#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৫
নিলয় রাতে হোস্টেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে একা একা ধুমপান করেই চলেছে। তখন সাগর রুমের ভেতর থেকে এসে নিলয়ের পিঠে একটা চাঁপড় দিয়ে বলে,
–তোরে ছ্যাকাখোরদের মতো লাগতেছে কেন? তুই দেখি দুই প্যাকেট সিগরেট শেষ করে ফেলেছিস!
নিলয় নিজের কন্ঠে এক মিথ্যা রাগের আবরণ এনে বলে,
–ওই রাত্রির পেছোনে এতোগুলো মাস ওয়েস্ট করা টোটালি টাইম ওয়েস্ট! মাইয়া পুরা ব্যাকডেটেট। এক সপ্তাহ যোগাযোগ করি নাই তারপরেও সে রু*মডে*টে যেতে নারাজ। বারবার কয় তারে বিয়ে করতে। এর এতো ন্যাকামি সহ্য করা এখন আমার সহ্যসীমার বাইরে। আমি কিন্তু আর যাচ্ছি না ওর পিছে। আজ একেবারে ব্রেকআপ করে আসছি। মাইয়ারে বারবার বলার পরেও যখন রাজী হয় নাই তাই ব্রেকআপের কথা বলাতে সেও ব্রেকআপের জন্য রাজী হয়ে গেছে। আবার বলছে, আমারে সে ভালো ভাবছিল আর আমি নাকি খারাপ বের হইছি। সে বুঝে নাই তোর ফ্রেন্ড হয়ে আমি ভালো কেমনে হবো! আরও কতো হেনতেন। এবার তুই আমারে আর ওর পিছে যাইতে বলবি না। আমার তো প্রচুর রাগ লাগতেছে। অন্য উপায় বের কর নয়তো সব বাদ দে। প্রতিবার নাকানিচোবানি খেয়ে আমি টায়ার্ড। শুধু শুধু এসব করা।
সাগর এতোক্ষণ নিলয়ের কথা চুপচাপ শুনলো। নিলয় কথাগুলো বলে ভাবছে সাগর বিশ্বাস করল কীনা! সাগরের মুখে বিরক্তি ও রাগের আভাস। সাগরকে চুপ থাকতে দেখে নিলয় আবারও বলে,
–যতোটা ইমোশোনাল ফুল ভাবছিলি সে ততোটাও না। যেসব মাইয়া সেচ্ছায় এসবে রাজী হয় যেমন সামিরা! রাত্রি ওমন টাইপের না।
সাগর নিলয়ের সাথে হুট করে কোলাকোলি করে খোশ মেজাজে বলে,
–সামিরা! যাহ ওই রাত্রির টপিক বাদ। এখন সামিরাকে কাজে লাগাব। সামিরা তো মারসাদকে পছন্দও করে। সামিরাকে ফুসলালে সামিরা ঠিক আমাদের কথা মত নাচবে।
নিলয় নিজের টপিকটা টলে যাওয়াতে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে। নিলয় জিজ্ঞেস করে,
–সামিরাকে দিয়েই প্রথম থেকে যা করার করাতি! মাঝখানে আমারে শুধু শুধু রাত্রির সাথে টাইম ওয়েস্ট করতে পাঠালি।
সাগর নিলয়ের কাঁধে হাত রেখে বলে,
–তোর আগে কোনো রিলেশন ছিল না তাই ভাবছিলাম রাত্রি মাইয়াটা পটে যাবে। তারপর ইমোশোনাল ব্ল্যা*কমেইল করবি। যাক বাদ সব। এখন সামিরাকে কাজে লাগাব। আর এমপি রুহুল আমিন তো আছেই।
নিলয় বলে,
–শোন, আমি এখন থেকে বাড়িতে থাকব। ছোটোবোনকে পড়াতে বলছে আম্মু। ছোটোবোন খালি পড়ায় ফাঁকি দেয়। সপ্তাহে দুই দিন হোস্টেলে থাকব আর বাকিদিন বাড়িতে। সামনে ওর এইচএসসির প্রিটেস্ট আর সে ফার্স্ট টার্মে একাউন্টিংয়ে ও ইংরেজিতে ফেল করছে। এখন ওর সব প্রাইভেট আম্মু বাদ দিয়ে একটা রাখবে আর আমাকে ওকে পড়াতে বলছে। আম্মু যা বলছে শুনতেই হবে। আম্মু যা রাগী জানোসই তো!
সাগর বাধা দেয় না। সাগর সামিরার নাম্বারে ডায়াল করতে করতে হোস্টেলের বারান্দার অন্য দিকে যেতে থাকে। নিলয় হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। নিলয় আপন মনে আউরায়,
“যাক সাগর সন্দেহ করেনি। এখন থেকে ভার্সিটির এড়িয়াতে রাত্রির সাথে দেখা-সাক্ষাত কম করতে হবে। আছে আর এক বছর। তারপর আমি মাস্টার্স এখান থেকে কোনোমতেই করব না। এখান থেকে যেতে পারলেই বাঁচি।”
________
আজ পূর্বের ভিপি আশিক ভার্সিটি থেকে বিদায় নিবে। আশিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের তাই ওদের মাস্টার্স না করলেও ভালো জব পাওয়া যায়। মাস্টার্স ইচ্ছে হলে করবে না ইচ্ছে হলে না। তবে ফ্যাকাল্টি হিসেবে জয়েন করতে মাস্টার্স করা লাগবে। মারসাদরা ও সাগররা সবাই আশিককে বিদায় জানাতে এসেছে। মৌমি গতকাল রাত থেকে মন খারাপ করে রেখেছে। আশিক রাজশাহীতে ভালো একটা কম্পানিতে জব পেয়েছে। সেই কম্পানির সাথে জাপানের কানেকশন আছে। কোনো কাজে জাপানে পাঠাবে এমন অনেক সুবিধা আছে। মৌমি আশিকের বিদায়ের জন্য এসেছে তবে একটা চেয়ারে বসে একাকি চোখের জল ফেলছে। আশিক সবার সাথে কুশল-অভ্যর্থনা শেষে তার অভিমানিনীর সামনে এসে হাঁটু মুড়ে বসেছে। তারপর দুই হাতের আঁজলায় মৌমির কন্দনরত মুখটাকে নেয়। তারপর বলে,
–এই মোমবাতিটা! শোনো না। তুমি আমার আঁধার ঘরের একটা উজ্জ্বল জ্বলজ্বলে মোমবাতি। আমার মোমবাতির মন খারাপ হলে যে আমার মনের ঘর অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাবে। একটু হাসো তো সোনা।
মৌমি অশ্রু পরিপূর্ণ নয়নে মায়াবি দৃষ্টিতে আশিকের দিকে তাকায়। আশিক মৌমির মুখের উপর আসা অবাধ্য চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিয়ে গালে লেগে থাকা অশ্রু মুছে নরম স্বরে বলে,
–তোমার গ্রাজুয়েশন কম্পিলিট হোক এরইমধ্যে আমি আমার অবস্থান আরেকটু মজবুত করি। তারপর তোমায় বউ করে সবাইকে জানিয়ে নিয়ে যাব। আর তোমার খেয়াল রাখতে তোমার পাঁচটা ভাইয়ের মতো বন্ধু আছে তো। আমার কাছে রাজশাহীর জবটা বেশি প্রিফারেবল লেগেছে আর রাজশাহীতে বাড়িতে বাবা-মা একা থাকেন। বড়োভাই নোয়াখালি পোস্টিংয়ে ভাবী ও ভাতিজাকে নিয়ে চলে গেছে। আমি মাস্টার্সে ভর্তি হলে রাজশাহী ইউনিভার্সটি থেকেই করব। তবে সেটা মাস ছয়েক পরে থেকে।
মৌমি অভিমানী স্বরে বলে,
–বাবা-মাকে এক বছরের জন্য ঢাকাতে নিয়ে এসো। তারপর আমাদের বিয়ের পর আমাকে সহ নাহয় রাজশাহী যাবে সবাই।
আশিক মৌমির কথায় হেসে বলল,
–সবাই তোমার মতো সহজ করে ভাবে না গো। অনেককিছু বুঝে চলতে হয়। তোমার সাথে প্রতিদিন কথা হবে আর তুমি সাবধানে ভদ্র মেয়ের মতো থাকবে।
তারপর আশিক মৌমির হাতে একটা কাঠগোলাপের মালা পড়িয়ে দেয়। তারপর মৌমির থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। আদিরা কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে মৌমির কান্না ও আশিকের সুন্দর করে কান্না মোছানোর দৃশ্য দেখে তার চোখের কোন বেয়ে জল গড়ানো উপলব্ধি করল। ওড়না দিয়ে তা মুছে নিতেই নিজের আশেপাশে অতিপ্রিয় কারও উপস্থিতি অনুভব করল। তার নিজস্ব ঘ্রাণে আদিরা না দেখেই বলল,
–আপনি এখানে? যান আশিক ভাইয়াকে এগিয়ে দিবেন না?
মারসাদ আদিরার পাশে দাঁড়িয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
–তুমি কাঁদছো কেনো? আমি তো এখানেই আছি। আমার আবার অতো দূরে যেতে হবে না বুঝেছ। তাই তোমাকে আগেভাগে কান্নার ট্রেনিং নিতে হবে না।
আদিরা ভ্রুঁ কুঁচকে মারসাদের দিকে ফিরতেই মারসাদের ওষ্ঠদ্বয়ের সাথে আদিরার ললাটের সংঘর্ষ ঘটে। আদিরা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে এক পা পিছু হটে যায়। মারসাদ বাঁকা হাসে। তারপর আদিরার দিকে এক পা এগিয়ে অনুরাগী স্বরে বলে,
–ইশ! তোমার ললাটে আমার ঠোঁটের প্রথম স্পর্শ। না চাইতেও একে অপরকে ঠিক আকর্ষণ করে নিয়েছে। এখন আমার ওষ্ঠদ্বয় আরেকবার আকর্ষিত হতে চায়! সেই অনুমতি মিলবে কী?
আদিরার মুখে ঈষৎ লজ্জামিশ্রিত আভা ছড়িয়ে পরে। কোনো জবাব না দিয়ে অদূরে দাঁড়ানো রিন্তিদের কাছে চলে যায়। মাহি এখন মৌমির কাছে আছে। মাহি, রাত্রি, সুমি মিলে মৌমিকে হাসানোর চেষ্টা করছে। মারসাদরা আশিককে এগিয়ে দিতে গাবতলী পর্যন্ত যাবে। মারসাদরা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের কাছে গেলে সেসময় সামিরা এসে মারসাদদের পথের সামনে দাঁড়ায়। আশিক স্যারদের সাথে দেখা করতে ডিপার্টমেন্টে গিয়েছে। সামিরা ঢং করে বলে,
–কনগ্রেটস মারসাদ বেবি। কেমন আছো বেবি? এখন তো তুমি ভিপি। আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে বলে বুঝাতে পারব না।
মারসাদের পাশ থেকে রাহিন বিড়বিড় করে বলে উঠে,
–আসছে বেবি! বাবু! বাবু খাইছো! ঘুমাইছো! ঢং যতসব।
কথটা সামিরা স্পষ্ঠ না শোনলেও বাকিদের কানে এসেছে। মৃদুল টিটকারি করে বলে,
–বল মারসাদ। আম্মা ভালা আছেন? বল বল।
মারসাদের হুট করে কী হলো যে সে মৃদুলের বলা কথাটাই বলে বসল। আশেপাশের পরিবেশ যেন বর্জপাতের মতো করে উঠল সামিরার রিয়াকশনে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৬+২৭
সামিরা গগন কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠে। মৃদুল, রাহিন, রবিন ও আহনাফ কানে হাত দিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে আছে। মারসাদ ভাবলেশহীন ভাবে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। সামিরা মারসাদের কাছে এসে ক্ষিপ্রগতিতে মারসাদের শার্টের কলারে ধরে রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বলল,
–হাউ ডেয়ার ইউ টু সে মি লাইক দ্যাট! ইউ ব্লা*ডি হেল। আই ওয়ান্না কি*ল ইউ রাইট নাউ।
মারসাদ বাঁকা হেসে ঝাড়া দিয়ে সামিরার হাত নিজের কলার থেকে ফেলে দেয়। তারপর বলে,
–ডু হোয়াটএভার ইউ ওয়ান্ট। আই ডোন্ট কেয়ার। ডিডেন্ট আই ওয়ার্নড ইউ? ডোন্ট কল মি বেবি এভার এগাইন!
সামিরা ক্ষিপ্তভাবে মারসাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আশেপাশের কিছু জুনিয়র প্রত্যক্ষদর্শীরা ব্যাপারটাতে মিটমিট করে হাসছে আবার একে অন্যের সাথে গসিপও করছে। সামিরা আশেপাশের ছেলে-মেয়েদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে রূঢ় স্বরে বলে,
–তামাশা দেখছ তোমরা! যাও এখান থেকে। নাহলে একেকটার খারাপ অবস্থা করে ছাড়ব আমি।
ছেলে-মেয়েদের জটলা সরে যেতে লাগল। সামিরা এবার মারসাদের উদ্দেশ্যে রূঢ়ভাবে বলে,
–তোমার আমার সম্পর্ক শুধু ভার্সিটিতেই না, সেটা তুমিও জানো। ইউ হ্যাভ নো রাইট টু ইনসাল্ট মি। আমাদের ফ্যামিলি এতে ইনভলভ মারসাদ। ভুলে যেও না। আমি চাইলে অনেককিছু করতে পারি।
মারসাদ তাচ্ছিল্য স্বরে বলে,
–ফ্যামিলির ভয় দেখাচ্ছ? আমি তো সেই কবে থেকে ঘরছাড়া! আর তুমি কখনওই আমার কাছে ইম্পরট্যান্ট ছিলে না। তোমার বেহায়াপনা তোমার নিজের কাছে রাখলে তোমার জন্যই মঙ্গলকর হবে। ন্যাকামো আমার সাথে করতে আসবে না। আমি তোমার সাগরের মতো না যে ন্যাকামোতে গলে যাব!
সামিরা রেগে তাচ্ছিল্য স্বরে বলে,
–নিজের নজর নিচে নামিয়েছ বলে তোমার ক্যাটাগরিও লো হয়ে গেছে। নাহলে কী থার্ড ক্লাশ আদিরার পেছোনে ঘুরতে! নিজেকে ভিখারির লেভেলে নিয়ে গেছো!
মারসাদ মুচকি হেসে বলে,
–যদি তাই হয় তবে তাই। তাও নিলজ্জ তো না! লজ্জা বলতে কিছু আছে এই পৃথিবীতে। কিন্তু তোমার মধ্যে তার ছিঁটেফোটাও নেই।
মারসাদ এবার রবিনকে বলে,
–আশিক ভাই বের হলে তাকে নিয়ে মেইনরোডে আসিস। চল আহনাফ।
মারসাদ আহনাফকে নিয়ে চলে গেল। সামিরা একই জায়গায় রক্তচক্ষু নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তার রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। মৃদুল, রাহিন ও রবিন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে ঢোকার আগে মৃদুল সামিরাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–খালাম্মা! এই রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে আপনার কস্ট হবে তো। এমনেই আপনার শরীর রাগে জ্বলছে মনে হচ্ছে। ওই যে সামনে গাছতলা আছে সেখানে বসে থাকেন। কিছু লাগলে আপনার এই অধম সন্তান সমতূল্য পুত্রদের জানাবেন কিন্তু!
সামিরা রাগে আরও ফেটে পরে। চিৎকার করে বলে,
–ইউ বা*স্টা*র্ড! জাস্ট গেট লস্ট।
এটা বলে সামিরা মৃদুলকে থা*প্পড় দিতে নিলে মৃদুল বাকিদের নিয়ে জলদি করে সরে যায়। সামিরা নিজের উপর রাগে চিৎকার করে চলে যায়।
___________
মুক্ত সমীরণে অসীম নীল অন্তরিক্ষের সাদা তুলোর মতো মেঘপুঞ্জ বড়োই বিভাসিত। কাশফুলের সাদা রঙে পুরো একটা বড়ো মাঠে যেন মেঘপুঞ্জ ভূমিতে ধেয়ে এসেছে। আজ সূর্যের তেজ কিছুটা কম আর সূর্য এখন পশ্চিমাকাশে কিছুটা ঢলে পরেছে। দুপুর গড়িয়ে সবে বিকেল নেমেছে। সকালের দিকে হালকা বৃষ্টি ছিল কিন্তু এখন আকাশ দেখে মনেই হয় না কিছু প্রহর আগেও আকাশের মন খারাপ ছিল! এখন হালকা রোদে আকাশ নরম হাসি হাসছে। রিন্তি ঘুরে ঘুরে কাশফুলের সাথে বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি তুলছে। মাঝে মাঝে সাবিহাকে বলছে ছবি তুলে দিতে আবার আদিরা, মাহি সবার সাথে ছবি তুলছে। একটা ভালো না হলে আরও কয়েকটা তুলে।
আদিরা ঘাসের উপর বসে আছে একমনে আকাশের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ তার। পাশেই মাহি ক্যানভাসে রঙ-তুলির ভালোবাসায় প্রকৃতি রাঙাচ্ছে। সুমি ও মৌমি ছবি তুলছে সাথে চটপটি, ফুচকা এমন কোনো দোকানের অন্বেষণে ঘুরছে। মারসাদ ও আহনাফরা কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে স্মোক করছিল। এখন মারসাদ এসে আদিরার পাশে বসে আর আহনাফ মারসাদের পাশে বসে। মৃদুল ও রবিনকে সুমি ডাক দিয়ে নিয়ে গেছে। ওরা একটা ফুচকার দোকান পেয়েছে তাই সবার জন্য ফুচকা অর্ডার দিয়েছে সেগুলো আনতে। আর এদিকে রাহিন রিন্তির পেছোনে গিয়ে নিজেও সেলফি তোলার ভান ধরছে আর রিন্তির ছবি নষ্ট করার প্রয়াস করছে।
মারসাদ মাহিকে ডাক দিয়ে বলে,
–তোর আঁকা হয় নি? আর কতেক্ষণ আঁকবি? এক ঘণ্টা হলো এসেছি।
মাহি বিরক্ত হয়ে বলে,
–এই দাভাই চুপ করতো। একটা সুন্দর মোমেন্ট কল্পনা করে আঁকছি। যদি বাজে হয়েছে তাহলে তোর খবর আছে।
আদিরা হুট করে নিজের নাক চেপে ধরে বলে,
–আপনি কয়টা সিগরেট খেয়েছেন? এতো দুর্গন্ধ আসছে। যান মুখ ফ্রেশ করে আসেন।
মারসাদ আদিরার দিকে আরেকটু ঝুঁকে গিয়ে বলে,
–যতোই দুর্গন্ধ হোক, তোমাকে এই আমার সাথেই থাকতে হবে। আজ সাথে সেন্টার ফ্রেশ নেই তাই মুখ ফ্রেশ করতে পারলাম না।
আদিরা নিজের মাথা একটু সরিয়ে নিয়ে নাক কুঁচকে বলে,
–এগুলো খাওয়া বন্ধ করতে পারেন না? বাজে নেশা একটা। এসব ছাইপাঁশ স্বাস্থের জন্য ক্ষ*তিকারক জানেন তো।
মারসাদ বাঁকা হেসে বলে,
–যেদিন তোমার নেশায় পুরোপুরি মাতাল হবো সেদিন তোমার সিগরেট নামক সতীনকে ভালোবাসা কমিয়ে দিবো। এখন দিনে পাঁচটা মাত্র।
আদিরা চোখ বড়ো বড়ো করে বিস্ময়ের সাথে বলে,
–পাঁচটা! এই আপনি তো মহা সিগরেটখোর! আপনার ফুসফুস বেঁচে আছে?
মারসাদ রম্যস্বরে বলে,
–দেখবে? ফুসফুসে তো তুমি নামক অক্সিজেন আছে। না বেঁচে যাবে কই!
মারসাদ হাসতে থাকে। সাথে আহনাফও। হুট করে মাহি রেগে রঙে পরিপূর্ণ তুলি নিয়ে এসে মারসাদের হাতে মা*রে। মারসাদ এহেনো কান্ডে হতবাক হয়ে মাহিকে বলে,
–কী হলো? কী করলি তুই এটা?
মাহি কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,
–তোদের জন্য আমি সবুজ রঙের বদলে কালো রঙ দিয়ে ফেলেছি। এখন আমার ছবিটা নষ্ট হয়ে গেল। শ*য়*তা*ন গুলা।
আহনাফ মুখ বাঁকা করে বলে,
–আমরা তোমাকে বলছি দিতে? নিজের দোষ আমাদের উপর দেও কেন?
মাহি তুলি নিয়ে আহনাফকে মা*রতে গেলে আহনাফ তাড়াহুড়ো করে উঠে যায়। মারসাদ মাহির চিত্রটার কাছে গিয়ে ছবিটা ঠিক করতে চেষ্টা করে। মাহি মন খারাপ করে দেখতে থাকে মারসাদ কী করে। পাঁচ মিনিট পর মারসাদ মাহির মাথায় টোকা দিয়ে বলে,
–বল*দি জানি কোথাকার।
মারসাদ আবার এসে আদিরার সাথে বসে আদিরাকে জিজ্ঞাসা করে,
–তুমি ছবি তুলবে না? চল তুলে দেই।
আদিরা আকাশের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ কন্ঠে বলে,
–মানুষের চোখ সবচেয়ে সুন্দর ক্যামেরা। চোখের দৃশ্যপটে সুন্দর দৃশ্যগুলো আজীবন থেকে যাবে। মনও প্রশান্ত হবে। প্রতিটা সুন্দর আগে নিজের স্মৃতিপটে সংরক্ষণ করে তারপর বাকি সব।
মারসাদ আদিরার একটা হাত নিজের হাতে নেয়। আদিরা মারসাদের দিকে তাকায়। দুজন দুজনের দিকে মুগ্ধতার সাথে চেয়ে আছে। অপরপাশে আহনাফ উঠে সামনে গিয়ে মোমেন্টটা ক্যাপচার করে নেয় তারপর বলে,
–স্মৃতিকে তাজা রাখতে সেগুলো বারবার স্মরণ করতে হয়। তোদের এই মোমেন্টটা ভবিষ্যতে তোদের সুখ স্মৃতিতে থাকবে।
আহনাফ মারসাদকে ছবিটা দেখায়। মারসাদ ও আদিরা দুজনেই ছবিটা দেখে অনেক খুশি হয়। মারসাদ এবার আহনাফকে বলে,
–তোর তাকে কী সবসময় আড়ালেই ভালোবেসে যাবি? এবার তো প্রকাশ কর। প্রকৃতিও আজ তোর প্রেমের রঙে রাঙাতে চায়। সুযোগও বড্ড কাছে। যা দোস্ত যা। কেহ দে আপনি দিলকি বাত।
আহনাফ ও আদিরা দুজনেই হেসে উঠে। আর মাহি! ছবি আঁকতে আঁকতে ওদের কথা শুনছিল। তার হাত এখন এক জায়গায় স্থির হয়ে গেছে। আকাশে শুভ্র মেঘের আনাগোনা হলেও মাহির মনের আকাশে কৃষ্ণ মেঘ ধেয়ে আসছে। তার মনে বড্ড ভারী হয়ে আসছে। মাহি মনে মনে ভাবে,
“তার মনে অন্যকেউ আছে? কে সে? সুমিপু? নাকি সাবিহা? না রিন্তি? সে সত্যি কাউকে ভালোবাসে? কীসব ভাবছি আমি! ভালোবাসুক তাতে আমার কী! আমি আমার মতো বেশ আছি। এই কয়েকদিনের মায়া ঠিক কাটাতে পারব আমি।”
আহনাফ লম্বাশ্বাস নিয়ে এক গুচ্ছ কাশফুল নিয়ে মাহির পেছোনে দাঁড়ায়। আহনাফ দেখে মাহির তুলি এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে। আহনাফ অধর খেলে হাসে অতঃপর বলে,
“এই এলোকেশী কন্যা! শোনো। হ্যাঁ তোমাকেই বলছি। বড্ড অভিমানী তুমি। তোমার অভিমানে দৃশ্যপট যে তার রঙ হারাচ্ছে তার খেয়াল আছে?
মাহি আচমকা এরূপ সম্বোধনে ভাবনার জগৎ থেকে ফেরে। তড়িঘড়ি করে পেছোনে ঘুরে কাশফুল দিয়ে মুখ আড়াল করা মানুষটাকে দেখে। মাহির মন কৌতুহলী হলো। আহনাফ হাসে। প্রাণবন্ত সেই হাসি। মাহির হৃদয় যেন তার নিজের অবাধ্য হচ্ছে বড্ড। এতো জোরে বিট করা কী দরকার তার! আহনাফ মাহির হাতটা নিয়ে নিজের বুকের বামপাশে রাখে। মাহি হতবাক হয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। আহনাফ বলে,
–তোমার প্রতি প্রথম মুগ্ধতা কোনো এক শরতে। আমার জীবনে শরৎশশী হয়ে তোমার আগমন। এক গুচ্ছ কাশফুল হাতে লম্বা চুলে দুই ঝুঁটি করা রঙে মাখামাখি এক কিশোরীকে যখন দৌঁড়ে আসতে দেখেছিলাম তখন মুগ্ধ হয়েছিলাম প্রথমবার। তার অভিযোগ ছিল, তার কাজিন তার ছবি নষ্ট করে দিয়েছে সাথে তাকে রঙে মাখিয়ে দিয়েছে। তাই সে তার দাভাইয়ের কাছে বিচার নিয়ে এসেছে। সেই প্রথম মুগ্ধতা। আজও সেই শরৎকাল। আজ কাশফুলের সমারোহে তোমায় শরৎ প্রেমের আহ্বান এলোকেশী।
মাহি বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। ছয় বছর আগে ভুল করে দাভাইয়ের রুমে কে আছে না দেখে কাঁদতে কাঁদতে হাজির হওয়ার পর আহনাফকে দেখে খুব লজ্জা পেয়েছিল। আজ সেই দিনটা স্মৃতিতে ভেসে উঠল। তাহলে লোকটা তাকে ভালোবাসে! মাহি নিজের ভাবনায় নিজেই শিউড়ে উঠল। মাহি হুট করে ব্যালেন্স হারিয়ে হেলে পরতে নিলে আহনাফ বাঁকা হেসে বলে,
–আগে আহ্বান স্বিকার করো। তারপর পরে যেও। এখন পরতে পারবে না।
……
আদিরা এদিকে দাঁত দিয়ে নখ কা*টতে কা*টতে মারসাদকে আস্তে করে বলে,
–ভিপি সাহেব, আপনার কী মনে হয়? আপনার বোন ফুল নিবে? নাকি রিজেক্ট করবে?
মারসাদ আদিরার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে বলে,
–তুমি জানো ও কিসের চিত্র আঁকছিল? আর আমিই বা কেনো আহনাফকে প্রপোজ করতে বললাম?
আদিরা ঠোঁট উল্টে মাথা নাড়িয়ে না বোধক বুঝায়। মারসাদ আদিরার নাক টেনে বলে,
–তোমার বান্ধুবী এঁকেছে, কাশফুলের সমারোহে একটা ছেলে একটা মেয়েকে কাশফুল দিয়ে প্রেম নিবেদন করতে যাচ্ছে। মেয়েটা ছবি আঁকছিল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আর ছেলেটা মেয়েটার পেছোনে কাশফুল হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
আদিরা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
–আপনি কেমন ভাই যে নিজের বন্ধুকে সাহায্য করছেন আপনার বোনকে প্রপোজ করতে!
মারসাদ বলে,
–আমার বোন আমার বন্ধুর সাথে ভালো থাকবে। আহনাফ ও আমার বন্ধুত্বটা অনেকটা গভীর। তাই ওর কাছে কোনো কিছু যেমন আমি লুকাতে পারিনা তেমনও ও নিজেও পারে না। তবে হা*দারামটা ভেবেছিল সে এতোগুলো বছর আমার থেকে নিজের ফিলিংস লুকিয়ে গেছে। কিন্তু না। ওই ছয় বছর আগেই আমি আহনাফের দৃষ্টিতে কিছু একটা দেখেছিলাম মাহিকে দেখার পর।
আদিরা মারসাদের তাকিয়ে বলে,
–আপনার বোন এমন বোবার মতো করে কেনো আছে? ও আবার কথা বলা ভুলে গেলো নাতো?
মারসাদ আদিরার বোকা বোকা কথায় বলে,
–মনে হচ্ছে কোমায় চলে যাবে! তোমার বান্ধুবী বলে কথা!
আদিরা মুখ ফুলালো অতঃপর সামনের দিকে নজর ফেরায়। মাহি হঠাৎ আহনাফের চুটকি বাজানোতে ঘোর থেকে ফেরে। আহনাফ ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,
–তুমি কী আমাকে রিজেক্ট করার পরিকল্পনা করছো? এই মেয়ে সাবধান। একদম রিজেক্ট করবে না।
মাহি অবিশ্বাস্য সুরে বলে,
–আপনি আমাকে ভালোবাসেন?
আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
–না। এক এলোকেশীকে ভালোবাসি। এক ছোট্ট দূরন্ত পাখিকে ভালোবাসি। সে আমার শরৎশশী। এবার কী ফুলগুলো নিবে?
মাহি ফুলগুলো নিলো। মাহি ফুলগুলো নেওয়ার পর রাহিন এসে বলে,
–পুচকি তুমি মাঝ দিয়ে প্রশ্নটা কেনো করলে? পুরো ভিডিওটা কেমন যেনো হয়ে গেল।
আহনাফ ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
–যার ভাই ত্যাড়া সে কতোটা সোজা হবে বুঝাই যায়!
মারসাদ সহ সবাই হেসে উঠল। মাহি একদম চুপ করে গেছে। তার সবটা চিত্রর মতো কল্পনা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে তার কল্পনা নাকি বাস্তব!
রিন্তি মাহির চিত্রটার দিকে তাকিয়ে মাহিকে এসে জড়িয়ে ধরে বলে,
–কনগ্রাচুলেশন দোস্ত। তোর কল্পনা সত্যি হয়ে গেছে।
আহনাফ মাহিকে বেখেয়ালি দেখে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–হয়েছে। এবার ফুচকা খাবো সবাই। টপিক অফ। একদিনে সবটা বদহজম হবে।
মৃদুল দুইহাতে ফুচকার প্লেট এনে বলে,
–নে আমরা নিয়ে এসেছি। সুমি আর মৌমি, তোরা ওদের হাতে একটা করে প্লেট দে। আর মামা আপনি দুইজনের হাতে দেন।
ওরা সবাই ঘাসের উপর বসে। মাহির হাতে মৌমি ফুচকার প্লেট দিলে মাহি হাতে নিয়ে বসে আছে। পাশ থেকে আদিরা বলে,
–কীরে বসে আছিস কেনো? শুরো কর।
মাহি থতমত খেয়ে একটা ফুচকা নিয়ে মুখে পুরে। আহনাফ মাহির অবস্থা দেখে আনমনে হাসে। মেয়েটার মনে যদি সে না থাকতো তবে সরাসরি রিজেক্ট করে দিতো। কিন্তু রিজেক্ট যেহেতু করেনি তাহলে মাহির মনেও কিছু তো আছে।
ওরা সবাই আরও ঘণ্টাখানেক থেকে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যায়।
……..
কয়েকদিন পর,,
কোরবানির ইদের ছুটি পরবে আর দুয়েকদিন পর। রোজার ইদেও আদিরা গ্রামে যায় নি এবারতো যাবেই না। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর সময়। সবাই আজ নিজ নিজ বাড়িতে যাবে। আদিরা এবারও মেসে থেকে যাবে। এদিকে মাহি ছয়-সাতদিন ধরে ক্লাসে আসছে না। সেদিনের পর যে কী হলো! আহনাফ কয়েকবার খোঁজ নিয়েছে কিন্তু মাহির খোঁজ পায় নি। এদিকে মাহি এক সপ্তাহের জন্য তার মামাবাড়ি চলে গেছে। তার নিজের আগে স্বাভাবিক হতে হবে। তার মামাতো ভাইদের বউদের মানে তার ভাবিদের সাথে বিষয়টা শেয়ার করলে তারা মাহিকে বলেছে,
“নিজের মনকে সময় দিয়ে ভাবতে। শুধুমাত্র একটু ভালোলাগা খনিকের জন্য থাকতে পারে। সেটাকে সামনে আগাবে কীনা তা ভেবে নিও।”
মাহি কয়েকদিন নিজেকে ফোন ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে রেখেছে। প্রতি পদে পদে সে আহনাফের শূণ্যতা অনুভব করেছে। মাহি নিজেই বুঝতে পারে সে একটু না বরং অনেকখানি দুর্বল আহনাফের প্রতি। আজ সে মামাবাড়ি থেকে চলে যাবে এবং কাল থেকে ক্লাস করবে।
আদিরা ও মারসাদ সন্ধ্যার সময় রাস্তার পাশ দিয়ে একসাথে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে। খুব মনোরম পরিবেশ বলে রিকশা পেয়েও রিকশা নেয়নি। আদিরা মারসাদকে প্রশ্ন করে,
–আজ আপনি আপনার বাড়িতে থাকলে জানতে পারতেন মাহি কোথায় গেছে। আর কতোদিন রাগ করে থাকবেন? আমার তো বারবার নিজের বাড়ি যেতে মন আঁকুপাঁকু করে। শুধু পারিনা বলে।
মারসাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
–দাদীর এতো বলা কিভাবে উপেক্ষা করে আছি জানো? দাদী ও মাহি কম তো বলে না। কিন্তু মিসেস মনিকা! বারবার উনার ব্যাবহার গুলা সাথে আপিলির সাথে যে ব্যাবহার করেছে তা ভুলতে পারি না। উনি আমাকে ও আপিলিকে আপন ভাবতেই পারলো না কখনও। জানিনা কখনও ফিরতে পারব কীনা। ওই বাড়িতেই তো আমার মায়ের সাথে আমার শেষ স্মৃতি আছে। যার মা নেই তার তখন সব থেকেও কিছুই থাকে না। বাবা তার দায়িত্ব পালন করে গেছে কিন্তু মায়ের মৃ*ত্যুতে সেও নিজের ভাবনায় মশগুল থাকে। দাদী বলেছিল, মায়ের সাথে বাবার পরিচয়ের আগে নাকি বাবা ভবঘুরে টাইপ ছিল। পড়ালেখাটা মন দিয়ে করতো কিন্তু আর কোনো কিছুতে তার মন থাকতো না। এখন আবার সেরকম হয়ে গেছে। আপিলি বেঁচে থাকলেও হয়তো আজ আমি ওবাড়িতে থাকতাম।
আদিরার কাছে প্রতিটা শব্দ দীর্ঘশ্বাস লাগে। সে মারসাদের হাত ধরে হাঁটতে থাকে। মারসাদ মলিন হাসে। দুঃখের সময় কেউ যদি হাত ধরে সেই হাত বিশ্বস্ত।
চলবে ইনশাআল্লাহ,