এক বসন্ত প্রেম পর্ব-০৫

0
1543

🧡 #এক_বসন্ত_প্রেম 🧡
লেখক- এ রহমান
পর্ব ৫

শীতের আমেজ শেষ হয়ে বসন্ত ছুই ছুই। এমন সময় শীতের নির্মমতায় নুইয়ে যাওয়া প্রকৃতিকে প্রাণবন্ত করতে এক পশলা বৃষ্টির আগমনে চারিদিকে ঝলমলিয়ে উঠলো। প্রকৃতি যেন প্রান ফিরে পেয়ে তার আগের রুপ ধরতে চাইছে। গাছপালা গুলো নিজেদের ডাল পালা মেলে এক তাণ্ডব নৃত্যে মেতে উঠেছে সেই খুশিতে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে বাইরে যাওয়ার কোন উপায় নেই। বাইরে তো দুরের কথা বাড়ির খোলা উঠোনেই নামার উপায় নেই। তাই সবাই ঘরের মধ্যেই ভিড় করে বসে আছে। বেশ জমিয়ে উঠেছে আড্ডা। স্নেহর বাবা চাচা আর ফুপা এক ঘরে। মা আর ফুপু আরেক ঘরে। মিনা চাচি আর সুহা তার সাথে রান্না ঘরে। তারা এই মুহূর্তে পাকোড়া বানাচ্ছে। এই বৃষ্টির বিকেলে গরম গরম চায়ের সাথে পাকোড়ার মজাই আলাদা। স্নেহ মনোযোগ দিয়ে তার সেই মসলা দুধ চা বানাচ্ছে। এই চায়ের রেসিপি টা শিখেছে সে তার বড় ফুপু শেফার কাছে। তার ফুপু যখন ভারতে বেড়াতে গিয়েছিলো তখন সেখান থেকে তিনি এই বিখ্যাত চা খেয়ে এসেছেন। আর স্নেহকেও খুব যত্ন করে শিখিয়েছেন। বৃষ্টির এমন দিনে স্নেহ প্রায়ই এই চা বানায়। আজও সে এই চা বানাচ্ছে।

দোতলার ঘরে নাবিল আর মুবিন জানালার ধারে বসে বৃষ্টি দেখছে। অনেক্ষন বসে থাকার ফলে নাবিলের হাত পা অসাড় হয়ে আসছিল তাই একটু উঠে দাড়িয়ে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো। দোতলায় পাশা পাশি দুইটা ঘর। সিঁড়ি বেয়ে উঠেই একটা ঘর সেখানে একটা ছোট চৌকি রাখা আছে। সেই ঘর পেরিয়ে এই ঘরে আসলেই আগে চোখে পড়ে রাজকীয় একটা খাট। মনে হয় বেশ পুরাতন। কেউ খুব যত্নে এটা নিজের মন মতো বানিয়েছে। তার পাশেই দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে রাখা পুরাতন কাঠের আলমারি। নাবিল ধির পায়ে সেই আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ভালো করে খেয়াল করে বুঝল সব কিছুতে ধুলো পড়ে থাকলেও খাট আর আলমারিতে তেমন ধুলো নেই। মনে হচ্ছে কেউ প্রায় সময়ই খুব যত্ন করে এই দুইটা জিনিস নাড়াচাড়া করে। আলমারির হাতল ঘুরাতেই সেটা খুলে গেলো। আলমারি খুলতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো নাবিলের। তাক ভর্তি বই। কত রকমের বই।

“এগুলা কে পড়ে?” বইগুলোতে আঙ্গুল চালাতে চলাতে আগ্রহ নিয়ে মুবিন কে জিজ্ঞেস করলো নাবিল। মুবিন সেই দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল “আপা। আমরাও মাঝে মাঝে পড়ি। কিন্তু অতো ধৈর্য নাই।”

“ইংলিশ বই গুলাও পড়ে?” নাবিল একটা ম্যাক্সিম গরকির বই হাতে নিয়ে বলল। “অইখানে যত বই আছে সবই আপা পড়ে। তার খুব পছন্দ বই পড়া। এই খানে আসে সারাদিন শুয়ে শুয়ে বই পড়ে।” মুবিনের কথা শেষ নিচ থেকে ডাক আসলো মিনার “মুবিন নিচে একবার আয় তো!”

“আসি।” বলেই এক দৌড় দিলো সে। খট খট শব্দে নিচে নেমে গেলো। নাবিল ইংলিশ বইটা রেখে সমরেশ মজুমদারের একটা বই তুলে হাতে নিলো। পাতা উলটাতে উলটাতে নেড়ে চেড়ে দেখতে লাগলো। আবার সেই সিঁড়ির খট খট আওয়াজ কানে আসলো। নাবিল ধরেই নিয়েছে যে মুবিন ফিরে এসেছে। তাই বইয়ের দিকে তাকিয়েই বলল “তোমার পছন্দের লেখক কে?”

“আমি সব লেখকের বই পড়ি।” চিকন মেয়েলি কণ্ঠ কানে বাজতেই সে ঘুরে তাকায় তার দিকে। স্নেহ এক হাতে চায়ের কাপ আর আরেক হাতে পাকোড়া ভর্তি একটা প্লেট নিয়ে দাড়িয়ে আছে। বেশ খানিকক্ষণ সারা মুখে চোখ চালিয়ে নিয়ে নাবিল নিজের দৃষ্টি পা থেকে মাথা পর্যন্ত চালিয়ে নিলো। বেশ ছিপছিপে গড়ন। লাল ওড়না মাথা অব্দি টেনে দেয়া। চোখ গুলো বেশ বড় বড়। ঠোঁট জোড়া গোলাপি। লাল ওড়নার মাঝখানে বের হয়ে থাকা ফর্সা মুখটা বেশ আকর্ষণীয়। যে কারও চোখ আটকে যাবে। ঠোটের কোণে ক্ষীণ হাসি। অনেক সুক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই সেই হাসি চোখে পড়বে।

“চা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।” স্নেহর কথাটা কানে আসতেই সম্বিত ফিরে পেলো নাবিল। একটু নড়েচড়ে বইটা রেখে স্নেহর হাত থেকে চায়ের কাপটা নিলো। পাকোড়ার প্লেট টা পাশের টুলে রেখে স্নেহ দ্রুত পায়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।

“স্নেহময়ী!” নিজের পুরো নামটা কানে আসতেই পা থেমে গেলো তার। পিছন ফেলে অবাক দৃষ্টি ফেললো নাবিলের দিকে। নাবিল মাত্র চায়ে চুমুক দিয়ে থমকে দাড়িয়ে আছে।

“কিছু বলবেন?” স্নেহর সুরেলা কণ্ঠ শুনে ঠোটের কোণে হাসি নিয়ে বলল “চা তুমি বানাইছ?”
“হুম!” নাবিলের প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর দিলে সে। “অপূর্ব!” না চাইতেও নাবিলের মুখ থেকে উক্ত শব্দটা বের হয়ে গেলো। সেটা ঠিক চা নাকি স্নেহর উদ্দেশ্যে ছিল সেটা বোঝা দায় হয়ে গেলো। এমন সময় মুবিন হাতে চায়ের কাপ নিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল “আপা ফুপা নিচে তোমারে ডাকছে।”

স্নেহ কোন কথা না বলে নাবিলের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট জোড়া খানিক প্রসারিত করে নেমে চলে গেলো। তার সেই প্রসারিত ঠোঁট নাবিলের দৃষ্টি স্থির করে দিলো। কি অদ্ভুত! তার পরিবারে যে এতো সুন্দর মেয়ে আছে সেটা সে জানতইনা। আবার তারই নাকি আপন মামাতো বোন! সে অবশ্য মায়ের কাছে শুনেছে অনেকবার। কারন তার মা মাঝে মাঝে দেশে আসত। আর আসলে এই মজুমদার বাড়িতে আসতে কখনও ভুলতনা। এখান থেকে গিয়েই তিনি স্নেহর কথা বার বার বলতেন। বর্ণনা দিতেন তার সৌন্দর্যের। কিন্তু নাবিল সেসবে কখনও মনোযোগ দেয়নি। দিলে হয়ত আজ এতো অবাক হতোনা। আগেই এই রূপবতী রমনি সম্পর্কে তার ধারণা হয়ে যেত।

——————
গতকাল এক পশলা বৃষ্টি হওয়ায় আজ কুয়াশার তেমন জোর নেই। সকাল সকাল সূর্যি মামা তার দু হাত খুলে ভালোবাসার উষ্ণ পরশ ছড়িয়ে দিয়েছে দুনিয়াতে। সেই মিষ্টি উষ্ণ পরশের ছোঁয়ায় আজ সকাল সকাল স্নেহ আর সুহা আবার সেই জলপাই গাছের নিচে এসেছে। সেদিন যা পেড়েছিল এতদিনে সব খেয়ে শেষ করে ফেলেছে। তাই আজ আবার এসেছে কিছু জলপাই পেড়ে নিয়ে যেতে। বরাবরের মতো স্নেহ গাছে উঠে পড়েছে। সুহা নিচে দাড়িয়ে এদিক ওদিক চোখ ফেরাচ্ছে পাহাদারের মতো।

“সুহা এইদিকে আয়।” স্নেহর গলা পেয়ে গাছের নিচে এগিয়ে গেলো সুহা। নিজের আচল পেতে ধরল। স্নেহ দ্রুত কিছু জলপাই সেই আচল বরাবর ফেলে দিলো। একটু উপরে হাত বাড়াতেই সুহার গলার আওয়াজ পেয়ে থেমে গেলো।

“আপা কে যেন এইদিকে আসছে।” সুহা নিজের আচল মুড়িয়ে দৌড়ে গাছের পিছ্নে লুকাল। স্নেহ কিছু বুঝতে না পেরে লাফ দিয়ে গাছ থেকে নামল। নিচে লাফ দিয়ে দাড়াতেই তার চুল গুলো খুলে সারা গায়ে বিছিয়ে পড়লো। অবাধ্য চুল বাতাসে এলোমেলো হয়ে মুখের সামনে এসে পড়লো। পাশ ফিরতেই চমকে চোখ বড় বড় করে ফেললো। নাবিল নিজের অবাক দৃষ্টি তার দিকে স্থির রেখেছে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ চালিয়ে নিলো একবার। ওড়না কোমরে গুঁজে এলোমেলো দুই হাতে ঘন কাল এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করার চেষ্টা করছে। নাবিল মুগ্ধ হয়ে দেখছে।

“আপা তুমি আবার গাছে উঠছ?” মুবিন ভীত কণ্ঠে বলল। নাবিল মুবিনের কথা শুনে তার দিকে তাকাল। সুহা ততক্ষণে তাদেরকে দেখে একটু স্বস্তি পেল। তাই ধির পায়ে গাছের পিছন থেকে বের হয়ে আসলো সে। নাবিল এবার নিজের চোখ তার দিকে ফেরাল। সুহার দৃষ্টিতেও ভয় ধরা পড়েছে।

“তুই এইদিকে আসলি কেন? এইদিকে তো এই সময় কেউ আসেনা?” স্নেহর উত্তপ্ত কণ্ঠ নাবিলের কান ভেদ করতেই সে ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে তার দিকে তাকাল। তার চোখে মুখে ভয়ের কোন ছাপ নেই। খুব সাহসি মেয়ে। মুবিন তার সম্পর্কে এক বিন্দুও মিথ্যে বলেনি। স্নেহ নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নাবিলের দিকে তাক করতেই তার কোমল দৃষ্টি নাবিলের সেই ভয়ংকর সম্মোহনী দৃষ্টির সাথে সংঘর্ষে হার মেনে নত হয়ে গেলো। নাবিল বুঝতে পেরে কিঞ্চিত হেসে বলল “কোন কোন গাছে উঠতে পার তুমি?”

নাবিলের উক্ত প্রশ্ন স্নেহর মনে নিজের দশ্যি মনোভাবের আভাষ তীব্র গাড় বানিয়ে দিলো। সে চোখ তুলে এক ঝলক হেসে বলল “এই গ্রামে খুব কম গাছই আছে যেখানে আমার ছোঁয়া পড়েনি।”

স্নেহর কথায় নাবিল হাসল। মেয়েটা যে সাহিত্যপ্রেমি তা তার কথা শুনেও আন্দাজ করা সম্ভব। সাহিত্য পড়ে সেই সাহিত্যর ভাব নিজের চালচলন কথা বার্তায় নিখুঁত ভাবে ধারন করে ফেলেছে। নিজের দৃষ্টি নামিয়ে নিঃশব্দে হাসল নাবিল। স্নেহ তার সেই হাসির মানে বুঝতে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো। তার তাকানো দেখে নাবিল একটু বিব্রত হল।

“ওই স্নেহ এইহানে কি করস?” মাঝ বয়সি এক মহিলার কণ্ঠ সর শুনে সবাই সেদিকে ফিরে তাকায়।
“ঘুরতে আইছি চাচি।” স্নেহ নির্লিপ্ত কণ্ঠে মিথ্যা ছুড়ে দিলো সেই মহিলার উত্তরে। নাবিল অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এতে স্নেহর কোন হেল দোল নেই। মহিলা দুকদম এগিয়ে তাদের কাছে এসে দাঁড়ালো। নাবিল কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে স্নেহর উদ্দেশ্যে বলল “ওমা! বেটা ছেড়ার সামনে অমন খোলা চুলে কেমন কোমরে ওড়না পেচায় দাঁড়ায় আছে। শরম করেনা বুঝি?”
কথাটা কানে আসতেই স্নেহ নিজের অবাধ্য চুল গুলো তড়িৎ গতিতে হাত খোপা করে ফেললো। কোমর থেকে ওড়নাটা খুলে মাথায় পরে নিলো। মহিলাটা নাবিল কে দেখে কিছু বলার আগেই স্নেহ বলল “সুমি ফুপুর ছেলে। বেড়াইতে আইছে।”

“ও আমাগো সুমির ছেড়া। বড় হইছে।” বলেই নাবিলের মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদের ভঙ্গি করে চলে গেলেন। উনি চলে যেতেই নাবিল স্নেহর দিকে ফিরতেই পুনরায় চোখ আটকে গেলো। একটু আগেই এক রকম ছিল আর এখন এক রকম। মুহূর্তেই ওই রুপ যেন ঝলসে উঠছে। আচ্ছা এক রমনির কি হাজার রুপ হয়?

————
শীতের দুপুরের হালকা রোদের মিষ্টতা যেন হৃদয় জুড়িয়ে দেয়। সেই সাথে মনে অনাবিল এক প্রশান্তি বয়ে আনে। এই মুহূর্তে সেই মিষ্টতাই উপভোগ করছে নাবিল, মুবিন আর সুহা। বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ে নরম ঘাসের উপরে বসে ্নাবিল অভিজ্ঞের ভঙ্গিতে সুহার হাত দেখে তার ভাগ্য নির্ণয় করতে ব্যস্ত। বেশ খানিকক্ষণ মনোযোগ দিয়ে ভালো করে হাত দেখে বলল “বাহ সুহা! তোমার ভাগ্য তো বেশ ভালো। তুমি জীবনে অনেক সুখি হবে। যা চাবে তাই পাবে।” নাবিলের এমন কথা সুহা কতোটুকু বিশ্বাস করলো সেটা সেই ভালো জানে কিন্তু খুশি যে হয়েছে সেটা তার মুখের তৃপ্ত হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। নাবিল তার সেই হাসি দেখে নিজেও হাসল।

“আরে আপা আসো। ভাইয়া হাত দেখতে পারে। তোমারও হাত দেখে দিবে।” সুহার কথা শুনে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখল স্নেহ তাদের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে। হাতে সমরেশ মজুমদারের ‘কালবেলা’। বইটা তার পড়া। কিন্তু আবারো পড়বে বলে পুকুর পাড়ে এসে দেখে তারা এখানে বসে আছে। মুবিনও একটু বিচলিত হয়ে বলল “আসো না আপা!”। দুজনের আগ্রহ দেখে স্নেহ আর কিছু বলতে পারল না। নরম ঘাসের উপরে নাবিলের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে পা ভাজ করে বসলো। সুহা স্নেহর ডান হাতটা মেলে ধরল নাবিলের সামনে। অতি আগ্রহ নিয়ে বলল “দেখেন না আপার ভাগ্যে কি আছে?”
স্নেহও ভ্রু কুচকে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। নাবিল সুহার হাতে অবস্থানরত স্নেহর হাতের তালুটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে অতি নরম কণ্ঠে বলল “ভাগ্য বেশ খারাপ!” তার কথা শুনে সবাই ভ্রু কুচকে ফেললো। মুবিন একটু এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো “তাহলে কি আপা যা চাবে তা পাবে না?” সবাই নাবিলের দিকে নিজের দৃষ্টি স্থির রেখেছে প্রশ্নের উত্তরের জন্য।

নাবিল হাত থেকে চোখ সরিয়ে স্নেহর চোখের মাঝে নিজের দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলল “তোমার ভাগ্যে নিজের চাওয়ার চেয়ে তোমাকে যে চায় তার পাওয়ার পাল্লাটাই ভারি । আর সেটা এতোটাই তীব্র যে কোন ভাবেই পরিবর্তন হবেনা।”

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে