ে যাচ্ছে তো! এবার কাউকে উঠে পড়ে লাগতে হবে বুঝলি! আর কিছুদিন পরেই এক্সাম শুরু হয়ে যাবে, তারপর কলেজ শেষ! যেতে চাইলে এখনই চল!

আমি তো সেটাই বলছি কবে থেকে, কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না আমাকে! গরীবের কথা ভাই! বাসি হলে তবেই মিষ্টি হয়!

শ্রেয়া পাশ থেকে ফোড়ন কাটল। অন্যরা কেউ কিছু বলার আগেই তিয়াসা বলে উঠলো,

যেতে হয় চল, আমার কোনো আপত্তি নেই! তবে গাড়িতে গেলে রিয়ার গাড়ি অথবা ভাড়া গাড়ি নিতে হবে!

হ্যাঁ, হ্যাঁ, কেউ তোর অনির্বাণের গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে না, তোর কোনো চিন্তা নেই!

দীপের ব্যাঙ্গাত্মক গলা কিছুটা হলেও তিয়াসা কে ব্যাকফুটে ঠেলে দিলো, ও একটু গম্ভীর মুখে অনির্বাণের দিকে তাকালো।

কি দরকার এতো বিতর্কের! গাড়ির ঝামেলায় যাবার কোনো দরকার নেই! ট্রেনের টিকেট কাট,

রিয়ার কথা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই তিয়াসা আর অনির্বাণের মুখে মুচকি হাসি খেলে গেলো। কৌশিক পকেট থেকে মোবাইল বার করে টিকিটের খোঁজ শুরু করলো। অনির্বাণ উঠে দাড়ালো, তিয়াসা কে ডেকে নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বললো,

তোরা তাহলে ব্যবস্থা করে নে, কতো লাগবে আমাদের জানিয়ে দিস!

হটাৎ করে কৌশিকের কি হলো বলতো? ও তো কোনো ব্যাপারই খুব বেশি ইনভলভ হয় না কখনো! আজ একেবারে টিকিট কাটতে বসে পড়লো!

মেট্রোর দিকে দুজনে হেঁটে যেতে যেতে অনির্বাণের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো তিয়াসা, অনির্বাণ মুচকি হাসলো,

কি আর! রিয়ার গাড়ি নিয়ে যাওয়া টা আটকাতে হবে না! অদ্ভুত ছেলে একটা, রিয়া কিন্তু ওকে একটুও পাত্তা দেয়না, শুধুই ইউজ করে। তবু পেছন পেছন ঘুরে বেড়ায় খালি,

আমার কিন্তু একটু অন্য রকম লাগছে! ওই কিন্তু আজ প্রথম এসে যাওয়ার কথা টা নতুন করে তুললো। শ্রেয়া মাঝে মাস খানেক আগে একবার হুজুগ করেছিলো, কিন্তু তারপর আর এগোয় নি। রিয়ার গাড়ি নিয়ে যাওয়া এড়াতে গেলে তো কৌশিকের এই প্রসঙ্গ তোলাই উচিত ছিলো না, তাই না? ও এতো ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে কেনো বলতো?

তিয়াসা একটু চিন্তিত গলায় বললো, অনির্বাণ হাসলো,

এই যে মিস মার্পেল, আপনি আবার গোয়েন্দাগিরি শুরু করবেন নাকি!

তিয়াসা হেসে ফেললো, ওর এই অনুসন্ধিৎসু স্বভাবের জন্যেই বন্ধুরা ওকে মিস মর্পেল বলে ডাকে। তাড়াতাড়ি কথা ঘুরিয়ে বললো,

চল, তাড়াতাড়ি পা চালা! এর পরের মেট্রো থেকে আবার ভিড় হতে থাকবে!

শনিবার যখন বোলপুর স্টেশনে নামলো অদিতি আর অর্ক, তখন বেশ রাত হয়েছে। বাপ্পা স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিলো, অর্ক কে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো,

কতদিন পরে এলি! বৌদি কেমন আছো?

দিতি হাসলো,

বউয়ের ছবি দেখাও!

বিয়ে বাড়ি একদম জমজমাট। দিতি ঘরে ঢুকতেই মাসি শাশুড়ি দৌড়ে এলেন, প্রণাম করতে যাওয়ার আগেই দিতি র হাত ধরে ফেললেন,

থাক! এই অবস্থায় বেশি নিচু হবার দরকার নেই!

শাশুড়ি পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন, দিতি র একটু লজ্জা লাগছিলো, সেই ঘটনার পরে প্রথম বার শ্বশুর, শাশুড়ির মুখোমুখি হয়েছে ও, কিন্তু রুমা এগিয়ে এসে একদম সহজ গলায় বললেন,

শরীর ঠিক আছে তো? বেশি ঘোরাঘুরি করিস না কিন্তু!

দিতি ঘাড় নাড়লো, হাত মুখ ধুয়ে এসে সবার সঙ্গে গল্প গুজব চলতে লাগলো। পরের দুদিন খুব আনন্দে কাটলো, সকালে উঠেই চা খেতে খেতে বাপ্পা বললো,

পরশু থেকে আমি ব্যস্ত হয়ে যাবো বৌদি, চলো তোমাদের ঘুরিয়ে আনি।

দিতি উৎসাহিত হলো, রুমা একটু আপত্তি জানাচ্ছিলেন, কিন্তু সমরেশ এবং মাসি সেই আপত্তি ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন,

যা তো! কিচ্ছু হবে না! গাড়িতে করেই তো ঘুরবি!

অর্ক একটু দ্বিধায় ছিলো, কিন্তু দিতি র নিজের প্রবল ইচ্ছে দেখে আর আপত্তি করলো না। শান্তিনিকেতনের দ্রষ্টব্য যা আছে সবই বাপ্পা ঘুরিয়ে দেখালো। প্রবল ঘোরাঘুরির মধ্যে দিয়ে দুদিন কেটে গেলো।

বিয়ের দিন সকাল থেকেই দুদিনের ঘোরার ধকলে দিতি একটু ক্লান্ত হয়ে পড়লো। গায়ে হলুদের সময় রুমা ওকে ডাকতে এসে সেটা লক্ষ্য করলেন,

তোকে আর হলুদের ওখানে যেতে হবে না! তুই রেস্ট নে একটু!

দিতি শুয়ে শুয়েই ঘাড় নাড়লো,

ঠিক আছে! একটু শুয়ে থাকি, বেলার দিকে ঠিক হয়ে যাবে!

বিকেলে বরযাত্রী যাবার সময় হয়ে গিয়েছিলো, দিতি কে তখনো শুয়ে থাকতে দেখে অর্ক একটু টেনশনে পড়লো,

তোমার শরীর এখনো ঠিক হয় নি! আমি এটাই ভয় পাচ্ছিলাম! বড্ড বেশি ঘোরাঘুরি হয়ে গেছে দিতি! তুমি কি বরযাত্রী যেতে পারবে? নাকি রেস্ট নেবে বাড়িতে?

দিতি উঠে বসলো, ও অনেকদিন ধরে বাপ্পার বিয়ের প্রোগ্রাম ঠিক করে রেখেছে, বরযাত্রী ও যাবেই! অর্কর ইচ্ছা ছিলো না, রুমাও একটু আপত্তি জানালেন, দিতি তার জেদে অনড় রইলো। এই প্রথম বার সমরেশ নিজেও একটু চিন্তায় পড়লেন, স্ত্রী কে মাথা ঘামতে বারণ করেন যিনি, সেই তিনিও খানিকটা অনিচ্ছুক ভাবেই দিতি কে বললেন,

যেতে পারবি তো! জোর করে কিছু করিস না কিন্তু!

এর বেশি আর কিই বা বলতে পারতেন তিনি, দিতি তাও যেতে চাইলো। শেষ পর্যন্ত বরযাত্রী হয়ে মেয়ের বাড়ির উদ্যেশ্যে রওনা হলো দিতি। ওখানে পৌঁছে যদিও মোটামুটি চুপচাপ বসেই থাকলো ও, খুব বেশি হৈ চৈ করলো না। ভালোয় ভালোয় বিয়ে পর্ব মিটলো, পরের দিন ভালো করে রেস্ট নেবার পরে বৌভাতের দিন সকালের মধ্যেই দিতি সুস্থ হয়ে গেলো়ে।

আজ সকাল থেকে উঠেই সবার সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত ছিলো ও, অনেক নতুন নতুন আত্মীয়স্বজন ছিলেন শাশুড়ির বাপের বাড়ির যাদের ও কোনোদিনও দেখে নি আগে। এই করতে করতে অনেক বেলা হয়ে গেলো, সবাই যখন ব্রেকফাস্ট করতে বসলো, তখন সবাই অর্কর কথা জানতে চাইলো। এতক্ষনে দিতি র মনে পড়লো ও আজ ঘুম থেকে উঠে থেকেই একবারের জন্যেও অর্ক কে দেখেনি। এমনকি কাল যখন ও ঘুমোতে যায় তখনও অর্ক ভাই বোনদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল, ও ও আর ডাকেনি ওকে, ভাইয়ের বিয়েতে এসে ওকে নিজের মতোই থাকতে দিতে চেয়েছিলো কদিন।

অর্ক কোথায়? ফোন কর ওকে, খেতে আসতে বল,

শাশুড়ির কথায় ও ফোন করলো অর্ক কে, যথারীতি ওর ফোন বেজে গেলো নিয়ম মতো, ও ধরলো না, একই জিনিষ প্রতিবার হয় জানা সত্বেও প্রতিবারের মতো এবারও টেনশন হচ্ছিলো দিতি র। নিজেই নিজেকে প্রতিবার সান্ত্বনা দেয় ও, এবারও তাই দিচ্ছিলো। কিন্তু নিজের খেতে ইচ্ছা করছিলো না একটুও, তাও সবার সঙ্গে বসেছে না খেয়ে উঠে যাওয়া টা খারাপ দেখায়, তাই কোনো রকমে কিছুটা খেয়েই উঠে পড়লো ও।

বেশ কিছুক্ষন পরেও যখন অর্ক ফিরলো না তখন ওর সঙ্গে ওর শাশুড়ি কেও বেশ চিন্তিত দেখলো দিতি। এতদিন ও যখন অর্কর এইসব দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কাজকর্মের কথা গুলো নিয়ে রাগারাগি করতো, তখন উনি সেগুলো ফিল করতে পারতেন না, কিন্তু আজ নিজেই সেই পরিস্থিতি তে পড়ে বেশ টেন্সড হয়ে গেছে দিতি বুঝলো।

একবার বাপ্পা কে দেখতে পাঠাবো? ও একটু দেখে আসুক কাছাকাছিই নিশ্চয়ই গেছে কোথাও,

বোনের কথায় আরও রেগে গেলো ওর শাশুড়ি দিতি বুঝলো, বিয়ে বাড়িতে বেড়াতে এসে এইসব উটকো চিন্তা করতে কার ভালো লাগে। এখন যার বিয়ে তাকে যদি বাড়ির অনুষ্ঠান ছেড়ে অতিথি কে খুঁজতে বেরোতে হয় তাহলে সে যে কি লজ্জার ব্যাপার সেটা কে বোঝে!

না, বাপ্পা নিজের কাজ করুক, আর একটু দেখি,

বলে বোন কে ওখান থেকে সরিয়ে দিয়েই দিতি র দিকে ফিরলেন তিনি,

চল, আমরাই একটু এগিয়ে দেখি!

শাশুড়ির সঙ্গে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলো ও, পাশে হাঁটতে হাঁটতে শাশুড়ি সমানে রাগ দেখিয়ে যাচ্ছেন ছেলের ওপর, এই রাগ যে আসলে রাগ নয়, প্রবল চিন্তার বহিঃপ্রকাশ, সেটা ওর থেকে বেশি আর কে জানে। এই জিনিস তো বিয়ের পর থেকেই দেখে আসছে ও, আর ফিরে এসেই এতো কিছু বলবে ফোন না ধরার কারণ হিসাবে, তখন এটা মনে হতে বাধ্য যে বারবার একজনের সঙ্গেই এতো সমস্যা হয় কেনো!

অর্ক কে প্রায়ই বলে দিতি,

কই আমার ফোন তো কোনদিন এতো বিভিন্ন রকমের সমস্যা করেনা, তোমার ফোনই শুধু করে কেনো!

এই জিনিসগুলোই যে সন্দেহ আরও বাড়িয়ে তোলে সেটা ও অর্ক কে বোঝাতে পারে না। ওই ফোন টা আসার পর যদি সেদিন ও অর্ক কে যোগাযোগ করতে পারতো, তাহলে তো এতো কিছু হয়ে যেতো না তখন! মেয়েটার ফোন, অর্কর সারারাত ফোন না ধরা সব টা মিলিয়েই তো নিজেদের মধ্যে এতকিছু হয়ে গেলো ওদের। আজ বুঝুক ওর শাশুড়ি! উনি তো ভাবেন দিতি অহেতুক সন্দেহ করে ছেলে কে, ছেলে যে কি করে সেটা আজ নিজের চোখেই দেখতে পারছে মা!

প্রায় মিনিট দশেক হাঁটার পর রাস্তা টা এক জায়গায় গিয়ে ভাগ হয়ে গেছে দুদিকে, সেখানে গিয়ে ওরা দাঁড়িয়ে পড়লো। এবার কোনদিকে যাওয়া উচিত সেটা নিজেরাই মনস্থির করতে পারছিলো না।

ফিরে চলো মা, আমার শরীর খারাপ লাগছে, আমি আর হাঁটতে পারবো না,

একটু রাগের গলায় বললো দিতি, এবার ওর ভীষণ রাগ হচ্ছিলো।

কি করি বলতো? বাপ্পা কে ফোন করবি তাহলে আসার জন্যে?

শাশুড়ির উদ্বিগ্ন গলা শুনে নিজের আরও চিন্তা হচ্ছে ওর,

দেখো তুমি! তোমার ছেলে কিরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন! আমি বললে তো বিশ্বাস করোনা আমাকে, উল্টে নিজেকে শুধরে নিতে বলো, এখন বুঝতে পারছো তো কি করে ও বাড়িতে!

শাশুড়ি কোনো উত্তর দিলো না দেখে ও একটু শান্তি পেলো। এবার নিজের সময়ে উনি বুঝতে পারছেন যে অর্ক আসলে সত্যি সন্দেহ করার মতোই কাজ করে সব সময়।

কি করবে ভাবতে ভাবতেই ডান দিকের রাস্তা দিয়ে অর্ক কে আসতে দেখলো দিতি, হাতে একটা প্যাকেট ঝোলানো, নিজের মনে কি ভাবতে ভাবতে এগিয়ে আসছে। ওকে দেখেই এতক্ষনের জমানো চিন্তা টা রাগ হয়ে ফিরে এলো, ও প্রায় চিৎকার করে উঠতে যাচ্ছিলো, তার আগেই শাশুড়ির চিৎকারে নিজেকে সংযত করলো ও। আজ না হয় উনিই বলুন, অর্কও বুঝুক যে শুধু অদিতি নয় ওর কাজ কর্মে ওর মাও বিরক্ত হয় তাহলে।

ফোন কোথায় তোর? কোথায় ছিলিস এতক্ষন?

মায়ের চিৎকারে অবাক হয়ে তাকালো অর্ক। ওরা এখানে কি করছে, ওকে খুঁজতে এসেছে নাকি! মোবাইল ধরেনি ও এবারও, পকেটেই তো নিয়ে বেরিয়েছে, কি হলো তাহলে! তাড়াতাড়ি পকেট থেকে মোবাইল টা বার করলো ও। এখন মনে পড়লো কাল আড্ডার সময় বার বার ফোন আসছিলো বলে সাইলেন্ট করেছিলো ওটা! দিতি র এতগুলো মিসড কল! ও খুব করুন মুখে তাকালো, মাও ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

ফোন টা সাইলেন্ট হয়ে গেছে খেয়াল করিনি,

খুব আস্তে করে একবার বলার চেষ্টা করলো ও, জানেই সেটা এই মুহূর্তে বৃথা,

তোর ফোনই সাইলেন্ট হয় শুধু? আমাদের তো হয় না! দিতি ঠিকই বলে বুঝতে পারছি, তুই চূড়ান্ত ইরেস্পনসিবল। আরেকটু হলেই বাপ্পা কে নিজের বিয়ে ছেড়ে তোকে খুঁজতে বেরোতে হতো জানিস সেটা! কতো টা লজ্জার ব্যাপার বলতো!

মায়ের অভিযোগ গুলো শুনতে শুনতেই মাথা নিচু করে হাঁটতে লাগলো ও, দিতি গম্ভীর মুখে হেঁটে যাচ্ছে একটাও কথা না বলে, আজ ওর আর কিছু বলার দরকার পড়ছে না। মা সবটাই ওর হয়েই বলে যাচ্ছে, কোনো উত্তর দিয়ে এই মুহূর্তে আর নিজের কোনো বিপদ নতুন করে ডেকে আনতে চাইলো না ও। এমনিতেও দিতি র মোকাবিলা কিভাবে করবে পরে সেটার জন্যেও প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে লাগলো। কারণ এখন যতই চুপ করে থেকে থাক না কেনো, অতো সহজে যে ওকে ছাড়বেনা দিতি সেটা ও মনে মনেই জানে।

ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই মাসি, মেসো একসঙ্গে দৌড়ে এলো, সবার একটাই প্রশ্ন, অর্ক এতক্ষন ছিলো কোথায়!

কিরে হারিয়ে গিয়েছিলি শুনলাম? ঘরে যা একবার, তারপর বৌদি তোকে কি করে দ্যাখ!

মুচকি হেসে বললো বাপ্পা, নতুন বউয়ের সামনে এই রসিকতায় অর্ক খুব লজ্জায় পড়লো। মায়ের গম্ভীর মুখ, দিতি র চুপ করে থাকা সব মিলিয়ে অর্কর বেশ অস্বস্তি হতে থাকলো, কাজটা একটু বাড়াবাড়িই হয়ে গিয়েছে আজ!

ঘরে ঢুকেই পেছনে পেছনে এগিয়ে আসা দিতি র দিকে হাতের প্যাকেট টা এগিয়ে দিলো ও,

নাও, ধরো! এটার জন্যেই দেরি হয়ে গেলো এতো!

মুখটা কে গম্ভীর রেখেই হাত বাড়ালো দিতি, প্যাকেটটা খুলেই এতক্ষনে চেপে রাখা রাগটা একদম জল হয়ে গেলো ওর! কি সুন্দর গয়না গুলো, ওর এগুলো খুব পছন্দের।

কোথা থেকে পেলাম বলো তো?

ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো অর্ক, দিতি র খুশি ভরা মুখটা দেখেই ওর টেনশন টা অনেকটাই কেটে যাচ্ছিলো। দিতি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো,

পারলে না তো? হাটে গিয়েছিলাম, তোমার শরীর খারাপ তাই নিয়ে যাইনি আর। পরে গিয়ে দেখলাম প্রচণ্ড ভিড়, ভালোই হয়েছে তোমাকে নিয়ে যাই নি!

অদিতি ততোক্ষনে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছে, কিছুক্ষন আগের রাগ সম্পূর্ন ভুলে গিয়ে গয়নাগুলো গলায় পরে দেখতে দেখতে বললো,

দারুন হয়েছে গো! প্রত্যেকটাই খুব সুন্দর!

অর্ক একটু চুপ করে থাকলো, তারপর মুচকি হেসে বললো,

কে এনেছে দেখতে হবে না! অর্ক মিত্রর চয়েস বলে কথা!

অদিতি হেসে ফেললো,

তাই নাকি! তবে তোমার চয়েসের বেশ উন্নতি হয়েছে এটা মানতেই হবে, আগে যা জঘন্য জিনিসপত্র আনতে!

আমার চয়েস সব সময়ই ভালো, তাই না তোমাকে পছন্দ করেছিলাম!

অর্ক র দুষ্টুমি ভরা মুখের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে, আয়নার মধ্যে দিয়েই হেসে ফেললো অদিতি,

হুমম! বুঝলাম!
চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে