এক শহর ভালোবাসা পর্ব-৪২+৪৩

0
3066

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৪২
#সুরাইয়া_নাজিফা

আজকের সকালটা একদম আলাদা অন্যদিনের চেয়ে অন্যরকম ছিল। আমার সব স্বপ্ন, আশা, ইচ্ছা, ভালোবাসা আর সাথে ভালোবাসার মানুষটা যা পূর্ণ হয়েছে। আজ আমার জীবনের একটা নতুন সকাল। এতো বাধা বিপত্তি পেরিয়ে শানের সাথে আমার সম্পর্কের আরেক ধাপ সামনে এগিয়ে যাওয়ার খুশি। শানের ভালোবাসায় আজ নিজেকে পরিপূর্ণ নারী বলে মনে হচ্ছে। আজ আর জীবনে কোনো অভাব নেই শানকে জীবনে পেয়ে আমি পরিপূর্ণ।

ঘুম ভাঙতেই শানের দুই শক্ত সবল বাহুর মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। মাথা হালকা উচু করে শানের দিকে তাকালাম কি সুন্দর আমার বরটা সাথে অসাধরণ ব্যক্তিত্ব। কখনো কি ভেবেছিলাম উনাকে নিজের ভালোবাসার কথা জানাতে পারবো না এটা ভেবেছিলাম যে উনি আমাকে কখনো এতটা ভালোবাসবে সারাদিন যে ঝগড়া করত ভাবতেই হাসি চলে এলো। একবার নিজের দিকে চোখ পড়তেই লজ্জায় কুকড়ে গেলাম। যাক ভালোই হয়েছে উনি ঘুমে নাহলে লজ্জায় তো আমি মরেই যেতাম। উনি উঠার আগে দ্রুত উঠে রেডি হয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

তারপর আমি আস্তে আস্তে উনার হাতটা সরিয়ে উঠে গেলাম। অনেকটা সময় লেগেছে উনার হাতের বাঁধন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে। আমি কাবার্ড থেকে নিজের একটা শাড়ী নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলাম। ফ্রেস হয়ে এসে দেখি শান এখনো ঘুমাচ্ছে। আমি আয়নার সামনে এসে চুলটা একটু ঝেড়ে নিলাম।

হঠাৎ বৃষ্টির মতো পানি এসে শানের চোখে মুখে পড়তেই শানের ঘুম ভেঙে গেল। চোখ খুলে পাশে তাকাতেই সোহাকে না দেখতে পেয়ে দ্রুত উঠে বসল। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে বামে তাকাতেই দেখল একটা মিষ্টি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে পিছন ফিরে। কি অপরূপা লাগছে এই নীল শাড়ীটাতে। একদম নীলপরী। শান আস্তে আস্তে সোহার দিকে এগিয়ে গেল।

হঠাৎ কেউ আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা ডিপ কিস করল আমি নিজের চোখ বন্ধ করে নিলাম। বুঝতে অসুবিধা হলো না এটা শান। আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,

“আপ আপনি ক কখন উ উঠলেন? ”
“মাত্রই উঠলাম একটা নীলপরীর ভেজা চুলের সৌরভ পেয়ে। ”

কথাটা বলেই উনি আমার চুলে নিজের মুখ ডুবালেন। আমি উনাকে একটু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজে ওনার থেকে খানিকটা দূরে সরে গেলাম।উনার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম।

নিচু কন্ঠে বললাম,
“এখন ছোবেন না আমায় আমি এইমাত্র ফ্রেস হয়ে এসেছি। ”
শান অবাক হয়ে বললো,
“সিরিয়াসলি ছোঁয়া যাবে না? ”
“তো আপনার কি মনে হয় মজা করছি আপনার সাথে? ”
“আমাকে ডাকো নি কেন?”
“আপনি ঘুমাচ্ছিলেন এজন্যই ডাকিনি। ”
শান আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,
“সারারাত আমার সাথে কাঁটিয়ে এখন একা একা গোসল করে এসেছো দিস ইজ নট ফেয়ার সুইটহার্ট। ”
আমি পিছাতে পিছাতে সরু চোখে তাকিয়ে বললাম,
“এখানে আবার ফেয়ার আনফেয়ারের কি আছে গোসল করতে কি দোকলা প্রয়োজন হয় নাকি। ”
শান নিজের ঠোঁট কামড়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
“লাগে তো আমার লাগে। আমাকে ফেলে গোসল করার শাস্তি তো তুমি পাবেই। ”

পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সঙ্গে পিঠ ঠেঁকে গেল আমার শান এসে আমার দুই পাশে হাত রাখল ।

আমি তুতলিয়ে বললাম,
“শ শা শাস্তি মানে?কিসের শাস্তি?”
উনি নিজের মাথাটা আমার দিকে এগিয়ে এনে বললো,
“ওমা দোষ করেছো আর শাস্তি পাবে না সেটা হয় নাকি। ”

উনি একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে উনার চোখের ভাষা অন্যকিছু বলছে আমাকে। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।উনি কিছু বুঝার আগেই হুট করে নিচে বসে উনার হাতের নিচ থেকে বেরিয়ে এলাম। আর দৌঁড়ে বেডের অন্যপাশে চলে গেলাম।

“আমি কোনো দোষ করিনি বুঝেছেন যে শাস্তি পাবো।”
“যে দোষ করে সে থুরি না কখনো স্বীকার করে সুইটহার্ট। এবার কথা না বাড়িয়ে দ্রুত আমার কাছে এসো। ”
“খেঁপেছেন আমি কি পাগল যে এখন আপনার কাছে আসবো। ”
শান রেগে বললো,
“সোহা কাম ক্লোজার টু মি নাহলে খুব খারাপ হবে। ”
আমি মুখ ভেঙিয়ে বললাম,
“এখন না পরে। ”

শান আমার দিকে আসতেই আমি অন্যপাশে চলে গেলাম। উনি রেগে আমার দিকে তাকালো আমি ফিক করে একটু হেসে দিলাম হঠাৎ কেন জানি উনাকে নাকে দঁড়ি দিয়ে ঘুরাতে বেশ মজাই লাগছে। উনি আবার এগিয়ে আসতেই আমি আবার সরে গেলাম,

শান গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“সোহা ওয়েট। ”
আমি মাথা নেড়ে বললাম,
“না। ”
“দাঁড়াও বলছি। ”
“বললাম তো না। ”

আমি হেসে সরে গেলাম। আমরা দুজনেই পুরো ঘর জুড়ে দৌঁড়াতে লাগলাম। আমি দৌঁড়ানোর মধ্যে এতটাই ব্যাস্ত ছিলাম যে শান কখন আমার পিছন থেকে সরে গেছে খেয়ালই করিনি। হঠাৎ দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে কারো উন্মুক্ত বুকের সাথে ধাক্কা খেলাম। মাথা তুলে উপরে তাকাতে দেখলাম শান দাঁড়িয়ে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। শান আমার কোমড় জড়িয়ে বললো,

“এবার পালাবে কই? ”
“আপনি না পিছনে ছিলেন সামনে এলেন কিভাবে?”
“এমন গাধার মতো আগে পিছে না দেখে দৌঁড়ালে বুঝবে কি করেন স্টুপিড একটা। ”
আমি কপাল কুচকে বললাম,
“ছাড়ুন আমাকে। ”
“আগেই বলেছিলাম আমি ধরলে খারাপ হবে এইবার তুমি দেখো তোমার সাথে কি কি হয়। ”

কথাটা বলেই উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমি হাত পা ছুড়তে লাগলাম। উনি আরো শক্ত করে ধরে রইলেন। নিজের কাজের জন্য এখন নিজের উপরেই রাগ লাগছে। ইচ্ছা করছে নিজের গালে নিজেই থাপ্পর মারি কয়েকটা কি দরকার ছিলো উনাকে রাগানোর এখন আমার কি হবে?


সকালের মিষ্টি রোদটা এসে স্মৃতির চোখে পড়তেই আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালো। পাশে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি ফুঁটে উঠলো ওর মুখে। আজ ওদের এতো বছরের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো একটা হালাল সম্পর্কে যার নাম আছে। যেটা আগে কখনো কাউকে বলতে পারতো না ভয়ে এখন সেটা সবাইকে বুক ফুলিয়ে বলতে পারবে। এখন আর আগের মতো লুকিয়ে দেখা বা কথা বলতে হবে না। মন যখন চাইবে তখনই দেখতে পারবে কথা বলতে পারবে তাও আবার পূর্ণ অধিকার নিয়ে। তবে আগের দিন গুলো খুব মিস করবে রাত জেগে কথা বলা, সবার চোখের আড়ালে লুকিয়ে দেখা করা, এক নজর দেখার জন্য ছটফট করা সেই অনুভুতি গুলোও অনেক সুন্দর ছিলো। স্মৃতি আরশের চুলের মধ্যে নিজের হাত বুলিয়ে দিলো। আরশ একটু নড়েচড়ে আবার স্মৃতির বুকে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

স্মৃতি কয়টা বাজে দেখার জন্য ঘড়ির দিকে তাকালো আর তাকিয়েই চোখ উপরে উঠার উপক্রম আটটা বিশ বাজে। সোহা বলেছিল আটটার মাঝে উঠে যেতে। এই বাড়ির সবাই সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে ব্রেকফাস্ট সারে। কথাটা মনে পড়তেই স্মৃতি কপালে হাত দিলো। সর্বনাশ নতুন বউ প্রথম দিনই লেইট হলে মানুষ কি বলবে। স্মৃতি আরশের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ব্যস্ত কন্ঠে বললো,

“ছাড় আমাকে আরশ। ”

আরশ কোনো রেসপন্স করল না। স্মৃতি আবারও ডাকলো আরশকে।

আরশ ঘুম ঘুম চোখে বললো,
“ওহ সকাল সকাল এমন করছো কেন ঘুমাতে দেও প্লিজ। ”
“হ্যাঁ তো তুমি ঘুমাও আমাকে ছাড়।”
আরশ মাথা তুলে বললো,
“আমি একা ঘুমাবো নাকি তুমিও ঘুমাবে আমার সাথে। ”
“আহা কি সুন্দর কথা তারপর কথা শুনলে তো আমি শুনবো তোমার কি তোমাকে তো আর কেউ কিছু বলবে না। ”
আরশ কপাল কুচকে বললো,
“কথা শুনবে কেন?”
স্মৃতি খানিকটা ছাড়া পেয়ে উঠে বসে বললো,
“কেন আবার কয়টা বাজে দেখেছো নতুন বউ প্রথম দিনই লেইট সোহা বলেছিল আটটার ভিতর উঠে সাড়ে আটটার মধ্যে নিচে থাকতে। ”
আরশ স্মৃতিকে টান দিয়ে আবার শুইয়ে দিলো আর নিজেও স্মৃতির পাশে আধশোয়া হয়ে বললো,
“তাই বুঝি তো সোহা তো আমাকেও একটা দায়িত্ব দিয়েছে কখনো তোমাকে চোখের আড়াল না করার আর খুব ভালোবাসার এখন সেই দায়িত্বে অবহেলা কি করে করি আমি বলোতো আমি তো পারবো না। ”

কথাটা বলেই আরশ স্মৃতির পুরো মুখে ভালোবাসার পরশ দিতে লাগলো।স্মৃতি একটু হাসলো আরশের পাগলামি দেখে নিজেও দুই হাতে আরশকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“প্লিজ আরশ ছাড় এতো পাগল হলে কবে তুমি?”
আরশ স্মৃতির কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেঁকিয়ে বললো,
“তোমার প্রেমে পাগল তো আগেই ছিলাম নতুন করে পাগল হওয়ার কি প্রয়োজন? ”
“আচ্ছা।”স্মৃতি হাসল

স্মৃতি একটু চুপ হয়ে গেলো। তারপর আবার বললো,
“আমি শুনেছি বিয়ের পর প্রেমিকরা অনেক পরিবর্তন হয়ে যায় তখন তারা স্বামী হয়ে যায় আগের মতো ভালোবাসাটা থাকে না তুমিও কি চেন্জ হয়ে যাবে আরশ? ”

আরশ ফ্যালফ্যাল চোখে স্মৃতির দিকে তাকালো তারপর হেসে বললো,
“তোমার কি মনে হয়? ”
স্মৃতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“আমার তো মনে হয় তুমি চেন্জ হবে। ”
“তাই? ”
স্মৃতি” হ্যাঁ সূচক “মাথা নাড়ালো।

আরশ স্মৃতির দিকে তাকিয়েই বললো,
“আসলে কি বলোতো বিয়ের আগে ছেলেদের জীবনটা একরকম থাকে আর বিয়ের পরে অন্যরকম। বিয়ের আগে শুধুই নিজের চিন্তা যেটা এতোটা প্রভাব ফেলে না মোটামোটি আড্ডা, মজা, ক্লাব, পার্টি এসব দিয়ে জীবনটা কাঁটলেই হলো এমন একটা মনোভাব।কোনো টেনশন থাকে না। কিন্তু বিয়ের পর জীবনটা যখন আরেকটা মানুষের সাথে জুড়ে যায়,তার ভালো থাকা খারাপ থাকার দায়িত্ব এসে পড়ে তখনই জীবনের আসল মানেটা বুঝা যায়। তখন সেই মানুষটা আমার সাথে যুক্ত থাকে তাই তার সবকিছুর দিকে খেয়াল রাখতে হয়। এতো এতো দায়িত্ব,কর্তব্য সংসারের চাপের মধ্যে মানুষের ব্যস্ততাটা বেড়ে যায় এটাই স্বাভাবিক। এজন্য একজন স্বামী আর প্রেমিকের মধ্যে পার্থক্য তো থাকবেই তাই না।”

আরশ একটু থেমে আবার বললো,
“আমাকেই দেখো তোমার সাথে দেখা হওয়ার আগেও বাউণ্ডুলে টাইপ ছিলাম। কখনো আমাদের বিজন্যাসের ব্যাপারে কিছুর খবরই রাখতাম না। সব বাবা আর ভাইয়ারা মিলে সামলাতো। বাবা এজন্য কতো বকা দিতো কিন্তু কখনো চেন্জ হয়নি। যখন তোমার সাথে দেখা হলো তোমাকে ভালোবাসলাম তোমাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখলাম তখনই নিজেকে আস্তে আস্তে গুছিয়ে নিতে লাগলাম কারণ কোনো বেকার ছেলের হাতে তো কেউ মেয়ে দেবে না। বাবাকে বলে বিজন্যাসের কাজে জয়েন দিলাম। কেন শুধু তোমার জন্য। এটা ছিল জীবনে প্রথম পরিবর্তন। এখন বিয়ে হয়ে গেছে চাপটা তো আরেকটু বাড়বে। এখন দুজন আছি কিছুদিন পর তিনজন হবো।তোমাকে ভালো রাখা আমাদের সন্তানদের একটু ভালো লাইফ দেওয়া সেই মতো প্রস্তুতি নিতে হলে তো আরো ব্যস্ত হয়েই পড়ব।কাজের প্রেসার বাড়বে। হয়তো তোমাকে আগের মতো ঘন্টার পর ঘন্টা সময় দিতে পারবো না বা যখন তখন চাইলেই হুট করে কোথাও বেরিয়ে যেতে পারবো না। কিন্তু দিনশেষে আমার পুরোটা সময় কিন্তু তোমারই থাকবে।আগের মতো প্রতিদিন না যাই সপ্তাহে বা মাসে একবার ঘুরে আসবো কোথাও গিয়ে মন খুলে। এটা তো তোমাকে মানিয়ে নিতেই হবে। এজন্য কখনো ভেবো না যে আমি চেন্জ হয়ে গেছি বা ভালোবাসা কমে গেছে কারণ তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কখনো কমবে না। আমি তোমার আছি আর সারাজীবন তোমারই থাকবো বুঝেছো। ”

স্মৃতি মুগ্ধ হয়ে আরশের কথা গুলো শুনলো। আগের আর এই আরশের মধ্যে কতো পার্থক্য। স্মৃতি আগে আরশকে সবসময় বলতো লাইফে একটু সিরিয়াস হও নাহলে জীবন চলবে কি করে। মজা করেই বলতো এমন খাপ ছাড়া জীবন যাপন করলে বাবা কিন্তু তোমার হাতে আমাকে দেবে না। তখন আরশ হেসে বলতো তুমি শুধু একবার আমার লাইফে চলে আসো দেখবে আমি কতটা সিরিয়াস হয়ে গেছি। আজ কথাগুলো খুব মনে পড়ছে। আসলেই মানুষ সত্যিই বলে ছেলেদের কখনো দায়িত্ববোধ শেখাতে হয়না তারা এমনিতেই দায়িত্ববান হয়।

স্মৃতি আরশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“বাবা সবেতোমাত্র আমাদের বিয়ে হলো আর তুমি বেবী পর্যন্ত চলে গেছো।”
আরশ হেসে বললো,
“অবশ্যই আমি তো ভাবছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুজন থেকে তিনজন হয়ে যাবো। ”
স্মৃতি চোখ বড় বড় করে বললো,
“এতো তাড়াতাড়ি?”
আরশ কপাল কুচকে বললো,
“কিসের তাড়াতাড়ি?তোমার পড়াশোনা কমপ্লিট আমার লাইফ স্যাটেল।কোনো পিছুটান নেই তাহলে বেবী সম্পর্কে ভাবাই যায়। এবার কি বুড়ো হয়ে তারপর বাচ্চা নেবো পরে বাচ্চারা বাবা না ডেকে অন্যকিছু ডাকবে আমি সেই রিস্ক নিতে পারবো না।

স্মৃতি লজ্জা পেয়ে আরশের বুকে মুখ লুকিয়ে হাসলো।অদ্ভুত কথা বলে এই আরশটাও মাঝেমাঝে এরপর আর কিছু বলারই থাকে না।

ওদের এই সুন্দর ভালোবাসার মধ্যে হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ হলো।স্মৃতি ভয় পেয়ে গেলো। এতক্ষন যেটা ভাবছিলো সেটাই হলো আরশ বিরক্ত হয়ে বললো,

“এই সকাল সকাল কে চলে এলো আমার রোমান্টিক মুডের বারোটা বাজাতে। ”

স্মৃতি ঠেলে আরশকে উঠিয়ে দিলো,
“দেখলে তো আমি বলেছিলাম দেরী হয়ে গেছে হয়তো কেউ ডাকতে এসেছে এখন কি করব আমি সব তোমার জন্য হয়েছে। ”

আরশ স্মৃতিকে শান্ত করে বললো,
“ওকে এতো হাইপার হওয়ার কিছু নেই। তুমি গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেও আমি দেখছি কে?”

স্মৃতি কোনোরকম উঠে দৌঁড়ে চলে গেল ওয়াশরুমের দিকে। আরশ রুমের সব কিছু ঠিকঠাক করে একটা শার্ট গায়ে দিয়ে এগিয়ে গেলো দরজার কাছে দরজা খুলতেই দেখতে পেলো ভূমিকা দাঁড়িয়ে।

আরশ চোখের ইশারা করে বললো,
“কি ব্যাপার সুন্দরী এতো জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছো কেন?”
“এই ফাজিল কে সুন্দরী হুম তোর সুন্দরী তোর রুমে আছে আর কখনো এইসব ভুলভাল নামে ডাকবি না। ”
“নো ওটা আমার এক নম্বর সুন্দরী তুমি আমার দুই নম্বর সুন্দরী তাই কাউকেই ছাড়তে পারবো না। ”
ভূমিকা রেগে বললো,
“এটা গিয়ে বলবো আমি স্মৃতিকে তারপর দেখ কি হাল হয় তোর। ”
“কিছুই হবে না এটা আমি স্মৃতিকে আগেই বলেছি। ”

ভূমিকা হাসল। আসলে ভূমিকা বিয়ে হয়ে এই বাড়িতে আসার পর থেকেই আরশ ওকে এই উদ্ভট নামেই ডাকে। বাড়ির সবার ছোট আর একটু দুষ্ট প্রকৃতির বলে কেউ কখনো কিছু বলেনি তবে ওদের সম্পর্কটা একদম বন্ধুর মতো।

ভূমিকা একটু অভিমান নিয়ে বললো,
“হুম শুধু নামেই বন্ধু বলিস তুই কিন্তু বন্ধু ভাবিস না ভাবলে এটলিস্ট স্মৃতির সাথে প্রেম করছিস সেটা আমাকে জানাতি।”

আরশ জিভ কেঁটে বললো,
“সর্বনাশ এটা তোমাকে কে বললো?সোহা বুঝি?”

ভূমিকা মুখ ভেঙিয়ে বললো,
“বলতে হবে কেন? আমি সব খবর রাখি। ”

“হুম বুঝলাম । একদিন আমার দুই ভাবী মিলেই আমাকে মারবে। ”

ভূমিকা একটু বিরক্ত হয়ে বললো,
“ধ্যাত ফালতু কথা রেখে নিচে আয় জলদি। ”

আরশ মন খারাপ করে বললো,
“সুন্দরী এভাবে সকাল সকাল আমাকে ডিসটার্ভ না করলে চলছিলো না তোমার। আরেকটু পরে নিচে গেলে কি হবে? ”

ভূমিকা ভ্রু কুচকে বললো,
“এটা সকাল? প্রায় নয়টা বেজে যাচ্ছে। নিচে সবাই তোদের জন্য অপেক্ষা করছে।আর বলে সকাল। দ্রুত ফ্রেস হয়ে নিচে আয়। ”

কথাটা বলে ভূমিকা নিচে চলে গেল।শানদের আর বিরক্ত করেনি কারণ সোহা যেহেতু এই বাড়ি সম্পর্কে সব জানে তাই ঠিক সময়েই নিচে চলে আসবে সে। ভূমিকা যেতেই আরশ দরজা আটকে নিচে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকলো।


ওয়াসরুম থেকে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলাম আর মনে মনে শানকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে লাগলাম। এতো করে বারণ করলাম কিন্তু কথাই শুনলো না। ফালতু লোক আবার গোসল করিয়েছে আমাকে। এতো রাগ লাগছে বলার বাহিরে।

শান স্লো ভয়েসে বললো,
“রাগ হচ্ছে?”
আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। শান আমার গালে উনার একহাত দিয়ে স্লাইড করে বললো,
“এতো রাগ করার কি আমিই তো ছিলাম। ”

আমি উনার হাতটা গাল থেকে সরিয়ে রেগে চুল মুছতে লাগলাম।

শান হেসে বললো,
“সুইটহার্ট এভাবে কে চুল মুছে? সব চুল উঠে যাবে তো। ”
আমি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
“আপনার কি তাতে?”
শান আমার নাক টেনে বললো,
“আমারই তো সব কারণ তোমার এই চুল গুলো আমার খুব প্রিয়।আমাকে মাতাল করতে যথেষ্ঠ এই চুলগুলো যার ফলে আমি বারবার হারিয়ে যাই তোমার মাঝে।”

আমি কটমট চোখে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম,
“অসভ্য লোক একটা।”
শান আমাকে টেনে জড়িয়ে ধরে বললো,
“এখন অসভ্যতামি করব না তো কখন করব এখনই তো সময় সুইটহার্ট। ”

বলেই ঠোঁটে ছোট্ট একটা ভালোবাসার পরশ দিলো আমি উনাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিলাম,
“একদম দূরে থাকেন সুযোগ পেলেই শুরু হয়ে যায় অদ্ভুত লোক একটা। ”
“এমন সুন্দরী বউ কারো হলে কে দূরে থাকতে চাইবে?”

আমি অন্যদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। তারপর আবার গাল ফুলিয়ে বললাম,
“উফ কতটা লেইট হয়ে গেছে নিচে গেলে সবাই কি বলবে। ”
“কি বলবে কালকে আমাদের ফার্স্ট নাইট ছিল লেইট হতেই পারে সেটা কি মানুষ বুঝে না। ”
“হুম সবাই আপনার মতো বেহায়া না। সরুন যাবো আমি।”

কথাটা বলেই আমি উনাকে পাশ কাঁটিয়ে!যেতে নেবো তখনই শান আমার হাত ধরে আবার আটকে দিলো।

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
“আবার কি হলো?”
“বিয়ের পর থেকে একটা জিনিসই বুঝি আসছি তাও মাথায় যায় না এই অবস্থায় নিচে যাবে তুমি?”

আমি নিজের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললাম,
“কি অবস্থায়? ”

উনি আমাকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে বললেন,
“লুক তোমার শাড়ীর কি অবস্থা চুলের পানিতে ভিজে একাকার। নিজের শরীর অন্যকে দেখানোর তো কোনো প্রয়োজন নেই। দেখাতে হলে আমার সামনেই থাকো এভাবে আমি মন ভরে দেখি। ”

“ছি কখনো তো নিজের মুখটা কন্ট্রোলে রাখেন যা মুখে আসে বলাটা জরুরী নয়। ”

“আগে তুমি তোমার চলাফেরায় কন্ট্রোল আনো পরে আমারও মুখে কন্ট্রোল চলে আসবে। ”

তারপর শান আমাকে বসিয়ে চুল গুলো মুছে দিলো ভালো করো। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শাড়ী চেন্জ করার জন্য উঠে দাঁড়ালাম। আরেকটা শাড়ী নিয়ে চেন্জ করার উদ্দেশ্যে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই শান আবারও আটকে দিলো,

“কোথায় যাচ্ছো। ”
“চোখে দেখতে পান না আপনি শাড়ী চেন্জ করতে যাচ্ছি। ”
“তো ওয়াশরুমে যাওয়ার কি প্রয়োজন এখানে করো। ”
আমার চোখ স্বাভাবিকের তুলনায় বড় করে বললাম,
“মানে?”
“মানে এখানেই চেন্জ করো। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“আপনার সামনে?”
শান স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
“হুম।”
আমি মাথানিচু করে বললাম,
“মাথা খারাপ পারবো না আমি। ”
শান আমার মুখটা এক আঙ্গুল দিয়ে উপরে তুলে বললো,
“সিরিয়াসলি লজ্জা পাচ্ছো তুমি? এতকিছুর পরেও এতো লজ্জা আসে কিভাবে?”

আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম।
“ওয়েট তোমার বাকি যেটুকু লজ্জা আছে সেটাও ভেঙে দিচ্ছি এখনি। ”
আমি তুতলিয়ে বললাম,
“ম মা মানে?”
“এখনই দেখতে পাবে। ”

কথাটা বলেই উনি আমার শাড়ীর আঁচলে হাত দিতেই আমি নিজের চোখ বন্ধ করে নিলাম।


আমি আর শান নিচে নেমে এলাম।ড্রয়িংরুমে সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো। আমরা গিয়ে সবাইকে সালাম করলাম।

আমি মা কে বললাম,
“ব্রেকফাস্ট তৈরী করা শেষ? ”
মা বললো,
“হুম ভূমিকা আর আমি মিলে করে দিয়েছি। ”
আমি মন খারাপ করে বললাম,
“স্যরি। ”
মা হেসে বললো,
“কোনো ব্যাপার না এক কাজ কর তুই আর স্মৃতি মিলে মিষ্টি কিছু একটা বানিয়ে দে। যেহেতু স্মৃতির আজকে প্রথম দিন এই বাড়িতে। ”

আমি “হ্যাঁ সূচক”মাথা নাড়িয়ে বললাম,
“ওকে। ”

তারপর আপুকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলাম ভাবলাম ক্ষীর বানিয়ে দেই। আপুকে বললাম সবকিছু এগিয়ে দিতে। আমি রান্না শুরু করলাম। আপু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

“তুই তো রান্নার “র” ও জানতিস না এখন এসব করছিস কি করে?”

“আগে জানতাম না এখন পারি সব। ”

“আর কত অবাক হবো বলতো এই পিচ্ছি মেয়েটা এমন পাক্কা রাঁধুনি হয়ে গেলো।এভাবে সংসার সামলাচ্ছে। ভাবতেই পারছি না। জাস্ট বিয়ের কয়েকমাসে এতো চেন্জ? ”

আমি কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসলাম। তারপর রান্না শেষ করে আমাদের ডিশটা টেবিলে সাজিয়ে দিলাম। সবাইকে বসিয়ে দিয়ে আমি, আপু আর ভূমিকা আপু সবাইকে সার্ভ করে দিচ্ছিলাম।

হঠাৎ মা বলে উঠলো,
“আজ জীবনের সব আশা পূরণ হলো। আমার সংসারের সব শূন্য স্থান গুলো পূরণ হলো। তিন ছেলের বউকে দেখে নিলাম।এবার সব তাদের হাতে তুলে দিয়ে এখন থেকে এই সংসারের ঝামেলা থেকে আমি মুক্ত। ”

মা উঠে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালো তারপর আমাদের তিনজনের হাত একত্র করে মায়ের আঁচল থেকে খুলে একটা চাবি আমাদের হাতে তুলে দিল। আমরা তিনজন একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলাম।

মা বললো,
“আজ থেকে আমার এই সংসারের দায়িত্ব তোদের। আশা করি তোরা আমার এই সংসারকে আমার মতোই বুকে আগলে রাখবি।আমি জানি যোগ্য মানুষদের হাতেই তুলে দিচ্ছি সবকিছু। ”

আমি একটু ইতস্তত করে বললাম,
“না মা এটা আপনিই রাখুন আপনার আঁচলেই ভালো মানায়। ”
ভূমিকা আপু আর স্মৃতি আপুও আমার কথায় সায় দিলো।

মা বললো,
“উহুম আমি আর কয়দিন এরপর তো সবকিছু তোদেরই সামলাতে হবে তাই এখন থেকে সব বুঝে নেওয়া ভালো। ”

মায়ের এমন কথা শুনে আমরা তিনজনই মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
“এসব কি বলছো মা। তুমি সবসময় আমাদের সাথেই থাকবে আমাদের মাথার উপর ছায়া হয়ে। আর কখনো এমন কথা বলবে না তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে। ”

মা হেসে আমাদের তিনজনের কপালেই চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরল। কতো সুন্দর একটা দৃশ্য উপস্থিত সবার চোখে পানি চলে এলো। শান নিজের মোবাইলে এই সুন্দর মূহূর্তের কিছু দৃশ্য আবদ্ধ করে নিলো। কারণ জীবনের একসময়ে গিয়ে এইসব পুরোনো স্মৃতিগুলোই অনেক অমূল্য হবে।যা অনেক সুন্দর মুহূর্তের কথা আমাদের মনে করাবে।বেঁচে থাকার অবলম্বন হবে।
.
.
চলবে

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৪৩
#সুরাইয়া_নাজিফা

শান বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আর আমি শানের কোলের উপর মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলাম। শান আমার মাথা হাত বুলিয়ে দিচ্ছে যার ফলে আমার ঘুম চলে আসছিলো।

আমি উঠে বসলাম,
“ধ্যাত ভালো লাগছে না। ”
“কি হলো?”
“কেউ আমার মাথা হাত বুলিয়ে দিলে আমার ঘুম চলে আসে। ”
শান হাসল,
“নিজেই বললে হাত বুলিয়ে দিতে এখন নিজেই বলো ঘুম আসছে পড়া চোর একটা। ”
আমি কপাল কুচকে বললাম,
“মোটেও না। ”
“ওকে আজকের মতো ঘুমিয়ে পড়ো এমনিতেও অনেক রাত হয়ে গেছে। ”

শানের কথা শুনে আমি খুশি হয়ে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে গেলাম। তারপর টেবিলের উপর বই রেখে আবার বিছানায় এসে বসলাম। পাশে রাখা জগ থেকে এক গ্লাস পানি খেয়ে তারপর শানকে বললাম,

“পানি খাবেন? ”
“দেও। ”

শানকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলাম। শানের খাওয়া হলে গ্লাসটা পাশে রেখে তারপর
সুয়ে পড়লাম। শান আমাকে একহাতে জড়িয়ে ধরলেন আমি শানের বুকে মাথা দিলাম। শান সবসময়ের মতো আমার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। হঠাৎ আমার ছোট্ট মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরঘুর করতে লাগল।তাই আমি শানের বুক থেকে একটু মাথা তুলে শানের দিকে তাকিয়ে বললাম,

“আচ্ছা আপনি যদি বিয়ের আগেই আমাকে ভালোবাসতেন তাহলে প্রথমবার প্রথম রাতে ঐরকম ব্যবহার করলেন কেন?”

আমার প্রশ্ন শুনে শান মাথায় হাত বুলানো বাদ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“হঠাৎ এই প্রশ্ন?”

“অনেকদিন থেকেই জিজ্ঞেস করব ভাবছিলাম কিন্তু এতো কিছুর মধ্যে কখনো জিজ্ঞেস করাই হয়নি তাই। ”
“ওহ। ”

শান চুপ হয়ে গেল
“কি ব্যাপার শুধু ওহ বলে চুপ হয়ে গেলেন যেটা জিজ্ঞেস করলাম বলুন? ”
“হলুদের রাত থেকেই আমি তোমার উপর প্রচন্ড রেগে ছিলাম তাই ফুলসজ্জার রাতে ঐ রকম ব্যবহার করেছিলাম। ”

শানের কথা শুনে আমি উঠে বসে বললাম,
“রেগে ছিলেন কেন?”

শানও উঠে বসে মুখ ফুলিয়ে বললো,
“কেন আবার তুমি কাজকর্মই এমন করো যে সেসব চোখের সামনে দেখলে মানুষ রাগতে বাধ্য হবে।”

আমি গালে হাত রেখে ভাবার অভিনয় করে বললাম,
“আমি আবার কি করেছিলাম? ”

“কেন মনে নেই হলুদের রাতে কোন ছেলের হাতে হাত রেখে বসে বসে গল্প করছিলে বাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে। এখন কোনো মানুষ যদি তার ভালোবাসার মানুষকে এভাবে অন্য কারো হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাহলে নিশ্চয়ই তার খুশি হওয়ার কথা নয়? ”

উনার কথা শুনে আমি আবার তিন -চার মাস পিছনে গিয়ে মনে করার চেষ্টা করলাম যে উনি কি বলছেন। কার সাথে ছিলাম তাও হলুদের রাতে?কিছুক্ষন ভাবনার পর হঠাৎ মনে পড়তেই আমার প্রচন্ড হাসি পেয়ে গেল আমি কিছুতেই নিজের হাসি আটকাতে না পেরে খিলখিলিয়ে হেসে দিলাম। আমাকে এভাবে হাসতে দেখে শান ভ্রু কুচকে বললো,

“রাত বারোটা বাজে পাগল হয়ে গেছ নাকি?”

আমি হাসতে হাসতে বললাম,
“না তবে আপনার কথা শুনে নির্ঘাত পাগল হয়ে যাবো। ”

“কেন আমি পাগল হওয়ার মতো কি বললাম?”

“আচ্ছা আপনি কি সেই ছেলেটার মুখ দেখেছিলেন?”

“না। মুখ দেখলে ঐ ছেলের কপালে অনেক দুঃখ ছিল ভাগ্যিস দেখিনি পিছন ফিরে ছিল। ”

“বাই এনি চান্স তাহলে ঐ ছেলেটাকেই কি আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড ভেবেছিলেন?”

“এখন ওতো রাতে বিয়ের কনে অনুষ্ঠানের মাঝে না থেকে যদি বাড়ির বাহিরে কোনো ছেলের সাথে থাকে তাহলে তো মানুষ নিশ্চয় তাদের ভাইবোন ভাববে না। ”

“এই আমাদের সমাজের সবার না একই সমস্যা কোনো একটা ছেলে মেয়েকে একসাথে দেখলো কি দেখলো না এরমধ্যে মনগড়া একটা সম্পর্ক জুড়ে দিয়ে পুরো বাড়ি রটিয়ে বেড়ায়। আর বলে মেয়েটা খারাপ। অথচ একবারও এটা ভাবে না যে ছেলেমেয়ে গুলো সত্যিই ভাইবোন হতে পারে অথবা তাদের মধ্যে কোনো বন্ধুত্বপৃূর্ণ সম্পর্কও থাকতে পারে?যেগুলো আমাদের যোগ্যতা দিয়ে অর্জন করে নিতে হয়। সবাই পারে না।”

শান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
“মানে?”

আমি মুচকি হেসে বললাম,
“মানে আপনি যাকে দেখেছিলেন সেটা সৃজন ছিল।”

শান অবাক হয়ে বললো,
“হোয়াট?”

“জ্বী। সৃজনকে আমি একটা মোটা দড়ি আনতে বলেছিলাম যেটা দিয়ে আমার রুম থেকে ফেললে নিচ পর্যন্ত নাগাল পাওয়া যায়। আমি জানতাম আপু বাবাকে বলতে পারবে না আর আরশ ভাইয়াকেও আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয় তাই পালিয়ে যাওয়াই শ্রেয় তাই প্লান’ বি ‘ছিল এটা আমার।আর সৃজন সেদিন হলুূদের অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে দড়িটা যোগার করে সেটা দেওয়ার জন্যই বাড়ির বাহিরে অপেক্ষা করছিলো ওত রাতে। কারণ সবার সামনে তো সেটা দেওয়া সম্ভব নয়। ”

আমার কথা শুনে এবার শানও ঘর কাঁপিয়ে হাসতে লাগল। শান হেসে নিজের একহাত কপালে ঠেঁকিয়ে বললো,

“সিরিয়াসলি আর আমি সেদিন তোমাদের দুজনকে দেখে এসে এত পরিমাণ রেগে ছিলাম যে সেদিন রাতে বাবা একটা কাজ করতে পাঠিয়েছিলেন সেটা পর্যন্ত কমপ্লিট করিনি। বাসায় এসে সবার সাথে খুবই খারাপ ব্যবহার করেছিলাম সাথে নিজের রুমে সব ভেঙে চুরে চুরমার অবস্থা করেছি।এতটাই রেগে ছিলাম তোমার উপর। কেন তুমি আমার ভালোবাসাটা বুঝতে পারলেনা? আমার শুধু মনে হচ্ছিল আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলছি সেদিন যদি আরশ না পালাতো তাহলে হয়তো আমি বিয়ের আসরেই সবার সামনে বলে বসতাম আমি তোমাকেই বিয়ে করতে চাই। বিয়ের পর ভেবেছিলাম তোমাকে অন্যকারো সাথে জড়ানোর শাস্তি দেবো বাট আফসোস তোমার ঐ মুখটা যতবার দেখেছি ততবারই দূর্বল হয়ে পড়েছি। আমার মনে হয়নি কখনো যে তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারো আমাকে ছাড়া।কারণ তোমার জন্ম শুধু আমার জন্য। যার কারণে ঐ প্রথম দিনের পর আর সম্ভব হয়নি খারাপ ব্যবহার করার। ”

আমি “দ” স্টাইলে বসে দুইহাত হাটুতে রেখে চোখ ছোট ছোট করে শানকে প্রশ্ন করলাম,
“বাই দ্যা ওয়ে মনে করেন সেদিন আপনার ভুল ছিল বাট যদি এমন কখনো হয় আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না বা অন্যকারো প্রেমে পড়ি তখন? ”

কথাটা বলতেই এতক্ষনে শানের হাসিখুশি মুখটা এক মুহূর্তে আধারে ঢেকে গেল। উনি রেগে আমার হাত ধরে টেনে আমাকে বিছানায় শুয়ে হাত দুটো বিছানায় চেপে ধরলেন। নিমিষেই আমার হাসিটা মিলিয়ে গেল।

“এত শখ কেনো এখনো অন্য ছেলের। তোমাকে বলেছিলাম না একদিন এমন কথা না বলতে। তুমি চাইলেও আমার সাথে থাকবে আর না চাইলেও। তারপরেও অন্য ছেলের কথা মাথায় আসে কি করে। আজ তোমার এমন হাল করব যে দ্বিতীয়বার আমি ছাড়া অন্যকোনো ছেলের কথা মাথায়ও আসবে না। ”

হঠাৎ উনাকে এতো রাগতে দেখে আমি ভিত কন্ঠে বললাম,
“স্যরি আমি তো মজা করছিলা…..।”

উনি আমার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে আমাকে চুপ করিয়ে দিলেন আর আমার গলায় নিজের মুখ ডুবিয়ে দিলেন।


৪ বছর পর,

“আরিশ বাবা দাঁড়া উফ এভাবে দৌঁড়াতে পারবো না আমি। ”
“ধলো পারলে আমালে ধলো। ”

এভাবে আধো আধো কন্ঠে বলে চলেছে আর দৌঁড়ে চলেছে আরিশ। আর আমিও আরিশের পিছনে ছুটে চলেছি ওকে ধরার উদ্দেশ্যে। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে হঠাৎ পা পিছলে পড়তে নেবে তখনই আমি গিয়ে ওকে ধরে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। আরিশও ভয় পেয়ে গেছে ও আমার গলা জড়িয়ে ধরল। কিছুক্ষন পর আমি ওকে আমার চোখের সামনে দাঁড় করিয়ে রেগে বললাম,

“এখনি কি হতো পড়ে দাঁত মুখ ভেঙে যেত তারপর নিজেও বকা শুনতি আমাকেও শুনাতি বললাম দাঁড়া এভাবে কেউ দৌঁড়ায়? ”

আরিশ ঠোঁট ফুলিয়ে মন খারাপ করে বললো,
“থলি(স্যরি)। ”

ওর এই আধো আধো বুলিতে স্যরি শুনে আর মুখ দেখে চোখের পলকেই আমার রাগ গলে জল হয়ে গেল আর আমি হেসে দিলাম।

আরিশ মাথা তু্লে বললো,
“তুমি লাত (রাগ) তরোনিতো(করোনিতো?”
আমি ওকে কোলে তুলে বললাম,
“এমন একটা গোলুমোলু মিষ্টির দোকানের সাথে কেউ রাগ করে থাকতে পারে তবে যদি সে আমাকে একটা ভালোবাসার পরশ দেয় তাহলে আমার রাগটা পুরোপুরি ভেঙে যাবে। ”

কথাটা বলতেই আরিশ আমার গালে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দিলো তারপর নিজেও আমাকে তার গালের দিকে ইশারা করতেই আমিও ওর গালে একটা আদর দিলাম।

তখনই স্মৃতি আপু পিছনে এসে বললো,
“কি এতো ফিসফিস হচ্ছে দুই চাঁচি আর ভাতিজা মিলে হুম। ”

আপুর কথা শুনে আমি পিছনে ফিরে তাকালাম আর দুজনের মুখেই একটা হাসি ফুটে উঠল। হ্যাঁ আরিশ স্মৃতি আপু আর আরশ ভাইয়ার ছেলে। ভাইয়ার নামের সাথে মিল রেখে আরিশের নামকরণ করা হয়েছে । আরিশের বয়স এখন আড়াই বছর । দেখতে একদম নিজের বাবা মায়ের কার্বন কপি মাশাআল্লাহ । এতো মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে যেন সারাদিন হা করে তাকিয়েই থাকতে মন চায়।

দেখতে দেখতে চারবছর কেঁটে গেছে। সময় কতো দ্রুত চলে যায়। এই চার বছরে সবার জীবনেই নতুনত্বের ছোঁয়া এসেছে।আপুর কোল জুড়ে আরিশ এলো। একমাস হলো আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স কম্প্লিট করেছি। অনার্স কম্প্লিট হওয়ার পর কথা মতো আমরা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা শিফট করি আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে এডমিশন নেই। এখন সবাই আমরা একই সাথে একই বাড়িতে থাকি। সারাদিন আমরা তিন ঝাঁ মিলে হাসি মজা মাস্তিতেই দিনটা কেঁটে যায়। ইদানীং মায়ের শরীরটা ভালো নেই তাই তিনি আমাদের আড্ডায় অংশ নিতে পারে না তবে মা থাকলে তিনিই পুরো আড্ডা জমিয়ে দেয়। তারউপর এখন তো আরিশের সাথেই খুনশুটিতে সময় চলে যায়।

ঐশী আর তিমির ভাইয়া তিনবছর আগেই অষ্ট্রেলিয়ায় শিফট হয়ে গেছে। ওদের বিজন্যাসও ওখানেই শিফট করে নিয়েছে। ঐশীর এখানে থাকলে পুরনো স্মৃতি গুলো মনে পড়ে কষ্ট হয় তাই চলে গেছে শানের চোখের আড়ালে। ওদেরও একটা মেয়ে হয়েছে তৃমিশা। মেয়ে নিয়ে বেশ ভালোই আছে।

শান, আরশ ভাইয়া, সাম্য ভাইয়া সবাই আগের থেকে অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাবা বিজন্যাস থেকে পুরোপুরি ছুটি নিয়ে নিয়েছে যার কারণে সব দায়িত্ব এসে পড়েছে ওদের উপর। হয়তো আগের মতো এতো সময় দিতে পারে না তবে আমাদের ভালোবাসা একবিন্দুও কমেনি।সাথে শানের কেয়ার তো যেন বেড়েই চলেছে। অফিসে থাকলেও যখনই সময় পায় ফোন দিয়ে আমার খবর নেয় পারলে তো প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় কল দেয়।এজন্য ফোন সবসময়ই নিজের কাছেই রাখতে হয়। শান আগেও যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে একটুকুও চেন্জ হয়নি। শুনেছি সময়ের সাথে নাকি ভালোবাসাও কমতে থাকে কিন্তু আমার মনে হয় এখন আগের থেকে আরো বেশীই ভালোবাসে শান আমায় এতটা চোখে হারায়।

আমাদের পুষ্পও অনেক বড় হয়ে গেছে এখন নয় বছরের হয়ে গেছে সে আর আগের থেকে অনেক পাঁকা বুড়িও। রোজ রোজ নতুন কাহিনী করে স্কুল থেকে ফিরে আর খুব উৎসাহ নিয়ে এসে সেসব আমাকে শুনায় আর না শুনতে চাইলেও জোর করে শুনাবেই সে। এভাবেই সবার জীবন একদম খুশিতে পরিপূর্ণ হয়ে বিন্দাস চলছে।

আমি আপুর কাছে গিয়ে বললাম,
“রান্না শেষ? ”
“হুম অলমোস্ট শেষ বাকিটা রহিমা আন্টি দেখে নিবে। তা কি ফিসফিস চলছিল দুজনে মিলে বললি না কিন্তু।”
আমি আর আরিশ দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট ভঙ্গিতে বললাম,
“কি হবে কিছু না। তাই তো আরিশ সোনা। ”

আরিশ আমার কথায় সায় দিয়ে দুই তিনবার জোরে জোরে মাথা ঝাঁকালো। আপু গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“মিথ্যে বলে লাভ নেই আমি কিন্তু সব দেখেছি? ”

আমি আর আরিশ একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে মাথানিচু করে নিলাম। আপু আরিশকে আমার কাছে থেকে নিয়ে বললো,
“কতবার বারণ করেছি না এসব দুষ্টমি না করতে কথা শোনো না কেন তুমি?এখন যদি পরে হাত পা ভাঙে তারপর আর কেউ মেয়ে দেবে?”

আরিশ মুখ উঁচু করে আধো আধো কন্ঠে বললো,
“দিবে। মেত(মেঝ) মণির মেয়েতে(মেয়েকে)দিবে আমি ওতেই(ওকেই)বিয়ে তলব(করব)। ”

আপু দুই গালে হাত দিয়ে মুখটা ইংরেজি “ও” বর্ণের মতো করে বললো,
“সর্বনাশ যার আসার এখনও খবর নাই তাকে বিয়ে করার জন্য আগে থেকেই লাইন দিয়ে ফেলেছিস তুই। ”

আরিশ কি বুঝল জানি না ও শুধু হাসল ওর হাসি দেখে আমরা দুজনেই হেসে দিলাম। তারপর আমরা দুজনেই আরিশকে নিয়ে কিছুক্ষন মজা করলাম।

তখনই আপু বললো,
“ভূমিকা আপু এখনও আসেনি পুষ্পকে নিয়ে?”
“না। ”
“এতো লেইট যে আজ?”

কথাটা বলতে না বলতেই পুষ্প দৌঁড়ে এসে আরিশকে জড়িয়ে ধরল পুষ্পকে দেখে আরিশও অনেক খুশি হয়ে গেল। হয়তো দুজনেই কাজিন তবে পুষ্প আরিশকে এতটা ভালোবাসে যে মনেই হয় না এরা কাজিন। পুষ্প বাসায় থাকলে আরিশের আর কাউকে প্রয়োজন হয়না সারাদিন পুষ্পর সাথে খেলাধুলা, খুনসুটিতেই কেঁটে যায়। ভূমিকা আপু এসে সোফায় বসল।

“বাবা এই মেয়ে ছোট বেলা থেকই আমাকে একের পর এক পেইন দিচ্ছে কখনো শান্তিতে থাকতেই পারেনা এতটা বড় হয়েছে তারপরও ওর জন্য কমপ্লেইন শুনতে শুনতে শেষ আমি। ”

আমি বললাম,
“কেন কি করল আবার পুষ্প?”

“কি করেনি তাই বলো ওদের স্কুলের একটা ফুলের বাগান আছে সেখানে লেখা ছিল ফুল ছিড়লে পাঁচশত টাকা জরিমানা। এরপরেও সেই মেয়ে ওখান থেকে ফুল ছিঁড়ে নিয়েছে। আর ওকে যখন ডাকা হলো কি বললো শুনবে ‘ওখানে কোথাও তো লিখা ছিল না ফুল ছিঁড়া মানা শুধু বলেছে জরিমানা। তো আমার বাবার অনেক টাকা আছে সেখানে পাঁচশত কেন একহাজার দিতেও আপত্তি নেই তাই আমার যেই ফুল ভালো লাগবে আমি সেটাই ছিঁড়ব’ এজন্যই স্কুলে আমাকে ডেকে পাঠিয়ে ছিল। ”

ভূমিকা আপু কথা শুনে আমি আর স্মৃতি আপু হেসে দিলাম।স্মৃতি আপু বললো,
” ঠিকই তো আছে ওখানে লিখতে হতো তো ফুল ছিঁড়া মানা ওরই বা কি দোষ। ”

“না স্মৃতি তুমি আর ওকে তাল দিও না এমনিতেই পুরো বিগড়ে গেছে মেয়ে আরও লাই দিলে মাথা উঠে যাবে। ”

ওদের কথা শুনে আমি পুষ্পকে কাছে ডেকে বললাম,
“সোনা তোমাকে বলেছিলাম না স্কুলে গিয়ে দুষ্টমি না করতে তারপরেও করেছো কেন?”

“দুষ্টমি করিনি শুধু ফুল নিয়েছি। ”

“উহুম সেটাও অন্যায়। দেখো তোমার যেই প্রিয় টেডিটা আছে ওটাকে তো তুমি অনেক ভালোবাসো কাউকে ধরতে দেও না এখন কেউ যদি সেটা ক্ষমতার জোরে তোমার অনুমতি ছাড়া ধরে তাহলে তোমার কেমন লাগবে?”

পুষ্প মন খারাপ করে বললো,
“অনেক খারাপ লাগবে।”

আমি মুচকি হেসে বললাম,
“তেমনি ওদেরও খারাপ লেগেছে যখন তারা বারণ করার পরেও তাদের অনুমতি ছাড়া ফুলটা ছিঁড়েছো। দেখো সোনা টাকাটা বড় না বড় হচ্ছে মানুষের সেই জিনিসটার প্রতি ভালোবাসা, টান, অনুভুতি সেখানে আঘাত করা কি অন্যায় নয়? ”

পুষ্প হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। আমি আবারও বললাম,
“এইবার দেখো তোমার ওই টেডিটার যদি একটা চোখ, বা নাক তুলে নেওয়া হয় তাহলে কি ওই টেডিটার আর সৌন্দর্য থাকে? ”

“না। ”

“তেমনি ফুল গাছে থাকলেই দেখতে সবথেকে বেশী সুন্দর লাগে ছিঁড়ে ফেললে তারসহ পুরো গাছটারই সৌন্দর্য নষ্ট হয়।তাকে আর কোথাও মানায় না। বুঝলে তাই এরপর থেকে আর এমনটা করবে না কেমন?”

“ওকে মিষ্টি। ”

“গুড গার্ল এবার গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেও যাও। ”

পুষ্প চলে গেল সাথে করে আরিশকেও নিয়ে গেল। স্মৃতি আপু বললো,
“তোর মতো পুষ্পকে আর কেউ বুঝাতে পারে না।এতো সুন্দর করে বুঝাস যে বুঝতে বাধ্য ”

ভূমিকা আপু মন খারাপ করে বসে আছে আমি উনাকে শান্তনা দিয়ে বললাম,
“ব্যাপার না আস্তে আস্তে বয়সের সাথে ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করো না। ”

ভূমিকা আপু গম্ভীর কন্ঠেই বললো,
“আর ঠিক হবে এই মেয়ে বড় হলে একদম স্বৈরাচারী হবে দেখো সবাই। ”

আপু ভূমিকা আপুর মন ভালো করতে হঠাৎ বলে উঠলো জানো তো আরিশ কি বলেছে একটু আগে। তারপর আপু সব কিছু খুলে বললো। ভূমিকা আপু কথাটা শুনে মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে হাসার উপক্রম।

তারপর আমাকে বললো,
“দেখেছো তোমার মেয়ে এখনও পৃথিবীতে আসেইনি তার আগেই বর রেডি এবার তো মেয়েকে পৃথিবীতে আনা প্রয়োজন কোনো প্লান করেছো? ”

আমি একটু লজ্জা পেয়ে হেসে বললাম,
“এখনো আমার স্ট্যাডি কমপ্লিট হয়নি তাই কোনো প্লান করিনি। ”

ভূমিকা আপু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“আর কবে প্লান করবে কে জানে বিয়ের চারবছর হয়ে যাচ্ছে। স্মৃতিকে দেখে কিছু শেখো তোমাদের কত পরে বিয়ে করেও ওর বাচ্চার বয়স আড়াই বছর আর তোমরা কি করছো লজ্জা থাকা উচিত। ”

ভূমিকা আপুর কথা শুনে আমি লজ্জা পেলাম।আপু তো এমন ভাবে আমাকে বলছে যেন সব দোষ আমার একার এখন নিজের মুখে বাচ্চার কথা শানকেই বা কিভবে বলব যদি সে কিছু না বলে? তখনই পুষ্প উপর থেকে চিল্লিয়ে বললো,

“মিষ্টি তোমার ফোন বাজছে হয়তো শান ফোন করেছে।”

আমি কোনো কথা না বলে উঠে দাঁড়ালাম উপরে যাওয়ার জন্য । হঠাৎ উঠে দাঁড়াতেই আমার মাথাটা কেমন ঘুড়ে উঠলো। আমি মাথায় হাত দিয়ে পরে যেতে নিতেই আপুরা ধরে ফেললো।

স্মৃতি আপু বললো,
“কি রে কি হয়েছে তোর? ”
ভূমিকা আপু বললো,
“ঠিক আছো? ”
আমি একটু বসে দুইমিনিট চোখ বন্ধ করে রইলাম তারপর দুজনকে শান্ত করার জন্য বললাম,
“ঠিক আছি সম্ভবত এতক্ষন বসে ছিলাম তাই এমন হয়েছে তোমরা বসো আমি আসছি। ”

কথাটা বলেই আমি আস্তে আস্তে উপরের দিকে পা বাড়ালাম। এখন এদের কি করে বলবো ইদানীং এমন মাঝে মাঝেই হচ্ছে বললে শুধু শুধু টেনশন করবে।


রাত আটটা বাজে শান ফিরে আসে।কয়েকদিন ধরে উনার আসতে এমনই লেইট হয়।হয়তো কাজের চাপ বেশী। প্রতিদিনের মতো শান আসার পরই আমি উনার কোট, টাই সব খুলে দিলাম।

শান আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“কেমন কাঁটলো আজ সারাদিন? ”

“এইতো প্রতিদনের মতো কেঁটে যাচ্ছে। আপনার কাজকর্ম কেমন চলছে? ”

“ভালোই একটা প্রজেক্ট নিয়ে কিছুদিন এতো বিজি আছি যে তোমাকে ঠিক মতো সময়ই দিতে পারছি না। তুমি রাগ করছো না তো?”

আমি হেসে বললাম,
“একদমই না। কেন রাগ করব এতো কাজের মাঝেও আপনি আপনার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন। আমার এতো যত্ন করছেন তারপরও কেন রাগ করব? ”

শান আমার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো,
“আমাকে বুঝার জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা আমার মিষ্টি বউটা। ”
“আচ্ছা আপনি গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসুন আমি কফি নিয়ে আসছি। ”

তারপর আমি গিয়ে উনার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসলাম। শান ফ্রেস হয়ে সোফায় এসে বসল আমি উনার দিকে কফি বাড়িয়ে দিতেই শান কফিটা হাতে নিয়ে আমাকে টেনে উনার সামনে বসিয়ে দিলো।

আমার একগালে হাত দিয়ে বললো,
“কি হয়েছে তোমার কিছুদিন ধরে তোমাকে একটু উইক দেখাচ্ছে? শরীর খারাপ নাকি?”

কি বলবো বুঝতেছি না। কিছুদিন ধরেই এমন দূর্বল দূর্বল লাগছে। মাথা ঘুরানো, ঘাড় ব্যাথা, মাঝে মাঝে তো খেতেও পারিনা তেমন একটা। কিন্তু এখন এটা বললেই শুরু হয়ে যাবে শানের বকা ঝকা তাই চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করলাম।

আমি একটু হেসে বললাম,
“কিছু হয়নি ঠিক আছি। ”

“শিউর?কিছু লুকাচ্ছো না তো? ”

আমি একটু ভিত কন্ঠে বললাম,
“না।”
.
.
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে