#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_১৯
#সুরাইয়া_নাজিফা
আমি আর শান মাথানিচু করে বসে আমাদের সামনে শ্বাশুড়ী মা রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। হঠাৎ উনি আমার হাত ধরে টেনে তুলে দিলেন শানের পাশ থেকে আর আমাকে উদ্দেশ্যে করে বললেন,
“চল আজকে থেকে তুই আমার সাথে থাকবি। এই ছেলেটার সাথে আর থাকার দরকার নেই। ”
শ্বাশুড়ী মায়ের কথা শুনে আমি পুরো হতভম্ভ হয়ে গেলাম। মানে ঠিক শুনলাম তো কানে।এই খারুচের সাথে আর থাকতে হবে না। শানের মনে হলো ও আসমান থেকে সোজা জমিনে পড়ল। নিজের মাথা উচু করে আশ্চর্য হয়ে চোখ বড় বড় করে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোমার সাথে থাকবে মানে?”
শ্বাশুড়ী মা কটমট করে তাকিয়ে বললো,
“তাহলে কি তোর সাথে থাকবে? ”
শান বিরবির করে বললো,
“আমার সাথেই তো থাকার কথা। ”
“কেন? যাতে এভাবেই মেয়েটাকে আবার মারতে পারিস এজন্য থাকবে?”
শান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আমার এতো খুশি লাগছিলো। মনে মনে বলছিলাম বকো মা ভালো করে বকা দেও। ফাজিল লোক আমার এতো সুন্দর গালটা একদম লাল করে দিয়েছে।ব্যাথা করছে এতো। কতো শক্তি গায়ে। আমার গালটা এখনও পর্যন্ত জ্বলছে।
শান গোমড়া মুখে বললো,
“ভুল হয়ে গেছে মা। এইজন্য আমি ওকে স্যরি বলেছি। তুমি তো জানো আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারি না তাই…।”
শানের কথা শেষ হওয়ার আগেই শ্বাশুড়ী মা তেঁতে বলে উঠলেন,
“তাই ওর ওপরে তোমার রাগ ঝেড়েছো। এটা বলতে চাও। লজ্জা করেনা শান। আমরা তোমাকে এই শিক্ষা দিয়েছিলাম।নিজের বউয়ের গায়ে কি করে হাত তুলেছো তুমি এতো সাহস পাও কিভাবে। কখনো দেখেছো আমাদের পরিবারের কেউ নিজের বউয়ের গায়ে হাত তুলতে। আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না।তুমি তো জানো সোহা একটা বাচ্চা মেয়ে। যদি ও কোনো ভুল করে তোমার উচিত ছিল বুঝাপড়ার মাধ্যমে বিষয়টা সমাধান করে নেওয়া।ওকে ঠিক ভুলের পার্থক্য বুঝানো নাকি এভাবে মারপিট করা। তুমি তো যথেষ্ঠ ম্যাচিউর শান।এটলিষ্ট আমরা সবাই তো তাই জানতাম। এটা কেমন ম্যাচিউরিটি হলো। আরশ পালিয়ে যাওয়ার পর সোহাকে যখন তোমার হাতে তুলে দিয়েছিলাম তখন আমাদের সবার গর্ব হতো যে একজন ঠিক মানুষের হাতে সোহাকে তুলে দিয়েছি।সোহা তোমার সাথে ভালো থাকবে। এটা কি ভালো থাকার নমুনা? তুমি তো আমাদের সবার ধারণাকে মিথ্যা করে দিলে।”
আমার নিজেরও এখন অনেক খারাপ লাগছে। আমার নিজেরও তো দোষ ছিল তাই তো উনি এমন একটা কাজ করেছে তাহলে বকা উনি একা খাবে কেন? মাকে আমি শান, আরশ আর সাম্য ভাইয়াদের কখনো তুমি বলতে শুনিনি। এখন যখন বলছে নিশ্চয়ই অনেক রেগে আছে। মাকে দেখলেই বুঝা যায় শান এতো রাগ মায়ের থেকেই পেয়েছে এমন হুটহাট রেগে যাওয়া। এই এতো ভালো আর এই এতো রাগি।শান চুপচাপ শুনে যাচ্ছে। একটা কথারও প্রতিবাদ করছে না। বললেই তো হয় আমি ওনার সাথে কি করেছি।
উনি কিছু বলছে না দেখে আমি মাকে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
“থাক না মা দোষ শুধু ওনার একার না আমারও আছে। ”
মা আমার দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,
“হুম দোষ আছে তো। তোর দোষটাই বেশী। কেন তুই আমাকে বলিসনি শান তোকে মেরেছে আবার চুপচাপ ঘরে বসে ছিলি।নিজের স্বামীর দোষের উপর পর্দা দিচ্ছিলি। কে বলেছে তোকে এতো উদার মনের হতে। আমাকে কি তোর নিজের মা মনে হয় না। তাহলে কেন নিজের সুবিধা অসুবিধার কথা বলিস না। ”
আমি কান্না মাখা কন্ঠে বললাম,
“এভাবে বলছো কেন মা। তুমিই তো আমার মা।আমিতো…।”
আমার পুরা কথা শেষ হওয়ার আগেই মা বললো,
“আর একটা কথাও বলবি না তুই।ছেলেরা কি ভাবে ওরা বিয়ে করে নিয়েছে বলে কি মেয়েদের নিজেদের স্বাধীনতাও তারা নিয়ে নিয়েছে। যখন তখন গায়ে হাত তোলার পারমিশন পেয়ে গেছে। আজকে এর একটা হেস্তনেস্ত আমি করেই ছাড়ব। ”
তখন কান্না করতে করতে আমার গলার স্বর বসে গেছে। ঠিক ভাবে কথাও বলতে পারছিনা। তাই আমি আর কথা না বলে মায়ের কথা গুলোই শুনে গেলাম। শান এভার মুখ ফুটে বললো,
“স্যরি বলছি তো মা। ভুল হয়ে গেছে।আর হবে না। ”
“ভুল যখন হয়েছে ভুলের মাশুলও তো তোমাকে দিতে হবে। তাই আজ থেকে সোহা আমার সাথে থাকবে।তুৃমি সোহাকে ডিজার্ভ করো না। চল সোহা আমার সাথে। ”
কথাটা বলেই মা আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। তখনই শান পিছন থেকে অসহায় ভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“মা শোনো না আমার কথা। ”
মা পিছনে ফিরে বললো,
“একদম চুপ। সবকথা শেষ আর কোনো কথা নেই। ”
মা আবারও আমাকে নিয়ে চললো। আমার খুব ইচ্ছা হলো একবার শানের মুখটা দেখতে। তাই ঘাড়টা একটু ঘুরিয়ে দেখলাম শান মুখ গোমড়া করে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। উনাকে দেখে কেন জানি আমার এতো হাসি পাচ্ছে। আহারে বেঁচারা দেখে মনে হচ্ছে বিধবা হয়ে গেছে। স্যরি ছেলেদের তো বিধবা বলে না বিপত্নীক। ভাবতেই আমার পেট ফেঁটে হাসি আসছে।
★
★
★
আমি বিছানার উপর বসে আছি আর মা আমার গালে বরফ ঘসে দিচ্ছে। থাপ্পরটা খুব ভালো ভাবেই পড়েছে গালে। গালের একপাশটা ফুলে গেছে। মা গালে কিছুক্ষন বরফ ঘসে দিয়ে বললো,
“এখনও ব্যাথা করছে? ”
আমি মাথা নেড়ে বললাম,
“না ঠিক আছে। ”
মা আমার গালে হাত বুলিয়ে বললো,
“ইশ গালটা কতটা ফুলে গেছে।চিন্তা করিস না কমে যাবে ব্যাথা কিছুক্ষন পর। আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না শান এমনটা করেছে। ”
আমি এবার ভয়ে ভয়ে বললাম,
“মা একটা কথা বলি? রাগ করবে না তো? ”
“বল না কি বলবি। ”
“আসলে দোষটা আমারই প্রথম ছিল। ”
তারপর আমি মাকে সবটা খুলে বললাম। কথাগুলো বলে আমি মাথানিচু করে ফেললাম। না জানি এরপর মা কি বলবে। যদি আমাকেও বকে। এতো ভয় লাগছিলো। তখনই খিলখিল করে হাসির শব্দ শুনে আমি পুরো বিষ্মিত হয়ে গেলাম। আমি মাথা তুলে তাকাতেই দেখালাম মা হাসছে। আমি ফ্যালফ্যাল করে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। মা হাসি থামিয়ে বললো,
“তোদের নিয়ে আর পারিনা।হাসতে হাসতে পেট ফেঁটে যাওয়ার উপক্রম। একদম যা করেছিস খুব ভালো করেছিস।শানও তো সেম কাজ করেছে তোর সাথে। তবে একটা কথা এরপর থেকে অফিসে যাওয়ার সময় এমনটা করিস না। বাসায় থাকলে ইচ্ছামতো পিছনে লাগবি বুঝলিতো। ”
মায়ের কথা শুনে আমিও হেসে দিলাম। হায় আমার শ্বাশুড়ী মায়ের দিকে কারো নজর না লাগে। এমন শ্বাশুড়ী থাকলে জীবন তো পুরাই ফুরফুরা হয়ে যাবে। মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমিও হাসলাম তারপর হাসি থামিয়ে বললাম,
“না আর উনার পিছনে লাগবো না। অনেক শিক্ষা হয়ে গেছে আমার।”
মা বললো,
“এজন্যই তো শানকেও একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার। কয়েকদিন এখানেই থাক।ছেলেরা চাইলেই হাতের কাছে সব পয়ে যায় তো তাই মেয়েদের কদর করতে জানে না। এবার বুঝবে বউ ছাড়া ঘর কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। ”
রাতে আর নিচে গিয়ে খাইনি। রহিমা আন্টি ঘরেই আমার খাবার দিয়ে গেছিল। মায়ের কড়া আদেশ যেন শানের সামনে না যাই। শান একটু ছটফট করুক আমাকে না দেখে।তাই খেয়ে শুয়ে পড়লাম বিছানার একপাশে আর মা অন্যপাশে।
শান বিছানায় শুয়ে আছে। যখন শুয়েছিল তখন রাত দশটা আর এখন একটা বেজে গেছে অদ্ভুত এখনো ঘুম আসছে না। শুধু এপাশ ওপাশ করছে। বিছানার ওইপাশে তাকালেই মনটা আনচান আনচান করছে। অন্যদিন চোখ খুললেই সোহার মুখটা দেখতে পেতো। ঘুমন্ত মুখ কি স্নিগ্ধ লাগতো। প্রতিদিন রাতে সোহা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর অনেকটা সময় নিয়ে শান সোহাকে দেখে তারপর ঘুমায়। হয়তো সম্পর্কটা এতো গভীর ছিলনা কিন্তু প্রিয় মানুষটাকে সবসময় চোখের সামনে দেখলেও মনে শান্তি লাগে।কিন্তু আজকে সেই শান্তিটাই মনে পাচ্ছে মা যে চোখটা বুজবে। বিছানার ওইপাশটাও কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। প্রতিদিনের মতো যেমন কোলবালিশ দেওয়া থাকে আজও তেমন ভাবেই কোলবালিশ দিয়ে একপাশে সুয়েছে শান।
“উফ আগে যদি জানতাম একটা থাপ্পর মারার কারণে নিজের বউয়ের থেকেই দূরে থাকতে হবে তাহলে এই থাপ্পরটা হয়তো আমি নিজেই নিজের গালে মারতাম। এভাবে কি করে থাকবো সোহাকে ছাড়া। ”
শান বেশ বুঝতে পারল আজকে আর ঘুমাতে পারবেনা তাই উঠে বসল।একনজর সোহাকে দেখতেই হবে।
শান রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ল।ঘুটিঘুটি পায়ে পৌঁছেও গেল রুমের দরজার কাছে। দরজাটা হালকা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল। রুমের মধ্যে আবছা আলোতে শান স্পষ্ট দেখতে পেল সোহাকে।কি শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত অবস্থায়ও আবছা আলোতে ভয়ংকর সুন্দর লাগছে।ঘুমের মাঝেও ঠোঁটের কিনারে এক চিলতে হাসি লেগে আছে। শানের কেন জানি খুব হিংসা হলো। ওখানে ও ঘুমাতে পারছে না আর এখানে উনি তো খুব মজাতেই ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ শানের খেয়াল হলো বিছানার এককোনে এলোমেলো ভাবে শুয়ে আছে সোহা ।একবার ঘুরলেই সোজা বিছানা থেকে পড়ে যাবে। শান ভাবল ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে আসবে। ভেবেই এক পা বাড়াতেই পিছন থেকে কেউ শানের কাঁধে হাত রাখল। শান পিছনে ঘুরেই চমকে গেল। খানিকটা তুতলিয়ে বললো,
“ম মা তুমি?ঘুমাওনি?”
“কেন বাবা তুমি দেখতে পাওনি বুঝি আমি সোহার পাশে নেই। চোখটা শুধু একদিকে স্থির না রেখে চারপাশে ঘুরালেই তো বুঝতে পারতে।
মায়ের কথা শুনে শান লজ্জায় পড়ে গেল। মাথানিচু করে বললো,
” না মানে…।
মায়মুনা চোখের ইশারা করে বললো,
“কি মানে মানে করছো বাবা। এতরাতে এখানে কি চাই?”
হঠাৎ প্রশ্ন করাতে শান থতমত খেয়ে গেল কি বলবে বুঝতেছে না হঠাৎ মুখ ফসকে বলে দিলো,
“ঐ জগিং করতে এসেছিলাম। ”
কথাটা বলেই শান নিজেই নিজের জিভ কেঁটে কপালে হাত দিলো সর্বনাশ। একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
“মানে ঘুম আসছিলো না তাই হাঁটছিলাম। ”
মায়মুনা কিছুটা টোন কেঁটেই বললো,
“ওহ জগিং আজকাল মানুষ রাত একটা বাজেও করে জানতাম না তো। তা জগিং হাঁটাহাঁটি সব শেষ? ”
শান ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও মাথা নেড়ে বললো,
“হুম। ”
মায়মুনা খানিকটা হেসে বললো,
“তাহলে এইবার গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। ”
কথাটা বলতেই শান রুমের ভিতর পা বাড়ালো। শানের মা চিৎকার করে বললো,
“কি ওদিকে কই যাচ্ছো বাপ আমার?”
শান একদম ইনোসেন্ট একটা লুক নিয়ে বললো,
“তুমি তো বললে ঘুমাতে যেতে তাই যাচ্ছি। ”
মায়মুনা সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“তোমার রুমে ঘুমাতে যেতে বলেছি। এটা কি তোমার রুম?”
শান হাসার চেষ্টা করে বললো,
“এটা আমার রুম না তাই না। ভুলে গেছিলাম। ”
মায়মুনা দুইহাত বুকে ভাজ করে বেঁধে বললে,
“হুম আজকাল সবকিছুই ভুলে যাচ্ছো। যাও এবার নিজের রুমে গিয়ে ঘুমাও। ”
শান অসহায় ভাবে বললো,
“ঘুম আসেনা তো।”
“ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। ”
শান নিজের মনেই বললো,
“ঘুমের ঔষুধ তো এখানে রেখে যাচ্ছি ঘুম আসবে কেমনে। ”
তারপরও মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিল সাথে মায়মুনাও। যদিও যেতে ইচ্ছা করছে না তাও চুপচাপ চলে গেল। শান যেতেই ছেলের এসব কান্ড মনে করে মায়মুনা খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।
★
★
★
সকালে আজকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম। কারণ আমাকে ভার্সিটিতে যেতে হবে। দশটায় ক্লাস আছে। তাই আড়মোড়া ভেঙে বিছানা থেকে উঠে বসলাম।হঠাৎ রুমের দিকে চোখ যেতেই আমার চোখ পুরা ছানা বড়া হয়ে গেল।অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম সবদিকে। এসব কে করেছে?
আমি দ্রুত মাকে ডেকে তুললাম,
“মা ও মা দেখোনা পুরো ঘরের কি অবস্থা। ”
আমার ডাক শুনে মা ধরফরিয়ে উঠে বসল,
“কি হয়েছে। সকাল সকাল চেঁচাচ্ছিস কেন?”
আমি মাকে চোখের ইশারায় বললাম ঘরের দিকে তাকাতে। আমার চোখ অনুসরন করে মাও পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে থ মেরে বসে রইল।উনি একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আর একবার রুমের দিকে ওনাকে দেখেও মনে হচ্ছে উনিও আমার মতো শকড হয়ে গেছে। না হওয়ার কি আছে পুরো ঘরের ভিতরে রঙিন কাগজে বিভিন্ন কালারের রং দিয়ে লিখা,
“স্যরি ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো হবে না। এইবার তো মাফ করে দেও। ”
সেটাও আবার পুরো রুমের দেওয়ালে দেওয়ালে লাগিয়ে রেখেছে। বিছানার উপরে আমাদের কোলের মধ্যে মাথার পাশে অনেক গুলো টেডিবিয়ার যার মধ্যেও লিখা,
“স্যরি মাফ করে দেও প্লিজ ”
শুধু তাই নয় মেঝেতেও রং আর জরি দিয়ে বড় করে লিখা “দুঃখিত”
আর তারপাশেই শান হাটু গেড়ে দুই কানে হাত দিয়ে কাচুমাচু মুখ করে বসে।
আমি দুই তিনবার চোখ ডলে তারপর আবার তাকালাম। আমার কেন জানি বিশ্বাসই হচ্ছে না। আমার মনে হচ্ছে আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এসব স্বপ্ন দেখছি। সকাল সকাল এতো বড় সারপ্রাইজ যেন হজমই করতে পারছি না। আমি মাকে বললাম,
“মা এসব কি সব সত্যি নাকি আমি ভুল দেখছি। ”
মাও আমার মতো অবাক হয়ে বললো,
“তাই তো দেখছি রে। ”
তখনই শান অসহায় ভাবে বলে উঠলো,
“প্লিজ লেডিসরা বাংলা ইংলিশ দুইভাবেই মাফ চেয়ে নিয়েছি এইবার তো মাফ করে দেও। ”
শানের কথা শুনে আমার এতো হাসি পেলো কিন্তু আমি নিজের হাসি আটকে চুপচাপ বসে রইলাম।
মা আমাকে বললো,
“চল তো সোহা আমাদের অনেক কাজ আছে। এবাবে বসে থাকলে হবে না।তুই তো আবার ভার্সিটিতেও যাবি যা যা রেডি হয়ে নে। ”
আমিও মায়ের কথায় সায় দিয়ে বললাম,
“হুম মা ঠিক বলেছো। কারো মতো আমাদের তো আর এক্সট্রা সময় নাই যে বসে বসে ডং দেখবো।”
আমি আর মা শানের পাশ কাঁটিয়ে চলে আসলাম। যেন আমরা শানকে দেখতেই পাইনি। শান আমাদের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। রুমের বাহিরে এসে আমি আর মা হেসে দিলাম। মা বললো,
“ভালো জব্দ হয়েছে। আরেকটু নাচাতে হবে। এতো তাড়াতাড়ি গলা যাবে না বুঝলিতো। দেখি তোকে পাওয়ার জন্য আর কি কি করে। ”
তারপর ফ্রেস হয়ে নিলাম।আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিলাম না গালে এখন আর থাপ্পরের দাগটা দেখা যাচ্ছেনা। আর বরফ দেওয়ার কারণে ফোলাটাও কমে গেছে। মা রুম থেকে আমার জন্য একটা জামা এনে দিলো কিন্তু আমাকে যেতে দেয় নি। মা তো পুরো কোমড় বেঁধে নেমেছে। এমন করে হয়তো উনাকে আমিও শাস্তি দিতে পারতাম না। আমার প্রচুর মজা লাগছে এসব দেখে। ভার্সিটিতে যাবো তাই একেবারে রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে এলাম।আজকে দেখালাম শান আমাদের আগে এসে বসে আছে। আমরা দেখেও না দেখার মতো করে টেবিলে বসে পড়লাম। একটা কথাও বললাম না শানের সাথে। তবে বেচারার মুখ দেখে আমার বড্ড মায়া লাগছিলো। একরাতের মধ্যে মুখ চোখ শুকিয়ে একাকার অবস্থা। মনে হচ্ছে সারারাত না ঘুমিয়েই কাঁটিয়েছে।আমি উনার থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। মা আর আমি টেবিলে বসে প্লেট উল্টাতে সেখানে খেয়াল করলাম প্লেটের মাঝেও “স্যরি” লিখা। কালকে থেকে আজকে পর্যন্ত শানের এতোটা যত্ন, আমার এতো কদর করা দেখে আমার ইচ্ছা হচ্ছিল না ওনাকে এমন করে ছটফট করাতে বাট মায়ের উপর কিছু বলতেও পারবো না। আমি মায়ের দিকে তাকাতেই মা মুখ টিপে খানিকটা হাসল যেন শান না দেখে। তারপর বললো,
“রহিমা এখানে নতুন প্লেট নিয়ে আয়। আজকাল খাবারের প্লেটটাকেও মানুষ নিজের ফাইল মনে করে আঁকাআঁকি করে। ”
মায়ের কথা শুনে শান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো এতো কিছু করছে তারপরও এদের মন গলাতে পারছে না।এতো কঠিন কেন মেয়েদের মন। আর কি করলে যে এরা স্বাভাবিক হবে আল্লাহ জানে।
রহিমা আন্টি আবার নতুন প্লেট এনে দিলো। আমি মা আর আমার প্লেটে খাবার বেড়ে দিলাম। শানের প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে যাবো তখনই মা আমার হাত ধরে বললো,
“তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। তোর যেতে হবে যারটা পারলে সে বেড়ে খাবে নাহলে খাওয়ার দরকার নেই। ”
কথাটা শুনে আমি বাটিটা নিচে রেখে দিলাম। শান যে কষ্ট পেয়েছে সেটা উনার মুখ দেখেই আমি বেশ বুঝতে পারছি। শানের প্লেটে রহিমা আন্টি খাবার বেড়ে দিলেন। শান প্লেটে খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলো কিন্তু একটুও মুখে তোলেনি। একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি প্লেটের মধ্যে হাত ঘুরাচ্ছিলাম আর আড়চোখে উনাকেই দেখছিলাম কেন জানি আমারও খেতে মন চাইছে না। হঠাৎ আমার পায়ের উপর কারো পায়ের ছোঁয়া পেতেই আমি আতকে উঠলাম। শানের দিকে তাকাতেই দেখালাম শান ঠোঁটের ইশারায় “স্যরি” বলছে। আমি আমার পা সরিয়ে আবার নিচের দিকে তাকালাম। কিছুক্ষন পর আবার শান নিজের পা দিয়ে আমার পায়ে শুরশুরি দিলো।আমি নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরলাম। বারবার উনার স্পর্শে আমি শিউরে উঠছিলাম। তাই পা টা সরিয়ে নিলাম। আমি জানি উনি আবারও একই কাজ করবে তাই আমি আস্তে আস্তে আমার পা গুলো উপরে তুলে নিলাম।
মাত্র একটু রুটি ছিড়ে মুখে দিলাম তখনই মা চিৎকার করে উঠল,
“পায়ের মধ্যে এমন বিরবির করে কিসে? ”
মায়ের কথা শুনে আর বুঝতে বাকি রইল না যে এটা শানেরই কাজ। আমি মুখ চেপে হাহা করে হেসে দিলাম আর হাসতে হাসতে বললাম,
“মা তোমার টেবিলের নিচে মস্ত বড় একটা বিড়াল হানা দিয়েছে এখানে আর বসা সেফ না যেকোনো সময় আছড়ে দিতে পারে। ”
মা আমার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি আরো জোরে জোরে হেসে দিলাম। শান আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু তারপরও আমার হাসি থামাতে পারলাম না। শান রাগ করে উঠে চলে গেল খাবার টেবিল থেকে। এরপর আমি ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বের হবো কিন্তু শানকে আর দেখিনি। মা রফিক আঙ্কেলকেই বললো আমাকে স্টেশন অব্দি ছেড়ে দিতে। আমিও উনার সাথেই চলে গেলাম।
ক্লাস শেষ করে ডিপার্টমেন্টের বাহিরে আসতেই হঠাৎ কেউ একজন আমাকে পিছন থেকে বলে উঠল,
“সোহা। ”
ডাকটা শুনে পিছনে তাকাতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। এই মাথাব্যথা এখানে কি করে।
.
.
চলবে