#এক_বৃষ্টির_দিনে
#রাবেয়া_সুলতানা
#৫ তথা শেষ পর্ব
___আয়ান তানিশার জন্য অনেক গুলো শাড়ি নিলো।আয়ানতো জানে না তার কি পছন্দ তাই অনেক কিনাকাটা করলো যেটা তার পছন্দ হয়।কিনাকাটা শেষে করে আয়ান টাকা টা দিতে যাবে এমন সময় দেখে সেই মেয়েটা। যার দেখা পাওয়ার আশায় আয়ান ৩ বছর অপেক্ষা করেছে। হঠাৎ মেয়েটাও আয়ানের দিকে তাকাতেই ভয়ের চাপ মুখে ফুটে উঠলো।
আয়ান মনে মনে ভাবতেছে মেয়েটা আমার দিকে এই ভাবে তাকিয়ে আছে কেন? কথাটা ভাবতে ভাবতে মেয়েটার দিকে এগিয়ে আসছে।
এমন সময় মেয়েটির সাথে থাকা ফ্রেন্ড গুলো বললো কিরে এই ছেলেতো তোর,,,,,,,, মেয়েটি ইশারায় তাদের চুপ থাকতে বললো।ছেলেটাকে যেন কিছু না বলে।তারাও সবাই চুপ হয়ে গেলো।
আয়ান যতো এগিয়ে আসছে মেয়েটার হার্টবিট তোতো বাড়ছে। আরান মেয়েটির সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি।কথাটা বলার সাথে সাথেই মেয়েটা মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজালো।মেয়েটার ফ্রেন্ড গুলো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আয়ান-আসলে কথা গুলো কিভাবে শুরু করবো বুজতেছি না।আপনাকে আমি ৩ বছর আগে #এক_বৃষ্টির_দিনে দেখেছিলাম।এই ৩ বছর আমি আপনাকে অনেক খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি।জানেন আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসতাম।আমি এমন এক জনকে ভালোবেসে ছিলাম যার নামটা পর্যন্ত আমি জানতাম না।আমাকে নিয়ে আমার সব ফ্রেন্ডরা হাসঁতো,ঠাট্টা করতো।আমি এক মাস আগে বাবা মায়ে চাপে পড়ে বিয়ে করেছি সেও আপনার কথা শুনে আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করতো। আপনার জন্য আমি আমার বউয়ের মুখটা পর্যন্ত দেখিনি।আজ যখন সব কিছু ভুলে আমার বউয়ে কাছে যাচ্ছিলাম সেই আপনি আবার আমার সামনে এসে পড়লেন।তবে আমি আপনাকে আর ভালোবাসি না।এখন আমি আমার ওই লক্ষ্মী বউটাকেই ভালোবাসি।কথা গুলো একদমে বলে ফেললো আয়ান।
মেয়েটা কথা গুলো শুনে চোখে পানি টলমল করছে কিন্তু কান্না করতে চাচ্ছেনা।কান্না করলেই আয়ান হয়তো সব বুজে যাবে।তাই অন্য দিক ফেরে চোখ গুলো মুছে আয়ানের দিকে আবার তাকালো।
আয়ান -আচ্ছা আপনার নামটা একটু বলবেন? আমি আমার পাগলিটাকে আজ গিয়ে বলবো আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছে। আপনার নামটাও ওকে বলবো।
মেয়েটা ইশারায় আয়ানকে একটা কলম দিতে বললো।
আয়ান -আপনি কথা বলতে পারেননা? আপনি তখন থেকে ইশারায় সব বুজিয়ে দিচ্ছেন।
মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে না বললো।তারপর আয়ান সরি বলে তার কলমটা মেয়েটাকে দিলো। কলম নিয়ে মেয়েটা তার হাতে নাম লিখলো। কিন্তু আয়ান মেয়েটার নাম দেখে অবাক হয়ে বললো আপনার নাম তানিশা?
মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।
আয়ান -জানেন! আমার পাগলিটার নামও তানিশা।আজ তাহলে আসি আমার পাগলি রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছে এখন ওকে আনতে যাবো।আপনার সাথে আমার হয়তো আর কখনওই দেখা হবেনা ভালো থাকবেন।
আয়ান চলে যাওয়ার পরে তানিশার সব ফ্রেন্ডরা বললো তুই কথা বলতে পারিসনা?
এতো অভিনয় করলি কিভাবে? তোর হাজবেন্ড আর তোকেই চিনতে পারলো না ভেবে আমরা তো অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আয়ানের মুখে সব কথা শুনে বুজলাম তোদের মধ্যে সমস্যা কি।
তানিশা -সব যখন বুজেছিস তাহলে আর বলছিস কেন?
তানিশা খুশিতে কি করবে বুজতে পারছিলো না।হঠাৎ মনে হলো আয়ান তাদের বাসায় যাচ্ছে।তাড়াতাড়ি আয়ানকে ফোন দিলো।
আয়ান -কিছু বলবেন?
তানিশা -হ্যাঁ! আপনি কোথায়?
আয়ান -আমি বাহিরে আছি। কেন?
তানিশা -আমি তো আপনাদের বাড়িতে যাচ্ছি।
আয়ান -মানে? আপনি এখন আসার দরকার নাই।
তানিশা -আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাইনা। আমি এখন আপনার বাড়ি যাবো।
আয়ান -আচ্ছা ঠিক আছে আসেন। কিন্তু এখন না।আপনি সন্ধ্যার পরে আসেন।
তানিশা -ঠিক আছে মেনে নিলাম।
আয়ান তখন তানিশাদের বাড়িতে না গিয়ে নিজেদের বাড়ি গেলো।
রিয়া -কিরে ফিরাতে পারলি?
তানিশা -হুম পারছি।কিন্তু আমাকে সন্ধ্যার পরে যেতে বলেছে।
___বাহিরে থেকে আসার পর থেকে সব কাজ আয়ান নিজে হাতে করছে বাড়িটাকে সুন্দর করে সাজিয়েছে।আয়ানের মা ছেলে কাণ্ড দেখে দেখে হাসঁছে।তানিশাকে ফোন দিয়ে আয়ানের মা সব বললো।তানিশা কখন সন্ধ্যা হবে সেই অপেক্ষায় বসে আছে।আয়ান তানিশাকে সে আজ নতুন করে বরণ করে নিবে তার জীবনে।
সন্ধ্যার পরে আয়ানের বাবা, মা গিয়ে তানিশাকে নিয়ে এলো। বাড়ি এসে তানিশাতো অবাক হয়ে সব কিছু দেখছে।আয়ান নিজের হাতে এই সব কিছু সাজিয়েছে তার জন্য।তানিশা তার রুমে ঢুকতে যাবে এমন সময় পিছন থেকে মিতু এসে বললো
মিতু -ভাবী তুমি কোথায় যাচ্ছো?
তানিশা -কেন? আমার রুমে।
মিতু -এইভাবে তো তোমাকে যেতে দেওয়া যাবে না। তোমাকে বউ সাজিয়ে তারপর ভাইয়ার কাছে দিয়ে আসবো।
মিতুর কথা শুনে তানিশা লজ্জা পেয়ে পাগল নাকি।আমি বউ সাজতে পারবো না।
মিতু -আমাদের কি দোষ বলো ভাইয়াই তো বললো তোমাকে বউ সাজাতে।
তানিশা আয়ানের কথা শুনে আর না বলতে পারলো না।।
__তানিশা বউ সেজে আয়ানের জন্য বসে অপেক্ষা করছে। তানিশা দরজা খোলার শব্দ পেয়ে তাড়াতাড়ি ঘোমটা দিয়ে বসে পড়লো। আয়ান এসে দেখে তানিশা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।
আয়ান -আমি তোমাকে বউ সাজতে বলেছি ঘোমটা দিয়ে বসে থাকতে বলেনি।
তানিশা -,,,,,,
আয়ান -চুপ হয়ে আছো কেন? আমি জানি আমার উপর তোমার রাগ এখনো কমেনি।আমি তোমায় সত্যি বলছি আমি এখন তোমাকেই ভালোবাসি।তোমাকে ছাড়া আমার চারদিক অন্ধকার লাগে।তোমাকে ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারিনা।
তানিশা-,,,,,,,
আয়ান -আচ্ছা তুমি কি চুপ করেই থাকবে? ঠিক আছে তুমি চুপ করেই থাকো, আমি আমার কাজ করছি আয়ান কথাটা বলতে বলতে তানিশার ঘোমটা টা উঠিয়ে ভূত দেখার মতো এক চিৎকার দিলো।আ,,,আ,,,রে তোতলিয়ে আপনি এইখানে কি করছেন? আমার বউ কই?
তানিশা -একদম চুপ! কতো কিছুর পর আপনি থেকে তুমিতে নামালাম এখন আবার আপনি?তুমি পাইছোটা কি।?
আয়ান -আপনি কথা বলতে পারে? কিন্তু সকালে তো দেখলাম কথা বলতে পারেন না।
তানিশ-ন্যাকা ,,, নিজের বউকে যে চিনেনা সে আবার কথা বলতে আসছে।অনেক হয়েছে,
(তানিশা গলাটা নামিয়ে) প্লিজ আয়ান আজকে আর উল্টাপাল্টা কিছু করোনা।এইবার তো আমাকে মেনে নাও।
আয়ান তানিশার কথা শুনে তানিশাকে জড়িয়ে ধরে I am really sorry.
এতো দিন যদি আমার পাগলিটার দিকে একবার তাকাতাম তাহলে এতো কিছু আর হতো না।
তানিশা -হুম সব ঠিক আছে এইবার ছাড়ো।ওই মেয়েটার কাছে যাও।ভালোবাসো তো তাকেই।
আয়ান -ভালোবাসি তো এখনো তার কাছেই আছি।আর সারা জীবন তাকে ভালোবাসবো
আয়ানের কথা শুনে তানিশা হেঁসেই আয়ানের বুকে মুখ লুকালো।নতুন এক ভালোবাসার অধ্যায় শুরু হলো।
সমাপ্ত